📄 আরাফা, মুজদালিফা ও মিনার দুআ
মক্কা থেকে আরাফায় যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে
মক্কা থেকে বের হওয়ার সময় মিনার দিকে ফিরে নিম্নোক্ত দুআ পড়া মুস্তাহাব-
اللَّهُمَّ إِيَّاكَ أَرْجُو، وَلَكَ أَدْعُوْ، فَبَلِّغْنِي صَالِحَ أَمَلِي، وَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي، وَامْنُنْ عَلَيَّ بِمَا مَنَنْتَ بِهِ عَلَى أَهْلِ طَاعَتِكَ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা আরজু ওয়া লাকা আদউ, ফাবাল্লিগনি সালিহা আমালি, ওয়াগফিরলি জুনুবি, ওয়ামনুন আলাইয়্যা বিমা মানানতা বিহি আলা আহলি তাআতিক, ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছেই প্রত্যাশা করি, আপনকেই ডাকি। আমার নেক প্রত্যাশা পূরণ করুন এবং আমার পাপসমূহ ক্ষমা করুন। আমার ওপর অনুগ্রহ করুন, যেভাবে আপনার অনুগতদের ওপর করে থাকেন। নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল। -মিনা থেকে আরাফায় যাওয়ার সময় এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ إِلَيْكَ تَوَجَّهْتُ، وَوَجْهَكَ الْكَرِيمَ أَرَدْتُ، فَاجْعَلْ ذَنْبِي مَغْفُوْراً، وَحَجِيْ مَبْرُوراً، وَارْحَمْنِي وَلَا تُخَيِّبُنِي إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইলাইকা তাওয়াজ্জাহতু, ওয়া ওয়াজহাকাল কারিমা আরাদতু, ফাযআল জাম্বি মাগফুরান, ওয়া হাজ্জি মাবরুরান, ওয়ার হামনি ওয়ালা তুখায়্যিবনি, ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার অভিমুখী হলাম, আপনার সন্তুষ্টিই আমার ইচ্ছা। অতএব, আমার গুনাহ মাফ করে দিন, আমার হজ কবুল করুন। আমার ওপর দয়া করুন, আমাকে নিরাশ করবেন না। নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল।
তালবিয়া পড়বে, কুরআন তিলাওয়াত করবে এবং সকল জিকির-আজকার ও দুআ-দরুদ বেশি বেশি পড়বে। নিচের দুআটিও পড়বে-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার। অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
আরাফায় জিকির ও দুআ
পূর্বে ঈদের যিকিরে গেছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আরাফার দুআ শ্রেষ্ঠ দুআ। আমি ও পূর্ববর্তী নবিগণ যা বলেছেন এর মধ্যে উত্তম হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। ৬৮০
এসব দুআ-জিকির বেশি বেশি পড়া চাই। দুআর জন্য বছরের শ্রেষ্ঠ দিন হল আরাফার দিন। আরাফার দিনটি হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনটি হজের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাই এ দিনে দুআ, জিকির-আজকার ও কুরআন তিলাওয়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা চাই। বিভিন্ন দুআ করবে। বিভিন্ন ধরনের জিকির করবে। নিজের জন্য দুআ করবে। সকল স্থানে জিকির করবে। একাকী, জামাতের সঙ্গে দুআ করবে। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়-স্বজনদের জন্য, শিক্ষক-ছাত্র, বন্ধু-বান্ধব, সকল শুভাকাঙ্খী ও সকল মুসলমানের জন্য। এসবের মাঝে কোন কমতি করবে না। কারণ, এ দিনটিতে কোন কিছু ছুটে গেলে তা আর পূরা করা যাবে না। পক্ষান্তরে অন্য দিনের ক্ষতি পূরা করা যাবে।
দুআর ক্ষেত্রে অন্তমিলের লৌকিকতা করবে না। কারণ, এতে মন সেদিকে মশগুল হয়ে যাবে। বিনয়-নম্রতা ও কাকুতি-মিনতি থাকবে না। তবে মুখস্থ অন্তমিল দুআ পড়তে কোন সমস্যা নেই, যদি তাতে মন সেগুলোর বিন্যাস ও ইবারতে মশগুল না হয়।
সুন্নাত হল, নীচু স্বরে দুআ করা। বেশি বেশি ইস্তিগফার করা। মন থেকে সকল গুনাহ থেকে তাওবা করা। খুব জোরালোভাবে দুআ করা। বারবার দুআ করা। দুআ কবুল হচ্ছে না এরূপ মনে না করা। দুআর শুরু ও শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়া। কাবামুখী হয়ে পবিত্র অবস্থায় দুআ করা চাই।
(৪৮৯) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, আরাফার দিনে আরাফায় অবস্থানকালে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ বেশি বেশি পড়তেন-
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَالَّذِي نَقُوْلُ وَخَيْرًا مِمَّا نَقُوْلُ، اَللَّهُمَّ لَكَ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي وَإِلَيْكَ مَا بِي وَلَكَ رَبِّ تُرَاثِي ، اللهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَوَسْوَسَةِ الصَّدْرِ وَشَتَاتِ الْأَمْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا تَجِيْءُ بِهِ الرِّيْحُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু কাল্লাজি নাকুলু, ওয়া খাইরান ম্মিা নাকুল। আল্লাহুম্মা লাকা সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি, ওয়া ইলাইকা মাআবি ওয়ালাকা রাব্বি তুরাসি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি ওয়া ওয়াসওয়াসাতিস সাদরি ওয়া শাতাতিল আমর। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি মা তাযিউ বিহির রিহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সেরকম প্রশংসা করি যেরকম আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন এবং আমরা যেরকম প্রশংসা করছি, এরচে উত্তম প্রশংসা করি। হে আল্লাহ, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ আপনার জন্য উৎসর্গীত। আপনার দিকেই আমার প্রত্যাবর্তন এবং আপনার জন্য উৎসর্গীত আমার সম্পদ হে রব। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আজাব থেকে, কুমন্ত্রণা থেকে এবং অনিয়ম থেকে। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থী বাতাসের অনিষ্ট থেকে। ৬৮১
এ সময় বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। দরুদ শরিফ পড়বে। জিকির ও দুআর সঙ্গে কাঁদবে। এখানেই চোখের পানি সার্থক হয়। গুনাহ মাফ হয়। আশা পূরণ হয়। এটি এক মহান স্থান। মহা মিলনমেলা। এখানে আল্লাহর নেককার বান্দাদের জমায়েত হয়। এটি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জমায়েত। নির্বাচিত কিছু দুআ-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা, ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি গুনাহ করে নিজের অনেক অবিচার করে ফেলেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপন অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয় আপনিই মহা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً تُصْلِحُ بِهَا شَأْنِي فِي الدَّارَيْنِ، وَارْحَمْنِي أَسْعَدُ بِهَا فِي الدَّارَيْنِ، وَتُبْ عَلَيَّ تَوْبَةً نَصُوْحاً لَّا أَنْكُثَهَا أَبَداً، وَأَلْزِمْنِي سَبِيلَ الْإِسْتِقَامَةِ لَا أَزِيعُ عَنْهَا أَبَداً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি মাগফিরাতান তুসলিহু বিহা শানি ফিদ্দারাইনি, ওয়ারহামনি আসআদু বিহা ফিদ্দারাইনি, ওয়াতুব আলাইয়্যা তাওবাতান নাসুহান লা আনকুসুহা আবাদা, ওয়া আলজিমনি সাবিলাল ইস্তিকামাতি লা আজিগু আনহা আবাদা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে এমনভাবে ক্ষমা করুন, যদ্দারা আমার অবস্থা উভয় জগতে সংশোধন হয়ে যায়। আমার প্রতি দয়া করুন, যাতে উভয় জগতে ভাগ্যবান হতে পারি। আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দিন, আমি কখনো আর পাপ করব না। আমাকে সোজা পথে আগলে রাখুন, কখনো আমি এ থেকে ভ্রষ্ট হব না।
اَللَّهُمَّ انْقُلْنِيْ مِنْ ذُلِّ الْمَعْصِيَةِ إِلَى عِزِّ الطَّاعَةِ، وَأَغْنِنِيْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَبِطَاعَتِكَ عَنْ مَعْصِيَتِكَ، وَبِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ، وَنَوِّرْ قَلْبِيْ وَقَبْرِيْ، وَأَعِذْنِيْ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ، وَاجْمَعْ لِيَ الْخَيْرَ كُلَّهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মানকুলনি মিন জুল্লিল মাসিয়াতি ইলা ইজ্জিত্তাআতি, ওয়া আগনিনি বিহালালিকা আন হারামিকা, ওয়াবি তাআতিকা আন মাসিয়াতিকা, ওয়াবি ফাদলিকা আম্মান সিওয়াক। ওয়া নাওভির কালবি ওয়া ক্বাবরি ওয়া আয়িজনি মিনাশ শাররি কুল্লিহ। ওয়াযমা লিয়াল খাইরা কুল্লাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে পাপের লা'নত থেকে আনুগত্যের মর্যাদার দিকে স্থানান্তর করুন। আপনার হালালের মাধ্যমে হারাম থেকে অমুখাপেক্ষী রাখুন। আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে অবাধ্যতা থেকে, আপনার অনুগ্রহে অন্যদের থেকে। আমার কলব ও কবর আলোকিত করুন। আমাকে সকল অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখুন এবং সকল কল্যাণ আমাকে দান করুন।
মুজদালিফা থেকে আরাফায় যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে
পূর্বে বলা হয়েছে যে, সব জায়গায় বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। এ জায়গাটি তালবিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কুরআন তিলাওয়াত, দুআ বেশি বেশি পড়বে। নিম্নোক্ত দুআ বেশি বেশি পড়বে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান। -এটা বারংবার পড়বে। এ দুআটিও পড়বে-
إِلَيْكَ اللَّهُمَّ أَرْغَبُ، وَإِيَّاكَ أَرْجُوْ، فَتَقَبَّلْ نُسُكِيْ، وَوَفِّقْنِيْ، وَارْزُقْنِيْ فِيْهِ مِنَ الْخَيْرِ أَكْثَرَ مَا أَطْلُبُ، وَلَا تُخَيِّبْنِيْ إِنَّكَ أَنْتَ اللهُ الْجَوَادُ الْكَرِيمُ.
উচ্চারণ: ইলাইকা আল্লাহুম্মা আরগাবু, ওয়া ইয়্যাকা আরজু, ফাতাকাব্বাল নুসুকি ওয়া ওয়াফফিকনি ফিহি মিনাল খাইরি আকসারা মা আতলুবু, ওয়ালা তুখাইয়িবনি, ইন্নাকা আনতাল যাওয়্যাদুল কারিম।
অর্থ: আমি আপনার কাছেই প্রত্যাশা করি, আপনার কাছেই কামনা করি। সুতরাং আমার কুরবানি কবুল করুন, আমাকে তাওফিক দিন। এতে আমাকে আশাতীত প্রতিদান দান করুন, আমাকে নিরাশ করবেন না। নিশ্চয় আপনি বড় দানশীল ও মহানুভব।
এটা হল ঈদের রজনী। ঈদের রজনীতে জাগ্রত থাকা, নামাজ পড়া, জিকির করা প্রসঙ্গে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রাতের মর্যাদার সাথে স্থানের মর্যাদাও মিলিত হয়েছে। সাথে সাথে সে হারামের মাঝে আছে এবং ইহরাম অবস্থায় আছে। হাজিদের মজমায় আছে। মহান ইবাদত পালনের পর এখানে আছে। আরাফায় সেসব মহান দুআ করা পর। তাই এ সময়ের গুরুত্ব অনেক।
মাশআরে হারাম ও মুজদালিফায় যে দুআ করবে
এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِّنْ عَرَفَتٍ فَاذْكُرُوا اللهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ " وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَيْكُمْ ، وَإِنْ كُنْتُمْ مِّنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالَّيْنَ.
অর্থ: অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত থেকে (তওয়াফে জিয়ারতের জন্য) ফিরে আসবে, তখন মাশআরে হারামের নিকটে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তিনি যেভাবে তোমাদিগকে হেদায়াত দিয়েছেন সেভাবে তাকে স্মরণ কর। যদিও ইতিপূর্বে তোমরা (বিশুদ্ধ পন্থা সম্পর্কে) ছিলে অজ্ঞ। ৬৮২
মুজদালিফায় রাতে বেশি বেশি জিকির, দুআ ও কুরআন তিলাওয়াত করবে। কারণ, এটি মহান রাত, যেমনটি পূর্বে বলা হয়েছে। মুজদালিফায় নিম্নোক্ত দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنْ تَرْزُقَنِي فِي هَذَا الْمَكَانِ جَوَامِعَ الْخَيْرِ كُلِهِ، وَأَنْ تُصْلِحَ شَأْنِي كُلَّهُ، وَأَنْ تَصْرِفَ عَنِّي الشَّرِّ كُلَّهُ، فَإِنَّهُ لَا يَفْعَلُ ذَلِكَ غَيْرُكَ، وَلَا يَجُودُ بِهِ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা আন তারজুকানি ফি হাজাল মাকানি যাওয়ামিআল খাইরি কুল্লিহি, ওয়া আন তাসরিফা আন্নিশ শাররা কুল্লাহু, ফা ইন্নাহু লা ইয়াফআলু জালিকা গাইরুকা, ওয়ালা ইয়াযুদু বিহি ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে এ স্থানে সকল কল্যাণ দ্বারা ভূষিত করুন, আমার সমস্ত অবস্থা সংশোধন করে দিন। আমাকে সকল অনিষ্ট থেকে দূরে রাখুন। এটা আপনি ব্যতীত আর কেউ পারবে না এবং আপনি ছাড়া আর কেউ দানও করবে না।
এই দিন ফজরের নামাজ প্রথম সময়ে পড়ে নিবে। বেশি বেশি তাকবির পড়বে। এরপর মাশআরে হারামের দিকে রওনা করবে। এটি হল মুজদালিফার শেষে একটি ছোট পাহাড়। যাকে 'কুজাহ' পাহাড় বলা হয়ে থাকে। যদি এই পর্বতে উঠা সম্ভব হয় তাহলে উঠবে। অন্যথায় নিচে কিবলামুখী হয়ে অবস্থান করবে। তাকবির ও তাসবিহ পাঠ করবে। বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে ও দুআ করবে। নিম্নোক্ত দুআ পড়া মুস্তাহাব-
اَللَّهُمَّ كَمَا وَقَفْتَنَا فِيْهِ وَأَرَيْتَنَا إِيَّاهُ، فَوَفِّقْنَا لِذِكْرِكَ كَمَا هَدَيْتَنَا، وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا كَمَا وَعَدْتَنَا بِقَوْلِكَ، وَقَوْلُكَ الْحَقُّ فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِنْ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالِّينَ، ثُمَّ أَفِيْضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা কামা ওয়াকাফতানা ফিহি ওয়া আরাইতানা ইয়্যাহু, ফা ওয়াফফিকনা লি যিকরিকা কামা হাদাইতানা ওয়াগফির লানা ওয়ার হামনা কামা ওয়াআদতানা বিকাওলিকা, ওয়া কাওলুকাল হাক্কু: ফা ইজা আফাদতুম মিন আরাফাতিন ফাজকুরুল্লাহা ইনদাল মাশয়িরিল হারামি ওয়াজকুরুহু কামা হাদাকুম, ওয়া ইন কুনতুম মিন কাবলিহি লামিনাদ্দাল্লিন। ছুম্মা আফিদু মিন হাইসু আফাদান্নাসু ওয়াসতাগফিরুল্লাহ, ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, যেভাবে আমাদেরকে সেখানে অবস্থান করিয়েছেন এবং সে স্থান দেখিয়েছেন। সুতরাং আপনার বাতলানো পদ্ধিতে আপনাকে স্মরণ করার তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন, যেমনটা আপনি কালামে পাকে ওয়াদা করেছেন, আর আপনার ওয়াদা সত্য- অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত থেকে (তওয়াফে জিয়ারতের জন্য) ফিরে আসবে, তখন মাশআরে হারামের নিকটে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তিনি যেভাবে তোমাদিগকে হেদায়াত দিয়েছেন সেভাবে তাকে স্মরণ কর। যদিও ইতিপূর্বে তোমরা (বিশুদ্ধ পন্থা সম্পর্কে) ছিলে অজ্ঞ। অতঃপর ফিরে এসো যেখান থেকে সমস্ত লোক ফিরে আসে। আর (আরাফায়) আল্লাহর কাছে পাপ মার্জন করাও। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পরম ক্ষমাকারী বড় করুণাময়। ৬৮৩-বেশি বেশি এ দুআও পড়বে-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার। অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। -এই দুআগুলোও পড়া মুস্তাহাব-
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كُلُّهُ، وَلَكَ الْكَمَالُ كُلُّهُ، وَلَكَ الْجَلَالُ كُلُّهُ، وَلَكَ الْتَقْدِيسُ كُلُّهُ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي جَمِيعَ مَا أَسْلَفْتُهُ، وَاعْصِمْنِي فِيْمَا بَقِيَ، وَارْزُقْنِي عَمَلاً صَالِحاً تَرْضَى بِهِ عَنِّي يَا ذَا الْفَضْلِ الْعَظِيمِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু কুলুহু, ওয়ালাকাল কামালু কুল্লুহু, ওয়া লাকাল জালালু কুল্লুহু, ওয়া লাকাত্তাকদিসু কুল্লুহ। আল্লাহুম্মাগফিরলি যামিআ মা আসলাফতুহু, ওয়াসিমনি ফিমা বাকিয়া, ওয়ারজুকনি আমালান সালিহান তারদা বিহি আন্নি ইয়া জাল ফাদলিল আজিম। অর্থ: হে আল্লাহ, সকল প্রশংসা, সকল পূর্ণাঙ্গতা, সকল বড়ত্ব ও সকল পবিত্রতা আপনারই। হে আল্লাহ, আমার পূর্বের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করুন। ভবিষ্যতে হেফাজত করুন। এমন সৎ আমলের তাওফিক দিন, যদ্দারা আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হন হে মহা অনুগ্রহশীল।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَشْفِعُ إِلَيْكَ بِخَوَاصٌ عِبَادِكَ، وَأَتَوَسَّلُ بِكَ إِلَيْكَ، أَسْأَلُكَ أَنْ تَرْزُقَنِي جَوَامِعَ الْخَيْرِ كُلِهِ، وَأَنْ تَمُنَّ عَلَيَّ بِمَا مَنَنْتَ بِهِ عَلَى أَوْلِيَائِكَ، وَأَنْ تُصْلِحَ حَالِي في الْآخِرَةِ وَالدُّنْيَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসতাশফিউ ইলাইকা বি খাওয়াসসি ইবাদিকা, ওয়া আতাওয়াসসালু বিকা ইলাইক। আসআলুকা আন তারজুকানি যাওয়ামিআল খাইরি কুল্লিহি, ওয়া আন তামুন্না আলাইয়্যা বিমা মানানতা বিহি আলা আউলিয়ায়িক। ওয়া আন তুসলিহা হালি ফিল আখিরাতি ওয়াদ্দুনয়া ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার নেক বান্দাদের ওসিলায় আপনার কাছে সুপারিশ করছি, আপনার (আসমায়ে হুসনার) মাধ্যমে আপনার কাছে মিনতি করছি। আপনার কাছে প্রার্থনা করি যেন আমাকে সমন্বিত সমুদয় কল্যাণ দান করেন। আমার ওপর সেই দয়া করেন, যা আপনার প্রিয় বান্দাদের ওপর করে থাকেন। আর ইহকাল-পরকালে আমার অবস্থা শ্রেয়তর করে দেন হে সর্বোচ্চ দয়াবান।
মাশআরে হারাম থেকে মিনার দিকে যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে
যখন ফজরের আলো ছড়িয়ে পড়ে তখন মাশআরে হারাম থেকে মিনার দিকে যাবে। এ সময় বেশি বেশি তালবিয়া জিকির ও দুআ পড়বে। বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। কেননা এটাই তালবিয়া পড়ার শেষ সময়। হতে পারে জীবনে আর তালবিয়া পড়ার সুযোগ হবে না।
ঈদের দিন মিনাতে যে দুআ পড়বে
মিনায় পৌঁছে এ দুআ পড়বে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي بَلَغَنِيْهَا سَالِماً مُعَافَى اللَّهُمَّ هَذِهِ مِنَى قَدْ أَتَيْتُهَا، وَأَنَا عَبْدُكَ، وَفِي قَبْضَتِكَ أَسْأَلُكَ أَنْ تَمُنَّ عَلَيَّ بِمَا مَنَنْتَ بِهِ عَلَى أَوْلِيَائِكَ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْحِرْمَانِ وَالْمُصِيبَةِ فِي دِينِي يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি বাল্লাগানিহা সালিমান মুআফা। আল্লাহুম্মা হাজিহি মিনা কাদ আতাইতুহা, ওয়া আনা আবদুকা ওয়াফি কাবদাতিকা, আসআলুকা আন তামুন্না আলাইয়্যা বিমা মানানতা বিহি আলা আউলিয়ায়িক। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হিরমানি ওয়াল মুসিবাতি فی دینی یا ارحمرراحمین.
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এখানে পৌঁছিয়েছেন নিরাপদে ও সুস্থতার সাথে। হে আল্লাহ, আমি মিনায় হাজির। আমি আপনার গোলাম এবং আপনার কবজায়। মিনতি এই যে, আমার ওপর সেই দয়া করেন, যা আপনার প্রিয় বান্দাদের ওপর করে থাকেন। হে আল্লাহ, আপনার কাছে আশ্রয় চাই বঞ্চনা থেকে এবং দীনের ক্ষেত্রে পরীক্ষা থেকে, হে সর্বোচ্চ দয়ালু।
যামারায়ে আকাবায় প্রথমবার কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তালবিয়া বন্ধ করে দিবে। এখন থেকে তাকবির বলা শুরু করবে। প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তাকবির বলবে। এ স্থানে দুআর জন্য অবস্থান করা সুন্নাত নয়। কোরবানির পশু সঙ্গে থাকলে তা নহর করবে বা যাবাই করবে। নহর বা যাবাইয়ের সময় এ দুআ পড়া মুস্তাহাব-
بِسْمِ اللهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ مِنْكَ وَإِلَيْكَ، تَقَبَّلْ مِنِّي.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া ইলাইকা, তাকাব্বাল মিন্নি।
অর্থ: আল্লাহর নামে যবাই করলাম, তিনি মহান। হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ, (এই কুরবানি) আপনার দেয়া এবং আপনার জন্যই উৎসর্গীত। আমার তরফে কবুল করুন। -আর অন্যের পক্ষ থেকে কুরবানি করলে বলবে- تَقَبَّلْ مِنْ فُلَانٍ ]তাকাব্বাল মিন ফুলান: অমুকের (ঐ ব্যক্তির নাম নিবে) পক্ষ থেকে কবুল করুন]
জবাইয়ের পর যখন হলক করবে, তখন আমাদের শাফেয়িদের মতে, মাথার সামনের ভাগের চুল ধরে তিনবার তাকবির বলার পর এ দুআটি পড়া মুস্তাহাব। দুআটি হল-
الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى مَا هَدَانَا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى مَا أَنْعَمَ بِهِ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ هَذِهِ نَاصِيَتِيْ فَتَقَبَّلْ مِنّي وَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي، اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلِلْمُحَلِقِينَ وَالْمُقَصِّرِينَ، يَا وَاسِعَ الْمَغْفِرَةِ آمِينَ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি আলা মা হাদানা, ওয়ালহামদুলিল্লাহি আলা মা আনআমা বিহি আলাইনা। আল্লাহুম্মা হাজিহি নাসিয়াতি ফাতাকাব্বাল মিন্নি ওয়াগফির লি জুনুবি। আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ালিল মুহাল্লিকিনা ওয়াল মুকাসসিরিনা ইয়া ওয়াসিআল মাগফিরাহ, আমিন।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এজন্য যে, তিনি আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন। আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা এ কারণে যে, তিনি এর মাধ্যমে আমাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন। হে আল্লাহ, এই আমার অলকগুচ্ছ, আমার থেকে কবুল করুন এবং আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আমাকে এবং মুণ্ডকারী ও হ্রস্বকারীদের ক্ষমা করুন হে বড় ক্ষমাশীল। (আমিন) -মাথা মুণ্ডানো শেষ হলে তাকবির বলে এ দুআ পড়বে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي قَضَى عَنَّا نُسُكَنَا اللَّهُمَّ زِدْنَا إِيْمَاناً وَيَقِيْنَا وَعَوْنَا، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَا بَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا وَالْمُسْلِمِينَ أَجْمَعِينَ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি কাদা আন্না নুসুকানা, আল্লাহুম্মা জিদনা ঈমানান ওয়া ইয়াকিনান ওয়া আওনান, ওয়াগফির লানা ওয়ালি আবায়িনা ওয়া উম্মাহাতিনা ওয়াল মুসলিমিনা আজমাঈন।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে হজের আনুষ্ঠানিকতা আদায়ের তাওফিক দিয়েছেন। হে আল্লাহ, আমাদের ঈমান, বিশ্বাস ও মদদ বৃদ্ধি করুন। আমাদেরকে এবং আমাদের মাতা-পিতা সবাইকে ক্ষমা করুন।
আইয়ামে তাশরিকে মিনায় অবস্থানকালে যে দুআ পড়বে
(৪৯০) হজরত নুবাইশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أَيَّامُ التَّشْرِيْقِ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ.
অর্থ: আইয়ামে তাশরিক হল পানাহার ও জিকিরের দিন। ৬৮৪ -তাই এ সময় বেশি বেশি জিকির করা চাই। সর্বোত্তম জিকির হল, কুরআন তিলাওয়াত।
সুন্নাত হল, কঙ্কর নিক্ষেপের দিনগুলোর প্রতিদিন কঙ্কর নিক্ষেপের সময় যামারায়ে উলার কাছে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবে, তাকবির বলবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তাসবিহ বলবে এবং কাকুতি-মিনতির সাথে দুআ করবে। এভাবে সুরা বাকারা পড়ার সমপরিমাণ দাঁড়াবে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় যামারায় করবে। তবে তৃতীয় যামারায় দাঁড়াবে না, একে যামারায়ে আকবা বলে।
মিনা থেকে ফিরে আসার পর করণীয়
মিনা থেকে ফিরে আসার পর তার হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে গেল। এখন মূল হজের কোন জিকির বাকি নেই। তবে সে যেহেতু মুসাফির তাই তাকবির, কালিমা ইত্যাদি জিকির-আজকার করবে। যা মুসাফিরের অধ্যায়ে সামনে আলোচনা হবে।
মক্কায় প্রবেশের পর উমরার নিয়ত করলে উমরায় হজের যেসব আমল রয়েছে সেগুলোতে হজের দুআ-দরুদ ও জিকিরগুলোই করবে। যেমন, ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, জবাই ও হলক।
টিকাঃ
৬৮০. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৯।
৬৮১. সুনানে তিরমিজি: ৩৫২০।
৬৮২. সুরা বাকার: ১৮৯। তরজমা: অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন থেকে।-
৬৮৩. আয়াত দুটির তরজমা: অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন থেকে।
৬৮৪. সহিহ মুসলিম: ১১৪১।
📄 জমজমের পানি পান করার দুআ
(৪৯১) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ.
অর্থ: জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয়, আল্লাহ তাআলা সে উদ্দেশ্য পূরণ করেন। ৬৮৫-উলামায়ে কেরাম মহান উদ্দেশ্যে জমজমের পানি পান করেছেন এবং তাদের উদ্দেশ্য পুরা হয়েছে।
উলামায়ে কেরام বলেন, ক্ষমা বা সুস্থতার জন্য যে পান করবে সে এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ إِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: " مَاءُ زَمْزَمَ لِمَا شُرِبَ لَهُ " اللَّهُمَّ وَإِنِّي أَشْرَبُهُ لِتَغْفِرَ لِي وَلِتَفْعَلَ بِيْ كَذَا وَكَذَا، فَاغْفِرْ لِي أَوِ افْعَلْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাহু বালাগানি আন্না রাসুলাল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা কালা: "মাউ জামজামা লিমা শুরিবা লাহু”, আল্লাহুম্মা ওয়া ইন্নি আশরাবুহু লিতাগফিরালালি ওয়ালি তাফআলাবি কাজা ওয়া কাজা, ফাগফিরলি আ ইফআল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার কাছে পৌঁছেছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: " জমজমের পানি যে উদ্দেশ্যে পান করা হয়, আল্লাহ তাআলা সে উদ্দেশ্য পূরণ করেন”। হে আল্লাহ, আমিও এই উদ্দেশ্যে পান করছি, যাতে আমাকে ক্ষমা করে দেন এবং আমার এই এই আশা (নাম নিবে) পূরণ করেন। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন (অথবা বলবে) এটা পূরণ করুন। -অথবা এ দুআটি পড়বে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَشْرَبُهُ مُسْتَشْفِياً بِهِ فَاشْفِنِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আশরাবুহু মুসতাশফিয়ান বিহি ফাশফিনি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আরোগ্য কামনায় তা পান করছি, সুতরাং আমাকে সুস্থতা দান করুন। অন্যান্য যে কোনো দুআও পড়তে পারবে।
মক্কা থেকে ফিরে যাওয়ার সময় করণীয়
মক্কা থেকে ফিরে যাওয়ার সময় বিদায়ী তাওয়াফ করবে। মুলতাজিমে এসে মুলতাজিমকে জড়িয়ে ধরে এ দুআ পড়বে-
اللهُمَّ الْبَيْتُ بَيْتُكَ، وَالْعَبْدُ عَبْدُكَ، وَابْنُ عَبْدِكَ، وَابْنُ أَمَتِكَ، حَمَلْتَنِي عَلَى مَا سَخَّرْتَ لِي مِنْ خَلْقِكَ، حَتَّى سَيَّرْتَنِي فِي بِلَادِكَ، وَبَلَّغْتَنِي بِنِعْمَتِكَ حَتَّى أَعَنْتَنِي عَلَى قَضَاءِ مَناسِكِكَ، فَإِنْ كُنْتَ رَضِيْتَ عَنِّي فَازْدَدْ عَنِّي رَضِيَ، وَإِلَّا فَمِنَ الْآنَ قَبْلَ أَنْ يَنْأَى عَنْ بَيْتِكَ دَارِي، هَذَا أَوَانُ انْصِرَانِي، إِنْ أَذِنْتَ لِي غَيْرَ مُسْتَبْدِلٍ بِكَ وَلَا بِبَيْتِكَ، وَلَا رَاغِبٍ عَنْكَ وَلَا عَنْ بَيْتِكَ، اللَّهُمَّ فَأَصْحِبْنِي الْعَافِيَةَ فِي بَدَنِي وَالْعِصْمَةَ فِي دِينِي، وَأَحْسِنْ مُنْقَلَبِي، وَارْزُقْنِي طَاعَتَكَ مَا أَبْقَيْتَنِي وَاجْمَعْ لِي خَيْرَي الْآخِرَةِ وَالدُّنْيَا، إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা, আলবাইতু বাইতুকা, ওয়াল আবদু আবদুকা ওয়াবনু আবদিকা ওয়াবনু আমাতিক। হামালতানি আলা মা সাখখারতা লি মিন খালকিকা, হাত্তা সাইয়ারতানি فی بلادک। ওয়া বাল্লাগতানি বিনিমাতিকা হাত্তা আআনতানি আলা কাদায়ি মানাসিক। ফা ইন কুনতা রাদিতা আন্নি ফাজদাদ আন্নি রিদা, ওয়া ইল্লা ফামিনাল আনা কাবলা আন ইয়ানআ আন বাইতিকা দারি। হাজা আওয়ানু ইনসিরাফি, ইন আজিনতা লি গাইরা মুসতাবদিলিন বিকা ওয়ালা বিবাইতিকা, ওয়ালা রাগিবিন আনকা ওয়ালা আন বাইতিক। আল্লাহুম্মা ফা আসবিহনিল আফিয়াতা فی بدنی والسماتا فی دینی وااحسن منقلبی وارزقنی طاعتک ما ابقیتنی واجمع لی خیرای الاخرة والدنیا, ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: হে আল্লাহ, এই ঘর আপনার ঘর। আমি আপনার গোলাম, গোলামের গোলাম এবং আপনার বান্দীর গোলাম। আপনার অধীনস্থ সৃষ্টির পিঠে করে আমাকে আরোহন করিয়েছেন, যদ্দারা আমাকে আপনার শহরে ভ্রমণ করিয়েছেন। অপনার অনুগ্রহে হজের আনুষ্ঠানিকতা পূরণের তাওফিক দিয়েছেন। যদি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে থাকেন তাহলে আরো সন্তুষ্ট হন। অন্যাথায় এখনই সন্তুষ্ট হন, ঘরে ফেরার আগে। এটা তো আমার ফেরার মুহূর্ত। যদি অনুমতি দেন, আপনার ব্যাপারে বিশ্বাসের পরিবর্তন ছাড়া, আপনার ঘরের ব্যাপারেও। আপনার থেকে বিমুখ না হওয়া অবস্থায় এবং না আপনার ঘর থেকে। হে আল্লাহ, সর্বদা আমার শরীরে সুস্থতা দাও এবং দীনে সুরক্ষা। আমার পুনরুতथान শ্রেয়তর করুন এবং আমৃত্যু আপনার আনুগত্য দান করুন। আমাকে ইহকাল-পরকালের কল্যাণ দান করুন। নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।
উক্ত দুআর শুরু ও শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়বে, যেমন পূর্বে অন্যান্য দুআর ক্ষেত্রে আলোচনা গেছে। যদি ঋতুবতী মহিলা হয়, তাহলে মসজিদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এ দুআ পড়ে ফিরে যাবে।
টিকাঃ
৬৮৫. মুসনাদে আহমাদ ৩/৩৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩০৬৩, আলফুতুহাত ৫/২৮।
📄 রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারত ও দুআ
প্রত্যেক হাজির জন্য উচিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারত করা। মদিনা তার পথে হোক বা না হোক। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারত করা একটি গুরুত্বপূর্ণ নেকির কাজ। অনেক সওয়াবের কাজ। অনেক কামনার বিষয়। জিয়ারতের উদ্দেশ্যে গমনের সময় রাস্তায় বেশি বেশি দরুদ পড়বে। মদিনার এলাকা, গাছপালা ও মদিনার কোন নিদর্শন দেখলে দরুদ বাড়িয়ে দিবে। আল্লাহর কাছে দুআ করবে, তিনি যেন জিয়ারতের মাধ্যমে তাকে উপকৃত করেন। দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবান করেন। এ দুআটি পড়বে-
اَللَّهُمَّ افْتَحْ عَلَيَّ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ، وَارْزُقْنِي فِي زِيَارَةِ قَبْرِ نَبِيِّكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا رَزَقْتَهُ أَوْلِيَاءَكَ وَأَهْلَ طَاعَتِكَ، وَاغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي يَا خَيْرَ مَسْؤُوْلٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাফতাহলি আলাইয়া আবওয়াবা রহমাতিক। ওয়ারজুকনি فی زیارت قبر نبیک صلی اللہ علیہ وسلم ما رزقتہ اولیاءک واہل طاعتک, ওয়াগফিরলি ওয়ার হামনি ইয়া খাইরা মাসউল।
অর্থ: আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দাও। আপনার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর জিয়ারতে আমাকে সেই প্রশান্তি দাও, যা প্রিয় ও অনুগত বান্দাদের দিয়ে থাকেন। আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন হে শ্রেষ্ঠ দাতা।
মসজিদে প্রবেশের সময় অন্য মসজিদে প্রবেশের যেসব দুআ পূর্বে বর্ণিত হয়েছে সেগুলোই পড়বে। তাহিয়্যাতুল মসজিদের নামাজ আদায়ের পর রওজা শরিফের কাছে আসবে। রওজা শরিফের দেয়াল থেকে চার হাত পেছনে রওজা শরিফকে সামনে রেখে কেবলাকে পেছনে রেখে দাঁড়াবে। পরিমিত আওয়াজে সালাম দিবে; উচু আওয়াজে নয়। বলবে-
اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا خِيَرَةَ اللَّهِ مِنْ خَلْقِهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا حَبِيبَ اللهِ ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ يَا سَيِّدِ الْمُرْسَلِينَ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ السَّلَامُ عَلَيْكَ وَعَلَى آلِكَ وَأَصْحَابِكَ وَأَهْلِ بَيْتِكَ وَعَلَى النَّبِيِّينَ وَسَائِرِ الصَّالِحِينَ : أَشْهَدُ أَنَّكَ بَلَّغْتَ الرِّسَالَةَ، وَأَدَّيْتَ الْأَمَانَةَ، وَنَصَحْتَ الْأُمَّةَ، فَجَزَاكَ اللَّهُ عَنَّا أفْضَلَ مَا جَزَى رَسُوْلاً عَنْ أُمَّتِهِ.
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহি, আসসালামু আলাইকা ইয়া খিরাতাল্লাহি মিন খালকিহ। আসসালামু আলাইকা ইয়া হাবিবাল্লাহি, আসসালামু আলাইকা ইয়া সাইয়িদাল মুরসালিনা ওয়া খাতামান্নাবিয়্যিন। আসসালামু আলাইকা ওয়া আলা আলিকা ওয়া আসহাবিকা ওয়া আহলি বাইতিকা ওয়া আলান্নাবিয়্যিনা ওয়া সায়িরিস সালিহিন। আশহাদু আন্নাকা বাল্লাগতার রিসালাতা, ওয়া আদ্দাইতাল আমানাতা, ওয়া নাসাহতাল উম্মাহ। ফা জাজাকাল্লাহু আন্না আফদালা মা জাজা রাসুলান আন উম্মাতিহ।
অর্থ: শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে আল্লাহর রাসুল। শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে আল্লাহর প্রিয়। শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে রাসুলদের সরদার ও শেষ নবি। শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর, আপনার সাথী ও সাহাবায়ে কেরামের ওপর, পরিবারের ওপর, সমস্ত নবিদের ওপর এবং সকল নেক বান্দাদের ওপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি রিসালতের দায়িত্ব সঠিকভাবে আদায় করেছেন, ওহির আমানত পৌঁছিয়েছেন এবং উম্মতকে সদুপদেশ দিয়েছেন। একজন রাসুলকে তার উম্মাহর তরফে যেভাবে প্রতিদান দিয়ে থাকেন, আল্লাহর আপনাকে এরচে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
যদি কেউ তাকে সালাম পাঠানোর ওসিয়ত করে থাকে তাহলে এভাবে বলবে-
السَّلَامُ عَلَيْكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مِنْ فُلَانِ بْنِ فُلَانٍ.
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহি মিন ফুলানিবনি ফুলান।
অর্থ: শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে আল্লাহর রাসুল, অমুকের সন্তান অমুকের (তার নাম নিবে) পক্ষ থেকে।
এরপর এক গজ পরিমাণ ডানদিকে গিয়ে হজরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সালাম দিবে। এরপর আরেক গজ পরিমাণ পিছিয়ে হজরত উমর বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে সালাম দিবে। অতঃপর প্রথম স্থানে চলে আসবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনাসামনি দাঁড়িয়ে তাঁকে নিজের জন্য ওসিলা বানাবে। তাঁকে সুপারিশকারী বানাবে রবের কাছে।
দুআ করবে নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, সাথি-সঙ্গী ও বন্ধু-বান্ধবের জন্য। শুভাকাঙ্ক্ষী ও সকল মুসলমানের জন্য। খুব জোড়ালোভাবে দুআ করবে। এই মহান স্থানকে গনিমত মনে করবে। আল্লাহর প্রশংসা করবে, তাসবিহ পড়বে, তাকবির বলবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সবচেয়ে বেশি দরুদ পড়বে। এরপর রওজা শরিফ ও মসজিদের মিম্বারের মাঝখানে এসে বেশি পরিমাণ দুআ করবে।
(৪৯২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا بَيْنَ قَبْرِي وَمِنْبَرِي رَوْضَةٌ مِنْ رِيَاضِ الْجَنَّةِ.
অর্থ: আমার কবর ও মিম্বরের মাঝখানের অংশ জান্নাতের উদ্যানসমূহের একটি উদ্যান। ৬৮৬
মদিনা থেকে বের হওয়ার সময় ও সফর থেকে ফিরে যাওয়ার সময় দুই রাকাত সালাতুল বিদা পড়া মুস্তাহাব। এরপর যা ইচ্ছা দুআ করবে। এরপর কবরের কাছে আসবে। পূর্বের ন্যায় সালাম করবে। আগের দুআগুলো পড়বে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে এই বলে বিদায় নিবে-
اللَّهُمَّ لَا تَجْعَلْ هَذَا آخِرَ الْعَهْدِ بِحَرَمِ رَسُوْلِكَ، وَيَسِّرْ لِي الْعَوْدَ إِلَى الْحَرَمَيْنِ سَبِيلاً سَهْلَةٌ بِمَنّكَ وَفَضْلِكَ، وَارْزُقْنِي الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، وَرُدَّنَا سَالِمِينَ غَانِمِينَ إِلَى أَوْطَائِنَا آمِنِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাযআল হাজা আখিরাল আহদি বিহারামি রাসুলিকা, ওয়া ইয়াসসির লিয়াল আওদা ইলাল হারামাইনি সাবিলা সাহলাতান বি মান্নিকা ওয়া ফাদলিকা। ওয়ারজুকনিল আফওয়া ওয়াল ইফয়াতা ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ। ওয়া রুদ্দানা সালিমিনা গানিমিনা ইলা আওতানিনা আমিনিন।
অর্থ: হে সফরকে আপনার রাসুলের হারামের জন্য শেষ সফর বানাবেন না। আমার জন্য হারামাইনে বারবার আসার পথ সহজ করে দিন। আপনার দয়া ও অনুগ্রহে একেবারে সহজ পথ। আমাকে উভয় জাহানে ক্ষমা ও সুরক্ষা দান করুন। আমাদেরকে ঘরে ফেরান সুস্থতা ও কৃতকার্যতার সাথে এবং নিরাপদে।
এখানেই হজের আলোচনার সমাপ্তি করা হল। এটি যদিও এই কিতাবের হিসাবে দীর্ঘ; কিন্তু আমি এ সম্পর্কে যে আলোচনা জানি সে তুলনায় সংক্ষেপ। আল্লাহর কাছে আমরা তাঁর আনুগত্যের জন্য তাওফিক কামনা করি এবং তিনি যেন জান্নাতে আমাদের ভাইদের সঙ্গে আমাদেরকে একত্রিত করেন।
হজরত উতাবি রহ. বলেন, আমি নবিজির কবরের পাশে বসা সিলাম। ইতোমধ্যে একজন গ্রাম্য লোক এসে বলল- আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ (শান্তি বর্ষিত হোক আপনার ওপর হে আল্লাহর রাসুল)। আল্লাহ তাআলা বলেছেন- "যদি তোমরা নিজের ওপর জুলুম করে থাক আর নবিজির কাছে এসে একবার তোমরা নিজেরা আল্লাহর কাছে মাফ চায় এবং রাসুলও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী ও দয়ালু হিসাবেই পাবেন।”৬৮৭ এজন্য আমি আমার পাপের ক্ষমা চাওয়ার জন্য, রবের কাছে আপনার মাধ্যমে শাফাআত লাভের আশায় এসেছি। এরপর নিম্নোক্ত কবিতা পড়েন-
يَا خَيْرَ مَنْ دُفِنَتْ بِالْقَاعِ أَعْظُمُهُ * فَطَابَ مِنْ طَيْبِهِنَّ الْقَاعُ وَالْأَكَمُ نَفْسِي الْفِدَاءُ لِقَبْرِ أَنْتَ سَاكِنُهُ فِيْهِ الْعَفَافُ وَفِيْهِ الْجُودُ وَالْكَرَمُ.
উচ্চারণ: ইয়া খাইরা মান দুফিনাত বিলকায়ি আজুমুহু। ফা তাবা মান তাইয়াবাহুন্নাল কাউ ওয়াল আকাম। নাফসিল ফিদাউ লিকাবরিন আনতা সাকিনুহু, ফিহিল আফাফু ওয়া ফিহিল জুদু ওয়াল কারাম।
অর্থ: হে ঐ মহান, যাকে মহান স্থানে দাফন করা হয়েছে। যার সুগন্ধিতে সমস্ত তলদেশ ও পাহাড়-পর্বত সুগন্ধিত। ঐ কবরের জন্য আমার প্রাণ উৎসর্গীত, যে কবরে আপনি রয়েছেন। যাতে রয়েছে ক্ষমা, বদান্যতা ও দানশীলতা। -উতাবি রহ. বলেন, এরপর সে গ্রাম্য লোকটি চলে গেল। তখন আমার চোখে ঘুম চেপে এল। আমি ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম। তিনি বলছেন, হে উতাবি, তুমি গ্রাম্য লোকটিকে সুসংবাদ দাও যে, আল্লাহ তাকে মাফ করে দিয়েছেন। ৬৮৮
টিকাঃ
৬৮৬. সহিহ বুখারি: ১১৯৬, সহিহ মুসলিম: ১৩৯০।
৬৮৭. (নিসা ৬৪)
৬৮৮. এই ঘটনাটি দিয়ে দলিল দেয়া যাবে না। এর সনদ বানোয়াট। দেখুন: আসসারিমুল মুনকি ফিররাদ্দি আলাস সুবকি পৃ, ৪৪৬-৪৪৭, ইবনে আবদুল হাদি।