📘 আল আযকার > 📄 সফরে বিভিন্ন অবস্থার দুআ

📄 সফরে বিভিন্ন অবস্থার দুআ


নৌযানে আরোহণের পর দুআ আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَقَالَ ارْكَبُوا فِيهَا بِسْمِ اللَّهِ مَجْرِ بِهَا وَمُرْسُهَا إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ .
অর্থ: নুহ তাদেরকে বললেন, তোমরা এ নৌকায় আরোহণ কর; এর চলাও আল্লাহর নামে এবং নোঙ্গর করাও। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়াপরবש। ৭৪৩-অন্যত্র বলেন-
وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالْأَنْعَامِ مَا تَرْكَبُوْن.
অর্থ: তিনি তোমাদের জন্য নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা আরোহণ করে থাক। ৭৪৪
(৫৩৫) হুসাইন বিন আলি রাদি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- নিমজ্জিত হওয়া থেকে আমার উম্মতের নিরাপত্তা হল যখন তারা নৌযানে আরোহণ করবে তখন এই দুআ পড়ে নিবে:
بِسْمِ اللَّهِ مَجْرِهَا وَمُرْسَهَا إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيمَةِ وَالسَّمُوتُ مَطْوِيتُ بِيَمِينِهِ سُبْحْنَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ.
অর্থ: নুহ তাদেরকে বললেন, তোমরা এ নৌকায় আরোহণ কর; এর চলাও আল্লাহর নামে এবং নোঙ্গর করাও। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়াপরবশ। ৭৪৫ তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বুঝেনি। কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তার হাতের মুঠোতে এবং আসমানসমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তার ডান হাতে। তিনি পবিত্র। এরা যাকে শরিক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। ৭৪৬
সফরে দুআ করা মুস্তাহাব
(৫৩৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
تَلَاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتُ لَا شَكٍّ فِيْهِنَّ : dَعْوَةُ الْمَظْلُوْمِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ.
অর্থ: তিনটি দুআ এমন, যা কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ নেই: মাজলুমের দুআ, মুসাফিরের দুআ এবং সন্তানের ওপর পিতা-মাতার বদদুআ। -ইমাম তিরমিজি রহ. একে হাসান বলেছেন। ৭৪৭
মুসাফির যখন টিলা বা টিলাসদৃশ স্থানে আরোহণ করবে আল্লাহু আকবার বলবে এবং যখন উপত্যকা বা উপত্যকামদৃש স্থানে অবতরণ করবে সুবহানাল্লাহ বলবে
(৫৩৭) জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كُنَّا إِذَا صَعِدْنَا كَبَّرْنَا، وَإِذَا نَزَلْنَا سَبَّحْنَا.
অর্থ: আমরা যখন উপরে চড়তাম, আল্লাহু আকবার বলতাম এবং যখন নিচে অবতরণ করতাম সুবহানাল্লাহ বলতাম।
(৫৩৮) ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجُيُوشُهُ إِذَا عَلَوُا الثَّنَايَا كَبَّرُوْا، وَإِذَا هَبَطُوْا سَبَّحُوْا، فَوُضِعَتِ الصَّلَاةُ عَلَى ذَلِكَ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সৈন্যদল যখন উঁচু স্থানে চড়তেন আল্লাহু আকবার বলতেন এবং নিচে অবতরণকালে সুবহানাল্লাহ বলতেন।
(৫৩৯) ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَفَلَ مِنَ الْحَجِّ أَوِ الْعُمْرَةِ - وَلَا أَعْلَمُهُ إِلَّا قَالَ: الْغَزْوِ - يَقُولُ : كُلَّمَا أَوْفَى عَلَى ثَنِيَّةٍ أَوْ فَدْفَدٍ كَبَّرَ ثَلَاثًا، ثُمَّ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، آئِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ سَاجِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ، صَدَقَ اللهُ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ."
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হজ বা উমরার সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন (বর্ণনাকারী বলেন, আমার জানা মতে জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তনের কথা বলেছেন) যখনই তিনি কোনো ঘাঁটি বা বিরান ভূমিতে পৌঁছতেন প্রথমে তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন। পরে এই দুআ পড়তেন-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ، آئِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ، لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ. صَدَقَ اللهُ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা, লিরাব্বিনা হামিদুন। সাদাকাল্লাহু ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহদাহু।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তার কোনো অংশীদার নেই। সবকিছুর রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তারই। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাগমনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আপন পালনকর্তার প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাআলা তার অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছেন, তার বিশেষ বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সকল (কুফরি) শক্তিকে পরাস্ত করেছেন। -এটি সহিহ বুখারির বর্ণনার শব্দ। সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় বর্ণনাকারীর এরকম কোনো সন্দেহ ছিল না। ৭৪৮
(৫৪০) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-
كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكُنَّا إِذَا أَشْرَفْنَا عَلَى وَادٍ هَلَّلْنَا وَكَبَّرْنَا، ارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُنَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، ارْبَعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ؛ فَإِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا، إِنَّهُ مَعَكُمْ، إِنَّهُ سَمِيعٌ قَرِيبٌ.
অর্থ: একদা আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। আমরা যখনই কোন উপত্যকায় আরোহন করতাম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতাম। এতে আমাদের আওয়াজ উঁচু হয়ে যেত। অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে লোকসকল! তোমরা নিজেদের প্রতি দয়া কর। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না; বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন। তিনি সর্বশ্রোতা নিকটবর্তী। ৭৪৯ -সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় আছে- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
عَلَيْكَ بِتَقْوَى اللهِ، وَالتَّكْبِيرِ عَلَى كُلِّ شَرَفٍ.
অর্থ: তুমি অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করবে এবং প্রত্যেক উঁচু স্থানে আল্লাহু আকবার বলবে। ৭৫০
(৫৪১) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো উঁচু স্থানে আরোহন করলে এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ لَكَ الشَّرَفُ عَلَى كُلِّ شَرَفٍ وَلَكَ الْحَمْدُ عَلَى كُلِّ حَالٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাশ শারাফু আলা কুল্লি শারাফিন ওয়া লাকাল হামদু আলা কুল্লি হাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার উচ্চতা সকল উচ্চতার উপরে এবং সর্বাবস্থায় সমস্ত প্রশংসা আপনার জন্যই। ৭৫১
তাকবির ইত্যাদিতে আওয়াজ অতিরিক্ত উঁচু করা নিষেধ
এ ব্যাপারে পূর্বে হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. এর হাদিস উল্লেখ হয়েছে। তিনি বলেন-
كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكُنَّا إِذَا أَشْرَفْنَا عَلَى وَادٍ هَلَّلْنَا وَكَبَّرْنَا، ارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُنَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، ارْبَعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ؛ فَإِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا، إِنَّهُ مَعَكُمْ، إِنَّهُ سَمِيعٌ قَرِيبٌ.
অর্থ: একদা আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। আমরা যখনই কোনো উপত্যকায় আরোহন করতাম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতাম। এতে আমাদের আওয়াজ উঁচু হয়ে যেত। অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে লোকসকল! তোমরা নিজেদের প্রতি দয়া কর। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না; বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন। তিনি সর্বশ্রোতা নিকটবর্তী। ৭৫২
ভ্রমণে ক্ষিপ্রতা, প্রাণবন্ততা, প্রমোদ ও ভ্রমণ সহজকরণের লক্ষ্যে কবিতা আবৃত্তি করা মুস্তাহাব
এ বিষয়ে অনেক প্রসিদ্ধ হাদিস বিদ্যমান। উমরাতুল কাজার ভ্রমণে যখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করছিলেন, তখন আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা রাদি. তার আগে আগে কবিতা পাঠ করছিলেন। ৭৫৩
বাহন পালিয়ে গেলে কী বলবে?
(৫৪২) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. এর সূত্রে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন-
إِذَا انْفَلَتَتْ دَابَّةُ أَحَدِكُمْ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَلْيُنَادِ: يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوْا، يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوْا، فَإِنَّ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْأَرْضِ حَاصِراً سَيَحْبِسُهُ.
অর্থ: যখন তোমাদের কারো বাহন মরুভূমি থেকে পালিয়ে যায়, তখন সে যেন উচ্চকণ্ঠে বলে: يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوْا يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوا.
অর্থ: হে আল্লাহর বান্দারা! একে থামাও, হে আল্লাহর বান্দারা! একে থামাও। -নিশ্চয় জমিনে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন অবরোধকারী আছেন, যিনি একে থামিয়ে দিবেন।
ইমাম নববি রহ. বলেন, আমাদের একজন বড় মাপের জ্ঞানী শায়খ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, একবার তার বাহন পালিয়ে যায়, আমার ধারণা মতে সেটা খচ্চর ছিল। এই হাদিস তার জানা থাকায় তিনি উপরিউক্ত কথাগুলো বললেন, সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা একে আটকে দিলেন। একবার আমি নিজে একটি কাফেলায় ছিলাম। সেখানে আমাদের একটি জন্তু পালিয়ে যায়, সবাই একে ধরতে অক্ষম হয়ে গেল। তখন আমি এই কথাগুলো বললাম, মুহূর্তেই সেটা থেমে গেল, এই বাক্যগুলো পাঠ করা ব্যতীত অন্য কোন কারণ ছাড়া।
অবাধ্য জন্তুর উপর আরোহনকালে যে দুআ পড়বে
(৫৪৩) প্রসিদ্ধ তাবেঈ আবু আবদুল্লাহ ইউনুস বিন উবায়েদ বিন দিনার বাসরি রহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- যে ব্যক্তি অবাধ্য জন্তুর উপর আরোহনকালে এই আয়াতটি জন্তুর কানে পড়বে, অবশ্যই সে জন্তু আল্লাহর নির্দেশে স্থির থাকবে-
اَفَغَيْرَ دِينِ اللهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَ إِلَيْهِ يُرْجَعُونَ.
উচ্চারণ: আফা গাইরা দীনিল্লাহি ইয়াবগুনা ওয়ালাহু আসলামা মান ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি তাওআন ওয়া কারহান ওয়া ইলাইহি য়্যুযুরযাউন।
অর্থ: সুতরাং কি তারা (নাজরানবাসী) আল্লাহর দীনের (ইসলামের) পরিবর্তে অন্য কোনো দীন (খ্রীষ্টধর্ম) তালাশ করছে? অথচ আসমান-জমিনের সব কিছু স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তারই সামনে নতশির! আর তারই দিকে তাদেরকে ফিরানো হবে। ৭৫৪
কোনো জনপদ দেখলে পড়ার দুআ
(৫৪৪) হজরত সুহাইব রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রমণ 'অবস্থায় যখনই কোনো জনপদ দেখতে পেতেন যেখানে প্রবেশের ইচ্ছা করেছেন, তখন এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظْلَلْنَ، وَالْأَرَضِينَ السَّبْعِ وَمَا أَقْلَلْنَ، وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضْلَلْنَ، وَرَبَّ الرِّيَاحِ وَمَا ذَرَيْنَ. أَسْأَلُكَ خَيْرَهَذِهِ الْقَرْيَةِ وَخَيْرَ أَهْلِهَا، وَخَيْرَ مَا فِيْهَا، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ أَهْلِهَا وَشَرِّ مَا فِيْهَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতি ওয়ামা আজলালনা, ওয়াল আরাদ্বিনাস সাবয়ি ওয়ামা আকলালনা, ওয়া রাব্বাশ শায়াতিনি ওয়ামা আদ্বলালনা, ওয়া রাব্বার রিয়াহি ওয়ামা জারাইনা। আসআলুকা খাইরা হাজিহিল কারয়াতি ওয়া খাইরা আহলিহা ওয়া খাইরা মা ফিহা, ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি আহলিহা ওয়া শাররি মা ফিহা।
অর্থ: হে সাত আসমান ও এর ছায়ার পালনকর্তা, সাত জমিন ও এর বহনকৃত বস্তুর পালনকর্তা, শয়তান ও তাদের দ্বারা পথভ্রষ্টদের পালনকর্তা এবং বাতাস ও এর দ্বারা বিক্ষিপ্ত বস্তুর পালনকর্তা! আমি আপনার কাছে এই এলাকা ও অধিবাসীর মঙ্গল কামনা করি এবং এলাকা, অধিবাসী ও এতে থাকা অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। ৭৫৫
(৫৪৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এলাকায় প্রবেশের নিয়ত করলে এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ وَخَيْرِ مَا جَمَعْتَ فِيْهَا، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَمَعْتَ فِيهَا . اَللَّهُمَّ ارْزُقْنَا جَنَاهَا وَأَعِذْنَا مِنْ وَبَاهَا وَحَبِّبْنَا إِلَى أَهْلِهَا وَحَبِّبْ صَالِحِيْ أَهْلِهَا إِلَيْنَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইর হাজিহি ওয়া খাইরি মা জামা'তা ফিহা, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জামা'তা ফিহা। আল্লাহুম্মার জুকনা জানাহা, ওয়া আয়িজনা মিন ওয়াবাহা, ওয়া হাব্বিবনা ইলা আহলিহা, ওয়া হাব্বিব সালিহি আহলিহা ইলাইনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এই জনপদের মঙ্গল এবং তাদের ভাগ্যলিপিতে রাখা মঙ্গল কামনা করি। আর তাদের অমঙ্গল এবং তাদের কপালে থাকা অমঙ্গল থেকে আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে এই এলাকার ফল রিজিক হিসাবে দিন এবং এর মহামারি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমাদেরকে এলাকাবাসীর কাছে প্রিয় করুন এবং তাদের পুণ্যবানদেরকেও আমাদের কাছে প্রিয় করে দিন। ৭৫৬
সফরে মানুষ বা অন্য কিছুকে ভয় করলে যে দুআ পাঠ করবে
(৫৪৬) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে সহিহ সনদের সাথে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো সম্প্রদায় থেকে ক্ষতির আশঙ্কা করলে এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُوْرِهِمْ، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফি নুহুরিহিম, ওয়া নাউজুবিকা মিন শুরুরিহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি দুশমনের দুশমনির মোকাবেলায় আপনাকে স্থাপন করেছি এবং তাদের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করছি। ৭৫৭ -পাশাপাশি বিপদাপদের অন্যান্য দুআগুলোও পাঠ করা মুস্তাহাব।
কোনো ভূতপ্রেত সামনে আসলে মুসাফির যা বলবে
(৫৪৭) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا تَغَوَّلَتْ لَكُمُ الْغِيْلَانُ فَنَادُوْا بِالْأَذَانِ.
অর্থ: যখন তোমাদের সামনে ভূতপ্রেত আত্মপ্রকাশ করে তখন তোমরা উচ্চকণ্ঠে আজান দিবে। ৭৫৮
কোথাও যাত্রাবিরতি করলে পড়ার দুআ
(৫৪৮) হজরত খাওলা বিনতে হাকিম রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি কোথাও অবতরণ করে এই দুআ পড়বে, সেখান থেকে যাত্রা করা পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে কোনো কিছু ক্ষতি করতে পারবে না। দুআটি হল-
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ.
উচ্চারণ: আউজু বি-কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা।
অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ উক্তির মাধ্যমে তার সমস্ত সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করি। ৭৫৯
(৫৪৯) আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় রাত ঘনিয়ে এলে এই দুআ পড়তেন-
يَا أَرْضُ رَبِّي وَرَبُّكِ اللهُ، أَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ شَرِّكِ وَشَرِّ مَا فِيكِ، وَشَرِّ مَا خُلِقَ فِيكِ، وَشَرِّ مَا يَدِبُّ عَلَيْكِ. أَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَسَدٍ وَأَسْوَدَ، وَمِنَ الْحَيَّةِ وَالْعَقْرَبِ، وَمِنْ سَاكِنِ الْبَلَدِ، وَمِنْ وَالِدٍ وَمَا وَلَدَ.
উচ্চারণ: ইয়া আরদু, রাব্বি ওয়া রাব্বুকিল্লাহু। আউজুবিল্লাহি মিন শাররিকি ওয়া শাররি মা ফিকি ওয়া শাররি মা খুলিকা ফিকি। ওয়া শাররি মা ইয়াদিব্বু আলাইকি, আউজুবিকা মিন আসাদিন ওয়া আসওয়াদা, ওয়া মিনাল হাইয়াতি ওয়াল আকরাবি, ওয়া মিন সাকিনিল বালাদি, ওয়া ওয়ালিদিন ওয়া মা ওয়ালাদা।
অর্থ: হে জমি, আমার এবং তোমার পালনকর্তা হলেন আল্লাহ তাআলা। আমি তোমার, তোমার মাঝে থাকা, তোমার মাঝে সৃষ্ট এবং তোমার বুকে বিচরণকারী অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি। হে আল্লাহ, আমি তোমার আশ্রয় কামনা করি সিংহ ও মানুষ থেকে, সাপ ও বিচ্ছু থেকে এবং জিন, ইবলিশ ও শয়তান থেকে। ৭৬০

টিকাঃ
৭৪৩. সুরা হুদ: ৪১।
৭৪৪. সুরা জুখরুফ: ১২।
৭৪৫. সুরা হুদ: ৪১।
৭৪৬. সুরা জুমার: ৬৭।
৭৪৭. আলআদাব: ৩২, বুখারি, সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৬, সুনানে তিরমিজি: ১৯০৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৬২, মুসনাদে আহমাদ ২/২৫৮, ইবনে হ্বিান: ২৪০৬।
৭৪৮. সহিহ বুখারি: ১৭৯৭, সহিহ মুসলিম: ১৩৪৪, মুয়াত্তা মালেক ২/৪২১, সুনানে তিরমিজি: ৯৫০, সহিহ আবু দাউদ: ২৭৭০, মুসনাদে আহমাদ ২/৫, আমাল: ৫৩৯, নাসাঈ, আমাল: ৫১৯, ইবনুস সুন্নি।
৭৪৯. সহিহ বুখারি: ৬৩৮৪, সহিহ মুসলিম: ২৭০৪।
৭৫০. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৪১।
৭৫১. আমাল: ৫২২, ইবনুস সুন্নি, আলফুতুহাত ৫/১৪৫।
৭৫২. অনুবাদে পূর্বের হাদিসটি যোগ করা হল।
৭৫৩. বিস্তারিত দেখুন: সুনানে তিরমিজি: ২৮৪৭, সুনানে নাসাই ৫/২১১।
৭৫৪. সুরা আলে ইমরান: ৮৩। আমাল: ৫১০, ইবনুস সুন্নি, আলফুতুحات ৫/১৫২। আয়াতের তরজমা: অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন ১ম খণ্ড থেকে।
৭৫৫. সুনানে নাসাই: ৮৭৭৫, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫২৪, ইবনুস সুন্নি, আমাল: ৫৪৪, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান: ২৩৭৭, আলফুতুحات ৫/১৫৪।
৭৫৬. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫২৭, ইবনুস সুন্নি, আলফুতুহাত ৫/১৫৮।
৭৫৭. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৭।
৭৫৮. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫২৩, ইবনুস সুন্নি, মুসনাদে আহমাদ ৩/৩০৫, আলফুতুحات ৫/১৬১।
৭৫৯. সহিহ মুসলিম: ২৭০৮, মুয়াত্তা মালেক ২/৯৭৮, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৩৭, মুসনাদে আহমাদ ৬/৩৭৭, সুনানে দারিমি: ২৬৮৩, আমাল: ৫৬০, নাসাঈ, আমাল: ৫২৮, ইবনুস সুন্নি।
৭৬০. সুনানে আবু দাউদ: ২৬০৩, মুসনাদে আহমাদ ২/১৩২, আমাল: ৫৬৩, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ২/১০০।

📘 আল আযকার > 📄 সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে যা বলবে

📄 সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে যা বলবে


সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে যা বলবে
উপরে আরোহনকালে মুসাফিরের "আল্লাহু আকবার" বলার অধ্যায়ে হজরত ইবনে উমর রাদি. এর হাদিসে উল্লিখিত দুআটি সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করে পাঠ করা সুন্নাত।
(৫৫০) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَقْبَلْنَا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَا وَأَبُوْ طَلْحَةَ، وَصَفِيَّةُ رَدِيْفَتُهُ عَلَى نَاقَتِهِ حَتَّى إِذَا كُنَّا بِظَهْرِ الْمَدِينَةِ، قَالَ: "آيِبُوْنَ ، تَائِبُونَ، عَابِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ. فَلَمْ يَزَلْ يَقُوْلُ ذَلِكَ حَتَّى قَدِمْنَا الْمَدِينَةَ.
অর্থ: আমি ও আবু তালহা রাদি. নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মদিনার দিকে এগিয়ে আসছিলাম। আর সাফিয়্যা রাদি. ছিলেন নবিজির উষ্ট্রীতে আরোহী। অতঃপর আমরা যখন শহরতলীতে পৌঁছলাম, তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ পড়লেন এবং মদিনায় প্রবেশ করা পর্যন্ত অবিরাম পড়তে থাকলেন-
آئِبُونَ تَائِبُوْنَ عَابِدُونَ، لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ.
উচ্চারণ: আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা, লিরাব্বিনা হামিদুন।
অর্থ: আমরা প্রত্যাগমনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আপন পালনকর্তার প্রশংসাকারী। ৭৬১
ফজরের নামাজান্তে মুসাফির যে দুআগুলো পড়বে
জ্ঞাতব্য বিষয় এই যে, ফজরের পর মুকিমের জন্য যেসব দুআ পাঠ করা মুস্তাহাব, মুসাফিরের জন্যও সেগুলো মুস্তাহাব। এর আলোচনা পূর্বে গিয়েছে। তবে মুসাফিরের জন্য নিম্নবর্ণিত হাদিসে উল্লিখিত দুআটিও পড়া মুস্তাহাব:
(৫৫১) হজরত আবু বারজাহ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ফজরের নামাজ শেষ করতেন- বর্ণনাকারী বলেন, আমার জানা মতে 'ভ্রমণে' বলেছেন- উচ্চকণ্ঠে এই দুআ পড়তেন। সাহাবায়ে কেরামও শুনতে পেতেন। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دِينِيَ الَّذِي جَعَلْتَهُ عِصْمَةَ أَمْرِي، اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي دُنْيَايَ الَّتِي جَعَلْتَ فِيهَا مَعَاشِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসলিহ লি দীনিয়াল লাতি জাআলতাহু ইসমাতা আমরি, আল্লাহুম্মা আসলিহ লি দুনয়াইয়াল লাতি জাআলতা ফিহা মাআশি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আমার দীনে উন্নতিসাধন করুন, যে দীনকে আমার রক্ষাকবজ বানিয়েছেন। হে আল্লাহ, আমাকে দুনিয়াতেও উন্নতিসাধন করুন, যেখানে আমার জীবিকা রেখেছেন। [এই দুআ তিনবার পড়তেন]
اللَّهُمَّ أَصْلِحْ لِي آخِرَتِيَ الَّتِي جَعَلْتَ إِلَيْهَا مَرْجِعِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসলিহ লি আখিরাতিয়াল লাতি জাআলতা ইলাইহা মারজিয়ি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার জন্য আমার পরকাল সংশোধন করে দিন, যেদিকে আপনি আমার প্রত্যাবর্তন ধার্য করেছেন। [এটাও তিনবার বলতেন]
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، اللَّهُمَّ أَعُوْذُ بِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিরিজাকা মিন সাখাতিকা, আল্লাহুম্মা আউজু বিকা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় কামনা করি, হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি। [এটাও তিনবার পড়তেন]
اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الْجَدُّ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা মানিআ লিমা আ'তাইতা, ওয়ালা মু'তিয়া লিমা মানা'তা, ওয়ালা ইয়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি যা দেন তা বারণকারী কেউ নেই এবং যা বারণ করেন তা প্রদানকারীও কেউ নেই। আর আপনার গজব থেকে কোনো পদমর্যাদার অধিকারীকে তার পদমর্যাদা রক্ষা করতে পারবে না। ৭৬২
নিজের শহর দেখে পড়ার দুআ
ভ্রমণ থেকে প্রত্যাবর্তন করতঃ নিজ শহর নজরে পড়লে নিচের দুআগুলো পাঠ করবে-
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظْلَلْنَ، وَالْأَرْضِينَ السَّبْعِ وَمَا أَقْلَلْنَ، وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضْلَلْنَ، وَرَبَّ الرِّيَاحِ وَمَا ذَرَيْنَ. أَسْأَلُكَ خَيْرَهَذِهِ الْقَرْيَةِ وَخَيْرَ أَهْلِهَا، وَخَيْرَ مَا فِيْهَا، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ أَهْلِهَا وَشَرِّ مَا فِيْهَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতি ওয়ামা আজলালনা, ওয়াল আরাদ্বিনাস সাবয়ি ওয়ামা আকলালনা, ওয়া রাব্বাশ শায়াতিনি ওয়ামা আদ্বলালনা, ওয়া রাব্বার রিয়াহি ওয়ামা জারাইনা। আসআলুকা খাইরা হাজিহিল কারয়াতি ওয়া খাইরা আহলিহা ওয়া খাইরা মা ফিহা, ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি আহলিহা ওয়া শাররি মা ফিহা।
অর্থ: হে সাত আসমান ও এর ছায়ার পালনকর্তা, সাত জমিন ও এর বহনকৃত বস্তুর পালনকর্তা, শয়তান ও তাদের দ্বারা পথভ্রষ্টদের পালনকর্তা এবং বাতাস ও এর দ্বারা বিক্ষিপ্ত বস্তুর পালনকর্তা! আমি আপনার কাছে এই এলাকা ও অধিবাসীর মঙ্গল কামনা করি এবং এলাকা, অধিবাসী ও এতে থাকা অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। -তারপর পড়বে-
آئِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ، لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ.
উচ্চারণ: আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা, লিরাব্বিনা হামিদুন। অর্থ: আমরা প্রত্যাগমনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আপন পালনকর্তার প্রশংসাকারী। -অতঃপর পড়বে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْ لَنَا بِهَا قَرَارًا وَرِزْقًا حَسَنًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আললানা বিহা কারারান ওয়া রিজকান হাসানান।
অর্থ: হে আল্লাহ, এতে আমাদেরকে প্রশান্তি এবং উত্তম রিজিক দান কর। ৭৬৩
সফর থেকে ফিরে ঘরে প্রবেশ করে যে দুআ পাঠ করবে
(৫৫২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফর থেকে প্রত্যাগমন করে ঘরে প্রবেশ করতেন তখন এই দুআ পড়তেন-
تَوْبًا تَوْبًا، لِرَبِّنَا أَوْبًا، لَا يُغَادِرُ حُوْبًا.
উচ্চারণ: তাওবান তাওবান, লিরাব্বিনা আওবান, লায়ুগাদিরু হুবা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে পরিপূর্ণ ক্ষমা করুন। আমাদের পালনকর্তার কাছে তাওবা করলে তিনি সকল পাপই ক্ষমা করে দেন। ৭৬৪
সফর ফেরত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে যা বলতে হয়
সফর ফেরত ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে এই দুআ পাঠ করা মুস্তাহাব-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي سَلَّمَكَ أَوِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَمَعَ الشَّمْلَ بِكَ.
উচ্চারণ: আহামদুলিল্লাহিল লাজি সাল্লামাকা (অথবা) আহামদুলিল্লাহিল লাজি জামাআশ শামলা বিকা।
অর্থ: সকল প্রশংসা সেই সত্ত্বার যিনি তোমাকে নিরাপদে রেখেছেন। (অথবা বলবে) সমস্ত প্রশংসা সেই সত্ত্বার যিনি তোমার দ্বারা আমাদের সবাইকে একত্রিত করেছেন। অথবা এ জাতীয় কিছু পাঠ করবে। -আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَا زِيْدَنَّكُمْ.
অর্থ: যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা আদায় কর তাহলে অবশ্যই তোমাদেরকে বৃদ্ধি করে দেব। ৭৬৫-এ ব্যাপারে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদিসও রয়েছে, যা সামনের অধ্যায়ে আসছে।
যুদ্ধ ফেরত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে যা বলবে
(৫৫৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি যুদ্ধে ছিলেন। অতঃপর যখন প্রত্যাবর্তন করে ঘরে প্রবেশ করলেন, আমি তাকে স্বাগত জানালাম এবং তার হাত ধরে বললাম-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي نَصَرَكَ وَأَعَزَّكَ وَأَكْرَمَكَ.
উচ্চারণ: আহামদুলিল্লাহিল লাজি নাসারাকা ওয়া আআজ্জাকা ওয়া আকরামাক।
অর্থ: সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি আপনাকে (কাফেরদের বিরুদ্ধে) সাহায্য করেছেন, বিজয়ী করেছেন এবং সম্মানিত করেছেন। ৭৬৬
হজ ফেরত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে যা বলা হবে এবং হজ ফেরত ব্যক্তি যা বলবে
(৫৫৪) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
جَاءَ غُلَامُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنِّي أُرِيدُ الْحَجَّ، فَمَشِيَ مَعَهُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا غُلَامُ، زَوَّدَكَ اللَّهُ التَّقْوَى، وَوَجَّهَكَ فِي الْخَيْرِ، وَكَفَاكَ الْهَمِّ ، فَلَمَّا رَجَعَ الْغُلَامُ سَلَّمَ عَلَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا غُلَامُ قَبِلَ اللَّهُ حَجَّكَ، وَغَفَرَ ذَنْبَكَ، وَأَخْلَفَ نَفَقَتَكَ.
অর্থ: এক গোলাম নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এসে বলল, আমি হজের ইরাদা করেছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (এগিয়ে দিতে) তার সাথে হেঁটে চললেন এবং তাকে বললেন, হে গোলাম!
زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى، وَوَجَّهَكَ فِي الْخَيْرِ، وَكَفَاكَ الْهَمَّ.
উচ্চারণ: জাওয়্যাদাকাল্লাহুত তাকওয়া, ওয়া ওয়াজ্জাহাকা ফিল খাইরি, ওয়া কাফাকাল হাম্মা।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা তাকওয়াকে তোমার পাথেয় বানান, তোমাকে কল্যাণের দিকে মনোযোগী করুন এবং সকল ব্যাপারে তিনি তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান। -অতঃপর সে গোলাম প্রত্যাগমন করল এবং নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে এসে সালাম দিল, নবিজি বললেন: হে গোলাম!
قَبِلَ اللهُ حَجَّكَ، وَغَفَرَ ذَنْبَكَ، وَأَخْلَفَ نَفَقَتَكَ.
উচ্চারণ: কাবিলাল্লাহু হাজ্জাকা ওয়া গাফারা জাম্বাকা ওয়া আখলাফা নাফাকাতাক।
অর্থ: আল্লাহ তোমার হজ কবুল করুন, তোমার পাপ মোচন করুন এবং তোমার খরপোশের জিম্মাদার হয়ে যান। ৭৬৭
(৫৫৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দুআ করতেন:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْحَاجِ، وَلِمَنِ اسْتَغْفَرَ لَهُ الْحَاجُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফির লিলহাজ্জি, ওয়ালি মানিস তাগফারা লাহুল হাজ্জ।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি হাজি সাহেবকে ক্ষমা করুন। যার জন্য হাজি সাহেব ক্ষমা চান, তাকেও ক্ষমা করে দিন। -হাকেম বলেন, ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী হাদিসটি সহিহ। ৭৬৮

টিকাঃ
৭৬১. সহিহ মুসলিম: ১৩৪৫, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৮৭, আমাল: ৫৫১, নাসাঈ, আমাল: ৫২৬, ইবনুস সুন্নি।
৭৬২. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫১৫, ইবনুস সুন্নি।
৭৬৩. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫৫৭, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫২৫, ইবনুস সুন্নি।
৭৬৪. আমাল: ৫৫৩, নাসাঈ, আদ্দুআ: ৮৩৭, তাবারানি, আমাল: ৫২৬, ইবনুস সুন্নি।
৭৬৫. সুরা ইবরাহিম: ৭।
৭৬৬. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫৩২, ইবনুস সুন্নি, সহিহ মুসলিম: ২১০৬, সুনানে আবু দাউদ: ৪১৫৩, সুনানে নাসাঈ ৮/২১২, আমাল: ৫৫৮, নাসাঈ।
৭৬৭. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫৩৩।
৭৬৮. সুনানে বাইহাকি ৫/২৬১, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৪১, সহিহ ইবনে খুজাইমা: ২৫১৬, আলমুজামুলস সাগির ২/১১৪, আলফুতুحات ৫/১৭৭।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন