📘 আল আযকার > 📄 সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে যা বলবে

📄 সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে যা বলবে


সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে যা বলবে
উপরে আরোহনকালে মুসাফিরের "আল্লাহু আকবার" বলার অধ্যায়ে হজরত ইবনে উমর রাদি. এর হাদিসে উল্লিখিত দুআটি সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে পাঠ করা সুন্নাত।
(৫৫০) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَقْبَلْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَأَبُوْ طَلْحَةَ، وَصَفِيَّةُ رَدِيْفَتُهُ عَلَى نَاقَتِهِ حَتَّى إِذَا كُنَّا بِظَهْرِ الْمَدِينَةِ، قَالَ: "آيِبُوْنَ ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ. فَلَمْ يَزَلْ يَقُوْلُ ذَلِكَ حَتَّى قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ.
অর্থ: আমি ও আবু তালহা রাদি. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মদিনার দিকে এগিয়ে আসছিলাম। আর সাফিয়্যা রাদি. ছিলেন নবিজির উষ্ট্রীতে আরোহী। অতঃপর আমরা যখন শহরতলীতে পৌঁছলাম, তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ পড়লেন এবং মদিনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত অবিরাম পড়তে থাকলেন-
آئِبُونَ تَائِبُوْنَ عَابِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ.
উচ্চারণ: আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা, লিরাব্বিনা হামিদুন।
অর্থ: আমরা প্রত্যাগমনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আপন পালনকর্তার প্রশংসাকারী। ৭৬১
ফজরের নামাজান্তে মুসাফির যে দুআগুলো পড়বে
জ্ঞাতব্য বিষয় এই যে, ফজরের পর মুকিমের জন্য যেসব দুআ পাঠ করা মুস্তাহাব, মুসাফিরের জন্যও সেগুলো মুস্তাহাব। এর আলোচনা পূর্বে গিয়েছে। তবে মুসাফিরের জন্য নিম্নবর্ণিত হাদিসে উল্লিখিত দুআটিও পড়া মুস্তাহাব:
(৫৫১) হজরত আবু বারজাহ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের নামাজ শেষ করতেন- বর্ণনাকারী বলেন, আমার জানা মতে 'ভ্রমণে' বলেছেন- উচ্চকণ্ঠে এই দুআ পড়তেন। সাহাবায়ে কেরামও শুনতে পেতেন। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِيَ الَّذِي جَعَلْتَهُ عِصْمَةَ أَمْرِي، اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي جَعَلْتَ فِيهَا مَعَاشِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসলিহ লি দীনিয়াল লাতি জাআলতাহু ইসমাতা আমরি, আল্লাহুম্মা আসলিহ লি দুনয়াইয়াল লাতি জাআলতা ফিহা মাআশি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আমার দীনে উন্নতিসাধন করুন, যে দীনকে আমার রক্ষাকবজ বানিয়েছেন। হে আল্লাহ, আমাকে দুনিয়াতেও উন্নতিসাধন করুন, যেখানে আমার জীবিকা রেখেছেন। [এই দুআ তিনবার পড়তেন]
اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي آخِرَتِيَ الَّتِي جَعَلْتَ إِلَيْهَا مَرْجِعِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসলিহ লি আখিরাতিয়াল লাতি জাআলতা ইলাইহা মারজিয়ি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার জন্য আমার পরকাল সংশোধন করে দিন, যেদিকে আপনি আমার প্রত্যাবর্তন ধার্য করেছেন। [এটাও তিনবার বলতেন]
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، اللَّهُمَّ أَعُوْذُ بِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিরিজাকা মিন সাখাতিকা, আল্লাহুম্মা আউজু বিকা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় কামনা করি, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি। [এটাও তিনবার পড়তেন]
اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الْجَدُّ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা মানিআ লিমা আ'তাইতা, ওয়ালা মু'তিয়া লিমা মানা'তা, ওয়ালা ইয়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি যা দেন তা বারণকারী কেউ নেই এবং যা বারণ করেন তা প্রদানকারীও কেউ নেই। আর আপনার গজব থেকে কোনো পদমর্যাদার অধিকারীকে তার পদমর্যাদা রক্ষা করতে পারবে না। ৭৬২
নিজের শহর দেখে পড়ার দুআ
ভ্রমণ থেকে প্রত্যাবর্তন করতঃ নিজ শহর নজরে পড়লে নিচের দুআগুলো পাঠ করবে-
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظْلَلْنَ، وَالْأَرْضِينَ السَّبْعِ وَمَا أَقْلَلْنَ، وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضْلَلْنَ، وَرَبَّ الرِّيَاحِ وَمَا ذَرَيْنَ. أَسْأَلُكَ خَيْرَهَذِهِ الْقَرْيَةِ وَخَيْرَ أَهْلِهَا، وَخَيْرَ مَا فِيْهَا، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ أَهْلِهَا وَشَرِّ مَا فِيْهَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতি ওয়ামা আজলালনা, ওয়াল আরাদ্বিনাস সাবয়ি ওয়ামা আকলালনা, ওয়া রাব্বাশ শায়াতিনি ওয়ামা আদ্বলালনা, ওয়া রাব্বার রিয়াহি ওয়ামা জারাইনা। আসআলুকা খাইরা হাজিহিল কারয়াতি ওয়া খাইরা আহলিহা ওয়া খাইরা মা ফিহা, ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি আহলিহা ওয়া শাররি মা ফিহা।
অর্থ: হে সাত আসমান ও এর ছায়ার পালনকর্তা, সাত জমিন ও এর বহনকৃত বস্তুর পালনকর্তা, শয়তান ও তাদের দ্বারা পথভ্রষ্টদের পালনকর্তা এবং বাতাস ও এর দ্বারা বিক্ষিপ্ত বস্তুর পালনকর্তা! আমি আপনার কাছে এই এলাকা ও অধিবাসীর মঙ্গল কামনা করি এবং এলাকা, অধিবাসী ও এতে থাকা অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। -তারপর পড়বে-
آئِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ، لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ.
উচ্চারণ: আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা, লিরাব্বিনা হামিদুন। অর্থ: আমরা প্রত্যাগমনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আপন পালনকর্তার প্রশংসাকারী। -অতঃপর পড়বে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْ لَنَا بِهَا قَرَارًا وَرِزْقًا حَسَنًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আললানা বিহা কারারান ওয়া রিজকান হাসানান।
অর্থ: হে আল্লাহ, এতে আমাদেরকে প্রশান্তি এবং উত্তম রিজিক দান কর। ৭৬৩
সফর থেকে ফিরে ঘরে প্রবেশ করে যে দুআ পাঠ করবে
(৫৫২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর থেকে প্রত্যাগমন করে ঘরে প্রবেশ করতেন তখন এই দুআ পড়তেন-
تَوْبًا تَوْبًا، لِرَبِّنَا أَوْبًا، لَا يُغَادِرُ حُوْبًا.
উচ্চারণ: তাওবান তাওবান, লিরাব্বিনা আওবান, লায়ুগাদিরু হুবা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ক্ষমা করুন। আমাদের পালনকর্তার কাছে তাওবা করলে তিনি সকল পাপই ক্ষমা করে দেন। ৭৬৪
সফর ফেরত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে যা বলতে হয়
সফর ফেরত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে এই দুআ পাঠ করা মুস্তাহাব-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي سَلَّمَكَ أَوِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَمَعَ الشَّمْلَ بِكَ.
উচ্চারণ: আহামদুলিল্লাহিল লাজি সাল্লামাকা (অথবা) আহামদুলিল্লাহিল লাজি জামাআশ শামলা বিকা।
অর্থ: সকল প্রশংসা সেই সত্ত্বার যিনি তোমাকে নিরাপদে রেখেছেন। (অথবা বলবে) সমস্ত প্রশংসা সেই সত্ত্বার যিনি তোমার দ্বারা আমাদের সবাইকে একত্রিত করেছেন। অথবা এ জাতীয় কিছু পাঠ করবে। -আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَا زِيْدَنَّكُمْ.
অর্থ: যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে অবশ্যই তোমাদেরকে বৃদ্ধি করে দেব। ৭৬৫-এ ব্যাপারে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদিসও রয়েছে, যা সামনের অধ্যায়ে আসছে।
যুদ্ধ ফেরত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে যা বলবে
(৫৫৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি যুদ্ধে ছিলেন। অতঃপর যখন প্রত্যাবর্তন করে ঘরে প্রবেশ করলেন, আমি তাকে স্বাগত জানালাম এবং তার হাত ধরে বললাম-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي نَصَرَكَ وَأَعَزَّكَ وَأَكْرَمَكَ.
উচ্চারণ: আহামদুলিল্লাহিল লাজি নাসারাকা ওয়া আআজ্জাকা ওয়া আকরামাক।
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি আপনাকে (কাফেরদের বিরুদ্ধে) সাহায্য করেছেন, বিজয়ী করেছেন এবং সম্মানিত করেছেন। ৭৬৬
হজ ফেরত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে যা বলা হবে এবং হজ ফেরত ব্যক্তি যা বলবে
(৫৫৪) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
جَاءَ غُلَامُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي أُرِيدُ الْحَجَّ، فَمَشِيَ مَعَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا غُلَامُ، زَوَّدَكَ اللَّهُ التَّقْوَى، وَوَجَّهَكَ فِي الْخَيْرِ، وَكَفَاكَ الْهَمِّ ، فَلَمَّا رَجَعَ الْغُلَامُ سَلَّمَ عَلَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا غُلَامُ قَبِلَ اللَّهُ حَجَّكَ، وَغَفَرَ ذَنْبَكَ، وَأَخْلَفَ نَفَقَتَكَ.
অর্থ: এক গোলাম নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এসে বলল, আমি হজের ইরাদা করেছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এগিয়ে দিতে) তার সাথে হেঁটে চললেন এবং তাকে বললেন, হে গোলাম!
زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى، وَوَجَّهَكَ فِي الْخَيْرِ، وَكَفَاكَ الْهَمَّ.
উচ্চারণ: জাওয়্যাদাকাল্লাহুত তাকওয়া, ওয়া ওয়াজ্জাহাকা ফিল খাইরি, ওয়া কাফাকাল হাম্মা।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা তাকওয়াকে তোমার পাথেয় বানান, তোমাকে কল্যাণের দিকে মনোযোগী করুন এবং সকল ব্যাপারে তিনি তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। -অতঃপর সে গোলাম প্রত্যাগমন করল এবং নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এসে সালাম দিল, নবিজি বললেন: হে গোলাম!
قَبِلَ اللهُ حَجَّكَ، وَغَفَرَ ذَنْبَكَ، وَأَخْلَفَ نَفَقَتَكَ.
উচ্চারণ: কাবিলাল্লাহু হাজ্জাকা ওয়া গাফারা জাম্বাকা ওয়া আখলাফা নাফাকাতাক।
অর্থ: আল্লাহ তোমার হজ কবুল করুন, তোমার পাপ মোচন করুন এবং তোমার খরপোশের জিম্মাদার হয়ে যান। ৭৬৭
(৫৫৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ করতেন:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْحَاجِ، وَلِمَنِ اسْتَغْفَرَ لَهُ الْحَاجُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফির লিলহাজ্জি, ওয়ালি মানিস তাগফারা লাহুল হাজ্জ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি হাজি সাহেবকে ক্ষমা করুন। যার জন্য হাজি সাহেব ক্ষমা চান, তাকেও ক্ষমা করে দিন। -হাকেম বলেন, ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী হাদিসটি সহিহ। ৭৬৮

টিকাঃ
৭৬১. সহিহ মুসলিম: ১৩৪৫, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৮৭, আমাল: ৫৫১, নাসাঈ, আমাল: ৫২৬, ইবনুস সুন্নি।
৭৬২. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫১৫, ইবনুস সুন্নি।
৭৬৩. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫৫৭, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫২৫, ইবনুস সুন্নি।
৭৬৪. আমাল: ৫৫৩, নাসাঈ, আদ্দুআ: ৮৩৭, তাবারানি, আমাল: ৫২৬, ইবনুস সুন্নি।
৭৬৫. সুরা ইবরাহিম: ৭।
৭৬৬. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫৩২, ইবনুস সুন্নি, সহিহ মুসলিম: ২১০৬, সুনানে আবু দাউদ: ৪১৫৩, সুনানে নাসাঈ ৮/২১২, আমাল: ৫৫৮, নাসাঈ।
৭৬৭. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫৩৩।
৭৬৮. সুনানে বাইহাকি ৫/২৬১, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৪১, সহিহ ইবনে খুজাইমা: ২৫১৬, আলমুজামুলস সাগির ২/১১৪, আলফুতুحات ৫/১৭৭।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন