📄 সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার দুআ
বৃষ্টি প্রার্থনার সময় বিনয় ও কাকুতি-মিনতি করে বেশি বেশি দুআ, জিকির ও ইস্তেগফার করবে। এ ব্যাপারে এ দুআটি প্রসিদ্ধ-
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْئاً مُغِيْئاً هَنِيْئاً مَرِيْئاً غَدَقًا مُجَلَّلًا سَحًّا عَامًّا طَبَقاً دَائِماً. اللَّهُمَّ عَلَى الطَّرَابِ وَمَنابِتِ الشَّجَرِ : وَبُطُوْنِ الْأَوْدِيَةِ. اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَغْفِرُكَ إِنَّكَ كُنْتَ غَفَّاراً، فَأَرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْنَا مِدْرَاراً اللَّهُمَّ اسْقِنَا الْغَيْثَ وَلَا تَجْعَلْنَا مِنَ الْقَانِطِينَ. اللَّهُمَّ أَنْبِتْ لَنَا الزَّرْعَ ، وَأَدِرَّ لَنَا الضَّرْعَ، وَاسْقِنَا مِنْ بَرَكَاتِ السَّمَاءِ، وَأَنْبِتْ لَنَا مِنْ بَرَكَاتِ الْأَرْضِ اللَّهُمَّ ارْفَعْ عَنَّا الْجَهْدَ وَالْجُوْعَ وَالْعُرْيَ، وَاكْشِفْ عَنَّا مِنَ الْبَلَاءِ مَا لَّا يَكْشِفُهُ غَيْرُكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকিনা গাইসান মুগিসান হানিআন মারিআন গাদিকান মুযাল্লিলান সাহহান আম্মান তাবাকান দায়িমান। আল্লাহুম্মা আলাজ্জিরাবি ওয়া মানাবিতিশ শাজারি ওয়া বুতুনিল আউদিয়াহ। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাগফিরুকা ইন্নাকা কুনতা গাফফারা। ফাআরসিলিস সামাআ আলাইনা মিদরারা। আল্লাহুম্মাসকিনাল গাইসা ওয়ালা তাযআলনা মিনাল কানিতিন। আল্লাহুম্মা আনবিত লানাজ্জারআ, ওয়া আদিররা লানাদ্দারআ, ওয়াসকিনা মিন বারাকাতিস সামায়ি, ওয়া আনবিত লানা মিন বারাকাতিল আরদ। আল্লাহুম্মারফা আন্না যাহদা ওয়াযুআ ওয়াল উরইয়া ওয়াকশিফ আন্না মিনাল বালায়ি মা লা ইয়াকশিফুহু গাইরুক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের ওপর নাজিল করুন অনুকুল বৃষ্টি, তৃপ্তিকর সবুজ ফলানো বারিধারা, যা উপকারে আসবে ক্ষতি করবে না। পর্যাপ্ত বৃষ্টি, সকলের জন্য উপকারী, প্রবাহিত, ব্যাপক স্তরবিশিষ্ট, প্রয়োজন অনুসারে। হে আল্লাহ, বৃষ্টি দিন পাহাড়ে, গাছপালায় এবং উপত্যকায়। হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, নিশ্চয় আপনি বড় ক্ষমাশীল। অতএব, আমাদের ওপর অসজ্র বৃষ্টি বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন, আমাদেরকে হতাশ করবেন না। হে আল্লাহ, আমাদের জন্য শস্য উৎপাদন করুন, আমাদের গবাদির স্তনে প্রচুর পরিমাণে দুধ দিন। আমাদেরকে আসমানের বরকত দ্বারা ধন্য করুন এবং জমিনের বরকত উৎপন্ন করুন। আমাদের ওপর থেকে কাঠিন্যতা, ক্ষুধা, বস্ত্রহীনতা দূর করুন। আমাদের বিপদাপদ দূর করুন, যা আপনি ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারবে না। লোকদের প্রসিদ্ধ কোন বুজুর্গ ও নেক ব্যক্তি থাকলে তার ওসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করবে। যেমন এভাবে বলতে পারে-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَسْقِي وَنَتَشَفَعُ إِلَيْكَ بِعَبْدِكَ فُلَانٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাসকি ওয়া নাতাশাফফাউ ইলাইকা বি- আবদিকা ফুলান।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার অমুক (উদ্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নিবে) বান্দার ওসিলায় আমরা বৃষ্টি কামনা করি। ৬২২
(৪৫০) বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে-
أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ كَانَ إِذَا قَحَطُوْا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِيْنَا، وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمَّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا فَيُسْقَوْنَ.
অর্থ: উমর রাদি. এর যুগে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি আব্বাস রাদি. এর ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন। উমর রাদি. বলতেন, হে আল্লাহ, আমরা নবিকে ওসিলা দিয়ে আপনার কাছে বৃষ্টি চেয়েছি, আপনি বৃষ্টি দিয়েছেন। এখন আমরা নবির চাচার ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। অতএব, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন। অতঃপর বৃষ্টি হত। -মুআবিয়া রাদি. ও অন্যদের থেকে নেককারদের ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনার বিষয়টি এসেছে।
মুস্তাহাব হল, ইস্তিস্কার নামাজে ঐ কিরাতই পড়বে, যা ঈদের নামাজে পড়া হয়। প্রথম রাকাতের শুরুতে সাতবার তাকবির বলবে এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচবার, ঈদের নামাজের মতো। ঈদের নামাজে ছোটখাট যত মাসায়েল আছে, সেগুলো এখানে প্রযোজ্য হবে। তারপর দুটি খুতবা প্রদান করবে। এতে বেশি বেশি ইস্তিগফার ও দুআ করবে। ৬২৩
(৪৫১) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাওয়াক নামক স্থানে এই দুআটি পড়লেন। অতঃপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْئًا مُغِيْئًا مَرِيئًا مَرِيعًا نَافِعًا غَيْرَ ضَارٌّ عَاجِلًا غَيْرَ آجِلٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকিনা গাইসান মুগিসান, মারিআন মারিআন, নাফিআন, গায়রা দাররিন, আযিলান গায়রা আযিল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের উপর নাজিল করুন অনুকুল বৃষ্টি, তৃপ্তিকর সবুজ ফলানো বারিধারা, যা উপকারে আসবে, ক্ষতিকর হবে না। এক্ষুণি দিন, বিলম্ব করবেন না। ৬২৪
(৪৫২) হজরত আমর বিন শুআইব তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন তখন এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ، وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ، وَأَحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকি ইবাদাকা ওয়া বাহায়িমাকা ওয়ানশুর রাহমাতাকা ওয়া আহয়ি বালাদাকাল মায়্যিত।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আপনার বান্দাদেরকে ও প্রাণীদেরকে দৃষ্টি দিন। আপনার রহমত ব্যাপক করে দিন। মৃত শহরকে সজীব করে দিন। ৬২৫
(৪৫৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে-
شَكَا النَّاسُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُحُوْطَ الْمَطَرِ، فَأَمَرَ بِمِنْبَرٍ فَوُضِعَ لَهُ فِي الْمُصَلَّى ، وَوَعَدَ النَّاسَ يَوْمًا يَخْرُجُوْنَ فِيْهِ. قَالَتْ عَائِشَةُ: فَخَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ بَدَا حَاجِبُ الشَّمْسِ فَقَعَدَ عَلَى الْمِنْبَرِ، فَكَبَّرَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَحَمِدَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّكُمْ شَكَوْتُمْ جَدْبَ دِيَارِكُمْ وَاسْتِنْخَارَ الْمَطَرِ عَنْ إِيَّانِ زَمَانِهِ عَنْكُمْ، وَقَدْ أَمَرَكُمُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ تَدْعُوهُ، وَوَعَدَكُمْ أَنْ يَسْتَجِيْبَ لَكُمْ. ثُمَّ قَالَ }: الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ } { الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ { مَلِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ، اللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ، وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلَاغًا إِلَى حِينٍ". ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ، فَلَمْ يَزَلْ فِي الرَّفْعِ حَتَّى بَدَا بَيَاضُ إِبْطَيْهِ، ثُمَّ حَوَّلَ إِلَى النَّاسِ ظَهْرَهُ، وَقَلَبَ - أَوْ : حَوَّلَ - رِدَاءَهُ وَهُوَ رَافِعُ يَدَيْهِ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ، وَنَزَلَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، فَأَنْشَأَ اللَّهُ سَحَابَةً، فَرَعَدَتْ وَبَرَقَتْ، ثُمَّ أَمْطَرَتْ بِإِذْنِ اللهِ ، فَلَمْ يَأْتِ مَسْجِدَهُ حَتَّى سَالَتِ السُّيُولُ، فَلَمَّا رَأَى سُرْعَتَهُمْ إِلَى الْكِنَّ ضَحِكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرُ، وَأَنِّي عَبْدُ اللَّهِ، وَرَسُولُهُ."
অর্থ: মানুষজন রাসুলের কাছে অনাবৃষ্টির কথা বলল। মিম্বার আনতে বলতেন। মিম্বার এনে নামাজের স্থানে স্থাপন করা হল। তিনি মানুষদের থেকে একদিন বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার অঙ্গীকার নিলেন। একদিন সূর্য উঠার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তিনি মিম্বরে বসে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা করলেন। আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর বললেন, তোমরা এলাকায় বৃষ্টিহীনতার অভিযোগ করছ এবং বৃষ্টির সময় চলে যাওয়ার পরও বৃষ্টি না হওয়ার অভিযোগ করছ। আল্লাহ তোমাদের তার কাছে চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। এরপর তিনি এই বলে দুআ করতে লাগলেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ } { الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ } مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ اللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أُنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ، وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلَاغًا إِلَى حِينٍ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আর-রাহমানির রাহিম, মালিকি ইয়াউমিদ্দিন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইয়াফ আলু মা য়ুরিদ। আল্লাহুম্মা আনতাল্লাহু লা ইলাহা আনতাল গানিউ ওয়া নাহনুল ফুকারা, আনজিল আলাইনাল গাইসা, ওয়াযআল মা আনজালতা লানা কুওয়্যাতান ওয়া বালাগান ইলা হিন।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত জগতের পালনকর্তা। যিনি পরম দয়াপরবש বড় করুণাময়। যিনি প্রতিদান-দিবসের স্বত্ত্বাধিকারী। ৬২৬ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি যা ইচ্চা করেন। হে আল্লাহ, আপনিই আল্লাহ, আপনি ব্যতীত কোন কোন সত্য মাবুদ নেই। আপনি অমুখাপেক্ষী, আর আমরা আপনার মুখাপেক্ষী। আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন। যা বর্ষণ করেন তা আমাদের জন্য নির্ধারিত সময়ের জন্য শক্তি ও পাথেয় করুন।
এরপর তিনি তার হাত উপরে উঠালেন। তিনি উভয় হাত এতটুকু উঠালেন যে, তার বগলের শুভ্রতা দেখা যাচ্ছিল। এরপর তিনি মানুষের দিকে পিঠ দিলেন। হাত উঠানো অবস্থায় চাদর উল্টিয়ে ফেললেন। এরপর লোকজনদের দিকে ফিরলেন এবং মিম্বার থেকে অবতরণ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। তখন আল্লাহ তাআলা এক মেঘ সৃষ্টি করলেন। সে মেঘ বজ্রপাত ও বিদ্যুৎচমক করছিল। এরপর আল্লাহর নির্দেশে বৃষ্টি বর্ষণ করে। মসজিদে পৌঁছার আগেই বৃষ্টিতে বন্যা হয়ে গেল। তিনি বৃষ্টির পানি দ্রুত প্রবাহ হতে দেখে খুশিতে এভাবে হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত প্রকাশ পেয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আমি তাঁর বান্দা ও রাসুল। ৬২৭
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে, নামাজের আগে খুতবা দেয়া হবে। এমনটি সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে স্পষ্টভাবে আছে। সুতরাং নামাজের আগে খুতবা জায়েজ। কিন্তু অন্যান্য হাদিস ও ফিকহের কিতাবে আগে নামাজ পরে খুতবার কথা বলা হয়েছে। এটিই উত্তম।
আস্তে ও জোরে উভয়ভাবে দুআ করা মুস্তাহাব। দুআয় হাত অনেক উচুঁতে উঠানো চাই। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, দুআর মাঝে এটিও বলবে-
اللَّهُمَّ أَمَرْتَنَا بِدُعَائِكَ، وَوَعَدْتَنَا إِجَابَتَكَ، وَقَدْ دَعَوْنَاكَ كَمَا أَمَرْتَنَا، فَأَجِبْنَا كَمَا وَعَدْتَنَا، اللهُمَّ امْنُنْ عَلَيْنَا بِمَغْفِرَةِ مَا قَارَفْنَا، وَإِجَابَتِكَ فِي سُفْيَانًا وَسَعَةِ رِزْقِنَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আমারতানা বি-দুআয়িকা, ওয়া ওয়াআদতানা ইজাবাতাক, ওয়াকাদ দাআওনাকা কামা আমারতানা, ফা আযিবনা কামা ওয়া আদতানা। আল্লাহুম্মামনুন আলাইনা বি-মাগফিরাতি মা কারাফনা ওয়া ইযাবাতিকা ফি সুকয়ানা ওয়া সাআতি রিজকিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনাকেই ডাকতে আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাদের সাথে দুআ কবুল করার অঙ্গীকারও করেছেন। আপনার নির্দেশ-মাফিক আপনাকে বলেছি, সুতরাং অঙ্গীকার অনুযায়ী কবুল করুন। হে আল্লাহ, আমাদের গুনাহ ক্ষমা করতঃ, বৃষ্টির দুআ কবুল করতঃ এবং প্রশস্ত রিজিক দিয়ে আমাদের ওপর দয়া করুন। -মুমিন নারী ও পুরুষের জন্যও দুআ করবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়বে। দুআর মাঝে এক/দুটি আয়াত পড়বে। ইমাম বলবে- أَسْتَغْفِرُ اللهَ لِي وَلَكُمْ (আসতাগফিরুল্লাহা লি ওয়া লাকুম: আল্লাহর কাছে নিজের এবং তোমাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করি) বিপদাপদের দুআগুলোও পড়বে এবং এ দুআটিও পড়বে-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, ঈদের নামাজের মতই ইমাম ইস্তিস্কার নামাজে দুটি খুতবা দেবে। খুতবায় তাকবির বলবে, আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা করবে। দরুদ পড়বে। বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে। আর এ আয়াতটিও বেশি বেশি পড়বে-
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا.
অর্থ: তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছিড়ে দিবেন।
হজরত উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ইস্তিস্কা করেছেন। তাঁর পুরো দুআতেই ইস্তিগফার ছিল। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, উমর রাদি. এর প্রায় পুরা দুআটি ইস্তিগফার ছিল। তিনি দুআ শুরু করেছেন ইস্তিগফার দিয়ে; মাঝেও ইস্তিগফার করেছেন এবং দুআ শেষ করেছেন ইস্তিগফারের মাধ্যমে।
টিকাঃ
৬২২. কিতাবুল উম্ম ১/২৫১, ইমাম শাফেয়ি।
৬২৩. হানাফি মাজহাবের মতে, এই দুই রাকাত নামাজ অন্যান্য সাধারণ নামাজের মতো। শহরের বাইরে গিয়ে জামাতের সাথে পড়বে। কিরাত হবে উচ্চকণ্ঠে। নামাজান্তে খুতবা হবে একটি।
৬২৪. সুনানে আবু দাউদ: ১১৬৯।
৬২৫. সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৬।
৬২৬. তরজমা: অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন থেকে।
৬২৭. সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৩।
📄 প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ের দুআ
মানুষকে তাকওয়া, আনুগত্য ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।
প্রচণ্ড বাতাস বইলে যে দুআ পড়বে (৪৫৪) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, প্রচণ্ড বাতাস বইলে নবিজি এদুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيْهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيْهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি খাইরাহা ওয়া খাইরা মা ফিহা, ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহ। ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি এ বাতাস ও বাতাসের মাঝে কল্যাণ চাই। আপনি যে কল্যাণের জন্য প্রেরণ করেছেন তা চাই। আমি এর অকল্যাণ ও এর মাঝের অকল্যাণ থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই। এটিকে যে অকল্যাণের জন্য পাঠানো হয়েছে তা থেকে পানাহ চাই। ৬২৮
(৪৫৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন-
الرَّيْحُ مِنْ رَوْحِ اللهِ ، تَأْتِي بِالرَّحْمَةِ وَتَأْتِي بِالْعَذَابِ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوْهَا فَلَا تَسُبُّوْهَا، وَسَلُوا اللَّهَ خَيْرَهَا وَاسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ، مِنْ شَرِّهَا.
অর্থ: বাতাস হল বান্দাদের প্রতি আল্লাহর রহমত। এটি কখনো আল্লাহর রহমত, কখনো আজাব নিয়ে আসে। যদি বাতাস বইতে থাকে, বাতাসকে তোমরা গালি দিও না। আল্লাহর কাছে এর কল্যাণ চাও এবং এর অকল্যাণ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। ৬২৯
(৪৫৬) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আকাশে মেঘ দেখতেন, নামাজে থাকলেও তা ছেড়ে দিতেন, এরপর এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররিহা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছে এর অকল্যাণ থেকে পানাহ চাই। -আর বৃষ্টি হলে পড়তেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাইয়্যিবান নাফিআহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন। ৬৩০
(৪৫৭) হজরত উবাই বিন কাব রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। যদি তোমাদের অপছন্দের কিছু দেখ তাহলে এ দুআ পড়-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيْحِ، وَخَيْرِ مَا فِيْهَا، وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيْحِ وَشِرِّ مَا فِيْهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরি মা ফিহা, ওয়া খাইরি মা উমিরাত বিহ। ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররি হাজিহির রিহি ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উমিরাত বিহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি এ বাতাস ও বাতাসের মাঝে কল্যাণ চাই। আপনি যে কল্যাণের জন্য প্রেরণ করেছেন তা চাই। আমি এর অকল্যাণ ও এর মাঝের অকল্যাণ থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই। এটিকে যে অকল্যাণের জন্য পাঠানো হয়েছে তা থেকে পানাহ চাই। উক্ত হাদিসকে ইমাম তিরমিজি রহ. হাসান বলেছেন। ৬৩১
(৪৫৮) হজরত সালামা বিন আকওয়া রাদি. থেকে বর্ণিত, প্রচণ্ড বাতাস বইলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ لَقْحاً لَا عَقِيماً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকহান লা আকিমা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের এমন বৃষ্টি দাও যদ্দারা ফল-ফসল উৎপাদিত হয়। এমন বৃষ্টি দিও না যদ্দারা ফল-ফলাদি উৎপাদিত হয় না। ৬৩২
(৪৫৯) হজরত আনাস বিন মালেক ও জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا وَقَعَتْ كَبِيرَةُ، أَوْ هَاجَتْ رِيحٌ عَظِيمَةٌ، فَعَلَيْكُمْ بِالتَّكْبِيْرِ، فَإِنَّهُ يَجْلُوْ الْعَجَاجَ الْأَسْوَدَ.
অর্থ: যখন প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়, তখন তোমরা বেশি বেশি তাকবির বল তথা আল্লাহু আকবার বল। কেননা তা কালো ধুলাবালিকে দূর করে। ৬৩৩
(৪৬০) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতজানু হয়ে হাঁটু গেড়ে বসে এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا رَحْمَةً وَلَا تَجْعَلْهَا عَذَاباً، اللهُمَّ اجْعَلْهَا رِيَاحاً وَلَا تَجْعَلْهَا رِيحاً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলহা রাহমাতান ওয়ালা তাযআলহা আজাবা, আল্লাহুম্মায আলহা রিয়াহান ওয়ালা তাযআলহা রিহা।
অর্থ: হে আল্লাহ, এটাকে আমাদের জন্য রহমত বানিয়ে দিন, শাস্তিস্বরূপ দিয়েন না। এটাকে কেবল বাতাস হিসাবে না দিয়ে আমাদের জন্য আরামদায়ক করে দিন। ইবনে আব্বাস রাদি. বলেন, আল্লাহ তাআলার আছে-
إِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا صَرْصَرًا.
অর্থ: আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝঞ্জাবায়ু পাঠালাম। ৬৩৪
إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيْحَ الْعَقِيْمَ.
অর্থ: যখন আমি তাদের কাছে বৃষ্টিহীন বাতাস পাঠালাম। ৬৩৫
وَأَرْسَلْنَا الرِّيْحَ لَوَاقِحَ.
অর্থ: আমি বারিবহ বাতাস পাঠিয়েছি। ৬৩৬
وَمِنْ أَيْتِهَ أَنْ يُرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ.
অর্থ: আল্লাহর নিদর্শনের মাঝে একটি নিদর্শন হল, তিনি বাতাসকে সুসংবাদরূপে পাঠান। ৬৩৭
(৪৬১) ইমাম শাফেয়ি রহ. এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন-
أَنَّهُ شَكَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْفَقْرَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَعَلَّكَ تَسُبُّ الرِّيْحَ.
অর্থ: সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দারিদ্রতার অভিযোগ করল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মনে হয় বাতাসকে গালি দাও। ৬৩৮-ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, বাতাসকে গালি দেয়া ঠিক নয়। কেননা এটা আল্লাহর সৃষ্টি ও তার সৈন্য। এটাকে তিনি যখন ইচ্ছা মানুষের জন্য রহমত কিংবা শাস্তিস্বরূপ প্রেরণ করেন।
তারকার পতন দেখলে যে দুআ পড়বে
(৪৬২) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, তারকা পতন হলে সেদিকে তাকিয়ে না থাকতে এবং তখন এ দুআ পড়তে বলা হয়েছে-
مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ.
উচ্চারণ: মাশাআল্লাহু লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা যা ইচ্ছা করতে সক্ষম, আল্লাহর ছাড়া কারো কোন ক্ষমতা নেই। ৬৩৯
তারকা ও বিজলির দিকে দৃষ্টি দেয়া ও ইশারা করবে না
পূর্বের হাদিসটি এ অধ্যায়ের প্রমাণ। ইমাম শাফেয়ি রহ. হজরত উরওয়া বিন যুবায়ের সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, তোমরা বিজলি ও প্রবল বর্ষণ দেখে তার দিকে ইশারা কর না। বরং তোমরা আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তণ কর। ৬৪০
বজ্রধ্বনি শ্রবণে যে দুআ পড়বে
(৪৬৩) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে দুর্বল সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বজ্রধ্বনি ও গর্জন শুনতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ، وَلَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগাদাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আফিনা কাবলা জালিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের আপনার গজব দ্বারা হত্যা করবেন না। আপনার আজাব দিয়ে আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। এ থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিন। ৬৪১
(৪৬৪) হজরত আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বজ্রধ্বনি শুনলে কথাবার্তা ছেড়ে দিতেন এবং এদুআ পড়তেন-
سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাযি ইউসাব্বিহুর রা'দু বি হামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহ।
অর্থ: সকল প্রশংসা ঐ সত্তার, বজ্রধ্বনি যার প্রশংসা করে এবং ফেরেশতারাও যার ভয়ে গুণকীর্তন করে। ৬৪২-ইমাম শাফেয়ি রহ. মহান তাবেয়ি তাউস রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বজ্রধ্বনি শুনে বলতেন-
سُبْحَانَ مَنْ سَبَّحَتْ لَهُ
উচ্চারণ: সুবহানা মান সাব্বাহতা লাহ।
অর্থ: পুত-পবিত্র ঐ সত্তা, বজ্রধ্বনি যার তাসবিহ পড়ে। -শাফেয়ি রহ. বলেন, এর দ্বারা নিম্নোক্ত আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ.
অর্থ: তার প্রশংসা পাঠ করে বজ্র। ৬৪৩ - ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে- আমরা একদা উমর রাদি. এর সাথে কোন এক সফরে ছিলাম। আমরা বজ্রধ্বনি, বিজাল ও ঠাণ্ডার কবলে পড়লাম। তখন কাব রাদি. বললেন, যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দুআ তিনবার পড়বে, আল্লাহ তাকে উক্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দিবেন। আমরা উক্ত দুআ পড়ে এসব থেকে সুরক্ষা পেয়েছি। দুআটি হল-
سُبْحَانَ مَنْ يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাযি ইউসাব্বিহুর রা'দু বি হামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহ।
অর্থ: সকল প্রশংসা ঐ সত্তার, বজ্রধ্বনি যার প্রশংসা করে এবং ফেরেশতারাও যার ভয়ে গুণকীর্তন করে। ৬৪৪
বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হলে যে দুআ পড়বে
(৪৬৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বৃষ্টি দেখতেন তখন বলতেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিআ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে উপকারী বৃষ্টি দিন। ৬৪৫ - অন্য রেওয়ায়েতে আছে যে, নবিজি উক্ত দুআ দুইবার বা তিনবার পড়তেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিআ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে উপকারী বৃষ্টি দিন। ৬৪৬
(৪৬৬) হজরত ইমাম শাফেয়ি রহ. কিতাবুল উম্মে মুরসাল সনদে বর্ণনা করেন যে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أطْلُبُوا اسْتِجَابَةَ الدُّعَاءِ عِنْدَ الْتِقَاءِ الْجُيُوشِ، وَإِقَامَةِ الصَّلَاةِ.
অর্থ: তোমরা তিন সময়ে আল্লাহর কাছে দুআ চাও। শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলার সময়, নামাজ পড়ার সময় এবং বৃষ্টি বর্ষণের সময়। -শাফেয়ি রহ. বলেন, আমি একাধিক ব্যক্তির ব্যাপারে জানি যারা বৃষ্টি বর্ষণ ও নামাজ আদায় করে দুআ চাওয়ার পর সেই দুআ কবুল হয়েছে। ৬৪৭
বৃষ্টি বর্ষণের পর যে দুআ পড়বে
(৪৬৭) হজরত যায়েদ বিন খালিদ জুহানি রাদি. থেকে বর্ণিত-
صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الصُّبْحِ بِالْحُدَيْبِيَةِ عَلَى إِثْرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنَ اللَّيْلِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ: أَتَدْرُوْنَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ قَالُوا : اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنُ بِي وَكَافِرُ، فَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللهِ، وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنُ بِي وَكَافِرُ بِالْكَوْكَبِ، وَأَمَّا مَنْ قَالَ: بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا، فَذَلِكَ كَافِرُ بِي وَمُؤْمِنُ بِالْكَوْكَبِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে হুদাইবিয়াতে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। সে রাতে আকাশে মেঘ দেখা গিয়েছিল। নামাজ শেষে মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব তোমাদেরকে কী বলছেন? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। তখন তিনি বললেন, বান্দাদের কেউ আমাকে বিশ্বাস করে আর কেউ কেউ আমার সঙ্গে কুফুরি করে। যারা বলে আল্লাহর অনুগ্রহে ও অনুকম্পায় বৃষ্টি হয়েছে, তারা আমাকে বিশ্বাস করে ও তারকাকে অবিশ্বাস করে। আর যারা বলে, 'অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে' তারা আমাকে অবিশ্বাস করে এবং তারকাকে বিশ্বাস করে। ৬৪৮
ইমাম নববি বলেন, হুদাইবিয়া: একটি কূপের নাম, যা মক্কা থেকে এক মারহালা দূরে অবস্থিত। উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি কোন মুসলিম বলে- 'অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে' এবং নিয়ত করে যে, তারকাই বৃষ্টিদাতা, তবে নিঃসন্দেহে সে কাফের মুরতাদ হয়ে যাবে। আর যদি এ নিয়তে বলে যে, এটা বৃষ্টির আলামত, এরপরে বর্ষণ হয়। আর বর্ষণ হয় আল্লাহর ক্রিয়া ও সৃষ্টিতে, তাহলে কাফের হবে না। অতঃপর বৃষ্টি বর্ষণ হলে এই নেয়ামতের ওপর আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করা চাই। ৬৪৯
প্রবল বর্ষণে ক্ষতির আশঙ্কা হলে যে দুআ পড়বে
(৪৬৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
دَخَلَ رَجُلُ الْمَسْجِدَ يَوْمَ جُمُعَةٍ، وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمُ يَخْطُبُ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ ، هَلَكَتِ الْأَمْوَالُ، وَانْقَطَعْتِ السُّبُلُ، فَادْعُ اللَّهَ يُغِثْنَا. فَرَفَعَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ: " اللَّهُمَّ أَغِثْنَا، اللَّهُمَّ أَغِثْنَا، اللهُمَّ أَغِثْنَا. قَالَ أَنَسٌ : وَاللهِ، مَا نَرَى فِي السَّمَاءِ مِنْ سَحَابٍ وَلَا قَزَعَةً، وَمَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ سَلْعِ - يَعْنِي الْجَبَلَ الْمَعْرُوْفَ بِقُرَبِ الْمَدِينَةِ - مِنْ بَيْتٍ وَلَا دَارٍ. فَطَلَعَتْ مِنْ وَرَائِهِ سَحَابَةٌ مِثْلُ التُّرْسِ، فَلَمَّا تَوَسَّطَتِ السَّمَاءَ انْتَشَرَتْ ثُمَّ أَمْطَرَتْ، فَلَا وَاللهِ ، مَا رَأَيْنَا الشَّمْسَ سِتًّا، ثُمَّ دَخَلَ رَجُلٌ مِنْ ذَلِكَ الْبَابِ فِي الْجُمُعَةِ الْمُقْبَلَةِ، وَرَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمُ يَخْطُبُ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ ، هَلَكَتِ الْأَمْوَالُ، وَانْقَطَعَتِ السُّبُلُ، فَادْعُ اللَّهَ يُمْسِكْهَا عَنَّا، فَرَفَعَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ : اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا، اللهُمَّ عَلَى الْأَكَامِ ، وَالظَّرَابِ ، وَبُطُوْنِ الْأَوْدِيَةِ، وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ. فَانْقَطَعَتْ وَخَرَجْنَا نَمْشِي فِي الشَّمْسِ.
অর্থ: জুমুআর দিন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। সে ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাদের সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে, রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। বৃষ্টিপাতের জন্য দুআ করুন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত উঠিয়ে এ দুআ করলেন-
اللَّهُمَّ أَغِثْنَا اللَّهُمَّ أَغِثْنَا، اللَّهُمَّ أَغِثْنَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আগিসনা, আল্লাহুম্মা আগিসনা, আল্লাহুম্মা আগিসনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন।
আনাস রাদি. বলেন, আল্লাহর কসম, আমরা আকাশে কোন মেঘ বা মেঘখণ্ড দেখিনি। আমাদের ও সিলা' উপত্যকার মাঝে কোন বাড়ি-ঘর ছিল না। সিলা' উপত্যকার পেছন থেকে ঢালের মতো একটি মেঘ উপরে উঠতে লাগল। সেটি যখন আকাশের মাঝামাঝি এসে ছড়িয়ে গিয়ে বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। আল্লাহর কসম, আমরা সাতদিন পর্যন্ত সূর্য দেখিনি।
অতঃপর সে লোকটি ঐ দরজা দিয়েই পরবর্তী জুমুআয় মসজিদে প্রবেশ করল। তখনও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। সে লোকটি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ, বৃষ্টিতে ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে যাচ্ছে। আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত তুলে এই দুআ পড়লেন। এ দুআর পর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল। আমরা মসজিদ থেকে বের হয়ে সূর্যের আলোতে হাঁটলাম। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا، اللهُمَّ عَلَى الْآكَامِ، وَالظَّرَابِ، وَبُطُوْنِ الْأَوْدِيَةِ، وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া আলাইনা, আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াজ্জিরাবি ওয়া বুতুনিল আউদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাজার।
অর্থ: হে আল্লাহ, বৃষ্টি দিন আমাদের আশেপাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ, টিলায়, পাহাড়ে, উপত্যকায় এবং গাছপালায় বর্ষণ করুন। ৬৫০
টিকাঃ
৬২৮. সহিহ মুসলিম: ৮৯৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৪৫, আমাল: ৯৪০, নাসাঈ, আমাল: ৩০২, ইবনুস সুন্নি।
৬২৯. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৭২৭, মুসনাদে আহমাদ ২/২৬৮, আলআদাব: ৯০৬, আমাল: ৯২৯, নাসাঈ, আলফুতুহাত ৪/২৭২।
৬৩০. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯৯, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৯০, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৯০, আলআদাব: ৬৮৬, আমাল: ৯১৭, নাসাঈ, আমাল: ৩০২, ইবনুস সুন্নি।
৬৩১. সুনানে তিরমিজি: ২২৫৩, মুসনাদে আহমাদ ৫/১২৩, আলআদাব: ৭১৯, আমাল: ৯৩৩, নাসাঈ, আমাল: ২৯৮, ইবনুস সুন্নি।
৬৩২. ইবনুস সুন্নি: ২৯৯, আলআদাব: ৭১৮, মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২৮৬।
৬৩৩. ইবনুস সুন্নি: ২৮৪।
৬৩৪. সুরা কামার: ১৯।
৬৩৫. জারিয়াত: ৪১।
৬৩৬. সুরা হিজর: ২২।
৬৩৭. সুরা রুম: ৪৬।
৬৩৮. কিতাবুল উম্ম ১/২৫২।
৬৩৯. ইবনুস সুন্নি: ৬৫৩।
৬৪০. কিতাবুল উম্ম ১/২৫৩।
৬৪১. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৪৬, আলআদাব: ৭২১, মুসনাদে আহমাদ ২/১০০, আমাল: ৯২৭, নাসাঈ, আমাল: ৩০৩, ইবনুস সুন্নি, আলফুতুহাত ৪/২৮৩।
৬৪২. মুয়াত্তা মালেক ২/৯৯২।
৬৪৩. সুরা রাদ: ১৩।
৬৪৪. কিতাবুদ্দুআ: ৯৮৫, তাবারানি।
৬৪৫. সহিহ বুখারি: ১০৩২।
৬৪৬. সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৮৯।
৬৪৭. কিতাবুল উম্ম ১/২২৩।
৬৪৮. সহিহ বুখারি: ৮৪৬, সহিহ মুসলিম: ৭১, মুয়াত্তা মালেক ১/১৯২, সুনানে আবু দাউদ: ৩৯০৬, সুনানে নাসাঈ ৩/১৬৫, আমাল: ৯২৫, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৪/১১৭।
৬৪৯. পূর্বের সংস্করণে এ অংশের অনুবাদ নেই। উ.
৬৫০. সহিহ বুখারি: ১০১৩, সহিহ মুসলিম: ৮৯৭, মুসনাদে আহমাদ ৩/১০৪, সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৪, সুনানে নাসাঈ ৩/১৫৯।
📄 তারাবির নামাজের জিকির
সকল উলামায়ে কেরামের মতে, তারাবির নামাজ সুন্নাত। তারাবির নামাজ বিশ রাকাত। প্রতি দুই রাকাত অন্তর অন্তর সালাম ফিরাবে। তারাবির নামাজের পদ্ধতি অন্যান্য নামাজের মতই। যার বিবরণ পূর্বে বিস্তারিত দেয়া হয়েছে। পূর্বে নামাজের অধ্যায়ে বর্ণিত সকল জিকির-আজকার এ নামাজে পড়বে। যেমন গানা, ও অন্যান্য জিকির পুরোপুরিভাবে পড়বে। তাশাহুদ ও তাশাহুদের পরের দুআ পুরাপুরি পড়বে।
যদিও এটা প্রসিদ্ধ যে, এই নামাজের পদ্ধতি অন্যান্য নামাজের মতই। উদাসীনতার কারণে অনেক দুআ, জিকির মানুষ ছেড়ে দেয়। তাই এখানে আমি সতর্ক করেছি।
তারাবির কিরাতের বিষয়ে অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের বক্তব্য ও মানুষের আমল হল- পুরো মাসে একবার কুরআনে কারিম খতম করা। প্রতিদিন এক পারা করে পড়া। তারতিলের সাথে ও স্পষ্ট করে তিলাওয়াত করা। এক পারার বেশি না পড়া। অধিকাংশ মসজিদের মূর্খ ইমামরা যে রমজান মাসের সপ্তম রাতের শেষ রাকাতে পুরা সুরা আনআম এক সঙ্গে পড়ে থাকে- তাদের ধারণা এই যে, এটি এক সঙ্গে নাজিল হয়েছে। এ থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ, এটি খুবই ঘৃণ্য বিদআত ও প্রকাশ্য মূর্খতা। যাতে অনেক ফাসাদ রয়েছে।
📄 সালাতুল হাজত ও সালাতুত তাসবিহের দুআ
সালাতুল হাজতের দুআ
(৪৬৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন আবু আউফা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যদি আল্লাহর কাছে বা কোন বান্দার কাছে কারো কোন প্রয়োজন দেখা দেয়, তাহলে সে যেন ভালো ভাবে অজু করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে। আল্লাহর প্রশংসা, গুণকীর্তন করে। নবির ওপর দরুদ পড়ে, এরপর এ দুআ পড়ে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الحَلِيمُ الْكَرِيمُ ، سُبْحَانَ اللهِ، رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، أَسْأَلُكَ مُوجِبَاتِ رَحْمَتِكَ، وَعَزَائِمَ مَغْفِرَتِكَ، وَالْغَنِيمَةَ مِنْ كُلَّ بِرَّ، وَالسَّلَامَةَ مِنْ كُلِّ إِثْمٍ، لَا تَدَعْ لِي ذَنْبًا إِلَّا غَفَرْتَهُ، وَلَا هَمَّا إِلَّا فَرَّجْتَهُ، وَلَا حَاجَةً هِيَ لَكَ رِضًا إِلَّا قَضَيْتَهَا، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
উচ্চারণ: লাইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আজ্জা যারুকা ওয়া জাল্লা সানাউকা। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আসআলুকা মুযিবাতি রাহমাতিক, ওয়া আজায়িমি মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররিন, ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইসমিন। লা তাদা লি জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়া হাজাতান হিয়া লাকা রিদান ইল্লা কাদাইতাহা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই, যিনি অতি মহান অত্যন্ত সহনশীল। মহান আরশের অধিপতির পবিত্রতা ঘোষণা করছি। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর নিমিত্ত। হে আল্লাহ, আপনার রহমতের হেতুসমূহ, আপনার ক্ষমার সঙ্কল্প, সকল পুণ্যের সুযোগ, সবধরনের পাপ থেকে মুক্তি কামনা করি। আমার সকল অপরাধ মাফ করে দিন, সকল দুশ্চিন্তা লাঘব করে দিন এবং সে সকল প্রয়োজন, যাতে আপনার সন্তুষ্টি নিহিত, আপনি তা পূরণ করে দিন হে সর্বোচ্চ দয়ালু। -ইমাম হাকেম বলেন, হাদিসটি সহিহ মুসলিমের শর্ত-মাফিক সহিহ। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসের সনদে সমস্যা আছে। ৬৫১
ইমাম নববি রহ. বলেন, বিপদাপদের দুআটিও পড়বে-
اللَّهُمَّ آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। ৬৫২
(৪৭০) হজরত উসমান বিন হুনাইফ রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, এক অন্ধ ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমার জন্য আল্লাহর কাছে দুআ করেন, তিনি যেন আমাকে সুস্থ করে দেন। নবিজি বললেন, তুমি চাইলে আমি দুআ করব। আর চাইলে তুমি ধৈর্যধারণ কর, তা তোমার জন্য অনেক উত্তম হবে। লোকটি বললেন, আপনি দুআ করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি ভালোভাবে অজু করে এ দুআ করবে-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ، وَأَتَوَجَّهُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ نَبِيَّ الرَّحْمَةِ، إِنِّي تَوَجَّهْتُ بِكَ إِلَى رَبِّي فِي حَاجَتِي هَذِهِ لِتُقْضَى لِيَ اللَّهُمَّ فَشَفَعْهُ فِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ওয়া আতাওয়াজ্জাহু ইলাইকা বি- নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যির রাহমাহ। ইয়া মুহাম্মাদ, ইন্নি তাওয়াজ্জাহতু বিকা ইলা রাব্বি ফি হাজাতি হাজিহি লিতুকদা লিয়া, আল্লাহুম্মা ফা-শাফফিহু ফিয়্যা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছে প্রার্থনা করি। আপনার রহমতের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওসিলায় দুআ করছি। হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আমি আপনার ওসিলায় আমার রবের অভিমুখী হয়েছি আমার এই প্রয়োজন পূরণের জন্য। হে আল্লাহ, অতএব আমার ব্যাপারে তার শাফাআত কবুল কর। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, এই হাদিস হাসান সহিহ। ৬৫৩
সালাতুত তাসবিহের দুআ: সুনানে তিরমিজিতে আছে- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের থেকে কিছু হাদিস সালাতুত তাসবিহ সম্পর্কে এসেছে। সেগুলোর বেশির ভাগই সহিহ নয়। ইমাম তিরমিজি বলেন, আবদুল্লাহ বিন মুবারক ও অনেক উলামায়ে কেরাম সালাতুত তাসবিহের কথা বলেন। তারা এ নামাজের অনেক ফজিলতের কথাও বলেন। ৬৫৪ ইমাম তিরমিজি রহ. আবু ওয়াহবের সূত্রে আবদুল্লাহ বিন মুবারক থেকে বর্ণনা করেন যে, তাকে এই নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন-
يُكَبِّرُ ثُمَّ يَقُوْلُ : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إلَهَ غَيْرُكَ، ثُمَّ يَقُوْلُ - خَمْسَ عَشْرَةَ مَرَّةً - : سُبْحَانَ اللهِ، ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ يَتَعَوَّذُ وَيَقْرَأُ : بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ وَفَاتِحَة الْكِتَابِ، وَسُورَةً، ثُمَّ يَقُوْلُ - عَشْرَ مَرَّاتٍ - : sُبْحَانَ اللهِ، ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ، ثُمَّ يَرْكَعُ فَيَقُوْلُهَا عَشْرًا، ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ فَيَقُوْلُهَا عَشْرًا، ثُمَّ يَسْجُدُ فَيَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ يَرْفَعُ رَأْسَهُ فَيَقُولُهَا عَشْرًا، ثُمَّ يَسْجُدُ الثَّانِيَةَ فَيَقُوْلُهَا عَشْرًا، يُصَلِّي أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ عَلَى هَذَا، فَذَلِكَ خَمْسٌ وَسَبْعُوْنَ تَسْبِيحَةً في كُلِّ رَكْعَةٍ يَبْدَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ بِخَمْسَ عَشْرَةَ تَسْبِيحَةً، ثُمَّ يَقْرَأُ، ثُمَّ يُسَبِّحُ عَشْرًا، فَإِنْ صَلَّى لَيْلًا فَأَحَبُّ إِلَيَّ أَنْ يُسَلَّمَ فِي الرَّكْعَتَيْنِ، وَإِنْ صَلَّى نَهَارًا فَإِنْ شَاءَ سَلَّمَ وَإِنْ شَاءَ لَمْ يُسَلَّمْ .
অর্থ: তাকবিরে তাহরিমা বলার পর পড়বে- سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، وَتَبَارَكَ اسْمُكَ، وَتَعَالَى جَدُّكَ، وَلَا إِلَهَ غَيْرُكَ.
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা, ওয়া লা ইলাহা গাইরুক।
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনার পবিত্রতার গুণগান করি, আপনার নাম বরকতময় এবং আপনার বড়ত্ব সুউচ্চ। আর আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। -এরপর পনেরো বার এই তাসবিহটি পড়বে-
سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়ালা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা পবিত্র সত্তা। যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি মহান। -এরপর আউজুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ বলে সুরা ফাতিহা পড়বে ও অন্য সুরা মিলাবে। তারপর উক্ত তাসবিহ দশবার পড়বে। রুকুতে গিয়ে সে তাসবিহ দশবার পড়বে। রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে দাঁড়িয়ে দশবার পড়বে। এরপর সিজদায় দশবার পড়বে। দুই সিজদার মাঝে দশবার পড়বে। দ্বিতীয় সিজদায় দশবার পড়বে। এভাবে চার রাকাত নামাজ পড়বে। ফলে প্রতি রাকাতে ৭৫ বার তাসবিহ পড়া হবে। ১৫ তাসবিহের মাধ্যমে শুরু করবে, কিরাতের পর আবার দশবার পড়বে। রাতে নামাজ পড়লে দুই রাকাতের পর সালাম ফেরানো আমি উত্তম মনে করি। আর দিনে পড়লে সালাম ফেরাতেও পারে আবার নাও ফিরাতে পারে। ৬৫৫
আবদুল্লাহ বিন মুবারক থেকে অপর বর্ণনায় আছে- রুকুতে গিয়ে প্রথমে রুকুর তাসবিহ পড়বে এবং সিজদাতেও প্রথমে সিজদার তাসবিহ পড়বে। এরপর উক্ত তাসবিহ পড়বে। আবদুল্লাহ বিন মুবারককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- যদি এই নামাজে ভুল হয়, তবে কি সিজদায়ে সাহুতে দশ দশবার করে তাসবিহ পড়বে? তিনি বলেন, না। বরং এই নামাজটি হল, ৩০০ তাসবিহের।
(৪৭১) হজরত আবু রাফে রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাসকে বলেছেন-
يَا عَمَّ، أَلَا أَصِلُكَ، أَلَا أَحْبُوكَ ، أَلَا أَنْفَعُكَ؟ قَالَ: بَلَى يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ: يَا عَمِّ، صَلِّ أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ تَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُوْرَةٍ، فَإِذَا انْقَضَتِ الْقِرَاءَةُ فَقُلِ: اللهُ أَكْبَرُ ، وَالْحَمْدُ لِلهِ ، وَسُبْحَانَ اللَّهِ، خَمْسَ عَشْرَةَ مَرَّةً قَبْلَ أَنْ تَرْكَعَ، ثُمَّ ارْكَعْ فَقُلْهَا عَشْرًا، ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا، ثُمَّ اسْجُدْ فَقُلْهَا عَشْرًا، ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا، ثُمَّ اسْجُدْ فَقُلْهَا عَشْرًا، ثُمَّ ارْفَعْ رَأْسَكَ فَقُلْهَا عَشْرًا قَبْلَ أَنْ تَقُوْمَ، فَذَلِكَ خَمْسُ وَسَبْعُوْنَ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ، وَهِيَ ثَلَاثُ مِائَةٍ فِي أَرْبَعِ رَكَعَاتٍ، وَلَوْ كَانَتْ ذُنُوبُكَ مِثْلَ رَمْلِ عَالِجٍ غَفَرَهَا اللَّهُ لَكَ. قَالَ : يَا رَسُولَ اللهِ ، وَمَنْ يَسْتَطِيعُ أَنْ يَقُوْلَهَا فِي يَوْمٍ؟ قَالَ: إِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ أَنْ تَقُوْلَهَا فِي يَوْمٍ فَقُلْهَا فِي جُمْعَةٍ، فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ أَنْ تَقُوْلَهَا فِي جُمُعَةٍ فَقُلْهَا فِي شَهْرٍ. فَلَمْ يَزَلْ يَقُوْلُ لَهُ حَتَّى قَالَ: قُلْهَا فِي سَنَةٍ .
অর্থ: হে চাচা, আমি কি আপনার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করব না, আপনাকে উপহার দেব না, আপনার উপকার করব না? তিনি বললেন, অবশ্যই। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে চাচা, আপনি চার রাকাত নামাজ পড়ুন। প্রত্যেক রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য আরেকটি সুরা পড়বেন। কিরাত শেষে রুকুর আগে এ দুআটি ১৫ বার পড়বেন-
اللهُ أَكْبَرُ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَسُبْحَانَ اللهِ،
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়া সুবহানাল্লাহ। অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, যাবতীয় প্রশংসা তাঁরই। আমি তাঁরই পবিত্রতা বর্ণনা করছি। – এরপর রুকুতে দশবার। রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে দশবার। সিজদায় দশবার। সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে দশবার। দ্বিতীয় সিজদায় দশবার। দ্বিতীয় সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে দশবার। প্রতি রাকাতে মোট ৭৫ বার। চার রাকাতে মোট ৩০০ তিনশত বার হবে।
যদি আপনার পাপরাশি মরুভূমির বালুকারাশির সমানও হয়, তবুও আল্লাহ তাআলা মাফ করে দিবেন। চাচা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, প্রতিদিন কে এই নামাজ পড়তে সক্ষম? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি প্রতিদিন এই আমল করতে না পারেন তাহলে প্রতি জুমুআর দিন এই আমল করবেন। যদি প্রতি জুমুআয়ও আমল করতে না পারেন, তাহলে প্রতি মাসে একবার আমল করবেন। তিনি এভাবে তাকে বলতে বলতে শেষে বললেন, যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে প্রতিবছর একবার আমল করবেন। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি গারিব। ৬৫৬
ইমাম নববি রহ. বলেন- ইমাম আবু বকর বিন আরাবি রহ. সুনানে তিরমিজির ব্যাখ্যাগ্রন্থ “তুহফাতুল আহওয়াজি” কিতাবে উল্লেখ করেছেন, আবু রাফের উক্ত হাদিসটি দুর্বল। হাসানও নয় সহিহও নয়। ইমাম তিরমিজি রহ. মানুষকে সতর্ক করার জন্য এটি উল্লেখ করেছেন। হজরত উকাইলি রহ. বলেন, সালাতুত তাসবিহ বিষয়ে কোন প্রমাণযোগ্য হাদিস নেই।
নববি রহ. বলেন- ইমাম দারাকুতনি রহ. বলেন, সুরাসমূহের ফজিলতের বিষয়ে সবচেয়ে সহিহ হাদিস এসেছে সুরা ইখলাসের ফজিলতের বিষয়ে। আর নামাজের ফজিলাতের বিষয়ে সবচেয়ে সহিহ হাদিস এসেছে সালাতুত তাসবিহের নামাজের বিষয়ে। তবে ইমাম দারাকুতনির বক্তব্য দ্বারা এটি বোঝা যায় না যে, সালাতুত তাসবিহের হাদিস সহিহ। বরং এ কথা বলার দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য থাকে প্রাধান্য দেয়া। যদিও সেই হাদিসটি দুর্বল হয়।
ইমাম নববি রহ. আরো বলেন, আমাদের একদল উলামায়ে কেরাম, সালাতুত তাসবিহের নামাজকে মুস্তাহাব বলেছেন। তাদের মাঝে রয়েছেন, আবু মুহাম্মাদ বাগাবি রহ. ও আবুল মাহাসিন রুয়ানি রহ.।
ইমাম রুয়ানি রহ. বলেন, সালাতুত তাসবিহ পড়া চাই। সর্বদায় এটা পড়ার অভ্যাস করা চাই। এতে উদাসীনতা না করা। অনুরূপভাবে আবদুল্লাহ বিন মুবারকসহ অনেকেই এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ৬৫৭
টিকাঃ
৬৫১. সুনানে তিরমিজি: ৪৭৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২০, আলফুতুহাত ৪/২৯৮।
৬৫২. উ.
৬৫৩. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৫, আমাল: ৬৫৮, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩১৩।
৬৫৪. সুনানে তিরমিজি ২/২০৫।
৬৫৫. সুনানে তিরমিজি: ২০৫২।
৬৫৬. সুনানে তিরমিজি: ৪৮২, সুনানে আবু দাউদ: ১২৯৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৮৬, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩১৭।
৬৫৭. ইমাম আবদুল হাই লাকনাভি রহ. "জাফারুল আমানি" বইয়ে এই হাদিসের সনদের ওপর বিশ্লেষণ করে বলেছেন, হাদিসটি হাসান স্তরের। অতএব, এর ওপর নিঃসঙ্কোচে আমল করা উচিত।