📘 আল আযকার > 📄 জানাযার নামাজের দুআসমূহ

📄 জানাযার নামাজের দুআসমূহ


জানাযার নামাজ ফরজে কেফায়া। অনুরূপভাবে গোসল দেয়া, কাফন পরানো ও দাফন করাও ফরজে কেফায়া। এ বিষটিতে সকলেই একমত। জানাযার নামাজ আদায়কারীর সংখ্যা কত হতে হবে- এ ব্যাপারে চারটি মত রয়েছে- এক. একজন হলেই চলবে। এটিই অধিকাংশের মত। দুই. দুইজন শর্ত। তিন. তিনজন শর্ত। চার. চারজন শর্ত। তারা একাকী পড়ুক বা জামাতসহ।
জানাযার নামাজ পড়ার পদ্ধতি হল, চার তাকবির বলা। এই চার তাকবির জরুরি। একটি না বললেও নামাজ শুদ্ধ হবে না। পাঁচটি বললে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে কিনা-এ ব্যাপারে শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের দুটি বক্তব্য রয়েছে। তবে সঠিক কথা হল, বাতিল হবে না। যদি ইমাম পাঁচ তাকবির বলে, তাহলে মুক্তাদি নামাজ ছেড়ে পৃথক হবে না; আবার ইমামের অনুসরনও করবে না। এটিই সঠিক ও প্রসিদ্ধ অভিমত। তবে ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরানোর জন্য অপেক্ষা করবে নাকি তৎক্ষণাৎ সালাম ফিরিয়ে ফেলবে-এ ব্যাপারেও দুটি মত রয়েছে। সঠিক কথা হল, অপেক্ষা করবে। প্রত্যেক তাকবিরের সময় হাত উঠানো মুস্তাহাব। ৫৬৫ তাকবির কেমন হবে, কীভাবে বলতে হবে ইত্যাদি সববিষয় নামাজের অধ্যায়ে আলোচনা গেছে।
তাকবিরগুলোর মাঝে যা পড়তে হবে
প্রথম তাকবিরের পর সুরা ফাতিহা পড়বে। ৫৬৬ দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ শরিফ পড়বে। তৃতীয় তাকবিরের পর মৃতের জন্য দুআ করবে। এক্ষেত্রে খালেছ দুআ পড়া ওয়াজিব। চতুর্থ তাকবিরের পর কোন কিছু পড়বে না। তবে আমরা সামনে যাকিছু আলোচনা করব, সেগুলো পড়া মুস্তাহাব।
প্রথম তাকবিরের পর সুরা ফাতিহার আগে আউজুবিল্লাহ, সানা এবং সুরা ফাতিহার পর অন্য কোন সুরা পড়বে কিনা- এ ব্যাপারে শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের তিনটি অভিমত রয়েছে। এক. সবগুলো পড়া মুস্তাহাব। দুই. মুস্তাহাব নয়। তিন. শুধু আউজুবিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব; এটিই সবচেয়ে সহিহ অভিমত। সুরা ফাতিহার পর আমিন বলাও মুস্তাহাব। ৫৬৭
(৪১০) হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি এক জানাযার নামাজ পড়ালেন। সে নামাজে সুরা ফাতিহা পড়লেন আর বললেন, তোমরা জেনে রেখ, এটি সুন্নাত। ৫৬৮
দুআগুলো আস্তে পড়া সুন্নাত। রাতে জানাযার নামাজ পড়া হোক বা দিনে। এটিই সহিহ ও প্রসিদ্ধ মাজহাব। তবে একদল উলামায়ে কেরাম বলেন, দিনে নামাজ পড়লে আস্তে পড়বে আর রাতে পড়লে জোরে পড়বে।
দ্বিতীয় তাকবিরের পর অন্তত এতটুকু পড়া ওয়াজিব- 'আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ' (হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর রহমত বর্ষণ করুন) আর 'ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ' (এবং মুহাম্মাদের পরিবারের ওপর) বলা মুস্তাহাব। অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে এই দ্বিতীয় অংশটি ওয়াজিব নয়। তবে কেউ কেউ বলেন, ওয়াজিব। এর পর সময় থাকলে মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য দুআ করা চাই। ইমাম শাফেয়ি রহ. তা বলেছেন এবং শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত। মুজানি রহ. ইমাম শাফেয়ি রহ. থেকে বর্ণনা করেন, এ সময় আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করাও মুস্তাহাব। দরুদ শরিফ পড়ার বিষয়ে অনেক হাদিস এসেছে। আমরা এখানে সংক্ষেপনের জন্য সেগুলো উল্লেখ করিনি।
তৃতীয় তাকবিরের পর মৃতের জন্য দুআ করবে। এর সর্বনিম্ন পরিমাণ হল, যতটুকু বললে সেটিকে দুআ বলা হয়ে থাকে। যেমন, এতটুকু বলা- رَحِمَهُ اللهُ (রাহিমাহুল্লাহ): আল্লাহ তার ওপর রহম করুন। غَفَرَ اللهُ لَهُ (গাফারাল্লাহু লাহ): আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ (আল্লাহুম্মাগফিরলি): হে আল্লাহ, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন। اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ (আল্লাহুম্মার হামহু): হে আল্লাহ, আপনি তার ওপর রহম করুন।
অথবা اَللَّهُمَّ الْطُفْ بِهِ (আল্লাহুম্মাল লতুফ বিহ): হে আল্লাহ, তার প্রতি দয়া করুন, ইত্যাদি। হাদিস শরিফে অনেক দুআ এসেছে, সেগুলো পড়া মুস্তাহাব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহিহ হাদিস হল-
(৪১১) হজরত আউফ বিন মালেক রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার নামাজ পড়ালেন। আমি তাঁর থেকে এটি মুখস্থ করেছি। তিনি নামাজে এই দুআ করছিলেন। এমন দুআ শুনে আমি আকাঙ্ক্ষা করছিলাম, যদি মৃত ব্যক্তিটি আমি হতাম। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقَّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلًا خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ و مِنْ عَذَابِ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লাহু, ওয়ার হামহু ওয়া আফিহি ওয়া'ফু আনহু, ওয়া আকরিম নুজুলাহু, ওয়া ওয়াসসি মুদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিলমায়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি। ওয়া নাক্কিহি মিনাল খাতাইয়া কামা নাক্কাইতাস সাওবাল আবইয়াদা মিনাদ্দানাসি। ওয়া আবদিলহু দারান খাইরান মিন দারিহি ওয়া আহলান খাইরান মিন আহলিহি, ওয়া জাওযান খাইরান মিন জাওযিহি। ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা ওয়া আয়িজহু মিন আজাবিল কাবরি ওয়া মিন আজাবিন্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন, তার প্রতি দয়া করুন, মার্জনা করুন এবং তাকে সুরক্ষা দিন। তার আপ্যায়ন সম্মানজনক করুন, তার সমাধি প্রসস্থ করনুন। তাকে ধুয়ে দিন পানি দিয়ে, বরফ দিয়ে এবং শিশির দিয়ে। ময়লা থেকে সাদা কাপড় যেভাবে পরিষ্কার করেন তাকেও তেমনি পাপ থেকে পাক-পরিষ্কার করে দিন। তাকে দিন দুনিয়ার বাড়ি থেকে উত্তম বাড়ি, উত্তম পরিবার এবং শ্রেষ্ঠ স্ত্রী। তাকে জান্নাতে জায়গা দিন এবং কবর ও জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি দিন। ৫৬৯
(৪১২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জানাযার নামাজে এ দুআটি পড়লেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا، وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلَامِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيْمَانِ، اللهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ وَلَا تَفْتِنَا بَعْدَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়িনা ওয়া মাইয়িতিনা ওয়া সাগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উনসানা, ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা। আল্লাহুম্মা মান আহয়াইতাহু মিন্না ফা আহয়িহি আলাল ইসলামি, ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফা তাওয়াফফাহু আলাল ঈমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আযরাহু ওয়া লা তাফতিন্না বাদাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত-মৃত, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, উপস্থিত- অনুপস্থিত সবাইকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ, আমাদের যাদেরকে হায়াতে রাখবেন তাদেরকে ইসলামের ওপর রাখুন এবং যাদেরকে মৃত্যু দিবেন ঈমান ওপর দিবেন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে তার বিচ্ছেদ-বেদনার সওয়াব থেকে বঞ্চিত কর না এবং তার মৃত্যুর পরে আমাদেরকে ভ্রষ্ট কর।
না। -হাকিম রহ. বলেন, হাদিসটি ইমাম বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। ইমাম বুখারি রহ. বলেন, উক্ত দুআটি আবু ইবরাহিম তার পিতা থেকে রেওয়ায়েত করেছেন- যা উক্ত দুআর সবচেয়ে সহিহ সনদ। আর এ অধ্যায়ে আউফ বিন মালেকের হাদিসটি সবচেয়ে সহিহ। ৫৭০
(৪১৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি-
إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ.
অর্থ: তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযায় তার জন্য বিশেষভাবে দুআ কর। ৫৭১
(৪১৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি জানাযার নামাজে দুআ করা প্রসঙ্গে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبُّهَا ، وَأَنْتَ خَلَقْتَهَا، وَأَنْتَ هَدَيْتَهَا لِلْإِسْلَامِ، وَأَنْتَ قَبَضْتَ رُوحَهَا، وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِسِرِّهَا وَعَلَانِيَتِهَا، جِئْنَاكَ شُفَعَاءَ فَاغْفِرْ لَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বুহা ওয়া আনতা খালাকতাহা ওয়া আনতা হাদাইতাহা লিল ইসলামি, ওয়া আনতা কাবাদতা রুহানা ওয়া আনতা আলামু বিসিররিহা ওয়া আলানিয়াতিহা, যিনাকা শুফাআ ফাগফির লাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমার রব। আপনি আমার সৃষ্টিকর্তা। আপনি আমাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছেন। আপনি মৃত্যুদাতা। আপনি গোপন- প্রকাশ্য বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অবগত। আপনি কিয়ামত দিবসে শাফাআত কবুল করবেন। আপনি তাকে ক্ষমা করুন। ৫৭২
(৪১৫) হজরত ওয়াসেল বিন আসকা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে একজন মুসলমানের জানাযার নামাজ আদায় করলেন, এরপর আমি তাকে এ দুআ করতে শুনেছি-
اللَّهُمَّ إِنَّ فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ فِي ذِمَّتِكَ، وَحَبْلِ جِوَارِكَ، فَقِهِ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ النَّارِ وَأَنْتَ أَهْلُ الْوَفَاءِ وَالْحَقِّ، فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না ফুলানাবনা ফুলানিন ফি জিম্মাতিকা ওয়া হাবলি যিওয়ারিকা, ফাকিহি মিন ফিতনাতিল কাবরি ওয়া আজাবিন্নারি ওয়া আনতা আহলুল ওয়াফায়ি ওয়াল হাক্কি। ফাগফির লাহু ওয়ার হামহু ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, অমুকের ছেলে অমুক আপনার দায়িত্বে, আপনার নিকটে। তাকে কবরের আজাব ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আপনি ওয়াদা রক্ষাকারী ও প্রশংসার অধিকারী। তাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
তাছাড়া ইমাম শাফেয়ি রহ. এ সকল হাদিস ও অন্যান্য হাদিস থেকে নিচের দুআটি চয়ন করেছেন। এ দুআটি পড়া তিনি ভালো মনে করেন। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ هَذَا عَبْدُكَ ابْنُ عَبْدِكَ، خَرَجَ مِنْ رَوْحِ الدُّنْيَا وَسَعْتُهَا، وَمَحْبُوْبَهُ وَأَحْبَاتَهُ فِيهَا، إِلى ظُلْمَةِ الْقَبْرِ وَمَا هُوَ لَا قِيَهِ، كَانَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، وَأَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ، وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ ، اللَّهُمَّ إِنَّهُ نَزَلَ بِكَ وَأَنْتَ خَيْرُ مَنْزُولٍ بِهِ، وَأَصْبَحَ فَقِيْراً إِلَى رَحْمَتِكَ، وَأَنْتَ غَنِيٌّ عَنْ عَذَابِهِ، وَقَدْ جِئْنَاكَ رَاغِبِيْنَ إِلَيْكَ، شُفَعَاءَ لَهُ، اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مُحْسِناً فَزِدْ فِي إِحْسَانِهِ، وَإِنْ كَانَ مُسِيْئاً فَتَجَاوَزْ عَنْهُ، وَآتِهِ بِرَحْمَتِكَ رِضَاكَ، وَقِهِ فِتْنَةَ الْقَبْرِ وَعَذَابَهُ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَجَافٍ الْأَرْضَ عَنْ جَنْبَيْهِ، وَلَقِهِ بِرَحْمَتِكَ الْأَمْنَ مِنْ عَذَابِكَ حَتَّى تَبْعَثَهُ إِلَى جَنَّتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাজা আবদুকা ইবনু আবদিকা, খারাজা মিন রাওহিদ্দুনয়া ওয়া সাআতিহা, ওয়া মাহবুবিহি ওয়া আহবাবিহি ফিহা, ইলা জুলমাতিল কাবরি ওয়া মা হুয়া লাকিহি। কানা ইয়াশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া রাসুলুক, ওয়া আনতা আলামু বিহ।
আল্লাহুম্মা ইন্নাহু নাজালা বিকা ওয়া আনতা খাইরু মানজুলিন বিহি, ওয়া আসবাহা ফাকিরান ইলা রাহমাতিকা, ওয়া আনতা গানিউন আন আজাবিহি, ওয়া কাদ যি’নাকা রাগিবিনা ইলাইকা, শুফাআ লাহ। আল্লাহুম্মা ইন কানা মুহসিনান ফাজিদ ফি ইহসানিহি, ওয়া ইন কানা মুসিআন ফাতাযাওয়াজ আনহু, ওয়া আতিহি বি-রাহমাতিকা রিদাকা। ওয়াকিহি ফিতনাতাল কাবরি ওয়া আজাবাহু, ওয়াফসাহ লাহু فی قبریہ, ওয়া যাফিল আরদা আন যানবাইহি, ওয়া লাক্কিহি বি-রাহমাতিকাল আমনা মিন আজাবিকা হাত্তা তাবআসাহু ইলা জান্নাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, সে আপনার গোলাম, গোলামের গোলাম। দুনিয়ার বিশ্রাম ও প্রশস্ততা থেকে, প্রিয়জন ও বন্ধু-বান্ধব থেকে বেরিয়ে কবরের অন্ধকারের দিকে এবং আমলনামার তিকে রওনা করেছে। দুনিয়ায় সে সাক্ষ্য দিত যে, আপনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। আপনি এ বিষয়ে সর্বজ্ঞাত। ওহে আল্লাহ, সে আপনার মেহমান হয়েছে, আপনিই তার শ্রেষ্ঠ মেজবান। সে আপনার রহমতের মুখাপেক্ষী এবং তাকে শাস্তি প্রদানের অমুখাপেক্ষী। আমরা আপনার কাছে বড় আশা নিয়ে এসেছি, তার পক্ষে সুপারিশ করতে। হে আল্লাহ, সে সৎ হলে তার প্রতি অফুরান অনুগ্রহ করুন, আর অসৎ হলে তাকে ক্ষমা করুন। স্বীয় অনুগ্রহে তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। তাকে কবরের পরীক্ষা ও শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। তার জন্য কবর প্রশস্ত করে দিন, তার পার্শ্বদ্বয় থেকে জমি প্রশস্ত করে দিন। স্বীয় দয়ায় তাকে আপনার শাস্তি থেকে সুরক্ষা দিন, জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছানো পর্যন্ত হে সর্বোচ্চ দয়ালু। -দুআটি মুখতাসারুল মুজানিতে আছে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি মৃত ব্যক্তি অল্প বয়স্ক হয়, তাহলে পিতা-মাতার জন্য দুআ করবে। এ দুআটি করবে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَهُمَا فَرَطاً، واجْعَلْهُ لَهُمَا سَلَفاً، وَاجْعَلْهُ لَهُمَا ذُخْراً، وَثَقِلْ بِهِ مَوَازِينَهُمَا، وَأَفْرَغَ الصَّبْرِ عَلَى قُلُوْبِهِمَا، وَلَا تَفْتِنُهُمَا بَعْدَهُ، وَلَا تَحْرِمْهُمَا أَجْرَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলহু লাহুমা ফারাতান, ওয়ায আলহু লাহুমা সালাফান, ওয়ায আলহু লাহুমা জুখরান, ওয়া সাক্কিল বিহি মাওয়াজিনাহুমা, ওয়া আফরিগিস সাবরা আলা কুলুবিহিমা ওয়া লা তাফতিনহুমা বাদাহু, ওয়া লা তাহরিমহুমা আযরাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে তাদের জন্য অগ্রগামী বানান, তাকে তাদের জন্য আগাম বানান, তাকে তাদের জন্য সওয়াবের ভাণ্ডার বানান। তার দ্বারা তাদের আমালনামা ভারী করুন, তাদের অন্তরে সবুর দান করুন। তার তার পশ্চাদে তাদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করবেন না এবং তার ভালো কাজ থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করবেন না। -এরপর উক্ত দুআর সাথে আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়িনা....শেষ পর্যন্ত পড়বে। ৫৭৩
চতুর্থ তাকবিরের পর জিকির করবে না; বরং সালাম ফিরিয়ে ফেলবে। তবে শাফেয়ি রহ. যে দুআর কথা বলেছেন সেগুলো পড়া মুস্তাহাব। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ وَلَا تَفْتِنَا بَعْدَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আযরাহু ওয়া লা তাফতিন্না বা'দাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, তার ভালো কাজ থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং তার পরে আমাদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করবেন না। -আবু আলি বিন আবু হুরায়রা বলেন, পূর্বসূরী উলামায়ে কেরام এ দুআটি পড়তেন-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَ فِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
তবে এই দুআ শাফেয়ি রহ. থেকে বর্ণিত নেই। এটি পড়লে ভালো। ইমাম নববি রহ. বলেন, বায়হাকি শরিফে বর্ণিত হাদিসের দ্বারা চতুর্থ তাকবিরের পর দুআর ব্যাপারে এই হাদিস দ্বারা দলিল দেয়া হয়। আবদুল্লাহ বিন আবু আউফা রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি তার ছেলের জানাযায় চতুর্থ তাকবিরের পর দুই তাকবিরের মাঝখানের সময় পরিমাণ দাঁড়িয়ে ইস্তিগফার ও দুআ পড়েছেন। এরপর বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করেছেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি চতুর্থ তাকবির বলে দাঁড়িয়ে থাকলেন। আমরা মনে করলাম তিনি পঞ্চম তাকবির বলবেন। কিন্তু না, তিনি পঞ্চম তাকবির না বলে অনেক্ষণ পর ডানদিকে ও বামদিকে সালাম ফেরালেন। নামাজ শেষ হলে আমরা বললাম, ব্যাপার কঅ? বলেলন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা করতে দেখেছি, এর থেকে একটুও বাড়িয়ে করিনি। অথবা তিনি বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করেছেন। হাকিম রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ। ৫৭৪
জানাযায় সালাম ফেরানো ও মামবুকের করণীয়
তাকবির ও দুআ শেষে অন্যান্য নামাজের ন্যায় উভয় দিকে সালাম ফেরাবে। যেমনটি পূর্বে আবদুল্লাহ বিন আবু আউফা এর হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে। সালামের হুকুম অন্যান্য নামাজের সালামের মতই। এটাই সহিহ ও বিশুদ্ধ অভিমত।
জানাযার নামাজ শুরু হওয়ার পর কোন ব্যক্তি এসে ইমামকে নামাজের কোন অংশে পেলে তৎক্ষণাৎ তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যাবে। সুরা ফাতিহা পড়ে বাকি দুআগুলো তারতিব মতো নিজে নিজে পড়বে। ইমাম যা পড়ে তা পড়বে না। মাসবুক মুক্তাদি তাকবির বলার পর যদি মুক্তাদি কোন দুআ পড়ার আগেই ইমাম তাকবির বলে ফেলে তাহলে মুক্তাদির সে দুআ পড়তে হবে না। যেমন অন্যান্য নামাজে পড়তে হয় না।
মুক্তাদির তাকবির ও দুআ শেষ করার আগেই যদি ইমাম সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে মুক্তাদি বাকি তাকবির ও দুআগুলো তারতিবের সঙ্গে পড়বে। এটিই আমাদের সহিহ ও প্রসিদ্ধ মাজহাব। ৫৭৫

টিকাঃ
৫৬৫. হানাফি মাজহাব মতে হাত উঠাবে না।
৫৬৬. হানাফি মাজহাব মতে, প্রথম তাকবিরের পর সুরা ফাতিহা পড়বে না; বরং শুধু সানা পড়বে। (হেদায়া ১/১৮০)
৫৬৭. হানাফিদের মতে প্রথম তাকবিরের পর আল্লার প্রশংসা করবে। যেমন ছানা। প্রশংসার বাক্য ছাড়া অন্য কিছু পড়বে না। (হেদায়া ১/১৮০)
৫৬৮. সহিহ বুখারি: ১৩৩৫, সুনানে আবু দউদ: ৩১৯৮, সুনানে তিরমিজি: ১০২৬, সুনানে নাসাঈ ৪/৭৪।
৫৬৯. সহিহ মুসলিম: ৯৬৩, সুনানে তিরমিজি: ১০২৫, সুনানে নাসাঈ ৪/৭৩, মুসনাদে আহমাদ ৬/২৩।
৫৭০. সুনানে তিরমিজি: ১০২৪, সুনানে আবু দাউদ: ৩২০১, সুনানে বাইহাকি ৪/৪১, আমাল: ১০৮০, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৯৮, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৬৮, ইবনে হিব্বান: ৭৫৭, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৫৮।
৫৭১. সুনানে আবু দাউদ: ৩১৯৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৯৭, মাওয়ারিদ: ৭৫৪।
৫৭২. সুনানে আবু দাউদ: ৩২০০, আমাল: ১০৭৬, নাসাঈ।
৫৭৩. হানাফি উলামায়ে কেরাম বলেন, নাবালেগ বাচ্চাদের জন্য ইস্তিগফার করবে না। বরং নাবালেগ ছেলে হলে এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا، وَاجْعَلْهُ لَنَا أَجْرًا وَذُخْرًا، وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا مُشَفَّعًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলহু লানা ফারাতান ওয়ায আলহু না আযরান ওয়া জুখরান, ওয়ায আলহু লানা শাফিআন ওয়া মুশাফফাআ।
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী বানান, তাকে আমাদের জন্য সওয়াব ও ভাণ্ডার বানান। তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানান এবং তার সুপারিশ কবুল করুন।
আর নাবালেগ মেয়ে হলে এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا، وَاجْعَلْهَا لَنَا أَجْرًا وَذُخْرًا، وَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعة مُشَفَعة.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলহা লানা ফারাতান ওয়ায আলহা না আযরান ওয়া জুখরান, ওয়ায আলহা লানা শাফিআতান ওয়া মুশাফফাআতান।
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী বানান, তাকে আমাদের জন্য সওয়াব ও ভাণ্ডার বানান। তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানান এবং তার সুপারিশ কবুল করুন।
৫৭৪. সুনানে বাইহাকি: ৪/৪২, মুসতাদরাকে হাকিম ১/৩৬০।
৫৭৫. হানাফি মাজহাব মতে, ইমাম যে অবস্থায় থাকেন সেখানেই এসে আগন্তুক ব্যক্তি শরিক হবে না; বরং পরবর্তী তাকবিরের জন্য অপেক্ষা করবে। ইমাম যখন পরবর্তী তাকবির বলবেন, তখন নামাজে শরিক হবে। এরপর ইমামের অনুসরণ করবে। ছুটে যাওয়া তাকবির ও দুআ আগে পড়বে না। বরং ইমাম সালাম ফেরানোর পরে শুরুতে ছুটে যাওয়া তাকবির ও দুআগুলো পড়ে সালাম ফেরাবে। (হেদায়া ১/১৮০-৮১)

📘 আল আযকার > 📄 দাফনের পর যে দুআ পড়বে ও তালকিন করা

📄 দাফনের পর যে দুআ পড়বে ও তালকিন করা


মৃতের খাটিয়ার সঙ্গে যারা যায় তারা যে দুআ পড়বে
তারা আল্লাহর জিকির-আজকার ও দুআ-দরুদে লিপ্ত থাকবে। আর ফিকির করতে থাকবে-মৃত ব্যক্তি যে অবস্থার মুখামুখী হতে যাচ্ছে, তার গন্তব্য কি হবে, তার সেখানে সে কী পাবে ইত্যাদি বিষয়। আর চিন্তা করবে যে, এটিই দুনিয়া ও দুনিয়াবাসীদের শেষ ঠিকানা।
অহেতুক কথাবার্তা থেকে একেবারেই বিরত থাকবে। কেননা এ সময়টা হল চিন্তা-ভাবনার। এসময় উদাসীনতা, খেল-তামাশা ও অহেতুক গল্পগুজব খুবই নিন্দনীয়। তাছাড়া অহেতুক গালগল্প তো সবসময়ই নিষিদ্ধ। তাহলে এ অবস্থায় সেগুলো কিরূপ মন্দ হতে পারে!
পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরাম বলেন, জানাযার সাথে চলন্ত ব্যক্তিরা নীরব থাকবে। তিলাওয়াত, যিজকির-আজকার ইত্যাদি উচ্চস্বরে করবে না। এর কারণ, হিকমত সুস্পষ্ট। আর তা হল, ঐ সময় চুপ থাকলে মন প্রশান্ত থাকবে, মৃত ব্যক্তি যে অবস্থার মুখামুখী হবে সেগুলো নিয়ে একান্তভাবে চিন্তা করা যাবে। তখন এটিই মূল বিষয়। এটিই হল সবচেয়ে সঠিক ও বাস্তব কথা। এক্ষেত্রে বিপরীত মত পোষণকারী আধিক্যতা দেখে ধোঁকায় পড়া যাবে না। হজরত ফুজাইল বিন ইয়াজ রাদি. বলেছেন, হেদায়েতের পথ আঁকড়ে ধর। এ পথের পথিক কম হলে তোমার সমস্যা নেই। ভ্রষ্টতার পথ থেকে দূরে থাক। পথভ্রষ্টদের আধিক্যতা দেখে তুমি ধোঁকা খেয়ো না।
এ কথার স্বপক্ষে সুনানে বায়হাকিতে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আর দিমাশক ও অন্যান্য দেশের মূর্খরা মৃতের সামনে খুব টেনে টেনে কুরআনে কারিম পড়ে এবং খুব বিকৃতি করে কুরআন পড়ে। এটি সকল উলামায়ে মতে হারাম। “আদাবুল কুররা” কিতাবে এ সংক্রান্ত বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করেছি।
পাশ দিয়ে কফিন গেলে বা দেখলে যে দুআ পড়বে
এই দুআটি পড়া মুস্তাহাব-
سُبْحَانَ الْحَيِّ الَّذِي لَا يَمُوْتُ.
উচ্চারণ: সুবহানাল হাইয়িল লাযি লা ইয়ামুতু।
অর্থ: ঐ সত্তার পবিত্রতা ঘোষণা করছি, যিনি চিরঞ্জীব। -ইমাম আবুল মাহাসেন রহ. বলেন, এই দুআটিও পড়বে-
لا إلهَ إِلَّا اللَّهُ الْحَيُّ الَّذِي لَا يَمُوْتُ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল হাইয়ুল লাযি লা ইয়ামুতু।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব। -এরপর মৃতের জন্য দুআ করবে ও প্রশংসার যোগ্য হলে প্রশংসা করবে, তবে প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করবে না।
মৃত ব্যক্তিকে যারা কবরে রাখবে তারা যে দুআ পড়বে
(৪১৬) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবরে লাশ রাখার সময় এই দুআ পড়তেন-
باسْمِ اللهِ وَعَلَى سُنَّةِ رَسُوْلِ اللهِ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি ওয়ালা সুন্নাতি রাসুলিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহর নামে ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকার ওপর রাখা হল। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৫৭৬
ইমাম শাফেয়ি রহ. ও তার অনুসারীরা উক্ত দুআর সাথে অন্য দুআও মুস্তাহাব বলেছেন। মুখতাসারুল মুজানি গ্রন্থে ইমাম শাফেয়ি রহ. থেকে একটি সুন্দর দুআ বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, যারা মৃত ব্যক্তিকে কবরে রাখবে, তারা এ দুআটি পড়বে-
ٱللَّهُمَّ أَسْلَمَهُ إِلَيْكَ ٱلْأَشِحَّاءُ مِنْ أَهْلِهِ وَوَلَدِهِ، وَقَرَابَتِهِ وَإِخْوَانِهِ، وَفَارَقَ مَنْ كَانَ يُحِبُّ قُرْبَهُ، وَخَرَجَ مِنْ سَعَةِ ٱلدُّنْيَا وَٱلْحَيَاةِ إِلَىٰ ظُلْمَةِ ٱلْقَبْرِ وَضِيْقِهِ، وَنَزَلَ بِكَ وَأَنْتَ خَيْرُ مَنْزُوْلٍ بِهِ، إِنْ عَاقَبْتَهُ فَبِذَنْبٍ، وَإِنْ عَفَوْتَ عَنْهُ فَأَنْتَ أَهْلُ ٱلْعَفْوِ، أَنْتَ غَنِيٌّ عَنْ عَذَابِهِ، وَهُوَ فَقِيْرٌ إِلَىٰ رَحْمَتِكَ، ٱللَّهُمَّ ٱشْكُرْ حَسَنَتَهُ، وَٱغْفِرْ سَيِّئَتَهُ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ ٱلْقَبْرِ، وَٱجْمَعْ لَهُ بِرَحْمَتِكَ ٱلْأَمْنَ مِنْ عَذَابِكَ، وَٱكْفِهِ كُلِّ هَوْلٍ دُونَ ٱلْجَنَّةِ، ٱللَّهُمَّ ٱخْلُفْهُ فِي تَرِكَتِهِ فِي ٱلْغَابِرِينَ، وَٱرْفَعْهُ فِي عِلِّيِّينَ، وَعُدْ عَلَيْهِ بِفَضْلِ رَحْمَتِكَ يَا أَرْحَمَ ٱلرَّاحِمِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আসলামাহু ইলাইকাল আশিহহাউ মিন আহলিহি ওয়া ওয়ালাদিহি, ওয়া কারাবাতিহি ওয়া ইখওয়ানিহ। ওয়া ফারাকা মান কানা যুহিব্বু কুরবাহু ওয়া খারাজা মিন সাআতিদ্দুনিয়া ওয়াল হায়াতি ইলা জুলমাতিল কাবরি ওয়া দাইকিহ। ওয়া নাজালা বিকা ওয়া আনতা খাইরু মানজুলিন বিহ। ইন আকাবতাহু ফাবিজানবিন, ওয়া ইন আফাউতা আনহু ফা আনতা আহলুল আফভি, আনতা গানিয়্যুন আন আজাবিহ ওয়া ফাকিরুন ইলা রাহমাতিক। আল্লাহুম্মাশ কুর হাসানাতাহু, ওয়াগফির সাইয়ি আতাহু ওয়া আয়িজহু মিন আজাবিল কাবরি। ওয়াজমা লাহু বি রাহমাতিকাল আমনা মিন আজাবিকা ওয়াকফিহি কুল্লা হাওলিন দুনাল জান্নাহ। আল্লাহুম্মাখ লুফহু فی ترکتہ فی الغابرین, ওয়ারফাহু فی الیین, ওয়া উদ আলাইহি বি ফাদলি রাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে তার পরিবার, সন্তানাদি, আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবের কিছু হতভাগ্যরা আপনার সোপর্দ করে যাচ্ছে। সে প্রিয়জনকে ছেড়ে চলে গেছে। দুনিয়ার প্রশস্ততা ও জীবন থেকে কবরের অন্ধকার ও সঙ্কীর্ণতার দিকে রওনা করেছে। সে আপনার মেহমান হয়েছে, আপনিই তার শ্রেষ্ঠ মেজবান। তাকে শাস্তি দিলে পাপের দরুন দিতে পারেন, আর ক্ষমা করলে তো আপনি ক্ষমাশীল। তাকে দিতে আপনি মুখাপেক্ষী নয়, কিন্তু সে আপনার রহমতের মুখাপেক্ষী। হে আল্লাহ, তাকে সৎকর্মের প্রতিদান দিন, তার বিচ্যুতি মার্জনা করুন এবং তাকে কবরের শাস্তি থেকে নিরাপদ রাখুন। তাকে স্বীয় অনুগ্রহে আপনার শান্তি থেকে সুরক্ষিত রাখুন এবং জান্নাতে যাওয়া পর্যন্ত সকল ভীতিতে আপনি যতেষ্ট হয়ে যান। হে আল্লাহ, পশ্চাদে তার উত্তরাধিকারে প্রতিনিধি নিযুক্ত করুন, তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসে জায়গা দিন এবং তার ওপর আপনার অনুগ্রহের বারিধারা বর্ষণ করুন হে সর্বোচ্চ দয়াবান।
দাফনের পর যে দুআ পড়বে
কবরের কাছে যে থাকবে, সে মাথার দিকে দুই হাতের মুষ্টি দিয়ে তিন মুষ্টি মাটি দেবে। একদল শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, প্রথমবার বলবে- مِنْهَا خَلَقْنُكُمْ )মিনহা খালাকনাকুম: এ মাটি থেকেই আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি) দ্বিতীয়বার বলবে- وَفِيْهَا نُعِيدُكُمْ )ওয়াফিহা নুয়িদুকুম: এতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেব) তৃতীয়বার বলবে- وَمِنْهَا تُخْرِجُكُمْ ثَارَةً أُخْرَى )ওয়া মিনহা নুখরিজুকুম তারাতান উখরা: পুনরায় এ থেকেই তোমাদেরকে উত্থিত করব)।
দাফন-কাজ শেষ করা পর উট জবাই গোশত ভাগ করতে যতটুকু সময় লাগে ততটুকু সময় বসা ভালো। এ সময় কুরআন তিলাওয়াত করবে, মৃতের জন্য দুআ করবে, উপদেশ দেবে, নেককারদের ঘটনা বলবে ও নেককারদের হালত নিয়ে আলোচনা করবে। ৫৭৭
(৪১৭) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত-
كُنَّا فِي جَنَازَةٍ فِي بَقِيعِ الْغَرْقَدِ فَأَتَانَا رَسُولُ اللَّهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَعَدَ وَقَعَدْنَا حَوْلَهُ وَمَعَهُ مِخْصَرَةٌ، فَنَكَسَ وجَعَلَ يَنْكُتُ بِمِخْصَرَتِهِ، ثُمَّ قَالَ: مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا قَدْ كُتِبَ مَقْعَدُهُ مِنَ النَّارِ وَمَقْعَدُهُ مِنَ الْجَنَّةِ، فَقَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ أَفَلَا نَتَكَّلُ عَلَى كِتَابِنَا ؟ فَقَالَ: اعْمَلُوْا فَكُلُّ مُيَسَّرُ لِمَا خُلِقَ لَهُ
অর্থ: আমরা 'বাকিউল গারকাদ' নামক কবরস্থানে একটি কফিনের সাথে ছিলাম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের কাছে আসলেন। তিনি এসে বসলেন। আমরাও তার পাশে বসলাম। তার সাথে একটি কাঠি ছিল। তিনি মাথা ঝুঁকিয়ে কাঠি দিয়ে মাটিতে আঁকছিলেন। এরপর বললেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই জান্নাত ও জাহান্নামের ঠিকানা নির্ধারিত রয়েছে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, তাহলে আমরা কি আমাদের ভাগ্যলিপির ওপর ভরসা করে আমল ছেড়ে বসে থাকব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমলের ধারা অব্যাহত রাখ। কেননা যাকে যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে তার জন্য সে কাজ করা সহজ করে দেয়া হবে। ৫৭৮
(৪১৮) হজরত আমর বিন আস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি ওসিয়ত করেছেন-
إِذَا دَفَنْتُمُونِي أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قَدْرَ مَا تُنْحَرُ جَزُورُ وَيُقْسَمُ لَحْمُهَا؛ حَتَّى أَسْتَأْنِسَ بِكُمْ، وَأَنْظُرَ مَاذَا أُرَاجِعُ بِهِ رُسُلَ رَبِّي
অর্থ: যখন তোমরা আমাকে দাফন করবে, তখন আমার কবরের পাশে একটি উট জবেহ করা ও এর গোশত বণ্টন করা পরিমাণ সময় অবস্থান করবে। যাতে আমি তোমাদের দ্বারা প্রবোধ লাভ করি এবং প্রভুর পক্ষ থেকে আগত দূতের কী জবাব দিব তা চিন্তা করতে পারি। ৫৭৯
(৪১৯) হজরত উসমান রাদি. এর সূত্রে হাসান সনদে বর্ণিত আছে-
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا فَرَغَ مِنْ دَفْنِ الْمَيِّتِ وَقَفَ عَلَيْهِ فَقَالَ: اسْتَغْفِرُوا لِأَخِيْكُمْ، وَسَلُوْا لَهُ بِالتَّثْبِيْتِ ؛ فَإِنَّهُ الْآنَ يُسْأَلُ
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত ব্যক্তির দাফন সম্পন্ন করে তার কাছে কিছু সময় অবস্থান করতেন এবং বলতেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং আল্লাহ তাআলার কাছে তার জন্য দৃঢ়তা কামনা কর। কারণ, এখনই তাকে প্রশ্ন করা হবে। ৫৮০ -ইমাম শাফেয়ি রহ. ও তার অনুসারীদের মতে, দাফনের পর তার কাছে অবস্থান করে কিছু কুরআন তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। যদি পুরো কুরআন খতম করা যায়, তাহলে খুব ভালো।
(৪২০) সুনানে বায়হাকিতে হাসান সনদে বর্ণিত আছে-
أَنَّ ابْنَ عُمَرَ اسْتَحَبَّ أَنْ يَقْرَأَ عَلَى القَبْرِ بَعْدَ الدَّفْنِ أَوَّلَ سُوْرَةَ البَقَرَةِ وَخَاتَمَتِهَا.
অর্থ: হজরত ইবনে উমর রাদি. মৃত ব্যক্তির দাফন করার পর তার কবরের পাশে সুরা বাকারার শুরু ও শেষাংশ পড়াকে মুস্তাহাব বলেছেন। ৫৮১
দাফনের পর মৃত ব্যক্তিকে তালকিন করা
অনেক শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, দাফনের পর মৃত ব্যক্তিকে তালকিন করা মুস্তাহাব। যেমন কাজি হুসাইন, আবু সাদ মুতাওয়াল্লি, আবুল ফাতাহ মাকদিসি, আবুল কাসেম রাফেয়ি প্রমুখ উলামায়ে কেরাম। শায়খ নসর মাকদিসি রহ. এর বক্তব্য হল, দাফনের পর মৃত ব্যক্তির মাথার কাছে দাঁড়িয়ে বলবে
يَا فُلَانَ بْنِ فُلَانِ أُذْكُرِ الْعَهْدَ الَّذِي خَرَجْتَ عَلَيْهِ مِنَ الدُّنْيَا: شَهَادَةُ أَنْ لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، وَأَنَّ السَّاعَةَ آتِيَةٌ لَّا رَيْبَ فِيْهَا، وَأَنَّ اللهَ يَبْعَثُ مَنْ فِي الْقُبُورِ، قُلْ رَضِيْتُ بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا، وَبِالْكَعْبَةِ قِبْلَةَ، وَبِالْقُرْآنِ إِمَامًا، وَبِالْمُسْلِمِينَ إِخْوَانًا، رَبِّيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، وَهُوَ رَبِّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
উচ্চারণ: ইয়া ফুলানাবনা ফুলান! উজকুরিল আহদাল্লাজি খারাযতা আলাইহি মিনাদ্দুনিয়া: শাহাদাতি আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ, ওয়া আন্নাস সাআতা আতিয়াতুন লা রাইবা ফিহা, ওয়া আন্নাল্লাহা ইয়াবআসু মান ফিল কুবুর। কুল রাদিতু বিল্লাহি রব্বা ওয়া বিল ইসলামি দীনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যা, ওয়াবিল কাবাতি কিবলাতান, ওয়াবিল কুরআনি ইমামান, ওয়াবিল মুসলিমিনা ইখওয়ানা। রাব্বিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।
অর্থ: হে অমুকের পুত্র অমুক, তুমি যে অঙ্গীকার নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছ তা স্মরণ কর যে, 'আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি একক; তার কোন শরিক নেই। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। আর নিঃসন্দেহে কেয়ামত সংঘটিত হবে। আল্লাহ কবরবাসীদের পুনরুত্থান ঘটাবেন। তুমি বল, আমি আল্লাহকে রব হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট। দীন হিসাবে ইসলামকে পেয়ে সন্তুষ্ট। নবি হিসাবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পেয়ে সন্তুষ্ট। কাবাকে কিবলা হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট। কুরআনকে ধর্মগ্রন্থ হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট। মুসলমানকে পরস্পর ভাই ভাই হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট। আমার রব হলেন আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি মহান আরশের মালিক। ৫৮২
শায়খ আবু আমর বিন সালাহ রাহিমাহুল্লাহুকে এই তালকিন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমরা এ তালকিন পছন্দ করি এবং তা করে থাকি। খুরাসানি শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের একটি দল এ তালকিনের কথা বলেন। এর স্বপক্ষে হজরত আবু উমামা রাদি. এর একটি হাদিসও রয়েছে, যার সনদ দুর্বল। তবে তার মর্মার্থে অন্য হাদিস রয়েছে এবং শামবাসীদের দীর্ঘ দিনের আমলও এর স্বপক্ষে রয়েছে।
দুধপানকারী বাচ্চার তালকিনের বিষয়ে কোন নির্ভরযোগ্য সনদ নেই।
ইমাম নববি রহ. বলেন, ছোট বাচ্চাদের চাই দুগ্ধপোষ্য হোক না হোক বালেগ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদেরকে তালকিন করা হবে না।
নির্দিষ্ট ব্যক্তি জানাযা পড়ানো ও বিশেষস্থানে কবর দেয়া ইত্যাদির ওসিয়ত করে গেলে করণীয়
(৪২১) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত-
دَخَلْتُ عَلَى أَبِي بَكْرٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ، فَقَالَ: فِي كَمْ كَفَّنْتُمُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَتْ: فِي ثَلَاثَةِ أَثْوَابِ بِيْضٍ سَحُوْلِيَّةٍ، لَيْسَ فِيهَا قَمِيصُ، وَلَا عِمَامَةٌ، وَقَالَ لَهَا: فِي أَيَّ يَوْمٍ تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَتْ: يَوْمَ الإِثْنَيْنِ. قَالَ: فَأَيُّ يَوْمٍ هَذَا؟ قَالَتْ: يَوْمُ الاثْنَيْنِ. قَالَ: أَرْجُوْ فِيْمَا بَيْنِي وَبَيْنَ اللَّيْلِ. فَنَظَرَ إِلَى ثَوْبٍ عَلَيْهِ كَانَ يُمَرَّضُ فِيْهِ بِهِ رَدْعُ مِنْ زَعْفَرَانٍ، فَقَالَ: اغْسِلُوا ثَوْبِي هَذَا وَزِيْدُوْا عَلَيْهِ ثَوْبَيْنِ فَكَفِّنُوْنِي فِيْهَا. قُلْتُ: إِنَّ هَذَا خَلَقُ. قَالَ: إِنَّ الْحَيَّ أَحَقُّ بِالْجَدِيدِ مِنَ الْمَيِّتِ، إِنَّمَا هُوَ لِلْمُهْلَةِ. فَلَمْ يُتَوَفَّ حَتَّى أَمْسَى مِنْ لَيْلَةِ الثَّلَاثَاءِ وَدُفِنَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ.
অর্থ: আমার পিতা আবু বকর রাদি. অসুস্থ ছিলেন। আমি তাঁর কাছে গেলে তিনি বললেন, কয়টি কাপড়ে তোমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাফন পরিয়েছিলে? আমি বললাম তিন কাপড়ে। এরপর জিজ্ঞাসা করলেন, কোনদিন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকাল করেছেন? আমি বললাম সোমবার। আবু বকর রাদি. আজ কি বার? আমি বললাম, আজ সোমবার। তখন আবু বকর রাদি. বললেন, আমি আশা করি, এ মুহূর্ত থেকে আগামী রাতের মধ্যেই আমার মৃত্যু হবে। অসুস্থকালীন পরিধেয় কাপড়ের প্রতি লক্ষ্য করে তাতে জাফরানী রংয়ের চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, আমার এ কাপড়টি ধুয়ে তার সাথে আরো দুটি কাপড় বৃদ্ধি করে আমাকে কাফন পড়াবে। আমি বললাম, এটা তো পুরাতন কাপড়। তিনি বললেন, মৃত ব্যক্তি অপেক্ষা জীবিতদের নতুন কাপড়ের প্রয়োজন অধিক। আর কাফন হল বিগলিত দেহের জন্য। তিনি মঙ্গলবার রাতের সন্ধ্যায় ইন্তেকাল করেন। ভোর হবার পূর্বেই তাকে দাফন করা হয়। ৫৮৩
(৪২২) বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে-
أَنَّ عُمَرَ بْنِ الْخَطَابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لِمَا جُرِحَ: إِذَا أَنَا قَضَيْتُ فَاحْمِلُونِي، وَقُوْلُوا: يَسْتَأْذِنُ عُمَرُ، فَإِنْ أَذِنَتْ لِيْ - يَعْنِي عَائِشَةَ - فَأَدْخِلُوْنِي، وَإِنْ رَدَّتْنِي فَرُدُّوْنِي إِلَى مَقَابِرِ الْمُسْلِمِينَ.
অর্থ: উমর বিন খাত্তাব রাদি, যখন আহত হলেন, তখন তিনি বললেন, আমার যখন মৃত্যু হবে তখন তোমরা আমার জানাযা বহন করে আয়েশা রাদি. এর কামরার কাছে নিয়ে যাবে। এরপর তাঁকে সালাম দিয়ে বলবে, উমর আপনার কাছে অনুমতি চায়। যদি তিনি আমাকে অনুমতি দেন, তাহলে আমাকে সে কামরায় প্রবেশ করাবে এবং (নবিজি ও আবু বকর রাদি. এর পাশে আমাকে কবর দিও)। আর যদি অনুমতি না দেন তাহলে আমাকে সেখান থেকে ফিরিয়ে এনে সাধারণ মুসলমানদের কবরস্থানে কবর দিবে। ৫৮৪
(৪২৩) হজরত আমির বিন সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রহ. থেকে বর্ণিত, সাদ রাদি. ওসিয়ত করেন-
الْحُدُوا لِي لَحدًا ، وَانْصِبُوا عَلَيَّ اللَّبِنَ نَصْبًا، كَمَا صُنِعَ بِرَسُوْلِ اللَّهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: আমার জন্য লাহাদ কবর করবে এবং আমার কবরে এভাবে ইট স্থাপন করবে, যেভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরে করা হয়েছে। ৫৮৫
(৪২৪) হজরত আমর বিন আস রাদি.থেকে বর্ণিত, তিনি মুমূর্ষু অবস্থায় বলেছেন-
إِذَا أَنَا مُتُّ، فَلَا تَصْحَبْنِي نَائِحَةُ وَلَا نَارُ، فَإِذَا دَفَنْتُمُوْنِي فَشُنُّوا عَلَيَّ التَّرَابَ شَنَّا، ثُمَّ أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قَدْرَ مَا تُنْحَرُ جَزُورٌ وَيُقْسَمُ لَحْمُهَا، حَتَّى أَسْتَأْنِسَ بِكُمْ، وَأَنْظُرَ مَاذَا أُرَاجِعُ بِهِ رُسُلَ رَبِّي.
অর্থ: আমি যখন মৃত্যুবরণ করব, তখন কোন ক্রন্দনকারী ও আগুন আমার কাছে আনবে না। যখন তোমরা আমাকে দাফন করবে, তখন তোমরা হালকাভাবে আমার ওপর মাটি দিও। এরপর আমার কবরের পাশে একটি উট জবেহ করে এর গোশত বণ্টন করার সমপরিমাণ সময় অবস্থান করবে। যেন আমি তোমাদের মাধ্যমে নিঃসঙ্গতা দূর করতে পারি এবং আমার রবের পক্ষ থেকে প্রেরিত দূতের সঙ্গে কী বলব তা ভেবে দেখতে পারি। ৫৮৬
ইমাম নববি রহ. বলেন, মৃত ব্যক্তি যা ওসিয়ত করে তাই পুরা করতে যাবে না, বরং সেগুলো আলেমদের সামনে পেশ করবে। তারা যা করার জন্য অনুমোদন দেন, তা করবে; আর যা থেকে বিরত থাকতে বলেন, সেসব থেকে বিরত থাকবে। আমি এখানে কিছু উদাহরণ উল্লেখ করছি:
• যদি বলে শহরের কবরস্থানে দাফন করার জন্য। তবে সে স্থানটি যদি এমন হয় যে, সেখানে অনেক নেককার মানুষকে দাফন করা হয়েছে, তাহলে তার ওসিয়ত পূরণ করা চাই।
• যদি ওসিয়ত করে ভিনদেশী কোন ব্যক্তি জানাযা পড়াবে, তাহলে ভিনদেশী অগ্রাধিকার পাবে নাকি মৃতের নিকটাত্মীয়? এ ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। তবে সঠিক কথা হল, মৃতের নিকটাত্মীয়ই এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে। অবশ্য যদি সেই ভিনদেশী ব্যক্তিটি বড় নেককার হয় বা বড় আলেম হয় এবং তার অনেক সুনাম-সুখ্যাতি থাকে তাহলে নিকটাত্মীয় ঐপর্যায়ের না হলে সে মৃতের হকের বিষয়টি চিন্তা করে তাকে প্রাধান্য দিবে।
• যদি ওসিয়ত করে, বাক্সের মধ্যে দাফন করতে, তাহলে তার ওসিয়ত পুরা করা হবে না। তবে যদি জমি নরম হয় বা ভিজা হয় যার দরুন বাক্সের প্রয়োজন তাহলে তার ওসিয়ত পুরা করবে। আর এ বাক্সের খরচটি কাফনের ন্যায় তার মূল সম্পত্তি থেকে হিসাব করবে।
• যদি ওসিয়ত করে অন্য শহরে নিয়ে দাফন করার জন্য। তাহলে তার ওসিয়ত পুরা করা হবে না। কারণ, সহিহ মাজহাব অনুযায়ী এক শহর থেকে অন্য শহরে স্থানান্তর করা নিষেধ। এটিই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের অভিমত। কারও কারও মতে, এটি মাকরুহ। ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, মৃত ব্যক্তি যদি মক্কা, মদিনা বা বাইতুল মাকদিস শহরের নিকটে হয়, তাহলে বরকতের জন্য সেসব শহরে নিয়ে যাবে।
• যদি ওসিয়ত করে যুদ্ধের অস্ত্রের নীচে দাফন করতে বা মাথার নীচে বালিশ দিতে, তাহলে তার ওসিয়ত পুরা করবে না।
• অনুরূপভাবে যদি ওসিয়ত করে রেশমের কাপড়ে কাফন পড়াতে, তাহলেও পুরা করবে না। কারণ, পুরুষদের রেশমের কাপড়ে কাফন দেয়া হারাম। আর মহিলাদের মাকরুহ। হিজড়ারা এক্ষেত্রে পুরুষদের মত।
• যদি ওসিয়ত করে নির্দিষ্ট সংখ্যক কাফনের চেয়ে বেশি কাপড়ে কাফন দেয়ার জন্য, এত কম কাপড়ে কাফন দেয়ার জন্য যার মধ্য সতর ঢাকে না, তাহলে সে ওসিয়ত পুরা করবে না।
• যদি ওসিয়ত করে তার কবরের পাশে কুরআন পড়ার জন্য বা তার পক্ষ থেকে দান করার জন্য ইত্যাদি নেক কাজের। তাহলে তার ওসিয়ত পুরা করবে। তবে যদি শরিয়তের নিষিদ্ধ কোন বিষয় এর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহলে তা পুরা করবে না।
• যদি ওসিয়ত করে যায়, মুসলমানদের জন্য ওয়াকফকৃত কবরস্থানে তার কবরের ওপর ঘর নির্মাণ করতে, তাহলে তা পুরা করা হবে না। বরং এটি হারাম।

টিকাঃ
৫৭৬. সুনানে আবু দাউদ: ৩২১৩, সুনানে তিরমিজি: ১০৪৬, সুনানে বাইহাকি ৪/৫৫, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৫০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৭, আমাল: ১০৮৮, নাসাঈ, আমাল: ৫৮৪, ইবনুস সুন্নি, ইবনে হিব্বান: ৭৭৩।
৫৭৭. হানাফি মাজাহব মতে, এসময় এতটুকু সময় বসা মুস্তাহাব নয়।
৫৭৮. সহিহ বুখারি: ১৩৬২, সহিহ মুসলিম: ২৬৪৭, সুনানে আবু দাউদ: ৪৬৯৪, সুনানে তিরমিজি: ২১৩৭, মুসনাদে আহমাদ ১/১২৯, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭৮।
৫৭৯. সহিহ মুসলিম: ১২১।
৫৮০. সুনানে আবু দাউদ: ৩২২১, সুনানে বাইহাকি ৪/৫৬।
৫৮১. সুনানে বায়হাকি ৪/৫৬-৫৭।
৫৮২. আততাহজিব, মাকদিসি।
৫৮৩. সহিহ বুখারি: ১২৬৪, সহিহ মুসলিম: ৯৪১, মুয়াত্তা মালেক ১/৩২৩, সুনানে তিরমিজি: ৯৯৬, সুনানে আবু দাউদ: ৩১৫১, সুনানে নাসাঈ ৪/৩৫, মুসনাদে আহমাদ ৬/৪০, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৬৯।
৫৮৪. সহিহ বুখারি: ১৩৯২।
৫৮৫. সহিহ মুসলিম: ৯৬৬।
৫৮৬. সহিহ মুসলিম: ১২১।

📘 আল আযকার > 📄 মৃতের জন্য ইসালে সওয়াব

📄 মৃতের জন্য ইসালে সওয়াব


মৃতের জন্য ইসালে সওয়াব বা অন্যদের দুআ-দুরূদে মৃতের উপকার প্রসঙ্গে
সকল আলেম এ ব্যাপারে একমত যে, দুআ মৃত ব্যক্তির জন্য লাভজনক এবং এগুলো মৃত ব্যক্তির কবরে পৌঁছায়। এ মর্মে কুরআনে কারিমে বর্ণিত হয়েছে-
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُوْلُوْنَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُوْنَا بِالْإِيْمَانِ.
অর্থ: পরবর্তীতে যারা আসবে তারা বলবে- হে আল্লাহ, আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন এবং আমাদের ভাইদেরকেও মাফ করে দিন। এবং ঐ সকল লোকদেরকেও ক্ষমা করে দিন যারা ঈমানের বিবেচনায় আমাদের অগ্রগামী। ৫৮৭
এছাড়াও এ প্রসঙ্গে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। এ সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রসিদ্ধ হাদিস আছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হে আল্লাহ, আপনি বাকিউল গারকাদের কবরবাসীদেরকে মাফ করে দিন। ৫৮৮ জানাযার নামাজের অধ্যায়ে যেসব দুআ বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيَّنَا وَمَيِّتِنَا (আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়্যিনা ওয়া মাইয়্যিতিনিা: হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত ও মৃতদেরকে মাফ করে দিন) ইত্যাদি।
কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব কবরে পৌঁছে কিনা? এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। শাফেয়ি মাজহাবের প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব কবরবাসীদের কাছে পৌঁছে না। ইমাম আহমাদ রহ. সহ কতক শাফেয়ি আলেমের মতে পৌঁছে। সুতরাং উত্তম হল, কুরআন তিলাওয়াতের পর দুআয় বলবে- হে আল্লাহ, আপনি এর সাওয়াব অমুককে পৌঁছে দিন। ৫৮৯
মৃত ব্যক্তির প্রশংসা ও তার ভালো দিকগুলো আলোচনা করা মুস্তাহাব
(৪২৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
مَرُّوا بِجَنَازَةٍ فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا خَيْرًا، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَجَبَتْ. ثُمَّ مَرُّوا بِأُخْرَى فَأَثْنَوْا عَلَيْهَا شَرًّا، فَقَالَ: وَجَبَتْ، فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: مَا وَجَبَتْ؟ قَالَ: هَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ خَيْرًا فَوَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ، وَهَذَا أَثْنَيْتُمْ عَلَيْهِ شَرًّا فَوَجَبَتْ لَهُ النَّارُ، أَنْتُمْ شُهَدَاءُ اللَّهِ، فِي الْأَرْضِ
অর্থ: কিছু লোক একটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা তার ভালো দিকগুলোর উল্লেখ করে তার প্রশংসা করল, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে। আরেকটি কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার মন্দ দিকগুলো উল্লেখ করে তাকে মন্দ বলল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে। তখন উমর রাদি. বললেন, কী ওয়াজিব হয়েছে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যার প্রশংসা করেছে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়েছে। আর যার মন্দ বলা হয়েছে তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব হয়েছে। তোমরা পৃথিবীতে সাক্ষীস্বরূপ।
(৪২৬) হজরত আবুল আসওয়াদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَدِمْتُ الْمَدِينَةَ وَقَدْ وَقَعَ بِهَا مَرَضٌ، فَجَلَسْتُ إِلَى عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ فَمَرَّتْ بِهِمْ جَنَازَةٌ، فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا خَيْرًا، فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ : وَجَبَتْ ثُمَّ مُرَّ بِأُخْرَى فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا خَيْرًا، فَقَالَ عُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: وَجَبَتْ. ثُمَّ مُرَّ بِالثَّالِثَةِ فَأُثْنِيَ عَلَى صَاحِبِهَا شَرًّا، فَقَالَ: وَجَبَتْ ، فَقَالَ أَبُو الْأَسْوَدِ: فَقُلْتُ: وَمَا وَجَبَتْ يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ؟ قَالَ: قُلْتُ كَمَا قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّمَا مُسْلِمٍ شَهِدَ لَهُ أَرْبَعَةُ بِخَيْرٍ أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ. فَقُلْنَا: وَثَلَاثَةُ؟ قَالَ : وَثَلَاثَةٌ. فَقُلْنَا: وَاثْنَانِ؟ قَالَ: وَاثْنَانِ. ثُمَّ لَمْ نَسْأَلْهُ عَنِ الْوَاحِدِ.
অর্থ: আমি মদিনায় এসে উমর রাদি. এর কাছে বসলাম। এ সময় সাহাবায়ে কেরামের পাশ দিয়ে একটি কফিন নিয়ে যাওয়া হল। তখন সে মৃত ব্যক্তির প্রশংসা করা হল। তা শুনে উমর রাদি. বললেন, তার জন্য ওয়াজিব হয়ে গেছে। অপর একটি কফিন নিয়ে গেলে তারও প্রশংসা করা হয়। উমর রাদি. বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে। তৃতীয়বার আরেকটি কফিন নিয়ে যাওয়া হল। এবং তার নিন্দা করা হল। তখন উমর রাদি. বললেন, ওয়াজিব হয়ে গেছে।
আবুল আসওয়াদ বলেন, আমি বললাম, হে আমিরুল মুমিনিন, কি ওয়াজিব হয়ে গেছে? তখন উমর রাদি. বললেন, নবিজি যেমনটি বলেছেন আমিও তাই বলেছি। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন, মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে যদি চারজন লোক ভালো বলে, তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করবেন। আমরা বললাম, যদি তিনজন বলে? তিনি বললেন, তিনজন বললেও জান্নাতে যাবে। এরপর বললাম, যদি দুইজন বলে? নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুইজন বললেও জান্নাতে যাবে। এরপর একজন সম্পর্কে আর জিজ্ঞাসা করি নাই। এ সম্পর্কে আরো অনেক হাদিস রয়েছে।
মৃত ব্যক্তিকে মন্দ বলা নিষেধ
(৪২৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَا تَسُبُّوا الْأَمْوَاتَ؛ فَإِنَّهُمْ قَدْ أَفْضَوْا إِلَى مَا قَدَّمُوا.
অর্থ: তোমরা মৃত ব্যক্তিদেরকে গালি দিও না। তারা যে কাজকর্ম করেছে, তার প্রতিদান পেয়ে গেছে। ৫৯০
(৪২৮) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
اذْكُرُوا مَحَاسِنَ مَوْتَاكُمْ، وَكُفُّوا عَنْ مَسَاوِيْهِمْ.
অর্থ: তোমরা মৃত ব্যক্তিদের গুণকীর্তন কর তথা ভালো দিকগুলোর আলোচনা কর এবং তাদের মন্দ দিকগুলো বলা থেকে বিরত থাক। -ইমাম তিরমিজি রহ. একে দুর্বল বলেছেন। ৫৯১
ইমাম নববি রহ. বলেন, যদি কোন মুসলমান প্রকাশ্য ফাসেক না হয়, তাকে গালি দেয়া নিষেধ। আর কাফের ও প্রকাশ্য গুনাহে লিপ্ত মুসলমানের ব্যাপারে পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষীদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। তাদের থেকে বিরোধপূর্ণ বক্তব্য রয়েছে। তবে পূর্বের হাদিস দ্বারা বুঝা যায় তাদেরকে গালি দেয়া নিষেধ।
কিন্তু এ ব্যাপারে তাদের মন্দ বলার বিষয়েও অনেক প্রমাণ রয়েছে। যেমন কুরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা অনেক মৃত মন্দলোকের মন্দ বর্ণনা করেছেন। আমাদেরকে সেগুলো তিলাওয়াত ও প্রচারের নির্দেশ দিয়েছেন। তাছাড়া এক্ষেত্রে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। যেমন পূর্বে বর্ণিত হয়েছে। আমর বিন লুহাই এর হাদিস, আবু রুগালের ঘটনা ইত্যাদি। পূর্বে আরেকটি সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশ দিয়ে জানাযা নিয়ে যাওয়ার সময় কিছু লোক মৃতের মন্দ বলছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বাধা দেননি। বরং বলেছেন وَجَبَتْ অর্থাৎ তার জন্য জাহান্নام ওয়াজিব হয়ে গেছে।
এসব বিরোধপূর্ণ প্রমাণের সমন্বয়ে উলামায়ে কেরাম বিভিন্ন কথা বলেন। তবে সঠিক ও প্রসিদ্ধ কথা হল, মৃত কাফেরদের মন্দ বলা যাবে। আর প্রকাশ্য ফাসেক, বিদআতি ও এজাতীয় বড় অপরাধী মুসলমানের মন্দ দিকলোগুলো মানুষের কল্যাণের প্রয়োজনে বলা জায়েজ আছে। যেমন, তাদের অবস্থার ব্যাপারে মানুষকে সতর্ক করা; তাদের বক্তব্য থেকে মানুষকে দূরে রাখা এবং তাদের কাজকর্ম অনুসরণ থেকে মানুষকে দূরে রাখা ইত্যাদি। আর যদি প্রয়োজন না থাকে, তাহলে বলা জায়েজ নেই।
এছাড়াও মুহাদ্দিসিনে কেরাম সর্বসম্মতিক্রমে হাদিসের বর্ণনাকারীদের দোষ প্রকাশ করা জায়েজ বলেছেন।

টিকাঃ
৫৮৭. সুরা হাশর: ১০।
৫৮৮. সহিহ মুসলিম: ৯৭৪।
৫৮৯. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে, কুরআন তিলাওয়াতের সওয়াব মৃতের কাছে পৌঁছে। তাদের মতে, সকল নেক আমলের সওয়াব মৃতের কাছে পৌঁছে।
৫৯০. সহিহ বুখারি: ১৩৯৩, সুনানে আবু দাউদ: ৪৮৯৯, সুনানে নাসাঈ ৪/৫২-৫৩, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮০, সুনানে দারিমি: ২৫১৪।
৫৯১. সুনানে তিরমিজি: ১০১৯, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০।

📘 আল আযকার > 📄 কবর জিয়ারতকারী যে দুআ পড়বে

📄 কবর জিয়ারতকারী যে দুআ পড়বে


(৪২৯) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই শেষ রাতে 'বাকি' নামক কবরস্থানে যেতেন। সেখানে গিয়ে বলতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَأَتَاكُمْ مَا تُوْعَدُوْنَ غَدًا مُؤَجَّلُوْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَدِ.
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম দারা কাওমিন মুমিনিনা, ওয়া আতাকুম মা তুআদুনা গাদান মুয়াজ্জালুনা, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন। আল্লাহুম্মাগফির লিআহলি বাকিয়িল গারকাদি।
অর্থ: তোমাদের প্রতি সালাম, হে মুমিন সমপ্রদায়। তোমাদের প্রতিশ্রুত বিষয়ের নিকট তোমরা চলে এসেছ। আগামীতে আমরাও আসছি। আল্লাহ চাহে তো আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ, আপনি বাকিউল গারকাদ কবরস্থানের অধিবাসীদেরকে মাফ করে দিন। ৫৯২
(৪৩০) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, কবর জিয়ারতের সময় কী বলব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন, তুমি বলবে-
السَّلَامُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ، وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنْكُمْ وَمِنَّا وَالْمُسْتَأْخِرِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ.
উচ্চারণ: আসসালামু আলা আহলিদ্দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিনা, ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাকদিমিনা মিনকুম ওয়া মিন্না ওয়াল মুসতাখিরিনা, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন।
অর্থ: হে মুমিন, মুসলিম কবরের বাসিন্দা, আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আগে-পরের সকল মুসলমানদের ওপর আল্লাহ দয়া করুন। আমরা অচিরেই আপনাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। ৫৯৩
(৪৩১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিয়ারতের উদ্দেশ্যে কবরের পাশে গিয়ে বলতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَاحِقُوْنَ.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম দারা কাওমিম মু'মিনিন, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন।
অর্থ: হে কবরের অধিবাসী মুমিনগণ, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আর আমরাও অচিরেই তোমাদের সাথে মিলিত হব ইনশাআল্লাহ। ৫৯৪
(৪৩২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
مَرَّ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقُبُورِ الْمَدِينَةِ، فَأَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ، فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ، يَغْفِرُ اللَّهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا، وَنَحْنُ بِالْأَثَرِ
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার এক কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি কবরের দিকে মুখ করে এ দুআ পাঠ করলেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَهْلَ الْقُبُورِ، يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ، أَنْتُمْ سَلَفُنَا، وَنَحْنُ بالأثر.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুর। ইয়াগফিরুল্লাহু লানা ওয়া লাকুম। আনতুম সালাফুনা ওয়া নাহনু বিল আসার।
অর্থ: হে কবরের অধিবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আল্লাহ আমাদের ও তোমাদেরকে মাফ করুন। তোমরা আমাদের পূর্বসূরী, আমরা তোমাদের উত্তরসূরী। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৫৯৫
(৪৩৩) হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে কবর জিয়ারতের এ দুআ শিক্ষা দিতেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ، وَالْمُسْلِمِينَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ لَاحِقُوْنَ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মুমিনিা, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকুন। আসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়াহ।
অর্থ: হে মুমিন করববাসী, তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা তোমাদের সঙ্গে মিলিত হবো, ইনশাআল্লাহ। আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই। ৫৯৬ - সুনানে নাসাঈ ও সুনানে ইবনে মাজায় لَلَاحِفُوْنَ এর পর নিচের বাক্যটি অতিরিক্ত এসেছে-
أَنْتُمْ لَنَا فَرَطُ، وَنَحْنُ لَكُمْ تَبَعُ.
উচ্চারণ: আনতুম লানা ফারাতুন ওয়া নাহনু লাকুম তাবা।
অর্থ: তোমরা আমাদের অগ্রবর্তী আমরা তোমাদের অনুগামী। ৫৯৭
(৪৩৪) হজরত আয়েশা রাদি. এর সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম 'বাকি' নামক কবরস্থানে এসে এ দুআ পড়লেন-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ، أَنْتُمْ لَنَا فَرَطُ، وَإِنَّا بِكُمْ لَاحِقُوْنَ؛ اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُمْ وَلَا تُضِلَّنَا بَعْدَهُمْ.
উচ্চারণ: আসলামু আলাইকুম দারা কাওমিন মুমিনিন, আনতুম লানা ফারাতুন ওয়া ইন্না বিকুম লাহিকুন। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আযরাহুম ওয়া তুদিল্লানা বাদাহুম।
অর্থ: হে মুমিন কবরবাসী, তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। তোমরা আমাদের পূর্বসূরী। আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। হে আল্লাহ, তাদের প্রতিদান বিনষ্ট কর না। তাদের পরে আমাদেরকে পথভ্রষ্ট কর না। ৫৯৮
কবর জিয়ারতকারী বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকার পড়বে। ঐ কবরবাসী ও সকল মুসলিম কবরবাসী এবং সকল মুসলমানের জন্য দুআ করবে। বেশি বেশি কবর জিয়ারত করা মুস্তাহাব। বুজুর্গ ও নেককার লোকদের কবরের পাশে বেশি সময় অবস্থান করা চাই।
কবর জিয়ারতকারী যা থেকে বারণ করবে
জিয়ারতকারী ব্যক্তি কাউকে কবরের পাশে চিল্লিয়ে কান্নাকাটি করতে দেখলে তাকে বারণ করবে, ধৈর্যধারণের উপদেশ দিবে। এছাড়াও শরিয়তকর্তৃক নিষিদ্ধ কাজে তাকে বাধা দিবে।
(৪৩৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
مَرَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِامْرَأَةٍ عِنْدَ قَبْرٍ وَهِيَ تَبْكِيْ، فَقَالَ: اتَّقِي اللَّهَ وَاصْبِرِي.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মহিলাকে কবরের পাশে কাঁদতে দেখে বললেন, তুমি আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্যধারণ কর। ৫৯৯
(৪৩৬) হজরত বশির বিন মাবাদ রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে-
بَيْنَمَا أَنَا أُمَاشِي رَسُولَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَإِذَا رَجُلٌ يَمْشِي فِي الْقُبُورِ عَلَيْهِ نَعْلَانِ، فَقَالَ: يَا صَاحِبَ السَّبْتِيَتَيْنِ، وَيْحَكَ أَلْقِ سِبْتِيَتَيْكَ.
অর্থ: একদা আমরা হাঁটছিলাম। তখন এক ব্যক্তিকে জুতা পরিধান করে কবরের ওপর হাঁটতে দেখে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে জুতা পরিহিত ব্যক্তি, তুমি তোমার জুতা খুলে ফেল। ৬০০
সীমালঙ্ঘনকারীদের কবরের পাশ দিয়ে যেভাবে অতিক্রম করবে
(৪৩৭) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لِأَصْحَابِهِ - يَعْنِي لِمَا وَصَلُوْا الْحِجْرَ دِيَارَ ثَمُودَ : لَا تَدْخُلُوا عَلَى هَؤُلَاءِ الْمُعَذِّبِينَ إِلَّا أَنْ تَكُوْنُوْا بَاكِينَ، فَإِنْ لَمْ تَكُوْنُوْا بَاكِيْنَ فَلَا تَدْخُلُوْا عَلَيْهِمْ ، لَا يُصِيبُكُمْ مَا أَصَابَهُمْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কওমে সামুদের এলাকা হিজরে পৌঁছলেন, তখন সাহাবিদেরকে বললেন, তোমরা এ শাস্তিপ্রাপ্তদের এলাকায় ক্রন্দনরত অবস্থায় প্রবেশ কর। যদি না কাঁদ তাহলে তাদের এলাকায় প্রবেশ কর না। যেন তাদের ন্যায় তোমাদের ওপর শাস্তি না আসে। ৬০১

টিকাঃ
৫৯২. সহিহ মুসলিম: ৯৭৪, সুনানে নাসাঈ ৪/৬১, আমাল: ১৯২, নাসাঈ, মুয়াত্তা মালেক ১/২৪২, মুসনাদে আহমাদ ৬/১৮০।
৫৯৩. সহিহ মুসলিম: ৯৭৪।
৫৯৪. সুনানে আবু দাউদ: ৩২৩৭, সুনানে নাসাঈ ১/৯৩, মুসনাদে আহমাদ ২/৩০০, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪৩০৬।
৫৯৫. সুনানে তিরমিজি: ১০৫৩।
৫৯৬. সহিহ মুসলিম: ৯৭৫, সুনানে নাসাঈ ৪/৯৪, আমাল: ১০৯১, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৫৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৪৭।
৫৯৭. সুনানে নাসাঈ ৪/৯৪।
৫৯৮. ইবনুস সুন্নি: ৫৯১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৪৬।
৫৯৯. সহিহ বুখারি: ১২৫২, সহিহ মুসলিম: ৯২৬, সুনানে নাসাঈ ৪/২২।
৬০০. সুনানে আবু দাউদ: ৩২৩০, সুনানে নাসাঈ ৪/৯৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৬৮, আলআদাবুল মুফরাদ: ৭৭৫।
৬০১. সহিহ বুখারি: ৪৩৩, সহিহ মুসলিম: ২৯৮০।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন