📘 আল আযকার > 📄 মৃত্যুযন্ত্রণা ও মুমূর্ষ অবস্থার দুআ

📄 মৃত্যুযন্ত্রণা ও মুমূর্ষ অবস্থার দুআ


মুমূর্ষু অবস্থায় যে দুআ পড়বে
(৩৭৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি দেখেছি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমূর্ষু অবস্থায় কাছে থাকা পানির পাত্রে হাত দিয়ে মুখ মুছছেন, আর বলছেন-
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَسَكَرَاتِ الْمَوْتِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা গামারাতিল মাউতি ওয়া সাকারাতিল মাওত।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মৃত্যুর কষ্ট ও যন্ত্রণায় সাহায্য কর। ৫২৩
(৩৭৮) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর সময় আমার ওপর হেলান দিয়েছিলেন। তখন তাঁকে বলতে শুনেছি-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَأَلْحِقْنِي بِالرَّفِيقِ الْأَعْلَى.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ার হামনি, ওয়া আলহিকনি বিররাফিকিল আ'লা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি দয়া করুন এবং আমাকে ঊধ্বজগতের বন্ধুদের সাথে মিলিত করুন। ৫২৪
রোগীকে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকার করা চাই। এসময় অস্থিরতা প্রকাশ করা, গালিগালাজ করা, বাদানুবাদ করা, দীনি বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে তর্ক করা অনুচিত। মনে মনে ও মুখে আল্লাহ তাআলার শোকরিয়া করা। মনে একথা ভাবা যে, এটিই আমার দুনিয়ার জীবনের শেষ দিন। তাই শেষ মুহূর্তটি ভালো করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
পরিবার-পরিজনের হক আদায় করা। কারও প্রতি অন্যায়-অবিচার করে থাকলে তার বাদলা দিয়ে দেবে। আমানতের বস্তু ফিরিয়ে দেবে। মানুষের কাছ থেকে দাবিদাওয়া ছাড়িয়ে নেয়া: স্ত্রীর কাছ থেকে, পিতা-মাতার কাছ থেকে, সন্তানাদির কাছ থেকে, দাসদাসীর কাছ থেকে, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে এবং যাদের সঙ্গেই লেনদেন উঠাবসা বা কোন বিষয়ে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সকলের কাছ থেকে দাবি ছাড়িয়ে নেয়া।
সন্তানাদির ব্যাপারে ওসিয়ত করে যাবে যদি তাদের অভিভাকত্ব করার মতো দাদা না থাকে। তৎক্ষণাৎ যে হকগুলো আদায় সম্ভব নয়, সেগুলোর ব্যাপারে ওসিয়ত করবে। যেমন- ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি।
আর আল্লাহর রহমতের আশা রাখবে। নিজেকে তুচ্ছ ও নগন্য সৃষ্টি মনে করবে। শাস্তি বা আনুগত্যের আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই- এ কথা ভাববে। আরো ভাববে, আমি আল্লাহর গোলাম। ক্ষমা, অনুগ্রহ, দয়া ও সাহায্য একমাত্র আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই আসে।
কুরআনের আশাব্যঞ্জক আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করতে থাকবে বা অন্য কেউ পড়বে আর সে মনোযোগ দিয়ে কোনবে। অনুরূপভাবে আশার হাদিস ও নেক লোকদের মৃত্যুর ঘটনাবলী স্মরণ করবে। বেশি বেশি দান-খয়রাত করবে। নামাজের প্রতি যত্নবান হবে। নাপাকী থেকে বেঁচে থাকবে। ইত্যাদি দীনের সকল আমলের প্রতি যত্নবান হবে। ধৈর্য সহকারে এ সময়ের কষ্ট সহ্য করবে। এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের অলসতা করবে না। কারণ, সবচেয়ে নিকৃষ্ট সে যে ব্যক্তি পরকালের শস্যক্ষেত্র দুনিয়ার শেষ মুহূর্তটির সময় নিজের ওপর ফরজ-ওয়াজিব-মুস্তাহাব দায়দায়িত্বের ব্যাপারে উদাসীনতা প্রদর্শন করে।
উল্লিখিত বিষয়গুলো পালনে কোন ব্যক্তি বাধা দিলে তার কথা শুনবে না। কারণ, সে বিপদে নিক্ষেপ করবে। এরূপ যে করে, সে মূলত অজ্ঞ বন্ধু ও প্রচ্ছন্ন শত্রু। তাই তার বাধা মানবে না। জীবনের শেষ মুহূর্তটি সর্বোত্তম অবস্থায় কাটানোর জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
পরিবার-পরিজনকে তার অসুস্থতার সময় ধৈর্যধারণের ওসিয়ত করবে। নিজের থেকে কোন বিরূপ আচারণ প্রকাশ পেলে তা বরদাশত করতে বলবে। তাদেরকে আরো ওসিয়ত করবে, তার অনুপস্থিতির দরুন যে বিপদ আসবে তাতে ধৈর্যধারণ করতে। মৃত্যুর পর কান্নাকাটি না করতে জোরালোভাবে ওসিয়ত করবে। তাদেরকে বলবে- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পরিবার-পরিজনের আহাজারির দরুন মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। ৫২৫
অতএব, হে আমার আপনজন ও প্রিয় লোকেরা, তোমরা আমার আজাবের কারণ হয়- এসব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকবে। তাদেরকে নিজের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সদাচারণের ওসিয়ত করবে। তাদেরকে বলবে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- সবচেয়ে উত্তম সদাচারণ হল, পিতার প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলা। ৫২৬
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরো বর্ণিত আছে- তিনি খাদিজা রাদি. এর মৃত্যুর পর তাঁর বান্ধবীদের সম্মান করতেন, তাদের খোঁজখবর নিতেন। ৫২৭
একটি গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব কাজ হল, জানাযায় যেসব বিদআত সমাজে প্রচলিত রয়েছে, সেগুলো থেকে দূরে থাকার ওসিয়ত করে যাওয়া। এ ব্যাপারে তাদের থেকে অঙ্গীকার নেয়া। তার দুআ করার জন্য ওসিয়ত করে যাবে এবং সময়ে আবর্তনে যেন তাকে ভুলে না যায় সে ওসিয়ত করে যাবে। কিছুক্ষণ পর পর তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করবে, কোন বিষয়ে আমার ত্রুটি দেখতে পেলে তোমরা আমাকে সাহানুভূতির সাথে সতর্ক করে দেবে। এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কল্যাণকামিতার মুআমালা করবে। কারণ আমি এখন গাফিলতি, উদাসীনতা ও বেখেয়ালির অবস্থায় আছি। কোন ত্রুটি দেখতে পেলে আমাকে সজাগ করবে এবং আমার এ সুদীর্ঘ সফরের সামানা প্রস্তুতে তোমরা আমাকে সাহায্য করবে।
এ অধ্যায়ে আমি যা কিছু বলেছি, এগুলোর দলিল-প্রমাণ প্রসিদ্ধ। সংক্ষেপ করনার্থে আমি তা উল্লেখ করিনি। কারণ, তখন কিতাবটি বড় হয়ে যাবে। অস্থিরতা ও মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হলে বেশি বেশি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, যেন এটিই তার দুনিয়ার সর্বশেষ কথা হয়।
(৩৭৯) হজরত মুআজ বিন জাবাল রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ.
অর্থ: যার সর্বশেষ কথা হবে, 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ইমাম হাকিম রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ। ৫২৮
(৩৮০) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَقَّنُوْا مَوْتَاكُمْ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ.
অর্থ: তোমরা মুমূর্ষু ব্যক্তিদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর তালকিন দাও। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। ৫২৯
উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি মুমূর্ষু ব্যক্তি 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' না বলে, তাহলে উপস্থিত লোকেরা কালিমার তালকিন করবে। আস্তে আস্তে তালকিন করবে, সে আবার যেন বিরক্ত হয়ে প্রত্যাখ্যান না করে। একবার সে কালিমা বললে, আর তালকিন করবে না, তবে যদি সে অন্য কোন কথা বলে ফেলে তাহলে আবার তালকিন করবে।
একদল শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, তালকিনকারী ব্যক্তি নির্দোষ ও নেককার হলে ভালো, যেন মুমূর্ষু ব্যক্তি বিরক্ত হয়ে তাকে আবার দোষারোপ না করে। উলামায়ে কেরাম বলেন, তালকিন করবে এ বলে- 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ'। তবে বেশিরভাগ উলামায়ে কেরام বলেন, শুধু 'লা-ইলাহা ইল্লাহ' বলবে।

টিকাঃ
৫২৩. সুনানে তিরমিজি: ৯৭৮, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬২৩।
৫২৪. সহিহ বুখারি: ৪৪৪O, সহিহ মুসলিম: ২৪৪৪, সুনানে তিরমিজিঃ ৩৪৯০, মুসনাদে আহমাদ ৬/১২৬, আমাল: ১০৯৫, নাসাঈ।
৫২৫. সহিহ বুখারি: ১২৮৭, সহিহ মুসলিম: ৯২৭।
৫২৬. সহিহ মুসলিম: ২৫৫২, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৪৩, সুনানে তিরমিজি: ১৯০৪।
৫২৭. সহিহ বুখারী: ৩৮১৬, সহিহ মুসলিম: ২৪৩৫।
৫২৮. সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৬, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৪৭, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৫১।
৫২৯. সহিহ মুসলিম: ৯১৬, সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৭, সুনানে তিরমিজি: ৯৭৬, সুনানে নাসাঈ ৪/৫, মুসনাদে আহমাদ ৩/৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৫।

📘 আল আযকার > 📄 মৃত্যুর পর ও সমবেদনা জ্ঞাপনের দুআ

📄 মৃত্যুর পর ও সমবেদনা জ্ঞাপনের দুআ


মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করার পর যে দুআ পড়বে
(৩৮১) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَبِي سَلَمَةَ، وَقَدْ شَقَّ بَصَرُهُ ، فَأَغْمَضَهُ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّ الرُّوْحَ إِذَا قُبِضَ تَبِعَهُ الْبَصَرُ. فَضَجَّ نَاسٌ مِنْ أَهْلِهِ، فَقَالَ: لَا تَدْعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ إِلَّا بِخَيْرٍ، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ يُؤَمِّنُوْنَ عَلَى مَا تَقُوْلُوْنَ. ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِي سَلَمَةَ، وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيَّيْنَ، وَاخْلُفْهُ في عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَنَوَّرْ لَهُ فِيهِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু সালামার মৃত্যুর পরে তার কাছে আসলেন। তখন আবু সালামার চোখ খোলা ছিলো। তিনি তার চোখ বন্ধ করে দিয়ে বললেন, 'জান যখন কবজ হয় তখন চোখ তা দেখতে থাকে। তখন পরিবারের লোকেরা চিৎকার করতে থাকে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেদের জন্য তখন কল্যাণের দুআ কর। তোমরা যা দুআ কর ফেরেশতা তাতে আমিন বলে থাকে। এরপর তিনি বললেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِي سَلَمَةَ، وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّيْنَ، وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَنَوِّرْ لَهُ فِيْهِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি-আবি সালামাতা, ওয়ারফা দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যিনা, ওয়াখলুফহু ফি আকিবিহি ফিল গাবিরিনা, ওয়াগফির লানা ওয়া লাহু ইয়া রাব্বাল আলামিন। ওয়াফসাহ ফি কাবরিহি ওয়া নাওয়ির লাহু ফিহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি আবু সালামাকে মাফ করে দাও, তাকে হেদায়েতপ্রাপ্তদের স্তরে উন্নিত কর। তার পরে তার পরিবারবর্গের জন্য খলিফা নিযুক্ত করে দাও। হে আল্লাহ, আমাদেরকে ও তাকে মাফ করে দাও। তার কবরকে প্রশস্ত করে দাও। তার কবরকে নূরে পূর্ণ করে দাও। ৫০০
(৩৮২) তাবেয়ি হজরত আবু বকর বিন আবদুল্লাহ রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
أَغْمَضْتَ الْمَيِّتَ فَقُلْ : بِسْمِ اللهِ، وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؛ وَإِذَا حَمَلْتَهُ فَقُلْ: بِسْمِ اللَّهِ، ثُمَّ سَبِّحْ مَا دُمْتَ تَحْمِلُهُ.
অর্থ: মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করার পর বল, তাকে বহন করার সময় বিসমিল্লাহ বল। এরপর যতক্ষণ বহন করবে ততক্ষণ সুবহানাল্লাহ বলবে। ৫০১
মৃত ব্যক্তির কাছে যে দুআ পড়বে
(৩৮৩) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا حَضَرْتُمُ الْمَرِيضَ، أَوِ الْمَيِّتَ، فَقُولُوا خَيْرًا ، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ يُؤَمِّنُونَ عَلَى مَا تَقُولُونَ. قَالَتْ: فَلَمَّا مَاتَ أَبُو سَلَمَةَ، أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ ، إِنَّ أَبَا سَلَمَةَ قَدْ مَاتَ، قَالَ: قُولِي: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبْنِي مِنْهُ عُقْبِى حَسَنَةً. قَالَتْ: فَقُلْتُ، فَأَعْقَبَنِي اللهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ لِي مِنْهُ؛ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: যখন তোমরা অসুস্থ বা মৃত ব্যক্তির কাছে যাবে, তখন ভালো দুআ কর। কারণ, তোমরা যা দুআ কর ফেরেশতারা তাতে আমিন বলেন। উম্মে সালামা রাদি.বলেন, আবু সালামা রাদি. এর মৃত্যুর পর আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আবু সালামা রাদি. মৃত্যুবরণ করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বল-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبْنِي مِنْهُ عُقْبَى حَسَنَةً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়া লাহু ওয়া আকিবনি মিনহু উকবা হাসানাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ও তাকে মাফ করে দিন। তার পরিবর্তে আমাকে উত্তম পতিনিধি দান করুন। -উম্মে সালামা রাদি. বলেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে তার চেয়ে উত্তম প্রতিনিধি দান করেছেন, অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়েছেন। ৫৩২
(৩৮৪) হজরত মাকিল বিন ইয়াসার রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
اقْرَءُوا (يُسَ عَلَى مَوْتَاكُمْ .
অর্থ: তোমরা তোমাদের মৃতদের জন্য সুরা ইয়াসিন পড়। ৫৩৩
আপনজনের মৃত্যুতে যে দুআ পড়বে
(৩৮৫) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে বন্দা বিপদগ্রস্ত হয়ে এই দুআ পড়ে আল্লাহ তাআলা তার প্রতিদান দান করেন এবং তাকে সে জিনিসের চেয়ে উত্তম জিনিস দান দান করেন। উম্মে সালামা রাদি. বলেন, আবু সালামার মৃত্যুর পর আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ মতো দুআ করি। তখন আল্লাহ তাআলা আমাকে আবু সালামার চেয়ে উত্তম প্রতিনিধি দান করেছেন। অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে পরবর্তীতে আমার বিবাহ হয়েছে। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ أَشْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفُ لِي خَيْرًا مِنْهَا.
উচ্চারণ: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা উ'যুরনি ফি মুসিবাতি, ওয়া আখলিফলি খাইরান মিনহা।
অর্থ: আমরা আল্লাহর জন্য, আমাদের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকেই। হে আল্লাহ, আমার বিপদে আমাকে নেকি দান করুন এবং এরচে উত্তম প্রতিদান আমাকে দান করুন। ৫৩৪
(৩৮৬) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ বিপদগ্রস্ত হলে এ দুআ পড়বে-
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ اللَّهُمَّ عِنْدَكَ أَحْتَسِبُ مُصِيبَتِي، فَأَجِرْنِي فِيهَا، وَأَبْدِلْ لِي بِهَا خَيْرًا مِنْهَا.
উচ্চারণ: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা ইনদাকা আহতাসিবু মুসিবাতি, ফা আযিরনি ফিহা, ওয়া আবদিলনি বিহা খাইরান মিনহা।
অর্থ: আমরা আল্লাহর জন্য, আমাদের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকেই। হে আল্লাহ, আমার বিপদে আপনার কাছেই প্রতিদানের প্রত্যাশা করি, সুতরাং এতে আমাকে প্রতিদান দান করুন। আর এরচে উত্তম বিনীময় আমাকে দান করুন। ৫৩৫
(৩৮৭) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللهُ لِمَلَائِكَتِهِ: قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِي؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ. فَيَقُولُ: قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ. فَيَقُولُ: مَاذَا قَالَ عَبْدِي؟ فَيَقُولُونَ: حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ. فَيَقُولُ اللهُ: ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، وَسَمُّوهُ بَيْتَ الْحَمْدِ.
অর্থ: কোন মুসলমান বান্দার সন্তান মৃত্যুবরণ করলে, আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বলেন, 'তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছ? ফেরেশতারা বলেন, জি। আল্লাহ তাআলা আবার বলেন, তোমরা আমার বান্দার হৃদয়ের টুকরাকে কবজ করেছ? ফেরেশতারা বলেন, জি। আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞাসা করেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? ফেরেশতারা বলেন, বান্দা আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্নালিল্লাহ বলেছে। তখন আল্লাহ তআলা বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান। ৫৩৬
(৩৮৮) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى: مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءُ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلَّا الْجَنَّةَ.
অর্থ: আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার মুমিন বান্দার দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিটিকে কবজ করার পর সে যদি সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করে, তাহলে আমার কাছে তার প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। ৫৩৭
সঙ্গীর মৃত্যুর সংবাদ শোনে যে দুআ পড়বে
(৩৮৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মৃত্যু ভয়ের বিষয়। তোমাদের কাছে মুসলমান ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ এলে তোমরা এ দুআ পড়বে-
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، وَإِنَّا إِلى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ، اللَّهُمَّ اكْتُبُهُ عِنْدَكَ فِي الْمُحْسِنِينَ، وَاجْعَلْ كِتابَهُ فِي عَلِيِّينَ، وَاخْلُفْهُ فِي أَهْلِهِ فِي الغَابِرِينَ، وَلَا تَحْرِمْنا أَجْرَهُ وَلَا تَفْتِنَا بَعْدَهُ.
উচ্চারণ: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালিবুন। আল্লাহুম্মাক তুবহু ইনদাকা ফিল মুহসিনিনা, ওয়াযআল কিতাবাহু ফি ইল্লিয়্যিনা, ওয়খলুফহু فی اہلہی ফিল গাবিরিনা, ওয়া লা তাহরিমনা আযরাহু ওয়া লা তাফতিন্না বা'দাহ।
অর্থ: আমরা আল্লাহর জন্য, আমাদের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকেই। অবশ্যই আমরা আমাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ, তাকে আপনার কাছে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত করুন, তার আমলনামা রাখুন ইল্লিয়িয়নে। তার পশ্চাদে পরিবারে স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করুন। তার ভালো কাজ থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং তার পরে আমাদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করবেন না। ৫৩৮
ইসলামের শত্রুর মৃত্যুর সংবাদে যা পড়বে
(৩৯০) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে,
أَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَدْ قَتَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَبَا جَهَلٍ، فَقَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي نَصَرَ عَبْدَهُ وَأَعَزَّ دِينَهُ.
অর্থ: তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আল্লাহ তাআলা আবু জাহেলকে নিহত করেছেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي نَصَرَ عَبْدَهُ وَأَعَزَّ دِينَهُ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি নাসারা আবদাহু ওয়া আআ'জ্জা দীনাহ।
অর্থ: প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি তাঁর বন্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তাঁর দীনকে শক্তিশালী করেছেন। ৫৩৯
বিলাপ করা ও জাহেলি যুগের ন্যায় চিল্লাফাল্লা করা হারাম
সকল উলামায়ে কেরামের মতে, বিপদের সময় বিলাপ করা ও জাহেলি যুগের ন্যায় দুআ করা এবং দুর্ভোগ ও ধ্বংসের দুআ করা হারাম।
(৩৯১) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْخُدُوْدَ ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি চেহারায় থাপড়ায়, জামার বুক ছিড়ে এবং জাহেলি যুগের ন্যায় বদদুআ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। ৫৪০
(৩৯২) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে,
إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَرِئَ مِنَ الصَّالِقَةِ، وَالْخَالِقَةِ، وَالشَّاقَّةِ.
অর্থ: বিপদের সময় বিলাপকারী, চুল হলককারী ও জামা বিদীর্ণকারী মহিলা থেকে সম্পর্কহীনতার (এরা ইসলামের দলভুক্ত নয়) ঘোষণা দিয়েছেন। ৫৪১
(৩৯৩) হজরত উম্মে আতিয়্যা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَخَذَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ الْبَيْعَةِ أَنْ لَا نَنُوْحَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার থেকে বিলাপ না করার বাইআত নিয়েছেন। ৫৪২
(৩৯৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
اثْنَتَانِ فِي النَّاسِ هُمَا بِهِمْ كُفْرُ: الطَّعْنُ فِي النَّسَبِ، وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ.
অর্থ: মানুষের দুটি কাজ কুফরি- এক. বংশের বিষয়ে আপবাদ দেয়া। দুই. মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা। ৫৪৩
(৩৯৫) হজরত আবু সাইদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
لَعَنَ رَسُوْلُ اللَّهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّائِحَةَ وَالْمُسْتَمِعَةَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাপকারী ও বিলাপ শ্রবণকারী মহিলার ওপর অভিশম্পাত করেছেন। ৫৪৪
(৩৯৬) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَادَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ وَمَعَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ، وَسَعْدُ بْنُ أَبِي وَقَاصٍ، وَعَبْدُ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ، فَبَكَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا رَأَى الْقَوْمُ بُكَاءَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَكَوْا، فَقَالَ: أَلَا تَسْمَعُوْنَ، إِنَّ اللهَ لَا يُعَذِّبُ بِدَمْعِ الْعَيْنِ، وَلَا بِحُزْنِ الْقَلْبِ، وَلَكِنْ يُعَذِّبُ بِهَذَا، وَأَشَارَ إِلَى لِسَانِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা'দ বিন উবাদা রাদি. কে দেখতে গেলেন। তার সঙ্গে আবদুর রহমান বিন আউফ রাদি., সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. এবং আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. ছিলেন। তাঁকে দেখতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেঁদে ফেললেন। উপস্থিত লোকেরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাঁদতে দেখে সকলেই কেঁদে ফেললেন। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি কোননি যে, আল্লাহ তাআলা চোখের পানি বা অন্তরের বিষন্নতার কারণে শাস্তি দেন না। বরং এই জিহ্বার কারণে শাস্তি দেন বা দয়া করেন। ৫৪৫
(৩৯৭) হজরত উসামা বিন যায়েদ রাদি. বলেন-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رُفِعَ إِلَيْهِ ابْنُ ابْنَتِهِ وَهُوَ فِي الْمَوْتِ، فَفَاضَتْ عَيْنَا رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُ سَعْدُ: مَا هَذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: هَذِهِ رَحْمَةٌ جَعَلَهَا اللهُ تَعَالَى فِي قُلُوْبِ عِبَادِهِ، وَإِنَّمَا يَرْحَمُ اللَّهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক মৃত নাতিকে তাঁর কাছে আনা হল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। সাদ রাদি. জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, এটি কী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি রহমতের পানি, যা আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মুমিন বান্দার হৃদয়ে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দয়াবান বান্দাদের ওপর দয়া করে থাকেন। ৫৪৬
(৩৯৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে,
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى ابْنِهِ إِبْرَاهِيمَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَهُوَ يَجُوْدُ بِنَفْسِهِ، فَجَعَلَتْ عَيْنَا رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَدْرِفَانِ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ وَأَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ فَقَالَ: يَا ابْنَ عَوْفٍ، إِنَّهَا رَحْمَةٌ. ثُمَّ أَتْبَعَهَا بِأُخْرَى فَقَالَ: إِنَّ الْعَيْنَ تَدْمَعُ، وَالْقَلْبَ يَحْزَنُ، وَلَا نَقُولُ إِلَّا مَا يَرْضَى رَبُّنَا، وَإِنَّا بِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيمُ لَمَحْزُوْنُوْنَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ছেলে ইবরাহিমের কাছে আসলেন। তখন তাঁর প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছিল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। তা দেখে আবদুর রহমান বিন আউফ রাদি. বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনিও কাঁদছেন! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবনে আউফ, এটি দয়ার পানি। এরপর তিনি বললেন, চোখ অশ্রুসিক্ত হয়, অন্তর বিষণ্ণ হয়। আমরা বিপদে এমন কিছুই বলব যাতে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হবেন। হে ইবরাহিম তোমার বিয়োগে আমরা ব্যাথিত। ৫৪৭ -এ ধরনের আরো অনেক প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে।
সহিহ হাদিসে যে আছে, 'পরিবারের লোকদের ক্রন্দনের কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়।' এটি ব্যাপক অর্থে নয়; বরং ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। উলামায়ে কেরাম এটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। সবচেয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা হল, যদি মৃত ব্যক্তি কান্নার কারণ হয়ে থাকে তাহলে শাস্তি হবে। আরেকটি ব্যাখ্যা হল, যদি সে ক্রন্দন করতে ওসিয়ত করে যায়, তাহলে শাস্তি হবে। ইত্যাদি।
আমাদের উলামায়ে কেরাম বলেন, মৃত্যুর আগে ও পরে ক্রন্দন করা জায়েজ আছে। তবে আগে ক্রন্দন করাই ভালো। কারণ, হাদিসে এসেছে, 'যখন মৃত্যু হয়ে যায় তখন যেন কেউ ক্রন্দন না করে। ৫৪৮ - ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, মৃত্যুর পর ক্রন্দন করা মাকরুহে তানজিহি। তিনি উক্ত হাদিসকে মাকরুহ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
সমবেদনা প্রকাশ করা সুন্নাত
(৩৯৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ عَزَّى مُصَابًا فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে সে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। ৫৪৯
(৪০০) হজরত আবু বারজা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ عَزَّى تَكْلَى كُسِيَ بُرْدًا فِي الْجَنَّةِ.
অর্থ: যে সন্তানহারা ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তাকে জান্নাতে এক চাদর পরিধান করানো হবে। -ইমাম তিরমিজি বলেন, সনদটি শক্তিশালী নয়। ৫৫০
(৪০১) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. থেকে এক দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন-
مَا أَخْرَجَكِ مِنْ بَيْتِكِ يَا فَاطِمَةُ؟ قَالَتْ: أَتَيْتُ أَهْلَ هَذَا الْمَيِّتِ، فَتَرَقَّمْتُ إِلَيْهِمْ، وَعَزَّيْتُهُمْ بِمَيِّتِهِمْ .
অর্থ: হে ফাতেমা, তুমি কী জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছ? ফাতেমা রাদি. বললেন, আমি এই মৃতের পরিবারের কাছে এসেছি তাদের প্রতি সহানুভূতি বা সমবেদনা প্রকাশের জন্য। ৫৫১
(৪০১) হজরত আমর বিন হাজম রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَا مِنْ مُؤْمِنٍ يُعَرِّيْ أَخَاهُ بِمُصِيبَةٍ إِلَّا كَسَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ حُلَلِ الْكَرَامَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থ: যে মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ভাইয়ের বিপদে তার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে আল্লাহ তাআলা তাকে কেয়ামতের দিন সম্মানের পোশাক পরিধান করাবেন। ৫৫২
তাজিয়া হল, ধৈর্যধারণে উৎসাহিত করা। এমন কিছু বলা যাতে মৃত ব্যক্তির পরিবার সান্তনা পায়; দুঃখ লাঘব হয়; বিপদ হালকা হয়। এটি মুস্তাহাব। কারণ, এতে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধের বিষয়টি রয়েছে। এটি আল্লাহ তাআলার এ আদেশ পালনেরও নামান্তর- 'তোমরা সৎ ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সাহায্য কর। '৫৫৩ এটি সমবেদনা প্রকাশের সবচেয়ে সুন্দর দলিল।
সহিহ হাদিসে আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- কোন বান্দা যতক্ষণ অপর বান্দার সাহায্য করবে, আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত সে বান্দার সাহায্য করেন। ৫৫৪
দাফনের আগে ও পরে সমবেদনা জানানো মুস্তাহাব। মৃত্যুর পর থেকে দাফনের তিনদিন পর পর্যন্ত সমবেদনা জানানোর সময়। এই তিন হল আনুমানিক; একেবারে চূড়ান্ত সময়সীমা নয়। শায়খ আবু মুহাম্মাদ জুয়াইনি রহ. এরূপ বলেছেন।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, তিন দিনের পর তাজিয়া করা মাকরুহ। কারণ, তাজিয়া করা হয়ে থাকে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির মনকে শান্ত করার জন্য। আর সাধারণত তিন দিন পর তার অন্তর শান্ত হয়ে যায়। তাই নতুন করে তার মনকে অস্থির করার প্রয়োজন নেই। এটিই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত।
আবুল আব্বাস বিন কাস রহ. বলেন, তিন দিন পরে তাজিয়া করলেও সমস্যা নেই। বরং সর্বদা তাজিয়া করা যাবে, যদিও এক সুদীর্ঘ কাল পার হয়ে যায়। ইমামুল হারামাইন রহ. থেকেও এরূপ বর্ণিত আছে।
তবে সঠিক কথা হল, তিন দিন পর তাজিয়া করা যাবে না। তবে দুই অবস্থায় করা যেতে পারে। যদি শান্ত্বনা দানকারী বা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি দাফনের সময় অনুপস্থিত থাকে। তিন দিনের পর যদি তারা ফিরে আসে তাহলে এক্ষেত্রে তিন দিন পরেও তাজিয়া করা যাবে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, দাফনের আগের চেয়ে দাফনের পরে তাজিয়া করা উত্তম। কারণ, দাফনের আগে মৃতের পরিবার তার কাফন-দাফনে ব্যস্ত থাকে। এছাড়াও দাফনের পরে আপনজনের বিচ্ছেদটা বেশি উপলদ্ধি করে থাকে। যদি দাফনের আগে বেশি অস্থিরতা দেখা না যায় তাহলে দাফনের পরে করা উত্তম। তবে যদি দাফনের আগে বেশি অস্থিরতা দেখা যায় তাহলে তাদেরকে শান্ত করার জন্য দাফনের আগেই তাজিয়া করবে।
পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা মুস্তাহাব
মৃতের পরিবারের ছোট-বড়ো, পুরুষ-মহিলা-সকল নিকটাত্মীয়ের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা চাই। তবে যুবতী মহিলা থাকলে তাদের মাহরাম তাদেরকে সান্ত্বনা দেবে। মছিবতে ধৈর্যধারণের জন্য নেককার, দুর্বল ও শিশুদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তাজিয়া তথা সমবেদনার জন্য মজলিস করা মাকরুহ
ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, তাজিয়ার জন্য মজলিস করা মাকরুহ, অর্থাৎ মৃতের পরিবার একটি ঘরে বসে থাকবে, যেন সমবেদনা জ্ঞাপনকারীরা সেখানে এসে সমবেদনা জ্ঞাপন করতে পারে। এরূপ করা মাকরুহ। বরং তারা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকবে। পুরুষ ও মহিলা সকলের তাজিয়ার মজলিস মাকরুহ। মুহামিলি রহ, এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন। এটি মাকরুহে তানজিহি হবে, যদি এর সাথে অন্য কোন বিদআত যুক্ত না থাকে। যদি এর সাথে অন্য কোন হারাম বিদআত সম্পৃক্ত থাকে তাহলে তা বিদআত হওয়ার দরুন ঘৃণ্য হারাম কাজ হবে। সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, 'দীনের মাঝে প্রতিটি নব আবিষ্কৃত বস্তু বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা। ৫৫৫
সমবেদনা জ্ঞাপনের শব্দ সমবেদনা জ্ঞাপনের শব্দের ক্ষেত্রে কোন ধরাবান্ধা নেই। যে শব্দ দিয়ে সমবেদনা হবে সেটিই বলবে। শাফেয়ি উলামায়ে কেরام বলেন, মুসলমান ব্যক্তি অপর মুসলমানকে এ কথা বলে শান্ত্বনা দেয়া মুস্তাহাব-
أَعْظَمَ اللهُ أَجْرَكَ، وَأَحْسَنَ عَزَاءَكَ، وَغَفَرَ لَمَيِّتِكَ.
উচ্চারণ: আজামাল্লাহু আযরাকা ওয়া আহসানা আজাআকা ওয়া গাফারা লিমায়্যিতিক।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা তোমাকে বড় প্রতিদান দান করুন। উত্তম সান্ত্বনা দান করুন। তোমার মৃত ব্যক্তিকে মাফ করুন। -মুসলমান কাফেরকে সান্ত্বনা দেয়ার ক্ষেত্রে বলবে:
أَعْظَمَ اللَّهُ أَجْرَكَ، وَأَحْسَنَ عَزَاءَكَ.
উচ্চারণ: আজামাল্লাহু আযরাকা ওয়া আহসানা আজাআক।
অর্থ: আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তোমাকে উত্তম সান্ত্বনা দান করুন। -কাফের ব্যক্তি মুসলমানকে সান্ত্বনা দিতে বলবে:
أَحْسَنَ عَزَاءَكَ، وَغَفَرَ لِمَيِّتِكَ.
উচ্চারণ: আহসানা আজাআকা ওয়া গাফারা লিমায়্যিতিক।
অর্থ: আল্লাহ তোমাকে উত্তম সান্ত্বন দান করুন। তোমার মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করুন। -অমুসলিম অমুসলিমকে সান্ত্বনা দিতে বলবে:
أَخْلَفَ اللهُ عَلَيْكَ.
উচ্চারণ: আখলাফাল্লাহু আলাইক।
অর্থ: আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিনিধি দান করুন।
সান্ত্বনা দেয়ার উত্তম পন্থা
(৪০৩) হজরত উসামা বিন যায়েদ রাদি. বলেন-
أَرْسَلَتْ إِحْدَى بَنَاتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِ تَدْعُوهُ وَتُخْبِرُهُ، أَنَّ صَبِيًّا لَهَا أَوِ ابْنَا فِي الْمَوْتِ، فَقَالَ لِلرَّسُوْلِ : ارْجِعْ إِلَيْهَا، فَأَخْبِرْهَا أَنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ، وَلَهُ مَا أَعْطَى، وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى، فَمُرْهَا فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক কন্যা এক ব্যক্তিকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠালেন; তাঁকে ডেকে নেয়ার জন্য এবং এ সংবাদ দেয়ার জন্য যে, সে কন্যার বাচ্চা বা ছেলে মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দূতকে বললেন, তুমি তার কাছে ফিরে গিয়ে বল-
إِنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ ، وَلَهُ مَا أَعْطَى، وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى، فَمُرْهَا فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ.
উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি তাআলা মা আখাজা ওয়া লাহু মা আ'তা ওয়া কুল্লু শাইয়িন ইনদাহু বি আজালিন মুসাম্মা ফালতাসবির ওয়াল তাহতাসিব।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা যা নিয়েছেন তার মালিকও তিনি এবং যা দিয়েছেন তার মালিকও তিনি। সবকিছুরই আল্লাহ তাআলার কাছে একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। (অতঃপর তুমি তাকে আদেশ করবে) ধৈর্যধারণ কর এবং সওয়াবের আশা রাখ। ৫৫৬
উক্ত হাদিসটি ইসলামের বড় একটি মূলনীতি। এতে দীনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। দীনের মৌলিক ও শাখাগত বিষয় রয়েছে; আদব-কায়দা, বিপদাপদ, চিন্তা-পেরেশানি, রোগ-বালাই ইত্যাদি সকল আকস্মিক বিষয়ে ধৈর্যধারণের বিষয় রয়েছে।
হাদিসটির অর্থ হল, পুরো জগতের মালিক আল্লাহ তাআলা। তিনি তোমাদের মালিকানা বস্তু নেননি। বরং তিনি তোমাদেরকে আমানতস্বরূপ যা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে গেছেন।
দ্বিতীয় অংশ- 'যা দিয়েছেন তার মালিক তিনি।' তিনি তোমাদেরকে যা দান করেন, তা আল্লাহর মালিকানা থেকে বেরিয়ে যায় না। বরং তিনি তাতে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। সবকিছুরই আল্লাহ তাআলার কাছে একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। তাই তোমরা বিচলিত হয়ো না। সুতরাং তিনি যার জান কবজ করেন, তার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। সে মেয়াদকাল আগপিছ করা অসম্ভব। তোমরা যখন এসব জানলে তখন বিপদে ধৈর্য ধরো এবং সওয়াবের প্রত্যাশা রাখো।
(৪০৪) হজরত কুরা বিন ইয়াস রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدَ بَعْضُ أَصْحَابِهِ، فَسَأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا يَا رَسُوْلَ الله، ، بُنَيُّهُ الَّذِي رَأَيْتَهُ هَلَكَ. فَلَقِيَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلَهُ عَنْ بُنَيَّهِ، فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ هَلَكَ، فَعَزَّاهُ عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: يَا فُلَانُ، أَيُّمَا كَانَ أَحَبُّ إِلَيْكَ؛ أَنْ تَمَتَّعَ بِهِ عُمُرَكَ، أَوْ لَا تَأْتِي غَدًا إِلَى بَابٍ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ إِلَّا وَجَدْتَهُ قَدْ سَبَقَكَ إِلَيْهِ، يَفْتَحُهُ لَكَ؟ قَالَ: يَا نَبِيَّ اللهِ ، بَلْ يَسْبِقُنِي إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ، فَيَفْتَحُهَا لِي لَهُوَ أَحَبُّ إِلَيَّ. قَالَ : فَذَاكَ لَكَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবিকে দেখতে না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, তার যে ছেলেকে আপনি দেখেছিলেন, সে মৃত্যুবরণ করেছে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সাহাবির কাছে গেলেন। তার ছেলে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে জানাল, ছেলে মৃত্যুবরণ করেছে। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, 'তোমার কাছে কোনটি প্রিয়? পার্থিব জীবনে ছেলেকে নিয়ে খুশীতে দিনাতিপাত করবে নাকি আগামী দিন জান্নাতের দরজায় গিয়ে তাকে দেখতে পাবে যে, সে তোমার আগে দরজার কাছে এসে তোমার জন্য তা খুলে রেখেছে? সেই সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, বরং সে আগে আগে জান্নাতে গিয়ে আমার জন্য দরজা খুলে রাখুক- এটিই আমার কাছে বেশি প্রিয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি এরূপ প্রতিদানই পাবে। ৫৫৭
ইমাম বাইহাকি রহ. ইমাম শাফেয়ির মানাকেবে বর্ণনা করেন, ইমাম শাফেয়ি রহ. এর কাছে এ সংবাদ এল যে, আবদুর রহমান বিন মাহদি রহ. এর এক সন্তান মৃত্যুবরণ করলে তিনি অনেক অস্থির ও ভেঙ্গে পড়েন। তখন ইমাম শাফেয়ি রহ. তাঁর কাছে পত্র পাঠালেন- 'হে ভাই, তুমি অন্যকে যেভাবে সান্ত্বনা দিয়ে থাক সেভাবেই নিজের মনকে সান্ত্বনা দাও। অন্যের যেসব কাজ তুমি মন্দ বলে থাক সেগুলো নিজের জন্যও মন্দ মনে কর। মনে রেখ, সবচেয়ে মন্দ বিপদ হল, আনন্দ দূর হওয়া ও সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া। যদি এর সঙ্গে পাপ মিলিত হয়, তাহলে তা কত নিকৃষ্ট বিপদে পরিণত হবে সেটি ভেবে দেখেছ কি? তোমার অংশ কাছে আসলে তা গ্রহণ কর, তা তোমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর তালাש করার আগে। আল্লাহ তোমাকে বিপদে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমাদের ও তোমার জন্য ধৈর্যের দরুন নেকি দান করুন। এরপর এক কবিতা লিখেন-
إِنِّي مُعَذِّيكَ لَا أَنِّي عَلَى ثِقَةٍ * مِنَ الْخُلُوْدِ وَلَكِنْ سُنَةُ الدِّيْنِ فَمَا الْمُعَزَّى بِبَاقٍ بَعْدَ مَيِّتِهِ * وَلَا الْمُعَنِّي وَلَوْ عَاشَا إِلَى حِيْنِ.
আমি তোমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছি। আমি চিরদিন বেঁচে থাকার নিশ্চয়তার সঙ্গে বলছি না; তবে এটি ইসলাম ধর্মের রীতি।
যাকে সান্ত্বনা দেয়া হয় সে মৃত্যুর পর বেঁচে থাকে না এবং সান্ত্বনা দানকারীও বেঁচে থাকে না; যদিও একটি সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
এক ব্যক্তি মুসলমান ভাইয়ের ছেলের মৃত্যুতে সান্ত্বনা দিয়ে এই চিঠি লিখে পাঠাল যে, হামদ ও সালাতের পর! সন্তান যতদিন বেঁচে থাকে বাবার জন্য দুশ্চিন্তা ও ফিতনার কারণ হয়ে থাকে। সন্তান আগে আগে মারা গেলে বাবার জন্য রহমত ও অনুগ্রহের কারণ হয়। তাই তুমি দুশ্চিন্তা ও ফিতনা হাত ছাড়া হওয়ার কারণে বিচলিত হয়ো না। বিপদের দরুন আল্লাহ তোমাকে যে রহমত ও অনুগ্রহ দান করছেন তা নষ্ট কর না।
মুসা বিন মাহদি ইবরাহিম সালেমের ছেলের মৃত্যুতে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ছেলে তোমাকে আনন্দ দিয়েছে, অথচ জীবদ্দশায় সে ছিল মুসিবত ও ফিতনার কারণ। মৃত্যুবরণ করে তোমাকে বিষণ্ণ করেছে, অথচ সে মৃত্যুর পর তোমার জন্য হয়েছে রহমত ও শান্তি।
এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর ও ধৈর্যধারণ কর। তাঁর কাছেই সওয়াব প্রত্যাশী ব্যক্তি সওয়াব পেয়ে থাকে। তাঁর কাছেই দুঃখিত ব্যক্তি ফিরে যায়।
এক ব্যক্তি সান্ত্বনা দিয়ে বলল, সন্তান পরকালে নেকির কারণ হওয়া, দুনিয়াতে আনন্দের উপকরণ হওয়ার চেয়ে উত্তম।
হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তাঁর সন্তানকে দাফন করার পর তিনি কবরের কাছে দাঁড়িয়ে হেসে দিলেন। তাকে বলা হল, আপনি কবরের কাছে হাসছেন! তিনি বললেন, আমি চাচ্ছি, শয়তানের নাককে ধূলিধূসরিত করতে (শয়তানকে অপমান করতে)।
ইবনে জুরাইজ রহ. থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বিপদের সময় প্রতিদান ও সওয়াবের প্রত্যাশার মাধ্যমে সান্ত্বনা লাভ করে না, সে একদিন প্রাণীদের মতই সবকিছু ভুলে যাবে এবং কোন প্রতিদান পাবে না।
হজরত হুমাইদ আরাজ রহ. বলেন, আমি সাঈদ বিন জুবাইর রাহিমাহুল্লাহুকে দেখেছি, তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে বলছেন, 'আমি জানি উত্তম বন্ধুত্ব সম্পর্কে।' তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, সেটি কি? তিনি বললেন, সে মৃত্যুবরণ করবে, তখন আমি সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করব।
হজরত হাসান বাসরি রহ. থেকে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি তার সন্তানকে নিয়ে আহাজারী করছিল এবং তার কাছে এসে অভিযোগ করছিল। হাসান রহ. জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার ছেলে কি তোমার কাছ থেকে দূরে থাকত? সে ব্যক্তি বলল, জি, সে আমার থেকে বেশিরভাগ সময়ই দূরে থাকত। তিনি বললেন, তুমি মনে কর সে তোমার থেকে দূরে আছে। কারণ, জীবদ্দশার দূরের চেয়ে বর্তমান দূরের ফলে তুমি সওয়াব পাচ্ছ, আর এটিই শ্রেষ্ঠ। সে ব্যক্তি তখন বলল, হে আবু সাঈদ, আপনি আমার ছেলে বিয়োগের কষ্টকে লাঘব করে দিয়েছেন।
হজরত মাইমুন বিন মিহরান বলেন, এক ব্যক্তি উমর বিন আবদুল আজিজ রহ. এর ছেলে আবদুল মালিকের মৃতুতে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। তখন উমর বিন আবদুল আজিজ রহ. বললেন, আবদুল মালিকের যে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়টি সম্পর্কে আমরা আগে থেকেই জানতাম। ঘটনা ঘটার পর আমরা সেটিকে অপরিচিত ভাবছি না।
হজরত বিশর বিন আবদুল্লাহ রহ. বলেন, উমর বিন আবদুল আজিজ ছেলে আবদুল মালিকের কবরে দাঁড়িয়ে বললেন, হে বৎস! আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। তুমি ছিলে এক আনন্দদানকারী সন্তান। তুমি ছিলে সদাচারী তরুণ। আমি চাচ্ছি না যে তুমি আমার ডাকে সাড়া দেবে।
মাসলামা রহ. বলেন, আবদুল মালিক বিন উমর মারা যাওয়ার পর তার পিতা চেহারা থেকে কাপড় খুলে বললেন, হে বৎস! আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। তোমার জন্মের সুসংবাদ দেয়া হলে আমি আনন্দিত হয়েছিলাম। তুমি যতদিন জীবিত ছিলে তোমার কারণে আমরা আনন্দিত ছিলাম। বর্তমান মুহূর্তের চেয়ে আমি কখনও বেশি আনন্দিত ছিলাম না। আল্লাহর কসম, তুমি তোমার পিতাকে জান্নাতে ডেকে নেবে।
আবুল হাসান মাদায়িনি রহ. বলেন, উমর বিন আবদুল আজিজ ছেলের অসুস্থতার সময় তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে বৎস! তুমি কীসের ওপর রয়েছ? ছেলে বলল, আমি হকের ওপর আছি। হে বৎস! কেয়ামতের দিন তুমি তোমার মিজানের পাল্লায় থাকার চেয়ে আমার মিজানের পাল্লায় থাকাটা আমার কাছে অধিক প্রিয়। ছেলে বলল, বাবা, আমার প্রিয় বস্তুর চেয়ে আপনার প্রিয় বস্তুই আমার কাছে বেশি প্রিয়।
জুয়াইরা বিন আসমা তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিন ভাই তুস্তারের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সে যুদ্ধে তারা সকলেই শহিদ হয়ে যায়। তাদের মা কোন প্রয়োজনে বাজারে গেলে তুস্তার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হয়। মহিলা তাকে চিনে তার ছেলেদের কথা জিজ্ঞাসা করল। সে ব্যক্তি বলল, তারা সকলেই শহিদ হয়েছে। মহিলা জিজ্ঞাসা করল, তারা যুদ্ধক্ষেত্রে সামনে অগ্রসর হতে হতে শহিদ হয়েছে নাকি পলায়ন করতে গিয়ে শহিদ হয়েছে? সে ব্যক্তি বলল, সামনে অগ্রসর হতে হতে শহিদ হয়েছে। তিন সন্তানের মা সেই মহিলা বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, তারা সফল হয়েছে। তারা পরিবার-পরিজনকে হেফাজত করেছে। আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে।
ইমাম শাফেয়ি রহ. এর ছেলের মৃত্যু হলে তিনি একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন-
وَمَا الدَّهْرُ إِلَّا هَكَذَا فَاصْطَبِرْ لَهُ * رَزِيَّةُ مَالٍ أَوْ فِرَاقُ حَبِيبٍ.
যুগ এমনই যে, সম্পদ হস্তচ্যুত হবে বা আপনজন বিদায় নিবে; সুতরাং ধৈর্যধারণ কর।
আবুল হাসান মাদায়িনি রহ. বলেন, উবায়দুল্লাহ বিন হাসানের পিতা হাসান রহ. মৃত্যুবরণ করলেন। সে সময় উবায়দুল্লাহ বসরা শহরের বিচারক ও আমির ছিলেন। তখন তাকে অনেকেই সান্ত্বনা দিতে আসলেন। তারা এসময় মানুষের অধৈর্য বুঝার বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন। শেষে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, অধৈর্য ও অস্থির সে ব্যক্তি যে কোন বিপদ বা কারও মৃত্যুতে তার দৈনন্দিনের নির্দিষ্ট কাজ ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে অনেক উক্তি ও মনীষীদের বাণী রয়েছে। আমি এখানে কিছু উল্লেখ করেছি, যেন কিতাবটি এ বিষয়ের আলোচনা থেকে খালি না থাকে।
ইসলামি যুগে মহামারী ইসলামি যুগে যেসব মহামারী হয়েছে, তার কিছু আলোচনা এখানে করা হল। এটি এখানে আলোচনার উদ্দেশ্য হল, অন্যের দুঃখ-কষ্ট দেখে নিজে সান্ত্বনা লাভ করা। ব্যক্তির ওপর যে মুসিবত এসেছে তা আগেকার মুসিবতের চেয়ে অনেক অনেক কম- এ বিষয়টি বুঝানো।
আবুল হাসান মাদায়িনি রহ. বলেন, ইসলামি যুগে প্রসিদ্ধ ভয়াবহ পাঁচটি মহামারী হয়েছিল- ষষ্ঠ হিজরিতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মাদায়েন শহরে 'শিরওয়াইহ' নামক এক মহামারী হয়েছিল। এরপর উমর রাদি. এর যুগে সিরিয়ায় 'আমওয়াস' নামক এক মহামারী হয়েছিল। সে মহামারীতে ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। এরপর আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের রাদি. এর যুগে ৬৯হিজরির শাওয়াল মাসে মহামারী হয়েছিল। সেসময় তিন দিনের প্রতিদিন ৭০হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছিল। এই মহামারীতে আনাস বিন মালেক রাদি. এর ৮৩জন সন্তান মৃত্যুবরণ করে। কারও কারও মতে, ৭৩ জন সন্তান মৃত্যুবরণ করে। আবদুর রহমান বিন আবু বাকরা রাদি. এর ৪০ জন সন্তান মৃত্যুবরণ করে।
এরপর ৮৭ হিজরির শাওয়াল মাসে 'ফাতাইয়াত' নামক মহামারী হয়। অতঃপর ১৩১ হিজরির রজব মাসে এক মহামারী হয়। সে মহামারী রমজান মাসে এসে প্রকট রূপ ধারণ করে। সেসময় মারবাদ নামক পথে প্রতিদিন একহাজার ব্যক্তির জানাযা পড়া হত। এরপর শাওয়াল মাসে গিয়ে কিছু কমে। কুফা নগরীতে ৫০ হিজরিতে এক মহামারী হয়েছিল। সে মহামারীতে মুগিরা বিন শুবা রাদি. মৃত্যুবরণ করেন। -মাদায়িনির বক্তব্য এখানে শেষ হল।

টিকাঃ
৫০০. সহিহ মুসলিম: ৯২০, সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৮, মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৫৪।
৫০১. সুনানে বাইহাকি ৩/৩৮৫।
৫৩২. সহিহ মুসলিম: ৯১৯, সুনানে তিরমিজি: ৯৭৭, মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০৬, সুনানে নাসাঈ ৪/৪-৫, আমাল: ১০৬৯, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৭।
৫৩৩. সুনানে আবু দাউদ: ৩১২১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৮, আমাল: ১০৭৪, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৬৫, ইবনে হিব্বান: ৭২০।
৫৩৪. সহিহ মুসলিম: ৯১৮, সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৫০৬, মুয়াত্তা মালেক ১/২৩৬, মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০৯, আমাল: ১০৬৯, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৯৮, আমাল: ৫৮০, ইবনুস সুন্নি।
৫৩৫. সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৯, আমাল; ১০৭১, মুসনাদে আহমাদ ৪/২৭। উ.
৫৩৬. সুনানে তিরমিজি: ১০২১, মুসনাদে আহমাদ ৪/৪২৫।
৫৩৭. সহিহ বুখারি: ৬৪২৪, মুসনাদে আহমাদ ২/৪১৭।
৫৩৮. ইবনুস সুন্নি: ৫৬১। হাদিসটি দুর্বল।
৫৩৯. ইবনুস সুন্নি: ৫৬২। হাদিসটি দুর্বল।
৫৪০. সহিহ বুখারি: ১২৯৪, সহিহ মুসলিম: ১০৩, সুনানে নাসাঈ ৪/২০, সুনানে আবু দাউদ: ৩১২৭, মুসনাদে আহমাদ ১/৩৮৬।
৫৪১. সহিহ বুখারি: ১২৯৬, সহিহ মুসলিম: ১০৪, সুনানে নাসাঈ ৪/২০, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৭৬।
৫৪২. সহিহ বুখারি: ১৩০6, সহিহ মুসলিম: ৯৩৬, সুনানে নাসাঈ ৭/১৪৮, মুসনাদে আহমাদ ৫/৮৫, সুনানে আবু দাউদ: ৩১২৭।
৫৪৩. সহিহ মুসলিম: ৬৮, সুনানে তিরমিজি: ১০০১, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৭৭।
৫৪৪. সুনানে আবু দাউদ: ৩১২৮, মুসনাদে আহমাদ ৩/৬৫।
৫৪৫. সহিহ বুখারি: ১৩০৪, সহিহ মুসলিম: ৯২৩।
৫৪৬. সহিহ বুখারি: ১২৮৪, সহিহ মুসলিম: ৯২৩, সুনানে নাসাঈ ৪/২১-২২, সুনানে আবু দাউদ: ৩১২৫, মুসনাদে আহমাদ ৫/২০৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৮৫।
৫৪৭. সহিহ বুখারি: ১৩০৩, সহিহ মুসলিম ৩/১৯৪, সুনানে আবু দাউদ: ২১২৬, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৯৪।
৫৪৮. সুনানে আবু দাউদ: ৩১১১, সুনানে নাসাঈ ৪/১৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮০৩, মুয়াত্তা মালেক ১/২৩৩।
৫৪৯. সুনানে তিরমিজি: ১০৭৬, সুনানে কুবরা ৪/৫৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬০২।
৫৫০. সুনানে তিরমিজি: ১০৭৬।
৫৫১. সুনানে আবু দাউদ: ৩১২৩, সুনানে নাসাঈ ৪/২৭, মুসনাদে আহমাদ ২/১৬৯, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৭৩।
৫৫২. সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬০১, সুনানে বাইহাকি ৪/৫৯। হাদিসটি দুর্বল।
৫৫৩. সুরা মায়েদা: ০২।
৫৫৪. সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪৬।
৫৫৫. সহিহ মুসলিম: ৮৬৮। শোকসভার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন: চেতনার মশাল (জালসায়ে তাজিয়াত কি শরয়ি হাইসিয়াত)। লেখক: হজরতুল উসতাজ মুফতি সাঈদ আহমাদ পালনপুরি রাহিমাহুল্লাহ। ভাষান্তর: অধম উবায়দুল্লাহ আসআদ। প্রকাশনায়: মাকতাবাতুস সুন্নাহ ঢাকা। উ.
৫৫৬. সহিহ বুখারি: ১২৮৪, সহিহ মুসলিম: ৯২৩।
৫৫৭. সুনানে নাসাঈ ৪/২২, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৫, ইবনে হিব্বান: ৭২৫, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৮৪।

📘 আল আযকার > 📄 মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও কাফনের সময়ের দুআ

📄 মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও কাফনের সময়ের দুআ


মৃত্যুর সংবাদ দেয়ার বিধান
মৃত ব্যক্তির পরিবার ও আত্মিয়-স্বজনকে মৃত্যুর সংবাদ জানানো জায়েজ, তবে আম ঘোষণা করা মাকরুহ।
(৪০৫) হজরত হুজাইফা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন-
إِذَا مِتُّ فَلَا تُؤْذِنُوا بِي إِنِّي أَخَافُ أَنْ يَكُوْنَ نَعْيًا ؛ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَى عَنِ النَّعْيِ .
অর্থ: আমি মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমার মৃত্যুর সংবাদ কাউকে জানাবে না। আমি আশংকা করি যে, এটি আম ঘোষণা হয়ে যাবে। কারণ, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করা থেকে নিষেধ করেছেন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৫৫৮
(৪০৬) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِيَّاكُمْ وَالنَّعْيَ؛ فَإِنَّ النَّعْيَ مِنْ عَمَلِ الْجَاهِلِيَّةِ.
অর্থ: তোমরা মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করা থেকে বিরত থাক। এটি জাহেলি যুগের কাজ। ৫৫৯
(৪০৭) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে আছে-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَى النَّجَاشِيَّ إِلَى أَصْحَابِهِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাদশা নাজাশির মৃত্যুর সংবাদ সাহাবায়ে কেরামকে জানিয়েছেন। ৫৬০-সহিহ বুখারি ও মুসলিমে আছে: এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর সাহাবায়ে কেরাম তাকে রাতে দাফন করে ফেলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়টি জানেননি। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা আমাকে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানাবে না? ৫৬১
উলামায়ে কেরাম বলেন, মৃতের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে জানানো চাই। যা এ দুই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়। তারা বলেন, জাহেলি যুগের ন্যায় মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করা নিষিদ্ধ। জাহেলি যুগে কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হলে তারা গোত্রগুলোর কাছে একজন ঘোষক পাঠাত। যে ঘোষণা করত- অমুকের মৃত্যুর সংবাদ বা আরবের মৃত্যুর সংবাদ। অর্থাৎ অমুকের মৃত্যুর কারণে আরবের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘোষণার সাথে কান্না ও আহাজারীও থাকত।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরام মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর জানান দেয়া দুই কারণে উত্তম বলেন। একদল উলামায়ে কেরام বলেন, মৃতের নিকটাত্মীয় ও দূরবর্তী আত্মীয়কে জানানো মুস্তাহাব। কারণ, এতে নামাজের মুসল্লি বাড়বে এবং তার জন্য অধিক সংখ্যক মানুষ দুআ করবে। আরেক দল উলামায়ে কেরام বলেন, শুধু দূরে থাকা আত্মীয়দেরকে জানানো মুস্তাহাব; অন্যদের নয়। তবে সঠিক কথা হল- সকলের মাঝেই শুধু ঘোষণা করা উত্তম।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও কাফনের সময় যে দুআ পড়বে
মৃতের গোসল ও কাফনের সময় বেশি বেশি জিকির করা চাই। উলামায়ে কেরام বলেন, গোসল দানকারী ব্যক্তি মৃতের ভালো কিছু দেখলে- যেমন চেহারা নুরানি হওয়া ও সুগন্ধি বের হওয়া ইত্যাদি, তাহলে এগুলো অন্যদের জানানো মুস্তাহাব। আর অপছন্দনীয় কিছু দেখলে, যেমন চেহারা কালো হয়ে যাওয়া, দুর্গন্ধ বের হওয়া, অঙ্গ বিকৃত হওয়া, আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখলে তা কাউকে বলা হারাম। এ বিষয়ে তাদের প্রমাণ পেশ করেন নিচের হাদিসসূহের দ্বারা-
(৪০৮) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
اُذْكُرُوا مَحَاسِنَ مَوْتَاكُمْ، وَكَفُّوا عَنْ مَسَاوِيْهِمْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা মৃতের ভালো বিষয়গুলো আলোচনা কর ও মন্দ বিষয় থেকে বিরত থাক। ৫৬২
(৪০৯) হজরত আবু রাফে রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ غَسَّلَ مَيْتًا فَكَتَمَ عَلَيْهِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ أَرْبَعِينَ مَرَّةً
অর্থ: যে ব্যক্তি মৃতের গোসল দেয় এবং তার মন্দ কিছু গোপন করে, আল্লাহ তাআলা তাকে চল্লিশবার বা চল্লিশটি গুনাহ মাফ করে দেন। ৫৬৩
আবুল খাইর আল ইয়েমেনি রহ. বলেন, যদি মৃত ব্যক্তি বিদআতি হয়ে থাকে এবং সে প্রকাশ্যে বিদআত করত। তাহলে গোসল দানকারী তাতে অপ্রীতিকর কিছু দেখলে তা মানুষের কাছে প্রকাশ করাই যুক্তিযুক্ত। যেন মানুষ বিদআত থেকে বেঁচে থাকে। ৫৬৪

টিকাঃ
৫৫৮. সুনানে তিরমিজি: ৯৮৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৭৬, মুসনাদে আহমাদ ৫/৪০৬, সুনানে বাইহাকি ৪/৭৪।
৫৫৯. সুনানে তিরমিজি: ৯৮৪।
৫৬০. সহিহ বুখারি: ১২৪৫, সহিহ মুসলিম: ৯৫১, সুনানে তিরমিজি: ১০২২, সুনানে নাসাঈ ৪/৭২, মুসনাদে আহমাদ ২/২৮১।
৫৬১. সহিহ বুখারি: ১৩৩৭, সহিহ মুসলিম: ৯৫৬।
৫৬২. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০, সুনানে তিরমিজি: ১০১৯।
৫৬৩. মুসতাদরাকে হাকিম ১/৩৫৪, সুনানে বাইহাকি ৩/৩৯৫।
৫৬৪. ফিকহে হানাফির হাশিয়াতুত তাহতাবিতেও একই ব্যাখ্যা রয়েছে। বিস্তারিত দেখুন: চেতনার মশাল বইয়ে।

📘 আল আযকার > 📄 জানাযার নামাজের দুআসমূহ

📄 জানাযার নামাজের দুআসমূহ


জানাযার নামাজ ফরজে কেফায়া। অনুরূপভাবে গোসল দেয়া, কাফন পরানো ও দাফন করাও ফরজে কেফায়া। এ বিষটিতে সকলেই একমত। জানাযার নামাজ আদায়কারীর সংখ্যা কত হতে হবে- এ ব্যাপারে চারটি মত রয়েছে- এক. একজন হলেই চলবে। এটিই অধিকাংশের মত। দুই. দুইজন শর্ত। তিন. তিনজন শর্ত। চার. চারজন শর্ত। তারা একাকী পড়ুক বা জামাতসহ।
জানাযার নামাজ পড়ার পদ্ধতি হল, চার তাকবির বলা। এই চার তাকবির জরুরি। একটি না বললেও নামাজ শুদ্ধ হবে না। পাঁচটি বললে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে কিনা-এ ব্যাপারে শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের দুটি বক্তব্য রয়েছে। তবে সঠিক কথা হল, বাতিল হবে না। যদি ইমাম পাঁচ তাকবির বলে, তাহলে মুক্তাদি নামাজ ছেড়ে পৃথক হবে না; আবার ইমামের অনুসরনও করবে না। এটিই সঠিক ও প্রসিদ্ধ অভিমত। তবে ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরানোর জন্য অপেক্ষা করবে নাকি তৎক্ষণাৎ সালাম ফিরিয়ে ফেলবে-এ ব্যাপারেও দুটি মত রয়েছে। সঠিক কথা হল, অপেক্ষা করবে। প্রত্যেক তাকবিরের সময় হাত উঠানো মুস্তাহাব। ৫৬৫ তাকবির কেমন হবে, কীভাবে বলতে হবে ইত্যাদি সববিষয় নামাজের অধ্যায়ে আলোচনা গেছে।
তাকবিরগুলোর মাঝে যা পড়তে হবে
প্রথম তাকবিরের পর সুরা ফাতিহা পড়বে। ৫৬৬ দ্বিতীয় তাকবিরের পর দরুদ শরিফ পড়বে। তৃতীয় তাকবিরের পর মৃতের জন্য দুআ করবে। এক্ষেত্রে খালেছ দুআ পড়া ওয়াজিব। চতুর্থ তাকবিরের পর কোন কিছু পড়বে না। তবে আমরা সামনে যাকিছু আলোচনা করব, সেগুলো পড়া মুস্তাহাব।
প্রথম তাকবিরের পর সুরা ফাতিহার আগে আউজুবিল্লাহ, সানা এবং সুরা ফাতিহার পর অন্য কোন সুরা পড়বে কিনা- এ ব্যাপারে শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের তিনটি অভিমত রয়েছে। এক. সবগুলো পড়া মুস্তাহাব। দুই. মুস্তাহাব নয়। তিন. শুধু আউজুবিল্লাহ পড়া মুস্তাহাব; এটিই সবচেয়ে সহিহ অভিমত। সুরা ফাতিহার পর আমিন বলাও মুস্তাহাব। ৫৬৭
(৪১০) হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি এক জানাযার নামাজ পড়ালেন। সে নামাজে সুরা ফাতিহা পড়লেন আর বললেন, তোমরা জেনে রেখ, এটি সুন্নাত। ৫৬৮
দুআগুলো আস্তে পড়া সুন্নাত। রাতে জানাযার নামাজ পড়া হোক বা দিনে। এটিই সহিহ ও প্রসিদ্ধ মাজহাব। তবে একদল উলামায়ে কেরাম বলেন, দিনে নামাজ পড়লে আস্তে পড়বে আর রাতে পড়লে জোরে পড়বে।
দ্বিতীয় তাকবিরের পর অন্তত এতটুকু পড়া ওয়াজিব- 'আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ' (হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর রহমত বর্ষণ করুন) আর 'ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ' (এবং মুহাম্মাদের পরিবারের ওপর) বলা মুস্তাহাব। অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে এই দ্বিতীয় অংশটি ওয়াজিব নয়। তবে কেউ কেউ বলেন, ওয়াজিব। এর পর সময় থাকলে মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য দুআ করা চাই। ইমাম শাফেয়ি রহ. তা বলেছেন এবং শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত। মুজানি রহ. ইমাম শাফেয়ি রহ. থেকে বর্ণনা করেন, এ সময় আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করাও মুস্তাহাব। দরুদ শরিফ পড়ার বিষয়ে অনেক হাদিস এসেছে। আমরা এখানে সংক্ষেপনের জন্য সেগুলো উল্লেখ করিনি।
তৃতীয় তাকবিরের পর মৃতের জন্য দুআ করবে। এর সর্বনিম্ন পরিমাণ হল, যতটুকু বললে সেটিকে দুআ বলা হয়ে থাকে। যেমন, এতটুকু বলা- رَحِمَهُ اللهُ (রাহিমাহুল্লাহ): আল্লাহ তার ওপর রহম করুন। غَفَرَ اللهُ لَهُ (গাফারাল্লাহু লাহ): আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন। اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ (আল্লাহুম্মাগফিরলি): হে আল্লাহ, আপনি তাকে ক্ষমা করে দিন। اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ (আল্লাহুম্মার হামহু): হে আল্লাহ, আপনি তার ওপর রহম করুন।
অথবা اَللَّهُمَّ الْطُفْ بِهِ (আল্লাহুম্মাল লতুফ বিহ): হে আল্লাহ, তার প্রতি দয়া করুন, ইত্যাদি। হাদিস শরিফে অনেক দুআ এসেছে, সেগুলো পড়া মুস্তাহাব। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহিহ হাদিস হল-
(৪১১) হজরত আউফ বিন মালেক রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাযার নামাজ পড়ালেন। আমি তাঁর থেকে এটি মুখস্থ করেছি। তিনি নামাজে এই দুআ করছিলেন। এমন দুআ শুনে আমি আকাঙ্ক্ষা করছিলাম, যদি মৃত ব্যক্তিটি আমি হতাম। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ، وَعَافِهِ وَاعْفُ عَنْهُ، وَأَكْرِمْ نُزُلَهُ، وَوَسِّعْ مُدْخَلَهُ، وَاغْسِلْهُ بِالْمَاءِ وَالثَّلْجِ وَالْبَرَدِ، وَنَقَّهِ مِنَ الْخَطَايَا كَمَا نَقَّيْتَ الثَّوْبَ الْأَبْيَضَ مِنَ الدَّنَسِ، وَأَبْدِلْهُ دَارًا خَيْرًا مِنْ دَارِهِ، وَأَهْلًا خَيْرًا مِنْ أَهْلِهِ، وَزَوْجًا خَيْرًا مِنْ زَوْجِهِ، وَأَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ، وَأَعِذْهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ و مِنْ عَذَابِ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লাহু, ওয়ার হামহু ওয়া আফিহি ওয়া'ফু আনহু, ওয়া আকরিম নুজুলাহু, ওয়া ওয়াসসি মুদখালাহু, ওয়াগসিলহু বিলমায়ি ওয়াস সালজি ওয়াল বারাদি। ওয়া নাক্কিহি মিনাল খাতাইয়া কামা নাক্কাইতাস সাওবাল আবইয়াদা মিনাদ্দানাসি। ওয়া আবদিলহু দারান খাইরান মিন দারিহি ওয়া আহলান খাইরান মিন আহলিহি, ওয়া জাওযান খাইরান মিন জাওযিহি। ওয়া আদখিলহুল জান্নাতা ওয়া আয়িজহু মিন আজাবিল কাবরি ওয়া মিন আজাবিন্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে ক্ষমা করুন, তার প্রতি দয়া করুন, মার্জনা করুন এবং তাকে সুরক্ষা দিন। তার আপ্যায়ন সম্মানজনক করুন, তার সমাধি প্রসস্থ করনুন। তাকে ধুয়ে দিন পানি দিয়ে, বরফ দিয়ে এবং শিশির দিয়ে। ময়লা থেকে সাদা কাপড় যেভাবে পরিষ্কার করেন তাকেও তেমনি পাপ থেকে পাক-পরিষ্কার করে দিন। তাকে দিন দুনিয়ার বাড়ি থেকে উত্তম বাড়ি, উত্তম পরিবার এবং শ্রেষ্ঠ স্ত্রী। তাকে জান্নাতে জায়গা দিন এবং কবর ও জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি দিন। ৫৬৯
(৪১২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জানাযার নামাজে এ দুআটি পড়লেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا، وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا، وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا، وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا، اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلَى الإِسْلَامِ، وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلَى الإِيْمَانِ، اللهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ وَلَا تَفْتِنَا بَعْدَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়িনা ওয়া মাইয়িতিনা ওয়া সাগিরিনা ওয়া কাবিরিনা ওয়া জাকারিনা ওয়া উনসানা, ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা। আল্লাহুম্মা মান আহয়াইতাহু মিন্না ফা আহয়িহি আলাল ইসলামি, ওয়া মান তাওয়াফফাইতাহু মিন্না ফা তাওয়াফফাহু আলাল ঈমান। আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আযরাহু ওয়া লা তাফতিন্না বাদাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদের জীবিত-মৃত, ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, উপস্থিত- অনুপস্থিত সবাইকে ক্ষমা করে দিন। হে আল্লাহ, আমাদের যাদেরকে হায়াতে রাখবেন তাদেরকে ইসলামের ওপর রাখুন এবং যাদেরকে মৃত্যু দিবেন ঈমান ওপর দিবেন। হে আল্লাহ, আমাদেরকে তার বিচ্ছেদ-বেদনার সওয়াব থেকে বঞ্চিত কর না এবং তার মৃত্যুর পরে আমাদেরকে ভ্রষ্ট কর।
না। -হাকিম রহ. বলেন, হাদিসটি ইমাম বুখারি ও মুসলিমের শর্তে সহিহ। ইমাম বুখারি রহ. বলেন, উক্ত দুআটি আবু ইবরাহিম তার পিতা থেকে রেওয়ায়েত করেছেন- যা উক্ত দুআর সবচেয়ে সহিহ সনদ। আর এ অধ্যায়ে আউফ বিন মালেকের হাদিসটি সবচেয়ে সহিহ। ৫৭০
(৪১৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি-
إِذَا صَلَّيْتُمْ عَلَى الْمَيِّتِ فَأَخْلِصُوا لَهُ الدُّعَاءَ.
অর্থ: তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযায় তার জন্য বিশেষভাবে দুআ কর। ৫৭১
(৪১৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি জানাযার নামাজে দুআ করা প্রসঙ্গে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبُّهَا ، وَأَنْتَ خَلَقْتَهَا، وَأَنْتَ هَدَيْتَهَا لِلْإِسْلَامِ، وَأَنْتَ قَبَضْتَ رُوحَهَا، وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِسِرِّهَا وَعَلَانِيَتِهَا، جِئْنَاكَ شُفَعَاءَ فَاغْفِرْ لَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বুহা ওয়া আনতা খালাকতাহা ওয়া আনতা হাদাইতাহা লিল ইসলামি, ওয়া আনতা কাবাদতা রুহানা ওয়া আনতা আলামু বিসিররিহা ওয়া আলানিয়াতিহা, যিনাকা শুফাআ ফাগফির লাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমার রব। আপনি আমার সৃষ্টিকর্তা। আপনি আমাকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করেছেন। আপনি মৃত্যুদাতা। আপনি গোপন- প্রকাশ্য বিষয়ে সবচেয়ে বেশি অবগত। আপনি কিয়ামত দিবসে শাফাআত কবুল করবেন। আপনি তাকে ক্ষমা করুন। ৫৭২
(৪১৫) হজরত ওয়াসেল বিন আসকা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিয়ে একজন মুসলমানের জানাযার নামাজ আদায় করলেন, এরপর আমি তাকে এ দুআ করতে শুনেছি-
اللَّهُمَّ إِنَّ فُلَانَ بْنَ فُلَانٍ فِي ذِمَّتِكَ، وَحَبْلِ جِوَارِكَ، فَقِهِ مِنْ فِتْنَةِ الْقَبْرِ وَعَذَابِ النَّارِ وَأَنْتَ أَهْلُ الْوَفَاءِ وَالْحَقِّ، فَاغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না ফুলানাবনা ফুলানিন ফি জিম্মাতিকা ওয়া হাবলি যিওয়ারিকা, ফাকিহি মিন ফিতনাতিল কাবরি ওয়া আজাবিন্নারি ওয়া আনতা আহলুল ওয়াফায়ি ওয়াল হাক্কি। ফাগফির লাহু ওয়ার হামহু ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, অমুকের ছেলে অমুক আপনার দায়িত্বে, আপনার নিকটে। তাকে কবরের আজাব ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা করুন। আপনি ওয়াদা রক্ষাকারী ও প্রশংসার অধিকারী। তাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, আপনি ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
তাছাড়া ইমাম শাফেয়ি রহ. এ সকল হাদিস ও অন্যান্য হাদিস থেকে নিচের দুআটি চয়ন করেছেন। এ দুআটি পড়া তিনি ভালো মনে করেন। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ هَذَا عَبْدُكَ ابْنُ عَبْدِكَ، خَرَجَ مِنْ رَوْحِ الدُّنْيَا وَسَعْتُهَا، وَمَحْبُوْبَهُ وَأَحْبَاتَهُ فِيهَا، إِلى ظُلْمَةِ الْقَبْرِ وَمَا هُوَ لَا قِيَهِ، كَانَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، وَأَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُكَ وَرَسُولُكَ، وَأَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ ، اللَّهُمَّ إِنَّهُ نَزَلَ بِكَ وَأَنْتَ خَيْرُ مَنْزُولٍ بِهِ، وَأَصْبَحَ فَقِيْراً إِلَى رَحْمَتِكَ، وَأَنْتَ غَنِيٌّ عَنْ عَذَابِهِ، وَقَدْ جِئْنَاكَ رَاغِبِيْنَ إِلَيْكَ، شُفَعَاءَ لَهُ، اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ مُحْسِناً فَزِدْ فِي إِحْسَانِهِ، وَإِنْ كَانَ مُسِيْئاً فَتَجَاوَزْ عَنْهُ، وَآتِهِ بِرَحْمَتِكَ رِضَاكَ، وَقِهِ فِتْنَةَ الْقَبْرِ وَعَذَابَهُ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَجَافٍ الْأَرْضَ عَنْ جَنْبَيْهِ، وَلَقِهِ بِرَحْمَتِكَ الْأَمْنَ مِنْ عَذَابِكَ حَتَّى تَبْعَثَهُ إِلَى جَنَّتِكَ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাজা আবদুকা ইবনু আবদিকা, খারাজা মিন রাওহিদ্দুনয়া ওয়া সাআতিহা, ওয়া মাহবুবিহি ওয়া আহবাবিহি ফিহা, ইলা জুলমাতিল কাবরি ওয়া মা হুয়া লাকিহি। কানা ইয়াশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া রাসুলুক, ওয়া আনতা আলামু বিহ।
আল্লাহুম্মা ইন্নাহু নাজালা বিকা ওয়া আনতা খাইরু মানজুলিন বিহি, ওয়া আসবাহা ফাকিরান ইলা রাহমাতিকা, ওয়া আনতা গানিউন আন আজাবিহি, ওয়া কাদ যি’নাকা রাগিবিনা ইলাইকা, শুফাআ লাহ। আল্লাহুম্মা ইন কানা মুহসিনান ফাজিদ ফি ইহসানিহি, ওয়া ইন কানা মুসিআন ফাতাযাওয়াজ আনহু, ওয়া আতিহি বি-রাহমাতিকা রিদাকা। ওয়াকিহি ফিতনাতাল কাবরি ওয়া আজাবাহু, ওয়াফসাহ লাহু فی قبریہ, ওয়া যাফিল আরদা আন যানবাইহি, ওয়া লাক্কিহি বি-রাহমাতিকাল আমনা মিন আজাবিকা হাত্তা তাবআসাহু ইলা জান্নাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, সে আপনার গোলাম, গোলামের গোলাম। দুনিয়ার বিশ্রাম ও প্রশস্ততা থেকে, প্রিয়জন ও বন্ধু-বান্ধব থেকে বেরিয়ে কবরের অন্ধকারের দিকে এবং আমলনামার তিকে রওনা করেছে। দুনিয়ায় সে সাক্ষ্য দিত যে, আপনি ব্যতীত আর কোন মাবুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। আপনি এ বিষয়ে সর্বজ্ঞাত। ওহে আল্লাহ, সে আপনার মেহমান হয়েছে, আপনিই তার শ্রেষ্ঠ মেজবান। সে আপনার রহমতের মুখাপেক্ষী এবং তাকে শাস্তি প্রদানের অমুখাপেক্ষী। আমরা আপনার কাছে বড় আশা নিয়ে এসেছি, তার পক্ষে সুপারিশ করতে। হে আল্লাহ, সে সৎ হলে তার প্রতি অফুরান অনুগ্রহ করুন, আর অসৎ হলে তাকে ক্ষমা করুন। স্বীয় অনুগ্রহে তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। তাকে কবরের পরীক্ষা ও শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। তার জন্য কবর প্রশস্ত করে দিন, তার পার্শ্বদ্বয় থেকে জমি প্রশস্ত করে দিন। স্বীয় দয়ায় তাকে আপনার শাস্তি থেকে সুরক্ষা দিন, জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছানো পর্যন্ত হে সর্বোচ্চ দয়ালু। -দুআটি মুখতাসারুল মুজানিতে আছে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি মৃত ব্যক্তি অল্প বয়স্ক হয়, তাহলে পিতা-মাতার জন্য দুআ করবে। এ দুআটি করবে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَهُمَا فَرَطاً، واجْعَلْهُ لَهُمَا سَلَفاً، وَاجْعَلْهُ لَهُمَا ذُخْراً، وَثَقِلْ بِهِ مَوَازِينَهُمَا، وَأَفْرَغَ الصَّبْرِ عَلَى قُلُوْبِهِمَا، وَلَا تَفْتِنُهُمَا بَعْدَهُ، وَلَا تَحْرِمْهُمَا أَجْرَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলহু লাহুমা ফারাতান, ওয়ায আলহু লাহুমা সালাফান, ওয়ায আলহু লাহুমা জুখরান, ওয়া সাক্কিল বিহি মাওয়াজিনাহুমা, ওয়া আফরিগিস সাবরা আলা কুলুবিহিমা ওয়া লা তাফতিনহুমা বাদাহু, ওয়া লা তাহরিমহুমা আযরাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে তাদের জন্য অগ্রগামী বানান, তাকে তাদের জন্য আগাম বানান, তাকে তাদের জন্য সওয়াবের ভাণ্ডার বানান। তার দ্বারা তাদের আমালনামা ভারী করুন, তাদের অন্তরে সবুর দান করুন। তার তার পশ্চাদে তাদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করবেন না এবং তার ভালো কাজ থেকে তাদেরকে বঞ্চিত করবেন না। -এরপর উক্ত দুআর সাথে আল্লাহুম্মাগফিরলি হাইয়িনা....শেষ পর্যন্ত পড়বে। ৫৭৩
চতুর্থ তাকবিরের পর জিকির করবে না; বরং সালাম ফিরিয়ে ফেলবে। তবে শাফেয়ি রহ. যে দুআর কথা বলেছেন সেগুলো পড়া মুস্তাহাব। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنَا أَجْرَهُ وَلَا تَفْتِنَا بَعْدَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনা আযরাহু ওয়া লা তাফতিন্না বা'দাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, তার ভালো কাজ থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং তার পরে আমাদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করবেন না। -আবু আলি বিন আবু হুরায়রা বলেন, পূর্বসূরী উলামায়ে কেরام এ দুআটি পড়তেন-
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَ فِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাদেরকে দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ দান করুন। আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন।
তবে এই দুআ শাফেয়ি রহ. থেকে বর্ণিত নেই। এটি পড়লে ভালো। ইমাম নববি রহ. বলেন, বায়হাকি শরিফে বর্ণিত হাদিসের দ্বারা চতুর্থ তাকবিরের পর দুআর ব্যাপারে এই হাদিস দ্বারা দলিল দেয়া হয়। আবদুল্লাহ বিন আবু আউফা রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি তার ছেলের জানাযায় চতুর্থ তাকবিরের পর দুই তাকবিরের মাঝখানের সময় পরিমাণ দাঁড়িয়ে ইস্তিগফার ও দুআ পড়েছেন। এরপর বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনই করেছেন। অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি চতুর্থ তাকবির বলে দাঁড়িয়ে থাকলেন। আমরা মনে করলাম তিনি পঞ্চম তাকবির বলবেন। কিন্তু না, তিনি পঞ্চম তাকবির না বলে অনেক্ষণ পর ডানদিকে ও বামদিকে সালাম ফেরালেন। নামাজ শেষ হলে আমরা বললাম, ব্যাপার কঅ? বলেলন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যা করতে দেখেছি, এর থেকে একটুও বাড়িয়ে করিনি। অথবা তিনি বলেছেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি করেছেন। হাকিম রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ। ৫৭৪
জানাযায় সালাম ফেরানো ও মামবুকের করণীয়
তাকবির ও দুআ শেষে অন্যান্য নামাজের ন্যায় উভয় দিকে সালাম ফেরাবে। যেমনটি পূর্বে আবদুল্লাহ বিন আবু আউফা এর হাদিসে বর্ণনা করা হয়েছে। সালামের হুকুম অন্যান্য নামাজের সালামের মতই। এটাই সহিহ ও বিশুদ্ধ অভিমত।
জানাযার নামাজ শুরু হওয়ার পর কোন ব্যক্তি এসে ইমামকে নামাজের কোন অংশে পেলে তৎক্ষণাৎ তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যাবে। সুরা ফাতিহা পড়ে বাকি দুআগুলো তারতিব মতো নিজে নিজে পড়বে। ইমাম যা পড়ে তা পড়বে না। মাসবুক মুক্তাদি তাকবির বলার পর যদি মুক্তাদি কোন দুআ পড়ার আগেই ইমাম তাকবির বলে ফেলে তাহলে মুক্তাদির সে দুআ পড়তে হবে না। যেমন অন্যান্য নামাজে পড়তে হয় না।
মুক্তাদির তাকবির ও দুআ শেষ করার আগেই যদি ইমাম সালাম ফিরিয়ে ফেলে তাহলে মুক্তাদি বাকি তাকবির ও দুআগুলো তারতিবের সঙ্গে পড়বে। এটিই আমাদের সহিহ ও প্রসিদ্ধ মাজহাব। ৫৭৫

টিকাঃ
৫৬৫. হানাফি মাজহাব মতে হাত উঠাবে না।
৫৬৬. হানাফি মাজহাব মতে, প্রথম তাকবিরের পর সুরা ফাতিহা পড়বে না; বরং শুধু সানা পড়বে। (হেদায়া ১/১৮০)
৫৬৭. হানাফিদের মতে প্রথম তাকবিরের পর আল্লার প্রশংসা করবে। যেমন ছানা। প্রশংসার বাক্য ছাড়া অন্য কিছু পড়বে না। (হেদায়া ১/১৮০)
৫৬৮. সহিহ বুখারি: ১৩৩৫, সুনানে আবু দউদ: ৩১৯৮, সুনানে তিরমিজি: ১০২৬, সুনানে নাসাঈ ৪/৭৪।
৫৬৯. সহিহ মুসলিম: ৯৬৩, সুনানে তিরমিজি: ১০২৫, সুনানে নাসাঈ ৪/৭৩, মুসনাদে আহমাদ ৬/২৩।
৫৭০. সুনানে তিরমিজি: ১০২৪, সুনানে আবু দাউদ: ৩২০১, সুনানে বাইহাকি ৪/৪১, আমাল: ১০৮০, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৯৮, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৬৮, ইবনে হিব্বান: ৭৫৭, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৫৮।
৫৭১. সুনানে আবু দাউদ: ৩১৯৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৯৭, মাওয়ারিদ: ৭৫৪।
৫৭২. সুনানে আবু দাউদ: ৩২০০, আমাল: ১০৭৬, নাসাঈ।
৫৭৩. হানাফি উলামায়ে কেরাম বলেন, নাবালেগ বাচ্চাদের জন্য ইস্তিগফার করবে না। বরং নাবালেগ ছেলে হলে এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا، وَاجْعَلْهُ لَنَا أَجْرًا وَذُخْرًا، وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا مُشَفَّعًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলহু লানা ফারাতান ওয়ায আলহু না আযরান ওয়া জুখরান, ওয়ায আলহু লানা শাফিআন ওয়া মুশাফফাআ।
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী বানান, তাকে আমাদের জন্য সওয়াব ও ভাণ্ডার বানান। তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানান এবং তার সুপারিশ কবুল করুন।
আর নাবালেগ মেয়ে হলে এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لَنَا فَرْطًا، وَاجْعَلْهَا لَنَا أَجْرًا وَذُخْرًا، وَاجْعَلْهَا لَنَا شَافِعة مُشَفَعة.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মায আলহা লানা ফারাতান ওয়ায আলহা না আযরান ওয়া জুখরান, ওয়ায আলহা লানা শাফিআতান ওয়া মুশাফফাআতান।
অর্থ: হে আল্লাহ, তাকে আমাদের জন্য অগ্রগামী বানান, তাকে আমাদের জন্য সওয়াব ও ভাণ্ডার বানান। তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানান এবং তার সুপারিশ কবুল করুন।
৫৭৪. সুনানে বাইহাকি: ৪/৪২, মুসতাদরাকে হাকিম ১/৩৬০।
৫৭৫. হানাফি মাজহাব মতে, ইমাম যে অবস্থায় থাকেন সেখানেই এসে আগন্তুক ব্যক্তি শরিক হবে না; বরং পরবর্তী তাকবিরের জন্য অপেক্ষা করবে। ইমাম যখন পরবর্তী তাকবির বলবেন, তখন নামাজে শরিক হবে। এরপর ইমামের অনুসরণ করবে। ছুটে যাওয়া তাকবির ও দুআ আগে পড়বে না। বরং ইমাম সালাম ফেরানোর পরে শুরুতে ছুটে যাওয়া তাকবির ও দুআগুলো পড়ে সালাম ফেরাবে। (হেদায়া ১/১৮০-৮১)

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন