📄 জিলহজ মাসের প্রথম দশকের আমল
আল্লাহ তাআলা বলেন- وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُوْمُتٍ.
অর্থ: তারা নির্দিষ্ট কিছু দিনে আল্লাহর জিকির করে। ৬১২
আবদুল্লাহ ডবন আব্বাস রাদি., ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে أَيَّامٍ مَّعْلُوْمَتٍ (নির্দিষ্ট কিছু দিন) দ্বারা উদ্দেশ্য হল জিলহজ মাসের প্রথম দশক।
জিলহজের প্রথম দশকে অন্যান্য দিন থেকে বেশি জিকির করা মুস্তাহাব। প্রথম দশকের মধ্যে নবম তারিখে অন্যদিনের তুলনায় বেশি জিকির করা চাই।
(৪৪৩) হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا الْعَمَلُ فِي أَيَّامِ الْعَشْرِ أَفْضَلَ مِنَ الْعَمَلِ فِي هَذِهِ . قَالُوا: وَلَا الْجِهَادُ؟ قَالَ: وَلَا الْجِهَادُ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَيْءٍ.
অর্থ: এই দিনগুলোর আমলের চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই। সাহাবায়ে কেরام বললেন, জিহাদও উত্তম নয়? তিনি বললেন না, এরচে জিহাদও উত্তম নয়। তবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের জান-মালের আশঙ্কা নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়েছে এরপর সে কিছুই নিয়ে আসতে পারেনি, তার মর্যাদা এরচে বেশি। ৬১৩- সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় রয়েছে-
مَا مِنْ أَيَّامِ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ، مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ الْعَشْرِ.
(৪৪৪) মুসনাদে দারিমিতে সহিহাইনের সনদে বর্ণনা করেছেন, সেখানে এসেছে-
مَا الْعَمَلُ فِي أَيَّامٍ أَفْضَلُ مِنَ الْعَمَلِ فِي عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ. قِيلَ: وَلَا الْجِهَادُ؟
অর্থ: জিলহজের দশ দিনের আমল অপেক্ষা উত্তম কোন আমল নেই।... (বাকি হাদিস আগেরটির মতই) ৬১৪
(৪৪৫) হজরত আমার বিন শুআইব রহ. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উত্তম দুআ হল আরাফার দিনের দুআ। আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবিগণ যা বলেছেন, তার মধ্যে উত্তম কথা হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। -ইমাম তিরমিজি রহ. এটাকে দুর্বল বলেছেন। ৬১৫
(৪৪৬) মুয়াত্তা মালেকে মুরসাল সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উত্তম দুআ হল আরাফার দিনের দুআ। আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবিদের উত্তম কথা হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তার কোন শরিক নেই। ৬১৬
হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত- তিনি আরাফার দিন এক ব্যক্তিকে মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে দেখলেন। তিনি বললেন, হে নির্বোধ, আজকের দিন তুমি আল্লাহর কাছে না চেয়ে মানুষের কাছে চাচ্ছো! ৬১৭
ইমাম বুখারি রহ. বলেন- উমর রাদি. মিনায় তাবুতে থেকে তাকবির বলতেন, মসজিদের সকলেই তা শুনতে পেত। তখন তারাও তাকবির বলত। দোকান-পাটের লোকেরাও তাকবির বলত, ফলে তাকবিরের ধ্বনিতে মিনায় কম্পন শুরু হয়ে যেত। ৬১৮
ইমাম বুখারি রহ. বলেন, হজরত ইবনে উমর রাদি. ও আবু হুরায়রা রাদি. উভয়ে তাকবিরে তাশরিকের দিবসগুলোতে বাজারে চলে যেতেন। সেখানে তাকবির বলতেন। তাদের দেখে অন্যরাও তাকবির বলত।
টিকাঃ
৬১২. সুরা হজ: ২৮।
৬১৩. সহিহ বুখারি: ৯৬৯, সুনানে আবু দাউদ: ২৪৩৮, সুনানে তিরমিজি: ৭৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭২৭।
৬১৪. সুনানে দারিমি: ১৭৮০।
৬১৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৯।
৬১৬. মুয়াত্তা মালেক ১/২১৪।
৬১৭. হিলইয়াতুল আউলিয়া ২/১৯৪।
৬১৮. সহিহ বুখারি ২/৪৬১।
📄 সূর্য গ্রহণকালের দুআ
চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণকালে বেশি বেশি জিকির, দুআ করা এবং সকল মুসলমান একত্রিত হয়ে নামাজ পড়া সুন্নাত।
(৪৪৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ الشَّمْسَ وَالقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ لَا يُخْسَفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَادْعُوا اللَّهَ تَعَالَى وَكَبِرُوْا وَتَصَدَّقُوْا.
অর্থ: চন্দ্র-সূর্য আল্লাহর বড় দুটি নিদর্শন। কারো জন্ম বা মৃত্যুতে চন্দ্র-সূর্য গ্রহণ লাগে না। যদি কখনো এমন গ্রহণ হতে দেখ, তাহলে আল্লাহর কাছে দুআ করবে, তাকবির বলবে এবং দান-সাদকা করবে। -অন্য বর্ণনায় আছে, 'যদি এমন দেখ তাহলে খুব ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহর জিকির, দুআ ও ইস্তেগফার পড়। -অন্য বর্ণনায় আছে, যদি এমন দেখ, তখন দুআ ও নামাজ আদায় কর। ৬১৯
(৪৪৮) হজরত আবদুর রহমান বিন সামুরা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ كَسَفَتِ الشَّمْسُ وَهُوَ قَائِمُ فِي الصَّلَاةِ رَافِعُ يَدَيْهِ، فَجَعَلَ يُسَبِّحُ وَيَحْمَدُ وَيُهَلِّلُ وَيُكَبِّرُ وَيَدْعُوْ، حَتَّى حُسِرَ عَنْهَا، فَلَمَّا حُسِرَ عَنْهَا قَرَأَ سُوْرَتَيْنِ، وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ.
অর্থ: আমি সূর্য গ্রহণকালে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম, তখন তিনি নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন। দুই হাত উঠিয়ে তাসবিহ, তাকবির, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহর প্রশংসা এবং দুআ পড়ছিলেন। এভাবে সূর্যগ্রহণ কেটে যাওয়া পর্যন্ত করছিলেন। যখন সূর্য গ্রহণ কেটে গেলে তিনি দুটি সুরা পড়লেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। ৬২০
সূর্যগ্রহণের নামাজে দীর্ঘ কিরাত পড়া মুস্তাহাব
প্রথম রাকাতে সুরা বাকারার সমপরিমাণ পড়বে। দ্বিতীয় রাকাতে ২০০ আয়াত সমপরিমাণ পড়বে। তৃতীয় রাকাতে ১৫০ আয়াত ও চতুর্থ রাকাতে ৫০ আয়াত সমপরিমাণ পড়বে।
প্রথম রুকুতে একশ আয়াত পরিমাণ দীর্ঘ তাসবিহ পড়বে। দ্বিতীয় রুকুতে ৭০ আয়াত পরিমাণ, তৃতীয় রুকুতেও অনুরূপ। চতুর্থ রাকাতে ৫০ আয়াত পরিমাণ তাসবিহ পড়বে। সিজদা রুকুর মতো দীর্ঘ করবে। প্রথম সিজদা প্রথম রুকুর মতো। দ্বিতীয় সিজদা দ্বিতীয় রুকুর মতো। এ পদ্ধতিই বিশুদ্ধ।
যদি এই দীর্ঘ কিরাত, রুকু, সিজদা ইত্যাদি না করে শুধু সুরা ফাতিহা ও কিরাত পড়ে নামাজ শেষ করে দেয়, তাহলেও নামাজ হয়ে যাবে।
চন্দ্রগ্রহণের নামাজে উচ্চস্বরে কিরাত পড়া সুন্নাত। আর সূর্যগ্রহণের নামাজে নিম্নস্বরে কিরাত পড়া সুন্নাত। নামাজের পর দুটি খুতবা প্রদান করবে। খুতবায় মানুষকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখাবে। মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত করবে। দান-সাদকা ও গোলাম আযাদের প্রতি উৎসাহিত করবে। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ সহিহ হাদিস রয়েছে। মানুষকে আল্লাহর নেয়ামতের শোকরিয়া আদায়ের উৎসাহিত করবে। উদাসীনতা ও ধোঁকা থেকে বাঁচতে সতর্ক করবে।
(৪৪৯) হজরত আসমা রাদি. থেকে বর্ণিত-
لَقَدْ أَمَرَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْعَتَاقَةِ فِي كُسُوْفِ الشَّمْسِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় দাস-দাসী আযাদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ৬২১
টিকাঃ
৬১৯. সহিহ বুখারি: ১০৪৪, ৮৬, সহিহ মুসলিম: ৯০১, ৯০৭, মুয়াত্তা মালেক ১/১৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৭, সুনানে তিরমিজি: ৫৬১, সুনানে নাসাঈ ৩/১২৭।
৬২০. সহিহ মুসলিম: ৯১৩, সুনানে আবু দাউদ: ১১৯৫, সুনানে নাসাঈ ৩/১২৫।
৬২১. সহিহ বুখারি: ১০৫৪।
📄 সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার দুআ
বৃষ্টি প্রার্থনার সময় বিনয় ও কাকুতি-মিনতি করে বেশি বেশি দুআ, জিকির ও ইস্তেগফার করবে। এ ব্যাপারে এ দুআটি প্রসিদ্ধ-
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْئاً مُغِيْئاً هَنِيْئاً مَرِيْئاً غَدَقًا مُجَلَّلًا سَحًّا عَامًّا طَبَقاً دَائِماً. اللَّهُمَّ عَلَى الطَّرَابِ وَمَنابِتِ الشَّجَرِ : وَبُطُوْنِ الْأَوْدِيَةِ. اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَغْفِرُكَ إِنَّكَ كُنْتَ غَفَّاراً، فَأَرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْنَا مِدْرَاراً اللَّهُمَّ اسْقِنَا الْغَيْثَ وَلَا تَجْعَلْنَا مِنَ الْقَانِطِينَ. اللَّهُمَّ أَنْبِتْ لَنَا الزَّرْعَ ، وَأَدِرَّ لَنَا الضَّرْعَ، وَاسْقِنَا مِنْ بَرَكَاتِ السَّمَاءِ، وَأَنْبِتْ لَنَا مِنْ بَرَكَاتِ الْأَرْضِ اللَّهُمَّ ارْفَعْ عَنَّا الْجَهْدَ وَالْجُوْعَ وَالْعُرْيَ، وَاكْشِفْ عَنَّا مِنَ الْبَلَاءِ مَا لَّا يَكْشِفُهُ غَيْرُكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকিনা গাইসান মুগিসান হানিআন মারিআন গাদিকান মুযাল্লিলান সাহহান আম্মান তাবাকান দায়িমান। আল্লাহুম্মা আলাজ্জিরাবি ওয়া মানাবিতিশ শাজারি ওয়া বুতুনিল আউদিয়াহ। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাগফিরুকা ইন্নাকা কুনতা গাফফারা। ফাআরসিলিস সামাআ আলাইনা মিদরারা। আল্লাহুম্মাসকিনাল গাইসা ওয়ালা তাযআলনা মিনাল কানিতিন। আল্লাহুম্মা আনবিত লানাজ্জারআ, ওয়া আদিররা লানাদ্দারআ, ওয়াসকিনা মিন বারাকাতিস সামায়ি, ওয়া আনবিত লানা মিন বারাকাতিল আরদ। আল্লাহুম্মারফা আন্না যাহদা ওয়াযুআ ওয়াল উরইয়া ওয়াকশিফ আন্না মিনাল বালায়ি মা লা ইয়াকশিফুহু গাইরুক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের ওপর নাজিল করুন অনুকুল বৃষ্টি, তৃপ্তিকর সবুজ ফলানো বারিধারা, যা উপকারে আসবে ক্ষতি করবে না। পর্যাপ্ত বৃষ্টি, সকলের জন্য উপকারী, প্রবাহিত, ব্যাপক স্তরবিশিষ্ট, প্রয়োজন অনুসারে। হে আল্লাহ, বৃষ্টি দিন পাহাড়ে, গাছপালায় এবং উপত্যকায়। হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, নিশ্চয় আপনি বড় ক্ষমাশীল। অতএব, আমাদের ওপর অসজ্র বৃষ্টি বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন, আমাদেরকে হতাশ করবেন না। হে আল্লাহ, আমাদের জন্য শস্য উৎপাদন করুন, আমাদের গবাদির স্তনে প্রচুর পরিমাণে দুধ দিন। আমাদেরকে আসমানের বরকত দ্বারা ধন্য করুন এবং জমিনের বরকত উৎপন্ন করুন। আমাদের ওপর থেকে কাঠিন্যতা, ক্ষুধা, বস্ত্রহীনতা দূর করুন। আমাদের বিপদাপদ দূর করুন, যা আপনি ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারবে না। লোকদের প্রসিদ্ধ কোন বুজুর্গ ও নেক ব্যক্তি থাকলে তার ওসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করবে। যেমন এভাবে বলতে পারে-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَسْقِي وَنَتَشَفَعُ إِلَيْكَ بِعَبْدِكَ فُلَانٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাসকি ওয়া নাতাশাফফাউ ইলাইকা বি- আবদিকা ফুলান।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার অমুক (উদ্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নিবে) বান্দার ওসিলায় আমরা বৃষ্টি কামনা করি। ৬২২
(৪৫০) বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে-
أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ كَانَ إِذَا قَحَطُوْا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِيْنَا، وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمَّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا فَيُسْقَوْنَ.
অর্থ: উমর রাদি. এর যুগে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি আব্বাস রাদি. এর ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন। উমর রাদি. বলতেন, হে আল্লাহ, আমরা নবিকে ওসিলা দিয়ে আপনার কাছে বৃষ্টি চেয়েছি, আপনি বৃষ্টি দিয়েছেন। এখন আমরা নবির চাচার ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। অতএব, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন। অতঃপর বৃষ্টি হত। -মুআবিয়া রাদি. ও অন্যদের থেকে নেককারদের ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনার বিষয়টি এসেছে।
মুস্তাহাব হল, ইস্তিস্কার নামাজে ঐ কিরাতই পড়বে, যা ঈদের নামাজে পড়া হয়। প্রথম রাকাতের শুরুতে সাতবার তাকবির বলবে এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচবার, ঈদের নামাজের মতো। ঈদের নামাজে ছোটখাট যত মাসায়েল আছে, সেগুলো এখানে প্রযোজ্য হবে। তারপর দুটি খুতবা প্রদান করবে। এতে বেশি বেশি ইস্তিগফার ও দুআ করবে। ৬২৩
(৪৫১) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাওয়াক নামক স্থানে এই দুআটি পড়লেন। অতঃপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْئًا مُغِيْئًا مَرِيئًا مَرِيعًا نَافِعًا غَيْرَ ضَارٌّ عَاجِلًا غَيْرَ آجِلٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকিনা গাইসান মুগিসান, মারিআন মারিআন, নাফিআন, গায়রা দাররিন, আযিলান গায়রা আযিল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের উপর নাজিল করুন অনুকুল বৃষ্টি, তৃপ্তিকর সবুজ ফলানো বারিধারা, যা উপকারে আসবে, ক্ষতিকর হবে না। এক্ষুণি দিন, বিলম্ব করবেন না। ৬২৪
(৪৫২) হজরত আমর বিন শুআইব তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন তখন এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ، وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ، وَأَحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকি ইবাদাকা ওয়া বাহায়িমাকা ওয়ানশুর রাহমাতাকা ওয়া আহয়ি বালাদাকাল মায়্যিত।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আপনার বান্দাদেরকে ও প্রাণীদেরকে দৃষ্টি দিন। আপনার রহমত ব্যাপক করে দিন। মৃত শহরকে সজীব করে দিন। ৬২৫
(৪৫৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে-
شَكَا النَّاسُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُحُوْطَ الْمَطَرِ، فَأَمَرَ بِمِنْبَرٍ فَوُضِعَ لَهُ فِي الْمُصَلَّى ، وَوَعَدَ النَّاسَ يَوْمًا يَخْرُجُوْنَ فِيْهِ. قَالَتْ عَائِشَةُ: فَخَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ بَدَا حَاجِبُ الشَّمْسِ فَقَعَدَ عَلَى الْمِنْبَرِ، فَكَبَّرَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَحَمِدَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّكُمْ شَكَوْتُمْ جَدْبَ دِيَارِكُمْ وَاسْتِنْخَارَ الْمَطَرِ عَنْ إِيَّانِ زَمَانِهِ عَنْكُمْ، وَقَدْ أَمَرَكُمُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ تَدْعُوهُ، وَوَعَدَكُمْ أَنْ يَسْتَجِيْبَ لَكُمْ. ثُمَّ قَالَ }: الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ } { الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ { مَلِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ، اللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ، وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلَاغًا إِلَى حِينٍ". ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ، فَلَمْ يَزَلْ فِي الرَّفْعِ حَتَّى بَدَا بَيَاضُ إِبْطَيْهِ، ثُمَّ حَوَّلَ إِلَى النَّاسِ ظَهْرَهُ، وَقَلَبَ - أَوْ : حَوَّلَ - رِدَاءَهُ وَهُوَ رَافِعُ يَدَيْهِ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ، وَنَزَلَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، فَأَنْشَأَ اللَّهُ سَحَابَةً، فَرَعَدَتْ وَبَرَقَتْ، ثُمَّ أَمْطَرَتْ بِإِذْنِ اللهِ ، فَلَمْ يَأْتِ مَسْجِدَهُ حَتَّى سَالَتِ السُّيُولُ، فَلَمَّا رَأَى سُرْعَتَهُمْ إِلَى الْكِنَّ ضَحِكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرُ، وَأَنِّي عَبْدُ اللَّهِ، وَرَسُولُهُ."
অর্থ: মানুষজন রাসুলের কাছে অনাবৃষ্টির কথা বলল। মিম্বার আনতে বলতেন। মিম্বার এনে নামাজের স্থানে স্থাপন করা হল। তিনি মানুষদের থেকে একদিন বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার অঙ্গীকার নিলেন। একদিন সূর্য উঠার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তিনি মিম্বরে বসে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা করলেন। আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর বললেন, তোমরা এলাকায় বৃষ্টিহীনতার অভিযোগ করছ এবং বৃষ্টির সময় চলে যাওয়ার পরও বৃষ্টি না হওয়ার অভিযোগ করছ। আল্লাহ তোমাদের তার কাছে চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। এরপর তিনি এই বলে দুআ করতে লাগলেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ } { الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ } مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ اللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أُنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ، وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلَاغًا إِلَى حِينٍ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আর-রাহমানির রাহিম, মালিকি ইয়াউমিদ্দিন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইয়াফ আলু মা য়ুরিদ। আল্লাহুম্মা আনতাল্লাহু লা ইলাহা আনতাল গানিউ ওয়া নাহনুল ফুকারা, আনজিল আলাইনাল গাইসা, ওয়াযআল মা আনজালতা লানা কুওয়্যাতান ওয়া বালাগান ইলা হিন।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত জগতের পালনকর্তা। যিনি পরম দয়াপরবש বড় করুণাময়। যিনি প্রতিদান-দিবসের স্বত্ত্বাধিকারী। ৬২৬ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি যা ইচ্চা করেন। হে আল্লাহ, আপনিই আল্লাহ, আপনি ব্যতীত কোন কোন সত্য মাবুদ নেই। আপনি অমুখাপেক্ষী, আর আমরা আপনার মুখাপেক্ষী। আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন। যা বর্ষণ করেন তা আমাদের জন্য নির্ধারিত সময়ের জন্য শক্তি ও পাথেয় করুন।
এরপর তিনি তার হাত উপরে উঠালেন। তিনি উভয় হাত এতটুকু উঠালেন যে, তার বগলের শুভ্রতা দেখা যাচ্ছিল। এরপর তিনি মানুষের দিকে পিঠ দিলেন। হাত উঠানো অবস্থায় চাদর উল্টিয়ে ফেললেন। এরপর লোকজনদের দিকে ফিরলেন এবং মিম্বার থেকে অবতরণ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। তখন আল্লাহ তাআলা এক মেঘ সৃষ্টি করলেন। সে মেঘ বজ্রপাত ও বিদ্যুৎচমক করছিল। এরপর আল্লাহর নির্দেশে বৃষ্টি বর্ষণ করে। মসজিদে পৌঁছার আগেই বৃষ্টিতে বন্যা হয়ে গেল। তিনি বৃষ্টির পানি দ্রুত প্রবাহ হতে দেখে খুশিতে এভাবে হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত প্রকাশ পেয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আমি তাঁর বান্দা ও রাসুল। ৬২৭
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে, নামাজের আগে খুতবা দেয়া হবে। এমনটি সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে স্পষ্টভাবে আছে। সুতরাং নামাজের আগে খুতবা জায়েজ। কিন্তু অন্যান্য হাদিস ও ফিকহের কিতাবে আগে নামাজ পরে খুতবার কথা বলা হয়েছে। এটিই উত্তম।
আস্তে ও জোরে উভয়ভাবে দুআ করা মুস্তাহাব। দুআয় হাত অনেক উচুঁতে উঠানো চাই। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, দুআর মাঝে এটিও বলবে-
اللَّهُمَّ أَمَرْتَنَا بِدُعَائِكَ، وَوَعَدْتَنَا إِجَابَتَكَ، وَقَدْ دَعَوْنَاكَ كَمَا أَمَرْتَنَا، فَأَجِبْنَا كَمَا وَعَدْتَنَا، اللهُمَّ امْنُنْ عَلَيْنَا بِمَغْفِرَةِ مَا قَارَفْنَا، وَإِجَابَتِكَ فِي سُفْيَانًا وَسَعَةِ رِزْقِنَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আমারতানা বি-দুআয়িকা, ওয়া ওয়াআদতানা ইজাবাতাক, ওয়াকাদ দাআওনাকা কামা আমারতানা, ফা আযিবনা কামা ওয়া আদতানা। আল্লাহুম্মামনুন আলাইনা বি-মাগফিরাতি মা কারাফনা ওয়া ইযাবাতিকা ফি সুকয়ানা ওয়া সাআতি রিজকিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনাকেই ডাকতে আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাদের সাথে দুআ কবুল করার অঙ্গীকারও করেছেন। আপনার নির্দেশ-মাফিক আপনাকে বলেছি, সুতরাং অঙ্গীকার অনুযায়ী কবুল করুন। হে আল্লাহ, আমাদের গুনাহ ক্ষমা করতঃ, বৃষ্টির দুআ কবুল করতঃ এবং প্রশস্ত রিজিক দিয়ে আমাদের ওপর দয়া করুন। -মুমিন নারী ও পুরুষের জন্যও দুআ করবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়বে। দুআর মাঝে এক/দুটি আয়াত পড়বে। ইমাম বলবে- أَسْتَغْفِرُ اللهَ لِي وَلَكُمْ (আসতাগফিরুল্লাহা লি ওয়া লাকুম: আল্লাহর কাছে নিজের এবং তোমাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করি) বিপদাপদের দুআগুলোও পড়বে এবং এ দুআটিও পড়বে-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, ঈদের নামাজের মতই ইমাম ইস্তিস্কার নামাজে দুটি খুতবা দেবে। খুতবায় তাকবির বলবে, আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা করবে। দরুদ পড়বে। বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে। আর এ আয়াতটিও বেশি বেশি পড়বে-
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا.
অর্থ: তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছিড়ে দিবেন।
হজরত উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ইস্তিস্কা করেছেন। তাঁর পুরো দুআতেই ইস্তিগফার ছিল। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, উমর রাদি. এর প্রায় পুরা দুআটি ইস্তিগফার ছিল। তিনি দুআ শুরু করেছেন ইস্তিগফার দিয়ে; মাঝেও ইস্তিগফার করেছেন এবং দুআ শেষ করেছেন ইস্তিগফারের মাধ্যমে।
টিকাঃ
৬২২. কিতাবুল উম্ম ১/২৫১, ইমাম শাফেয়ি।
৬২৩. হানাফি মাজহাবের মতে, এই দুই রাকাত নামাজ অন্যান্য সাধারণ নামাজের মতো। শহরের বাইরে গিয়ে জামাতের সাথে পড়বে। কিরাত হবে উচ্চকণ্ঠে। নামাজান্তে খুতবা হবে একটি।
৬২৪. সুনানে আবু দাউদ: ১১৬৯।
৬২৫. সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৬।
৬২৬. তরজমা: অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন থেকে।
৬২৭. সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৩।
📄 প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ের দুআ
মানুষকে তাকওয়া, আনুগত্য ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন।
প্রচণ্ড বাতাস বইলে যে দুআ পড়বে (৪৫৪) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, প্রচণ্ড বাতাস বইলে নবিজি এদুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا فِيْهَا، وَخَيْرَ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا فِيْهَا، وَشَرِّ مَا أُرْسِلَتْ بِهِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি খাইরাহা ওয়া খাইরা মা ফিহা, ওয়া খাইরা মা উরসিলাত বিহ। ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি এ বাতাস ও বাতাসের মাঝে কল্যাণ চাই। আপনি যে কল্যাণের জন্য প্রেরণ করেছেন তা চাই। আমি এর অকল্যাণ ও এর মাঝের অকল্যাণ থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই। এটিকে যে অকল্যাণের জন্য পাঠানো হয়েছে তা থেকে পানাহ চাই। ৬২৮
(৪৫৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। তিনি বলেছেন-
الرَّيْحُ مِنْ رَوْحِ اللهِ ، تَأْتِي بِالرَّحْمَةِ وَتَأْتِي بِالْعَذَابِ، فَإِذَا رَأَيْتُمُوْهَا فَلَا تَسُبُّوْهَا، وَسَلُوا اللَّهَ خَيْرَهَا وَاسْتَعِيذُوا بِاللَّهِ، مِنْ شَرِّهَا.
অর্থ: বাতাস হল বান্দাদের প্রতি আল্লাহর রহমত। এটি কখনো আল্লাহর রহমত, কখনো আজাব নিয়ে আসে। যদি বাতাস বইতে থাকে, বাতাসকে তোমরা গালি দিও না। আল্লাহর কাছে এর কল্যাণ চাও এবং এর অকল্যাণ থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাও। ৬২৯
(৪৫৬) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যদি আকাশে মেঘ দেখতেন, নামাজে থাকলেও তা ছেড়ে দিতেন, এরপর এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররিহা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছে এর অকল্যাণ থেকে পানাহ চাই। -আর বৃষ্টি হলে পড়তেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাইয়্যিবান নাফিআহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, উপকারী বৃষ্টি বর্ষণ করুন। ৬৩০
(৪৫৭) হজরত উবাই বিন কাব রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা বাতাসকে গালি দিও না। যদি তোমাদের অপছন্দের কিছু দেখ তাহলে এ দুআ পড়-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ هَذِهِ الرِّيْحِ، وَخَيْرِ مَا فِيْهَا، وَخَيْرِ مَا أُمِرَتْ بِهِ، وَنَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ هَذِهِ الرِّيْحِ وَشِرِّ مَا فِيْهَا وَشَرِّ مَا أُمِرَتْ بِهِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা মিন খাইরি হাজিহির রিহি ওয়া খাইরি মা ফিহা, ওয়া খাইরি মা উমিরাত বিহ। ওয়া নাউজুবিকা মিন শাররি হাজিহির রিহি ওয়া শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উমিরাত বিহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি এ বাতাস ও বাতাসের মাঝে কল্যাণ চাই। আপনি যে কল্যাণের জন্য প্রেরণ করেছেন তা চাই। আমি এর অকল্যাণ ও এর মাঝের অকল্যাণ থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই। এটিকে যে অকল্যাণের জন্য পাঠানো হয়েছে তা থেকে পানাহ চাই। উক্ত হাদিসকে ইমাম তিরমিজি রহ. হাসান বলেছেন। ৬৩১
(৪৫৮) হজরত সালামা বিন আকওয়া রাদি. থেকে বর্ণিত, প্রচণ্ড বাতাস বইলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ لَقْحاً لَا عَقِيماً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকহান লা আকিমা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের এমন বৃষ্টি দাও যদ্দারা ফল-ফসল উৎপাদিত হয়। এমন বৃষ্টি দিও না যদ্দারা ফল-ফলাদি উৎপাদিত হয় না। ৬৩২
(৪৫৯) হজরত আনাস বিন মালেক ও জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا وَقَعَتْ كَبِيرَةُ، أَوْ هَاجَتْ رِيحٌ عَظِيمَةٌ، فَعَلَيْكُمْ بِالتَّكْبِيْرِ، فَإِنَّهُ يَجْلُوْ الْعَجَاجَ الْأَسْوَدَ.
অর্থ: যখন প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টিপাত হয়, তখন তোমরা বেশি বেশি তাকবির বল তথা আল্লাহু আকবার বল। কেননা তা কালো ধুলাবালিকে দূর করে। ৬৩৩
(৪৬০) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, প্রচণ্ড বেগে বাতাস বইলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নতজানু হয়ে হাঁটু গেড়ে বসে এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا رَحْمَةً وَلَا تَجْعَلْهَا عَذَاباً، اللهُمَّ اجْعَلْهَا رِيَاحاً وَلَا تَجْعَلْهَا رِيحاً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলহা রাহমাতান ওয়ালা তাযআলহা আজাবা, আল্লাহুম্মায আলহা রিয়াহান ওয়ালা তাযআলহা রিহা।
অর্থ: হে আল্লাহ, এটাকে আমাদের জন্য রহমত বানিয়ে দিন, শাস্তিস্বরূপ দিয়েন না। এটাকে কেবল বাতাস হিসাবে না দিয়ে আমাদের জন্য আরামদায়ক করে দিন। ইবনে আব্বাস রাদি. বলেন, আল্লাহ তাআলার আছে-
إِنَّا أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِيحًا صَرْصَرًا.
অর্থ: আমি তাদের বিরুদ্ধে ঝঞ্জাবায়ু পাঠালাম। ৬৩৪
إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيْحَ الْعَقِيْمَ.
অর্থ: যখন আমি তাদের কাছে বৃষ্টিহীন বাতাস পাঠালাম। ৬৩৫
وَأَرْسَلْنَا الرِّيْحَ لَوَاقِحَ.
অর্থ: আমি বারিবহ বাতাস পাঠিয়েছি। ৬৩৬
وَمِنْ أَيْتِهَ أَنْ يُرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ.
অর্থ: আল্লাহর নিদর্শনের মাঝে একটি নিদর্শন হল, তিনি বাতাসকে সুসংবাদরূপে পাঠান। ৬৩৭
(৪৬১) ইমাম শাফেয়ি রহ. এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেছেন-
أَنَّهُ شَكَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْفَقْرَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَعَلَّكَ تَسُبُّ الرِّيْحَ.
অর্থ: সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে দারিদ্রতার অভিযোগ করল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি মনে হয় বাতাসকে গালি দাও। ৬৩৮-ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, বাতাসকে গালি দেয়া ঠিক নয়। কেননা এটা আল্লাহর সৃষ্টি ও তার সৈন্য। এটাকে তিনি যখন ইচ্ছা মানুষের জন্য রহমত কিংবা শাস্তিস্বরূপ প্রেরণ করেন।
তারকার পতন দেখলে যে দুআ পড়বে
(৪৬২) হজরত ইবনে মাসউদ রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে, তারকা পতন হলে সেদিকে তাকিয়ে না থাকতে এবং তখন এ দুআ পড়তে বলা হয়েছে-
مَا شَاءَ اللَّهُ لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ.
উচ্চারণ: মাশাআল্লাহু লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা যা ইচ্ছা করতে সক্ষম, আল্লাহর ছাড়া কারো কোন ক্ষমতা নেই। ৬৩৯
তারকা ও বিজলির দিকে দৃষ্টি দেয়া ও ইশারা করবে না
পূর্বের হাদিসটি এ অধ্যায়ের প্রমাণ। ইমাম শাফেয়ি রহ. হজরত উরওয়া বিন যুবায়ের সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, তোমরা বিজলি ও প্রবল বর্ষণ দেখে তার দিকে ইশারা কর না। বরং তোমরা আল্লাহর প্রশংসা ও গুণকীর্তণ কর। ৬৪০
বজ্রধ্বনি শ্রবণে যে দুআ পড়বে
(৪৬৩) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে দুর্বল সনদে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বজ্রধ্বনি ও গর্জন শুনতেন, তখন এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ لَا تَقْتُلْنَا بِغَضَبِكَ، وَلَا تُهْلِكْنَا بِعَذَابِكَ، وَعَافِنَا قَبْلَ ذَلِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বিগাদাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বিআজাবিকা ওয়া আফিনা কাবলা জালিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের আপনার গজব দ্বারা হত্যা করবেন না। আপনার আজাব দিয়ে আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না। এ থেকে আমাদেরকে মুক্তি দিন। ৬৪১
(৪৬৪) হজরত আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বজ্রধ্বনি শুনলে কথাবার্তা ছেড়ে দিতেন এবং এদুআ পড়তেন-
سُبْحَانَ الَّذِي يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাযি ইউসাব্বিহুর রা'দু বি হামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহ।
অর্থ: সকল প্রশংসা ঐ সত্তার, বজ্রধ্বনি যার প্রশংসা করে এবং ফেরেশতারাও যার ভয়ে গুণকীর্তন করে। ৬৪২-ইমাম শাফেয়ি রহ. মহান তাবেয়ি তাউস রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বজ্রধ্বনি শুনে বলতেন-
سُبْحَانَ مَنْ سَبَّحَتْ لَهُ
উচ্চারণ: সুবহানা মান সাব্বাহতা লাহ।
অর্থ: পুত-পবিত্র ঐ সত্তা, বজ্রধ্বনি যার তাসবিহ পড়ে। -শাফেয়ি রহ. বলেন, এর দ্বারা নিম্নোক্ত আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ.
অর্থ: তার প্রশংসা পাঠ করে বজ্র। ৬৪৩ - ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে- আমরা একদা উমর রাদি. এর সাথে কোন এক সফরে ছিলাম। আমরা বজ্রধ্বনি, বিজাল ও ঠাণ্ডার কবলে পড়লাম। তখন কাব রাদি. বললেন, যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দুআ তিনবার পড়বে, আল্লাহ তাকে উক্ত সমস্যা থেকে মুক্তি দিবেন। আমরা উক্ত দুআ পড়ে এসব থেকে সুরক্ষা পেয়েছি। দুআটি হল-
سُبْحَانَ مَنْ يُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাযি ইউসাব্বিহুর রা'দু বি হামদিহি ওয়াল মালাইকাতু মিন খিফাতিহ।
অর্থ: সকল প্রশংসা ঐ সত্তার, বজ্রধ্বনি যার প্রশংসা করে এবং ফেরেশতারাও যার ভয়ে গুণকীর্তন করে। ৬৪৪
বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হলে যে দুআ পড়বে
(৪৬৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বৃষ্টি দেখতেন তখন বলতেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিআ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে উপকারী বৃষ্টি দিন। ৬৪৫ - অন্য রেওয়ায়েতে আছে যে, নবিজি উক্ত দুআ দুইবার বা তিনবার পড়তেন-
اللَّهُمَّ صَيِّبًا نَافِعًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাইয়িবান নাফিআ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে উপকারী বৃষ্টি দিন। ৬৪৬
(৪৬৬) হজরত ইমাম শাফেয়ি রহ. কিতাবুল উম্মে মুরসাল সনদে বর্ণনা করেন যে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أطْلُبُوا اسْتِجَابَةَ الدُّعَاءِ عِنْدَ الْتِقَاءِ الْجُيُوشِ، وَإِقَامَةِ الصَّلَاةِ.
অর্থ: তোমরা তিন সময়ে আল্লাহর কাছে দুআ চাও। শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলার সময়, নামাজ পড়ার সময় এবং বৃষ্টি বর্ষণের সময়। -শাফেয়ি রহ. বলেন, আমি একাধিক ব্যক্তির ব্যাপারে জানি যারা বৃষ্টি বর্ষণ ও নামাজ আদায় করে দুআ চাওয়ার পর সেই দুআ কবুল হয়েছে। ৬৪৭
বৃষ্টি বর্ষণের পর যে দুআ পড়বে
(৪৬৭) হজরত যায়েদ বিন খালিদ জুহানি রাদি. থেকে বর্ণিত-
صَلَّى بِنَا رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةَ الصُّبْحِ بِالْحُدَيْبِيَةِ عَلَى إِثْرِ سَمَاءٍ كَانَتْ مِنَ اللَّيْلِ، فَلَمَّا انْصَرَفَ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ فَقَالَ: أَتَدْرُوْنَ مَاذَا قَالَ رَبُّكُمْ؟ قَالُوا : اللهُ وَرَسُولُهُ أَعْلَمُ. قَالَ: أَصْبَحَ مِنْ عِبَادِي مُؤْمِنُ بِي وَكَافِرُ، فَأَمَّا مَنْ قَالَ: مُطِرْنَا بِفَضْلِ اللهِ، وَرَحْمَتِهِ فَذَلِكَ مُؤْمِنُ بِي وَكَافِرُ بِالْكَوْكَبِ، وَأَمَّا مَنْ قَالَ: بِنَوْءِ كَذَا وَكَذَا، فَذَلِكَ كَافِرُ بِي وَمُؤْمِنُ بِالْكَوْكَبِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নিয়ে হুদাইবিয়াতে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। সে রাতে আকাশে মেঘ দেখা গিয়েছিল। নামাজ শেষে মুসল্লিদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তোমরা কি জানো তোমাদের রব তোমাদেরকে কী বলছেন? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ভালো জানেন। তখন তিনি বললেন, বান্দাদের কেউ আমাকে বিশ্বাস করে আর কেউ কেউ আমার সঙ্গে কুফুরি করে। যারা বলে আল্লাহর অনুগ্রহে ও অনুকম্পায় বৃষ্টি হয়েছে, তারা আমাকে বিশ্বাস করে ও তারকাকে অবিশ্বাস করে। আর যারা বলে, 'অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে' তারা আমাকে অবিশ্বাস করে এবং তারকাকে বিশ্বাস করে। ৬৪৮
ইমাম নববি বলেন, হুদাইবিয়া: একটি কূপের নাম, যা মক্কা থেকে এক মারহালা দূরে অবস্থিত। উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি কোন মুসলিম বলে- 'অমুক তারকার কারণে বৃষ্টি হয়েছে' এবং নিয়ত করে যে, তারকাই বৃষ্টিদাতা, তবে নিঃসন্দেহে সে কাফের মুরতাদ হয়ে যাবে। আর যদি এ নিয়তে বলে যে, এটা বৃষ্টির আলামত, এরপরে বর্ষণ হয়। আর বর্ষণ হয় আল্লাহর ক্রিয়া ও সৃষ্টিতে, তাহলে কাফের হবে না। অতঃপর বৃষ্টি বর্ষণ হলে এই নেয়ামতের ওপর আল্লাহ তাআলার কৃতজ্ঞতা আদায় করা চাই। ৬৪৯
প্রবল বর্ষণে ক্ষতির আশঙ্কা হলে যে দুআ পড়বে
(৪৬৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
دَخَلَ رَجُلُ الْمَسْجِدَ يَوْمَ جُمُعَةٍ، وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمُ يَخْطُبُ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ ، هَلَكَتِ الْأَمْوَالُ، وَانْقَطَعْتِ السُّبُلُ، فَادْعُ اللَّهَ يُغِثْنَا. فَرَفَعَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ: " اللَّهُمَّ أَغِثْنَا، اللَّهُمَّ أَغِثْنَا، اللهُمَّ أَغِثْنَا. قَالَ أَنَسٌ : وَاللهِ، مَا نَرَى فِي السَّمَاءِ مِنْ سَحَابٍ وَلَا قَزَعَةً، وَمَا بَيْنَنَا وَبَيْنَ سَلْعِ - يَعْنِي الْجَبَلَ الْمَعْرُوْفَ بِقُرَبِ الْمَدِينَةِ - مِنْ بَيْتٍ وَلَا دَارٍ. فَطَلَعَتْ مِنْ وَرَائِهِ سَحَابَةٌ مِثْلُ التُّرْسِ، فَلَمَّا تَوَسَّطَتِ السَّمَاءَ انْتَشَرَتْ ثُمَّ أَمْطَرَتْ، فَلَا وَاللهِ ، مَا رَأَيْنَا الشَّمْسَ سِتًّا، ثُمَّ دَخَلَ رَجُلٌ مِنْ ذَلِكَ الْبَابِ فِي الْجُمُعَةِ الْمُقْبَلَةِ، وَرَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِمُ يَخْطُبُ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ ، هَلَكَتِ الْأَمْوَالُ، وَانْقَطَعَتِ السُّبُلُ، فَادْعُ اللَّهَ يُمْسِكْهَا عَنَّا، فَرَفَعَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَيْهِ ثُمَّ قَالَ : اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا، اللهُمَّ عَلَى الْأَكَامِ ، وَالظَّرَابِ ، وَبُطُوْنِ الْأَوْدِيَةِ، وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ. فَانْقَطَعَتْ وَخَرَجْنَا نَمْشِي فِي الشَّمْسِ.
অর্থ: জুমুআর দিন এক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। সে ব্যক্তি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাদের সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে, রাস্তাঘাট ভেঙ্গে গেছে। বৃষ্টিপাতের জন্য দুআ করুন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত উঠিয়ে এ দুআ করলেন-
اللَّهُمَّ أَغِثْنَا اللَّهُمَّ أَغِثْنَا، اللَّهُمَّ أَغِثْنَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আগিসনা, আল্লাহুম্মা আগিসনা, আল্লাহুম্মা আগিসনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন, হে আল্লাহ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন।
আনাস রাদি. বলেন, আল্লাহর কসম, আমরা আকাশে কোন মেঘ বা মেঘখণ্ড দেখিনি। আমাদের ও সিলা' উপত্যকার মাঝে কোন বাড়ি-ঘর ছিল না। সিলা' উপত্যকার পেছন থেকে ঢালের মতো একটি মেঘ উপরে উঠতে লাগল। সেটি যখন আকাশের মাঝামাঝি এসে ছড়িয়ে গিয়ে বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। আল্লাহর কসম, আমরা সাতদিন পর্যন্ত সূর্য দেখিনি।
অতঃপর সে লোকটি ঐ দরজা দিয়েই পরবর্তী জুমুআয় মসজিদে প্রবেশ করল। তখনও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। সে লোকটি বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ, বৃষ্টিতে ধন-সম্পদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে যাচ্ছে। আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই হাত তুলে এই দুআ পড়লেন। এ দুআর পর বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল। আমরা মসজিদ থেকে বের হয়ে সূর্যের আলোতে হাঁটলাম। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا، اللهُمَّ عَلَى الْآكَامِ، وَالظَّرَابِ، وَبُطُوْنِ الْأَوْدِيَةِ، وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাওয়ালাইনা ওয়া আলাইনা, আল্লাহুম্মা আলাল আকামি ওয়াজ্জিরাবি ওয়া বুতুনিল আউদিয়াতি ওয়া মানাবিতিশ শাজার।
অর্থ: হে আল্লাহ, বৃষ্টি দিন আমাদের আশেপাশে, আমাদের উপর নয়। হে আল্লাহ, টিলায়, পাহাড়ে, উপত্যকায় এবং গাছপালায় বর্ষণ করুন। ৬৫০
টিকাঃ
৬২৮. সহিহ মুসলিম: ৮৯৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৪৫, আমাল: ৯৪০, নাসাঈ, আমাল: ৩০২, ইবনুস সুন্নি।
৬২৯. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৭২৭, মুসনাদে আহমাদ ২/২৬৮, আলআদাব: ৯০৬, আমাল: ৯২৯, নাসাঈ, আলফুতুহাত ৪/২৭২।
৬৩০. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯৯, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৯০, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৯০, আলআদাব: ৬৮৬, আমাল: ৯১৭, নাসাঈ, আমাল: ৩০২, ইবনুস সুন্নি।
৬৩১. সুনানে তিরমিজি: ২২৫৩, মুসনাদে আহমাদ ৫/১২৩, আলআদাব: ৭১৯, আমাল: ৯৩৩, নাসাঈ, আমাল: ২৯৮, ইবনুস সুন্নি।
৬৩২. ইবনুস সুন্নি: ২৯৯, আলআদাব: ৭১৮, মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২৮৬।
৬৩৩. ইবনুস সুন্নি: ২৮৪।
৬৩৪. সুরা কামার: ১৯।
৬৩৫. জারিয়াত: ৪১।
৬৩৬. সুরা হিজর: ২২।
৬৩৭. সুরা রুম: ৪৬।
৬৩৮. কিতাবুল উম্ম ১/২৫২।
৬৩৯. ইবনুস সুন্নি: ৬৫৩।
৬৪০. কিতাবুল উম্ম ১/২৫৩।
৬৪১. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৪৬, আলআদাব: ৭২১, মুসনাদে আহমাদ ২/১০০, আমাল: ৯২৭, নাসাঈ, আমাল: ৩০৩, ইবনুস সুন্নি, আলফুতুহাত ৪/২৮৩।
৬৪২. মুয়াত্তা মালেক ২/৯৯২।
৬৪৩. সুরা রাদ: ১৩।
৬৪৪. কিতাবুদ্দুআ: ৯৮৫, তাবারানি।
৬৪৫. সহিহ বুখারি: ১০৩২।
৬৪৬. সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৮৯।
৬৪৭. কিতাবুল উম্ম ১/২২৩।
৬৪৮. সহিহ বুখারি: ৮৪৬, সহিহ মুসলিম: ৭১, মুয়াত্তা মালেক ১/১৯২, সুনানে আবু দাউদ: ৩৯০৬, সুনানে নাসাঈ ৩/১৬৫, আমাল: ৯২৫, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৪/১১৭।
৬৪৯. পূর্বের সংস্করণে এ অংশের অনুবাদ নেই। উ.
৬৫০. সহিহ বুখারি: ১০১৩, সহিহ মুসলিম: ৮৯৭, মুসনাদে আহমাদ ৩/১০৪, সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৪, সুনানে নাসাঈ ৩/১৫৯।