📘 আল আযকার > 📄 অসুস্থ ব্যক্তি ও তার সেবাকারীদের করণীয়

📄 অসুস্থ ব্যক্তি ও তার সেবাকারীদের করণীয়


অধ্যায়- ৭
অসুস্থতা, মৃত্যু ও এজাতীয় অবস্থার জিকির-আজকার
মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করা
(৩৪৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- أَكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ. يَعْنِي الْمَوْتَ.
অর্থ: তোমরা সকল স্বাদ বিনাশকারী বস্তু তথা মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ কর। ৪৮৭
অসুস্থ ব্যক্তি সম্পর্কে তার পরিবারবর্গের কাছে জিজ্ঞাসা করা ও তাদের উত্তর প্রসঙ্গে
(৩৪৫) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে-
أَنَّ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ خَرَجَ مِنْ عِنْدِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي وَجَعِهِ الَّذِي تُوُفِّيَ فِيْهِ، فَقَالَ النَّاسُ: يَا أَبَا حَسَنٍ، كَيْفَ أَصْبَحَ رَسُوْلُ اللَّهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَقَالَ: أَصْبَحَ بِحَمْدِ اللَّهِ، بَارِئًا .
অর্থ: যে অসুস্থতায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়েছিল, সে সময় আলি রাদি. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে বাইরে বের হলে সাহাবিগণ আলি রাদি. এর কাছে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবুল হাসান! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কি অবস্থায় সকাল করেছেন? আলি রাদি. বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, তিনি সুস্থ অবস্থায় সকাল করেছেন। ৪৮৮
অসুস্থ ব্যক্তি যা পড়বে, তার ওপর যা পড়া হবে এবং তার কাছে তার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা
(৩৪৬) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে- أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا أَوَى إِلَى فِرَاشِهِ كُلَّ لَيْلَةٍ جَمَعَ كَفَّيْهِ، ثُمَّ نَفَثَ فِيهِمَا، فَقَرَأَ فِيهِمَا: { قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ ، وَ { قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ ، وَ { قُلْ أَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ } ، ثُمَّ يَمْسَحُ بِهِمَا مَا اسْتَطَاعَ مِنْ جَسَدِهِ يَبْدَأُ بِهِمَا عَلَى رَأْسِهِ وَوَجْهِهِ، وَمَا أَقْبَلَ مِنْ جَسَدِهِ، يَفْعَلُ ذَلِكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. قَالَتْ عَائِشَةُ: فَلَمَّا اشْتَكَى، كَانَ يَأْمُرُنِي أَنْ أَفْعَلَ ذَلِكَ بِهِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেতেন, উভয় হাতের তালু মিলিয়ে তাতে তিন কুল পড়ে ফুঁ দিতেন। এরপর শরীরের যতটুকু অংশ সম্ভব মুছতেন। মাথা, চেহারা ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। এভাবে তিনবার করতেন। আয়েশা রাদি. বলেন, যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তখন আমাকে এমন করার জন্য আদেশ করলেন। ৪৮৯ -অন্য বর্ণনায় আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ অবস্থায় তিন কুল পড়ে নিজের শরীরে ফুঁ দিতেন। আয়েশা রাদি. বলেন, যখন তিনি ভারী হয়ে গেলেন, নড়তে পারছিলেন না, তখন আমি এগুলো পড়ে তাঁর শরীরে ফুঁ দিতাম এবং বরকতের জন্য তাঁর হাত দিয়েই মুছে দিতাম।
(৩৪৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে- أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا اشْتَكَى الْإِنْسَانُ الشَّيْءَ مِنْهُ، أَوْ كَانَتْ بِهِ قَرْحَةٌ ، أَوْ جُرْحُ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِإِصْبَعِهِ هَكَذَا - وَوَضَعَ سُفْيَانُ بْنُ عَبِينَةِ الرَّاوِي سَبَّابَتَهُ بِالْأَرْضِ، ثُمَّ رَفَعَهَا وَقَالَ: بِاسْمِ اللَّهِ، تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيقَةِ بَعْضِنَا؛ يُشْفَى بِهِ سَقِيمُنَا بِإِذْنِ رَبِّنَا. وَفِي رِوَايَةٍ: تُرْبَةُ أَرْضِنَا، وَرِيقَةُ بَعْضِنَا.
অর্থ: কেউ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোন বিষয়ে অভিযোগ করলে বা কোন আঘাত বা ব্যথার বিষয়ে জানালে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার আঙুল দিয়ে জামিনের দিকে ইঙ্গিত করতেন এবং বলতেন- بِاسْمِ اللهِ ، تُرْبَةُ أَرْضِنَا بِرِيقَةِ بَعْضِنَا ؛ يُشْفَى بِهِ سَقِيْمُنَا ، بِإِذْنِ رَبَّنَا.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি তুরবাতু আরদিনা বি-রিকাতি বা'দিনা ইয়ুশফা বিহি সাকিমুনা বি-ইজনি রাব্বি না।
অর্থ: আল্লাহর নামে ঝাড়ছি! এই আমাদের মাটি, সাথে একজনের থুথু। এতেই রোগী হবে সুস্থ, আল্লাহর ইচ্ছায় পাবে শিফা। ৪৯০
(৩৪৮) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন স্ত্রীর জন্য দুআ করলেন, ডান হাতে তাকে স্পর্শ করে বললেন-
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ، أَذْهِبِ الْبَأْسَ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বান্নাসি, আজহিবিল বা'সি, ইশফি আনতাশ শাফি লা শিফাআ ইল্লা শিফাউকা। শিফাআল্লা ইয়ুগাদিরু সাকামা।
অর্থ: হে আল্লাহ, ওহে মানবকুলের মালিক! রোগ-যন্ত্রণা বিলোপ করুন। সুস্থতা দান করুন, আপনিই সুস্থ করার মালিক। আপনি ছাড়া আর কেউ সুস্থ করতে পারে না। এমন সুস্থতা দান কর, যাতে সামন্য রোগ বাকি না থাকে। – আরেক বর্ণনায় আছে-
إِمْسَحِ الْبَاسَ رَبِّ النَّاسِ، بِيَدِكَ الشَّفَاءُ، لَا كَاشِفَ لَهُ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: ইমসাহিল বা'সা, রাব্বান্নাসি, বিয়াদিকাশ শিফাউ, লা কাশিফা লাহু ইল্লা আনতা।
অর্থ: রোগ দূর করুন হে মানবকুলের মালিক। আপনার হাতেই শিফা। এটা আপনি ব্যতীত আর কেউ দূর করতে পারবে না। ৪৯১
(৩৪৯) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি সাবেত রাহিমাহুল্লাহুকে বললেন, আমি কি তোমাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঝাড়ফুঁক শিক্ষা দেব? সাবেত রহ. বললেন, জি, অবশ্যই শিখিয়ে দিন। তিনি বললেন-
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ، مُذْهِبَ الْبَأْسِ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لَا شَافِيَ إِلَّا أَنْتَ، شِفَاءٌ لَا يُغَادِرُ سَقَماً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বান্নাসি, মুজহিবাল বা'সি, ইশফি আনতাশ শাফি লা শাফিয়া ইল্লা আনতা। শিফাআল্লা ইয়ুগাদিরু সাকামা।
অর্থ: হে আল্লাহ, ওহে মানবকুলের মালিক! রোগ-যন্ত্রণা বিলোপ করুন। সুস্থতা দান করুন, আপনিই সুস্থ করার মালিক। আপনি ছাড়া আর কেউ সুস্থ করতে পারে না। এমন সুস্থতা দান কর, যাতে সামন্য রোগ বাকি না থাকে। ৪৯২
(৩৫০) হজরত উসমান বিন আবুল আস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّهُ شَكَا إِلَى رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجَعًا يَجِدُهُ فِي جَسَدِهِ مُنْذُ أَسْلَمَ، فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ضَعْ يَدَكَ عَلَى الَّذِي تَأَلَّمَ مِنْ جَسَدِكَ، وَقُلْ: بِاسْمِ اللهِ . ثَلَاثًا ، وَقُلْ سَبْعَ مَرَّاتٍ: أَعُوْذُ بِاللَّهِ، وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ.
অর্থ: তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শরীর ব্যথার অভিযোগ করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ব্যথার স্থানে তোমার হাত রেখে তিনবার 'বিসমিল্লাহ' বল। এরপর এদুআটি সাতবার পড়-
أَعُوْذُ بِاللهِ، وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ.
উচ্চারণ: আউযু বি-ইজ্জাতিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শাররি মা আযিদু ওয়া উহাযিরু।
অর্থ: আমি যে ব্যথা-বেদনা ও ভয়-যন্ত্রণায় আছি তা থেকে আল্লাহ ও তার কুদরতের আশ্রয় গ্রহণ করি। ৪৯৩
(৩৫১) হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. থেকে বর্ণিত, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে এসে এই দুআ পড়লেন-
اللَّهُمَّ اشْفِ سَعْدًا، اللَّهُمَّ اشْفِ سَعْدًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাশ ফি সাদা, আল্লাহুম্মাশ ফি সাদা, আল্লাহুম্মাশ ফি সাদা। অর্থ: হে আল্লাহ তুমি সাদকে সুস্থ করে দাও, হে আল্লাহ তুমি সাদকে সুস্থ করে দাও, হে আল্লাহ তুমি সাদকে সুস্থ করে দাও। ৪৯৪
(৩৫২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি মুমূর্ষু নয় এমন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে গেল এবং তার কাছে সাতবার এই দুআটি পড়ল, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তাকে সে অসুস্থতা থেকে সুস্থ করে দেবেন। দুআটি হল-
أَسْأَلُ اللهَ الْعَظِيمَ رَبَّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ أَنْ يَشْفِيَكَ.
উচ্চারণ: আসআলুল্লাহাল আজিম, রাব্বাল আরশিল আজিম, আন ইয়াশফিয়াক।
অর্থ: আরশের অধিপতি মহান আল্লাহর কাছে আমি আপনার সুস্থতা কামনা করছি। ৪৯৫
(৩৫৩) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাবে, সে যেন এ দুআ পড়ে:
اللَّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ، يَنْكَأُ لَكَ عَدُوًّا، أَو يَمْشِي لَكَ إِلَى صَلَاةٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাশ ফি আবদাকা ইয়ানকাউ লাকা আদুউয়ান আও ইয়ামশি লাকা ইলা সালাতিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আপনার বান্দাকে সুস্থ করে দিন, সে আপনার শত্রুকে পরাস্ত করবে বা জানাযায় হেঁটে যাবে। ৪৯৬
(৩৫৪) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
كُنْتُ شَاكِيًا، فَمَرَّ بِي رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا أَقُولُ: اللَّهُمَّ إِنْ كَانَ أَجَنِّي قَدْ حَضَرَ فَأَرِحْنِي، وَإِنْ كَانَ مُتَأَخِّرًا فَارْفَغْنِي، وَإِنْ كَانَ بَلَاءً فَصَبَّرْنِي، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : كَيْفَ قُلْتَ؟ قَالَ: فَأَعَادَ عَلَيْهِ مَا قَالَ. قَالَ: فَضَرَبَهُ بِرِجْلِهِ، فَقَالَ: اللَّهُمَّ عَافِهِ أَوِ اشْفِهِ شُعْبَةُ الشَّاكُ، فَمَا اشْتَكَيْتُ وَجَعِي بَعْدُ.
অর্থ: আমি অসুস্থ ছিলাম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে আসলেন। আমি বলছিলাম, হে আল্লাহ, যদি আমার মৃত্যু এসে থাকে, তাহলে তুমি আমাকে সহজ মৃত্যু দাও। আর যদি আমার মৃত্যু বিলম্ব হয়, তাহলে আমাকে আরোগ্য দান কর। আর যদি আমার জন্য পরীক্ষা হয়ে থাকে, তাহলে আমাকে ধৈর্যধারণের তাওফিক দাও। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এটা কেমন কথা বলছ? তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পা দ্বারা আঘাত করে বললেন, اَللَّهُمَّ عَافِهِ (আল্লাহুম্মা আফিহ: হে আল্লাহ, তুমি তাকে সুস্থ করে দাও) অথবা বলেছেন, اَللَّهُمَّ اشْفِهِ (আল্লাহুম্মাশ ফিহ: হে আল্লাহ, তুমি তাকে সুস্থ করে দাও)। -হজরত আলি রাদি. বলেন, এরপর আমি কখনও অসুস্থ হইনি। ৪৯৭
(৩৫৫) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. ও আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তারা উভয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ صَدَّقَهُ رَبُّهُ، فَقَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَأَنَا أَكْبَرُ، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ، قَالَ: يَقُوْلُ اللهُ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَحْدِي، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، قَالَ اللهُ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا وَحْدِيْ لَا شَرِيكَ لِي، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ، قَالَ اللهُ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا لِيَ الْمُلْكُ وَلِي الْحَمْدُ، وَإِذَا قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ، قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِي.
অর্থ: যে ব্যক্তি لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার: আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আল্লাহ মহান) বলে, আল্লাহ তাআলা তার কথা সত্যায়ন করে বলেন- لَا إِلهَ إِلَّا أَنَا وَأَنَا أَكْبَرُ (লা ইলাহা ইল্লা আনা ওয়া আনা আকবার: আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আমিই মহান)। যখন বলে- لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু: আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি একক) আল্লাহ তাআলা বলেন- لا إ إِلَّا أَنَا وَحْدِي (লা ইলাহা ইল্লা আনা ওয়াহদি: আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আমি একক)। যখন বলে- لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ: আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই।) আল্লাহ তাআলা বলেন- لَا إِلهَ إِلَّا أَنَا وَحْدِي لَا شَرِيكَ لِي (লা ইলাহা ইল্লা আনা ওয়াহদি লা শারিকা লি: আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, আমি একক, আমার কোন শরিক নেই)। আর যখন বলে- لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ: আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই, রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই), আল্লাহ বলেন- لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا لِي الْمُلْكُ وَلِي الْحَمْدُ (লা ইলাহা ইল্লা আনা লিয়াল মুলকু ওয়া লিয়াল হামদ: আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, রাজত্ব আমারই, প্রশংসার যোগ্য আমিই)। আর যখন বলে- لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ: আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি ছাড়া কোন শক্তি-সামর্থ নেই), তখন আল্লাহ বলেন- لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا
(লা ইলাহা ইল্লা আনা ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়্যাতা ইল্লা বি: আমি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, শক্তি-সামর্থ আমার থেকেই)। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় এগুলো পড়বে, অতঃপর যদি সে মৃত্যুবরণ করে, তাহলে জাহান্নামের আগুন তাকে স্পর্শ করবে না। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৪৯৮
(৩৫৬) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত আছে, জিবরিল আ. রাসুলের কাছে এসে বললেন, হে মুহাম্মাদ, আপনি কি ব্যথা অনুভব করছেন? নবিজি বললেন, হ্যাঁ। তখন জিবরিল বললেন-
بِاسْمِ اللهِ، أَرْقِيْكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ يُؤْذِيْكَ مِنْ شَرِّ كُلِّ نَفْسٍ، أَوْ عَيْنِ حَاسِدٍ اللَّهُ يَشْفِيْكَ، بِاسْمِ اللَّهِ، أَرْقِيْكَ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়ন যুজিকা, মিন শাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন হাসিদ। আল্লাহু ইয়াশফিকা, বিসমিল্লাহি আরকিক।
অর্থ: দূরাত্মার অনিষ্ট, হিংসুকদের কুদৃষ্টি এবং তোমাকে কষ্ট প্রদানকারী সকল বস্তু থেকে আল্লাহর নামে তোমাকে ঝাড়ফুঁক করছি। আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করুন, তারই নামে তোমাকে ঝাড়ছি। -তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। ৪৯৯
(৩৫৭) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে- أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى أَعْرَابِي يَعُوْدَهُ، قَالَ: وَكَانَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ عَلَى مَنْ يَعُودُهُ قَالَ: لَا بَأْسَ، طَهُورُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক অসুস্থ গ্রাম্য সাহাবির খোঁজ- খবর নেয়ার জন্য তার কাছে গেলেন। আর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস ছিল, অসুস্থ কাউকে দেখতে গেলে এ দুআ পড়তেন-
উচ্চারণ: লা বা'সা, তাহুরুন ইনশাআল্লাহ। لَا بَأْسَ، طَهُورُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ.
অর্থ: দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই। আল্লাহ চাহে তো এই ব্যাধি গুনাহ-মুক্তির মাধ্যম হবে। ৫০০
(৩৫৮) হজরত আনাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى أَعْرَابِي يَعُودُهُ وَهُوَ مَحْمُوْمُ، فَقَالَ: كَفَّارَةٌ وَطَهُوْرُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক অসুস্থ গ্রাম্য সাহাবির খোঁজ- খবর নেয়ার জন্য গিয়েছিলেন। সে গ্রাম্য সাহাবির জ্বর হয়েছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
كَفَّارَةٌ وَطَهُوْرُ.
উচ্চারণ: কাফফারাতুন ওয়া তাহুরুন। অর্থ: অসুস্থতা তোমার গুনাহকে ধুয়ে-মুছে পবিত্র করে দিবে। ৫০১
(৩৫৯) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
تَمَامُ عِيَادَةِ الْمَرِيضِ أَنْ يَضَعَ أَحَدُكُمْ يَدَهُ عَلَى جَبْهَتِهِ أَوْ عَلَى يَدِهِ، فَيَسْأَلَهُ: كَيْفَ هُوَ؟
অর্থ: রোগী দেখার দায়িত্ব পূর্ণরূপে আদায়ের পদ্ধতি হল, রোগীর কপালে বা হাতে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করা যে, কেমন আছেন? ৫০২ -অন্য বর্ণনায় আছে- রোগী দেখার দায়িত্ব পূর্ণরূপে আদায়ের পদ্ধতি হল, রোগীর কপালে বা হাতে হাত রেখে জিজ্ঞাসা করা যে, আপনি কি অবস্থায় সকাল করেছেন বা আপনি কি অবস্থায় সন্ধ্যা করেছেন। ৫০৩
(৩৬০) হজরত সালমান রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, আমি অসুস্থ হলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। আমাকে বললেন-
يَا سَلْمَانُ شَفَى اللَّهُ سَقَمَكَ، وَغَفَرَ ذَنْبَكَ، وَعَافَاكَ فِي دِينِكَ وَجِسْمِكَ إِلَى مُدَّةٍ أَجَلِكَ.
উচ্চারণ: ইয়া সালমান! শাফাল্লাহু সাকামাকা ওয়া গাফারা জাম্বাকা ওয়া আফাকা ফি দীনিকা ওয়া জিসমিকা ইলা মুদ্দাতি আযালিক।
অর্থ: হে সালমান! আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করে তুলুন, তোমাকে ক্ষমা করুন। মৃত্যু অবধি তোমার ঈমান ও শরীর সুরক্ষিত রাখুন। ৫০৪
(৩৬১) হজরত উসমান বিন আফফান রাদি. এর সূত্র বর্ণিত। তিনি বলেন-
مَرِضْتُ فَكَانَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهِ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَوِّذُنِي فَعَوَّذَنِي يَوْماً، فَقَالَ: بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، أَعِيْدُكَ بِاللهِ الْأَحَدِ الصَّمَدِ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُواً أَحَدٌ مِنْ شَرِّ مَا تَجِدُ. فَلَمَّا اسْتَقَلَّ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَائِماً قَالَ: يَا عُثْمَانُ تَعَوَّذْ بِهَا فَمَا تَعَوَّذْتُمْ بِمِثْلِهَا.
অর্থ: অসুস্থ অবস্থায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার শুশ্রুষা করতেন। একদিন তিনি শুশ্রুষা করতে এসে বললেন-
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ، أَعِيدُكَ بِاللهِ الْأَحَدِ الصَّمَدِ الَّذِي لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُواً أَحَدٌ مِنْ شَرِّ مَا تَجِدُ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, উয়িজুকা বিল্লাহিল আহাদিস সামাদিল্লাজি লাম ইয়ালিদ ওয়াম যুলাদ, ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহু কুফুয়ান আহাদ, মিন শাররি মা তাজিদ।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি যিনি অত্যন্ত দয়াপরবশ, বড় করুণাময়। তোমার জন্য আশ্রয় কামনা করি অমুখাপেক্ষী আল্লাহর কাছে, যিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং না তাকে কেউ জন্ম দিয়েছে। তার সমতুল্য আর কেউ নেই। তুমি যা অনূভব করছ তা থেকে। -বিদায়বেলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে উসমান, তুমি উক্ত দুআ দ্বারা আল্লাহর আশ্রয় চাও। কেননা এর মতো বিষয় তোমরা পাবে না। ৫০০
অসুস্থ ব্যক্তির পরিবার ও সেবাকারীদের প্রতি ওসিয়ত করা মুস্তাহাব
অসুস্থ ব্যক্তির পরিবার ও সেবাকারীদের প্রতি এই মর্মে ওসিয়ত করা মুস্তাহাব যে, তার প্রতি দয়ার আচরণ করতে, কষ্ট সহন করতে এবং তা আচরণে ধৈর্যধারণ করতে। এমনিভাবে কাউকে দণ্ড অথবা কেসাসে হত্যা করা হলে তাকেও হত্যার পূর্বমূহুর্তে ওসিয়ত করা মুস্তাহাব।
(৩৬২) হজরত ইমরান বিন হুসাইন রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ أَتَتْ نَبِيَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِيَ حُبْلَى مِنَ الزَّنَى، فَقَالَتْ: يَا نَبِيَّ اللهِ ، أَصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْهُ عَلَيَّ. فَدَعَا نَبِيُّ اللَّهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلِيَّهَا، فَقَالَ: أَحْسِنْ إِلَيْهَا، فَإِذَا وَضَعَتْ فَأْتِنِي بِهَا. فَفَعَلَ، فَأَمَرَ بِهَا نَبِيُّ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَشُكَّتْ عَلَيْهَا ثِيَابُهَا، ثُمَّ أَمَرَ بِهَا، فَرُجِمَتْ، ثُمَّ صَلَّى عَلَيْهَا.
অর্থ: জুহাইনা গোত্রের এক মহিলা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমি অপরাধী। আমার ওপর শরিয়তের বিধান (রজম তথা পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করা) প্রয়োগ করেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অভিভাবকদের ডেকে বললেন, তার সাথে তোমরা ভালো ব্যবহার করবে। যখন বাচ্চা প্রসব করবে, তখন তাকে আমার কাছে নিয়ে আসবে। পরবর্তীতে এমনটিই করা হল। এরপর নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাপড় শক্ত করে বাঁধার নির্দেশ দিলেন এবং তাকে রজম মারার আদেশ দিলেন। অতঃপর তার জানাযার নামাজ পড়ালেন। ৫০৬
জ্বর, ব্যথা জাতীয় কিছু হলে যা পড়বে (৩৬৩) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল ব্যথা ও জ্বরের জন্য এ দুআ সাহাবায়ে কেরামকে শিক্ষা দিতেন-
بِاسْمِ اللهِ، الْكَبِيْرِ، أَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ مِنْ شَرِّ كُلِّ عِرْقٍ نَعَارٍ ، وَمِنْ شَرِّ حَرٌّ النَّارِ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল কাবিরি, নাউজুবিল্লাহিল আজিমি মিন শাররি কুল্লি ইরকিন না'আরিন, ওয়া মিন শাররি হাররিন্নার।
অর্থ: মহান আল্লাহর নামে, ক্ষমতাবান আল্লাহর আশ্রয় কামনা করি। গণ্ডগোল সৃষ্টিকারী শিরার অনিষ্ট থেকে এবং জাহান্নামের তাপের অনিষ্ট থেকে। ৫০৭
অসুস্থ ব্যক্তি নিজে সুরা ফাতিহা, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পড়ে হাতে ফুঁ দিয়ে শরীর মুছে দিবে। পিছনে বিপদাপদের যেসব দুআ গেছে সেগুলোও পড়বে।
বিরাগ বা অধের্যতা না প্রকাশের শর্তে 'আমি অনেক অসুস্থ' বা এজাতীয় কিছু বলা মাকরুহ নয়
(৩৬৪) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত-
دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَهُوَ يُوْعَكُ، فَمَسِسْتُهُ بِيَدِي، فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ، ، إِنَّكَ تُوْعَكُ وَعْدًا شَدِيدًا . فَقَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَجَلْ، إِنِّي أُوْعَكُ كَمَا يُوْعَكُ رَجُلَانِ مِنْكُمْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসুস্থ অবস্থায় আমি তাঁর কাছে গেলাম। আমি তাঁর গায়ে হাত দিয়ে বললাম, আপনার তো প্রচণ্ড জ্বর হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, তোমাদের দুজনের সমান আমার জ্বর হয়েছে। ৫০৮
(৩৬৫) হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
جَاءَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعُوْدُنِي مِنْ وَجَعِ اشْتَدَّ بِي، فَقُلْتُ: بَلَغَ بِيْ مَا تَرَى، وَأَنَا ذُوْ مَالٍ وَلَا يَرِثُنِي إِلَّا ابْنَتِي ... وَذُكِرَ الْحَدِيثُ.
অর্থ: আমি যখন প্রচণ্ড অসুস্থ ছিলাম, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। আমি বললাম, আমার যে রোগ হয়েছে, আপনি তো তা দেখতেই পাচ্ছেন। আমার অনেক সম্পদ রয়েছে। আর একমাত্র মেয়েই আমার উত্তরাধিকারী... (হাদিসটি দীর্ঘ)। ৫০৯
(৩৬৬) হজরত কাসেম বিন মুহাম্মাদ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : وَارَأْسَاهُ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: بَلْ أَنَا وَارَأْسَاهُ.... وَذُكِرَ الْحَدِيثُ.
অর্থ: আয়েশা রাদি. বলেছেন, হায় আমার মাথা (প্রচণ্ড মাথা ব্যাথার কারণে তিনি এরূপ বলেছেন); তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বরং তুমি বল- বরং আমি ও আমার মাথা ব্যাথা। ৫১০
কোন কষ্ট পেয়ে মৃত্যু কামনা করা (৩৬৭) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোন বিপদের কারণে তোমাদের মধ্যে কেউ যেন মৃত্যুর আকাঙক্ষা না করে। যদি একান্ত করতেই হয় তাহলে সে যেন এ দুআটি করে-
اللَّهُمَّ أَحْيِنِي مَا كَانَتِ الْحَيَاةُ خَيْرًا لِي، وَتَوَفَّنِي إِذَا كَانَتِ الْوَفَاةُ خَيْرًا لِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আহয়িনি মা কানাতিল হায়াতু খাইরানলি ওয়া তাওয়াফ্ফানি ইযা কানাতিল ওয়াফাতু খারানলি।
অর্থ: হে আল্লাহ, জীবিত থাকা আমার জন্য কল্যাণকর ততদিন জীবিত রাখুন, আর যখন মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর তখন আমাকে মৃত্যু দান করুন। ৫১১
উলামায়ে কেরাম বলেন, এটি হল কোনো বিপদাপদের কারণে মৃত্যু কামনার বিধান। যদি যামানর ফিতনা-ফাসাদ বা অন্য কোন কারণে দ্বীনের ব্যাপারে আশঙ্কা হয় তাহলে মৃত্যু কামনা করা মাকরুহ নয়।
ভালো শহরে মৃত্যুর দুআ করা মুস্তাহাব (৩৬৮) হজরত হাফসা রাদি. থেকে বর্ণিত, হজরত উমর রাদি. এই দুআ করতেন। আমি বললাম, এটা কিভাবে সম্ভব হবে? তিনি বললেন, তিনি চাইলে তো করতে পারেন। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ ارْزُقْنِي شَهَادَةً فِي سَبِيْلِكَ، وَاجْعَلْ مَوْتِي فِي بَلَدِ رَسُوْلِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মার জুকনি শাহাদাতান ফি সাবিলিকা ওয়াযআল মাউতি ফি বালাদি রাসুলিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার রাস্তায় আমাকে শাহাদাতের মৃত্যু দান করুন। আর আপনার রাসুলের শহরে (মদিনায়) আমার মৃত্যু দিয়েন। ৫১২
অসুস্থ ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দেয়া (৩৬৯) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে দুর্বল সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا دَخَلْتُمْ عَلَى الْمَرِيضِ، فَنَفَسُوْا لَهُ فِي أَجَلِهِ، فَإِنَّ ذَلِكَ لَا يَرُدُّ شَيْئًا، وَيُطَيِّبُ نَفْسَهُ.
অর্থ: তোমরা অসুস্থ ব্যক্তিদের কাছে গেলে তাদেরকে আশার বাণী শুনাবে। সেটি তাকদিরে কোন পরিবর্তন আনতে পারবে না, তবে সে মনে প্রশান্তি লাভ করবে। ৫১৩
অসুস্থ ব্যক্তির ভালো কাজের প্রশংসা করা মৃত্যুযন্ত্রণা শুরু হলে অসুস্থ ব্যক্তির ভালো কাজের প্রশংসা করা, যাতে তার ভয় দূর হয় এবং আল্লাহ তাআলার প্রতি সুধারণা তৈরি হয়। (৩৭০) হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّهُ قَالَ لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ حِيْنَ طُعِنَ وَكَأَنَّهُ يُجَرِّعُهُ : يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ، وَلَئِنْ كَانَ ذَاكَ، لَقَدْ صَحِبْتَ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَحْسَنْتَ صُحْبَتَهُ، ثُمَّ فَارَقَكَ وَهُوَ عَنْكَ رَاضٍ، ثُمَّ صَحِبْتَ أَبَا بَكْرٍ فَأَحْسَنْتَ صُحْبَتَهُ، ثُمَّ فَارَقَكَ وَهُوَ عَنْكَ رَاضٍ، ثُمَّ صَحِبْتَ الْمُسْلِمِينَ فَأَحْسَنْتَ صُحْبَتَهُمْ، وَلَئِنْ فَارَقْتَهُمْ لَتُفَارِقَنَّهُمْ وَهُمْ عَنْكَ رَاضُوْنَ .... وَذَكَرَ تَمَامَ الْحَدِيْثِ. وَقَالَ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: ذَالِكَ مِنْ مَنَّ اللَّهِ تَعَالَى.
অর্থ: তিনি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বললেন, যখন তিনি আক্রমণের শিকার হলেন। আর তিনি অস্থিরতা প্রকাশ করছিলেন। তখন আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. বললেন, হে আমিরুল মুমিনিন, আপনি এরূপ নন। আপনি তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবি। আপনি তাঁর উত্তর সঙ্গী ছিলেন। ইন্তেকালের সময় তিনি আপনার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। এরপর আপনি আবু বকর রাদি. এর সঙ্গী ছিলেন। আপনি তারও উত্তম সঙ্গী ছিলেন। এরপর আপনি মুসলমানদের সঙ্গী হন। তাদেরও উত্তম সঙ্গী ছিলেন। আপনি তাদের থেকে বিদায় নিলে, এ অবস্থায় বিদায় নিবেন যে, তারা আপনার প্রতি সন্তুষ্ট। (হাদিসটি আরো দীর্ঘ) উমর রাদি. বললেন, এসবই আল্লাহর অনুগ্রহের কারণে হয়েছে। ৫১৪
(৩৭১) হজরত ইবনে শুমাসা রহ. বলেন-
حَضَرْنَا عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ وَهُوَ فِي سِيَاقَةِ الْمَوْتِ، فَبَكَى طَوِيلًا، وَحَوَّلَ وَجْهَهُ إِلَى الإِدَارِ، فَجَعَلَ ابْنُهُ يَقُوْلُ: يَا أَبَتَاهُ، أَمَا بَشَّرَكَ رَسُوْلُ اللَّهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَذَا؟ أَمَا بَشَرَكَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِكَذَا ؟ قَالَ : فَأَقْبَلَ بِوَجْهِهِ، فَقَالَ : إِنَّ أَفْضَلَ مَا نُعِدُّ شَهَادَةُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، ... ثُمَّ ذَكَرَ تَمَامِ الْحَدِيثِ.
অর্থ: আমরা হজরত আমর বিন আস রাদি. এর মৃত্যুর সময় তার কাছে উপস্থিত ছিলাম। তিনি দীর্ঘ সময় ধরে কাঁদছিলেন। তিনি দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছিলেন। তখন ছেলে আবদুল্লাহ রাদি. তাঁকে বলছিলেন, হে আমার পিতা, আপনাকে কি আল্লাহর রাসুল অমুক সুসংবাদ দেননি? এরপর তিনি চেহারা আমাদের দিকে ঘুরিয়ে বললেন, আমাদের সর্বত্তম প্রস্তুতি হল এ সাক্ষ্য যে-
لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَاَنَّ مُحَمَّدًا رَّسُولُ اللهِ
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ। অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর রাসুল।
(৩১২) হযরত কাসেম বিন মুহাম্মাদ বিন আবু বকর এর সূত্রে বর্ণিত-
أَنَّ عَائِشَةَ اشْتَكَتْ فَجَاءَ ابْنُ عَبَّاسٍ ، فَقَالَ: يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِيْنَ ، تَقْدُمِيْنَ عَلَى فَرَطٍ صِدْقٍ؛ عَلَى رَّسُولِ اللهِ ﷺ، وَعَلَى اَبِيْ بَكْرٍ.
অর্থ: হযরত আয়েশা রাদি. ব্যথায় অস্থির ছিলেন। আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. বললেন, হে উম্মুল মুমিনিন, আপনি আগেভাগেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবু বকর রাদি. এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। -ইমাম বুখারি রহ. ইবনে আবু মুলাইকা থেকে আরো বর্ণনা করেন-
أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ - رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا- اسْتَأْذَنَ عَلَى عَائِشَةَ - رَضِيَ اللهُ عَنْهَا- قَبْلَ مَوْتِهَا وَهِيَ مَغْلُوبَةٌ قَالَتْ: أَخْشَى أَنْ يُثْنِيَ عَلَيَّ؛ فَقِيلَ: ابْنُ عَمَّ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَمِنْ وُجُوهِ الْمُسْلِمِينَ قَالَتْ: ائْذَنُوا لَهُ. فَقَالَ: كَيْفَ تَجِدِينَكِ؟ قَالَتْ: بِخَيْرٍ إِنِ اتَّقَيْتُ. قَالَ: فَأَنْتِ بِخَيْرٍ إِنْ شَاءَ اللهُ; زَوْجَةُ رَسُولِ اللهِ ﷺ، وَلَمْ يَنْكِحُ بَكْرًا غَيْرَكِ، وَنَزَلَ عُذْرُكِ مِنَ السَّمَاءِ.
অর্থ: মৃত্যুর আগে হযরত আয়েশা রাদি. যখন বেহুশ ছিলেন, ইবনে আব্বাস রাদি. তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। আয়েশা রাদি. এ বলে অনুমতি দিতে চাচ্ছিলেন না যে, আমি আশঙ্কা করছি, আমার প্রশংসা করা হবে। তখন তাঁকে বলা হল, অনুমতি চেয়েছেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো ভাই, সম্মানিত ব্যক্তি। হজরত আয়েশা রাদি. বললেন, তাঁকে অনুমতি দাও। তিনি ভিতরে প্রবেশ করে বললেন, আম্মাজান! আপনার কেমন অনুভব করছেন? আয়েশা রাদি. বললেন, আমি মুত্তাকি হলে ভালোই আশা করছি। তখন আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. বললেন, ইনশাআল্লাহ, আপনার জন্য মঙ্গল রয়েছে। আপনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী ছিলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনি অন্য কোন কুমারী নারী বিবাহ করেননি। আকাশ থেকে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) আপনার পবিত্রতার ঘোষণা এসেছে। ৫১৬
অসুস্থ ব্যক্তির বাসনা পুরা করা (৩৭৩) হজরত আনাস রাদি. থেকে দুর্বল সনদে বর্ণিত-
دَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى مَرِيضٍ يَعُوْدُهُ، فَقَالَ: أَتَشْتَهِي شَيْئًا؟ أَتَشْتَهِي كَعْدًا؟ قَالَ: نَعَمْ . فَطَلَبُوْا لَهُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন অসুস্থ রোগীকে দেখতে গেলেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কী চাও? তুমি কি কাআক (প্রসিদ্ধ একধরনের পারসি পাউরুটি) খেতে চাও? অসুস্থ ব্যক্তি বলল, হ্যাঁ। তখন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য এটার ব্যবস্থা করলেন। ৫১৭
(৩৭৪) হজরত উকবা বিন আমির রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন করেছেন-
لَا تُكْرِهُوا مَرْضَاكُمْ عَلَى الطَّعَامِ، فَإِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يُطْعِمُهُمْ وَيَسْقِيهِمْ.
অর্থ: তোমরা রোগীদেরকে খাবার খেতে পীড়াপীড়ি কর না। কেননা আল্লাহ তাদেরকে পানাহার করান। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ। ৫১৮
রোগীর কাছে দুআ চাওয়া
(৩৭৫) হজরত মায়মুন বিন মিহরান রহ. সহিহ সনদে থেকে বর্ণিত। তিনি উমর রাদি. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا دَخَلْتَ عَلَى مَرِيضٍ فَمُرْهُ أَنْ يَدْعُوَ لَكَ، فَإِنَّ دُعَاءَهُ كَدُعَاءِ الْمَلَائِكَةِ.
অর্থ: তোমরা যখন রোগীদের দেখতে যাও, রোগীর কাছে দুআ চাও। কেননা তার দুআ ফেরেশতাদের দুআর মতই কবুল হয়ে থাকে। ৫১৯
অসুস্থতা থেকে আরোগ্য লাভের পর তাকে উপদেশ দেয়া আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَأَوْفُوْا بِالْعَهْدِ ، إِنَّ الْعَهْدَ كَانَ مَسْئُولًا.
অর্থ: তোমরা আল্লাহর অঙ্গীকার পুরা কর, নিশ্চয় অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। ৫২০-আরো বলেন-
وَالْمُوْقُوْنَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عُهَدُوا ... الآية.
অর্থ: তারা যখন অঙ্গীকার কওে তা পূরা করে। ৫২১
(৩৭৬) হজরত খাওয়্যাত বিন যুবায়ের রাদি. থেকে বর্ণিত-
مَرِضْتُ، فَعَادَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: صَحَ الْجِسْمُ يَا خَوَّاتُ، قُلْتُ: وَجِسْمُكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ، قَالَ: فَفِ اللهِ بِمَا وَعَدَتْهُ، قُلْتُ: مَا وَعَدْتُ اللَّهَ عَزَّ وجلَّ شيئاً، قَالَ: بَلَى إِنَّهُ مَا مَنْ عَبْدٍ يَمْرَضُ إِلَّا أَحْدَثَ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ خَيْراً فَفِ اللَّهِ بِمَا وَعَدْتُهُ.
অর্থ: আমি যখন অসুস্থ ছিলাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। তিনি বললেন, হে খাওয়্যাত, তোমার শরীর সুস্থ হোক। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার শরীরও আল্লাহ সুস্থ রাখুন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূরণ কর। আমি বললাম, আল্লাহর সাথে আমি কোন বিষয়ে ওয়াদা করিনি। নবিজি বললেন, অবশ্যই ওয়াদা করেছ। বান্দা অসুস্থ হলে আল্লাহ তাআলা তার জন্য কল্যাণের ফয়সালা করে থাকেন। তাই তুমি আল্লাহর সঙ্গে কৃত অঙ্গীকার পুরা কর। ৫২২

টিকাঃ
৪৮৭. তিরমিজি: ২৩০৮, সুনানে নাসাঈ: ৪/৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২৫৮, মুসনাদে আহমাদ ২/২৯৩, সহিহ ইবনে হিব্বান: ২৫৫৯।
৪৮৮. সহিহ বুখারি: ৬২৬৬, মুসনাদে আহমাদ ১/২৬৩।
৪৮৯. সহিহ বুখারি: ৫০১৭, সহিহ বুখারি মুসলিম: ২১৯২।
৪৯০. সহিহ বুখারি: ৫৭৪৫, সহিহ মুসলিম: ২১৯৪, সুনানে আবু দাউদ: ৩৭৯৫, মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৩, আমাল: ১০২৩, নাসাঈ, আমাল: ৫৭৬, ইবনুস সুন্নি।
৪৯১. সহিহ বুখারি: ৫৭৪৩, সহিহ মুসলিম: ২১৯১।
৪৯২. সহিহ বুখারি: ৫৮৪২, সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৯০, সুনানে তিরমিজি: ৯৭৩, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৫১, আমাল: ১০২২।
৪৯৩. সহিহ মুসলিম: ২২০২, সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৯১, সুনানে তিরমিজি: ২০১৮, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৫২৩, মুসনাদে আহমাদ ৪/২১৭, আমাল: ৯০৯, নাসাঈ।
৪৯৪. সহিহ বুখারি: ৫৬৫৯, সহিহ মুসলিম: ১৬২৮।
৪৯৫. সুনানে আবু দাউদ: ৩১০৬, সুনানে তিরমিজি: ২০৮৪, ইবনে হিব্বان: ৭১৪, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৪২, মুসনাদে আহমাদ ১/২৩৯।
৪৯৬. সুনানে আবু দাউদ: ৩১০৭, হাকিম: খ. ০১, পৃ. ৩৪৪)
৪৯৭. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৫৮, আমাল: ১০৫৮, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ২/৬২১।
৪৯৮. সুনানে তিরমিজি: ৩৪২৬, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৭৯৪, আমাল: ৩০, নাসাঈ, ইবনে হিব্বান: ২৩২৫।
৪৯৯. সহিহ মুসলিম: ২১৮৬, সুনানে তিরমিজি: ৯৭২, আমাল: ১০০৫, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৫২৪, মুসনাদে আহমাদ ৩/২৮।
৫০০. সহিহ বুখারি: ৫৬৫৬, আমাল: ১০৩৯, নাসাঈ।
৫০১. ইবনুস সুন্নি: ৫৩৫, মুসনাদে আহমাদ ৩/২৫০।
৫০২. সুনানে তিরমিজি: ২৭৩২, ইবনুস সুন্নি: ৫৩৬।
৫০৩. হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৫০৪. ইবনুস সুন্নি: ৫৪৮, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৪৯। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৫০৫. ইবনুস সুন্নি: ৫৫৩।
৫০৬. সহিহ মুসলিম: ১৬৯৬, সুনানে তিরমিজি: ১৪৩৫, সুনানে আবু দাউদ: ৪৪৪০, সুনানে নাসাঈ ৪/৬৩, মুসনাদে আহমাদ ৪/৪৩।
৫০৭. ইবনুস সুন্নি: ৫৬৬, মুসনাদে আহমাদ ১/৩০০, সুনানে তিরমিজি: ২০৭৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৫২৬, মুসতাদরাকে হাকেম ৪/৪১৪।
৫০৮. সহিহ বুখারি: ৫৬৪৮, সহিহ মুসলিম: ২৫৭১, মুসনাদে আহমাদ ১/৩৮, সুনানে দারিমি: ২৭৭৪।
৫০৯. সহিহ বুখারি: ৫৬, সুনানে তিরমিজি: ৯৭৫, সুনানে আবু দাউদ: ২৮৬৪, সুনানে নাসাঈ ৬/২৪১, মুসনাদে আহমাদ ১/১৭৬।
৫১০. সহিহ বুখারি: ৭২১৮, সহিহ মুসলিম: ২৩৮৭।
৫১১. সহিহ বুখারি: ৫৬৭১, সহিহ মুসলিম: ২৬৮০, সুনানে আবু দাউদ: ৩১০৮, সুনানে তিরমিজি: ৯৭১, সুনানে নাসাঈ ৪/৩, আমাল: ১০৫৭, নাসাঈ, আমাল: ৫৫০, ইবনুস সুন্নি, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৪২৬৫, মুসনাদে আহমাদ ৩/১০১।
৫১২. সহিহ বুখারি: ১৮৯০।
৫১৩. সুনানে তিরমিজি: ২০৮৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৩৮। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৫১৪. সহিহ বুখারি: ৩৬৯২।
৫১৫. সহিহ মুসলিম: ১২১।
৫১৬. সহিহ বুখারি: ৩৭৭১, ৪৭৫৩, ৪৭৫৪।
৫১৭. সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪০, ইবনুস সুন্নি: ৫৪০।
৫১৮. সুনানে তিরমিজি: ২০৪০, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৪৪।
৫১৯. সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪১, ইবনুস সুন্নি: ৫৫৭। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৫২০. সুরা ইসরা: ৩৪।
৫২১. সুরা বাকারা: ১৭৭।
৫২২. ইবনুস সুন্নি: ৫৫৮। হাদিসটি দুর্বল।

📘 আল আযকার > 📄 মৃত্যুযন্ত্রণা ও মুমূর্ষ অবস্থার দুআ

📄 মৃত্যুযন্ত্রণা ও মুমূর্ষ অবস্থার দুআ


মুমূর্ষু অবস্থায় যে দুআ পড়বে
(৩৭৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি দেখেছি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমূর্ষু অবস্থায় কাছে থাকা পানির পাত্রে হাত দিয়ে মুখ মুছছেন, আর বলছেন-
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى غَمَرَاتِ الْمَوْتِ وَسَكَرَاتِ الْمَوْتِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা গামারাতিল মাউতি ওয়া সাকারাতিল মাওত।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মৃত্যুর কষ্ট ও যন্ত্রণায় সাহায্য কর। ৫২৩
(৩৭৮) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুর সময় আমার ওপর হেলান দিয়েছিলেন। তখন তাঁকে বলতে শুনেছি-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَأَلْحِقْنِي بِالرَّفِيقِ الْأَعْلَى.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি, ওয়ার হামনি, ওয়া আলহিকনি বিররাফিকিল আ'লা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার প্রতি দয়া করুন এবং আমাকে ঊধ্বজগতের বন্ধুদের সাথে মিলিত করুন। ৫২৪
রোগীকে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত ও জিকির-আজকার করা চাই। এসময় অস্থিরতা প্রকাশ করা, গালিগালাজ করা, বাদানুবাদ করা, দীনি বিষয় ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে তর্ক করা অনুচিত। মনে মনে ও মুখে আল্লাহ তাআলার শোকরিয়া করা। মনে একথা ভাবা যে, এটিই আমার দুনিয়ার জীবনের শেষ দিন। তাই শেষ মুহূর্তটি ভালো করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
পরিবার-পরিজনের হক আদায় করা। কারও প্রতি অন্যায়-অবিচার করে থাকলে তার বাদলা দিয়ে দেবে। আমানতের বস্তু ফিরিয়ে দেবে। মানুষের কাছ থেকে দাবিদাওয়া ছাড়িয়ে নেয়া: স্ত্রীর কাছ থেকে, পিতা-মাতার কাছ থেকে, সন্তানাদির কাছ থেকে, দাসদাসীর কাছ থেকে, প্রতিবেশী ও বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে এবং যাদের সঙ্গেই লেনদেন উঠাবসা বা কোন বিষয়ে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন সকলের কাছ থেকে দাবি ছাড়িয়ে নেয়া।
সন্তানাদির ব্যাপারে ওসিয়ত করে যাবে যদি তাদের অভিভাকত্ব করার মতো দাদা না থাকে। তৎক্ষণাৎ যে হকগুলো আদায় সম্ভব নয়, সেগুলোর ব্যাপারে ওসিয়ত করবে। যেমন- ঋণ পরিশোধ ইত্যাদি।
আর আল্লাহর রহমতের আশা রাখবে। নিজেকে তুচ্ছ ও নগন্য সৃষ্টি মনে করবে। শাস্তি বা আনুগত্যের আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই- এ কথা ভাববে। আরো ভাববে, আমি আল্লাহর গোলাম। ক্ষমা, অনুগ্রহ, দয়া ও সাহায্য একমাত্র আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই আসে।
কুরআনের আশাব্যঞ্জক আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করতে থাকবে বা অন্য কেউ পড়বে আর সে মনোযোগ দিয়ে কোনবে। অনুরূপভাবে আশার হাদিস ও নেক লোকদের মৃত্যুর ঘটনাবলী স্মরণ করবে। বেশি বেশি দান-খয়রাত করবে। নামাজের প্রতি যত্নবান হবে। নাপাকী থেকে বেঁচে থাকবে। ইত্যাদি দীনের সকল আমলের প্রতি যত্নবান হবে। ধৈর্য সহকারে এ সময়ের কষ্ট সহ্য করবে। এ ক্ষেত্রে কোন ধরনের অলসতা করবে না। কারণ, সবচেয়ে নিকৃষ্ট সে যে ব্যক্তি পরকালের শস্যক্ষেত্র দুনিয়ার শেষ মুহূর্তটির সময় নিজের ওপর ফরজ-ওয়াজিব-মুস্তাহাব দায়দায়িত্বের ব্যাপারে উদাসীনতা প্রদর্শন করে।
উল্লিখিত বিষয়গুলো পালনে কোন ব্যক্তি বাধা দিলে তার কথা শুনবে না। কারণ, সে বিপদে নিক্ষেপ করবে। এরূপ যে করে, সে মূলত অজ্ঞ বন্ধু ও প্রচ্ছন্ন শত্রু। তাই তার বাধা মানবে না। জীবনের শেষ মুহূর্তটি সর্বোত্তম অবস্থায় কাটানোর জন্যে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে।
পরিবার-পরিজনকে তার অসুস্থতার সময় ধৈর্যধারণের ওসিয়ত করবে। নিজের থেকে কোন বিরূপ আচারণ প্রকাশ পেলে তা বরদাশত করতে বলবে। তাদেরকে আরো ওসিয়ত করবে, তার অনুপস্থিতির দরুন যে বিপদ আসবে তাতে ধৈর্যধারণ করতে। মৃত্যুর পর কান্নাকাটি না করতে জোরালোভাবে ওসিয়ত করবে। তাদেরকে বলবে- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পরিবার-পরিজনের আহাজারির দরুন মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়। ৫২৫
অতএব, হে আমার আপনজন ও প্রিয় লোকেরা, তোমরা আমার আজাবের কারণ হয়- এসব কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকবে। তাদেরকে নিজের বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সদাচারণের ওসিয়ত করবে। তাদেরকে বলবে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- সবচেয়ে উত্তম সদাচারণ হল, পিতার প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করে চলা। ৫২৬
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আরো বর্ণিত আছে- তিনি খাদিজা রাদি. এর মৃত্যুর পর তাঁর বান্ধবীদের সম্মান করতেন, তাদের খোঁজখবর নিতেন। ৫২৭
একটি গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব কাজ হল, জানাযায় যেসব বিদআত সমাজে প্রচলিত রয়েছে, সেগুলো থেকে দূরে থাকার ওসিয়ত করে যাওয়া। এ ব্যাপারে তাদের থেকে অঙ্গীকার নেয়া। তার দুআ করার জন্য ওসিয়ত করে যাবে এবং সময়ে আবর্তনে যেন তাকে ভুলে না যায় সে ওসিয়ত করে যাবে। কিছুক্ষণ পর পর তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করবে, কোন বিষয়ে আমার ত্রুটি দেখতে পেলে তোমরা আমাকে সাহানুভূতির সাথে সতর্ক করে দেবে। এ ব্যাপারে আমার সঙ্গে কল্যাণকামিতার মুআমালা করবে। কারণ আমি এখন গাফিলতি, উদাসীনতা ও বেখেয়ালির অবস্থায় আছি। কোন ত্রুটি দেখতে পেলে আমাকে সজাগ করবে এবং আমার এ সুদীর্ঘ সফরের সামানা প্রস্তুতে তোমরা আমাকে সাহায্য করবে।
এ অধ্যায়ে আমি যা কিছু বলেছি, এগুলোর দলিল-প্রমাণ প্রসিদ্ধ। সংক্ষেপ করনার্থে আমি তা উল্লেখ করিনি। কারণ, তখন কিতাবটি বড় হয়ে যাবে। অস্থিরতা ও মৃত্যু যন্ত্রণা শুরু হলে বেশি বেশি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে, যেন এটিই তার দুনিয়ার সর্বশেষ কথা হয়।
(৩৭৯) হজরত মুআজ বিন জাবাল রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ كَانَ آخِرُ كَلَامِهِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ.
অর্থ: যার সর্বশেষ কথা হবে, 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ইমাম হাকিম রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ। ৫২৮
(৩৮০) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَقَّنُوْا مَوْتَاكُمْ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ.
অর্থ: তোমরা মুমূর্ষু ব্যক্তিদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর তালকিন দাও। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। ৫২৯
উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি মুমূর্ষু ব্যক্তি 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ' না বলে, তাহলে উপস্থিত লোকেরা কালিমার তালকিন করবে। আস্তে আস্তে তালকিন করবে, সে আবার যেন বিরক্ত হয়ে প্রত্যাখ্যান না করে। একবার সে কালিমা বললে, আর তালকিন করবে না, তবে যদি সে অন্য কোন কথা বলে ফেলে তাহলে আবার তালকিন করবে।
একদল শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, তালকিনকারী ব্যক্তি নির্দোষ ও নেককার হলে ভালো, যেন মুমূর্ষু ব্যক্তি বিরক্ত হয়ে তাকে আবার দোষারোপ না করে। উলামায়ে কেরাম বলেন, তালকিন করবে এ বলে- 'লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ'। তবে বেশিরভাগ উলামায়ে কেরام বলেন, শুধু 'লা-ইলাহা ইল্লাহ' বলবে।

টিকাঃ
৫২৩. সুনানে তিরমিজি: ৯৭৮, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬২৩।
৫২৪. সহিহ বুখারি: ৪৪৪O, সহিহ মুসলিম: ২৪৪৪, সুনানে তিরমিজিঃ ৩৪৯০, মুসনাদে আহমাদ ৬/১২৬, আমাল: ১০৯৫, নাসাঈ।
৫২৫. সহিহ বুখারি: ১২৮৭, সহিহ মুসলিম: ৯২৭।
৫২৬. সহিহ মুসলিম: ২৫৫২, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৪৩, সুনানে তিরমিজি: ১৯০৪।
৫২৭. সহিহ বুখারী: ৩৮১৬, সহিহ মুসলিম: ২৪৩৫।
৫২৮. সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৬, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৪৭, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৫১।
৫২৯. সহিহ মুসলিম: ৯১৬, সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৭, সুনানে তিরমিজি: ৯৭৬, সুনানে নাসাঈ ৪/৫, মুসনাদে আহমাদ ৩/৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৫।

📘 আল আযকার > 📄 মৃত্যুর পর ও সমবেদনা জ্ঞাপনের দুআ

📄 মৃত্যুর পর ও সমবেদনা জ্ঞাপনের দুআ


মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করার পর যে দুআ পড়বে
(৩৮১) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى أَبِي سَلَمَةَ، وَقَدْ شَقَّ بَصَرُهُ ، فَأَغْمَضَهُ، ثُمَّ قَالَ: إِنَّ الرُّوْحَ إِذَا قُبِضَ تَبِعَهُ الْبَصَرُ. فَضَجَّ نَاسٌ مِنْ أَهْلِهِ، فَقَالَ: لَا تَدْعُوْا عَلَى أَنْفُسِكُمْ إِلَّا بِخَيْرٍ، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ يُؤَمِّنُوْنَ عَلَى مَا تَقُوْلُوْنَ. ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِي سَلَمَةَ، وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيَّيْنَ، وَاخْلُفْهُ في عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَنَوَّرْ لَهُ فِيهِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু সালামার মৃত্যুর পরে তার কাছে আসলেন। তখন আবু সালামার চোখ খোলা ছিলো। তিনি তার চোখ বন্ধ করে দিয়ে বললেন, 'জান যখন কবজ হয় তখন চোখ তা দেখতে থাকে। তখন পরিবারের লোকেরা চিৎকার করতে থাকে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা নিজেদের জন্য তখন কল্যাণের দুআ কর। তোমরা যা দুআ কর ফেরেশতা তাতে আমিন বলে থাকে। এরপর তিনি বললেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَبِي سَلَمَةَ، وَارْفَعْ دَرَجَتَهُ فِي الْمَهْدِيِّيْنَ، وَاخْلُفْهُ فِي عَقِبِهِ فِي الْغَابِرِينَ، وَاغْفِرْ لَنَا وَلَهُ يَا رَبَّ الْعَالَمِينَ، وَافْسَحْ لَهُ فِي قَبْرِهِ، وَنَوِّرْ لَهُ فِيْهِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি-আবি সালামাতা, ওয়ারফা দারাজাতাহু ফিল মাহদিয়্যিনা, ওয়াখলুফহু ফি আকিবিহি ফিল গাবিরিনা, ওয়াগফির লানা ওয়া লাহু ইয়া রাব্বাল আলামিন। ওয়াফসাহ ফি কাবরিহি ওয়া নাওয়ির লাহু ফিহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি আবু সালামাকে মাফ করে দাও, তাকে হেদায়েতপ্রাপ্তদের স্তরে উন্নিত কর। তার পরে তার পরিবারবর্গের জন্য খলিফা নিযুক্ত করে দাও। হে আল্লাহ, আমাদেরকে ও তাকে মাফ করে দাও। তার কবরকে প্রশস্ত করে দাও। তার কবরকে নূরে পূর্ণ করে দাও। ৫০০
(৩৮২) তাবেয়ি হজরত আবু বকর বিন আবদুল্লাহ রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
أَغْمَضْتَ الْمَيِّتَ فَقُلْ : بِسْمِ اللهِ، وَعَلَى مِلَّةِ رَسُوْلِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؛ وَإِذَا حَمَلْتَهُ فَقُلْ: بِسْمِ اللَّهِ، ثُمَّ سَبِّحْ مَا دُمْتَ تَحْمِلُهُ.
অর্থ: মৃত ব্যক্তির চোখ বন্ধ করার পর বল, তাকে বহন করার সময় বিসমিল্লাহ বল। এরপর যতক্ষণ বহন করবে ততক্ষণ সুবহানাল্লাহ বলবে। ৫০১
মৃত ব্যক্তির কাছে যে দুআ পড়বে
(৩৮৩) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا حَضَرْتُمُ الْمَرِيضَ، أَوِ الْمَيِّتَ، فَقُولُوا خَيْرًا ، فَإِنَّ الْمَلَائِكَةَ يُؤَمِّنُونَ عَلَى مَا تَقُولُونَ. قَالَتْ: فَلَمَّا مَاتَ أَبُو سَلَمَةَ، أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ ، إِنَّ أَبَا سَلَمَةَ قَدْ مَاتَ، قَالَ: قُولِي: اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبْنِي مِنْهُ عُقْبِى حَسَنَةً. قَالَتْ: فَقُلْتُ، فَأَعْقَبَنِي اللهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ لِي مِنْهُ؛ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: যখন তোমরা অসুস্থ বা মৃত ব্যক্তির কাছে যাবে, তখন ভালো দুআ কর। কারণ, তোমরা যা দুআ কর ফেরেশতারা তাতে আমিন বলেন। উম্মে সালামা রাদি.বলেন, আবু সালামা রাদি. এর মৃত্যুর পর আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলাম। বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আবু সালামা রাদি. মৃত্যুবরণ করেছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি বল-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَلَهُ، وَأَعْقِبْنِي مِنْهُ عُقْبَى حَسَنَةً.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি ওয়া লাহু ওয়া আকিবনি মিনহু উকবা হাসানাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমাকে ও তাকে মাফ করে দিন। তার পরিবর্তে আমাকে উত্তম পতিনিধি দান করুন। -উম্মে সালামা রাদি. বলেন, আল্লাহ তাআলা আমাকে তার চেয়ে উত্তম প্রতিনিধি দান করেছেন, অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দিয়েছেন। ৫৩২
(৩৮৪) হজরত মাকিল বিন ইয়াসার রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
اقْرَءُوا (يُسَ عَلَى مَوْتَاكُمْ .
অর্থ: তোমরা তোমাদের মৃতদের জন্য সুরা ইয়াসিন পড়। ৫৩৩
আপনজনের মৃত্যুতে যে দুআ পড়বে
(৩৮৫) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে বন্দা বিপদগ্রস্ত হয়ে এই দুআ পড়ে আল্লাহ তাআলা তার প্রতিদান দান করেন এবং তাকে সে জিনিসের চেয়ে উত্তম জিনিস দান দান করেন। উম্মে সালামা রাদি. বলেন, আবু সালামার মৃত্যুর পর আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ মতো দুআ করি। তখন আল্লাহ তাআলা আমাকে আবু সালামার চেয়ে উত্তম প্রতিনিধি দান করেছেন। অর্থাৎ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে পরবর্তীতে আমার বিবাহ হয়েছে। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ أَشْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي وَأَخْلِفُ لِي خَيْرًا مِنْهَا.
উচ্চারণ: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা উ'যুরনি ফি মুসিবাতি, ওয়া আখলিফলি খাইরান মিনহা।
অর্থ: আমরা আল্লাহর জন্য, আমাদের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকেই। হে আল্লাহ, আমার বিপদে আমাকে নেকি দান করুন এবং এরচে উত্তম প্রতিদান আমাকে দান করুন। ৫৩৪
(৩৮৬) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ বিপদগ্রস্ত হলে এ দুআ পড়বে-
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُوْنَ اللَّهُمَّ عِنْدَكَ أَحْتَسِبُ مُصِيبَتِي، فَأَجِرْنِي فِيهَا، وَأَبْدِلْ لِي بِهَا خَيْرًا مِنْهَا.
উচ্চারণ: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, আল্লাহুম্মা ইনদাকা আহতাসিবু মুসিবাতি, ফা আযিরনি ফিহা, ওয়া আবদিলনি বিহা খাইরান মিনহা।
অর্থ: আমরা আল্লাহর জন্য, আমাদের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকেই। হে আল্লাহ, আমার বিপদে আপনার কাছেই প্রতিদানের প্রত্যাশা করি, সুতরাং এতে আমাকে প্রতিদান দান করুন। আর এরচে উত্তম বিনীময় আমাকে দান করুন। ৫৩৫
(৩৮৭) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللهُ لِمَلَائِكَتِهِ: قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِي؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ. فَيَقُولُ: قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ؟ فَيَقُولُونَ: نَعَمْ. فَيَقُولُ: مَاذَا قَالَ عَبْدِي؟ فَيَقُولُونَ: حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ. فَيَقُولُ اللهُ: ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، وَسَمُّوهُ بَيْتَ الْحَمْدِ.
অর্থ: কোন মুসলমান বান্দার সন্তান মৃত্যুবরণ করলে, আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বলেন, 'তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছ? ফেরেশতারা বলেন, জি। আল্লাহ তাআলা আবার বলেন, তোমরা আমার বান্দার হৃদয়ের টুকরাকে কবজ করেছ? ফেরেশতারা বলেন, জি। আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞাসা করেন, তখন আমার বান্দা কী বলেছে? ফেরেশতারা বলেন, বান্দা আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্নালিল্লাহ বলেছে। তখন আল্লাহ তআলা বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর। -ইমাম তিরমিজি বলেন, হাদিসটি হাসান। ৫৩৬
(৩৮৮) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى: مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءُ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلَّا الْجَنَّةَ.
অর্থ: আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার মুমিন বান্দার দুনিয়ার সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিটিকে কবজ করার পর সে যদি সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করে, তাহলে আমার কাছে তার প্রতিদান একমাত্র জান্নাত। ৫৩৭
সঙ্গীর মৃত্যুর সংবাদ শোনে যে দুআ পড়বে
(৩৮৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মৃত্যু ভয়ের বিষয়। তোমাদের কাছে মুসলমান ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদ এলে তোমরা এ দুআ পড়বে-
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، وَإِنَّا إِلى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ، اللَّهُمَّ اكْتُبُهُ عِنْدَكَ فِي الْمُحْسِنِينَ، وَاجْعَلْ كِتابَهُ فِي عَلِيِّينَ، وَاخْلُفْهُ فِي أَهْلِهِ فِي الغَابِرِينَ، وَلَا تَحْرِمْنا أَجْرَهُ وَلَا تَفْتِنَا بَعْدَهُ.
উচ্চারণ: ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুনকালিবুন। আল্লাহুম্মাক তুবহু ইনদাকা ফিল মুহসিনিনা, ওয়াযআল কিতাবাহু ফি ইল্লিয়্যিনা, ওয়খলুফহু فی اہلہی ফিল গাবিরিনা, ওয়া লা তাহরিমনা আযরাহু ওয়া লা তাফতিন্না বা'দাহ।
অর্থ: আমরা আল্লাহর জন্য, আমাদের প্রত্যাবর্তন আল্লাহর দিকেই। অবশ্যই আমরা আমাদের রবের দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ, তাকে আপনার কাছে নেককারদের অন্তর্ভুক্ত করুন, তার আমলনামা রাখুন ইল্লিয়িয়নে। তার পশ্চাদে পরিবারে স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করুন। তার ভালো কাজ থেকে আমাদেরকে বঞ্চিত করবেন না এবং তার পরে আমাদেরকে ফিতনায় লিপ্ত করবেন না। ৫৩৮
ইসলামের শত্রুর মৃত্যুর সংবাদে যা পড়বে
(৩৯০) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে,
أَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَدْ قَتَلَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَبَا جَهَلٍ، فَقَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي نَصَرَ عَبْدَهُ وَأَعَزَّ دِينَهُ.
অর্থ: তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গিয়ে বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আল্লাহ তাআলা আবু জাহেলকে নিহত করেছেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي نَصَرَ عَبْدَهُ وَأَعَزَّ دِينَهُ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লা হিল্লাজি নাসারা আবদাহু ওয়া আআ'জ্জা দীনাহ।
অর্থ: প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি তাঁর বন্দাকে সাহায্য করেছেন এবং তাঁর দীনকে শক্তিশালী করেছেন। ৫৩৯
বিলাপ করা ও জাহেলি যুগের ন্যায় চিল্লাফাল্লা করা হারাম
সকল উলামায়ে কেরামের মতে, বিপদের সময় বিলাপ করা ও জাহেলি যুগের ন্যায় দুআ করা এবং দুর্ভোগ ও ধ্বংসের দুআ করা হারাম।
(৩৯১) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَطَمَ الْخُدُوْدَ ، وَشَقَّ الْجُيُوبَ، وَدَعَا بِدَعْوَى الْجَاهِلِيَّةِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি চেহারায় থাপড়ায়, জামার বুক ছিড়ে এবং জাহেলি যুগের ন্যায় বদদুআ করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়। ৫৪০
(৩৯২) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে,
إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَرِئَ مِنَ الصَّالِقَةِ، وَالْخَالِقَةِ، وَالشَّاقَّةِ.
অর্থ: বিপদের সময় বিলাপকারী, চুল হলককারী ও জামা বিদীর্ণকারী মহিলা থেকে সম্পর্কহীনতার (এরা ইসলামের দলভুক্ত নয়) ঘোষণা দিয়েছেন। ৫৪১
(৩৯৩) হজরত উম্মে আতিয়্যা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَخَذَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ الْبَيْعَةِ أَنْ لَا نَنُوْحَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার থেকে বিলাপ না করার বাইআত নিয়েছেন। ৫৪২
(৩৯৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
اثْنَتَانِ فِي النَّاسِ هُمَا بِهِمْ كُفْرُ: الطَّعْنُ فِي النَّسَبِ، وَالنِّيَاحَةُ عَلَى الْمَيِّتِ.
অর্থ: মানুষের দুটি কাজ কুফরি- এক. বংশের বিষয়ে আপবাদ দেয়া। দুই. মৃত ব্যক্তির জন্য বিলাপ করা। ৫৪৩
(৩৯৫) হজরত আবু সাইদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
لَعَنَ رَسُوْلُ اللَّهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّائِحَةَ وَالْمُسْتَمِعَةَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিলাপকারী ও বিলাপ শ্রবণকারী মহিলার ওপর অভিশম্পাত করেছেন। ৫৪৪
(৩৯৬) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَادَ سَعْدُ بْنُ عُبَادَةَ وَمَعَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ، وَسَعْدُ بْنُ أَبِي وَقَاصٍ، وَعَبْدُ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ، فَبَكَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا رَأَى الْقَوْمُ بُكَاءَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَكَوْا، فَقَالَ: أَلَا تَسْمَعُوْنَ، إِنَّ اللهَ لَا يُعَذِّبُ بِدَمْعِ الْعَيْنِ، وَلَا بِحُزْنِ الْقَلْبِ، وَلَكِنْ يُعَذِّبُ بِهَذَا، وَأَشَارَ إِلَى لِسَانِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সা'দ বিন উবাদা রাদি. কে দেখতে গেলেন। তার সঙ্গে আবদুর রহমান বিন আউফ রাদি., সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. এবং আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. ছিলেন। তাঁকে দেখতে গিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেঁদে ফেললেন। উপস্থিত লোকেরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কাঁদতে দেখে সকলেই কেঁদে ফেললেন। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা কি কোননি যে, আল্লাহ তাআলা চোখের পানি বা অন্তরের বিষন্নতার কারণে শাস্তি দেন না। বরং এই জিহ্বার কারণে শাস্তি দেন বা দয়া করেন। ৫৪৫
(৩৯৭) হজরত উসামা বিন যায়েদ রাদি. বলেন-
أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رُفِعَ إِلَيْهِ ابْنُ ابْنَتِهِ وَهُوَ فِي الْمَوْتِ، فَفَاضَتْ عَيْنَا رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ لَهُ سَعْدُ: مَا هَذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ قَالَ: هَذِهِ رَحْمَةٌ جَعَلَهَا اللهُ تَعَالَى فِي قُلُوْبِ عِبَادِهِ، وَإِنَّمَا يَرْحَمُ اللَّهُ مِنْ عِبَادِهِ الرُّحَمَاءَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক মৃত নাতিকে তাঁর কাছে আনা হল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুচোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। সাদ রাদি. জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, এটি কী? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এটি রহমতের পানি, যা আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মুমিন বান্দার হৃদয়ে রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা তাঁর দয়াবান বান্দাদের ওপর দয়া করে থাকেন। ৫৪৬
(৩৯৮) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে,
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ عَلَى ابْنِهِ إِبْرَاهِيمَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ وَهُوَ يَجُوْدُ بِنَفْسِهِ، فَجَعَلَتْ عَيْنَا رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَدْرِفَانِ، فَقَالَ لَهُ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ وَأَنْتَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ؟ فَقَالَ: يَا ابْنَ عَوْفٍ، إِنَّهَا رَحْمَةٌ. ثُمَّ أَتْبَعَهَا بِأُخْرَى فَقَالَ: إِنَّ الْعَيْنَ تَدْمَعُ، وَالْقَلْبَ يَحْزَنُ، وَلَا نَقُولُ إِلَّا مَا يَرْضَى رَبُّنَا، وَإِنَّا بِفِرَاقِكَ يَا إِبْرَاهِيمُ لَمَحْزُوْنُوْنَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ছেলে ইবরাহিমের কাছে আসলেন। তখন তাঁর প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছিল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। তা দেখে আবদুর রহমান বিন আউফ রাদি. বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনিও কাঁদছেন! রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে ইবনে আউফ, এটি দয়ার পানি। এরপর তিনি বললেন, চোখ অশ্রুসিক্ত হয়, অন্তর বিষণ্ণ হয়। আমরা বিপদে এমন কিছুই বলব যাতে আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হবেন। হে ইবরাহিম তোমার বিয়োগে আমরা ব্যাথিত। ৫৪৭ -এ ধরনের আরো অনেক প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে।
সহিহ হাদিসে যে আছে, 'পরিবারের লোকদের ক্রন্দনের কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়।' এটি ব্যাপক অর্থে নয়; বরং ব্যাখ্যা সাপেক্ষ। উলামায়ে কেরাম এটির বিভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন। সবচেয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা হল, যদি মৃত ব্যক্তি কান্নার কারণ হয়ে থাকে তাহলে শাস্তি হবে। আরেকটি ব্যাখ্যা হল, যদি সে ক্রন্দন করতে ওসিয়ত করে যায়, তাহলে শাস্তি হবে। ইত্যাদি।
আমাদের উলামায়ে কেরাম বলেন, মৃত্যুর আগে ও পরে ক্রন্দন করা জায়েজ আছে। তবে আগে ক্রন্দন করাই ভালো। কারণ, হাদিসে এসেছে, 'যখন মৃত্যু হয়ে যায় তখন যেন কেউ ক্রন্দন না করে। ৫৪৮ - ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, মৃত্যুর পর ক্রন্দন করা মাকরুহে তানজিহি। তিনি উক্ত হাদিসকে মাকরুহ বলে ব্যাখ্যা করেছেন।
সমবেদনা প্রকাশ করা সুন্নাত
(৩৯৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ عَزَّى مُصَابًا فَلَهُ مِثْلُ أَجْرِهِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে সে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। ৫৪৯
(৪০০) হজরত আবু বারজা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ عَزَّى تَكْلَى كُسِيَ بُرْدًا فِي الْجَنَّةِ.
অর্থ: যে সন্তানহারা ব্যক্তির প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে তাকে জান্নাতে এক চাদর পরিধান করানো হবে। -ইমাম তিরমিজি বলেন, সনদটি শক্তিশালী নয়। ৫৫০
(৪০১) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. থেকে এক দীর্ঘ হাদিস বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বলেছেন-
مَا أَخْرَجَكِ مِنْ بَيْتِكِ يَا فَاطِمَةُ؟ قَالَتْ: أَتَيْتُ أَهْلَ هَذَا الْمَيِّتِ، فَتَرَقَّمْتُ إِلَيْهِمْ، وَعَزَّيْتُهُمْ بِمَيِّتِهِمْ .
অর্থ: হে ফাতেমা, তুমি কী জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছ? ফাতেমা রাদি. বললেন, আমি এই মৃতের পরিবারের কাছে এসেছি তাদের প্রতি সহানুভূতি বা সমবেদনা প্রকাশের জন্য। ৫৫১
(৪০১) হজরত আমর বিন হাজম রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَا مِنْ مُؤْمِنٍ يُعَرِّيْ أَخَاهُ بِمُصِيبَةٍ إِلَّا كَسَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ حُلَلِ الْكَرَامَةِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থ: যে মুমিন ব্যক্তি অপর মুমিন ভাইয়ের বিপদে তার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে আল্লাহ তাআলা তাকে কেয়ামতের দিন সম্মানের পোশাক পরিধান করাবেন। ৫৫২
তাজিয়া হল, ধৈর্যধারণে উৎসাহিত করা। এমন কিছু বলা যাতে মৃত ব্যক্তির পরিবার সান্তনা পায়; দুঃখ লাঘব হয়; বিপদ হালকা হয়। এটি মুস্তাহাব। কারণ, এতে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকে নিষেধের বিষয়টি রয়েছে। এটি আল্লাহ তাআলার এ আদেশ পালনেরও নামান্তর- 'তোমরা সৎ ও তাকওয়ার কাজে একে অপরকে সাহায্য কর। '৫৫৩ এটি সমবেদনা প্রকাশের সবচেয়ে সুন্দর দলিল।
সহিহ হাদিসে আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- কোন বান্দা যতক্ষণ অপর বান্দার সাহায্য করবে, আল্লাহ তাআলা ততক্ষণ পর্যন্ত সে বান্দার সাহায্য করেন। ৫৫৪
দাফনের আগে ও পরে সমবেদনা জানানো মুস্তাহাব। মৃত্যুর পর থেকে দাফনের তিনদিন পর পর্যন্ত সমবেদনা জানানোর সময়। এই তিন হল আনুমানিক; একেবারে চূড়ান্ত সময়সীমা নয়। শায়খ আবু মুহাম্মাদ জুয়াইনি রহ. এরূপ বলেছেন।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, তিন দিনের পর তাজিয়া করা মাকরুহ। কারণ, তাজিয়া করা হয়ে থাকে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তির মনকে শান্ত করার জন্য। আর সাধারণত তিন দিন পর তার অন্তর শান্ত হয়ে যায়। তাই নতুন করে তার মনকে অস্থির করার প্রয়োজন নেই। এটিই অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মত।
আবুল আব্বাস বিন কাস রহ. বলেন, তিন দিন পরে তাজিয়া করলেও সমস্যা নেই। বরং সর্বদা তাজিয়া করা যাবে, যদিও এক সুদীর্ঘ কাল পার হয়ে যায়। ইমামুল হারামাইন রহ. থেকেও এরূপ বর্ণিত আছে।
তবে সঠিক কথা হল, তিন দিন পর তাজিয়া করা যাবে না। তবে দুই অবস্থায় করা যেতে পারে। যদি শান্ত্বনা দানকারী বা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি দাফনের সময় অনুপস্থিত থাকে। তিন দিনের পর যদি তারা ফিরে আসে তাহলে এক্ষেত্রে তিন দিন পরেও তাজিয়া করা যাবে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, দাফনের আগের চেয়ে দাফনের পরে তাজিয়া করা উত্তম। কারণ, দাফনের আগে মৃতের পরিবার তার কাফন-দাফনে ব্যস্ত থাকে। এছাড়াও দাফনের পরে আপনজনের বিচ্ছেদটা বেশি উপলদ্ধি করে থাকে। যদি দাফনের আগে বেশি অস্থিরতা দেখা না যায় তাহলে দাফনের পরে করা উত্তম। তবে যদি দাফনের আগে বেশি অস্থিরতা দেখা যায় তাহলে তাদেরকে শান্ত করার জন্য দাফনের আগেই তাজিয়া করবে।
পরিবারের সকল সদস্যের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা মুস্তাহাব
মৃতের পরিবারের ছোট-বড়ো, পুরুষ-মহিলা-সকল নিকটাত্মীয়ের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা চাই। তবে যুবতী মহিলা থাকলে তাদের মাহরাম তাদেরকে সান্ত্বনা দেবে। মছিবতে ধৈর্যধারণের জন্য নেককার, দুর্বল ও শিশুদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তাজিয়া তথা সমবেদনার জন্য মজলিস করা মাকরুহ
ইমাম শাফেয়ি রহ. বলেন, তাজিয়ার জন্য মজলিস করা মাকরুহ, অর্থাৎ মৃতের পরিবার একটি ঘরে বসে থাকবে, যেন সমবেদনা জ্ঞাপনকারীরা সেখানে এসে সমবেদনা জ্ঞাপন করতে পারে। এরূপ করা মাকরুহ। বরং তারা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকবে। পুরুষ ও মহিলা সকলের তাজিয়ার মজলিস মাকরুহ। মুহামিলি রহ, এ বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছেন। এটি মাকরুহে তানজিহি হবে, যদি এর সাথে অন্য কোন বিদআত যুক্ত না থাকে। যদি এর সাথে অন্য কোন হারাম বিদআত সম্পৃক্ত থাকে তাহলে তা বিদআত হওয়ার দরুন ঘৃণ্য হারাম কাজ হবে। সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, 'দীনের মাঝে প্রতিটি নব আবিষ্কৃত বস্তু বিদআত। আর প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা। ৫৫৫
সমবেদনা জ্ঞাপনের শব্দ সমবেদনা জ্ঞাপনের শব্দের ক্ষেত্রে কোন ধরাবান্ধা নেই। যে শব্দ দিয়ে সমবেদনা হবে সেটিই বলবে। শাফেয়ি উলামায়ে কেরام বলেন, মুসলমান ব্যক্তি অপর মুসলমানকে এ কথা বলে শান্ত্বনা দেয়া মুস্তাহাব-
أَعْظَمَ اللهُ أَجْرَكَ، وَأَحْسَنَ عَزَاءَكَ، وَغَفَرَ لَمَيِّتِكَ.
উচ্চারণ: আজামাল্লাহু আযরাকা ওয়া আহসানা আজাআকা ওয়া গাফারা লিমায়্যিতিক।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা তোমাকে বড় প্রতিদান দান করুন। উত্তম সান্ত্বনা দান করুন। তোমার মৃত ব্যক্তিকে মাফ করুন। -মুসলমান কাফেরকে সান্ত্বনা দেয়ার ক্ষেত্রে বলবে:
أَعْظَمَ اللَّهُ أَجْرَكَ، وَأَحْسَنَ عَزَاءَكَ.
উচ্চারণ: আজামাল্লাহু আযরাকা ওয়া আহসানা আজাআক।
অর্থ: আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। তোমাকে উত্তম সান্ত্বনা দান করুন। -কাফের ব্যক্তি মুসলমানকে সান্ত্বনা দিতে বলবে:
أَحْسَنَ عَزَاءَكَ، وَغَفَرَ لِمَيِّتِكَ.
উচ্চারণ: আহসানা আজাআকা ওয়া গাফারা লিমায়্যিতিক।
অর্থ: আল্লাহ তোমাকে উত্তম সান্ত্বন দান করুন। তোমার মৃত ব্যক্তিকে ক্ষমা করুন। -অমুসলিম অমুসলিমকে সান্ত্বনা দিতে বলবে:
أَخْلَفَ اللهُ عَلَيْكَ.
উচ্চারণ: আখলাফাল্লাহু আলাইক।
অর্থ: আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিনিধি দান করুন।
সান্ত্বনা দেয়ার উত্তম পন্থা
(৪০৩) হজরত উসামা বিন যায়েদ রাদি. বলেন-
أَرْسَلَتْ إِحْدَى بَنَاتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَيْهِ تَدْعُوهُ وَتُخْبِرُهُ، أَنَّ صَبِيًّا لَهَا أَوِ ابْنَا فِي الْمَوْتِ، فَقَالَ لِلرَّسُوْلِ : ارْجِعْ إِلَيْهَا، فَأَخْبِرْهَا أَنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ، وَلَهُ مَا أَعْطَى، وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى، فَمُرْهَا فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক কন্যা এক ব্যক্তিকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পাঠালেন; তাঁকে ডেকে নেয়ার জন্য এবং এ সংবাদ দেয়ার জন্য যে, সে কন্যার বাচ্চা বা ছেলে মুমূর্ষু অবস্থায় আছে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে দূতকে বললেন, তুমি তার কাছে ফিরে গিয়ে বল-
إِنَّ لِلَّهِ مَا أَخَذَ ، وَلَهُ مَا أَعْطَى، وَكُلُّ شَيْءٍ عِنْدَهُ بِأَجَلٍ مُسَمًّى، فَمُرْهَا فَلْتَصْبِرْ وَلْتَحْتَسِبْ.
উচ্চারণ: ইন্না লিল্লাহি তাআলা মা আখাজা ওয়া লাহু মা আ'তা ওয়া কুল্লু শাইয়িন ইনদাহু বি আজালিন মুসাম্মা ফালতাসবির ওয়াল তাহতাসিব।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা যা নিয়েছেন তার মালিকও তিনি এবং যা দিয়েছেন তার মালিকও তিনি। সবকিছুরই আল্লাহ তাআলার কাছে একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। (অতঃপর তুমি তাকে আদেশ করবে) ধৈর্যধারণ কর এবং সওয়াবের আশা রাখ। ৫৫৬
উক্ত হাদিসটি ইসলামের বড় একটি মূলনীতি। এতে দীনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। দীনের মৌলিক ও শাখাগত বিষয় রয়েছে; আদব-কায়দা, বিপদাপদ, চিন্তা-পেরেশানি, রোগ-বালাই ইত্যাদি সকল আকস্মিক বিষয়ে ধৈর্যধারণের বিষয় রয়েছে।
হাদিসটির অর্থ হল, পুরো জগতের মালিক আল্লাহ তাআলা। তিনি তোমাদের মালিকানা বস্তু নেননি। বরং তিনি তোমাদেরকে আমানতস্বরূপ যা দিয়েছিলেন, তা নিয়ে গেছেন।
দ্বিতীয় অংশ- 'যা দিয়েছেন তার মালিক তিনি।' তিনি তোমাদেরকে যা দান করেন, তা আল্লাহর মালিকানা থেকে বেরিয়ে যায় না। বরং তিনি তাতে যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। সবকিছুরই আল্লাহ তাআলার কাছে একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। তাই তোমরা বিচলিত হয়ো না। সুতরাং তিনি যার জান কবজ করেন, তার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। সে মেয়াদকাল আগপিছ করা অসম্ভব। তোমরা যখন এসব জানলে তখন বিপদে ধৈর্য ধরো এবং সওয়াবের প্রত্যাশা রাখো।
(৪০৪) হজরত কুরা বিন ইয়াস রাদি. থেকে হাসান সনদে বর্ণিত আছে-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَدَ بَعْضُ أَصْحَابِهِ، فَسَأَلَ عَنْهُ فَقَالُوا يَا رَسُوْلَ الله، ، بُنَيُّهُ الَّذِي رَأَيْتَهُ هَلَكَ. فَلَقِيَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلَهُ عَنْ بُنَيَّهِ، فَأَخْبَرَهُ أَنَّهُ هَلَكَ، فَعَزَّاهُ عَلَيْهِ، ثُمَّ قَالَ: يَا فُلَانُ، أَيُّمَا كَانَ أَحَبُّ إِلَيْكَ؛ أَنْ تَمَتَّعَ بِهِ عُمُرَكَ، أَوْ لَا تَأْتِي غَدًا إِلَى بَابٍ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ إِلَّا وَجَدْتَهُ قَدْ سَبَقَكَ إِلَيْهِ، يَفْتَحُهُ لَكَ؟ قَالَ: يَا نَبِيَّ اللهِ ، بَلْ يَسْبِقُنِي إِلَى بَابِ الْجَنَّةِ، فَيَفْتَحُهَا لِي لَهُوَ أَحَبُّ إِلَيَّ. قَالَ : فَذَاكَ لَكَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবিকে দেখতে না পেয়ে তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, তার যে ছেলেকে আপনি দেখেছিলেন, সে মৃত্যুবরণ করেছে। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সাহাবির কাছে গেলেন। তার ছেলে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। সে জানাল, ছেলে মৃত্যুবরণ করেছে। তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, 'তোমার কাছে কোনটি প্রিয়? পার্থিব জীবনে ছেলেকে নিয়ে খুশীতে দিনাতিপাত করবে নাকি আগামী দিন জান্নাতের দরজায় গিয়ে তাকে দেখতে পাবে যে, সে তোমার আগে দরজার কাছে এসে তোমার জন্য তা খুলে রেখেছে? সেই সাহাবি বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, বরং সে আগে আগে জান্নাতে গিয়ে আমার জন্য দরজা খুলে রাখুক- এটিই আমার কাছে বেশি প্রিয়। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাহলে তুমি এরূপ প্রতিদানই পাবে। ৫৫৭
ইমাম বাইহাকি রহ. ইমাম শাফেয়ির মানাকেবে বর্ণনা করেন, ইমাম শাফেয়ি রহ. এর কাছে এ সংবাদ এল যে, আবদুর রহমান বিন মাহদি রহ. এর এক সন্তান মৃত্যুবরণ করলে তিনি অনেক অস্থির ও ভেঙ্গে পড়েন। তখন ইমাম শাফেয়ি রহ. তাঁর কাছে পত্র পাঠালেন- 'হে ভাই, তুমি অন্যকে যেভাবে সান্ত্বনা দিয়ে থাক সেভাবেই নিজের মনকে সান্ত্বনা দাও। অন্যের যেসব কাজ তুমি মন্দ বলে থাক সেগুলো নিজের জন্যও মন্দ মনে কর। মনে রেখ, সবচেয়ে মন্দ বিপদ হল, আনন্দ দূর হওয়া ও সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া। যদি এর সঙ্গে পাপ মিলিত হয়, তাহলে তা কত নিকৃষ্ট বিপদে পরিণত হবে সেটি ভেবে দেখেছ কি? তোমার অংশ কাছে আসলে তা গ্রহণ কর, তা তোমার থেকে দূরে সরে যাওয়ার পর তালাש করার আগে। আল্লাহ তোমাকে বিপদে ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমাদের ও তোমার জন্য ধৈর্যের দরুন নেকি দান করুন। এরপর এক কবিতা লিখেন-
إِنِّي مُعَذِّيكَ لَا أَنِّي عَلَى ثِقَةٍ * مِنَ الْخُلُوْدِ وَلَكِنْ سُنَةُ الدِّيْنِ فَمَا الْمُعَزَّى بِبَاقٍ بَعْدَ مَيِّتِهِ * وَلَا الْمُعَنِّي وَلَوْ عَاشَا إِلَى حِيْنِ.
আমি তোমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছি। আমি চিরদিন বেঁচে থাকার নিশ্চয়তার সঙ্গে বলছি না; তবে এটি ইসলাম ধর্মের রীতি।
যাকে সান্ত্বনা দেয়া হয় সে মৃত্যুর পর বেঁচে থাকে না এবং সান্ত্বনা দানকারীও বেঁচে থাকে না; যদিও একটি সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকে।
এক ব্যক্তি মুসলমান ভাইয়ের ছেলের মৃত্যুতে সান্ত্বনা দিয়ে এই চিঠি লিখে পাঠাল যে, হামদ ও সালাতের পর! সন্তান যতদিন বেঁচে থাকে বাবার জন্য দুশ্চিন্তা ও ফিতনার কারণ হয়ে থাকে। সন্তান আগে আগে মারা গেলে বাবার জন্য রহমত ও অনুগ্রহের কারণ হয়। তাই তুমি দুশ্চিন্তা ও ফিতনা হাত ছাড়া হওয়ার কারণে বিচলিত হয়ো না। বিপদের দরুন আল্লাহ তোমাকে যে রহমত ও অনুগ্রহ দান করছেন তা নষ্ট কর না।
মুসা বিন মাহদি ইবরাহিম সালেমের ছেলের মৃত্যুতে তাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, ছেলে তোমাকে আনন্দ দিয়েছে, অথচ জীবদ্দশায় সে ছিল মুসিবত ও ফিতনার কারণ। মৃত্যুবরণ করে তোমাকে বিষণ্ণ করেছে, অথচ সে মৃত্যুর পর তোমার জন্য হয়েছে রহমত ও শান্তি।
এক ব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল, তুমি আল্লাহকে ভয় কর ও ধৈর্যধারণ কর। তাঁর কাছেই সওয়াব প্রত্যাশী ব্যক্তি সওয়াব পেয়ে থাকে। তাঁর কাছেই দুঃখিত ব্যক্তি ফিরে যায়।
এক ব্যক্তি সান্ত্বনা দিয়ে বলল, সন্তান পরকালে নেকির কারণ হওয়া, দুনিয়াতে আনন্দের উপকরণ হওয়ার চেয়ে উত্তম।
হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তাঁর সন্তানকে দাফন করার পর তিনি কবরের কাছে দাঁড়িয়ে হেসে দিলেন। তাকে বলা হল, আপনি কবরের কাছে হাসছেন! তিনি বললেন, আমি চাচ্ছি, শয়তানের নাককে ধূলিধূসরিত করতে (শয়তানকে অপমান করতে)।
ইবনে জুরাইজ রহ. থেকে বর্ণিত আছে- তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বিপদের সময় প্রতিদান ও সওয়াবের প্রত্যাশার মাধ্যমে সান্ত্বনা লাভ করে না, সে একদিন প্রাণীদের মতই সবকিছু ভুলে যাবে এবং কোন প্রতিদান পাবে না।
হজরত হুমাইদ আরাজ রহ. বলেন, আমি সাঈদ বিন জুবাইর রাহিমাহুল্লাহুকে দেখেছি, তিনি ছেলের দিকে তাকিয়ে বলছেন, 'আমি জানি উত্তম বন্ধুত্ব সম্পর্কে।' তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, সেটি কি? তিনি বললেন, সে মৃত্যুবরণ করবে, তখন আমি সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করব।
হজরত হাসান বাসরি রহ. থেকে বর্ণিত আছে, এক ব্যক্তি তার সন্তানকে নিয়ে আহাজারী করছিল এবং তার কাছে এসে অভিযোগ করছিল। হাসান রহ. জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার ছেলে কি তোমার কাছ থেকে দূরে থাকত? সে ব্যক্তি বলল, জি, সে আমার থেকে বেশিরভাগ সময়ই দূরে থাকত। তিনি বললেন, তুমি মনে কর সে তোমার থেকে দূরে আছে। কারণ, জীবদ্দশার দূরের চেয়ে বর্তমান দূরের ফলে তুমি সওয়াব পাচ্ছ, আর এটিই শ্রেষ্ঠ। সে ব্যক্তি তখন বলল, হে আবু সাঈদ, আপনি আমার ছেলে বিয়োগের কষ্টকে লাঘব করে দিয়েছেন।
হজরত মাইমুন বিন মিহরান বলেন, এক ব্যক্তি উমর বিন আবদুল আজিজ রহ. এর ছেলে আবদুল মালিকের মৃতুতে তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল। তখন উমর বিন আবদুল আজিজ রহ. বললেন, আবদুল মালিকের যে ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়টি সম্পর্কে আমরা আগে থেকেই জানতাম। ঘটনা ঘটার পর আমরা সেটিকে অপরিচিত ভাবছি না।
হজরত বিশর বিন আবদুল্লাহ রহ. বলেন, উমর বিন আবদুল আজিজ ছেলে আবদুল মালিকের কবরে দাঁড়িয়ে বললেন, হে বৎস! আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। তুমি ছিলে এক আনন্দদানকারী সন্তান। তুমি ছিলে সদাচারী তরুণ। আমি চাচ্ছি না যে তুমি আমার ডাকে সাড়া দেবে।
মাসলামা রহ. বলেন, আবদুল মালিক বিন উমর মারা যাওয়ার পর তার পিতা চেহারা থেকে কাপড় খুলে বললেন, হে বৎস! আল্লাহ তোমার ওপর রহম করুন। তোমার জন্মের সুসংবাদ দেয়া হলে আমি আনন্দিত হয়েছিলাম। তুমি যতদিন জীবিত ছিলে তোমার কারণে আমরা আনন্দিত ছিলাম। বর্তমান মুহূর্তের চেয়ে আমি কখনও বেশি আনন্দিত ছিলাম না। আল্লাহর কসম, তুমি তোমার পিতাকে জান্নাতে ডেকে নেবে।
আবুল হাসান মাদায়িনি রহ. বলেন, উমর বিন আবদুল আজিজ ছেলের অসুস্থতার সময় তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে বৎস! তুমি কীসের ওপর রয়েছ? ছেলে বলল, আমি হকের ওপর আছি। হে বৎস! কেয়ামতের দিন তুমি তোমার মিজানের পাল্লায় থাকার চেয়ে আমার মিজানের পাল্লায় থাকাটা আমার কাছে অধিক প্রিয়। ছেলে বলল, বাবা, আমার প্রিয় বস্তুর চেয়ে আপনার প্রিয় বস্তুই আমার কাছে বেশি প্রিয়।
জুয়াইরা বিন আসমা তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তিন ভাই তুস্তারের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সে যুদ্ধে তারা সকলেই শহিদ হয়ে যায়। তাদের মা কোন প্রয়োজনে বাজারে গেলে তুস্তার যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ হয়। মহিলা তাকে চিনে তার ছেলেদের কথা জিজ্ঞাসা করল। সে ব্যক্তি বলল, তারা সকলেই শহিদ হয়েছে। মহিলা জিজ্ঞাসা করল, তারা যুদ্ধক্ষেত্রে সামনে অগ্রসর হতে হতে শহিদ হয়েছে নাকি পলায়ন করতে গিয়ে শহিদ হয়েছে? সে ব্যক্তি বলল, সামনে অগ্রসর হতে হতে শহিদ হয়েছে। তিন সন্তানের মা সেই মহিলা বললেন, আলহামদুলিল্লাহ, তারা সফল হয়েছে। তারা পরিবার-পরিজনকে হেফাজত করেছে। আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে।
ইমাম শাফেয়ি রহ. এর ছেলের মৃত্যু হলে তিনি একটি কবিতা আবৃত্তি করলেন-
وَمَا الدَّهْرُ إِلَّا هَكَذَا فَاصْطَبِرْ لَهُ * رَزِيَّةُ مَالٍ أَوْ فِرَاقُ حَبِيبٍ.
যুগ এমনই যে, সম্পদ হস্তচ্যুত হবে বা আপনজন বিদায় নিবে; সুতরাং ধৈর্যধারণ কর।
আবুল হাসান মাদায়িনি রহ. বলেন, উবায়দুল্লাহ বিন হাসানের পিতা হাসান রহ. মৃত্যুবরণ করলেন। সে সময় উবায়দুল্লাহ বসরা শহরের বিচারক ও আমির ছিলেন। তখন তাকে অনেকেই সান্ত্বনা দিতে আসলেন। তারা এসময় মানুষের অধৈর্য বুঝার বিষয় নিয়ে আলোচনা করলেন। শেষে তারা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, অধৈর্য ও অস্থির সে ব্যক্তি যে কোন বিপদ বা কারও মৃত্যুতে তার দৈনন্দিনের নির্দিষ্ট কাজ ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে অনেক উক্তি ও মনীষীদের বাণী রয়েছে। আমি এখানে কিছু উল্লেখ করেছি, যেন কিতাবটি এ বিষয়ের আলোচনা থেকে খালি না থাকে।
ইসলামি যুগে মহামারী ইসলামি যুগে যেসব মহামারী হয়েছে, তার কিছু আলোচনা এখানে করা হল। এটি এখানে আলোচনার উদ্দেশ্য হল, অন্যের দুঃখ-কষ্ট দেখে নিজে সান্ত্বনা লাভ করা। ব্যক্তির ওপর যে মুসিবত এসেছে তা আগেকার মুসিবতের চেয়ে অনেক অনেক কম- এ বিষয়টি বুঝানো।
আবুল হাসান মাদায়িনি রহ. বলেন, ইসলামি যুগে প্রসিদ্ধ ভয়াবহ পাঁচটি মহামারী হয়েছিল- ষষ্ঠ হিজরিতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মাদায়েন শহরে 'শিরওয়াইহ' নামক এক মহামারী হয়েছিল। এরপর উমর রাদি. এর যুগে সিরিয়ায় 'আমওয়াস' নামক এক মহামারী হয়েছিল। সে মহামারীতে ২৫ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। এরপর আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের রাদি. এর যুগে ৬৯হিজরির শাওয়াল মাসে মহামারী হয়েছিল। সেসময় তিন দিনের প্রতিদিন ৭০হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করছিল। এই মহামারীতে আনাস বিন মালেক রাদি. এর ৮৩জন সন্তান মৃত্যুবরণ করে। কারও কারও মতে, ৭৩ জন সন্তান মৃত্যুবরণ করে। আবদুর রহমান বিন আবু বাকরা রাদি. এর ৪০ জন সন্তান মৃত্যুবরণ করে।
এরপর ৮৭ হিজরির শাওয়াল মাসে 'ফাতাইয়াত' নামক মহামারী হয়। অতঃপর ১৩১ হিজরির রজব মাসে এক মহামারী হয়। সে মহামারী রমজান মাসে এসে প্রকট রূপ ধারণ করে। সেসময় মারবাদ নামক পথে প্রতিদিন একহাজার ব্যক্তির জানাযা পড়া হত। এরপর শাওয়াল মাসে গিয়ে কিছু কমে। কুফা নগরীতে ৫০ হিজরিতে এক মহামারী হয়েছিল। সে মহামারীতে মুগিরা বিন শুবা রাদি. মৃত্যুবরণ করেন। -মাদায়িনির বক্তব্য এখানে শেষ হল।

টিকাঃ
৫০০. সহিহ মুসলিম: ৯২০, সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৮, মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৭, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৫৪।
৫০১. সুনানে বাইহাকি ৩/৩৮৫।
৫৩২. সহিহ মুসলিম: ৯১৯, সুনানে তিরমিজি: ৯৭৭, মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০৬, সুনানে নাসাঈ ৪/৪-৫, আমাল: ১০৬৯, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৭।
৫৩৩. সুনানে আবু দাউদ: ৩১২১, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৪৮, আমাল: ১০৭৪, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৬৫, ইবনে হিব্বান: ৭২০।
৫৩৪. সহিহ মুসলিম: ৯১৮, সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৫০৬, মুয়াত্তা মালেক ১/২৩৬, মুসনাদে আহমাদ ৬/৩০৯, আমাল: ১০৬৯, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৯৮, আমাল: ৫৮০, ইবনুস সুন্নি।
৫৩৫. সুনানে আবু দাউদ: ৩১১৯, আমাল; ১০৭১, মুসনাদে আহমাদ ৪/২৭। উ.
৫৩৬. সুনানে তিরমিজি: ১০২১, মুসনাদে আহমাদ ৪/৪২৫।
৫৩৭. সহিহ বুখারি: ৬৪২৪, মুসনাদে আহমাদ ২/৪১৭।
৫৩৮. ইবনুস সুন্নি: ৫৬১। হাদিসটি দুর্বল।
৫৩৯. ইবনুস সুন্নি: ৫৬২। হাদিসটি দুর্বল।
৫৪০. সহিহ বুখারি: ১২৯৪, সহিহ মুসলিম: ১০৩, সুনানে নাসাঈ ৪/২০, সুনানে আবু দাউদ: ৩১২৭, মুসনাদে আহমাদ ১/৩৮৬।
৫৪১. সহিহ বুখারি: ১২৯৬, সহিহ মুসলিম: ১০৪, সুনানে নাসাঈ ৪/২০, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৭৬।
৫৪২. সহিহ বুখারি: ১৩০6, সহিহ মুসলিম: ৯৩৬, সুনানে নাসাঈ ৭/১৪৮, মুসনাদে আহমাদ ৫/৮৫, সুনানে আবু দাউদ: ৩১২৭।
৫৪৩. সহিহ মুসলিম: ৬৮, সুনানে তিরমিজি: ১০০১, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৭৭।
৫৪৪. সুনানে আবু দাউদ: ৩১২৮, মুসনাদে আহমাদ ৩/৬৫।
৫৪৫. সহিহ বুখারি: ১৩০৪, সহিহ মুসলিম: ৯২৩।
৫৪৬. সহিহ বুখারি: ১২৮৪, সহিহ মুসলিম: ৯২৩, সুনানে নাসাঈ ৪/২১-২২, সুনানে আবু দাউদ: ৩১২৫, মুসনাদে আহমাদ ৫/২০৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৫৮৫।
৫৪৭. সহিহ বুখারি: ১৩০৩, সহিহ মুসলিম ৩/১৯৪, সুনানে আবু দাউদ: ২১২৬, মুসনাদে আহমাদ ৩/১৯৪।
৫৪৮. সুনানে আবু দাউদ: ৩১১১, সুনানে নাসাঈ ৪/১৩, সুনানে ইবনে মাজাহ: ২৮০৩, মুয়াত্তা মালেক ১/২৩৩।
৫৪৯. সুনানে তিরমিজি: ১০৭৬, সুনানে কুবরা ৪/৫৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬০২।
৫৫০. সুনানে তিরমিজি: ১০৭৬।
৫৫১. সুনানে আবু দাউদ: ৩১২৩, সুনানে নাসাঈ ৪/২৭, মুসনাদে আহমাদ ২/১৬৯, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৭৩।
৫৫২. সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৬০১, সুনানে বাইহাকি ৪/৫৯। হাদিসটি দুর্বল।
৫৫৩. সুরা মায়েদা: ০২।
৫৫৪. সহিহ মুসলিম: ২৬৯৯, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৪৬।
৫৫৫. সহিহ মুসলিম: ৮৬৮। শোকসভার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পড়ুন: চেতনার মশাল (জালসায়ে তাজিয়াত কি শরয়ি হাইসিয়াত)। লেখক: হজরতুল উসতাজ মুফতি সাঈদ আহমাদ পালনপুরি রাহিমাহুল্লাহ। ভাষান্তর: অধম উবায়দুল্লাহ আসআদ। প্রকাশনায়: মাকতাবাতুস সুন্নাহ ঢাকা। উ.
৫৫৬. সহিহ বুখারি: ১২৮৪, সহিহ মুসলিম: ৯২৩।
৫৫৭. সুনানে নাসাঈ ৪/২২, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৫, ইবনে হিব্বান: ৭২৫, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩৮৪।

📘 আল আযকার > 📄 মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও কাফনের সময়ের দুআ

📄 মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও কাফনের সময়ের দুআ


মৃত্যুর সংবাদ দেয়ার বিধান
মৃত ব্যক্তির পরিবার ও আত্মিয়-স্বজনকে মৃত্যুর সংবাদ জানানো জায়েজ, তবে আম ঘোষণা করা মাকরুহ।
(৪০৫) হজরত হুজাইফা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন-
إِذَا مِتُّ فَلَا تُؤْذِنُوا بِي إِنِّي أَخَافُ أَنْ يَكُوْنَ نَعْيًا ؛ فَإِنِّي سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْهَى عَنِ النَّعْيِ .
অর্থ: আমি মৃত্যুবরণ করলে তোমরা আমার মৃত্যুর সংবাদ কাউকে জানাবে না। আমি আশংকা করি যে, এটি আম ঘোষণা হয়ে যাবে। কারণ, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শুনেছি, তিনি মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করা থেকে নিষেধ করেছেন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৫৫৮
(৪০৬) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِيَّاكُمْ وَالنَّعْيَ؛ فَإِنَّ النَّعْيَ مِنْ عَمَلِ الْجَاهِلِيَّةِ.
অর্থ: তোমরা মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করা থেকে বিরত থাক। এটি জাহেলি যুগের কাজ। ৫৫৯
(৪০৭) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে আছে-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَعَى النَّجَاشِيَّ إِلَى أَصْحَابِهِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাদশা নাজাশির মৃত্যুর সংবাদ সাহাবায়ে কেরামকে জানিয়েছেন। ৫৬০-সহিহ বুখারি ও মুসলিমে আছে: এক ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর সাহাবায়ে কেরাম তাকে রাতে দাফন করে ফেলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে ব্যক্তির মৃত্যুর বিষয়টি জানেননি। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তোমরা আমাকে তার মৃত্যুর বিষয়টি জানাবে না? ৫৬১
উলামায়ে কেরাম বলেন, মৃতের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে জানানো চাই। যা এ দুই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়। তারা বলেন, জাহেলি যুগের ন্যায় মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করা নিষিদ্ধ। জাহেলি যুগে কোন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হলে তারা গোত্রগুলোর কাছে একজন ঘোষক পাঠাত। যে ঘোষণা করত- অমুকের মৃত্যুর সংবাদ বা আরবের মৃত্যুর সংবাদ। অর্থাৎ অমুকের মৃত্যুর কারণে আরবের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘোষণার সাথে কান্না ও আহাজারীও থাকত।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরام মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর জানান দেয়া দুই কারণে উত্তম বলেন। একদল উলামায়ে কেরام বলেন, মৃতের নিকটাত্মীয় ও দূরবর্তী আত্মীয়কে জানানো মুস্তাহাব। কারণ, এতে নামাজের মুসল্লি বাড়বে এবং তার জন্য অধিক সংখ্যক মানুষ দুআ করবে। আরেক দল উলামায়ে কেরام বলেন, শুধু দূরে থাকা আত্মীয়দেরকে জানানো মুস্তাহাব; অন্যদের নয়। তবে সঠিক কথা হল- সকলের মাঝেই শুধু ঘোষণা করা উত্তম।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল ও কাফনের সময় যে দুআ পড়বে
মৃতের গোসল ও কাফনের সময় বেশি বেশি জিকির করা চাই। উলামায়ে কেরام বলেন, গোসল দানকারী ব্যক্তি মৃতের ভালো কিছু দেখলে- যেমন চেহারা নুরানি হওয়া ও সুগন্ধি বের হওয়া ইত্যাদি, তাহলে এগুলো অন্যদের জানানো মুস্তাহাব। আর অপছন্দনীয় কিছু দেখলে, যেমন চেহারা কালো হয়ে যাওয়া, দুর্গন্ধ বের হওয়া, অঙ্গ বিকৃত হওয়া, আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যাওয়া ইত্যাদি দেখলে তা কাউকে বলা হারাম। এ বিষয়ে তাদের প্রমাণ পেশ করেন নিচের হাদিসসূহের দ্বারা-
(৪০৮) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
اُذْكُرُوا مَحَاسِنَ مَوْتَاكُمْ، وَكَفُّوا عَنْ مَسَاوِيْهِمْ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমরা মৃতের ভালো বিষয়গুলো আলোচনা কর ও মন্দ বিষয় থেকে বিরত থাক। ৫৬২
(৪০৯) হজরত আবু রাফে রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ غَسَّلَ مَيْتًا فَكَتَمَ عَلَيْهِ غَفَرَ اللَّهُ لَهُ أَرْبَعِينَ مَرَّةً
অর্থ: যে ব্যক্তি মৃতের গোসল দেয় এবং তার মন্দ কিছু গোপন করে, আল্লাহ তাআলা তাকে চল্লিশবার বা চল্লিশটি গুনাহ মাফ করে দেন। ৫৬৩
আবুল খাইর আল ইয়েমেনি রহ. বলেন, যদি মৃত ব্যক্তি বিদআতি হয়ে থাকে এবং সে প্রকাশ্যে বিদআত করত। তাহলে গোসল দানকারী তাতে অপ্রীতিকর কিছু দেখলে তা মানুষের কাছে প্রকাশ করাই যুক্তিযুক্ত। যেন মানুষ বিদআত থেকে বেঁচে থাকে। ৫৬৪

টিকাঃ
৫৫৮. সুনানে তিরমিজি: ৯৮৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৪৭৬, মুসনাদে আহমাদ ৫/৪০৬, সুনানে বাইহাকি ৪/৭৪।
৫৫৯. সুনানে তিরমিজি: ৯৮৪।
৫৬০. সহিহ বুখারি: ১২৪৫, সহিহ মুসলিম: ৯৫১, সুনানে তিরমিজি: ১০২২, সুনানে নাসাঈ ৪/৭২, মুসনাদে আহমাদ ২/২৮১।
৫৬১. সহিহ বুখারি: ১৩৩৭, সহিহ মুসলিম: ৯৫৬।
৫৬২. সুনানে আবু দাউদ: ৪৯০০, সুনানে তিরমিজি: ১০১৯।
৫৬৩. মুসতাদরাকে হাকিম ১/৩৫৪, সুনানে বাইহাকি ৩/৩৯৫।
৫৬৪. ফিকহে হানাফির হাশিয়াতুত তাহতাবিতেও একই ব্যাখ্যা রয়েছে। বিস্তারিত দেখুন: চেতনার মশাল বইয়ে।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন