📄 রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারত ও দুআ
প্রত্যেক হাজির জন্য উচিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারত করা। মদিনা তার পথে হোক বা না হোক। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ নেকির কাজ। অনেক সওয়াবের কাজ। অনেক কামনার বিষয়। জিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমনের সময় রাস্তায় বেশি বেশি দরুদ পড়বে। মদিনার এলাকা, গাছপালা ও মদিনার কোন নিদর্শন দেখলে দরুদ বাড়িয়ে দিবে। আল্লাহর কাছে দুআ করবে, তিনি যেন জিয়ারতের মাধ্যমে তাকে উপকৃত করেন। দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান করেন। এ দুআটি পড়বে-
اَللَّهُمَّ افْتَحْ عَلَيَّ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَارْزُقْنِي فِي زِيَارَةِ قَبْرِ نَبِيِّكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا رَزَقْتَهُ أَوْلِيَاءَكَ وَأَهْلَ طَاعَتِكَ، وَاغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي يَا خَيْرَ مَسْؤُوْلٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাফতাহলি আলাইয়া আবওয়াবা রহমাতিক। ওয়ারজুকনি فی زیارت قبر نبیک صلی اللہ علیہ وسلم ما رزقتہ اولیاءک واہل طاعتک, ওয়াগফিরলি ওয়ার হামনি ইয়া খাইরা মাসউল।
অর্থ: আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। আপনার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতে আমাকে সেই প্রশান্তি দাও, যা প্রিয় ও অনুগত বান্দাদের দিয়ে থাকেন। আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন হে শ্রেষ্ঠ দাতা।
মসজিদে প্রবেশের সময় অন্য মসজিদে প্রবেশের যেসব দুআ পূর্বে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোই পড়বে। তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামাজ আদায়ের পর রওজা শরিফের কাছে আসবে। রওজা শরিফের দেয়াল থেকে চার হাত পেছনে রওজা শরিফকে সামনে রেখে কেবলাকে পেছনে রেখে দাঁড়াবে। পরিমিত আওয়াজে সালাম দিবে; উচু আওয়াজে নয়। বলবে-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا خِيَرَةَ اللَّهِ مِنْ خَلْقِهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا حَبِيبَ اللهِ ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ السَّلَامُ عَلَيْكَ وَعَلَى آلِكَ وَأَصْحَابِكَ وَأَهْلِ بَيْتِكَ وَعَلَى النَّبِيِّينَ وَسَائِرِ الصَّالِحِينَ : أَشْهَدُ أَنَّكَ بَلَّغْتَ الرِّسَالَةَ، وَأَدَّيْتَ الْأَمَانَةَ، وَنَصَحْتَ الْأُمَّةَ، فَجَزَاكَ اللَّهُ عَنَّا أفْضَلَ مَا جَزَى رَسُوْلاً عَنْ أُمَّتِهِ.
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহি, আসসালামু আলাইকা ইয়া খিরাতাল্লাহি মিন খালকিহ। আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবিবাল্লাহি, আসসালামু আলাইকা ইয়া সাইয়িদাল মুরসালিনা ওয়া খাতামান্নাবিয়্যিন। আসসালামু আলাইকা ওয়া আলা আলিকা ওয়া আসহাবিকা ওয়া আহলি বাইতিকা ওয়া আলান্নাবিয়্যিনা ওয়া সায়িরিস সালিহিন। আশহাদু আন্নাকা বাল্লাগতার রিসালাতা, ওয়া আদ্দাইতাল আমানাতা, ওয়া নাসাহতাল উম্মাহ। ফা জাজাকাল্লাহু আন্না আফদালা মা জাজা রাসুলান আন উম্মাতিহ।
অর্থ: শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে আল্লাহর রাসুল। শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে আল্লাহর প্রিয়। শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে রাসুলদের সরদার ও শেষ নবি। শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর, আপনার সাথী ও সাহাবায়ে কেরামের ওপর, পরিবারের ওপর, সমস্ত নবিদের ওপর এবং সকল নেক বান্দাদের ওপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি রিসালতের দায়িত্ব সঠিকভাবে আদায় করেছেন, ওহির আমানত পৌঁছিয়েছেন এবং উম্মতকে সদুপদেশ দিয়েছেন। একজন রাসুলকে তার উম্মাহর তরফে যেভাবে প্রতিদান দিয়ে থাকেন, আল্লাহর আপনাকে এরচে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
যদি কেউ তাকে সালাম পাঠানোর ওসিয়ত করে থাকে তাহলে এভাবে বলবে-
السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مِنْ فُلَانِ بْنِ فُلَانٍ.
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহি মিন ফুলানিবনি ফুলান।
অর্থ: শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে আল্লাহর রাসুল, অমুকের সন্তান অমুকের (তার নাম নিবে) পক্ষ থেকে।
এরপর এক গজ পরিমাণ ডানদিকে গিয়ে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সালাম দিবে। এরপর আরেক গজ পরিমাণ পিছিয়ে হজরত উমর বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সালাম দিবে। অতঃপর প্রথম স্থানে চলে আসবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে তাঁকে নিজের জন্য ওসিলা বানাবে। তাঁকে সুপারিশকারী বানাবে রবের কাছে।
দুআ করবে নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, সাথি-সঙ্গী ও বন্ধু-বান্ধবের জন্য। শুভাকাঙ্ক্ষী ও সকল মুসলমানের জন্য। খুব জোড়ালোভাবে দুআ করবে। এই মহান স্থানকে গনিমত মনে করবে। আল্লাহর প্রশংসা করবে, তাসবিহ পড়বে, তাকবির বলবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়বে। এরপর রওজা শরিফ ও মসজিদের মিম্বারের মাঝখানে এসে বেশি পরিমাণ দুআ করবে।
(৪৯২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا بَيْنَ قَبْرِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ.
অর্থ: আমার কবর ও মিম্বরের মাঝখানের অংশ জান্নাতের উদ্যানসমূহের একটি উদ্যান। ৬৮৬
মদিনা থেকে বের হওয়ার সময় ও সফর থেকে ফিরে যাওয়ার সময় দুই রাকাত সালাতুল বিদা পড়া মুস্তাহাব। এরপর যা ইচ্ছা দুআ করবে। এরপর কবরের কাছে আসবে। পূর্বের ন্যায় সালাম করবে। আগের দুআগুলো পড়বে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এই বলে বিদায় নিবে-
اللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ هَذَا آخِرَ الْعَهْدِ بِحَرَمِ رَسُوْلِكَ، وَيَسِّرْ لِي الْعَوْدَ إِلَى الْحَرَمَيْنِ سَبِيلاً سَهْلَةٌ بِمَنّكَ وَفَضْلِكَ، وَارْزُقْنِي الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَرُدَّنَا سَالِمِينَ غَانِمِينَ إِلَى أَوْطَائِنَا آمِنِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাযআল হাজা আখিরাল আহদি বিহারামি রাসুলিকা, ওয়া ইয়াসসির লিয়াল আওদা ইলাল হারামাইনি সাবিলা সাহলাতান বি মান্নিকা ওয়া ফাদলিকা। ওয়ারজুকনিল আফওয়া ওয়াল ইফয়াতা ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ। ওয়া রুদ্দানা সালিমিনা গানিমিনা ইলা আওতানিনা আমিনিন।
অর্থ: হে সফরকে আপনার রাসুলের হারামের জন্য শেষ সফর বানাবেন না। আমার জন্য হারামাইনে বারবার আসার পথ সহজ করে দিন। আপনার দয়া ও অনুগ্রহে একেবারে সহজ পথ। আমাকে উভয় জাহানে ক্ষমা ও সুরক্ষা দান করুন। আমাদেরকে ঘরে ফেরান সুস্থতা ও কৃতকার্যতার সাথে এবং নিরাপদে।
এখানেই হজের আলোচনার সমাপ্তি করা হল। এটি যদিও এই কিতাবের হিসাবে দীর্ঘ; কিন্তু আমি এ সম্পর্কে যে আলোচনা জানি সে তুলনায় সংক্ষেপ। আল্লাহর কাছে আমরা তাঁর আনুগত্যের জন্য তাওফিক কামনা করি এবং তিনি যেন জান্নাতে আমাদের ভাইদের সঙ্গে আমাদেরকে একত্রিত করেন।
হজরত উতাবি রহ. বলেন, আমি নবিজির কবরের পাশে বসা সিলাম। ইতোমধ্যে একজন গ্রাম্য লোক এসে বলল- আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ (শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে আল্লাহর রাসুল)। আল্লাহ তাআলা বলেছেন- "যদি তোমরা নিজের ওপর জুলুম করে থাক আর নবিজির কাছে এসে একবার তোমরা নিজেরা আল্লাহর কাছে মাফ চায় এবং রাসুলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু হিসাবেই পাবেন।”৬৮৭ এজন্য আমি আমার পাপের ক্ষমা চাওয়ার জন্য, রবের কাছে আপনার মাধ্যমে শাফাআত লাভের আশায় এসেছি। এরপর নিম্নোক্ত কবিতা পড়েন-
يَا خَيْرَ مَنْ دُفِنَتْ بِالْقَاعِ أَعْظُمُهُ * فَطَابَ مِنْ طَيْبِهِنَّ الْقَاعُ وَالْأَكَمُ نَفْسِي الْفِدَاءُ لِقَبْرِ أَنْتَ سَاكِنُهُ فِيْهِ الْعَفَافُ وَفِيْهِ الْجُودُ وَالْكَرَمُ.
উচ্চারণ: ইয়া খাইরা মান দুফিনাত বিলকায়ি আজুমুহু। ফা তাবা মান তাইয়াবাহুন্নাল কাউ ওয়াল আকাম। নাফসিল ফিদাউ লিকাবরিন আনতা সাকিনুহু, ফিহিল আফাফু ওয়া ফিহিল জুদু ওয়াল কারাম।
অর্থ: হে ঐ মহান, যাকে মহান স্থানে দাফন করা হয়েছে। যার সুগন্ধিতে সমস্ত তলদেশ ও পাহাড়-পর্বত সুগন্ধিত। ঐ কবরের জন্য আমার প্রাণ উৎসর্গীত, যে কবরে আপনি রয়েছেন। যাতে রয়েছে ক্ষমা, বদান্যতা ও দানশীলতা। -উতাবি রহ. বলেন, এরপর সে গ্রাম্য লোকটি চলে গেল। তখন আমার চোখে ঘুম চেপে এল। আমি ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম। তিনি বলছেন, হে উতাবি, তুমি গ্রাম্য লোকটিকে সুসংবাদ দাও যে, আল্লাহ তাকে মাফ করে দিয়েছেন। ৬৮৮
টিকাঃ
৬৮৬. সহিহ বুখারি: ১১৯৬, সহিহ মুসলিম: ১৩৯০।
৬৮৭. (নিসা ৬৪)
৬৮৮. এই ঘটনাটি দিয়ে দলিল দেয়া যাবে না। এর সনদ বানোয়াট। দেখুন: আসসারিমুল মুনকি ফিররাদ্দি আলাস সুবকি পৃ, ৪৪৬-৪৪৭, ইবনে আবদুল হাদি।