📄 কবর জিয়ারতকারী যে দুআ পড়বে
(৪২৯) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই শেষ রাতে 'বাকি' নামক কবরস্থানে যেতেন। সেখানে গিয়ে বলতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَأَتَاكُمْ مَا تُوْعَدُوْنَ غَدًا مُؤَجَّلُوْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدِ.
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম দারা কাওমিন মুমিনিনা, ওয়া আতাকুম মা তুআদুনা গাদান মুয়াজ্জালুনা, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন। আল্লাহুম্মাগফির লিআহলি বাকিয়িল গারকাদি।
অর্থ: তোমাদের প্রতি সালাম, হে মুমিন সমপ্রদায়। তোমাদের প্রতিশ্রুত বিষয়ের নিকট তোমরা চলে এসেছ। আগামীতে আমরাও আসছি। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ, আপনি বাকিউল গারকাদ কবরস্থানের অধিবাসীদেরকে মাফ করে দিন। ৫৯২
(৪৩০) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কবর জিয়ারতের সময় কী বলব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন, তুমি বলবে-
السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنْكُمْ وَمِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ.
উচ্চারণ: আসসালামু আলা আহলিদ্দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা, ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাকদিমিনা মিনকুম ওয়া মিন্না ওয়াল মুসতাখিরিনা, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন।
অর্থ: হে মুমিন, মুসলিম কবরের বাসিন্দা, আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আগে-পরের সকল মুসলমানদের ওপর আল্লাহ দয়া করুন। আমরা অচিরেই আপনাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। ৫৯৩
(৪৩১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরের পাশে গিয়ে বলতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম দারা কাওমিম মু'মিনিন, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন।
অর্থ: হে কবরের অধিবাসী মুমিনগণ, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর আমরাও অচিরেই তোমাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। ৫৯৪
(৪৩২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
مَرَّ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورِ الْمَدِينَةِ، فَأَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ، فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا، وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার এক কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি কবরের দিকে মুখ করে এ দুআ পাঠ করলেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ، يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا، وَنَحْنُ بالأثر.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর। ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম। আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসার।
অর্থ: হে কবরের অধিবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদেরকে মাফ করুন। তোমরা আমাদের পূর্বসূরী, আমরা তোমাদের উত্তরসূরী। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৫৯৫
(৪৩৩) হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে কবর জিয়ারতের এ দুআ শিক্ষা দিতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ، وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَاحِقُوْنَ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মুমিনিা, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুন। আসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়াহ।
অর্থ: হে মুমিন করববাসী, তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো, ইনশাআল্লাহ। আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। ৫৯৬ - সুনানে নাসাঈ ও সুনানে ইবনে মাজায় لَلَاحِفُوْنَ এর পর নিচের বাক্যটি অতিরিক্ত এসেছে-
أَنْتُمْ لَنَا فَرَطُ، وَنَحْنُ لَكُمْ تَبَعُ.
উচ্চারণ: আনতুম লানা ফারাতুন ওয়া নাহনু লাকুম তাবা।
অর্থ: তোমরা আমাদের অগ্রবর্তী আমরা তোমাদের অনুগামী। ৫৯৭
(৪৩৪) হজরত আয়েশা রাদি. এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'বাকি' নামক কবরস্থানে এসে এ দুআ পড়লেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، أَنْتُمْ لَنَا فَرَطُ، وَإِنَّا بِكُمْ لَاحِقُوْنَ؛ اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُمْ وَلَا تُضِلَّنَا بَعْدَهُمْ.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম দারা কাওমিন মুমিনিন, আনতুম লানা ফারাতুন ওয়া ইন্না বিকুম লাহিকুন। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আযরাহুম ওয়া তুদিল্লানা বাদাহুম।
অর্থ: হে মুমিন কবরবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা আমাদের পূর্বসূরী। আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ, তাদের প্রতিদান বিনষ্ট কর না। তাদের পরে আমাদেরকে পথভ্রষ্ট কর না। ৫৯৮
কবর জিয়ারতকারী বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকার পড়বে। ঐ কবরবাসী ও সকল মুসলিম কবরবাসী এবং সকল মুসলমানের জন্য দুআ করবে। বেশি বেশি কবর জিয়ারত করা মুস্তাহাব। বুজুর্গ ও নেককার লোকদের কবরের পাশে বেশি সময় অবস্থান করা চাই।
কবর জিয়ারতকারী যা থেকে বারণ করবে
জিয়ারতকারী ব্যক্তি কাউকে কবরের পাশে চিল্লিয়ে কান্নাকাটি করতে দেখলে তাকে বারণ করবে, ধৈর্যধারণের উপদেশ দিবে। এছাড়াও শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ কাজে তাকে বাধা দিবে।
(৪৩৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِامْرَأَةٍ عِنْدَ قَبْرٍ وَهِيَ تَبْكِيْ، فَقَالَ: اتَّقِي اللَّهَ وَاصْبِرِي.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মহিলাকে কবরের পাশে কাঁদতে দেখে বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর। ৫৯৯
(৪৩৬) হজরত বশির বিন মাবাদ রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে-
بَيْنَمَا أَنَا أُمَاشِي رَسُولَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِذَا رَجُلٌ يَمْشِي فِي الْقُبُورِ عَلَيْهِ نَعْلَانِ، فَقَالَ: يَا صَاحِبَ السَّبْتِيَتَيْنِ، وَيْحَكَ أَلْقِ سِبْتِيَتَيْكَ.
অর্থ: একদা আমরা হাঁটছিলাম। তখন এক ব্যক্তিকে জুতা পরিধান করে কবরের ওপর হাঁটতে দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে জুতা পরিহিত ব্যক্তি, তুমি তোমার জুতা খুলে ফেল। ৬০০
সীমালঙ্ঘনকারীদের কবরের পাশ দিয়ে যেভাবে অতিক্রম করবে
(৪৩৭) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِأَصْحَابِهِ - يَعْنِي لِمَا وَصَلُوْا الْحِجْرَ دِيَارَ ثَمُودَ : لَا تَدْخُلُوا عَلَى هَؤُلَاءِ الْمُعَذِّبِينَ إِلَّا أَنْ تَكُوْنُوْا بَاكِينَ، فَإِنْ لَمْ تَكُوْنُوْا بَاكِيْنَ فَلَا تَدْخُلُوْا عَلَيْهِمْ ، لَا يُصِيبُكُمْ مَا أَصَابَهُمْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কওমে সামুদের এলাকা হিজরে পৌঁছলেন, তখন সাহাবিদেরকে বললেন, তোমরা এ শাস্তিপ্রাপ্তদের এলাকায় ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ কর। যদি না কাঁদ তাহলে তাদের এলাকায় প্রবেশ কর না। যেন তাদের ন্যায় তোমাদের ওপর শাস্তি না আসে। ৬০১
টিকাঃ
৫৯২. সহিহ মুসলিম: ৯৭৪, সুনানে নাসাঈ ৪/৬১, আমাল: ১৯২, নাসাঈ, মুয়াত্তা মালেক ১/২৪২, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮০।
৫৯৩. সহিহ মুসলিম: ৯৭৪।
৫৯৪. সুনানে আবু দাউদ: ৩২৩৭, সুনানে নাসাঈ ১/৯৩, মুসনাদে আহমাদ ২/৩০০, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪৩০৬।
৫৯৫. সুনানে তিরমিজি: ১০৫৩।
৫৯৬. সহিহ মুসলিম: ৯৭৫, সুনানে নাসাঈ ৪/৯৪, আমাল: ১০৯১, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৫৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৪৭।
৫৯৭. সুনানে নাসাঈ ৪/৯৪।
৫৯৮. ইবনুস সুন্নি: ৫৯১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৪৬।
৫৯৯. সহিহ বুখারি: ১২৫২, সহিহ মুসলিম: ৯২৬, সুনানে নাসাঈ ৪/২২।
৬০০. সুনানে আবু দাউদ: ৩২৩০, সুনানে নাসাঈ ৪/৯৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৬৮, আলআদাবুল মুফরাদ: ৭৭৫।
৬০১. সহিহ বুখারি: ৪৩৩, সহিহ মুসলিম: ২৯৮০।