📄 খানাপিনার দোষ ধরা নিষেধ
(৫৬৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
مَا عَابَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طَعَامًا قَطُّ، إِنِ اشْتَهَاهُ أَكَلَهُ، وَإِنْ كَرِهَهُ تَرَكَهُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোনো খাবারের ত্রুটি অন্বেষণ করতেন না। মনে চাইলে খেতেন, মনে না চাইলে খেতেন না। -সহিহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আছে- পছন্দ না হলে চুপ থাকতেন। ৭৮০
(৫৬৬) হজরত হুলব রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি এক ব্যক্তিকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রশ্ন করতে শুনেছি, সে বলেছে-
إِنَّ مِنَ الطَّعَامِ طَعَامًا أَتَحَرَّجُ مِنْهُ. فَقَالَ: لَا يَتَخَلَّجَنَّ فِي صَدْرِكَ شَيْءٌ ضَارَعْتَ فِيهِ النَّصْرَانِيَّةَ.
অর্থ: এমন খাবার আছে কি যা আমি অপছন্দ করতে পারি? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কোনো হালাল খাবারের ব্যাপারে যেন তোমার মনে কোনো সংশয় সৃষ্টি না হয়। অন্যথায় তুমি খ্রীস্টানদের সদৃশ হয়ে যাবে। ৭৮১
প্রয়োজনে 'এই খাবারের প্রতি আমার আগ্রহ নেই', 'আমি এই খাদ্যে অভ্যস্ত নই' অথবা এরকম অন্য কিছু বলা বৈধ আছে
(৫৬৭) গুইসাপ সংক্রান্ত হাদিসে হজরত খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, যখন সাহাবায়ে কেরাম একে ভুনা করে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে পেশ করলেন। নবিজি সেদিকে হাত বাড়ালে লোকেরা বলল-
هُوَ الضَّبُّ يَا رَسُوْلَ اللهِ . فَرَفَعَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ، فَقَالَ خَالِدٍ: أَحَرَامُ الضَّبُّ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: لَا ، وَلَكِنَّهُ لَمْ يَكُنْ بِأَرْضِ قَوْمِي، فَأَجِدُنِي أَعَافُهُ.
অর্থ: এটাতো গোসাপ হে আল্লাহর রাসুল। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাত গুটিয়ে নিলেন। খালেদ রাদি. জিজ্ঞাসা করলেন: গোসাপ কি হারাম ইয়া রাসুলুল্লাহ? তিনি বললেন, না। তবে যেহেতু এটা আমার এলাকাতে নেই, তাই আমি একে পছন্দ করি না। ৭৮২
টিকাঃ
৭৮০. সহিহ বুখারি: ৫৪০৯. সহিহ মুসলিম: ২০৬৪/১৮৭, সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৬৪, সুনানে তিরমিজি: ২০৩২, মুসনাদে আহমাদ ২/৪২৭।
৭৮১. সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৮৪, সুনানে তিরমিজি: ১৫৬৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮৩০, মুসনাদে আহমাদ ৫/২২৬।
৭৮২. সহিহ বুখারি: ৫৩৯১, সহিহ মুসলিম: ১৯৪৫, সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৯৩, সুনানে নাসাঈ ৭/১৯৮।
📄 খাবার গ্রহণকারীকর্তৃক খাবারের প্রশংসা করা
(৫৬৮) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلَ أَهْلَهُ الْأُدُمَ، فَقَالُوا: مَا عِنْدَنَا إِلَّا خَلُّ. فَدَعَا بِهِ، فَجَعَلَ يَأْكُلُ بِهِ وَيَقُوْلُ : نِعْمَ الْأُدُمُ الْخَلُّ نِعْمَ الْأُدُمُ الْخَلُّ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার স্বীয় পরিবারের কাছে সালন চাইলেন। তাঁরা বলল, আমাদের কাছে সিরকা ছাড়া অন্য কিছু নেই। তিনি সেটাই আনতে বললেন। অতঃপর তা খেতে খেতে বললেন: সিরকা কতইনা উত্তম সালন! সিরকা কতইনা উত্তম সালন! ৭৮৩
নফল রোজাদারের সামনে যদি খাবার উপস্থিত হয় এবং সে রোজা ভাঙ্গতে না চায় তাহলে কী বলবে?
(৫৬৯) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا دُعِيَ أَحَدُكُمْ ؛ فَلْيُجِبْ، فَإِنْ كَانَ صَائِمًا ؛ فَلْيُصَلَّ، وَإِنْ كَانَ مُفْطِرًا ؛ فَلْيَطْعَمْ.
অর্থ: যখন তোমাদের কাউকে আমন্ত্রণ করা হয় সে যেন গ্রহণ করে। অতঃপর সে যদি রোজাদার হয় তাহলে নিমন্ত্রণকারীর জন্য দুআ করবে এবং রোজাদার না হলে খানা গ্রহণ করবে। ৭৮৪
(৫৭০) ইবনুস সুন্নির কিতাবসহ অন্যান্য কিতাবে আছে-
فَإِنْ كَانَ مُفْطِرًا فَلْيَأْكُلْ، وَإِنْ كَانَ صَائِمًا دَعَا لَهُ بِالْبَرَكَةِ.
অর্থ: অতঃপর সে যদি রোজাদার না হয় তাহলে খানা গ্রহণ করবে, আর যদি রোজাদার হয় তাহলে নিমন্ত্রণকারীর জন্য বরকতের দুআ করবে। ৭৮৫
টিকাঃ
৭৮৩. সহিহ মুসলিম: ২০৫২, সুনানে আবু দাউদ: ৩৮২০, সুনানে তিরমিজি: ১৮৪০, সুনানে নাসাঈ ৭/১৪, মুসনাদে আহমাদ ৩/৩০১, সুনানে দারিমি: ২০৫৪।
৭৮৪. সহিহ মুসলিম: ১৪৩১, সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৪২, সুনানে তিরমিজি: ৭৮১।
৭৮৫. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪৮৯, ই. সু.।
📄 খাবারের আদব রক্ষা না করা ব্যক্তিকে উপদেশ দেয়া
নিমন্ত্রিত ব্যক্তির সাথে অনিমন্ত্রিত কেউ এসে গেলে যা বলা উচিত
(৫৭১) হজরত আবু মাসউদ আনসারি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
دَعَا رَجُلُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِطَعَامٍ صَنَعَهُ لَهُ خَامِسَ خَمْسَةٍ، فَتَبِعَهُمْ رَجُلٌ، فَلَمَّا بَلَغَ ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ هَذَا اتَّبَعَنَا فَإِنْ شِئْتَ أَنْ تَأْذَنَ لَهُ، وَإِنْ شِئْتَ رَجَعَ؟. قَالَ: لَا ، بَلْ آذَنُ لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ .
অর্থ: এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তাকেসহ পাঁচজনকে দাওয়াত করে। অতঃপর জনৈক ব্যক্তি তাদের অনুসরণ করে। (নিমন্ত্রকের) দরজা পর্যন্ত পৌঁছলে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এই লোকটি আমাদের অনুসরণ করে এসেছে। অতএব, তুমি চাইলে তাকে অনুমতি দিতে পার। আর তুমি চাইলে সে ফেরত যাবে। সে বলল, বরং আমি তাকে অনুমতি দিচ্ছি হে আল্লাহর রাসুল! ৭৮৬
খাবারের আদব রক্ষা না করা ব্যক্তিকে উপদেশ ও শিক্ষাদান
(৫৭২) হজরত উমর বিন আবু সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত-
كُنْتُ غُلَامًا فِي حَجْرٍ رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَكَانَتْ يَدِي تَطِيشُ فِي الصَّحْفَةِ، فَقَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : يَا غُلَامُ، سَمَّ اللَّهَ وَكُلْ بِيَمِينِكَ، وَكُلْ مِمَّا يَلِيْكَ.
অর্থ: আমি ছোটবেলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিপালনে ছিলাম। একবার খাওয়ার সময় আমার হাত থালার চতুর্দিকে ঘুরছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটা দেখে আমাকে বললেন: এই ছেলে! বিসমিল্লাহ বলে খাও, ডান হাতে খাও এবং তোমার সামনে থেকে খাও। ৭৮৭ -অন্য একটি সহিহ বর্ণনায় এসেছে, তিনি বলেন, একদিন আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাবার গ্রহণ করছিলাম। আমি থালার চতুর্দিক থেকে আহার করতে লাগলাম। এটা দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বললেন: তুমি তোমার সামনে থেকে খাও। ৭৮৮
(৫৭৩) হজরত জাবালা বিন সুহাইম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَصَابَنَا عَامُ سَنَةٍ مَعَ ابْنِ الزُّبَيْرِ، فَرَزَقْنَا تَمْرًا، فَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ يَمُرُّ بِنَا وَنَحْنُ نَأْكُلُ، وَيَقُوْلُ: لَا تُقَارِنُوا؛ فَإِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَى عَنِ الْقِرَانِ، ثُمَّ يَقُوْلُ: إِلَّا أَنْ يَسْتَأْذِنَ الرَّجُلُ أَخَاهُ.
অর্থ: হজরত ইবনে যুবায়েরের আমলে আমরা দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হই, তখন আমরা রিজিক হিসাবে খেজুর প্রাপ্ত হই। একদিন ইবনে উমর রাদি. আমাদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন এমতাবস্থায় আমরা খেজুর খাচ্ছিলাম। তিনি বললেন, একত্রে একাধিক খেজুর মিলিত করে খেয়োনা, কেননা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ থেকে নিষেধ করেছেন। অতঃপর বলেন, কিন্তু যদি কেউ তার ভাইকে অনুমতি প্রদান করে। ৭৮৯
(৫৭৪) হজরত সালামা বিন আকওয়া রাদি. থেকে বর্ণিত- এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বাম হাতে খাচ্ছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন-
كُلْ بِيَمِينِكَ. قَالَ: لَا أَسْتَطِيعُ قَالَ: لَا اسْتَطَعْتَ، مَا مَنَعَهُ إِلَّا الْكِبْرُ. قَالَ: فَمَا رَفَعَهَا إِلَى فِيْهِ.
অর্থ: ডান হাতে খাও। সে বলল, আমি পারি না। তিনি বললেন, তুমি যেন নাই পার। শুধুমাত্র অহমিকাই তাকে বারণ করেছে। সালামা রাদি. বলেন, অতঃপর সে আর কখনো ডান হাত মুখে উঠাতে পারেনি। ৭৯০
খাবারের সময় দীনি কথাবার্তা বলা মুস্তাহাব
এ ব্যাপারে হজরত জাবের রাদি. এর হাদিস 'খাবারের প্রশংসা করা' অধ্যায়ে চলে গেছে। ইমাম গাজালি রহ. তার ইহইয়াউ উলুমিদ্দিন কিতাবে বলেন- খানার একটা আদব হল, খাবারের ফাঁকে ফাঁকে ভালো কথা এবং খানা ইত্যাদি সংক্রান্ত নেককারদের ঘটনাবলী আলোচনা করা। ৭৯১
খেয়েদেয়ে তৃপ্ত হয় না এমন ব্যক্তির করণীয়
(৫৭৫) হজরত ওয়াহশি বিন হারব রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ أَصْحَابَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالُوا: يَا رَسُوْلَ اللهِ، إِنَّا نَأْكُلُ وَلَا نَشْبَعُ. قَالَ: فَلَعَلَّكُمْ تَفْتَرِقُوْنَ؟ قَالُوا: نَعَمْ. قَالَ: فَاجْتَمِعُوْا عَلَى طَعَامِكُمْ وَاذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ، عَلَيْهِ يُبَارَكْ لَكُمْ فِيْهِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবিগণ একবার রাসুলের কাছে অভিযোগ করে বললেন: হে আল্লাহর রাসুল! আমরা খাই, কিন্তু তৃপ্ত হই না। নবিজি বললেন, তোমরা বোধহয় আলাদা আলাদা খাও? তারা বললেন, হ্যাঁ। নবিজি বললেন, তোমরা এখন থেকে একসাথে খাবে এবং শুরুতে আল্লাহর নাম স্মরণ করবে, তাহলে এতে তোমরা বরকত পাবে। ৭৯২
ব্যাধিগ্রস্ত লোকের সাথে খাওয়ার সময় যা বলবে
(৫৭৬) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِ مَجْذُوْمٍ فَوَضَعَهَا مَعَهُ فِي الْقَصْعَةِ وَقَالَ: كُلْ، ثِقَةً بِاللهِ، وَتَوَكَّلًا عَلَيْهِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার এক কুষ্ঠরোগীর হাত ধরে নিজের সঙ্গে খাবারের বাটিতে তা রেখে বললেন, আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও ভরসা রেখে তার নামে আহার কর। ৭৯৩
টিকাঃ
৭৮৬. সহিহ বুখারি: ২০৮১, সহিহ মুসলিম: ২০৩৬, সুনানে তিরমিজি: ১০৯৯, সুনানে দারিমি: ২০৭৪।
৭৮৭. সহিহ বুখারি: ৫৩৮৬, সহিহ মুসলিম: ২০২২/১০৮।
৭৮৮. সহিহ বুখারি: ৫৩৭৭, সহিহ মুসলিম: ২০২২/১০৯।
৭৮৯. সহিহ বুখারি: ৫৪৪৬, সহিহ মুসলিম: ২০৪৫, সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৩৪, সুনানে তিরমিজি: ১৮১৫, মুসনাদে আহমাদ ২/৭, সুনানে দারিমি: ২০৬৫।
৭৯০. সহিহ মুসলিম: ২০২১, সুনানে দারিমি: ২০২৮।
৭৯১. আমরা হানাফিদের মাজহাব এমনই।
৭৯২. সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৬৪, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩২৮৬, মুসনাদে আহমাদ ৩/৫০১।
৭৯৩. সুনানে আবু দাউদ: ৩৯২৫, সুনানে তিরমিজি: ১৮১৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৫৪২, আমাল: ৪৬৩, মুসতাদরাকে হাকেম ৪/১৩৭, আলফুতুحات ৫/২১৬।
📄 খাবার শেষে যে দুআ পড়তে হয়
মেহমান বা আত্মীয়-স্বজন যখন পানাহার কিংবা সুগন্ধি লাগানো ইত্যাদি শেষ করে দিতে চায়, তখন মেজবানের জন্য ততক্ষণ এরকম বলা মুস্তাহাব যে, 'আরেকটু নেন' যতক্ষণ না নিশ্চিত হবে যে, সে পর্যাপ্ত পরিমাণ খেয়েছে
জেনে রেখ, এরকম করা মুস্তাহাব। এমনকি স্ত্রী বা পরিবারের অন্যান্যদের ক্ষেত্রেও এরকম করা মুস্তাহাব। যাদের ব্যাপারে আশঙ্কা থাকে যে, তারা ক্ষুধা থাকা সত্ত্বেও হাত গুটিয়ে নিবে, যদিও চাহিদা অল্পই হয়। দলিল:
(৫৭৭) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত লম্বা হাদিস। যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুস্পষ্ট মুজিজার আলোচনা রয়েছে। সেখানে আছে- যখন হজরত আবু হুরায়রা রাদি. ক্ষুধার তাড়নায় রাস্তায় বসে পথচারীদের থেকে কুরআন শুনতে চাচ্ছিলেন এবং এর দ্বারা ইঙ্গিতে তাদের মেহমান হতে চাচ্ছিলেন। পরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আসহাবুস সুফফার কাছে পাঠালেন। তিনি তাদেরকে নিয়ে আসলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সবাইকে এক পেয়ালা দুধ দিয়ে তৃপ্ত করলেন। তিনি হাদিসটি উল্লেখ করতঃ এও বললেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলছেন-
بَقِيْتُ أَنَا وَأَنْتَ. قُلْتُ: صَدَقْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ . قَالَ: اقْعُدْ فَاشْرَبْ. فَقَعَدْتُ فَشَرِبْتُ، فَقَالَ: اشْرَبْ فَشَرِبْتُ، فَمَا زَالَ يَقُولُ: اشْرَبْ حَتَّى قُلْتُ: لَا وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ مَا أَجِدُ لَهُ مَسْلَكًا. قَالَ: فَأَرِنِي. فَأَعْطَيْتُهُ الْقَدَحَ، فَحَمِدَ اللَّهَ وَسَمَّى، وَشَرِبَ الْفَضْلَةَ.
অর্থ: এখন আমি এবং তুমি অবশিষ্ট আছি। আমি বললাম, ঠিক বলেছেন হে আল্লাহর রাসুল! তিনি বললেন, বসে পান করে নাও, আমি বসে পান করে নিলাম। পুনরায় বললেন, পান কর; আমি পান করলাম। এভাবে তিনি বলতেই থাকলেন, পান করো। এক পর্যায়ে তৃপ্ত হয়ে বলতে বাধ্য হলাম: সেই সত্তার শপথ, যিনি আপনাকে সত্য ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেছেন, আর আমি পারছি না। নবিজি বললেন, ঠিক আছে আমাকে দাও। আমি তাকে পেয়ালা দিলাম। অতঃপর তিনি আল্লাহর প্রশংসা করেন, আল্লাহর নাম নেন এবং অবশিষ্ট দুধটুকু পান করে ফেলেন। ৭৯৪
খাবার শেষে যে দুআ পড়তে হয়
(৫৭৮) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দস্তরখান উঠানোর সময় এই দুআ পড়তেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا، مُبَارَكًا فِيْهِ، غَيْرُ مَكْفِيٌّ وَلَا مُوَدَّعٍ، وَلَا مُسْتَغْنَى عَنْهُ، رَبَّنَا.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি হামদান কাসিরান তায়্যিবান, মুবারাকান ফিহি, গায়রা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মুয়াদ্দাইন, ওয়ালা মুসতাগনান আনহু, রাব্বানা।
অর্থ: পবিত্র, বরকতময় ও পর্যাপ্ত সকল প্রশংসা আল্লাহ পাকের জন্য। তবুও এই প্রশংসা যথেষ্ট নয়, ছেড়ে দেয়ার নয় এবং এ থেকে অমুখাপেক্ষীও থাকার নয়। হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের প্রশংসা ও দুআ কবুল করুন। ৭৯৫ -অন্য বর্ণনায় এসেছে- যখন খানা শেষ করতেন (বর্ণনাকারী এও বলেছেন, যখন দস্তরখান উঠাতেন) এই দুআ পড়তেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَفَانَا وَأَرْوَانَا غَيْرَ مَكْفِيٌّ وَلَا مَكْفُوْرٍ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল লাজি কাফানা ওয়া আরওরানা গাইরা মাকফিয়্যিন ওয়ালা মাকফুরিন।
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহ পাকের জন্য, যিনি আমাদেরকে তৃপ্ত ও সিক্ত করেছেন। এমতাবস্থায় এই প্রশংসা যথেষ্ট নয় এবং না অস্বীকার করা হয়েছে এমন। ৭৯৬
(৫৭৯) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
اللهَ لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَأْكُلَ الْأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا، أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا.
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা সেই বান্দার প্রতি খুশি হন যে পানাহার করে আল্লাহর প্রশংসা করে। ৭৯৭
(৫৮০) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খানা শেষ করে এই দুআ পড়তেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنَا وَسَقَانَا وَجَعَلَنَا مُسْلِمِينَ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল লাজি আতআমানা ওয়া সাকানা ওয়া জাআলানা মুসলিমিন।
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহ পাকের জন্য, যিনি আমাদেরকে আহার দিয়েছেন, সিক্ত করেছেন এবং সর্বোপরি আমাদেরক মুসলমান বানিয়েছেন। ৭৯৮
(৫৮১) হজরত আবু আইয়ুব খালিদ বিন জায়েদ রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহার শেষ করে এই দুআ পড়তেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَ وَسَقَى، وَسَوَّغَهُ وَجَعَلَ لَهُ مَخْرَجًا.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল লাজি আতআমা ওয়া সাকা, ওয়া সাওয়াগাহু ওয়া জাআলা লাহু মাখরাজা।
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহ পাকের জন্য, যিনি খেতে দিয়েছেন, পিপাসা নিবৃত্ত করেছেন, একে সহজে ভক্ষণযোগ্য করেছেন এবং তা নির্গত হওয়ার পথও করেছেন। ৭৯৯
(৫৮২) হজরত মুআজ বিন আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি খানা শেষে এই দুআ পড়বে তার পূর্বের যাবতীয় (ছোট) গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। দুআটি হল-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَطْعَمَنِي هَذَا وَرَزَقَنِيْهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল লাজি আতআমানি হাজা ওয়া রাজাকানিহি মিন গাইরি হাওলিন মিন্নি ওয়ালা কুওয়াহ। অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহ পাকের, যিনি আমাকে আমার সামর্থ্য-প্রচেষ্টা ছাড়াই এই খাদ্য খেতে দিয়েছেন এবং একে রিজিক হিসাবে দান করেছেন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৮০০
(৫৮৩) তাবেঈ হজরত আবদুর রহমান বিন যুবায়ের রহ. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত, তার কাছে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আট বছরের একজন খাদেম বলেছেন- নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে খাবার এলে তিনি তাকে বিসমিল্লাহ বলতে শুনেছেন। আর খাবার শেষে এই দুআ পড়তে শুনেছেন-
اللَّهُمَّ أَطْعَمْتَ وَسَقَيْتَ، وَأَغْنَيْتَ وَأَقْنَيْتَ، وَهَدَيْتَ وَأَحْسَنْتَ، فَلَكَ الْحَمْدُ عَلَى مَا أَعْطَيْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আতআমতা ওয়া সাকাইতা, ওয়া আগনাইতা ওয়া আকনাইতা, ওয়া হাদাইতা ওয়া আহসানতা, ফালাকাল হামদু আলা মা আ'তাইতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনিই আহার দিয়েছেন ও তৃষ্ণা নিবৃত্ত করেছেন, অভাবমুক্ত ও সম্পদশালী করেছেন, পথপ্রদর্শন করেছেন ও অনুগ্রহ করেছেন। আপনার দানকৃত নেয়ামতের ওপর আপনার কৃতজ্ঞতা আদায় করি। ৮০১
(৫৮৪) আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নবিজি খাবার শেষ করে এই দুআ পড়তেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي مَنَّ عَلَيْنَا وَهَدَانَا، وَالَّذِي أَشْبَعَنَا وَأَرْوَانَا، وَكُلَّ الْإِحْسَانِ آتَانَا.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল লাজি মান্না আলাইনা ওয়া হাদানা, ওয়াল্লাজি আশবাআনা ওয়া আরওয়ানা, ওয়া কুল্লাল ইহসানি আতানা।
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহ পাকের জন্য, যিনি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন এবং আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন, যিনি আমাদেরকে তৃপ্ত ও সিক্ত করেছেন এবং সবধরনের নেয়ামতরাজি আমাদেরকে দান করেছেন। ৮০২
(৫৮৫) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ খাবার শেষ করে- ইবনুস সুন্নির বর্ণনায়: যাকে আল্লাহ তাআলা খাবার খাওয়াবেন- সে যেন এই দুআ পাঠ করে-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ، وَأَطْعِمْنَا خَيْرًا مِنْهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি, ওয়া আতয়িমনা খাইরান মিনহু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের জন্য এতে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে এরচে উত্তম আহার দান করুন। -আর যাকে আল্লাহ তাআলা দুধ পান করাবেন, সে যেন নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করে। কারণ, দুধ ছাড়া অন্য কিছু পানাহারের জন্য যথেষ্ট হয় না-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْهِ، وَزِدْنَا مِنْهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহি, ওয়া যিদনা মিনহু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের জন্য এতে বরকত দান করুন এবং আমাদেরকে আরো বৃদ্ধি করে দিন।৮০০ - ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান।
(৫৮৬) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে দুর্বল সূত্রে বর্ণিত-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا شَرِبَ فِي الْإِنَاءِ تَنَفَّسَ ثَلَاثَةَ أَنْفَاسٍ يَحْمَدُ اللهُ تَعَالَى فِي كُلِّ نَفْسٍ، وَيَشْكُرُهُ فِي آخِرَهُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাত্রে পান করলে তিন শ্বাসে পান করতেন। প্রতি শ্বাসে আলহামদুলিল্লাহ বলতেন এবং শেষে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতেন। ৮০৪
টিকাঃ
৭৯৪. সহিহ বুখারি: ৬৪৫২, মুসনাদে আহমাদ ২/৫১৫।
৭৯৫. সহিহ বুখারি: ৫৪৫৮।
৭৯৬. সহিহ বুখারি: ৫৪৫৯, সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৪৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৫২, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩২৮৪, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৫৩, আমাল: ২৮৪, নাসাঈ, আমাল: ৪৬৮।
৭৯৭. সহিহ মুসলিম: ২৭৩৪, সুনানে তিরমিজি: ১৮১৭, মুসনাদে আহমাদ ৩/১০০।
৭৯৮. সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৫০, জামে তিরমিজি: ৩৪৫৭, শামায়েলে তিরমিজি: ১৯১, আমাল: ২৮৮-২৯০, নাসাঈ, আমাল: ৪৬৪, ই. সু., সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩২৮৩, মুসনাদে আহমাদ ৩/৩২।
৭৯৯. সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৫১, সুনানে নাসাঈ: ৬৮৬৭, আমাল: ৪৭০, ই. সু., ইবনে হিব্বান: ১৩৫১।
৮০০. সুনানে আবু দাউদ: ৪০২৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৫৮, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩২৮৫, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৩৯, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫০৭, আমাল: ৪৬৭।
৮০১. সুনানে কুবরা: ৬৮৯৮, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪৬৫, ইবনুস সুন্নি, মুসনাদে আহমাদ ৪/৬২।
৮০২. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪৬৬, ইবনুস সুন্নি।
৮০৩. সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৩০, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৫৫, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪৭৪, আমাল: ২৮৬-২৮৭।
৮০৪. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪৮১, ইবনুস সুন্নি, আলফুতুহাত ৫/২৪০।