📘 আল আযকার > 📄 দুই ঈদের নামাজে পঠিত দুআসমূহ

📄 দুই ঈদের নামাজে পঠিত দুআসমূহ


দুই ঈদের রজনীতে জেগে জিকির, নামাজ ও অন্যান্য নেক আমল করা মুস্তাহাব। হাদিস শরিফে এসেছে-
مَنْ قَامَ لَيْلَتَي الْعِيدَيْنِ مُحْتَسِبًا لِلَّهِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوْتُ الْقُلُوْبُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, যেদিন সকল অন্তর মরে যাবে, সেই দিন তার অন্তর মরবে না। -অন্য বর্ণনায় আছে-
مَنْ أَحْيَا لَيْلَتِي الْعِيدِ لَمْ يَمُتْ قَلْبُهُ يَوْمَ تَمُوْتُ القُلُوْبُ
অর্থ: যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় ঈদের দুই রাত জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে, যেদিন সকল অন্তর মরে যাবে, সেই দিন তার অন্তর মরবে না। ৬০৭
যতটুকু সময় রাত জাগলে পরে জাগ্রত থাকা বুঝায় এ নিয়ে মতানৈক্য আছে। প্রসিদ্ধ কথা হল, বেশিরভাগ রাত জাগ্রত থাকলে। কেউ বলেছেন অল্প সময় জাগ্রত থাকলেও জাগ্রত থাকা বুঝাবে।
উভয় ঈদের রজনীতে তাকবির বলা মুস্তাহাব
উভয় ঈদের রাতে তাকবির বলা মুস্তাহাব। ঈদুল ফিতরে সূর্যাস্ত থেকে ইমাম ঈদের নামাজ শুরু করা পর্যন্ত তাকবির বলা মুস্তাহাব। নামাজের পর, লোকের ভীড়ে, শুয়ে-বসে, চলতে-ফিরতে, রাস্তায়, মসজিদে, বিগানায় তাকবির বলবে।
ঈদুল আজহায় আরাফার দিন নবম তারিখের ফজরের নামাজ থেকে নিয়ে আইয়ামে তাশরিকের শেষ দিন আসর পর্যন্ত তাকবির বলবে।
শাফেয়ি উলমায়ে কেরام বলেন, তাকবিরের শব্দ হল-
اللهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, আল্লাহ তাআলা মহান, আল্লাহ তাআলা মহান) ধারাবাহিকভাবে তিনবার বলা। এভাবে যতবার ইচ্ছা বলবে। -ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, বেশি বলতে চাইলে এভাবে বলবে। এমনটা উত্তম-
اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا، وَسُبْحَانَ اللهِ بُكْرَةً وَأَصِيلًا، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّيْنَ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُوْنَ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ، صَدَقَ وَعْدَهُ، وَنَصَرَ عَبْدَهُ، وَهَزَمَ الْأَحْزَابَ وَحْدَهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أكْبَرُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা। লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়‍্যাহু, মুখলিসিনা লাহুদ্দিন, ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন। লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াহদাহ, সাদাকা ওয়াহদাহু ওয়া নাসারা আবদাহু ওয়া হাজামাল আহজাবা ওয়াহদাহু, লা ইলাহা ইল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি। একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই। আমরা খাঁটি অন্তরে তা স্বীকার করি, কাফেররা যতই একে খারাপ মনে করুক। একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি তার অঙ্গীকার সত্যে পরিণত করেছেন, তার বিশেষ বান্দাকে সাহায্য করেছেন এবং একাই সকল (কুফরি) শক্তিকে পরাস্ত করেছেন।
কিছু শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, মানুষ যে তাকবির পড়ে থাকে সেটি পড়তে কোন সমস্যা নেই। সেটিও পড়তে পারে। তা হল-
اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، لا إلهَ إِلَّا اللهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, আল্লাহ তাআলা মহান। আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। আল্লাহ তাআলা মহান, আল্লাহ তাআলা মহান। আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা। ৬০৮
তাকবিরের বিধান
উক্ত দিনগুলোতে যত নামাজ পড়া হবে, সকল নামাজের পর তাকবির বলবে। ফরজ নামাজ হোক বা নফল হোক অথবা জানাযার নামাজ হোক। আদায় নামাজ হোক, কাযা নামাজ হোক বা মানতের নামাজ হোক। এর মাঝে কিছু মতবিরোধ রয়েছে, তবে সেগুলো আলোচনার এটি স্থান নয়। এখানে যা উল্লেখ করা হল এটিই সহিহ ও এর ওপরই ফতোয়া এবং এ অনুযায়ীই আমল করা হবে। ৬০৯
ঈদের নামাজে তাকবির
ঈদের নামাজে প্রথম রাকাতে কিরাত শুরু করার আগে তাকবিরে তাহরিমা ব্যতীত সাত তাকবীর বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবির বলবে। প্রথম রাকাতে সানা পড়ার পর তাকবিরগুলো বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে আউজুবিল্লাহ বলার আগে তাকবিরগুলো বলবে। ৬১০ প্রতি তাকবিরের মাঝে এ দুআটি পড়া মুস্তাহাব-
سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ للهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرْ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি, সকল প্রশংসা তারই। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আর আল্লাহ মহান। -কোন কোন উলামায়ে কেরام বলেন, এ দুআটি পড়বে-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু বিয়াদিহিল খাইরু, ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। সকল কল্যাণের চাবিকাঠি তারই হাতে। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। -আবু নাসর রহ. বলেন, মানুষ যে দুআ পড়তে অভ্যস্ত সেটিই পড়া ভালো। আর তা হচ্ছে-
اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا ، وَسُبْحَانَ اللهِ، بُكْرَةً وَأَصِيلًا.
উচ্চারণ: আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়াল হামদুলিল্লাহি কাসিরা, ওয়া সুবহানাল্লাহি বুকরাতান ওয়া আসিলা।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা মহান, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য এবং সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি।
এই সবগুলো পড়ার অনুমোদন আছে; এগুলোতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। যদি এসব দুআ না পড়ে এবং ঈদের নামাজের তাকবিরগুলোও না বলে তাহলে নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে; সেজদায়ে সাহু লাগবে না। তবে ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবে। ৬১১
যদি ভুলে তাকবির না বলেই কিরাত শুরু করে দেয় আর তাকবির বলবে না; এটিই সঠিক কথা। তবে এক্ষেত্রে ইমাম শাফেয়ি রহ. থেকে একটি দুর্বল কথা আছে যে, তাকবির বলবে।
ঈদের নামাজের প্রথম খুতবায় নয় তাকবির ও দ্বিতীয় খুতবায় সাত তাকবির বলা মুস্তাহাব। ঈদের নামাজের কিরাতের বিষয়ে পূর্বে নামাজের অধ্যায়ে আলোচনা গেছে। তা হল, প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পর সুরা ক্বাফ পড়বে। আর দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কামার পড়বে। চাইলে প্রথম রাকাতে সুরা আলা ও দ্বিতীয় রাকাতে সুরা গাশিয়াও পড়তে পারে।

টিকাঃ
৬০৭. সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭৮২। উভয় হাদিসই দুর্বল। তবে ফাজায়েলের ক্ষেত্রে এগুলো অনুযায়ী আমল করা যায়। ইমাম নববি।
৬০৮. হানাফি উলামায়ে কেরাম উক্ত তাকবির পড়াকেই উত্তম বলে থাকেন। (হেদায়া ১/১৭৫)
৬০৯. হানাফি মাজহাব মতে, প্রতি ফরজ নামাজের পর তাকবির বলা ওয়াজিব। (হেদায়া ১/১৭৫)
৬১০. হানাফিদের মতে, ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তিন তাকবির ও দ্বিতীয় রাকাতে তিন তাকবির। প্রথম রাকাতে সানার পর অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। আর দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর রুকু করার আগে অতিরিক্ত তিন তাকবির বলবে। (হেদায়া: ১/১৭৩)
৬১১. হানাফিদের মতে, ইচ্চাকৃত ছেড়ে দিলে নামাজ শুদ্ধ হবে না। আর ভুলবশতঃ ছুটে গেলে সিজদায়ে সাহু ওয়াজিব। তবে ঈদের নামাজে সিজদায়ে সাহু না দিলেও চলবে। কারণ, এখানে অনেক লোকের জমায়েত হয়ে থাকে; সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

📘 আল আযকার > 📄 জিলহজ মাসের প্রথম দশকের আমল

📄 জিলহজ মাসের প্রথম দশকের আমল


আল্লাহ তাআলা বলেন- وَيَذْكُرُوا اسْمَ اللَّهِ فِي أَيَّامٍ مَّعْلُوْمُتٍ.
অর্থ: তারা নির্দিষ্ট কিছু দিনে আল্লাহর জিকির করে। ৬১২
আবদুল্লাহ ডবন আব্বাস রাদি., ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে أَيَّامٍ مَّعْلُوْمَتٍ (নির্দিষ্ট কিছু দিন) দ্বারা উদ্দেশ্য হল জিলহজ মাসের প্রথম দশক।
জিলহজের প্রথম দশকে অন্যান্য দিন থেকে বেশি জিকির করা মুস্তাহাব। প্রথম দশকের মধ্যে নবম তারিখে অন্যদিনের তুলনায় বেশি জিকির করা চাই।
(৪৪৩) হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا الْعَمَلُ فِي أَيَّامِ الْعَشْرِ أَفْضَلَ مِنَ الْعَمَلِ فِي هَذِهِ . قَالُوا: وَلَا الْجِهَادُ؟ قَالَ: وَلَا الْجِهَادُ، إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَيْءٍ.
অর্থ: এই দিনগুলোর আমলের চেয়ে উত্তম কোন আমল নেই। সাহাবায়ে কেরام বললেন, জিহাদও উত্তম নয়? তিনি বললেন না, এরচে জিহাদও উত্তম নয়। তবে ঐ ব্যক্তি যে নিজের জান-মালের আশঙ্কা নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হয়েছে এরপর সে কিছুই নিয়ে আসতে পারেনি, তার মর্যাদা এরচে বেশি। ৬১৩- সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় রয়েছে-
مَا مِنْ أَيَّامِ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ، مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ الْعَشْرِ.
(৪৪৪) মুসনাদে দারিমিতে সহিহাইনের সনদে বর্ণনা করেছেন, সেখানে এসেছে-
مَا الْعَمَلُ فِي أَيَّامٍ أَفْضَلُ مِنَ الْعَمَلِ فِي عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ. قِيلَ: وَلَا الْجِهَادُ؟
অর্থ: জিলহজের দশ দিনের আমল অপেক্ষা উত্তম কোন আমল নেই।... (বাকি হাদিস আগেরটির মতই) ৬১৪
(৪৪৫) হজরত আমার বিন শুআইব রহ. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উত্তম দুআ হল আরাফার দিনের দুআ। আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবিগণ যা বলেছেন, তার মধ্যে উত্তম কথা হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। -ইমাম তিরমিজি রহ. এটাকে দুর্বল বলেছেন। ৬১৫
(৪৪৬) মুয়াত্তা মালেকে মুরসাল সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, উত্তম দুআ হল আরাফার দিনের দুআ। আমি ও আমার পূর্ববর্তী নবিদের উত্তম কথা হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি একক, তার কোন শরিক নেই। ৬১৬
হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত- তিনি আরাফার দিন এক ব্যক্তিকে মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে দেখলেন। তিনি বললেন, হে নির্বোধ, আজকের দিন তুমি আল্লাহর কাছে না চেয়ে মানুষের কাছে চাচ্ছো! ৬১৭
ইমাম বুখারি রহ. বলেন- উমর রাদি. মিনায় তাবুতে থেকে তাকবির বলতেন, মসজিদের সকলেই তা শুনতে পেত। তখন তারাও তাকবির বলত। দোকান-পাটের লোকেরাও তাকবির বলত, ফলে তাকবিরের ধ্বনিতে মিনায় কম্পন শুরু হয়ে যেত। ৬১৮
ইমাম বুখারি রহ. বলেন, হজরত ইবনে উমর রাদি. ও আবু হুরায়রা রাদি. উভয়ে তাকবিরে তাশরিকের দিবসগুলোতে বাজারে চলে যেতেন। সেখানে তাকবির বলতেন। তাদের দেখে অন্যরাও তাকবির বলত।

টিকাঃ
৬১২. সুরা হজ: ২৮।
৬১৩. সহিহ বুখারি: ৯৬৯, সুনানে আবু দাউদ: ২৪৩৮, সুনানে তিরমিজি: ৭৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৭২৭।
৬১৪. সুনানে দারিমি: ১৭৮০।
৬১৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৯।
৬১৬. মুয়াত্তা মালেক ১/২১৪।
৬১৭. হিলইয়াতুল আউলিয়া ২/১৯৪।
৬১৮. সহিহ বুখারি ২/৪৬১।

📘 আল আযকার > 📄 সূর্য গ্রহণকালের দুআ

📄 সূর্য গ্রহণকালের দুআ


চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণকালে বেশি বেশি জিকির, দুআ করা এবং সকল মুসলমান একত্রিত হয়ে নামাজ পড়া সুন্নাত।
(৪৪৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِنَّ الشَّمْسَ وَالقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ لَا يُخْسَفَانِ لِمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَادْعُوا اللَّهَ تَعَالَى وَكَبِرُوْا وَتَصَدَّقُوْا.
অর্থ: চন্দ্র-সূর্য আল্লাহর বড় দুটি নিদর্শন। কারো জন্ম বা মৃত্যুতে চন্দ্র-সূর্য গ্রহণ লাগে না। যদি কখনো এমন গ্রহণ হতে দেখ, তাহলে আল্লাহর কাছে দুআ করবে, তাকবির বলবে এবং দান-সাদকা করবে। -অন্য বর্ণনায় আছে, 'যদি এমন দেখ তাহলে খুব ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আল্লাহর জিকির, দুআ ও ইস্তেগফার পড়। -অন্য বর্ণনায় আছে, যদি এমন দেখ, তখন দুআ ও নামাজ আদায় কর। ৬১৯
(৪৪৮) হজরত আবদুর রহমান বিন সামুরা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَدْ كَسَفَتِ الشَّمْسُ وَهُوَ قَائِمُ فِي الصَّلَاةِ رَافِعُ يَدَيْهِ، فَجَعَلَ يُسَبِّحُ وَيَحْمَدُ وَيُهَلِّلُ وَيُكَبِّرُ وَيَدْعُوْ، حَتَّى حُسِرَ عَنْهَا، فَلَمَّا حُسِرَ عَنْهَا قَرَأَ سُوْرَتَيْنِ، وَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ.
অর্থ: আমি সূর্য গ্রহণকালে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম, তখন তিনি নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন। দুই হাত উঠিয়ে তাসবিহ, তাকবির, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহর প্রশংসা এবং দুআ পড়ছিলেন। এভাবে সূর্যগ্রহণ কেটে যাওয়া পর্যন্ত করছিলেন। যখন সূর্য গ্রহণ কেটে গেলে তিনি দুটি সুরা পড়লেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। ৬২০
সূর্যগ্রহণের নামাজে দীর্ঘ কিরাত পড়া মুস্তাহাব
প্রথম রাকাতে সুরা বাকারার সমপরিমাণ পড়বে। দ্বিতীয় রাকাতে ২০০ আয়াত সমপরিমাণ পড়বে। তৃতীয় রাকাতে ১৫০ আয়াত ও চতুর্থ রাকাতে ৫০ আয়াত সমপরিমাণ পড়বে।
প্রথম রুকুতে একশ আয়াত পরিমাণ দীর্ঘ তাসবিহ পড়বে। দ্বিতীয় রুকুতে ৭০ আয়াত পরিমাণ, তৃতীয় রুকুতেও অনুরূপ। চতুর্থ রাকাতে ৫০ আয়াত পরিমাণ তাসবিহ পড়বে। সিজদা রুকুর মতো দীর্ঘ করবে। প্রথম সিজদা প্রথম রুকুর মতো। দ্বিতীয় সিজদা দ্বিতীয় রুকুর মতো। এ পদ্ধতিই বিশুদ্ধ।
যদি এই দীর্ঘ কিরাত, রুকু, সিজদা ইত্যাদি না করে শুধু সুরা ফাতিহা ও কিরাত পড়ে নামাজ শেষ করে দেয়, তাহলেও নামাজ হয়ে যাবে।
চন্দ্রগ্রহণের নামাজে উচ্চস্বরে কিরাত পড়া সুন্নাত। আর সূর্যগ্রহণের নামাজে নিম্নস্বরে কিরাত পড়া সুন্নাত। নামাজের পর দুটি খুতবা প্রদান করবে। খুতবায় মানুষকে আল্লাহর শাস্তির ভয় দেখাবে। মানুষকে আল্লাহর ইবাদতের প্রতি উৎসাহিত করবে। দান-সাদকা ও গোলাম আযাদের প্রতি উৎসাহিত করবে। এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ সহিহ হাদিস রয়েছে। মানুষকে আল্লাহর নেয়ামতের শোকরিয়া আদায়ের উৎসাহিত করবে। উদাসীনতা ও ধোঁকা থেকে বাঁচতে সতর্ক করবে।
(৪৪৯) হজরত আসমা রাদি. থেকে বর্ণিত-
لَقَدْ أَمَرَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْعَتَاقَةِ فِي كُسُوْفِ الشَّمْسِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্যগ্রহণের সময় দাস-দাসী আযাদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। ৬২১

টিকাঃ
৬১৯. সহিহ বুখারি: ১০৪৪, ৮৬, সহিহ মুসলিম: ৯০১, ৯০৭, মুয়াত্তা মালেক ১/১৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৭, সুনানে তিরমিজি: ৫৬১, সুনানে নাসাঈ ৩/১২৭।
৬২০. সহিহ মুসলিম: ৯১৩, সুনানে আবু দাউদ: ১১৯৫, সুনানে নাসাঈ ৩/১২৫।
৬২১. সহিহ বুখারি: ১০৫৪।

📘 আল আযকার > 📄 সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার দুআ

📄 সালাতুল ইস্তিসকা বা বৃষ্টি প্রার্থনার দুআ


বৃষ্টি প্রার্থনার সময় বিনয় ও কাকুতি-মিনতি করে বেশি বেশি দুআ, জিকির ও ইস্তেগফার করবে। এ ব্যাপারে এ দুআটি প্রসিদ্ধ-
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْئاً مُغِيْئاً هَنِيْئاً مَرِيْئاً غَدَقًا مُجَلَّلًا سَحًّا عَامًّا طَبَقاً دَائِماً. اللَّهُمَّ عَلَى الطَّرَابِ وَمَنابِتِ الشَّجَرِ : وَبُطُوْنِ الْأَوْدِيَةِ. اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَغْفِرُكَ إِنَّكَ كُنْتَ غَفَّاراً، فَأَرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْنَا مِدْرَاراً اللَّهُمَّ اسْقِنَا الْغَيْثَ وَلَا تَجْعَلْنَا مِنَ الْقَانِطِينَ. اللَّهُمَّ أَنْبِتْ لَنَا الزَّرْعَ ، وَأَدِرَّ لَنَا الضَّرْعَ، وَاسْقِنَا مِنْ بَرَكَاتِ السَّمَاءِ، وَأَنْبِتْ لَنَا مِنْ بَرَكَاتِ الْأَرْضِ اللَّهُمَّ ارْفَعْ عَنَّا الْجَهْدَ وَالْجُوْعَ وَالْعُرْيَ، وَاكْشِفْ عَنَّا مِنَ الْبَلَاءِ مَا لَّا يَكْشِفُهُ غَيْرُكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকিনা গাইসান মুগিসান হানিআন মারিআন গাদিকান মুযাল্লিলান সাহহান আম্মান তাবাকান দায়িমান। আল্লাহুম্মা আলাজ্জিরাবি ওয়া মানাবিতিশ শাজারি ওয়া বুতুনিল আউদিয়াহ। আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাগফিরুকা ইন্নাকা কুনতা গাফফারা। ফাআরসিলিস সামাআ আলাইনা মিদরারা। আল্লাহুম্মাসকিনাল গাইসা ওয়ালা তাযআলনা মিনাল কানিতিন। আল্লাহুম্মা আনবিত লানাজ্জারআ, ওয়া আদিররা লানাদ্দারআ, ওয়াসকিনা মিন বারাকাতিস সামায়ি, ওয়া আনবিত লানা মিন বারাকাতিল আরদ। আল্লাহুম্মারফা আন্না যাহদা ওয়াযুআ ওয়াল উরইয়া ওয়াকশিফ আন্না মিনাল বালায়ি মা লা ইয়াকশিফুহু গাইরুক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের ওপর নাজিল করুন অনুকুল বৃষ্টি, তৃপ্তিকর সবুজ ফলানো বারিধারা, যা উপকারে আসবে ক্ষতি করবে না। পর্যাপ্ত বৃষ্টি, সকলের জন্য উপকারী, প্রবাহিত, ব্যাপক স্তরবিশিষ্ট, প্রয়োজন অনুসারে। হে আল্লাহ, বৃষ্টি দিন পাহাড়ে, গাছপালায় এবং উপত্যকায়। হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, নিশ্চয় আপনি বড় ক্ষমাশীল। অতএব, আমাদের ওপর অসজ্র বৃষ্টি বর্ষণ করুন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন, আমাদেরকে হতাশ করবেন না। হে আল্লাহ, আমাদের জন্য শস্য উৎপাদন করুন, আমাদের গবাদির স্তনে প্রচুর পরিমাণে দুধ দিন। আমাদেরকে আসমানের বরকত দ্বারা ধন্য করুন এবং জমিনের বরকত উৎপন্ন করুন। আমাদের ওপর থেকে কাঠিন্যতা, ক্ষুধা, বস্ত্রহীনতা দূর করুন। আমাদের বিপদাপদ দূর করুন, যা আপনি ছাড়া আর কেউ দূর করতে পারবে না। লোকদের প্রসিদ্ধ কোন বুজুর্গ ও নেক ব্যক্তি থাকলে তার ওসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করবে। যেমন এভাবে বলতে পারে-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَسْقِي وَنَتَشَفَعُ إِلَيْكَ بِعَبْدِكَ فُلَانٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাসকি ওয়া নাতাশাফফাউ ইলাইকা বি- আবদিকা ফুলান।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার অমুক (উদ্দিষ্ট ব্যক্তির নাম নিবে) বান্দার ওসিলায় আমরা বৃষ্টি কামনা করি। ৬২২
(৪৫০) বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে-
أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ كَانَ إِذَا قَحَطُوْا اسْتَسْقَى بِالْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ فَقَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّا كُنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِنَبِيِّنَا فَتَسْقِيْنَا، وَإِنَّا نَتَوَسَّلُ إِلَيْكَ بِعَمَّ نَبِيِّنَا فَاسْقِنَا فَيُسْقَوْنَ.
অর্থ: উমর রাদি. এর যুগে দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে তিনি আব্বাস রাদি. এর ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন। উমর রাদি. বলতেন, হে আল্লাহ, আমরা নবিকে ওসিলা দিয়ে আপনার কাছে বৃষ্টি চেয়েছি, আপনি বৃষ্টি দিয়েছেন। এখন আমরা নবির চাচার ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করছি। অতএব, আমাদেরকে বৃষ্টি দিন। অতঃপর বৃষ্টি হত। -মুআবিয়া রাদি. ও অন্যদের থেকে নেককারদের ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনার বিষয়টি এসেছে।
মুস্তাহাব হল, ইস্তিস্কার নামাজে ঐ কিরাতই পড়বে, যা ঈদের নামাজে পড়া হয়। প্রথম রাকাতের শুরুতে সাতবার তাকবির বলবে এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচবার, ঈদের নামাজের মতো। ঈদের নামাজে ছোটখাট যত মাসায়েল আছে, সেগুলো এখানে প্রযোজ্য হবে। তারপর দুটি খুতবা প্রদান করবে। এতে বেশি বেশি ইস্তিগফার ও দুআ করবে। ৬২৩
(৪৫১) হজরত জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাওয়াক নামক স্থানে এই দুআটি পড়লেন। অতঃপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষণ শুরু হয়ে গেল। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ اسْقِنَا غَيْئًا مُغِيْئًا مَرِيئًا مَرِيعًا نَافِعًا غَيْرَ ضَارٌّ عَاجِلًا غَيْرَ آجِلٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকিনা গাইসান মুগিসান, মারিআন মারিআন, নাফিআন, গায়রা দাররিন, আযিলান গায়রা আযিল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের উপর নাজিল করুন অনুকুল বৃষ্টি, তৃপ্তিকর সবুজ ফলানো বারিধারা, যা উপকারে আসবে, ক্ষতিকর হবে না। এক্ষুণি দিন, বিলম্ব করবেন না। ৬২৪
(৪৫২) হজরত আমর বিন শুআইব তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন তখন এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اسْقِ عِبَادَكَ وَبَهَائِمَكَ، وَانْشُرْ رَحْمَتَكَ، وَأَحْيِ بَلَدَكَ الْمَيِّتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকি ইবাদাকা ওয়া বাহায়িমাকা ওয়ানশুর রাহমাতাকা ওয়া আহয়ি বালাদাকাল মায়্যিত।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আপনার বান্দাদেরকে ও প্রাণীদেরকে দৃষ্টি দিন। আপনার রহমত ব্যাপক করে দিন। মৃত শহরকে সজীব করে দিন। ৬২৫
(৪৫৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে-
شَكَا النَّاسُ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُحُوْطَ الْمَطَرِ، فَأَمَرَ بِمِنْبَرٍ فَوُضِعَ لَهُ فِي الْمُصَلَّى ، وَوَعَدَ النَّاسَ يَوْمًا يَخْرُجُوْنَ فِيْهِ. قَالَتْ عَائِشَةُ: فَخَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ بَدَا حَاجِبُ الشَّمْسِ فَقَعَدَ عَلَى الْمِنْبَرِ، فَكَبَّرَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَحَمِدَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّكُمْ شَكَوْتُمْ جَدْبَ دِيَارِكُمْ وَاسْتِنْخَارَ الْمَطَرِ عَنْ إِيَّانِ زَمَانِهِ عَنْكُمْ، وَقَدْ أَمَرَكُمُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ تَدْعُوهُ، وَوَعَدَكُمْ أَنْ يَسْتَجِيْبَ لَكُمْ. ثُمَّ قَالَ }: الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ } { الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ { مَلِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ، اللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أَنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ، وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلَاغًا إِلَى حِينٍ". ثُمَّ رَفَعَ يَدَيْهِ، فَلَمْ يَزَلْ فِي الرَّفْعِ حَتَّى بَدَا بَيَاضُ إِبْطَيْهِ، ثُمَّ حَوَّلَ إِلَى النَّاسِ ظَهْرَهُ، وَقَلَبَ - أَوْ : حَوَّلَ - رِدَاءَهُ وَهُوَ رَافِعُ يَدَيْهِ، ثُمَّ أَقْبَلَ عَلَى النَّاسِ، وَنَزَلَ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، فَأَنْشَأَ اللَّهُ سَحَابَةً، فَرَعَدَتْ وَبَرَقَتْ، ثُمَّ أَمْطَرَتْ بِإِذْنِ اللهِ ، فَلَمْ يَأْتِ مَسْجِدَهُ حَتَّى سَالَتِ السُّيُولُ، فَلَمَّا رَأَى سُرْعَتَهُمْ إِلَى الْكِنَّ ضَحِكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى بَدَتْ نَوَاجِذُهُ، فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرُ، وَأَنِّي عَبْدُ اللَّهِ، وَرَسُولُهُ."
অর্থ: মানুষজন রাসুলের কাছে অনাবৃষ্টির কথা বলল। মিম্বার আনতে বলতেন। মিম্বার এনে নামাজের স্থানে স্থাপন করা হল। তিনি মানুষদের থেকে একদিন বৃষ্টি প্রার্থনার উদ্দেশ্যে বের হওয়ার অঙ্গীকার নিলেন। একদিন সূর্য উঠার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হলেন। তিনি মিম্বরে বসে আল্লাহর বড়ত্বের ঘোষণা করলেন। আল্লাহর প্রশংসা করলেন। এরপর বললেন, তোমরা এলাকায় বৃষ্টিহীনতার অভিযোগ করছ এবং বৃষ্টির সময় চলে যাওয়ার পরও বৃষ্টি না হওয়ার অভিযোগ করছ। আল্লাহ তোমাদের তার কাছে চাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। এরপর তিনি এই বলে দুআ করতে লাগলেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ } { الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ } مَالِكِ يَوْمِ الدِّيْنِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ اللَّهُمَّ أَنْتَ اللهُ ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ الْغَنِيُّ وَنَحْنُ الْفُقَرَاءُ، أُنْزِلْ عَلَيْنَا الْغَيْثَ، وَاجْعَلْ مَا أَنْزَلْتَ لَنَا قُوَّةً وَبَلَاغًا إِلَى حِينٍ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আর-রাহমানির রাহিম, মালিকি ইয়াউমিদ্দিন, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইয়াফ আলু মা য়ুরিদ। আল্লাহুম্মা আনতাল্লাহু লা ইলাহা আনতাল গানিউ ওয়া নাহনুল ফুকারা, আনজিল আলাইনাল গাইসা, ওয়াযআল মা আনজালতা লানা কুওয়্যাতান ওয়া বালাগান ইলা হিন।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর জন্য, যিনি সমস্ত জগতের পালনকর্তা। যিনি পরম দয়াপরবש বড় করুণাময়। যিনি প্রতিদান-দিবসের স্বত্ত্বাধিকারী। ৬২৬ আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই, তিনি যা ইচ্চা করেন। হে আল্লাহ, আপনিই আল্লাহ, আপনি ব্যতীত কোন কোন সত্য মাবুদ নেই। আপনি অমুখাপেক্ষী, আর আমরা আপনার মুখাপেক্ষী। আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করুন। যা বর্ষণ করেন তা আমাদের জন্য নির্ধারিত সময়ের জন্য শক্তি ও পাথেয় করুন।
এরপর তিনি তার হাত উপরে উঠালেন। তিনি উভয় হাত এতটুকু উঠালেন যে, তার বগলের শুভ্রতা দেখা যাচ্ছিল। এরপর তিনি মানুষের দিকে পিঠ দিলেন। হাত উঠানো অবস্থায় চাদর উল্টিয়ে ফেললেন। এরপর লোকজনদের দিকে ফিরলেন এবং মিম্বার থেকে অবতরণ করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন। তখন আল্লাহ তাআলা এক মেঘ সৃষ্টি করলেন। সে মেঘ বজ্রপাত ও বিদ্যুৎচমক করছিল। এরপর আল্লাহর নির্দেশে বৃষ্টি বর্ষণ করে। মসজিদে পৌঁছার আগেই বৃষ্টিতে বন্যা হয়ে গেল। তিনি বৃষ্টির পানি দ্রুত প্রবাহ হতে দেখে খুশিতে এভাবে হাসলেন যে, তার মাড়ির দাঁতগুলো পর্যন্ত প্রকাশ পেয়ে গেল। এরপর তিনি বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান। আমি তাঁর বান্দা ও রাসুল। ৬২৭
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে, নামাজের আগে খুতবা দেয়া হবে। এমনটি সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে স্পষ্টভাবে আছে। সুতরাং নামাজের আগে খুতবা জায়েজ। কিন্তু অন্যান্য হাদিস ও ফিকহের কিতাবে আগে নামাজ পরে খুতবার কথা বলা হয়েছে। এটিই উত্তম।
আস্তে ও জোরে উভয়ভাবে দুআ করা মুস্তাহাব। দুআয় হাত অনেক উচুঁতে উঠানো চাই। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, দুআর মাঝে এটিও বলবে-
اللَّهُمَّ أَمَرْتَنَا بِدُعَائِكَ، وَوَعَدْتَنَا إِجَابَتَكَ، وَقَدْ دَعَوْنَاكَ كَمَا أَمَرْتَنَا، فَأَجِبْنَا كَمَا وَعَدْتَنَا، اللهُمَّ امْنُنْ عَلَيْنَا بِمَغْفِرَةِ مَا قَارَفْنَا، وَإِجَابَتِكَ فِي سُفْيَانًا وَسَعَةِ رِزْقِنَا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আমারতানা বি-দুআয়িকা, ওয়া ওয়াআদতানা ইজাবাতাক, ওয়াকাদ দাআওনাকা কামা আমারতানা, ফা আযিবনা কামা ওয়া আদতানা। আল্লাহুম্মামনুন আলাইনা বি-মাগফিরাতি মা কারাফনা ওয়া ইযাবাতিকা ফি সুকয়ানা ওয়া সাআতি রিজকিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনাকেই ডাকতে আপনি আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং আমাদের সাথে দুআ কবুল করার অঙ্গীকারও করেছেন। আপনার নির্দেশ-মাফিক আপনাকে বলেছি, সুতরাং অঙ্গীকার অনুযায়ী কবুল করুন। হে আল্লাহ, আমাদের গুনাহ ক্ষমা করতঃ, বৃষ্টির দুআ কবুল করতঃ এবং প্রশস্ত রিজিক দিয়ে আমাদের ওপর দয়া করুন। -মুমিন নারী ও পুরুষের জন্যও দুআ করবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়বে। দুআর মাঝে এক/দুটি আয়াত পড়বে। ইমাম বলবে- أَسْتَغْفِرُ اللهَ لِي وَلَكُمْ (আসতাগফিরুল্লাহা লি ওয়া লাকুম: আল্লাহর কাছে নিজের এবং তোমাদের জন্য মাগফিরাত কামনা করি) বিপদাপদের দুআগুলোও পড়বে এবং এ দুআটিও পড়বে-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, ঈদের নামাজের মতই ইমাম ইস্তিস্কার নামাজে দুটি খুতবা দেবে। খুতবায় তাকবির বলবে, আল্লাহর হামদ ও প্রশংসা করবে। দরুদ পড়বে। বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে। আর এ আয়াতটিও বেশি বেশি পড়বে-
اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِّدْرَارًا.
অর্থ: তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছিড়ে দিবেন।
হজরত উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি ইস্তিস্কা করেছেন। তাঁর পুরো দুআতেই ইস্তিগফার ছিল। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, উমর রাদি. এর প্রায় পুরা দুআটি ইস্তিগফার ছিল। তিনি দুআ শুরু করেছেন ইস্তিগফার দিয়ে; মাঝেও ইস্তিগফার করেছেন এবং দুআ শেষ করেছেন ইস্তিগফারের মাধ্যমে।

টিকাঃ
৬২২. কিতাবুল উম্ম ১/২৫১, ইমাম শাফেয়ি।
৬২৩. হানাফি মাজহাবের মতে, এই দুই রাকাত নামাজ অন্যান্য সাধারণ নামাজের মতো। শহরের বাইরে গিয়ে জামাতের সাথে পড়বে। কিরাত হবে উচ্চকণ্ঠে। নামাজান্তে খুতবা হবে একটি।
৬২৪. সুনানে আবু দাউদ: ১১৬৯।
৬২৫. সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৬।
৬২৬. তরজমা: অধমের অনূদিত তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন থেকে।
৬২৭. সুনানে আবু দাউদ: ১১৭৩।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন