📄 হজের দুআসমূহ
অধ্যায়- ১১
হজের অধ্যায়
হজের দুআসমূহ
হজের জিকির ও দুআ অনেক। আমরা এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দুআ-দরুদ ও জিকির-আজকার উল্লেখ করব। হজের দুআ দুই প্রকার যথা: (১) সফর সম্পর্কিত। (২) মূল হজের জিকির।
সফরের সাথে সংশ্লিষ্ট দুআ সামনে সফরের অধ্যায়ে উল্লেখ করব, ইনশাআল্লাহ। আর মূল হজের দুআগুলো এখানে তারতিবসহ উল্লেখ করব। বেশির ভাগের দলিল-প্রমাণসমূহ কিতাবের কলেবর দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় উল্লেখ করব না। সেগুলো উল্লেখ করলে পাঠকও বিরক্ত হয়ে যাবে। কেননা হজের অধ্যায়টি অনেক বড়। তাই আমরা এখানে সংক্ষেপনের পদ্ধতি অবলম্বন করব, ইনশাআল্লাহ।
প্রথম বিষয়:
যখন ইহরাম বাঁধার ইচ্ছা করবে, তখন ভালোভাবে গোসল, অজু ও চাদর পরিধান করবে। অজু, গোসলের দুআ পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর দুই রাকাত নামাজ পড়বে। নামাজের জিকিরও পূর্বে বলা হয়েছে। প্রথম রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা কাফিরুন পড়া মুস্তাহাব। দ্বিতীয় রাকাতে সূরা ফাতেহার পর সূরা ইখলাস পড়া মুস্তাহাব। নামাজ শেষে পূর্বে উল্লেখিত যে সকল দুআ নামাজের পরে পড়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যথাসম্ভব সেগুলো পড়বে। এরপর ইহরামের মনে মনে ইহরামের নিয়ত করবে। সঙ্গে সঙ্গে মুখে বলা মুস্তাহাব। এই বলে নিয়ত করবে-
نَوَيْتُ الْحَجَّ وَأَحْرَمْتُ بِهِ عَزَّ وَ جَلَّ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতুল হাজ্জা ওয়া আহরামতু বিহ।
অর্থ: আমি হজের নিয়ত করেছি এবং আল্লাহর নামে ইহরাম বেঁধেছি।
এরপর পুরো তালবিয়া পাঠ করবে। মনে মনে নিয়ত করা ওয়াজিব। আর সশব্দে নিয়ত করা সুন্নাত। শুধু মনে মনে নিয়ত করলেও চলবে। কিন্তু শুধু মুখে বললে, মনে মনে নিয়ত না করলে যথেষ্ঠ হবে না।
ইমাম আবুল ফাতাহ রাজি রহ. বলেন, নিয়তের পর এ দুআ পড়া ভালো-
اللَّهُمَّ لَكَ أُحْرِمُ نَفْسِي وَشَعْرِي وَبَشَرِي وَلَحْمِي وَدَيْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা উহরিমু নাফসি ওয়া শারি ওয়া বাশারি ওয়া লাহমি ওয়া দামি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সন্তুষ্টির জন্যই নিজের আত্মা, চুল, ত্বক, মাংস ও রক্ত হারাম করে নিয়েছি। কেউ কেউ বলেন, এটিও বলবে-
اللَّهُمَّ إِنِّي نَوَيْتُ الْحَجَّ فَأَعِنِّي عَلَيْهِ وَتَقَبَّلْهُ مِنِّي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি নাওয়াইতুল হাজ্জা ফা আয়িন্নি আলাইহি ওয়া তাকাব্বালহু মিনহু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি হজের নিয়ত করেছি, সুতরাং এটা সম্পন্নে আমাকে মদদ করুন এবং আমার তরফে একে কবুল করুন। -এরপর তালবিয়া বলবে-
لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنَّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ.
উচ্চারণ: লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।
অর্থ: আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির! আপনার দরবারে আমি হাজির! আপনার কোন অংশীদার নেই। আমি আপনার কাছেই হাজির। সকল প্রশংসা, নেয়ামতরাজি ও রাজত্ব আপনারই। আপনার কোন অংশীদার নেই। -এটা ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তালবিয়া।
যদি হজের সফর হয় তাহলে প্রথমবার তালবিয়া বলার সময় এভাবে বলা মুস্তাহাব - لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ بِحَجَّةٍ (লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা বিহাজ্জতিন: আমি হাজির, হজের জন্য হে আল্লাহ)। আর উমরার সফর হলে প্রথমবার এভাবে বলা মুস্তাহাব - لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ بِعُمْرَةٍ (লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা বিউমরাতিন: আমি হাজির, উমরার জন্য হে আল্লাহ)। প্রথমবার এভাবে তালবিয়া বলার পর আর হজ ও উমরার শব্দ বলতে হবে না। এটাই বিশুদ্ধ মত।
তালবিয়া হচ্ছে সুন্নাত। ছুটে গেলে হজ বা উমরা বিনষ্ট হবে না। এর জন্য কোন জরিমানাও দিতে হবে না। তবে হ্যাঁ, অনেক বড় ফজিলত ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ থেকে মাহরূম হবে। এটাই বিশুদ্ধ মত।
তবে কেউ কেউ তালবিয়া বলাকে ওয়াজিব বলেন। আবার কেউ কেউ তালবিয়াকে ফরজ বলেন ও হজের শুদ্ধতার শর্ত বলে থাকেন। তবে প্রথমটিই বিশুদ্ধ। ৬৭৭
অন্যের পক্ষ থেকে ইহরাম বাঁধলে এভাবে বলবে-
نَوَيْتُ الْحَجَّ وَأَحْرَمْتُ بِهِ لِلَّهِ تَعَالَى عَنْ فُلَانِ ، لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ عَنْ فُلَانٍ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنَّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ.
উচ্চারণ: নাওয়াইতুল হাজ্জা ওয়া আহরামতু বিহি লিল্লাহি তাআলা আন ফুলানিন, লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা আন ফুলানিন লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান্নিমাতা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক।
অর্থ: আমি হজের নিয়ত করেছি এবং অমুকের পক্ষ থেকে ইহরাম বেঁধেছি। হে আল্লাহ, আমি অমুকের পক্ষ থেকে হাজির হয়েছি। আপনার দরবারে আমি হাজির! আপনার কোন অংশীদার নেই। আমি আপনার কাছেই হাজির। সকল প্রশংসা, নেয়ামতরাজি ও রাজত্ব আপনারই। আপনার কোন অংশীদার নেই।
তালবিয়া পাঠের পর করণীয়
তালবিয়ার পর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়বে এবং নিজের ও যার জন্য ইচ্ছা দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণের দুআ করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাতের প্রার্থনা করবে। জাহান্নাম থেকে পানাহ চাইবে। বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে, চলতে-ফিরতে, পাক-নাপাক, ঋতুস্রাব ও গোসল ফরজ অবস্থায়; অবস্থা পরিবর্তনের সময়; স্থান ও কাল পরিবর্তনের সময়। যেমন রাত-দিনের আগমনের সময়, শেষ রাতে, সঙ্গীদের মিলিত হওয়ার সময়। উঠতে-বসতে, উচু ভূমিতে উঠতে ও নিচু ভূমিতে নামার সময়; সওয়ারিতে আরোহন ও অবতরণের সময়; নামাজের পরে ও নামাজের স্থানে- সবসময় তালবিয়া পড়বে। তবে বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী তাওয়াফ ও সাঈ করার সময় তালবিয়া পড়বে না। কেননা তাওয়াফ ও সাঈ এর নির্দিষ্ট দুআ রয়েছে সেগুলো পড়বে।
তালবিয়া কষ্ট না হয় এরূপ উচু আওয়াজে পড়বে। মহিলারা আস্তে পড়বে। কারণ, তাদের আওয়াজ ফিতনার কারণ হতে পারে। প্রত্যেকবার তিনবার বা তার চেয়ে বেশি পড়বে। তালবিয়া পড়ার মাঝখানে অন্য কোন কথা বলবে না। কেউ সালাম দিলে উত্তর দেবে। তবে এমতাবস্থায় সালাম দেয়া মাকরুহ। কোন বিষয় দেখে বিস্মিত হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে এই দুআটি বলবে-
لَبَّيْكَ إِنَّ الْعَيْشَ عَيْشُ الْآخِرَةِ.
উচ্চারণ: লাব্বাইকা ইন্নাল আইশা আইশাল আখিরাহ।
অর্থ: আমি হাজির! নিশ্চয় পরকালের সুখই প্রকৃত সুখ।
দশম তারিখ ইয়াওমুন নাহারে জামরায়ে আকবায় পাথর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া বলা মুস্তাহাব। পাথর নিক্ষেপের আগে তওয়াফে ইফাজা করলে এই তওয়াফ পর্যন্ত তালবিয়া বলা মুস্তাহাব। উক্ত দুই আমলে যেটিই শুরু করবে, তার আগে তালবিয়া পড়া বন্ধ করে দেবে। এরপর থেকে তাকবির বলা শুরু করবে। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, উমরা পালনকারী পাথর চুম্বন করার আগ পর্যন্ত তালবিয়া বলবে।
টিকাঃ
৬৭৭. হানাফিদের মতে, তালবিয়া ওয়াজিব। তালবিয়া ছাড়া ইহরাম শুদ্ধ হবে না। (হেদায়া: ১/২৩৯)
📄 মক্কায় পৌঁছে যে দুআ করবে
ইহরাম বেঁধে মক্কায় পৌঁছার পর এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ هَذَا حَرَمُكَ وأَمْنُكَ فَحَرِّمْنِي عَلَى النَّارِ، وَأَمِّنِّي مِنْ عَذَابِكَ يَوْمَ تَبْعَثُ عِبَادَكَ، وَاجْعَلْنِي مِنْ أَوْلِيَائِكَ وَأَهْلِ طَاعَتِكَ، وَيَدْعُوْ بِمَا أَحَبَّ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাজা হারামুকা ওয়া আমনুকা, ফা হাররিমনি আলান্নার। ওয়া আম্মিন্নি মিন আজাবিকা ইয়াওমা তাবআসু ইবাদাক, ওয়ায আলনি মিন আউলিয়ায়িকা ওয়া আহলি তাআতিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, এটা আপনার হারাম ও শান্তিস্থল। সুতরাং আমাকে জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিন এবং আপনার শান্তি থেকে নিরাপদ রাখুন, যেদিন আপনার বান্দাদের পুনরুত্থিত করবেন। আমাকে আপনার প্রিয় ও অনুগত ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করুন। -এছাড়াও নিজের পছন্দ মতো অন্য দুআ করবে।
কাবায় প্রথম দৃষ্টি পড়ার পর যে দুআ করবে
মক্কায় প্রবেশ করে মসজিদে হারামের কাছে যাওয়ার পর কাবায় দৃষ্টি পড়ার পর দুহাত তুলে দুআ করবে। কাবা দেখার পর মুসলমানের দুআ কবুল হওয়ার কথা হাদিসে এসেছে। এ দুআটি পড়বে-
اللَّهُمَّ زِدْ هَذَا الْبَيْتَ تَشْرِيْفاً وَتَعْظِيمًا وَتَكْرِيمًا وَمَهَابَةً، وَزِدْ مِنْ شَرَّفَهُ وَكَرَّمَهُ مِمَّنْ حَجَّهُ أَوِ اعْتَمَرَهُ تَشْرِيْفاً وَتَكْرِيماً وَتَعْظِيمًا وَبِراً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা জিদ হাজাল বাইতা তাশরিফান ওয়া তাজিমান ওয়া তাকরিমান ওয়া মাহাবান, ওয়া জিদ মান শাররাফাহু ওয়া কাররামাহু মিম্মান হাজ্জাহু আও ইতামারাহু তাশরিফান ওয়া তাকরিমান ওয়া তাজিমান ওয়া বিররা।
অর্থ: হে আল্লাহ, এই ঘরের সম্মান, বড়ত্ব, মর্যাদা ও মহিমা বৃদ্ধি করে দিন। যেসব হাজি বা উমরা আদায়কারী এই ঘরকে সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন করেছে, তাদেরও সম্মান, বড়ত্ব, মর্যাদা, মহিমা ও সততা বৃদ্ধি করে দিন। -এ দুআও পড়বে-
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ، حَيْنَا رَبَّنَا بِالسَّلَامِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু, হাইয়িনা রাব্বানা বিসসালাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি দোষ-ত্রুটি থেকে চির মুক্ত, নিরাপত্তার মালিক। আমাদেরকে নিরাপত্তার সাথে জীবিত রাখুন। -এরপর দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের যে দুআ ইচ্ছা পড়বে। মসজিদে হারামে প্রবেশের সময় পূর্বে মসজিদে প্রবেশের যেসব দুআর কথা বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো পড়বে।
📄 তাওয়াফ ও সায়ির দুআ
তাওয়াফের দুআ
প্রথমবার হাজরে আসওয়াদকে স্পর্শ করার সময় এবং তাওয়াফের শুরুতে এ দুআ পড়বে-
بِسْمِ اللهِ وَاللهُ أَكْبَرُ، اللَّهُمَّ إِيْمَاناً بِكَ وَتَصْدِيقاً بِكِتَابِكَ، وَوَفَاءً بِعَهْدِكَ وَاتَّبَاعاً لِسُنَّةِ نَبِيِّكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা ঈমানান বিকা ওয়া তাসদিকান বিকিতাবিকা, ওয়া ওয়াফাআন বিআহদিকা ওয়া ইত্তিবাআন লি সুন্নাতি নাবিয়্যিকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করলাম, তিনি মহান। হে আল্লাহ, আপনার প্রতি পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে, আপনার কিতাব সত্যায়নের সাথে, আপনার অঙ্গীকার পূরণের সাথে এবং আপনার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের সাথে।
প্রতিবার হাজরে আসওয়াদের বরাবর হলে উল্লিখিত দুআ পড়বে। প্রথম তিন চক্করের সময় নিম্নোক্ত দুআ পড়বে।
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ حَجًّا مَبْرُوْرًا وَذَنْباً مَغْفُوْراً، وَسَعْياً مَشْكُوراً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলহু হাজ্জান মাবরুরা, ওয়া জাম্বান মাগফুরান ওয়া সা'ইয়ান মাশকুরা।
অর্থ: হে আল্লাহ, একে মাকবুল হজ, মার্জিত পাপ এবং প্রশংসনীয় সাধনা হিসাবে কবুল করুন। -আর বাকি চক্করগুলোতে এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ وَارْحَمْ، وَاعْفُ عَمَّا تَعْلَمُ وَأَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَ فِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির ওয়ারহাম ওয়া'ফু আম্মা তা'লামু ওয়া আনতাল আআজ্জুল আকরাম। আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, মাফ করুন, দয়া করুন ও মার্জনা করুন যা সম্পর্কে আপনি অবগত তা থেকে। আপনিই সর্বোচ্চ সম্মানিত মর্যাদাবান। হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, পুরো তাওয়াফে নিম্নোক্ত দুআ পড়া আমার কাছে অধিক পছন্দনীয়-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
এছাড়াও তওয়াফরত অবস্থায় দীন-দুনিয়ার কল্যাণের জন্য দুআ করবে। একজন দুআ করে বাকিরা আমিন বললেও ভালো হয়।
হজরত হাসান বাসরি রহ. বলেন, হজ পালনের সময় পনেরো স্থানে দুআ কবুল হয়- তাওয়াফের মাঝে, মুলতাজিমের কাছে, মিজাবের নিচে, বাইতুল্লায়, জমজমের নিকটে, সাফা-মারওয়াতে, সাঈর স্থানে, মাকামে ইবরাহিমের পিছনে, আরাফায়, মুজদালিফায়, মিনায় এবং জামারায় পাথর নিক্ষেপের সময়। বড়ই বঞ্চিত সে ব্যক্তি যে এসব স্থানে গুরুত্বের সাথে দুআ করে না।
ইমাম শাফেয়ি ও সংখ্যাগরিষ্ঠ শাফেয়ি আলেমের মতে তাওয়াফরত অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা উত্তম। কেননা এটি জিকিরের স্থান। উত্তম জিকির হল কুরআন তিলাওয়াত। আবু আবদুল্লাহ হালিমি রহ. বলেন, তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব নয়। প্রথম মতটিই বিশুদ্ধ। শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, নির্দিষ্ট বর্ণিত দুআ ব্যতীত অন্য দুআ করার চেয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা উত্তম। আর দুআ বর্ণিত থাকলে সেগুলো পড়া কুরআন তিলাওয়াত থেকে উত্তম। কেউ কেউ বলেন, তখনও কুরআন তিলাওয়াত উত্তম।
আবু মুহাম্মাদ জুয়াইনি রহ. বলেন, হজের দিনগুলোতে এক খতম কুরআন শরিফ পড়া উত্তম। এর প্রতিদান অনেক বেশি হবে।
তাওয়াফ ও তাওয়াফের দুই রাকাত নামাজ শেষ করে যে দুআ ইচ্ছা করবে। এক্ষেত্রে এই দুআটি বর্ণিত আছে-
اللَّهُمَّ أَنَا عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكِ أَتَيْتُكَ بِذُنُوْبِ كَثِيرَةٍ وأَعْمَالٍ سَيِّئَةٍ وَهَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ بِكَ مِنَ النَّارِ فَاغْفِرْ لِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُوْرُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনা আবদুকা ওয়াবনু আবদিকা আতাইতুকা বিজুনুবিন কাসিরাতিন ওয়া আমালিন সাইয়িআহ। ওয়া হাজা মাকামুল আয়িজি বিকা মিনান্নারি ফাগফিরলি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার গোলাম, আপনার গোলামের গোলাম। অনেক গুনাহ ও অপরাধ নিয়ে আপনার দরবারে হাজির হয়েছি। এটা আপনার কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয়প্রার্থীর স্থান, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। নিশ্চয় আপনি বড় ক্ষমাশীল দয়াপরবש।
মুলতাজিমের দুআ
মুলতাজিম হল, কাবা ও হজরে আসওয়াদের মাঝামাঝি। পূর্বে বলা হয়েছে যে, সেখানে দুআ করা মুস্তাহাব। সেখানে নিম্নোক্ত দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ حَمْداً يُوَافِيَ نِعَمَكَ، وَيُكَافِئَ مَزِيدَكَ، أَحْمَدُكَ بِجَمِيعِ مَحَامِدِكَ مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ عَلَى جَمِيعِ نِعَمِكَ مَا عَلِمْتُ مِنْهَا وَمَا لَمْ أَعْلَمْ، وَعَلَى كُلِّ حَالٍ، اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلَّمْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، اللَّهُمَّ أَعِذْنِي مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، وَأَعِذْنِي مِنْ كُلِّ سُوْءٍ، وَقَنَعْنِي بِمَا رَزَقْتَنِي وَبَارِكْ لِي فِيْهِ، اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنْ أَكْرَمِ وَفْدِكَ عَلَيْكَ، وَالْزِمْنِي سَبِيلَ الْاِسْتِقَامَةِ حَتَّى أَلْقَاكَ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু হামদান ইওয়াফি নিআমাকা ওয়া ইউকাফিউ মাজিদাক। আহমাদুকা বি-জামিয়ি মাহামিদিকা মা আলিমতু মিনহা ওয়া মা লাম আলাম, আলা জামিয়ি নিআমিকা মা আলিমতু মিনহা ওয়া মা লাম আলাম, ওয়া আলা কুল্লি হাল। আল্লাহুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আলা মুহাম্মাদিন ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ। আল্লাহুম্মা আয়িজনি মিনাশ শাইতানির রাজিম, ওয়া আয়িজনি মিন কুল্লি সু। ওয়া কান্নিনি বিমা রাজাকতানি ওয়া বারিক লি ফিহ। আল্লাহুম্মায আলনি মিন আকরামি ওয়াফদিকা আলাইকা, ওয়া আলজিমনি সাবিলাল ইস্তিকামাতি হাত্তা আলকাকা ইয়া রাব্বাল আলামিন।
অর্থ: আমি আপনার এমন প্রশংসা করছি, যা আপনার নেয়ামতের পরিপূরক ও অতিরিক্ত নেয়ামতের জন্য যথেষ্ট। আপনার সমস্ত প্রশংসার সাথে, যা আমি জানি অথবা না জানি আপনার সমুদয় নেয়ামতের ওপর যা জানি অথবা না জানি, প্রশংসা করি। সর্বাবস্থায় আপনার প্রশংসা করি। হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ ও তার পরিবারের প্রতি রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ, আমাকে অভিশপ্ত শয়তান থেকে নিরাপদ রাখুন। সমস্ত অনিষ্ট থেকে সুরক্ষিত রাখুন। আপনার দেয়া রিজিকে তুষ্ট থাকুন, এতে বরকত দান করুন। হে আল্লাহ, আমাকে আপনার কাছে আসা শ্রেষ্ট প্রতিনিধি মনোনীত করুন এবং আমাকে অবিচলতার পথপ্রদর্শন করুন হে বিশ্ব পালনকর্তা -এর পর যা ইচ্ছা দুআ করবে।
হাতিমে কাবার মিজাবে রহমতের নিচে পড়ার দুআ
হিজর (হাতিমে কাবা) বাইতুল্লাহর অংশ। পূর্বে বলা হয়েছে যে, এখানে দুআ করলে আল্লাহ তাআলা তা কবুল করেন। এখানে নিম্নোক্ত দুআ পড়ার কথা বর্ণিত আছে-
يَا رَبُّ أَتَيْتُكَ مِنْ شُقَّةٍ بَعِيدَةٍ مُؤَمِّلاً مَعْرُوْفَكَ فَأَنِلْنِي مَعْرُوْفًا مِنْ مَعْرُوْفِكَ تُغْنِينِي بِهِ عَنْ مَعْرُوْفِ مَنْ سِوَاكَ يَا مَعْرُوْفاً بِالْمَعْرُوْفِ.
উচ্চারণ: ইয়া রাব্বি, আতাইতুকা মিন শুক্কাতিন বায়িদাতিন মুআম্মালান মারুফাকা ফা আনিলনি মারুফা মিন মারুফিকা তুগনিনি বিহি আন মারুফি মান সিওয়াকা ইয়া মারুফান বিল মারুফ।
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা, আমি বহুদূর থেকে আপনার দরবারে হাজির হয়েছি। আপনার অনুগ্রহের প্রত্যাশী হয়ে, সুতরাং আমাকে আপনার অনুগ্রহ থেকে কিছু দান করুন, যা আমাকে অন্যদের অনুগ্রহ থেকে অমুখাপেক্ষী করবে। অনুগ্রহে প্রসিদ্ধ হে সত্তা।
বাইতুল্লায় যে দুআ পড়বে
পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, বাইতুল্লায় দুআ কবুল হয়।
(৪৮৮) হজরত উসামা বিন জায়েদ রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا دَخَلَ الْبَيْتَ، أَتَى مَا اسْتَقْبَلَ مِنْ دُبُرٍ الْكَعْبَةِ، فَوَضَعَ وَجْهَهُ وَخَدَّهُ عَلَيْهِ، وَحَمِدَ اللهَ، وَأَثْنَى عَلَيْهِ، وَسَأَلَهُ وَاسْتَغْفَرَهُ، ثُمَّ انْصَرَفَ إِلَى كُلِّ رُكْنٍ مِنْ أَرْكَانِ الْكَعْبَةِ، فَاسْتَقْبَلَهُ بِالتَّكْبِيرِ وَالتَّهْلِيلِ، وَالتَّسْبِيحِ وَالثَّنَاءِ عَلَى اللهِ ، وَالْمَسْأَلَةِ وَالْاسْتِغْفَارِ، ثُمَّ خَرَجَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাবার পূর্বদিক দিয়ে প্রবেশ করতেন। তার চেহারা ও গণ্ডদেশ কা'বার সাথে লাগাতেন। আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তন করতেন। আল্লাহর কাছে অনেক দুআ করতেন। এরপর কাবার প্রত্যেক রুকনের কাছে গিয়ে চুমু দিতেন। তাকবির, তাহলিল ও তাসবিহ পড়তেন। আল্লাহর প্রশংসা করতেন। ইস্তিগফার ও দুআ করতেন। এরপর কাবা শরিফ থেকে বের হতেন। ৬৭৮
সাঈ করার সময় জিকির ও দুআ
পূর্বে বলা হয়েছে যে, এ সময় দুআ কবুল হয়। সাফা পাহাড়ে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে কাবাকে সামনে রেখে তাকবির বলা সুন্নাত। তখন এ দুআ পড়বে-
اللهু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। আল্লাহু আকবার আলা মা হাদানা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি আলা মা আওলানা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু য়্যুহয়ী ওয়াইয়্যুমীতু, বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আংজাযা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহযাবা ওয়াহদাহু, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু, মুখলিসীনা লাহুদ্দীন, ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ক্বুলতা উদউনী আস তাজীব লাকুম, ওয়া ইন্নাকা লা তুখলিফুল মীআদ। ওয়া ইন্নি আসআলুকা কামা হাদাইতানী লিলইসলামি আন লা তানযিআহু মিন্নি হাত্তা তাতাওয়াফফানী ওয়া আনা মুসলিম।
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ। আল্লাহু আকবার আলা মা হাদানা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি আলা মা আওলানা। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু যুহয়ি ওয়া যুমিতু, বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। লা ইলাহা ইল্লাহু, আনযাজা ওয়াদাহু, ওয়া নাসারা আবদাহু, ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহদাহু, লা ইলাহা ইল্লাহু, ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু, মুখলিসিনা লাহুদ্দিন, ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা কুলতা উদউনি আসতাযিব লাকুম, ওয়া ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিআদ। ওয়া ইন্নি আসআলুকা কামা হাদাইতানি লিইসলামি আন লা তানজিআহু মিন্নি হাত্তা তাতাওয়াফানি ওয়া আনা মুসলিম।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, আল্লাহ তাআলা মহান, আল্লাহ তাআলা মহান। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। আল্লাহ তাআলা মহান এজন্য যে, তিনি আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্যই এজন্য যে, তিনি আমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি জীবন-মরণ দান করেন। সকল কল্যাণ তারই হাতে। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি তার অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছেন, তার বিশেষ বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সকল (কুফরি) শক্তিকে পরাস্ত করেছেন। আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। আমরা তারই উপাসনা করি। আমরা খাঁটি অন্তরে তা স্বীকার করি, কাফেররা যতই একে খারাপ মনে করুক। হে আল্লাহ, আপনিই তো বলেছেন: “আমাকে ডাক, আমি সাড়া দেব”, আর আপনি তো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। আপনার কাছে মিনতি এই যে, যেভাবে আমাকে ইসলামের দিকে পথপ্রদর্শন করেছন, একে আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েন না। যাতে ইসলামের ওপর মরতে পারি।
এই দুআর পর দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণের দুআ করবে। উক্ত দুআটি ও অন্যান্য দুআ তিনবার করে বলবে। এসময় তালবিয়া বলবে না। মারওয়ায় গিয়েও উক্ত দুআগুলো পড়বে, যা সাফায় পড়েছিল।
হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি সাফায় দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اعْصِمْنَا بِدِيْنِكَ وَطَوَاعِيْتُكَ وَطَوَاعِيَةُ رَسُوْلِكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَجَنَّبْنَا حُدُوْدَكَ، اللَّهُمَّ اجْعَلْنَا يُحِبُّكَ وَنُحِبُّ مَلَائِكَتَكَ وَأَنْبِيَاءَكَ وَرُسُلَكَ، وَيُحِبُّ عِبَادَكَ الصَّالِحِينَ، اللهُمَّ حَبِّبْنَا إِلَيْكَ وَإِلَى مَلَائِكَتِكَ وَإِلَى أَنْبِيَائِكَ وَرُسُلِكَ، وَإِلَى عِبَادِكَ الصَّالِحِيْنَ، اَللَّهُمَّ يَسِّرْنَا لِلْيُسْرَى، وَجَنِّبْنَا الْعُسْرَى، وَاغْفِرْ لَنَا فِي الْآخِرَةِ وَالْأُولَى، وَاجْعَلْنَا مِنْ أَئِمَّةِ الْمُتَّقِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসিমনা বিদীনিকা ওয়া তাওয়ায়িতিকা ওয়া তাওয়ায়িতি রাসুলিকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা, ওয়া যান্নিবনা হুদুদাক। আল্লাহুম্মায আলনা নুহিব্বুকা ওয়া নুহিব্বু রাসুলাকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা, ওয়া মালায়িকাতাকা ওয়া আম্বিয়াআকা, ওয়া রুসুলাকা ওয়া নুহিব্বু ইবাদাকাস সালিহিন। আল্লাহুম্মা হাব্বিবনা ইলাইকা ওয়া ইলা মালায়িকাতিকা ওয়া ইলা আম্বিয়ায়িকা ওয়া রুসুলিকা ওয়া ইলা ইবাদিকাস সালিহিন। আল্লাহুম্মা ইয়াসসিরনা লিল যুসরা, ওয়া যান্নিবনাল উসরা, ওয়াগফির লানা ফিল আখিরাতি ওয়াল উলা, ওয়াযআলনা মিন আয়িম্মাতিল মুত্তাকিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে আপনার দীন, আনুগত্য ও রাসুলের আনুগত্যে বেঁধে রাখুন। আপনার সীমালঙ্ঘন থেকে দূরে রাখুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে এমন বানাও যাতে আপনাকে, ফেরেশতাদেরকে, নবি- রাসুলদেরক এবং আপনার নেক বান্দাদেরকে মহব্বত করতে পারি। হে আল্লাহ, আমাদেরকে আপনার কাছে, ফেরেশতাদের কাছে, নবি-রাসুলদের কাছে এবং নেক বান্দাদের কাছে প্রেমাষ্পদ করুন। হে আল্লাহ, আমাদের জন্য স্বস্তির পথ সুগম করে দিন এবং কষ্ট থেকে দূরে রাখুন। ইহকাল-পরকালে আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। আমাদেরকে মুত্তাকিদের আদর্শ বানান। -তিনি সাফা-মারওয়ায় সাঈর সময় এ দুআ পড়তেন-
رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَتَجَاوَزْ عَمَّا تَعْلَمُ إِنَّكَ أَنْتَ الْأَعَزُّ الْأَكْرَمُ، اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَ فِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বিগ ফির ওয়ারহা, ওয়া তাযাওয়াজ আম্মা তালামু ইন্নাকা আনতাল আআজ্জুল আকরাম। আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আমার রব, মাফ করুন, দয়া করুন ও মার্জনা করুন যা সম্পর্কে আপনি অবগত তা থেকে। আপনিই সর্বোচ্চ সম্মানিত মর্যাদাবান। হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
সাঈসহ অন্যান্য স্থানে নিচের নির্বাচিত দুআগুলো পড়া উচিত-
اللَّهُمَّ يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ.
উচ্চারণ: ইয়া মুকাল্লিবাল কুলুবি সাব্বিত কুলুবানা আলা দীনিক।
অর্থ: হে অন্তরের মালিক, আপনি আমার কলবকে আপনার দীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مُوْجِبَاتِ رَحْمَتِكَ، وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ وَالسَّلَامَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ، وَالفَوْزُ بِالْجَنَّةِ، وَالنَّجَاةَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মুযিবাতি রাহমাতিকা, ওয়া আজায়িমি মাগফিরাতিকা, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসমিন। ওয়াল ফাওজা বিলজান্নাতি ওয়ান্নাযাতা মিনান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার রহমতের হেতুসমূহ, আপনার ক্ষমার সঙ্কল্প, সকল পুণ্যের সুযোগ, সবধরনের পাপ থেকে মুক্তি, জান্নাতের সৌভাগ্য এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করি।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتَّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াতুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও অমুক্ষাপেক্ষিতা চাচ্ছি।
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আয়িন্নি আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিক।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং সুষ্ঠুরূপে আপনার ইবাদত করতে আমাকে সাহায্য করুন।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنَ الْخَيْرِ كُلِّهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمُ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ مَا عَلِمْتُ مِنْهُ وَمَا لَمْ أَعْلَمْ، وَأَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ وَمَا قَرَّبَ إِلَيْهَا مِنْ قَوْلٍ أَوْ عَمَلٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিনাল খাইরি কুল্লিহি মা আলিমতু মিনহু ওয়ামা লাম আ'লাম, ওয়া আউজুবিকা মিনাশ শাররি কুল্লিহি মা আলিমতু মিনহু ওয়ামা লাম আ'লাম। ওয়া আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া মা কাররাবা ইলাইহা মিন কাওলিন আও আমালিন, ওয়া আউজুবিকা মিনান্নারি ওয়ামা কাররাবা ইলাইহা মিন কাওলিন আও আমালিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে সকল মঙ্গল কামনা করি, যা আমি জানি অথবা জানি না। সকল জানা-অজানা অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় কামনা করি। আপনার কাছে জান্নাত কামনা করি এবং যেসব কথা-কর্ম জান্নাতের নিকটবর্তী করে তাও। আর জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা করি এবং যেসব কথা-আমল জাহান্নামের নিকটবর্তী করে তা থেকেও। ৬৭৯
কুরআন তিলাওয়াত করাও উত্তম। যদি সম্ভব হয় তাহলে উল্লিখিত দুআ, জিকির ও কুরআন তিলাওয়াত সবগুলোই করবে। আর যদি সব না করতে পারে, তাহলে গুরুত্বপূর্ণগুলো করবে।
টিকাঃ
৬৭৮. সুনানে নাসাঈ ৫/১৯।
৬৭৯. উপরিউক্ত দুআগুলোর অনুবাদ-
📄 আরাফা, মুজদালিফা ও মিনার দুআ
মক্কা থেকে আরাফায় যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে
মক্কা থেকে বের হওয়ার সময় মিনার দিকে ফিরে নিম্নোক্ত দুআ পড়া মুস্তাহাব-
اللَّهُمَّ إِيَّاكَ أَرْجُو، وَلَكَ أَدْعُوْ، فَبَلِّغْنِي صَالِحَ أَمَلِي، وَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي، وَامْنُنْ عَلَيَّ بِمَا مَنَنْتَ بِهِ عَلَى أَهْلِ طَاعَتِكَ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা আরজু ওয়া লাকা আদউ, ফাবাল্লিগনি সালিহা আমালি, ওয়াগফিরলি জুনুবি, ওয়ামনুন আলাইয়্যা বিমা মানানতা বিহি আলা আহলি তাআতিক, ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছেই প্রত্যাশা করি, আপনকেই ডাকি। আমার নেক প্রত্যাশা পূরণ করুন এবং আমার পাপসমূহ ক্ষমা করুন। আমার ওপর অনুগ্রহ করুন, যেভাবে আপনার অনুগতদের ওপর করে থাকেন। নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল। -মিনা থেকে আরাফায় যাওয়ার সময় এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ إِلَيْكَ تَوَجَّهْتُ، وَوَجْهَكَ الْكَرِيمَ أَرَدْتُ، فَاجْعَلْ ذَنْبِي مَغْفُوْراً، وَحَجِيْ مَبْرُوراً، وَارْحَمْنِي وَلَا تُخَيِّبُنِي إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইলাইকা তাওয়াজ্জাহতু, ওয়া ওয়াজহাকাল কারিমা আরাদতু, ফাযআল জাম্বি মাগফুরান, ওয়া হাজ্জি মাবরুরান, ওয়ার হামনি ওয়ালা তুখায়্যিবনি, ইন্নাকা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার অভিমুখী হলাম, আপনার সন্তুষ্টিই আমার ইচ্ছা। অতএব, আমার গুনাহ মাফ করে দিন, আমার হজ কবুল করুন। আমার ওপর দয়া করুন, আমাকে নিরাশ করবেন না। নিশ্চয় আপনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাশীল।
তালবিয়া পড়বে, কুরআন তিলাওয়াত করবে এবং সকল জিকির-আজকার ও দুআ-দরুদ বেশি বেশি পড়বে। নিচের দুআটিও পড়বে-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার। অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
আরাফায় জিকির ও দুআ
পূর্বে ঈদের যিকিরে গেছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আরাফার দুআ শ্রেষ্ঠ দুআ। আমি ও পূর্ববর্তী নবিগণ যা বলেছেন এর মধ্যে উত্তম হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। ৬৮০
এসব দুআ-জিকির বেশি বেশি পড়া চাই। দুআর জন্য বছরের শ্রেষ্ঠ দিন হল আরাফার দিন। আরাফার দিনটি হজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এ দিনটি হজের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। তাই এ দিনে দুআ, জিকির-আজকার ও কুরআন তিলাওয়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করা চাই। বিভিন্ন দুআ করবে। বিভিন্ন ধরনের জিকির করবে। নিজের জন্য দুআ করবে। সকল স্থানে জিকির করবে। একাকী, জামাতের সঙ্গে দুআ করবে। নিজের জন্য, পিতা-মাতার জন্য, আত্মীয়-স্বজনদের জন্য, শিক্ষক-ছাত্র, বন্ধু-বান্ধব, সকল শুভাকাঙ্খী ও সকল মুসলমানের জন্য। এসবের মাঝে কোন কমতি করবে না। কারণ, এ দিনটিতে কোন কিছু ছুটে গেলে তা আর পূরা করা যাবে না। পক্ষান্তরে অন্য দিনের ক্ষতি পূরা করা যাবে।
দুআর ক্ষেত্রে অন্তমিলের লৌকিকতা করবে না। কারণ, এতে মন সেদিকে মশগুল হয়ে যাবে। বিনয়-নম্রতা ও কাকুতি-মিনতি থাকবে না। তবে মুখস্থ অন্তমিল দুআ পড়তে কোন সমস্যা নেই, যদি তাতে মন সেগুলোর বিন্যাস ও ইবারতে মশগুল না হয়।
সুন্নাত হল, নীচু স্বরে দুআ করা। বেশি বেশি ইস্তিগফার করা। মন থেকে সকল গুনাহ থেকে তাওবা করা। খুব জোরালোভাবে দুআ করা। বারবার দুআ করা। দুআ কবুল হচ্ছে না এরূপ মনে না করা। দুআর শুরু ও শেষে আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়া। কাবামুখী হয়ে পবিত্র অবস্থায় দুআ করা চাই।
(৪৮৯) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, আরাফার দিনে আরাফায় অবস্থানকালে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ বেশি বেশি পড়তেন-
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كَالَّذِي نَقُوْلُ وَخَيْرًا مِمَّا نَقُوْلُ، اَللَّهُمَّ لَكَ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي وَإِلَيْكَ مَا بِي وَلَكَ رَبِّ تُرَاثِي ، اللهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَوَسْوَسَةِ الصَّدْرِ وَشَتَاتِ الْأَمْرِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا تَجِيْءُ بِهِ الرِّيْحُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু কাল্লাজি নাকুলু, ওয়া খাইরান ম্মিা নাকুল। আল্লাহুম্মা লাকা সালাতি ওয়া নুসুকি ওয়া মাহইয়ায়া ওয়া মামাতি, ওয়া ইলাইকা মাআবি ওয়ালাকা রাব্বি তুরাসি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি ওয়া ওয়াসওয়াসাতিস সাদরি ওয়া শাতাতিল আমর। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি মা তাযিউ বিহির রিহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সেরকম প্রশংসা করি যেরকম আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন এবং আমরা যেরকম প্রশংসা করছি, এরচে উত্তম প্রশংসা করি। হে আল্লাহ, আমার নামাজ, আমার কুরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ আপনার জন্য উৎসর্গীত। আপনার দিকেই আমার প্রত্যাবর্তন এবং আপনার জন্য উৎসর্গীত আমার সম্পদ হে রব। হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আজাব থেকে, কুমন্ত্রণা থেকে এবং অনিয়ম থেকে। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থী বাতাসের অনিষ্ট থেকে। ৬৮১
এ সময় বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। দরুদ শরিফ পড়বে। জিকির ও দুআর সঙ্গে কাঁদবে। এখানেই চোখের পানি সার্থক হয়। গুনাহ মাফ হয়। আশা পূরণ হয়। এটি এক মহান স্থান। মহা মিলনমেলা। এখানে আল্লাহর নেককার বান্দাদের জমায়েত হয়। এটি দুনিয়ার সবচেয়ে বড় জমায়েত। নির্বাচিত কিছু দুআ-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ আমাদের রব, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা, ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি গুনাহ করে নিজের অনেক অবিচার করে ফেলেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপন অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয় আপনিই মহা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً تُصْلِحُ بِهَا شَأْنِي فِي الدَّارَيْنِ، وَارْحَمْنِي أَسْعَدُ بِهَا فِي الدَّارَيْنِ، وَتُبْ عَلَيَّ تَوْبَةً نَصُوْحاً لَّا أَنْكُثَهَا أَبَداً، وَأَلْزِمْنِي سَبِيلَ الْإِسْتِقَامَةِ لَا أَزِيعُ عَنْهَا أَبَداً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি মাগফিরাতান তুসলিহু বিহা শানি ফিদ্দারাইনি, ওয়ারহামনি আসআদু বিহা ফিদ্দারাইনি, ওয়াতুব আলাইয়্যা তাওবাতান নাসুহান লা আনকুসুহা আবাদা, ওয়া আলজিমনি সাবিলাল ইস্তিকামাতি লা আজিগু আনহা আবাদা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে এমনভাবে ক্ষমা করুন, যদ্দারা আমার অবস্থা উভয় জগতে সংশোধন হয়ে যায়। আমার প্রতি দয়া করুন, যাতে উভয় জগতে ভাগ্যবান হতে পারি। আমাকে সম্পূর্ণ ক্ষমা করে দিন, আমি কখনো আর পাপ করব না। আমাকে সোজা পথে আগলে রাখুন, কখনো আমি এ থেকে ভ্রষ্ট হব না।
اَللَّهُمَّ انْقُلْنِيْ مِنْ ذُلِّ الْمَعْصِيَةِ إِلَى عِزِّ الطَّاعَةِ، وَأَغْنِنِيْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَبِطَاعَتِكَ عَنْ مَعْصِيَتِكَ، وَبِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ، وَنَوِّرْ قَلْبِيْ وَقَبْرِيْ، وَأَعِذْنِيْ مِنَ الشَّرِّ كُلِّهِ، وَاجْمَعْ لِيَ الْخَيْرَ كُلَّهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মানকুলনি মিন জুল্লিল মাসিয়াতি ইলা ইজ্জিত্তাআতি, ওয়া আগনিনি বিহালালিকা আন হারামিকা, ওয়াবি তাআতিকা আন মাসিয়াতিকা, ওয়াবি ফাদলিকা আম্মান সিওয়াক। ওয়া নাওভির কালবি ওয়া ক্বাবরি ওয়া আয়িজনি মিনাশ শাররি কুল্লিহ। ওয়াযমা লিয়াল খাইরা কুল্লাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে পাপের লা'নত থেকে আনুগত্যের মর্যাদার দিকে স্থানান্তর করুন। আপনার হালালের মাধ্যমে হারাম থেকে অমুখাপেক্ষী রাখুন। আপনার আনুগত্যের মাধ্যমে অবাধ্যতা থেকে, আপনার অনুগ্রহে অন্যদের থেকে। আমার কলব ও কবর আলোকিত করুন। আমাকে সকল অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখুন এবং সকল কল্যাণ আমাকে দান করুন।
মুজদালিফা থেকে আরাফায় যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে
পূর্বে বলা হয়েছে যে, সব জায়গায় বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। এ জায়গাটি তালবিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান। কুরআন তিলাওয়াত, দুআ বেশি বেশি পড়বে। নিম্নোক্ত দুআ বেশি বেশি পড়বে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। আল্লাহ মহান। -এটা বারংবার পড়বে। এ দুআটিও পড়বে-
إِلَيْكَ اللَّهُمَّ أَرْغَبُ، وَإِيَّاكَ أَرْجُوْ، فَتَقَبَّلْ نُسُكِيْ، وَوَفِّقْنِيْ، وَارْزُقْنِيْ فِيْهِ مِنَ الْخَيْرِ أَكْثَرَ مَا أَطْلُبُ، وَلَا تُخَيِّبْنِيْ إِنَّكَ أَنْتَ اللهُ الْجَوَادُ الْكَرِيمُ.
উচ্চারণ: ইলাইকা আল্লাহুম্মা আরগাবু, ওয়া ইয়্যাকা আরজু, ফাতাকাব্বাল নুসুকি ওয়া ওয়াফফিকনি ফিহি মিনাল খাইরি আকসারা মা আতলুবু, ওয়ালা তুখাইয়িবনি, ইন্নাকা আনতাল যাওয়্যাদুল কারিম।
অর্থ: আমি আপনার কাছেই প্রত্যাশা করি, আপনার কাছেই কামনা করি। সুতরাং আমার কুরবানি কবুল করুন, আমাকে তাওফিক দিন। এতে আমাকে আশাতীত প্রতিদান দান করুন, আমাকে নিরাশ করবেন না। নিশ্চয় আপনি বড় দানশীল ও মহানুভব।
এটা হল ঈদের রজনী। ঈদের রজনীতে জাগ্রত থাকা, নামাজ পড়া, জিকির করা প্রসঙ্গে পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। এই রাতের মর্যাদার সাথে স্থানের মর্যাদাও মিলিত হয়েছে। সাথে সাথে সে হারামের মাঝে আছে এবং ইহরাম অবস্থায় আছে। হাজিদের মজমায় আছে। মহান ইবাদত পালনের পর এখানে আছে। আরাফায় সেসব মহান দুআ করা পর। তাই এ সময়ের গুরুত্ব অনেক।
মাশআরে হারাম ও মুজদালিফায় যে দুআ করবে
এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِّنْ عَرَفَتٍ فَاذْكُرُوا اللهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ " وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَيْكُمْ ، وَإِنْ كُنْتُمْ مِّنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالَّيْنَ.
অর্থ: অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত থেকে (তওয়াফে জিয়ারতের জন্য) ফিরে আসবে, তখন মাশআরে হারামের নিকটে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তিনি যেভাবে তোমাদিগকে হেদায়াত দিয়েছেন সেভাবে তাকে স্মরণ কর। যদিও ইতিপূর্বে তোমরা (বিশুদ্ধ পন্থা সম্পর্কে) ছিলে অজ্ঞ। ৬৮২
মুজদালিফায় রাতে বেশি বেশি জিকির, দুআ ও কুরআন তিলাওয়াত করবে। কারণ, এটি মহান রাত, যেমনটি পূর্বে বলা হয়েছে। মুজদালিফায় নিম্নোক্ত দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ أَنْ تَرْزُقَنِي فِي هَذَا الْمَكَانِ جَوَامِعَ الْخَيْرِ كُلِهِ، وَأَنْ تُصْلِحَ شَأْنِي كُلَّهُ، وَأَنْ تَصْرِفَ عَنِّي الشَّرِّ كُلَّهُ، فَإِنَّهُ لَا يَفْعَلُ ذَلِكَ غَيْرُكَ، وَلَا يَجُودُ بِهِ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা আন তারজুকানি ফি হাজাল মাকানি যাওয়ামিআল খাইরি কুল্লিহি, ওয়া আন তাসরিফা আন্নিশ শাররা কুল্লাহু, ফা ইন্নাহু লা ইয়াফআলু জালিকা গাইরুকা, ওয়ালা ইয়াযুদু বিহি ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে এ স্থানে সকল কল্যাণ দ্বারা ভূষিত করুন, আমার সমস্ত অবস্থা সংশোধন করে দিন। আমাকে সকল অনিষ্ট থেকে দূরে রাখুন। এটা আপনি ব্যতীত আর কেউ পারবে না এবং আপনি ছাড়া আর কেউ দানও করবে না।
এই দিন ফজরের নামাজ প্রথম সময়ে পড়ে নিবে। বেশি বেশি তাকবির পড়বে। এরপর মাশআরে হারামের দিকে রওনা করবে। এটি হল মুজদালিফার শেষে একটি ছোট পাহাড়। যাকে 'কুজাহ' পাহাড় বলা হয়ে থাকে। যদি এই পর্বতে উঠা সম্ভব হয় তাহলে উঠবে। অন্যথায় নিচে কিবলামুখী হয়ে অবস্থান করবে। তাকবির ও তাসবিহ পাঠ করবে। বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে ও দুআ করবে। নিম্নোক্ত দুআ পড়া মুস্তাহাব-
اَللَّهُمَّ كَمَا وَقَفْتَنَا فِيْهِ وَأَرَيْتَنَا إِيَّاهُ، فَوَفِّقْنَا لِذِكْرِكَ كَمَا هَدَيْتَنَا، وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا كَمَا وَعَدْتَنَا بِقَوْلِكَ، وَقَوْلُكَ الْحَقُّ فَإِذَا أَفَضْتُمْ مِنْ عَرَفَاتٍ فَاذْكُرُوا اللَّهَ عِنْدَ الْمَشْعَرِ الْحَرَامِ وَاذْكُرُوهُ كَمَا هَدَاكُمْ وَإِنْ كُنْتُمْ مِنْ قَبْلِهِ لَمِنَ الضَّالِّينَ، ثُمَّ أَفِيْضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা কামা ওয়াকাফতানা ফিহি ওয়া আরাইতানা ইয়্যাহু, ফা ওয়াফফিকনা লি যিকরিকা কামা হাদাইতানা ওয়াগফির লানা ওয়ার হামনা কামা ওয়াআদতানা বিকাওলিকা, ওয়া কাওলুকাল হাক্কু: ফা ইজা আফাদতুম মিন আরাফাতিন ফাজকুরুল্লাহা ইনদাল মাশয়িরিল হারামি ওয়াজকুরুহু কামা হাদাকুম, ওয়া ইন কুনতুম মিন কাবলিহি লামিনাদ্দাল্লিন। ছুম্মা আফিদু মিন হাইসু আফাদান্নাসু ওয়াসতাগফিরুল্লাহ, ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, যেভাবে আমাদেরকে সেখানে অবস্থান করিয়েছেন এবং সে স্থান দেখিয়েছেন। সুতরাং আপনার বাতলানো পদ্ধিতে আপনাকে স্মরণ করার তাওফিক দান করুন। আমাদেরকে ক্ষমা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন, যেমনটা আপনি কালামে পাকে ওয়াদা করেছেন, আর আপনার ওয়াদা সত্য- অতঃপর যখন তোমরা আরাফাত থেকে (তওয়াফে জিয়ারতের জন্য) ফিরে আসবে, তখন মাশআরে হারামের নিকটে আল্লাহকে স্মরণ কর। আর তিনি যেভাবে তোমাদিগকে হেদায়াত দিয়েছেন সেভাবে তাকে স্মরণ কর। যদিও ইতিপূর্বে তোমরা (বিশুদ্ধ পন্থা সম্পর্কে) ছিলে অজ্ঞ। অতঃপর ফিরে এসো যেখান থেকে সমস্ত লোক ফিরে আসে। আর (আরাফায়) আল্লাহর কাছে পাপ মার্জন করাও। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা পরম ক্ষমাকারী বড় করুণাময়। ৬৮৩-বেশি বেশি এ দুআও পড়বে-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার। অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। -এই দুআগুলোও পড়া মুস্তাহাব-
اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ كُلُّهُ، وَلَكَ الْكَمَالُ كُلُّهُ، وَلَكَ الْجَلَالُ كُلُّهُ، وَلَكَ الْتَقْدِيسُ كُلُّهُ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي جَمِيعَ مَا أَسْلَفْتُهُ، وَاعْصِمْنِي فِيْمَا بَقِيَ، وَارْزُقْنِي عَمَلاً صَالِحاً تَرْضَى بِهِ عَنِّي يَا ذَا الْفَضْلِ الْعَظِيمِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকাল হামদু কুলুহু, ওয়ালাকাল কামালু কুল্লুহু, ওয়া লাকাল জালালু কুল্লুহু, ওয়া লাকাত্তাকদিসু কুল্লুহ। আল্লাহুম্মাগফিরলি যামিআ মা আসলাফতুহু, ওয়াসিমনি ফিমা বাকিয়া, ওয়ারজুকনি আমালান সালিহান তারদা বিহি আন্নি ইয়া জাল ফাদলিল আজিম। অর্থ: হে আল্লাহ, সকল প্রশংসা, সকল পূর্ণাঙ্গতা, সকল বড়ত্ব ও সকল পবিত্রতা আপনারই। হে আল্লাহ, আমার পূর্বের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করুন। ভবিষ্যতে হেফাজত করুন। এমন সৎ আমলের তাওফিক দিন, যদ্দারা আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট হন হে মহা অনুগ্রহশীল।
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْتَشْفِعُ إِلَيْكَ بِخَوَاصٌ عِبَادِكَ، وَأَتَوَسَّلُ بِكَ إِلَيْكَ، أَسْأَلُكَ أَنْ تَرْزُقَنِي جَوَامِعَ الْخَيْرِ كُلِهِ، وَأَنْ تَمُنَّ عَلَيَّ بِمَا مَنَنْتَ بِهِ عَلَى أَوْلِيَائِكَ، وَأَنْ تُصْلِحَ حَالِي في الْآخِرَةِ وَالدُّنْيَا يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসতাশফিউ ইলাইকা বি খাওয়াসসি ইবাদিকা, ওয়া আতাওয়াসসালু বিকা ইলাইক। আসআলুকা আন তারজুকানি যাওয়ামিআল খাইরি কুল্লিহি, ওয়া আন তামুন্না আলাইয়্যা বিমা মানানতা বিহি আলা আউলিয়ায়িক। ওয়া আন তুসলিহা হালি ফিল আখিরাতি ওয়াদ্দুনয়া ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার নেক বান্দাদের ওসিলায় আপনার কাছে সুপারিশ করছি, আপনার (আসমায়ে হুসনার) মাধ্যমে আপনার কাছে মিনতি করছি। আপনার কাছে প্রার্থনা করি যেন আমাকে সমন্বিত সমুদয় কল্যাণ দান করেন। আমার ওপর সেই দয়া করেন, যা আপনার প্রিয় বান্দাদের ওপর করে থাকেন। আর ইহকাল-পরকালে আমার অবস্থা শ্রেয়তর করে দেন হে সর্বোচ্চ দয়াবান।
মাশআরে হারাম থেকে মিনার দিকে যাওয়ার সময় যে দুআ পড়বে
যখন ফজরের আলো ছড়িয়ে পড়ে তখন মাশআরে হারাম থেকে মিনার দিকে যাবে। এ সময় বেশি বেশি তালবিয়া জিকির ও দুআ পড়বে। বেশি বেশি তালবিয়া পড়বে। কেননা এটাই তালবিয়া পড়ার শেষ সময়। হতে পারে জীবনে আর তালবিয়া পড়ার সুযোগ হবে না।
ঈদের দিন মিনাতে যে দুআ পড়বে
মিনায় পৌঁছে এ দুআ পড়বে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي بَلَغَنِيْهَا سَالِماً مُعَافَى اللَّهُمَّ هَذِهِ مِنَى قَدْ أَتَيْتُهَا، وَأَنَا عَبْدُكَ، وَفِي قَبْضَتِكَ أَسْأَلُكَ أَنْ تَمُنَّ عَلَيَّ بِمَا مَنَنْتَ بِهِ عَلَى أَوْلِيَائِكَ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ الْحِرْمَانِ وَالْمُصِيبَةِ فِي دِينِي يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি বাল্লাগানিহা সালিমান মুআফা। আল্লাহুম্মা হাজিহি মিনা কাদ আতাইতুহা, ওয়া আনা আবদুকা ওয়াফি কাবদাতিকা, আসআলুকা আন তামুন্না আলাইয়্যা বিমা মানানতা বিহি আলা আউলিয়ায়িক। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হিরমানি ওয়াল মুসিবাতি فی دینی یا ارحمرراحمین.
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে এখানে পৌঁছিয়েছেন নিরাপদে ও সুস্থতার সাথে। হে আল্লাহ, আমি মিনায় হাজির। আমি আপনার গোলাম এবং আপনার কবজায়। মিনতি এই যে, আমার ওপর সেই দয়া করেন, যা আপনার প্রিয় বান্দাদের ওপর করে থাকেন। হে আল্লাহ, আপনার কাছে আশ্রয় চাই বঞ্চনা থেকে এবং দীনের ক্ষেত্রে পরীক্ষা থেকে, হে সর্বোচ্চ দয়ালু।
যামারায়ে আকাবায় প্রথমবার কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তালবিয়া বন্ধ করে দিবে। এখন থেকে তাকবির বলা শুরু করবে। প্রতিটি কঙ্কর নিক্ষেপের সময় তাকবির বলবে। এ স্থানে দুআর জন্য অবস্থান করা সুন্নাত নয়। কোরবানির পশু সঙ্গে থাকলে তা নহর করবে বা যাবাই করবে। নহর বা যাবাইয়ের সময় এ দুআ পড়া মুস্তাহাব-
بِسْمِ اللهِ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَسَلَّمَ اللَّهُمَّ مِنْكَ وَإِلَيْكَ، تَقَبَّلْ مِنِّي.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলিহি ওয়া সাল্লিম। আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়া ইলাইকা, তাকাব্বাল মিন্নি।
অর্থ: আল্লাহর নামে যবাই করলাম, তিনি মহান। হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ, (এই কুরবানি) আপনার দেয়া এবং আপনার জন্যই উৎসর্গীত। আমার তরফে কবুল করুন। -আর অন্যের পক্ষ থেকে কুরবানি করলে বলবে- تَقَبَّلْ مِنْ فُلَانٍ ]তাকাব্বাল মিন ফুলান: অমুকের (ঐ ব্যক্তির নাম নিবে) পক্ষ থেকে কবুল করুন]
জবাইয়ের পর যখন হলক করবে, তখন আমাদের শাফেয়িদের মতে, মাথার সামনের ভাগের চুল ধরে তিনবার তাকবির বলার পর এ দুআটি পড়া মুস্তাহাব। দুআটি হল-
الْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى مَا هَدَانَا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ عَلَى مَا أَنْعَمَ بِهِ عَلَيْنَا، اللَّهُمَّ هَذِهِ نَاصِيَتِيْ فَتَقَبَّلْ مِنّي وَاغْفِرْ لِي ذُنُوبِي، اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلِلْمُحَلِقِينَ وَالْمُقَصِّرِينَ، يَا وَاسِعَ الْمَغْفِرَةِ آمِينَ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি আলা মা হাদানা, ওয়ালহামদুলিল্লাহি আলা মা আনআমা বিহি আলাইনা। আল্লাহুম্মা হাজিহি নাসিয়াতি ফাতাকাব্বাল মিন্নি ওয়াগফির লি জুনুবি। আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়ালিল মুহাল্লিকিনা ওয়াল মুকাসসিরিনা ইয়া ওয়াসিআল মাগফিরাহ, আমিন।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এজন্য যে, তিনি আমাদেরকে পথপ্রদর্শন করেছেন। আল্লাহর জন্য সমস্ত প্রশংসা এ কারণে যে, তিনি এর মাধ্যমে আমাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন। হে আল্লাহ, এই আমার অলকগুচ্ছ, আমার থেকে কবুল করুন এবং আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ, আমাকে এবং মুণ্ডকারী ও হ্রস্বকারীদের ক্ষমা করুন হে বড় ক্ষমাশীল। (আমিন) -মাথা মুণ্ডানো শেষ হলে তাকবির বলে এ দুআ পড়বে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي قَضَى عَنَّا نُسُكَنَا اللَّهُمَّ زِدْنَا إِيْمَاناً وَيَقِيْنَا وَعَوْنَا، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَا بَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا وَالْمُسْلِمِينَ أَجْمَعِينَ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহিল্লাজি কাদা আন্না নুসুকানা, আল্লাহুম্মা জিদনা ঈমানান ওয়া ইয়াকিনান ওয়া আওনান, ওয়াগফির লানা ওয়ালি আবায়িনা ওয়া উম্মাহাতিনা ওয়াল মুসলিমিনা আজমাঈন।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদেরকে হজের আনুষ্ঠানিকতা আদায়ের তাওফিক দিয়েছেন। হে আল্লাহ, আমাদের ঈমান, বিশ্বাস ও মদদ বৃদ্ধি করুন। আমাদেরকে এবং আমাদের মাতা-পিতা সবাইকে ক্ষমা করুন।
আইয়ামে তাশরিকে মিনায় অবস্থানকালে যে দুআ পড়বে
(৪৯০) হজরত নুবাইশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
أَيَّامُ التَّشْرِيْقِ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ.
অর্থ: আইয়ামে তাশরিক হল পানাহার ও জিকিরের দিন। ৬৮৪ -তাই এ সময় বেশি বেশি জিকির করা চাই। সর্বোত্তম জিকির হল, কুরআন তিলাওয়াত।
সুন্নাত হল, কঙ্কর নিক্ষেপের দিনগুলোর প্রতিদিন কঙ্কর নিক্ষেপের সময় যামারায়ে উলার কাছে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবে, তাকবির বলবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, তাসবিহ বলবে এবং কাকুতি-মিনতির সাথে দুআ করবে। এভাবে সুরা বাকারা পড়ার সমপরিমাণ দাঁড়াবে। অনুরূপভাবে দ্বিতীয় যামারায় করবে। তবে তৃতীয় যামারায় দাঁড়াবে না, একে যামারায়ে আকবা বলে।
মিনা থেকে ফিরে আসার পর করণীয়
মিনা থেকে ফিরে আসার পর তার হজের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়ে গেল। এখন মূল হজের কোন জিকির বাকি নেই। তবে সে যেহেতু মুসাফির তাই তাকবির, কালিমা ইত্যাদি জিকির-আজকার করবে। যা মুসাফিরের অধ্যায়ে সামনে আলোচনা হবে।
মক্কায় প্রবেশের পর উমরার নিয়ত করলে উমরায় হজের যেসব আমল রয়েছে সেগুলোতে হজের দুআ-দরুদ ও জিকিরগুলোই করবে। যেমন, ইহরাম, তাওয়াফ, সাঈ, জবাই ও হলক।
টিকাঃ
৬৮০. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৯।
৬৮১. সুনানে তিরমিজি: ৩৫২০।
৬৮২. সুরা বাকার: ১৮৯। তরজমা: অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন থেকে।-
৬৮৩. আয়াত দুটির তরজমা: অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন থেকে।
৬৮৪. সহিহ মুসলিম: ১১৪১।