📘 আল আযকার > 📄 মৃতের জন্য ইসালে সওয়াব

📄 মৃতের জন্য ইসালে সওয়াব


মৃতের জন্য ইসালে সওয়াব বা অন্যদের দুআ-দুরূদে মৃতের উপকার প্রসঙ্গে
সকল আলেম এ ব্যাপারে একমত যে, দুআ মৃত ব্যক্তির জন্য লাভজনক এবং এগুলো মৃত ব্যক্তির কবরে পৌঁছায়। এ মর্মে কুরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে-
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ.
অর্থ: পরবর্তীতে যারা আসবে তারা বলবে- হে আল্লাহ, আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের ভাইদেরকেও মাফ করে দিন। এবং ঐ সকল লোকদেরকেও ক্ষমা করে দিন যারা ঈমানের বিবেচনায় আমাদের অগ্রগামী। ৫৮৭
এছাড়াও এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এ সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রসিদ্ধ হাদিস আছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ, আপনি বাকিউল গারকাদের কবরবাসীদেরকে মাফ করে দিন। ৫৮৮ জানাযার নামাজের অধ্যায়ে যেসব দুআ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيَّنَا وَمَيِّتِنَا (আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনিা: হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত ও মৃতদেরকে মাফ করে দিন) ইত্যাদি।
কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব কবরে পৌঁছে কিনা? এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। শাফেয়ি মাজহাবের প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব কবরবাসীদের কাছে পৌঁছে না। ইমাম আহমাদ রহ. সহ কতক শাফেয়ি আলেমের মতে পৌঁছে। সুতরাং উত্তম হল, কুরআন তিলাওয়াতের পর দুআয় বলবে- হে আল্লাহ, আপনি এর সাওয়াব অমুককে পৌঁছে দিন। ৫৮৯
মৃত ব্যক্তির প্রশংসা ও তার ভালো দিকগুলো আলোচনা করা মুস্তাহাব
(৪২৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
مَرُّوا بِجَنَازَةٍ فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْرًا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَجَبَتْ. ثُمَّ مَرُّوا بِأُخْرَى فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا شَرًّا، فَقَالَ: وَجَبَتْ، فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: مَا وَجَبَتْ؟ قَالَ: هَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْرًا فَوَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، وَهَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرًّا فَوَجَبَتْ لَهُ النَّارُ، أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللَّهِ، فِي الْأَرْضِ
অর্থ: কিছু লোক একটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা তার ভালো দিকগুলোর উল্লেখ করে তার প্রশংসা করল, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে। আরেকটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার মন্দ দিকগুলো উল্লেখ করে তাকে মন্দ বলল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে। তখন উমর রাদি. বললেন, কী ওয়াজিব হয়েছে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার প্রশংসা করেছে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়েছে। আর যার মন্দ বলা হয়েছে তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়েছে। তোমরা পৃথিবীতে সাক্ষীস্বরূপ।
(৪২৬) হজরত আবুল আসওয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ وَقَدْ وَقَعَ بِهَا مَرَضٌ، فَجَلَسْتُ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَمَرَّتْ بِهِمْ جَنَازَةٌ، فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا خَيْرًا، فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : وَجَبَتْ ثُمَّ مُرَّ بِأُخْرَى فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا خَيْرًا، فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: وَجَبَتْ. ثُمَّ مُرَّ بِالثَّالِثَةِ فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا شَرًّا، فَقَالَ: وَجَبَتْ ، فَقَالَ أَبُو الْأَسْوَدِ: فَقُلْتُ: وَمَا وَجَبَتْ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: قُلْتُ كَمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّمَا مُسْلِمٍ شَهِدَ لَهُ أَرْبَعَةُ بِخَيْرٍ أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ. فَقُلْنَا: وَثَلَاثَةُ؟ قَالَ : وَثَلَاثَةٌ. فَقُلْنَا: وَاثْنَانِ؟ قَالَ: وَاثْنَانِ. ثُمَّ لَمْ نَسْأَلْهُ عَنِ الْوَاحِدِ.
অর্থ: আমি মদিনায় এসে উমর রাদি. এর কাছে বসলাম। এ সময় সাহাবায়ে কেরামের পাশ দিয়ে একটি কফিন নিয়ে যাওয়া হল। তখন সে মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করা হল। তা শুনে উমর রাদি. বললেন, তার জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে। অপর একটি কফিন নিয়ে গেলে তারও প্রশংসা করা হয়। উমর রাদি. বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। তৃতীয়বার আরেকটি কফিন নিয়ে যাওয়া হল। এবং তার নিন্দা করা হল। তখন উমর রাদি. বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে।
আবুল আসওয়াদ বলেন, আমি বললাম, হে আমিরুল মুমিনিন, কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? তখন উমর রাদি. বললেন, নবিজি যেমনটি বলেছেন আমিও তাই বলেছি। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে যদি চারজন লোক ভালো বলে, তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করবেন। আমরা বললাম, যদি তিনজন বলে? তিনি বললেন, তিনজন বললেও জান্নাতে যাবে। এরপর বললাম, যদি দুইজন বলে? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুইজন বললেও জান্নাতে যাবে। এরপর একজন সম্পর্কে আর জিজ্ঞাসা করি নাই। এ সম্পর্কে আরো অনেক হাদিস রয়েছে।
মৃত ব্যক্তিকে মন্দ বলা নিষেধ
(৪২৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَسُبُّوا الْأَمْوَاتَ؛ فَإِنَّهُمْ قَدْ أَفْضَوْا إِلَى مَا قَدَّمُوا.
অর্থ: তোমরা মৃত ব্যক্তিদেরকে গালি দিও না। তারা যে কাজকর্ম করেছে, তার প্রতিদান পেয়ে গেছে। ৫৯০
(৪২৮) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
اذْكُرُوا مَحَاسِنَ مَوْتَاكُمْ، وَكُفُّوا عَنْ مَسَاوِيْهِمْ.
অর্থ: তোমরা মৃত ব্যক্তিদের গুণকীর্তন কর তথা ভালো দিকগুলোর আলোচনা কর এবং তাদের মন্দ দিকগুলো বলা থেকে বিরত থাক। -ইমাম তিরমিজি রহ. একে দুর্বল বলেছেন। ৫৯১
ইমাম নববি রহ. বলেন, যদি কোন মুসলমান প্রকাশ্য ফাসেক না হয়, তাকে গালি দেয়া নিষেধ। আর কাফের ও প্রকাশ্য গুনাহে লিপ্ত মুসলমানের ব্যাপারে পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষীদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। তাদের থেকে বিরোধপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। তবে পূর্বের হাদিস দ্বারা বুঝা যায় তাদেরকে গালি দেয়া নিষেধ।
কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের মন্দ বলার বিষয়েও অনেক প্রমাণ রয়েছে। যেমন কুরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা অনেক মৃত মন্দলোকের মন্দ বর্ণনা করেছেন। আমাদেরকে সেগুলো তিলাওয়াত ও প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া এক্ষেত্রে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। যেমন পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আমর বিন লুহাই এর হাদিস, আবু রুগালের ঘটনা ইত্যাদি। পূর্বে আরেকটি সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশ দিয়ে জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু লোক মৃতের মন্দ বলছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বাধা দেননি। বরং বলেছেন وَجَبَتْ অর্থাৎ তার জন্য জাহান্নام ওয়াজিব হয়ে গেছে।
এসব বিরোধপূর্ণ প্রমাণের সমন্বয়ে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন কথা বলেন। তবে সঠিক ও প্রসিদ্ধ কথা হল, মৃত কাফেরদের মন্দ বলা যাবে। আর প্রকাশ্য ফাসেক, বিদআতি ও এজাতীয় বড় অপরাধী মুসলমানের মন্দ দিকলোগুলো মানুষের কল্যাণের প্রয়োজনে বলা জায়েজ আছে। যেমন, তাদের অবস্থার ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করা; তাদের বক্তব্য থেকে মানুষকে দূরে রাখা এবং তাদের কাজকর্ম অনুসরণ থেকে মানুষকে দূরে রাখা ইত্যাদি। আর যদি প্রয়োজন না থাকে, তাহলে বলা জায়েজ নেই।
এছাড়াও মুহাদ্দিসিনে কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে হাদিসের বর্ণনাকারীদের দোষ প্রকাশ করা জায়েজ বলেছেন।

টিকাঃ
৫৮৭. সুরা হাশর: ১০।
৫৮৮. সহিহ মুসলিম: ৯৭৪।
৫৮৯. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে, কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব মৃতের কাছে পৌঁছে। তাদের মতে, সকল নেক আমলের সওয়াব মৃতের কাছে পৌঁছে।
৫৯০. সহিহ বুখারি: ১৩৯৩, সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৯৯, সুনানে নাসাঈ ৪/৫২-৫৩, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮০, সুনানে দারিমি: ২৫১৪।
৫৯১. সুনানে তিরমিজি: ১০১৯, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০।

📘 আল আযকার > 📄 কবর জিয়ারতকারী যে দুআ পড়বে

📄 কবর জিয়ারতকারী যে দুআ পড়বে


(৪২৯) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই শেষ রাতে 'বাকি' নামক কবরস্থানে যেতেন। সেখানে গিয়ে বলতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَأَتَاكُمْ مَا تُوْعَدُوْنَ غَدًا مُؤَجَّلُوْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدِ.
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম দারা কাওমিন মুমিনিনা, ওয়া আতাকুম মা তুআদুনা গাদান মুয়াজ্জালুনা, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন। আল্লাহুম্মাগফির লিআহলি বাকিয়িল গারকাদি।
অর্থ: তোমাদের প্রতি সালাম, হে মুমিন সমপ্রদায়। তোমাদের প্রতিশ্রুত বিষয়ের নিকট তোমরা চলে এসেছ। আগামীতে আমরাও আসছি। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ, আপনি বাকিউল গারকাদ কবরস্থানের অধিবাসীদেরকে মাফ করে দিন। ৫৯২
(৪৩০) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কবর জিয়ারতের সময় কী বলব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন, তুমি বলবে-
السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنْكُمْ وَمِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ.
উচ্চারণ: আসসালামু আলা আহলিদ্দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা, ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাকদিমিনা মিনকুম ওয়া মিন্না ওয়াল মুসতাখিরিনা, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন।
অর্থ: হে মুমিন, মুসলিম কবরের বাসিন্দা, আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আগে-পরের সকল মুসলমানদের ওপর আল্লাহ দয়া করুন। আমরা অচিরেই আপনাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। ৫৯৩
(৪৩১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরের পাশে গিয়ে বলতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম দারা কাওমিম মু'মিনিন, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন।
অর্থ: হে কবরের অধিবাসী মুমিনগণ, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর আমরাও অচিরেই তোমাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। ৫৯৪
(৪৩২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
مَرَّ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورِ الْمَدِينَةِ، فَأَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ، فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا، وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার এক কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি কবরের দিকে মুখ করে এ দুআ পাঠ করলেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ، يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا، وَنَحْنُ بالأثر.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর। ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম। আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসার।
অর্থ: হে কবরের অধিবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদেরকে মাফ করুন। তোমরা আমাদের পূর্বসূরী, আমরা তোমাদের উত্তরসূরী। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৫৯৫
(৪৩৩) হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে কবর জিয়ারতের এ দুআ শিক্ষা দিতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ، وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَاحِقُوْنَ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মুমিনিা, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুন। আসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়াহ।
অর্থ: হে মুমিন করববাসী, তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো, ইনশাআল্লাহ। আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। ৫৯৬ - সুনানে নাসাঈ ও সুনানে ইবনে মাজায় لَلَاحِفُوْنَ এর পর নিচের বাক্যটি অতিরিক্ত এসেছে-
أَنْتُمْ لَنَا فَرَطُ، وَنَحْنُ لَكُمْ تَبَعُ.
উচ্চারণ: আনতুম লানা ফারাতুন ওয়া নাহনু লাকুম তাবা।
অর্থ: তোমরা আমাদের অগ্রবর্তী আমরা তোমাদের অনুগামী। ৫৯৭
(৪৩৪) হজরত আয়েশা রাদি. এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'বাকি' নামক কবরস্থানে এসে এ দুআ পড়লেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، أَنْتُمْ لَنَا فَرَطُ، وَإِنَّا بِكُمْ لَاحِقُوْنَ؛ اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُمْ وَلَا تُضِلَّنَا بَعْدَهُمْ.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম দারা কাওমিন মুমিনিন, আনতুম লানা ফারাতুন ওয়া ইন্না বিকুম লাহিকুন। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আযরাহুম ওয়া তুদিল্লানা বাদাহুম।
অর্থ: হে মুমিন কবরবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা আমাদের পূর্বসূরী। আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ, তাদের প্রতিদান বিনষ্ট কর না। তাদের পরে আমাদেরকে পথভ্রষ্ট কর না। ৫৯৮
কবর জিয়ারতকারী বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকার পড়বে। ঐ কবরবাসী ও সকল মুসলিম কবরবাসী এবং সকল মুসলমানের জন্য দুআ করবে। বেশি বেশি কবর জিয়ারত করা মুস্তাহাব। বুজুর্গ ও নেককার লোকদের কবরের পাশে বেশি সময় অবস্থান করা চাই।
কবর জিয়ারতকারী যা থেকে বারণ করবে
জিয়ারতকারী ব্যক্তি কাউকে কবরের পাশে চিল্লিয়ে কান্নাকাটি করতে দেখলে তাকে বারণ করবে, ধৈর্যধারণের উপদেশ দিবে। এছাড়াও শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ কাজে তাকে বাধা দিবে।
(৪৩৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِامْرَأَةٍ عِنْدَ قَبْرٍ وَهِيَ تَبْكِيْ، فَقَالَ: اتَّقِي اللَّهَ وَاصْبِرِي.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মহিলাকে কবরের পাশে কাঁদতে দেখে বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর। ৫৯৯
(৪৩৬) হজরত বশির বিন মাবাদ রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে-
بَيْنَمَا أَنَا أُمَاشِي رَسُولَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِذَا رَجُلٌ يَمْشِي فِي الْقُبُورِ عَلَيْهِ نَعْلَانِ، فَقَالَ: يَا صَاحِبَ السَّبْتِيَتَيْنِ، وَيْحَكَ أَلْقِ سِبْتِيَتَيْكَ.
অর্থ: একদা আমরা হাঁটছিলাম। তখন এক ব্যক্তিকে জুতা পরিধান করে কবরের ওপর হাঁটতে দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে জুতা পরিহিত ব্যক্তি, তুমি তোমার জুতা খুলে ফেল। ৬০০
সীমালঙ্ঘনকারীদের কবরের পাশ দিয়ে যেভাবে অতিক্রম করবে
(৪৩৭) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِأَصْحَابِهِ - يَعْنِي لِمَا وَصَلُوْا الْحِجْرَ دِيَارَ ثَمُودَ : لَا تَدْخُلُوا عَلَى هَؤُلَاءِ الْمُعَذِّبِينَ إِلَّا أَنْ تَكُوْنُوْا بَاكِينَ، فَإِنْ لَمْ تَكُوْنُوْا بَاكِيْنَ فَلَا تَدْخُلُوْا عَلَيْهِمْ ، لَا يُصِيبُكُمْ مَا أَصَابَهُمْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কওমে সামুদের এলাকা হিজরে পৌঁছলেন, তখন সাহাবিদেরকে বললেন, তোমরা এ শাস্তিপ্রাপ্তদের এলাকায় ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ কর। যদি না কাঁদ তাহলে তাদের এলাকায় প্রবেশ কর না। যেন তাদের ন্যায় তোমাদের ওপর শাস্তি না আসে। ৬০১

টিকাঃ
৫৯২. সহিহ মুসলিম: ৯৭৪, সুনানে নাসাঈ ৪/৬১, আমাল: ১৯২, নাসাঈ, মুয়াত্তা মালেক ১/২৪২, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮০।
৫৯৩. সহিহ মুসলিম: ৯৭৪।
৫৯৪. সুনানে আবু দাউদ: ৩২৩৭, সুনানে নাসাঈ ১/৯৩, মুসনাদে আহমাদ ২/৩০০, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪৩০৬।
৫৯৫. সুনানে তিরমিজি: ১০৫৩।
৫৯৬. সহিহ মুসলিম: ৯৭৫, সুনানে নাসাঈ ৪/৯৪, আমাল: ১০৯১, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৫৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৪৭।
৫৯৭. সুনানে নাসাঈ ৪/৯৪।
৫৯৮. ইবনুস সুন্নি: ৫৯১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৪৬।
৫৯৯. সহিহ বুখারি: ১২৫২, সহিহ মুসলিম: ৯২৬, সুনানে নাসাঈ ৪/২২।
৬০০. সুনানে আবু দাউদ: ৩২৩০, সুনানে নাসাঈ ৪/৯৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৬৮, আলআদাবুল মুফরাদ: ৭৭৫।
৬০১. সহিহ বুখারি: ৪৩৩, সহিহ মুসলিম: ২৯৮০।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন