📘 আল আযকার > 📄 সফরের উদ্দেশে বের হওয়ার দুআ

📄 সফরের উদ্দেশে বের হওয়ার দুআ


ঘর থেকে বেরোবার ইচ্ছা পোষণের সময় করণীয়
সফরের নিয়তে ঘর থেকে বেরোবার ইচ্ছা করলে দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব। দলিল এই হাদিস:
(৫১৯) সাহাবি মুকাত্তাম বিন মিকদাম রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا خَلَّفَ أَحَدٌ عِنْدَ أَهْلِهِ أَفْضَلَ مِنْ رَكْعَتَيْ يَرْكَعُهُمَا عِنْدَهُمْ حِيْنَ يُرِيدُ سَفَرًا.
অর্থ: যখন কোনো ব্যক্তি সফরের ইচ্ছা করে, তখন সে তার পরিবারের কাছে যে দুই রাকাত নামাজ পড়ে যায়, এর চেয়ে উত্তম কিছু সে নিজের পরিবারের জন্য রেখে যায় না। তাবারানি এটি বর্ণনা করেছেন। ৭২৫
আমাদের জনৈক ইমাম বলেন, সেই দুই রাকাতের প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পরে সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়া মুস্তাহাব। আবার কেউ বলেছেন, প্রথম রাকাতে সুরা ফালাক, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা নাস পড়বে। সালাম ফিরানোর পর আয়াতুল কুরসি পড়বে। কেননা হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি ঘর থেকে বেরোনোর পূর্বে আয়াতুল কুরসি পড়বে, সে ঘরে ফেরা পর্যন্ত কোনো খারাপ কিছুতে আক্রান্ত হবে না। সুরা কুরাইশ পড়াও মুস্তাহাব।
কেননা আবুল হাসান কাজবিনি রহ. যিনি ছিলেন শাফেয়ি ফকিহ, প্রকাশ্য কারামতের অধিকারী ও উজ্জ্বল অবস্থার অধিকারী। তিনি বলেছেন, এই সুরা সমস্ত অনিষ্টের রক্ষাকবচ। আবু তাহের বিন জাহশুয়াহ রহ. বলেন, আমি একবার কোথাও সফরের ইচ্ছা করেছিলাম, কিন্তু মনে মনে ভীত ছিলাম। ইত্যবসরে আমি কাজবিনির কাছে উপস্থিত হয়ে দুআর দরখাস্ত করি। তখন তিনি প্রথমে নিজে থেকে বললেন, যে ব্যক্তি সফরে যাওয়ার ইচ্ছা করে, কিন্তু সে কোনো শত্রু বা হিংস্র জন্তুর ভয় করে, সে যেন সুরা কুরাইশ পড়ে। কেননা এটা সকল অনিষ্টের রক্ষাকবচ। অতঃপর আমি তা পাঠ করি, ফলে আজও পর্যন্ত আমি কোনো বিপদের সম্মুখীন হইনি।
এসব কিছু পড়া শেষ হলে একনিষ্ঠ মনে ও বিনম্রচিত্তে দুআ করা মুস্তাহাব। সবচেয়ে উত্তম দুআ হল:
اللَّهُمَّ بِكَ أَسْتَعِينُ وَعَلَيْكَ أَتَوَكَّلُ ، اللهُمَّ ذَلَّلْ لِي صُعُوبَةَ أَمْرِي، وَسَهِّلْ عَلَيَّ مَشَقَّةَ سَفَرِي، وَارْزُقْنِي مِنَ الْخَيْرِ أَكْثَرَ مِمَّا أَطْلُبُ، وَاصْرِفْ عَنِّى كُلَّ شَرٍّ، رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي، وَنَوِّرُ قَلْبِي، وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَحْفِظُكَ وَاسْتَوْدِعُكَ نَفْسِي وَدِينِي وَأَهْلِي وَأَقَارِبِي وَكُلَّ مَا أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَيْهِمْ بِهِ مِنْ آخِرَةٍ وَدُنْيَا، فَاحْفَظْنَا أَجْمَعِينَ مِنْ كُلِّ سُوءٍ يَا كَرِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিকা আসতায়িনু ওয়া আলাইকা আতাওয়াক্কালু, আল্লাহুম্মা জাল্লিল লি সুঊবাতা আমরি, ওয়া সাহহিল আলাইয়্যা মাশাক্কাতা সাফারি, ওয়ার জুকনি মিনাল খাইরি আকসারা মিম্মা আতলুবু, ওয়াসরিফ আন্নি কুল্লা শাররিন। রাব্বিশ রাহলি সাদরি, ওয়া নাব্বির কালবি, ওয়া ইয়াসির লি আমরি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসতাহফিজুকা ওয়া আসতাওদিউকা নাফসি ওয়া দীনি ওয়া আহলি ওয়া আকারিবি, ওয়া কুল্লা মা আনআমতা আলাইয়্যা ওয়া আলাইহিম বিহি মিন আখিরাতিন ও দুনইয়া, ফাহফাজনা আজমাঈনা মিন কুল্লি সুয়িন ইয়া কারিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি এবং আপনার ওপরই ভরসা রাখি। হে আল্লাহ, আমার জন্য আমার কাজের জটিলতা দূর করে দিন, আমার ভ্রমণের কষ্ট সহজসাধ্য করে দিন, আমাকে কামনার চাইতে বেশি মঙ্গল দান করুন এবং আমার থেকে সবধরনের অমঙ্গল দূর করে রাখুন। হে আমার পালনকর্তা, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন, অন্তর আলোকিত করে দিন এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। হে আল্লাহ, আমি আপনার হেফাজতে ন্যস্ত করলাম এবং আপনার কাছে আমানত রাখলাম আমার আত্মা, দীন, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং আমার ও তাদের প্রতি আপনার প্রদত্ত ইহকালীন-পরকালীন সকল নেয়ামতরাজি। অতএব, আমাদের সবাইকে সবধরনের অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন হে মহানুভব সত্তা। ৭২৬
দুআ শুরু ও শেষ করবে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা এবং নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ পাঠের মাধ্যমে। অতঃপর যখন মজলিস থেকে উঠে দাঁড়াবে তখন পড়বে:
(৫২০) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরের ইচ্ছায় বৈঠক থেকে উঠে দাঁড়াতেন তখন বলতেন:
اللَّهُمَّ إِلَيْكَ تَوَجَّهْتُ وَبِكَ اعْتَصَمْتُ اللَّهُمَّ اكْفِنِي مَا هَمَّنِي وَمَا لَا أَهْتَمُّ لَهُ. اللَّهُمَّ زَوَّدْنِي التَّقْوَى، وَاغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَوَجَّهْنِي لَلْخَيْرِ أَيْنَمَا تَوَجَّهْتُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইলাইকা তাওয়াজ্জাহতু ওয়া বিকা' তাসামতু, আল্লাহুম্মাক ফিনি মা হাম্মানি ওয়া মালা আহতাম্মু লাহু, আল্লাহুম্মা জাওয়িদনিত তাকওয়া, ওয়াগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াজ্জিহনি লিলখাইরি আইনামা তাওয়াজ্জাহতু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার অভিমুখী হয়েছি এবং আপনাকে আঁকড়ে ধরেছি। হে আল্লাহ, যে বস্তু আমাকে উদ্বিগ্ন করে রেখেছে এবং যার জন্য আমি প্রস্তুতও নই তার জন্য আপনি যথেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ, আমাকে পরহেযগারি যোগান, আমার পাপ ক্ষমা করে দিন এবং যেখানেই রওনা করি না কেন আমাকে ভালো কাজের জন্য প্রবিষ্ট করে রাখুন। ৭২৭
সফরের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার দুআ
কিতাবের শুরুতে ঘর থেকে বের হওয়া ব্যক্তি কী দুআ পড়বে তা অতীত হয়েছে। সেটা মুসাফিরের জন্যও মুস্তাহাব। তার জন্য সেটা বেশি বেশি পড়তে থাকা মুস্তাহাব। তার জন্য পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, সাথী-সঙ্গী, প্রতিবেশীদের থেকে বিদায় গ্রহণ করা মুস্তাহাব। তাদের কাছে নিজের জন্য দুআ চাইবে এবং তাদের জন্যও দুআ করবে।
(৫২১) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ اللهَ تَعَالَى إِذَا اسْتُوْدِعَ شَيْئًا حَفِظَهُ.
অর্থ: কোনো জিনিস আল্লাহর হেফাজতে রাখা হলে তিনি তা হেফাজতে রাখেন। ৭২৮
(৫২২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন: যে ব্যক্তি সফরে বের হওয়ার ইচ্ছা করে, সে যেন রেখে যাওয়া লোকদের উদ্দেশ্যে এই দুআ পড়ে:
أَسْتَوْدِعُكُمُ اللَّهَ الَّذِي لَا تَضِيعُ وَدَائِعُهُ.
উচ্চারণ: আসতাউ দিউকুমুল্লাহাল্লাজি লা তাদিউ ওয়াদায়িউহ। অর্থ: আমি তোমাদেরকে আল্লাহর কাছে গচ্ছিত রাখলাম, যার কাছে গচ্ছিত আমানত বিনষ্ট হয় না। ৭২৯
(৫২৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا أَرَادَ أَحَدُكُمْ سَفَرًا فَلْيُوَدِّعْ إِخْوَانَهُ، فَإِنَّ اللَّهَ تَعَالَى جَاعِلٌ فِي دُعَائِهِمْ خَيْرًا.
অর্থ: তোমাদের কেউ সফরের ইচ্ছা করলে সে যেন ভাইবেরাদর থেকে বিদায় নেয়, কেননা আল্লাহ তাআলা তাদের দুআয় কল্যাণ রেখেছেন। ৭৩০

টিকাঃ
৭২৫. আলফুতুহাত ৫/১০৫।
৭২৬. সিলসিলায়ে জয়িফা: ৩৭২, আলফুতুহাত ৫/১০৫।
৭২৭. সুনানে বাইহাকি ৫/২৫০; মুসনাদে আবু ইয়ালা: ২৭৭০; মুসনাদুশ শিহাব: ১৪৯৭, কুজায়ি; আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৪৯৫, ইবনুস সুন্নি; আলকামিল ৫/৬১, ইবনে আদি, আলফুতুহাত ৫/১১১।
৭২৮. মুসনাদে আহমাদ ২/৮৭, ইবনে হিব্বান: ৩৩৭৬, আমাল: ৫০৯, নাসাঈ।
৭২৯. আমাল: ৫০৫, ইবনুস সুন্নি, আমাল: ৫০৮, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৫৮, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮২৫, আলফুতুحات ৫/১১৪।
৭৩০. মুসনাদে আবু ইয়ালা: ৬৬৮৬; আলমুজামুল আওসাত: ২৮৬৩, তবারানি।

📘 আল আযকার > 📄 মুসাফিরকে বিদায় দেয়ার দুআ

📄 মুসাফিরকে বিদায় দেয়ার দুআ


যারা তাকে বিদায় দিবে তাদের জন্য নিম্নবর্ণিত দুআটি পাঠ করা সুন্নাত:
(৫২৪) হজরত কাজাআর সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন- ইবনে উমর রাদি. আমাকে বলেছেন, এদিকে এসো, আমি তোমাকে বিদায় জানাব যেভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বিদায় জানিয়েছেন:
أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ.
উচ্চারণ: আসতাউদিউল্লাহা দীনাকা ওয়া আমানাতাকা ওয়া খাওয়াতিমা আমালিকা।
অর্থ: আল্লাহর কাছে আমানত রাখলাম তোমার দীন, নিরাপত্তা ও শেষ আমল। ৭৩১
(৫২৫) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাউকে বিদায় জানাতে তার হাত ধরতেন এবং যতক্ষণ না সে ছাড়ত তিনি ছাড়তেন না। আর তিনি তার জন্য এই দুআ করতেন:
أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَآخِرَ عَمَلِكَ.
উচ্চারণ: আসতাউদিউল্লাহা দীনাকা ওয়া আমানাতাকা ওয়া খাওয়াতিমা আমালিকা।
অর্থ: আল্লাহর কাছে আমানত রাখলাম তোমার দীন, নিরাপত্তা ও শেষ আমল। ৭৩২
(৫২৬) হজরত সালেম রহ. থেকে আরো বর্ণিত আছে যে, হজরত ইবনে উমর রাদি. ভ্রমণে ইচ্ছুক ব্যক্তিকে বলতেন, আমার কাছে এসো। আমি তোমাকে বিদায় জানাব যেভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে বিদায় জানাতেন। তারপর পড়তেন-
أَسْتَوْدِعُ اللهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَخَوَاتِيمَ عَمَلِكَ.
উচ্চারণ: আসতাউদিউল্লাহা দীনাকা ওয়া আমানাতাকা ওয়া খাওয়াতিমা আমালিকা।
অর্থ: আল্লাহর কাছে আমানত রাখলাম তোমার দীন, নিরাপত্তা ও শেষ আমল। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। ৭৩৩
(৫২৭) হজরত আবদুল্লাহ বিন ইয়াজিদ খাতমি রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৈন্যদলকে বিদায় জানাতে এই দুআ পড়তেন:
أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكُمْ وَأَمَانَتَكُمْ وَخَوَاتِيمَ أَعْمَالِكُمْ.
উচ্চারণ: আসতাউদিউল্লাহা দীনাকুম ওয়া আমানাতাকুম ওয়া খাওয়াতিমা আমালিকুম।
অর্থ: আল্লাহর কাছে আমানত রাখলাম তোমাদের দীন, নিরাপত্তা ও শেষ আমল। ৭৩৪
(৫২৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، إِنِّي أُرِيدُ سَفَرًا، فَزَوَّدْنِي، قَالَ زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى، قَالَ: زِدْنِي قَالَ: وَغَفَرَ ذَنْبَكَ قَالَ: زِدْنِي، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي. قَالَ: وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ.
অর্থ: এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল: হে আল্লাহর রাসুল, আমি সফরের নিয়ত করেছি আমাকে পাথেয় দিন। নবিজি বললেন, আল্লাহ তাআলা তাকওয়াকে তোমার পাথেয় বানান। সে বলল, আরো বৃদ্ধি করুন। নবিজি বললেন, আল্লাহ তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন। সে পুনরায় বলল, আরো বাড়িয়ে দিন। নবিজি বললেন, তুমি যেখানেই থাক না কেন আল্লাহ তোমার জন্য মঙ্গলকে সহজতর করুন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৭৩৫
পুণ্যবানদের কাছে উপদেশ তলব করা মুস্তাহাব
(৫২৯) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ ، إِنِّي أُرِيدُ أَنْ أُسَافِرَ فَأَوْصِنِي، قَالَ: عَلَيْكَ بِتَقْوَى اللهِ، وَالتَّكْبِيرِ عَلَى كُلِّ شَرَفٍ، فَلَمَّا أَنْ وَلَّى الرَّجُلُ. قَالَ: اللَّهُمَّ اطْوِ لَهُ الْبُعْدَ، وَهَوَّنْ عَلَيْهِ السَّفَرَ.
অর্থ: এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলল: হে আল্লাহর রাসুল! আমি সফরের ইচ্ছা করেছি, আমাকে উপদেশ দিন। তিনি বললেন, অবশ্যই তুমি আল্লাহকে ভয় করবে এবং প্রতিটি উঁচু ভূমিতে তাকবির ধ্বনি দিবে। যখন লোকটি ফিরে যাচ্ছিল, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে আল্লাহ! তার জন্য সফরের দূরত্ব কমিয়ে দিন এবং সফরকে সহজসাধ্য করে দিন। -ইমাম তিরমিজি একে হাসান বলেছেন। ৭৩৬
মুকিম ব্যক্তি মুসাফিরের কাছে উত্তম স্থানগুলোতে তার জন্য দুআর দরখাস্ত করা মুস্তাহাব, যদিও মুকিম ব্যক্তি যদি মুসাফিরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হয়
(৫৩০) হজরত উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
اسْتَأْذَنْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْعُمْرَةِ فَأَذِنَ لِي وَقَالَ: لَا تَنْسَنَا يَا أُخَيَّ مِنْ دُعَائِكَ. فَقَالَ كَلِمَةً مَا يَسُرُّنِي أَنَّ لِي بِهَا الدُّنْيَا. وفِي رِوَايَةٍ : أَشْرِكْنَا يَا أُخَيَّ فِي دُعَائِكَ.
অর্থ: আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উমরার সফরের অনুমতি চাইলাম। তিনি অনুমতি দিয়ে বললেন, প্রিয় ভাই! আমাদেরকে দুআতে ভুলে যেও না। পরবর্তীতে উমর রাদি. বলেন, এই একটি শব্দ আমাকে এতটা আনন্দ দিয়েছে যে, গোটা দুনিয়াও আমার জন্য হলে ততটা আনন্দিত হতাম না। -অন্য বর্ণনায় আছে, নবিজি বলেছেন: হে আমার ভাই, আমাদেরকে নিজের দুআয় শরিক রাখবেন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। ৭৩৭

টিকাঃ
৭৩১. সুনানে আবু দাউদ: ২৬০০, আমাল: ৫১২-৫১৪, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ২/৭, সহিহ ইবনে হিব্বান: ২৩৭৬, মুসতাদরাকে হাকেম ২/৯৭, আলফুতুহাত ৫/১১৮।
৭৩২. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৪২, আলফুতুحات ৫/১১৭।
৭৩৩. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৪৩, সুনানে আবু দাউদ: ২৬০০, আমাল: ৫১২-৫১৪, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ২/৭, সহিহ ইবনে হিব্বান: ২৩৭৬, মুসতাদরাকে হাকেম ২/৯৭, আলফুতুحات ৫/১১৮।
৭৩৪. সুনানে আবু দাউদ: ২৬০১, আমাল: ৫০৭, নাসাঈ, আমাল: ৫০৪, ইবনুস সুন্নি, মুসতাদরাকে হাকেম ২/৯৭।
৭৩৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৪০, মুসতাদরাকে হাকেম ২/৯৭, সুনানে দারিমিঃ ২৬৭৪, আলফুতুحات ৫/১২০।
৭৩৬. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৪১, মুসনাদে আহমাদ ২/৩২৫, মুসতাদরাকে হাকেম ২/৯৮, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৭৭১, ইবনে হিব্বান: ২৩৮৭।
৭৩৭. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬২, সুনানে আবু দাউদ: ১৪৯৮, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮৯৪।

📘 আল আযকার > 📄 বাহনে আরোহণের সময় দুআ

📄 বাহনে আরোহণের সময় দুআ


আল্লাহ তাআলা বলেন- وَ جَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالْأَنْعَامِ مَا تَرْكَبُونَ لِتَسْتَوْا عَلَى ظُهُورِهِ ثُمَّ تَذْكُرُوا نِعْمَةَ رَبِّكُمْ إِذَا اسْتَوَيْتُمْ عَلَيْهِ وَتَقُولُوا سُبُحْنَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هُذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَ إِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ.
অর্থ: তিনি তোমাদের জন্য নৌযান ও গবাদিপশু সৃষ্টি করেছেন, যেটাতে তোমরা আরোহণ কর। যেন তোমরা এর পৃষ্ঠে স্থির হয়ে বস। এরপর যখন স্থির হয়ে বসবে, তখন স্বীয় রবের নেয়ামতের কথা স্মরণ করবে এবং বলবে, পবিত্র সেই সত্তা, যিনি আমাদের জন্য এই বাহন অনুগত করে দিয়েছেন। অথচ আমরা একে অনুগত করার ছিলাম না। আর আমরা আমাদের পালনকর্তার দিকে অবশ্যই প্রত্যাবর্তন করব। ৭৩৮
(৫৩১) হজরত আলি বিন রবিআ রহ. থেকে একাধিক সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
شَهِدْتُ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ وَأُتِيَ بِدَابَّةٍ لِيَرْكَبَهَا، فَلَمَّا وَضَعَ رِجْلَهُ فِي الرِّكَابِ قَالَ: بِاسْمِ اللهِ . فَلَمَّا اسْتَوَى عَلَى ظَهْرِهَا قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ. ثُمَّ قَالَ: { سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ } { وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنقَلِبُونَ }. ثُمَّ قَالَ : الْحَمْدُ لِلَّهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ ثُمَّ قَالَ: اللهُ أَكْبَرُ . ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ قَالَ : سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ. ثُمَّ ضَحِكَ، فَقِيلَ: يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، مِنْ أَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ ؟ قَالَ: رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَعَلَ كَمَا فَعَلْتُ، ثُمَّ ضَحِكَ، فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ ، مِنْ أَيِّ شَيْءٍ ضَحِكْتَ؟ قَالَ: إِنَّ رَبَّكَ يَعْجَبُ مِنْ عَبْدِهِ إِذَا قَالَ : اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ غَيْرِي.
অর্থ: আমি একবার দেখতে পেলাম আলি বিন আবু তালিবের কাছে আরোহনের জন্য একটি পশু আনা হল, অতঃপর তিনি রেকাবে পা রাখতে বললেন: বিসমিল্লাহ। তারপর বললেন। যখন তার পিঠে স্থির হয়ে বসলেন, তখন তিনি এই দুআ পড়লেন:
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ، وَ إِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল লাজি সাখখারা লানা হাজا ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিনা, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালিবুন।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর, যিনি এই বাহনকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আমরা (নিজস্ব ক্ষমতাবলে) একে বশীভূতকারী ছিলাম না। আর অবশ্যই আমরা আমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। -এরপর তিনবার আলহামদুলিল্লাহ এবং তিনবার আল্লাহু আকবার বললেন। পরে এই দুআ পড়লেন:
سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي إِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: সুবহানাকা ইন্নি জালামতু নাফসি ফাগফিরলি ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা।
অর্থ: আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, নিশ্চয় আমি নিজের প্রতি জুলম করেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। নিশ্চয় আপনি ছাড়া অন্য কেউ পাপ মোচন করতে পারে না। -অতঃপর তিনি হেসে দিলেন। তাকে হাসার কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে বললেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমনটাই করতে ও হাসতে দেখেছি। তখন আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম: হে আল্লাহর রাসুল! কেন হাসলেন? তিনি বললেন, নিশ্চয় বান্দা যখন বলে: হে আল্লাহ! আমার পাপসমূহ মাফ করে দিন। সাথে সাথে সে এও জানে যে, আল্লাহ ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না, তখন তিনি বান্দার প্রতি খুশি হন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৭৩৯
(৫৩২) আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে- রাসুল যখন সফরের নিয়তে স্বীয় উষ্ট্রীর উপর আরোহণ করতেন, তখন প্রথমে তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন। তারপর এই দুআ পড়তেন:
سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُوْنَ اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ فِي سَفَرِنَا هَذَا الْبِرَّ وَالتَّقْوَى، وَمِنَ الْعَمَلِ مَا تَرْضَى اللَّهُمَّ هَوِّنْ عَلَيْنَا سَفَرَنَا هَذَا ، وَاطْوِ عَنَّا بُعْدَهُ اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ وَالْخَلِيفَةُ فِي الْأَهْلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ وَكَابَةِ الْمَنْظَرِ وَسُوءِ الْمُنْقَلَبِ فِي الْمَالِ وَالْأَهْلِ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি সাখখারা লানা হাজা ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিনা, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালিবুন। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সাফারিনা হাজাল বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়া মিনাল আমালি মা তারজা। আল্লাহুম্মা হাউয়িন আন্না বু'দাহু। আল্লাহুম্মা আনতাস সাহিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ওয়াসায়িস সাফারি ওয়া কা'বাতিল মানজারি ওয়া সুয়িল মুনকালাবি ফিল মালি ওয়াল আহলি।
অর্থ: পবিত্রতা ঐ সত্তার, যিনি এই বাহনকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। আমরা (নিজস্ব ক্ষমতাবলে) একে বশীভূতকারী ছিলাম না। আর অবশ্যই আমরা আমাদের পালনকর্তার দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ, এই সফরে আপনার কাছে সততা, তাকওয়া এবং আপনার পছন্দ অনুযায়ী আমল কামনা করি। হে আল্লাহ, আমার জন্য এই সফর সহজ করে দিন এবং এর দূরত্ব গুটিয়ে দিন। হে আল্লাহ, আপনিই সফরের সঙ্গী এবং পরিবারে স্থলাভিষিক্ত। হে আল্লাহ, সফরের ক্লান্তি থেকে, বিষণ্ণ দৃশ্য থেকে এবং পরিবার ও সম্পদের অশুভ পরিবর্তন থেকে আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি। -আর যখন ফিরে আসতেন তখনও এই দুআ বলতেন, তবে সাথে এতটুকু বৃদ্ধি করতেন:
آئِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ، لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ.
উচ্চারণ: আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা, লিরাব্বিনা হামিদুন।
অর্থ: আমরা প্রত্যাগমনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আপন পালনকর্তার প্রশংসাকারী। ৭৪০
এগুলো হচ্ছে, সহিহ মুসলিমের বর্ণনার শব্দ। সুনানে আবু দাউদে অতিরিক্ত রয়েছে-
وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجُيُوشُهُ إِذَا عَلَوُا الثَّنَايَا كَبَّرُوْا، وَإِذَا هَبَطُوْا سَبَّحُوْا، فَوُضِعَتِ الصَّلَاةُ عَلَى ذَلِكَ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সৈন্যদল যখন কোনো উচু স্থানে চড়তেন আল্লাহু আকবার বলতেন এবং যখন নিচে নামতেন সুবহানাল্লাহ বলতেন। -এছাড়া একদল সাহাবা থেকে এ মর্মের বর্ণনা মারফু সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
(৫৩৩) আবদুল্লাহ বিন সারজিস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
كَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَافَرَ يَتَعَوَّذُ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَابَةِ الْمُنْقَلَبِ، وَالْخَوْرِ بَعْدَ الْكَوْرِ، وَدَعْوَةِ الْمَظْلُوْمِ، وَسُوْءِ الْمَنْظَرِ فِي الْأَهْلِ، وَالْمَالِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সফরে বের হতেন, তখন তিনি আশ্রয় প্রার্থনা করতেন- সফরের কষ্ট থেকে, দুঃখজনক প্রত্যাবর্তন থেকে, সুখময় অবস্থার পরে দুঃখময় অবস্থায় পতিত হওয়া থেকে, মাজলুমের বদদুআ থেকে, পরিবার-পরিজন ও সম্পদের খারাপ দৃশ্য অবলোকন থেকে। ৭৪১
(৫৩৪) আবদুল্লাহ বিন সারজিস রাদি. থেকে একাধিক সহিহ সনদে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে বের হলে এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ أَنْتَ الصَّاحِبُ فِي السَّفَرِ، وَالْخَلِيفَةُ فِي الْأَهْلِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ وَعْثَاءِ السَّفَرِ، وَكَابَةِ الْمَنْظَرِ، وَمِنَ الْخَوْرِ بَعْدَ الْكَوْنِ، وَمِنْ دَعْوَةِ الْمَظْلُومِ وَمِنْ سُوْءِ الْمَنْظَرِ فِي الْأَهْلِ وَالْمَالِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সাহিবু ফিস সাফারি ওয়াল খালিফাতু ফিল আহলি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ওয়াসায়িস সাফারি ওয়া কা'বাতিল মানজারি ওয়া মিনাল হাওরি বাদাল কাওনি ওয়া মিন দাওয়াতিল মাজলুমি ওয়া মিন সুয়িল মানজারি ফিল আহলি ওয়াল মালি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনিই সফরের সঙ্গী এবং পরিবারে স্থলাভিষিক্ত। হে আল্লাহ, সফরের ক্লান্তি থেকে, বিষণ্ণ দৃশ্য থেকে, সুখের পরে দুঃখ থেকে, মাজলুমের বদদুআ থেকে এবং পরিবার ও সম্পদের অশুভ দৃশ্য থেকে আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। ৭৪২

টিকাঃ
৭৩৮. সুরা যুখরুফ: ১২-১৪।
৭৩৯. সুনানে আবু দাউদ: ২৬০২, সুনানে তিরমিজি: ২৪৪৩, আমাল: ৫০২, নাসাঈ, আমাল: ৪৯৬, ইবনুস সুন্নি, মুসতাদরাকে হাকেম ২/৯৮, আলফুতুহাত ৫/১24।
৭৪০. সহিহ মুসলিম: ১৩৪২, সুনানে আবু দাউদ: ২৫৯৯, সুনানে তিরমিজি: ২৪৪৪, আমাল: ৫৪৮, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ২/১৪৪।
৭৪১. সহিহ মুসলিম: ১৩৪৩।
৭৪২. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৩৫, সুনানে নাসাঈ ৮/২৭২, আমাল: ৪৯২, ইবনুস সুন্নি, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৮৮, মুসনাদে আহমাদ ৫/৮২, সুনানে দারিমি: ২৬৭৫।

📘 আল আযকার > 📄 সফরে বিভিন্ন অবস্থার দুআ

📄 সফরে বিভিন্ন অবস্থার দুআ


নৌযানে আরোহণের পর দুআ আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَقَالَ ارْكَبُوا فِيهَا بِسْمِ اللَّهِ مَجْرِ بِهَا وَمُرْسُهَا إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ .
অর্থ: নুহ তাদেরকে বললেন, তোমরা এ নৌকায় আরোহণ কর; এর চলাও আল্লাহর নামে এবং নোঙ্গর করাও। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়াপরবש। ৭৪৩-অন্যত্র বলেন-
وَجَعَلَ لَكُمْ مِّنَ الْفُلْكِ وَالْأَنْعَامِ مَا تَرْكَبُوْن.
অর্থ: তিনি তোমাদের জন্য নৌযান ও চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা আরোহণ করে থাক। ৭৪৪
(৫৩৫) হুসাইন বিন আলি রাদি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- নিমজ্জিত হওয়া থেকে আমার উম্মতের নিরাপত্তা হল যখন তারা নৌযানে আরোহণ করবে তখন এই দুআ পড়ে নিবে:
بِسْمِ اللَّهِ مَجْرِهَا وَمُرْسَهَا إِنَّ رَبِّي لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ وَالْأَرْضُ جَمِيعًا قَبْضَتُهُ يَوْمَ الْقِيمَةِ وَالسَّمُوتُ مَطْوِيتُ بِيَمِينِهِ سُبْحْنَهُ وَتَعَالَى عَمَّا يُشْرِكُونَ.
অর্থ: নুহ তাদেরকে বললেন, তোমরা এ নৌকায় আরোহণ কর; এর চলাও আল্লাহর নামে এবং নোঙ্গর করাও। নিশ্চয় আমার পালনকর্তা ক্ষমাশীল দয়াপরবশ। ৭৪৫ তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বুঝেনি। কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তার হাতের মুঠোতে এবং আসমানসমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তার ডান হাতে। তিনি পবিত্র। এরা যাকে শরিক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে। ৭৪৬
সফরে দুআ করা মুস্তাহাব
(৫৩৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
تَلَاثُ دَعَوَاتٍ مُسْتَجَابَاتُ لَا شَكٍّ فِيْهِنَّ : dَعْوَةُ الْمَظْلُوْمِ، وَدَعْوَةُ الْمُسَافِرِ، وَدَعْوَةُ الْوَالِدِ عَلَى وَلَدِهِ.
অর্থ: তিনটি দুআ এমন, যা কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ নেই: মাজলুমের দুআ, মুসাফিরের দুআ এবং সন্তানের ওপর পিতা-মাতার বদদুআ। -ইমাম তিরমিজি রহ. একে হাসান বলেছেন। ৭৪৭
মুসাফির যখন টিলা বা টিলাসদৃশ স্থানে আরোহণ করবে আল্লাহু আকবার বলবে এবং যখন উপত্যকা বা উপত্যকামদৃש স্থানে অবতরণ করবে সুবহানাল্লাহ বলবে
(৫৩৭) জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كُنَّا إِذَا صَعِدْنَا كَبَّرْنَا، وَإِذَا نَزَلْنَا سَبَّحْنَا.
অর্থ: আমরা যখন উপরে চড়তাম, আল্লাহু আকবার বলতাম এবং যখন নিচে অবতরণ করতাম সুবহানাল্লাহ বলতাম।
(৫৩৮) ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجُيُوشُهُ إِذَا عَلَوُا الثَّنَايَا كَبَّرُوْا، وَإِذَا هَبَطُوْا سَبَّحُوْا، فَوُضِعَتِ الصَّلَاةُ عَلَى ذَلِكَ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার সৈন্যদল যখন উঁচু স্থানে চড়তেন আল্লাহু আকবার বলতেন এবং নিচে অবতরণকালে সুবহানাল্লাহ বলতেন।
(৫৩৯) ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا قَفَلَ مِنَ الْحَجِّ أَوِ الْعُمْرَةِ - وَلَا أَعْلَمُهُ إِلَّا قَالَ: الْغَزْوِ - يَقُولُ : كُلَّمَا أَوْفَى عَلَى ثَنِيَّةٍ أَوْ فَدْفَدٍ كَبَّرَ ثَلَاثًا، ثُمَّ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، آئِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ سَاجِدُوْنَ لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ، صَدَقَ اللهُ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ."
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন হজ বা উমরার সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করতেন (বর্ণনাকারী বলেন, আমার জানা মতে জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তনের কথা বলেছেন) যখনই তিনি কোনো ঘাঁটি বা বিরান ভূমিতে পৌঁছতেন প্রথমে তিনবার আল্লাহু আকবার বলতেন। পরে এই দুআ পড়তেন-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ، آئِبُوْنَ تَائِبُوْنَ عَابِدُوْنَ، لِرَبِّنَا حَامِدُوْنَ. صَدَقَ اللهُ وَعْدَهُ وَنَصَرَ عَبْدَهُ وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। আয়িবুনা তায়িবুনা আবিদুনা, লিরাব্বিনা হামিদুন। সাদাকাল্লাহু ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহদাহু।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই, তার কোনো অংশীদার নেই। সবকিছুর রাজত্ব তারই এবং সকল প্রশংসা তারই। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। আমরা প্রত্যাগমনকারী, তাওবাকারী, ইবাদতকারী এবং আপন পালনকর্তার প্রশংসাকারী। আল্লাহ তাআলা তার অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছেন, তার বিশেষ বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সকল (কুফরি) শক্তিকে পরাস্ত করেছেন। -এটি সহিহ বুখারির বর্ণনার শব্দ। সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় বর্ণনাকারীর এরকম কোনো সন্দেহ ছিল না। ৭৪৮
(৫৪০) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন-
كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكُنَّا إِذَا أَشْرَفْنَا عَلَى وَادٍ هَلَّلْنَا وَكَبَّرْنَا، ارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُنَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، ارْبَعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ؛ فَإِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا، إِنَّهُ مَعَكُمْ، إِنَّهُ سَمِيعٌ قَرِيبٌ.
অর্থ: একদা আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। আমরা যখনই কোন উপত্যকায় আরোহন করতাম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতাম। এতে আমাদের আওয়াজ উঁচু হয়ে যেত। অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে লোকসকল! তোমরা নিজেদের প্রতি দয়া কর। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না; বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন। তিনি সর্বশ্রোতা নিকটবর্তী। ৭৪৯ -সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় আছে- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
عَلَيْكَ بِتَقْوَى اللهِ، وَالتَّكْبِيرِ عَلَى كُلِّ شَرَفٍ.
অর্থ: তুমি অবশ্যই আল্লাহকে ভয় করবে এবং প্রত্যেক উঁচু স্থানে আল্লাহু আকবার বলবে। ৭৫০
(৫৪১) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো উঁচু স্থানে আরোহন করলে এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ لَكَ الشَّرَفُ عَلَى كُلِّ شَرَفٍ وَلَكَ الْحَمْدُ عَلَى كُلِّ حَالٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাশ শারাফু আলা কুল্লি শারাফিন ওয়া লাকাল হামদু আলা কুল্লি হাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার উচ্চতা সকল উচ্চতার উপরে এবং সর্বাবস্থায় সমস্ত প্রশংসা আপনার জন্যই। ৭৫১
তাকবির ইত্যাদিতে আওয়াজ অতিরিক্ত উঁচু করা নিষেধ
এ ব্যাপারে পূর্বে হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. এর হাদিস উল্লেখ হয়েছে। তিনি বলেন-
كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَكُنَّا إِذَا أَشْرَفْنَا عَلَى وَادٍ هَلَّلْنَا وَكَبَّرْنَا، ارْتَفَعَتْ أَصْوَاتُنَا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، ارْبَعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ؛ فَإِنَّكُمْ لَا تَدْعُوْنَ أَصَمَّ وَلَا غَائِبًا، إِنَّهُ مَعَكُمْ، إِنَّهُ سَمِيعٌ قَرِيبٌ.
অর্থ: একদা আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। আমরা যখনই কোনো উপত্যকায় আরোহন করতাম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলতাম। এতে আমাদের আওয়াজ উঁচু হয়ে যেত। অতঃপর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে লোকসকল! তোমরা নিজেদের প্রতি দয়া কর। তোমরা তো বধির বা অনুপস্থিত কাউকে ডাকছ না; বরং তিনি তো তোমাদের সঙ্গেই আছেন। তিনি সর্বশ্রোতা নিকটবর্তী। ৭৫২
ভ্রমণে ক্ষিপ্রতা, প্রাণবন্ততা, প্রমোদ ও ভ্রমণ সহজকরণের লক্ষ্যে কবিতা আবৃত্তি করা মুস্তাহাব
এ বিষয়ে অনেক প্রসিদ্ধ হাদিস বিদ্যমান। উমরাতুল কাজার ভ্রমণে যখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় প্রবেশ করছিলেন, তখন আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা রাদি. তার আগে আগে কবিতা পাঠ করছিলেন। ৭৫৩
বাহন পালিয়ে গেলে কী বলবে?
(৫৪২) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. এর সূত্রে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন-
إِذَا انْفَلَتَتْ دَابَّةُ أَحَدِكُمْ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَلْيُنَادِ: يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوْا، يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوْا، فَإِنَّ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ فِي الْأَرْضِ حَاصِراً سَيَحْبِسُهُ.
অর্থ: যখন তোমাদের কারো বাহন মরুভূমি থেকে পালিয়ে যায়, তখন সে যেন উচ্চকণ্ঠে বলে: يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوْا يَا عِبَادَ اللَّهِ احْبِسُوا.
অর্থ: হে আল্লাহর বান্দারা! একে থামাও, হে আল্লাহর বান্দারা! একে থামাও। -নিশ্চয় জমিনে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন অবরোধকারী আছেন, যিনি একে থামিয়ে দিবেন।
ইমাম নববি রহ. বলেন, আমাদের একজন বড় মাপের জ্ঞানী শায়খ আমার কাছে বর্ণনা করেছেন যে, একবার তার বাহন পালিয়ে যায়, আমার ধারণা মতে সেটা খচ্চর ছিল। এই হাদিস তার জানা থাকায় তিনি উপরিউক্ত কথাগুলো বললেন, সাথে সাথে আল্লাহ তাআলা একে আটকে দিলেন। একবার আমি নিজে একটি কাফেলায় ছিলাম। সেখানে আমাদের একটি জন্তু পালিয়ে যায়, সবাই একে ধরতে অক্ষম হয়ে গেল। তখন আমি এই কথাগুলো বললাম, মুহূর্তেই সেটা থেমে গেল, এই বাক্যগুলো পাঠ করা ব্যতীত অন্য কোন কারণ ছাড়া।
অবাধ্য জন্তুর উপর আরোহনকালে যে দুআ পড়বে
(৫৪৩) প্রসিদ্ধ তাবেঈ আবু আবদুল্লাহ ইউনুস বিন উবায়েদ বিন দিনার বাসরি রহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- যে ব্যক্তি অবাধ্য জন্তুর উপর আরোহনকালে এই আয়াতটি জন্তুর কানে পড়বে, অবশ্যই সে জন্তু আল্লাহর নির্দেশে স্থির থাকবে-
اَفَغَيْرَ دِينِ اللهِ يَبْغُونَ وَلَهُ أَسْلَمَ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَ إِلَيْهِ يُرْجَعُونَ.
উচ্চারণ: আফা গাইরা দীনিল্লাহি ইয়াবগুনা ওয়ালাহু আসলামা মান ফিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি তাওআন ওয়া কারহান ওয়া ইলাইহি য়্যুযুরযাউন।
অর্থ: সুতরাং কি তারা (নাজরানবাসী) আল্লাহর দীনের (ইসলামের) পরিবর্তে অন্য কোনো দীন (খ্রীষ্টধর্ম) তালাশ করছে? অথচ আসমান-জমিনের সব কিছু স্বেচ্ছায় বা অনিচ্ছায় তারই সামনে নতশির! আর তারই দিকে তাদেরকে ফিরানো হবে। ৭৫৪
কোনো জনপদ দেখলে পড়ার দুআ
(৫৪৪) হজরত সুহাইব রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভ্রমণ 'অবস্থায় যখনই কোনো জনপদ দেখতে পেতেন যেখানে প্রবেশের ইচ্ছা করেছেন, তখন এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أَظْلَلْنَ، وَالْأَرَضِينَ السَّبْعِ وَمَا أَقْلَلْنَ، وَرَبَّ الشَّيَاطِينِ وَمَا أَضْلَلْنَ، وَرَبَّ الرِّيَاحِ وَمَا ذَرَيْنَ. أَسْأَلُكَ خَيْرَهَذِهِ الْقَرْيَةِ وَخَيْرَ أَهْلِهَا، وَخَيْرَ مَا فِيْهَا، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ أَهْلِهَا وَشَرِّ مَا فِيْهَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতি ওয়ামা আজলালনা, ওয়াল আরাদ্বিনাস সাবয়ি ওয়ামা আকলালনা, ওয়া রাব্বাশ শায়াতিনি ওয়ামা আদ্বলালনা, ওয়া রাব্বার রিয়াহি ওয়ামা জারাইনা। আসআলুকা খাইরা হাজিহিল কারয়াতি ওয়া খাইরা আহলিহা ওয়া খাইরা মা ফিহা, ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি আহলিহা ওয়া শাররি মা ফিহা।
অর্থ: হে সাত আসমান ও এর ছায়ার পালনকর্তা, সাত জমিন ও এর বহনকৃত বস্তুর পালনকর্তা, শয়তান ও তাদের দ্বারা পথভ্রষ্টদের পালনকর্তা এবং বাতাস ও এর দ্বারা বিক্ষিপ্ত বস্তুর পালনকর্তা! আমি আপনার কাছে এই এলাকা ও অধিবাসীর মঙ্গল কামনা করি এবং এলাকা, অধিবাসী ও এতে থাকা অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। ৭৫৫
(৫৪৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো এলাকায় প্রবেশের নিয়ত করলে এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ وَخَيْرِ مَا جَمَعْتَ فِيْهَا، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا وَشَرِّ مَا جَمَعْتَ فِيهَا . اَللَّهُمَّ ارْزُقْنَا جَنَاهَا وَأَعِذْنَا مِنْ وَبَاهَا وَحَبِّبْنَا إِلَى أَهْلِهَا وَحَبِّبْ صَالِحِيْ أَهْلِهَا إِلَيْنَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইর হাজিহি ওয়া খাইরি মা জামা'তা ফিহা, ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জামা'তা ফিহা। আল্লাহুম্মার জুকনা জানাহা, ওয়া আয়িজনা মিন ওয়াবাহা, ওয়া হাব্বিবনা ইলা আহলিহা, ওয়া হাব্বিব সালিহি আহলিহা ইলাইনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে এই জনপদের মঙ্গল এবং তাদের ভাগ্যলিপিতে রাখা মঙ্গল কামনা করি। আর তাদের অমঙ্গল এবং তাদের কপালে থাকা অমঙ্গল থেকে আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে এই এলাকার ফল রিজিক হিসাবে দিন এবং এর মহামারি থেকে আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমাদেরকে এলাকাবাসীর কাছে প্রিয় করুন এবং তাদের পুণ্যবানদেরকেও আমাদের কাছে প্রিয় করে দিন। ৭৫৬
সফরে মানুষ বা অন্য কিছুকে ভয় করলে যে দুআ পাঠ করবে
(৫৪৬) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে সহিহ সনদের সাথে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোনো সম্প্রদায় থেকে ক্ষতির আশঙ্কা করলে এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُوْرِهِمْ، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফি নুহুরিহিম, ওয়া নাউজুবিকা মিন শুরুরিহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি দুশমনের দুশমনির মোকাবেলায় আপনাকে স্থাপন করেছি এবং তাদের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করছি। ৭৫৭ -পাশাপাশি বিপদাপদের অন্যান্য দুআগুলোও পাঠ করা মুস্তাহাব।
কোনো ভূতপ্রেত সামনে আসলে মুসাফির যা বলবে
(৫৪৭) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا تَغَوَّلَتْ لَكُمُ الْغِيْلَانُ فَنَادُوْا بِالْأَذَانِ.
অর্থ: যখন তোমাদের সামনে ভূতপ্রেত আত্মপ্রকাশ করে তখন তোমরা উচ্চকণ্ঠে আজান দিবে। ৭৫৮
কোথাও যাত্রাবিরতি করলে পড়ার দুআ
(৫৪৮) হজরত খাওলা বিনতে হাকিম রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি কোথাও অবতরণ করে এই দুআ পড়বে, সেখান থেকে যাত্রা করা পর্যন্ত ঐ ব্যক্তিকে কোনো কিছু ক্ষতি করতে পারবে না। দুআটি হল-
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ.
উচ্চারণ: আউজু বি-কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা।
অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ উক্তির মাধ্যমে তার সমস্ত সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করি। ৭৫৯
(৫৪৯) আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় রাত ঘনিয়ে এলে এই দুআ পড়তেন-
يَا أَرْضُ رَبِّي وَرَبُّكِ اللهُ، أَعُوْذُ بِاللهِ مِنْ شَرِّكِ وَشَرِّ مَا فِيكِ، وَشَرِّ مَا خُلِقَ فِيكِ، وَشَرِّ مَا يَدِبُّ عَلَيْكِ. أَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَسَدٍ وَأَسْوَدَ، وَمِنَ الْحَيَّةِ وَالْعَقْرَبِ، وَمِنْ سَاكِنِ الْبَلَدِ، وَمِنْ وَالِدٍ وَمَا وَلَدَ.
উচ্চারণ: ইয়া আরদু, রাব্বি ওয়া রাব্বুকিল্লাহু। আউজুবিল্লাহি মিন শাররিকি ওয়া শাররি মা ফিকি ওয়া শাররি মা খুলিকা ফিকি। ওয়া শাররি মা ইয়াদিব্বু আলাইকি, আউজুবিকা মিন আসাদিন ওয়া আসওয়াদা, ওয়া মিনাল হাইয়াতি ওয়াল আকরাবি, ওয়া মিন সাকিনিল বালাদি, ওয়া ওয়ালিদিন ওয়া মা ওয়ালাদা।
অর্থ: হে জমি, আমার এবং তোমার পালনকর্তা হলেন আল্লাহ তাআলা। আমি তোমার, তোমার মাঝে থাকা, তোমার মাঝে সৃষ্ট এবং তোমার বুকে বিচরণকারী অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি। হে আল্লাহ, আমি তোমার আশ্রয় কামনা করি সিংহ ও মানুষ থেকে, সাপ ও বিচ্ছু থেকে এবং জিন, ইবলিশ ও শয়তান থেকে। ৭৬০

টিকাঃ
৭৪৩. সুরা হুদ: ৪১।
৭৪৪. সুরা জুখরুফ: ১২।
৭৪৫. সুরা হুদ: ৪১।
৭৪৬. সুরা জুমার: ৬৭।
৭৪৭. আলআদাব: ৩২, বুখারি, সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৬, সুনানে তিরমিজি: ১৯০৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৬২, মুসনাদে আহমাদ ২/২৫৮, ইবনে হ্বিান: ২৪০৬।
৭৪৮. সহিহ বুখারি: ১৭৯৭, সহিহ মুসলিম: ১৩৪৪, মুয়াত্তা মালেক ২/৪২১, সুনানে তিরমিজি: ৯৫০, সহিহ আবু দাউদ: ২৭৭০, মুসনাদে আহমাদ ২/৫, আমাল: ৫৩৯, নাসাঈ, আমাল: ৫১৯, ইবনুস সুন্নি।
৭৪৯. সহিহ বুখারি: ৬৩৮৪, সহিহ মুসলিম: ২৭০৪।
৭৫০. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৪১।
৭৫১. আমাল: ৫২২, ইবনুস সুন্নি, আলফুতুহাত ৫/১৪৫।
৭৫২. অনুবাদে পূর্বের হাদিসটি যোগ করা হল।
৭৫৩. বিস্তারিত দেখুন: সুনানে তিরমিজি: ২৮৪৭, সুনানে নাসাই ৫/২১১।
৭৫৪. সুরা আলে ইমরান: ৮৩। আমাল: ৫১০, ইবনুস সুন্নি, আলফুতুحات ৫/১৫২। আয়াতের তরজমা: অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন ১ম খণ্ড থেকে।
৭৫৫. সুনানে নাসাই: ৮৭৭৫, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫২৪, ইবনুস সুন্নি, আমাল: ৫৪৪, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান: ২৩৭৭, আলফুতুحات ৫/১৫৪।
৭৫৬. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫২৭, ইবনুস সুন্নি, আলফুতুহাত ৫/১৫৮।
৭৫৭. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৭।
৭৫৮. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫২৩, ইবনুস সুন্নি, মুসনাদে আহমাদ ৩/৩০৫, আলফুতুحات ৫/১৬১।
৭৫৯. সহিহ মুসলিম: ২৭০৮, মুয়াত্তা মালেক ২/৯৭৮, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৩৭, মুসনাদে আহমাদ ৬/৩৭৭, সুনানে দারিমি: ২৬৮৩, আমাল: ৫৬০, নাসাঈ, আমাল: ৫২৮, ইবনুস সুন্নি।
৭৬০. সুনানে আবু দাউদ: ২৬০৩, মুসনাদে আহমাদ ২/১৩২, আমাল: ৫৬৩, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ২/১০০।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন