📘 আল আযকার > 📄 জিহাদের সময় দুআ করা ও তাকবির বলা

📄 জিহাদের সময় দুআ করা ও তাকবির বলা


আল্লাহ তাআলা বলেন-
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا لَقِيتُمْ فِئَةً فَاثْبُتُوا وَاذْكُرُوا اللَّهَ كَثِيرًا لَّعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ وَاصْبِرُوا إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّبِرِينَ وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ بَطَرًا وَ رِئَاءَ النَّاسِ وَيَصُدُّونَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ.
অর্থ: হে মুমিনগণ, যখন তোমরা শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করবে, তখন অটল থাকবে। বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করবে। তাহলে তোমরা সফল হবে। তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের অনুসরণ করবে। তাছাড়া তোমরা পরস্পর বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। যদি তা কর তবে তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে। তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্যধারণ কর, নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যধারণকারীদের সাথে আছেন। আর তাদের মতো হয়ো না, যাদের নিজেদের ঘর থেকে বের হয়েছে অহঙ্কারের সাথে এবং লোক দেখানোর জন্য। তারা আল্লাহর পথে বাধা দিত। ৬৯৮ -উলামায়ে কেরাম বলেন, উক্ত আয়াতে যুদ্ধের সকল আদব-কায়দার আলোচনা একসাথে করা হয়েছে।
(৫০০) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর তাবুতে বলেছেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَنْشُدُكَ عَهْدَكَ وَوَعْدَكَ، اَللَّهُمَّ إِنْ شِئْتَ لَمْ تُعْبَدُ بَعْدَ الْيَوْمِ. فَأَخَذَ أَبُوْ بَكْرٍ بِيَدِهِ فَقَالَ : حَسْبُكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، فَقَدْ أَلْحَحْتَ عَلَى رَبِّكَ. وَهُوَ فِي الدَّرْعِ فَخَرَجَ وَهُوَ يَقُوْلُ: {سَيُهْزَمُ الْجَمْعُ وَيُوَلُّونَ الدُّبُرَ } { بَلِ السَّاعَةُ مَوْعِدُهُمْ وَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ }.
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির শপথ দিয়ে বলছি। হে আল্লাহ, আপনি যদি চান, আজকের দিনের পর আপনার ইবাদত না করা হোক.. তখন আবু বকর রাদি. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাত ধরে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, যথেষ্ট হয়েছে। আপনি আপনার প্রভুর কাছে খুব জোরালো দুআ করেছেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখান থেকে বের হতে বলছিলেন: "সৈন্যদল অচিরেই পলায়ন করবে। বরং কেয়ামতই তাদের প্রতিশ্রুত সময়। আর কেয়ামত খুব ভয়াবহ ও তিক্ত।”৬৯৯ -অপর বর্ণনায় আছে, সেদিনটি ছিল বদর যুদ্ধের দিন। সহিহ মুসলিমের বর্ণনায় আছে-
اسْتَقْبَلَ نَبِيُّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقِبْلَةَ، ثُمَّ مَدَّ يَدَيْهِ، فَجَعَلَ يَهْتِفُ بِرَبِّهِ: اللَّهُمَّ أَنْجِزْ لِي مَا وَعَدْتَنِي ، اللهُمَّ آتِ مَا وَعَدْتَنِي، اللَّهُمَّ إِنْ تُهْلِكُ هَذِهِ الْعِصَابَةَ مِنْ أَهْلِ الْإِسْلَامِ لَا تُعْبَدْ فِي الْأَرْضِ ، فَمَا زَالَ يَهْتِفُ بِرَبِّهِ مَادًّا يَدَيْهِ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ، حَتَّى سَقَطَ رِدَاؤُهُ
অর্থ: নবিজি কিবলামুখী হয়ে হাত উঠিয়ে সজোরে দুআ করছিলেন, বলছিলেন- 'হে আল্লাহ, আপনার ওয়াদা পূরণ করুন। হে আল্লাহ, আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা বাস্তবায়ান করুন। হে আল্লাহ, এই ছোট দল যদি আজ ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে এই ভূপৃষ্ঠে আপনার ইবাদতের লোক থাকবে না।' এভাবেই তিনি আল্লাহকে ডাকছিলেন; আর হাত এতুকু উচিয়ে ছিলেন যে, গায়ের চাদর পড়ে গিয়েছিল। ৭০০
(৫০১) হজরত আবদুল্লাহ বিন আবু আউফা রাদি. থেকে বর্ণিত,
أَنَّ رَسُولَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِي بَعْضِ أَيَّامِهِ الَّتِي لَقِيَ فِيهَا الْعَدُوَّ يَنْتَظِرُ حَتَّى إِذَا مَالَتِ الشَّمْسُ قَامَ فِيْهِمْ، فَقَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ لَا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ، وَاسْأَلُوْا اللهَ الْعَافِيَةَ، فَإِذَا لَقِيتُمُوْهُمْ فَاصْبِرُوا، وَاعْلَمُوا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلالِ السُّيُوفِ. ثُمَّ قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَقَالَ: اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ، وَمُجْرِيَ السَّحَابِ، وَهَازِمَ الْأَحْزَابِ اهْزِمْهُمْ، وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ . وَفِي رِوَايَةَ: اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ، سَرِيعَ الْحِسَابِ اهْزِمِ الْأَحْزَابَ اللَّهُمَّ اهْزِمْهُمْ، وَزَلْزِلْهُمْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন যুদ্ধে সূর্য ঢলে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করছিলেন, এরপর বলছিলেন, হে লোকসকল, তোমরা শত্রুদের সাথে যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা কর না। এ থেকে আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাও। অগত্যা যদি তাদের সঙ্গে যুদ্ধ বেঁধেই যায় তাহলে ধৈর্যের সাথে যুদ্ধ করবে। মনে রাখবে, জান্নাত হচ্ছে তরবারির ছায়াতলে। এরপর বললেন-
اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ، وَمُجْرِيَ السَّحَابِ، وَهَازِمَ الْأَحْزَابِ اهْزِمْهُمْ، وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মুনজিলাল কিতাবি ওয়া মাযরাস সাহাবি ওয়া হাজিমাল আহজাবি, ইহজিমহুম ওয়ানসুরনা আলাইহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, কিতাব অবতরণকারী, মেঘমালা সঞ্চালনকারী, শত্রুকে পরাভূতকারী আপনি শত্রুদেরকে পরাজিত করে দিন। আমাদের সাহায্য করুন। -অপর বর্ণনায় আছে-
اللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ، سَرِيعَ الْحِسَابِ اهْزِمِ الْأَحْzَابَ اللَّهُمَّ اهْزِمْهُمْ، وَزَلْزِلْهُمْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মুনজিলাল কিতাবি সারিআল হিসাবি, ইহজিমিল আহজাবি, আল্লাহুম্মাহজিহিম ওয়া জালজিলহুম।
অর্থ: হে আল্লাহ, কিতাব অবতরণকারী, দ্রুত হিসাব গ্রহণকারী, সৈন্যদলকে পরাজিত করুন। হে আল্লাহ, আপনি তাদেরকে পরাভূত করুন; তাদেরকে প্রকম্পিত করুন। ৭০১
(৫০২) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
صَبَّحَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَيْبَرَ، فَلَمَّا رَأَوْهُ قَالُوا: هَذَا مُحَمَّدُ وَالْخَمِيسُ، مُحَمَّدُ وَالْخَمِيسُ فَلَجَتُوْا إِلَى الْحِصْنِ، فَرَفَعَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ وَقَالَ: اللَّهُ أَكْبَرُ، خَرِبَتْ خَيْبَرُ، إِنَّا إِذَا نَزَلْنَا بِسَاحَةِ قَوْمٍ فَسَاءَ صَبَاحُ الْمُنْذَرِينَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বারে সকাল করলেন। খায়বারবাসীরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখে বলতে লাগলো, 'এই যে, মুহাম্মাদ ও তার সৈন্যদল চলে আসছে।' এরপর তারা দূর্গে আশ্রয় নিল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত উঠিয়ে বললেন, 'আল্লাহু আকবার, খায়বার বিরান হয়ে গেছে। আমরা যখন কোনো সমপ্রদায়ের পাশে অবতরণ করি, তখন সতর্ককৃতদের সকাল হয় বড়ই মন্দ। ৭০২
(৫০৩) হজরত সাহল বিন সাদ রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
ثِنْتَانِ لَا تُرَدَّانِ، أَوْ قَلَّمَا تُرَدَّانِ : الدُّعَاءُ عِنْدَ النَّدَاءِ، وَعِنْدَ الْبَأْسِ حِيْنَ يُلْحِمُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا.
অর্থ: দুই সময়ে আল্লাহ দুআ ফিরিয়ে দেন না। এক. আজানের সময়। দুই. যুদ্ধে যখন একদল আরেক দলের মাঝে ঢুকে যায়। ৭০৩
(৫০৪) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যুদ্ধ করতেন, তখন নিম্নোক্ত দুআ বলতেন-
اللَّهُمَّ أَنْتَ عَضُدِي وَنَصِيرِي، بِكَ أَحُوْلُ ، وَبِكَ أَصُولُ ، وَبِكَ أُقَاتِلُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা আজুদি ওয়া নাসিরি, বিকা আহুলু ওয়া বিকা আসুলু ওয়া বিকা উকাতিলু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমার শক্তি ও সাহায্যকারী। আপনার সাহায্যেই আমরা প্রতিহত করি, পরাস্ত করি; আপনার নামেই যুদ্ধ করি। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৭০৪
(৫০৫) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন গোত্রকে ভয় করতেন তখন এ দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَجْعَلُكَ فِي نُحُوْرِهِمْ، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شُرُوْرِهِمْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাজআলুকা ফি নুহুরিহিম, ওয়া নাউজুবিকা মিন শুরুরিহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি দুশমনের দুশমনির মোকাবেলায় আপনাকে স্থাপন করেছি এবং তাদের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করছি। ৭০৫
(৫০৬) হজরত উমারা রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ: إِنَّ عَبْدِي كُلَّ عَبْدِيَ الَّذِي يَذْكُرُنِي، وَهُوَ مُلَاقٍ قِرْنَهُ، يَعْنِي: عِنْدَ الْقِتَالِ .
অর্থ: আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমার খাঁটি বান্দা সে, যে যুদ্ধের সময়ও আমাকে স্মরণ করে।-ইমাম তিরমিজি বলেন, সনদটি শক্তিশালী নয়। ৭০৬
(৫০৭) হজরত জাবের রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খায়বার যুদ্ধের দিন বলেছেন-
لا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ ، فَإِنَّكُمْ لَا تَدْرُوْنَ مَا تَبْتِلُوْنَ بِهِ مِنْهُمْ، فَإِذَا لَقِيتُمُوهُمْ فَقُوْلُوْا: اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبُّنَا وَرَبُّهُمْ ، وَقُلُوْبُنَا وَقُلُوبُهُمْ بِيَدِكَ، وَإِنَّمَا يَغْلِبُهُمْ أَنْتَ.
অর্থ: তোমরা যুদ্ধের আকাঙ্ক্ষা কর না, কেননা তোমরা জানো না তাদের মধ্যে কাদের দ্বারা তোমাদের পরীক্ষা করা হবে। শেষ পর্যন্ত যদি যুদ্ধ করতেই হয় তাহলে তোমরা বলবে- “হে আল্লাহ, আপনি আমাদের ও তাদের রব, আমাদের ও তাদের অন্তর আপনার হাতে। আপনিই তাদেরকে পরাজিত করবেন।"৭০৭
(৫০৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
كُنَّا مَعَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةَ، فَلَقِيَ الْعَدُوِّ، فَسَمِعْتُهُ يَقُوْلُ: يَا مَالِكَ يَوْمِ الدِّيْنِ، إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ، فَلَقَدْ رَأَيْتُ الرِّجَالَ تُصَرَعُ تَضْرِبُهَا الْمَلَائِكَةُ مِنْ بَيْنِ أَيْدِيْهَا وَمِنْ خَلْفِهَا.
অর্থ: আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে এক যুদ্ধে ছিলাম। শত্রুদের সাথে মোকাবেলায় তিনি বলেছেন- “হে বিচার দিবসের মালিক, আপনারই ইবাদত করি, আপনার কাছেই প্রার্থনা করি। এরপর দেখলাম, অনেকেই নিহত হয়ে পড়ে যাচ্ছে, ফেরেশতাগণ তাদের সামনে- পেছনে আক্রমণ করছিলেন।”৭০৮
ইমাম শাফেয়ি রহ. মুরসাল সনদে বর্ণনা করেছেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
اطْلُبُوا اسْتِجَابَةَ الدُّعَاءِ عِنْدَ الْتِقَاءِ الْجُيُوشِ وَإِقَامَةِ الصَّلَاةِ وَنُزُوْلِ الْغَيْثِ.
অর্থ: তোমরা যুদ্ধের সময়, নামাজ আদায়ের সময় এবং বৃষ্টি বর্ষণের সময় আল্লাহর কাছে দুআ কর। ৭০৯
ইমাম নববি রহ. বলেন, যতটুকু সম্ভব কুরআনে কারিম তিলাওয়াত করবে। এরপর এ দুআটি পড়বে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهِ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ.
উচ্চারণ: লাইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযিমুল হালিম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আযিম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরজি রাব্বুল আরশিল কারিম।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোনো সত্য মাবুদ নেই, যিনি অতি মহান অত্যন্ত সহনশীল। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি আসমান- জমিনের পালনকর্তা এবং মহান আরশের অধিপতি। -এ দুআটিও পড়বে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْحَلِيمُ الْكَرِيمُ، سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ السَّمَوَاتِ السَّبْعِ وَرَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، عَزَّ جَارُكَ وَجَلَّ ثَنَاؤُكَ.
উচ্চারণ: লাইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বাস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বাল আরদি ওয়া রাব্বাল আরশিল আজিম। লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আজ্জা যারুকা ওয়া জাল্লা সানাউকা।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোনো সত্য মাবুদ নেই, যিনি অতি মহান অত্যন্ত সহনশীল। আসমান-জমিনের প্রতিপালক, মহান আরশের অধিপতির পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আপনি ব্যতীত কোনো মাবুদ নেই। আপনার আশ্রয় গ্রহণকারীর জয় হোক এবং আপনার মহিমা সমুচ্চ হোক। -এই দুআগুলোও পড়বে-
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ.
উচ্চারণ: হাসবিনাল্লাহু ওয়া নিমাল ওয়াকিল।
অর্থ: আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট ও তিনি আমাদের উত্তম অভিভাবক।
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ، مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ، إِعْتَصَمْنَا بِاللهِ، اِسْتَعَنَّا بِاللَّهِ ، تَوَكَّلْنَا عَلَى اللهِ.
উচ্চারণ: লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম, মা শা আল্লাহু কানা ওয়া মা লাম ইয়াশা লাম ইয়াকুন। ইতাসামনা বিল্লাহি, ইসতাআন্না বিল্লাহি, তাওয়াক্কালনা আলাল্লাহ।
অর্থ: মহান মর্যাদাবান আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন শক্তি ও ক্ষমতা নেই। তিনি যা চান হয় এবং যা না চান তা হয় না। আমরা আল্লাহর রজ্জুকে আঁকড়ে ধরলাম, আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করলাম এবং তারই ওপর ভরসা করলাম।
حَصَّنْتَنَا كُلَّنَا أَجْمَعِينَ بِالْحَيِّ الْقَيُّوْمِ الَّذِي لَا يَمُوْتُ أَبَدَاً، وَدَفَعْتَ عَنَّا السُّوءَ بِلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ.
উচ্চারণ: হাসানতানা কুল্লানা আযমাঈনা বিল হাইয়িল কাইয়ুমিল্লাজি লা ইয়ামুতু আবাদা, ওয়া দাফাতা আন্নাস সুআ বিলা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম।
অর্থ: আমাদের সবাইকে সুরক্ষিত করেছেন চিরন্তন অবিনশ্বর গুণাবলীর মাধ্যমে এবং আমাদের থেকে অনিষ্ট দূর করেছেন লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম এর মাধ্যমে।
يَا قَدِيمَ الْإِحْسَانِ، يَا مَنْ إِحْسَانُهُ فَوْقَ كُلِّ إِحْسَانٍ، يَا مَالِكَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ، يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، يَا مَنْ لَا يُعْجِزُهُ شَيْ وَلَا يَتَعَاظَمُهُ شَيْ انْصُرْنَا عَلَى أَعْدَائِنَا هَؤُلَاءِ وَغَيْرِهِمْ، وَأَظْهِرْنَا عَلَيْهِمْ فِي عَافِيَةٍ وَسَلَامَةٍ عَامَّةً عاجِلاً.
উচ্চারণ: ইয়া কাদিমাল ইহসানি, ইয়া মান ইহসানুহু ফাওকা কুল্লি ইহসানিন, ইয়া মালিকাদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ, ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুমু ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরামি, ইয়া মান লা ইযিজুহু শাইয়ুন ওয়ালা ইয়াতাআজামুহু শাইয়ুন। উনসুরনা আলা আদায়িনা হাউলায়ি ওয়া গাইরিহিম, ওয়া আজহির না আলাইহিম ফি আফিয়াতিন ওয়া সালামাতিন আম্মাতিন আজিলা।
অর্থ: চিরন্তন অনুগ্রহশীল, হে ঐ সত্তা, যার অনুগ্রহ সকল অনুগ্রহের উপরে। হে ইহকাল-পরকালের মালিক, হে চিরন্তন অবিনশ্বর, মহিমাময়, প্রতাপ ও অনুগ্রহের অধিকারী। হে ঐ সত্তা, যাকে কোনো কিছুই পরাস্ত করতে পারে না এবং যার থেকে কিছুই বড় নয়। আমাদেরকে এই শত্রুদের এবং অন্যদের বিরুদ্ধে সাহায্য করুন। আমাদেরকে তাদের ওপর জয়ী করুন সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও দ্রুততার সাথে।
যুদ্ধের সময় অহেতুক চিৎকার না দেয়া
(৫০৯) তাবেয়ি হজরত কায়েস বিন উবাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ أَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَكْرَهُونَ الصُّوْتَ عِنْدَ الْقِتَالِ.
অর্থ: সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধের সময় চিৎকার করাকে অপছন্দ করতেন। ৭১০
শত্রুকে ভীতি প্রদর্শনের জন্য নিজের পরিচয় দেয়া
(৫১০) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনাইন যুদ্ধের সময় নিম্নোক্ত কবিতা বলছিলেন-
أَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبْ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ
আমি সত্য নবি; মিথ্যাবাদী নই। আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। ৭১১
(৫১১) হজরত সালামা বিন আকওয়া রাদি. থেকে বর্ণিত, আলি রাদি. যখন খায়বারের মারহাবের সঙ্গে যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন, তখন তিনি বলেছিলেন-
أَنَا الَّذِي سَمَّتْنِي أُمِّي حَيْدَرَهُ.
অর্থ: আমি সেই ব্যক্তি, আমার মা যার নাম রেখেছে হায়দার তথা সিংহ। ৭১২
(৫১২) হজরত সালামা রাদি. থেকে আরো বর্ণিত আছে, তিনিও যুদ্ধের সময় বলেছিলেন-
أَنَا ابْنُ الْأَكْوَعِ وَالْيَوْمُ يَوْمُ الرُّضَّعِ.
আমি আকওয়ার ছেলে। আজকের দিনটি হল ইতরদের ধ্বংসের দিন। ৭১৩
যুদ্ধের সময় ছন্দ বলা মুস্তাহাব
পূর্বের অধ্যায়ের হাদিসগুলোই এখানে প্রযোজ্য।
(৫১৩) হজরত বারা বিন আজিব রাদি. থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তাকে বলল-
أَفَرَرْتُمْ يَوْمَ حُنَيْنٍ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ فَقَالَ الْبَرَاءُ: لَكِنَّ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَفِرَّ ، لَقَدْ رَأَيْتُهُ وَهُوَ عَلَى بَغْلَتِهِ الْبَيْضَاءِ، وَإِنَّ أَبَا سُفْيَانَ بْنِ الْحَارِثِ آخِذُ بِلِجَامِهَا، وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: أَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبْ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبْ.
অর্থ: আপনারা কি হুনাইনের যুদ্ধে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রেখে পলায়ন করেছিলে? বারা রাদি. বললেন, কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিছু হটেননি। আমি তাকে সাদা খচ্চরের উপর আরোহী অবস্থায় দেখেছি। আবু সুফিয়ান তার লাগাম ধরেছিলেন, আর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছিলেন,
أَنَا النَّبِيُّ لَا كَذِبْ أَنَا ابْنُ عَبْدِ الْمُطَّلِبُ.
আমি সত্য নবি; মিথ্যুক নই। আমি আবদুল মুত্তালিবের সন্তান। ৭১৪
(৫১৪) হজরত বারা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْقُلُ مَعَنَا التَّرَابَ يَوْمَ الْأَحْزَابِ، وَقَدْ وَارَى التَّرَابُ بَيَاضَ بَطْنِهِ وَهُوَ يَقُوْلُ : اللَّهُمَّ لَوْلَا أَنْتَ مَا اهْتَدَيْنَا وَلَا تَصَدَّقْنَا وَلَا صَلَّيْنَا فَأَنْزِلَنْ سَكِينَةٌ عَلَيْنَا وَثَبِّتِ الْأَقْدَامَ إِنْ لَا قَيْنَا إِنَّ الْأُلى قَدْ بَغَوْا عَلَيْنَا إِذَا أَرَادُوْا فِتْنَةً أَبَيْنَا.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খন্দক যুদ্ধের দিন আমাদের সাথে মাটি সরানোর কাজ করতে দেখেছি। মাটি তাঁর পেটের শুভ্রতাকে ঢেকে ফেলেছিল। আর তিনি এ কবিতা পড়ছিলেন-
اللَّهُمَّ لَوْلَا أَنْتَ مَا اهْتَدَيْنَا وَلَا تَصَدَّقْنَا وَلَا صَلَّيْنَا فَأُنْزِلَنْ سَكِينَةً عَلَيْنَا وَثَبِّتِ الْأَقْدَامَ إِنْ لَاقَيْنَا إِنَّ الْأُلَى قَدْ بَغَوْا عَلَيْنَا إِذَا أَرَادُوْا فِتْنَةً أَبَيْنَا.
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি হেদায়াত না দিলে আমরা হেদায়াত পেতাম না। আমরা দান-সাদকা করতাম না। নামাজ আদায় করতাম না। আপনি আমাদের ওপর প্রশান্তি নাজিল করুন। শত্রুর মোকাবেলায় আপনি আমাদেরকে দৃঢ় রাখুন। এরা আমাদের ওপর জুলুম করেছে। এরা আমাদের ফিতনায় নিপতিত করতে চাইলে, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছি। ৭১৫
(৫১৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
جَعَلَ الْمُهَاجِرُوْنَ وَالْأَنْصَارُ يَحْفِرُوْنَ الْخَنْدَقَ حَوْلَ الْمَدِينَةِ، وَيَنْقُلُوْنَ التُّرَابَ عَلَى مُتُونِهِمْ، أَيْ: ظُهُورِهِمْ، وَهُمْ يَقُوْلُوْنَ: نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوْا مُحَمَّدًا عَلَى الْإِسْلَامِ .... وَفِي رِوَايَةٍ : عَلَى الْجِهَادِ مَا بَقِيْنَا أَبَدًا وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُجِيبُهُمْ وَيَقُوْلُ : اللَّهُمَّ إِنَّهُ لَا خَيْرَ إِلَّا خَيْرُ الْآخِرَةُ فَبَارِكْ فِي الْأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَةُ. رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ.
অর্থ: মুহাজির ও আনসারি সাহাবায়ে কেরাম পরিখা খনন করছিলেন। তারা তাদের পিঠে মাটি বহন করছিলেন। আর তারা বলছিলেন-
نَحْنُ الَّذِينَ بَايَعُوْا مُحَمَّدًا عَلَى الْإِسْلَامِ.
উচ্চারণ: নাহনুল্লাজি বাইয়ায়ু মুহাম্মাদান আলাল ইসলামি, মা বাকিনা আবাদা।
অর্থ: আমরা সেসব ব্যক্তি, যারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাতে ইসলামের ওপর বাইআত করেছি। যতদিন জীবিত থাকব। ৭১৬- নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের জবাবে বলছিলেন-
اللَّهُمَّ إِنَّهُ لَا خَيْرَ إِلَّا خَيْرُ الْآخِرَهُ فَبَارِكْ فِي الْأَنْصَارِ وَالْمُهَاجِرَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাহু লা খাইরা ইল্লা খাইরুল আখিরাহ, ফাবারিক ফিল আনসারি ওয়াল মুহাজিরাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, পরকালের সুখই প্রকৃত সুখ। আপনি মুহাজির ও আনসারদের বরকত দান করেন। ৭১৭
আঘাতপ্রাপ্ত হলে ধৈর্যধারণ করা ও শাহাদাতের প্রত্যাশায় আনন্দিত হওয়া
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ فَرِحِينَ بِمَا اتُهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِمْ مِّنْ خَلْفِهِمْ إِلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿١٠﴾ يَسْتَبْشِرُونَ بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ وَأَنَّ اللهَ لَا يُضِيعُ أَجْرَ الْمُؤْمِنِينَ ﴿١١﴾ الَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِلَّهِ وَالرَّسُولِ مِنْ بَعْدِ مَا أَصَابَهُمُ الْقَرْحُ لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا مِنْهُمْ وَاتَّقَوْا أَجْرٌ عَظِيمٌ ﴿١٢﴾ الَّذِينَ قَالَ لَهُمُ النَّاسُ إِنَّ النَّاسَ قَدْ جَمَعُوا لَكُمْ فَاخْشَوْهُمْ فَزَادَهُمْ إِيْمَانًا ** وَقَالُوا حَسْبُنَا اللهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ ﴿١٣﴾ فَانْقَلَبُوا بِنِعْمَةٍ مِّنَ اللَّهِ وَفَضْلٍ لَّمْ يَمْسَسْهُمْ سُوءُ وَ اتَّبَعُوا رِضْوَانَ اللَّهِ وَاللَّهُ ذُو فَضْلٍ عَظِيمٍ ﴿۱۷﴾
ব্যাখ্যাসহ অনুবাদ: আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয় তাদেরকে মৃত মনে কর না। বরং তারা জীবিত, নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিকাপ্রাপ্ত। (১) আল্লাহ তাআলা তাদেরকে নিজের যে অনুগ্রহ দান করেছেন: তারা এর ওপর আনন্দিত ও প্রফুল্লিত। (২) আর যারা এখনো তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের জন্য (ও) আনন্দ প্রকাশ করে, এ মর্মে যে তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তাগ্রস্তও হবে না। তারা আল্লাহর আশীষ এবং অনুগ্রহের ওপর আনন্দিত হচ্ছে। আর নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা ঈমানদারদের প্রতিদান বিনষ্ট করেন না, যারা আহত হওয়ার পরও আল্লাহর এবং তার রসুলের কথায় সাড়া দিয়েছেন (এবং হামরাউল আসাদ পর্যন্ত কাফেরদেরকে ধাওয়া করেছেন) তাদের মধ্য থেকে যারা ভালো কাজ করেছেন, তাদের জন্য এবং যারা আল্লাহকে ভয় করেছেন: অগণিত প্রতিদান রয়েছে। (এ সবই সাহাবাদের প্রশংসা ও মর্যাদা বুলন্দির বিবরণ। কেননা তাদের সকলই এরকম ছিলেন)।
(ঐ সব মুমিন) যাদেরকে লোকেরা বলেছে যে, তোমাদের সাথে মোকাবেলার জন্য লোকেরা (কাফেররা) বিরাট বাহিনী একত্রিত করেছে। কাজেই তোমরা তাদেরকে ভয় কর (এবং মোকাবেলার জন্য বের হয়ো না) অতঃপর এই সংবাদ তাদের ইমান বৃদ্ধি করে দিয়েছে, তারা বলেছে: “আমাদের জন্য আল্লাহ তাআলা যথেষ্ট এবং তিনি খুব সাহায্যকারী।” অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামত এবং অনুগ্রহের সাথে ফিরে এল। (ব্যবসায়িক মুনাফা, জয় এবং সফলতাও উদ্দেশ্য)। কোনো অনিষ্ট তদেরকে স্পর্শ করেনি (ধরি মাছ, না ছুঁই পানি!) তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির আনুগত্য করেছে (অর্থাৎ জিহাদের জন্য বেরিয়েছে) বস্তুতঃ আল্লাহ তাআলা বিরাট অনুগ্রহশীল (মুজাহিদদেরকে জয়ীও করেছেন, সম্পদও দিয়েছেন!)। ৭১৮
(৫১৬) হজরত আনাস রাদি. থেকে বীরে মাউনার ঘটনায়, যাদের সঙ্গে কাফেররা গাদ্দারি করেছিল এবং তাদেরকে শহিদ করেছিল। সেখানে আছে-
أَنَّ رَجُلًا مِنَ الْكُفَّارِ طَعَنَ خَالَ أَنَسٍ وَهُوَ حَرَامُ بْنِ مِلْحَانَ، فَأَنْفَذَهُ، فَقَالَ حَرَامُ اللَّهُ أَكْبَرُ فُرْتُ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ.
অর্থ: কাফেরদের এক ব্যক্তি আনাস রাদি. এর খালু হারাম বিন মুলহানকে রাদি.কে বর্শা নিক্ষেপ করল। তখন হারাম রাদি. বলেছিলেন, কা'বার রবের কসম, আমি সফল হয়েছি। '৭১৯
মুসলমানদের বিজয় হলে যে দুআ পড়বে
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে। আল্লাহর প্রশংসা করবে। স্বীকার করবে যে, এটি আল্লাহর অনুগ্রহে হয়েছে। আমাদের শক্তি ও সামর্থ্যের দ্বারা হয়নি। সাহায্য আল্লাহর পক্ষ থেকেই। সৈন্যের সংখ্যাধিক্যের জন্য আত্মম্ভরিতা করবে না। কেননা সংখ্যাধিক্যের কারণে বিজয় লাভ করা যায় না। আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَيَوْمَ حُنَيْنٍ * إِذْ أَعْجَبَتْكُمْ كَثْرَتُكُمْ فَلَمْ تُغْنِ عَنْكُمْ شَيْئًا وَضَاقَتْ عَلَيْكُمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ ثُمَّ وَلَّيْتُمْ مُّدْبِرِينَ.
অর্থ: হুনাইনের যুদ্ধের দিনের কথা তোমরা স্মরণ কর, যখন সংখ্যাধিক্যতা তোমাদেরকে বিস্মিত করেছিল, এই সংখ্যাধিক্যতা তোমাদের কোনো উপকারে আসেনি। জমিন প্রশস্ততা সত্ত্বেও সঙ্কীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা পৃষ্ঠ-প্রদর্শন করে পলায়ন করতে আরম্ভ করেছিলে। ৭২০
মুসলমানগণ পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা করলে যা করবে
তখন বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করবে। দুআ, ইস্তিগফার করবে। আল্লাহ সাহায্য ও তাঁর দীনকে বিজয়ী করবেন বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা স্মরণ করবে। বিপদের সময় পঠিত যে দুআ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে তাও পড়বে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الْعَظِيمُ الْحَلِيمُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَرَبُّ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ.
উচ্চারণ: লাইলাহা ইল্লাল্লাহুল আযিমুল হালিম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুল আরশিল আযিম, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু রাব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বুল আরজি রাব্বুল আরশিল কারিম।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোনো সত্য মাবুদ নেই, যিনি অতি মহান অত্যন্ত সহনশীল। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, যিনি আসমান-জমিনের পালনকর্তা এবং মহান আরশের অধিপতি।
-এছাড়াও পূর্বে ভয় ও আতঙ্কের সময় সেসব দুআ পড়ার কথা বর্ণিত হয়েছে সেগুলোও পড়বে। বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এমন পরিস্থিতি দেখতে পেতেন, তখন তিনি অবতরণ করতেন। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতেন ও দুআ করতেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُوْلِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাঝে তোমাদের জন্য আদর্শ রয়েছে। ৭২১
(৫১৭) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
لَمَّا كَانَ يَوْمُ أُحُدٍ وَانْكَشَفَ الْمُسْلِمُوْنَ قَالَ عَنِّي أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعْتَذِرُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هَؤُلَاءِ - يَعْنِي أَصْحَابَهُ - وَأَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هَؤُلَاءِ - يَعْنِي الْمُشْرِكِينَ - ثُمَّ تَقَدَّمَ فَقَاتَلَ حَتَّى اسْتُشْهِدَ، فَوَجَدْنَا بِهِ بِضْعًا وَثَمَانِيْنَ ضَرْبَةً بِالسَّيْفِ، أَوْ طَعْنَةً بِرُمْحٍ، أَوْ رَمْيَةً بِسَهُم.
অর্থ: উহুদ যুদ্ধে যখন মুসলমানদের সৈন্যদল ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েছে, তখন আমার চাচা আনাস ডবন নজর বললেন, হে আল্লাহ, সাহাবায়ে কেরাম যা করেছেন, এর জন্য আপনার কাছে আমি মাফ চাচ্ছি। আর মুশরিকরা যা করেছে, তা থেকে আমি আপনার কাছে নিষ্কৃতি ঘোষণা করছি। এরপর তিনি সামনে অগ্রসর হয়ে জিহাদ করতে করতে শহিদ হয়েছেন। তাঁর গায়ে আশিটিরও বেশি তরবারি বা তীরের আঘাত ছিল। ৭২২
সৈন্যদের বীরত্বের জন্য আমিরের প্রশংসা করা উচিত
(৫১৮) হজরত সালামা বিন আকওয়া রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। কাফেররা মদিনার পশুপালের উপর আক্রমণ করে সেগুলো নিয়ে যাওয়া ও সালামা রাদি. ও আবু কাতাদা রাদি. তাদের ধাওয়া করার ঘটনায় এক দীর্ঘ হাদিসের শেষে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
كَانَ خَيْرُ فُرْسَانِنَا الْيَوْمَ أَبُوْ قَتَادَةَ، وَخَيْرُ رَجَالَتِنَا سَلَمَهُ.
অর্থ: আরোহীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল, আবু কাতাদা রাদি., আর পায়দলদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলেন সালামা। ৭২৩

টিকাঃ
৬৯৮. সুরা আনফাল: ৪৫-৪৬-৪৭।
৬৯৯. সুরা কামার: ৪৫।
৭০০. সহিহ বুখারি: ২৯১৫, সহিহ মুসলিম: ১৭৬৩, সুনানে তিরিমিজি: ৩০৮১।
৭০১. সহিহ বুখারি: ২৮১৮, সহিহ মুসলিম: ১৭৪২, সুনানে আবু দাউদ: ২৬৩১, মুসনাদে আহমাদ ৪/৩৫৪।
৭০২. সহিহ বুখারি: ৩৭১, সহিহ মুসলিম: ১৩৬৫, সুনানে নাসাঈ ৬/১৩১।
৭০৩. সুনানে আবু দাউদ: ২৫৪০।
৭০৪. সুনানে আবু দাউদ: ২৬৩২, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৮, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৮৪, ইবনে হিব্বান: ১৬৬১, আমাল: ৬০৪, নাসাঈ।
৭০৫. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩৭।
৭০৬. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৮৫।
৭০৭. ইবনুস সুন্নি: ৬৬৮। হাদিসটি দুর্বল।
৭০৮. ইবনুস সুন্নি: ৩৩৬।
৭০৯. কিতাবুল উম্ম ১/২২৩।
৭১০. সুনানে আবু দাউদ: ২৬৫৬।
৭১১. সহিহ বুখারি: ২৮৬৪, সহিহ মুসলিম: ১৭৭৬, সুনানে তিরমিজি: ১৬৮৮।
৭১২. সহিহ মুসলিম: ১৮০২, সহিহ বুখারিতে পাওয়া যায়নি।
৭১৩. সহিহ বুখারি: ৩০৪১, সহিহ মুসলিম: ১৮০৬, সুনানে আবু দাউদ: ২৭৫২, আমাল: ৯৭৮, মুসনাদে আহমাদ ৪/৫২।
৭১৪. সহিহ বুখারি: ২৭৬৪।
৭১৫. সহিহ বুখারি: ২৮৩৬, সহিহ মুসলিম: ১৮০৩।
৭১৬. অন্য বর্ণনায় “আলাল ইসলামি" এর স্থলে عَلَى الْجِهَادِ )আলাল জিহাদি: জিহাদের ওপর) এসেছে।
৭১৭. সহিহ বুখারি: ২৮৩৪, সহিহ মুসলিম: ১৮০৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৮৫৬।
৭১৮. সুরা আলে ইমরান: ১৬৯-১৭৪। ব্যাখ্যাসহ তরজমা: অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল বুরআন ১ম খণ্ড থেকে। সহজে কুরআন বুঝার জন্য তাফসিরটির বিকল্প নেই। ইনশাআল্লাহ, এই তাফসির আপনাকে কুরআনের অনেক নিকটবর্তী করে দিবে
৭১৯. সহিহ বুখারি: ১০০১, সহিহ মুসলিম: ৬৭৭।
৭২০. সুরা তাওবা: ২৫।
৭২১. সুরা আহজাব: ২১।
৭২২. সহিহ বুখারি: ২৮০৫, সহিহ মুসলিম: ১৯০৩, সুনানে তিরমিজি: ৩১৯৮, মুসনাদে আহমাদ ৩/২০১।
৭২৩. সহিহ বুখারি: ৩০৪১, সহিহ মুসলিম: ১৮০৬।

📘 আল আযকার > 📄 যুদ্ধ থেকে ফেরত যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে

📄 যুদ্ধ থেকে ফেরত যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে


এ প্রসঙ্গে হাদিস রয়েছে। সেগুলো মুসাফিরের অধ্যায়ে উল্লেখ করা হবে ইনশাআল্লাহ।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন