📄 সাপে কাটা ও ফোঁড়া-ফুসকুড়ির দুআ
বেহুঁশ ও সাপে কাটা ব্যক্তির শরীরে যা পড়ে ফুঁ দেয়া হবে (৩৩৭) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত-
انْطَلَقَ نَفَرُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفْرَةٍ سَافَرُوْهَا، حَتَّى نَزَلُوا عَلَى حَيَّ مِنْ أَحْيَاءِ الْعَرَبِ فَاسْتَضَافُوهُمْ، فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوْهُمْ، فَلُدِغَ سَيِّدُ ذَلِكَ الْحَيِّ، فَسَعَوْا لَهُ بِكُلِّ شَيْءٍ، لَا يَنْفَعُهُ شَيْءٌ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَوْ أَتَيْتُمْ هَؤُلَاءِ الرَّهْطَ الَّذِينَ نَزَلُوا ؛ لَعَلَّهُ أَنْ يَكُونَ عِنْدَ بَعْضِهِمْ شَيْءٌ فَأَتَوْهُمْ فَقَالُوا: يَا أَيُّهَا الرَّهْطُ، إِنَّ سَيِّدَنَا لُدِغَ وَسَعَيْنَا لَهُ بِكُلِّ شَيْءٍ لَا يَنْفَعُهُ، فَهَلْ عِنْدَ أَحَدٍ مِنْكُمْ مِنْ شَيْءٍ؟ فَقَالَ بَعْضُهُمْ: نَعَمْ، وَاللَّهِ، إِنِّي لَأَرْقِ، وَلَكِنْ وَاللهِ، لَقَدِ اسْتَضَفْنَاكُمْ فَلَمْ تُضَيِّفُونَا، فَمَا أَنَا بِرَاقٍ لَكُمْ حَتَّى تَجْعَلُوا لَنَا جُعْلًا. فَصَالَحُوهُمْ عَلَى قَطِيعٍ مِنَ الْغَنَمِ ، فَانْطَلَقَ يَنْفِلُ عَلَيْهِ وَيَقْرَأُ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، فَكَأَنَّمَا نُشِطَ مِنْ عِقَالٍ، فَانْطَلَقَ يَمْشِي وَمَا بِهِ قَلَبَةٌ. قَالَ: فَأَوْفَوْهُمْ جُعْلَهُمُ الَّذِي صَالَحُوهُمْ عَلَيْهِ، فَقَالَ بَعْضُهُمُ: اقْسِمُوْا. فَقَالَ الَّذِي رَقَى: لَا تَفْعَلُوْا حَتَّى نَأْتِيَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَذْكُرَ لَهُ الَّذِي كَانَ، فَنَنْظُرَ مَا يَأْمُرُنَا . فَقَدِمُوا عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرُوْا لَهُ فَقَالَ: وَمَا يُدْرِيكَ أَنَّهَا رُقْيَةٌ؟ . ثُمَّ قَالَ: قَدْ أَصَبْتُمُ، اقْسِمُوْا وَاضْرِبُوا لِي مَعَكُمْ سَهْمًا. وَضَحِكَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ .
অর্থ: একদল সাহাবি কোন এক সফরে ছিলেন। তাঁরা আরবের কোন এক এলাকায় যাত্রা বিরতি দিলেন। তারা সে এলাকার লোকদের কাছে মেহমানদারীর আবেদন করলেন। কিন্তু এলাকার লোকেরা তাদের মেহমানদারী করার জন্য সম্মত হল না। এরপর ঐ এলাকার নেতাকে হঠাৎ বিচ্ছু দংশন করলো। সর্বপ্রকার চেষ্টা করেও কোন উপকার হল না। তাদের কেউ বলল, আমরা যদি ঐ লোকদের কাছে যেতাম, যারা আমাদের এলাকায় যাত্রাবিরতি দিয়েছে হয়ত তাদের কাছে এর কোন চিকিৎসা আছে। এরপর তারা এসে বলল, হে যাত্রীদল, আমাদের নেতাকে বিচ্ছু দংশন করেছে। আমরা সকল চেষ্টা করেও কোন উপকার পাইনি। তোমাদের কাছে এর কোন প্রতিকার আছে কি? তাদের একজন বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। আমি তাকে চিকিৎসা করব। তবে আমরা তোমাদের কাছে আতিথিয়তা চেয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা তা করনি। তাই আমরা পারিশ্রমিক ছাড়া এর চিকিৎসা (ঝাড়ফুঁক) করব না। তখন তারা এক পাল বকরী দিয়ে এই বিষয়ে সমঝোতায় আসল।
অতঃপর সাহাবি গেলেন। সুরা ফাতিহা পড়ে তার ওপর থুথু ফেললেন। ফলে তার হুঁশ ফিরে এল। সে সুস্থ হয়ে হাঁটা-চলা করতে লাগল। তার কোন সমস্যা রইল না। তখন তারা তাদের সন্ধি-চুক্তি পূর্ণ করলো। সে সাহাবিকে এক পাল ছাগল দিল। অন্য একজন সাহাবি বললেন, আপনি এই ছাগলগুলো আমাদের মাঝে বণ্টন করুন। কিন্তু যিনি চিকিৎসা (ঝাড়ফুঁক) করলেন তিনি বললেন, না, তোমরা একাজ কর না। আগে আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যাই। তাঁর কাছে সম্পূর্ণ ঘটনা বলি। দেখি তিনি কি আদেশ দেন। তাঁরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন। তাঁর কাছে সম্পূর্ণ ঘটনা বললেন। ঘটনা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কিভাবে জানলে যে এর দ্বারা চিকিৎসা (ঝাড়ফুঁক) করা যায়। তোমরা যা পেয়েছো, তা সঠিকভাবে পেয়েছো। এগুলো বণ্টন কর। তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটি অংশ রেখো, একথা বলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন। ৪৭৬
(৩৩৮) হজরত আবদুর রহমান বিন আবু লাইলা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنْ أَخِي وَجِعَ، فَقَالَ: وَمَا وَجَعُ أَخِيكَ؟ قَالَ: بِهِ لِمَمْ، قَالَ: فَابْعَثْ بِهِ إِلَيَّ، فَجَاءَ فَجَلَسَ بَيْنَ يَدَيْهِ، فَقَرَأَ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَاتِحَةُ الْكِتَابِ، وَأَرْبَعُ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ، وَآيَتَيْنِ مِنْ وَسْطِهَا : (وَإِلَهُكُمْ إِلهُ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ ...) حَتَّى فَرَغَ مِنَ الْآيَةِ [البقرة: ١٦٣، ١٦٤] وآية الْكُرْسِي، وَثَلَاثُ آيَاتٍ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ، وَآيَةِ مِنْ أَوَّلِ سُوْرَةِ آلِ عِمْرَانَ، وَ شَهِدَ اللهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ ...) إلى آخِرِ الْآيَةِ [آلِ عِمْرانَ: ۱۸ ]، وآية من سورة [الأعراف: ٥٤] (إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ ... )، وَآيَةٍ مِنْ سُوْرَةِ [الْمُؤْمِنِينَ: ١١٦] (فَتَعَالَى اللهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهُ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ)، وآية من سورة [الجن: ٣] (وَأَنَّهُ تَعَالَى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةٌ وَلَا وَلَدًا) وَعَشَرَ آيَاتٍ مِنْ سُوْرَةِ الصَّافَّاتِ مِنْ أَوَّلِهَا، وَثَلَاثَاً مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْحَشَرِ، وَ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدَ) وَالْمُعَوَّذَتَيْنِ.
অর্থ: এক ব্যক্তি রাসুলের কাছে এসে বললেন, আমার ভাই অসুস্থ। নবিজি বললেন, কী হয়েছে? লোকটি বলল, তার মাতলামী রয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আমার কাছে ডেকে পাঠাও। সে মাতাল ব্যক্তি আসলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে বসলো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো তার ওপর পড়লেন- সুরা ফাতেহা, সুরা বাকারার প্রথম চার আয়াত এবং মাঝখান থেকে এ দুই আয়াত-
وَإِلَهُكُمْ إِلَهُ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنْفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ مَاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِنْ كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُوْنَ.
অর্থ: তোমাদের উপাস্য একক উপাস্য। তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। তিনি পরম করুণাময় বড় দয়ালু। নিশ্চয়: আসমান এবং জমিন সৃষ্টিকরণে, রাত-দিনের: বিবর্তনে এবং নদিতে মানুষের জন্য কল্যাণকর বস্তু নিয়ে চলাচলরত নৌকাসমূহে। আকাশ থেকে আল্লাহ তাআলার পানি বর্ষণে। এর মাধ্যমে তিনি জমিকে অনুর্বর হওয়ার পর সজীব করে তুলেন। জমিনে সবরকম জীব-জন্তু ছড়িয়ে দেয়াতে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে এবং আসমান ও জমিনের মধ্যখানে অনুগামী (নির্দেশাধীন) মেঘমালায় অবশ্যই বুদ্ধিমান সমপ্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন! (অর্থাৎ তারা চিন্তা করলে জানতে সক্ষম হবে যে, যে সত্তা এসব কাজ সম্পাদন করেন, তিনিই হলেন সত্য মাবুদ)]৪৭৭
আয়াতুল কুরসি, সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত, সুরা আলে ইমরানের প্রথম আয়াত এবং এ আয়াতটি-
شَهِدَ اللهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ.
[আল্লাহ তাআলা (সমস্ত আসমানি কিতাবে) এ কথার সাক্ষ্য দিয়েছেন (শক্তিশালী দলিল দ্বারা এই বিষয় বয়ান করেছেন) যে, তাকে ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। আর ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণ (ও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে,) তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। ]৪৭৮ সুরা আরাফের এ আয়াতটি-
إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُوْمَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ.
[নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি আসমান-জমিনকে ছয় দিনে (ছয় বিরতিতে) সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে ইস্তিওয়া গ্রহণ করেছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের ওপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিরি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র, এগুলো তার আদেশের অনুগত। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ তাআলা বরকতময়, তিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।] সুরা মুমিনুনের আয়াত-
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ.
[অতএব, শীর্ষ মহিমাময় আল্লাহ তাআলা, তিনি সত্যিকার মালিক। তিনি ছাড়া কোন সত্যিকার মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক। ]৪৭৯ সুরা জিনের এ আয়াত-
وَأَنَّهُ تَعَالَى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَلَا وَلَدًا.
[আরো বিশ্বাস করি যে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার ঊর্ধ্বে। তিনি কোন পত্নী গ্রহণ করেননি এবং তাঁর কোন সন্তানও নেই।]৪৮০
সুরা সাফফাতের প্রথম দশ আয়াত, সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পড়ে দম করলেন।৪৮১
(৩৩৯) হজরত খারেজা বিন সালত রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তাঁর চাচা বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْلَمْتُ، ثُمَّ رَجَعْتُ فَمَرَرْتُ عَلَى قَوْمٍ عِنْدَهُمْ رَجُلٌ مَجْنُونٌ مُوْثَقٌ بِالْحَدِيدِ، فَقَالَ أَهْلُهُ: إِنَّا حُدِّثْنَا أَنَّ صَاحِبَكَ هَذَا قَدْ جَاءَ بِخَيْرٍ، فَهَلْ عِنْدَكَ شَيْءٌ تُدَاوِيْهِ؟ فَرَقَيْتُهُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، فَبَرَأَ، فَأَعْطَوْنِي مِائَةَ شَاةٍ، فَأَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ: هَلْ إِلَّا هَذَا؟ وَفِي رِوَايَةٍ : هَلْ قُلْتَ غَيْرَ هَذَا؟ قُلْتُ: لَا ، قَالَ : خُذْهَا؛ فَلَعْمْرِي لَمَنْ أَكَلَ بِرُقْيَةِ بَاطِلٍ لَقَدْ أَكَلْتَ بِرُقْيَةِ حَقٌّ.
অর্থ: আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে মুসলমান হলাম। এরপর বাড়ির দিকে ফিরছিলাম। চলার পথে এক গোত্রের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম। তাদের এক ব্যক্তি পাগল ছিল, যাকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। ঐ পাগল লোকটির পরিবারের লোকেরা আমাকে বলল, আমরা শুনেছি, আপনার সঙ্গি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভালো ও কল্যাণ নিয়ে আগমন করেছেন। আপনার কাছে কি এমন কিছু আছে যা দিয়ে আমাদের এ পাগল লোকটির চিকিৎসা করতে পারবেন? আপনার সঙ্গীরা জানিয়েছে যে, আপনি তাঁর জন্য মঙ্গলজনক কিছু করতে পারবেন। আপনার কাছে কি তাঁর চিকিৎসার মত কিছু আছে? তখন আমি সুরা ফাতিহা পড়ে তাঁকে ফুঁ দিলাম। ফলে সে সুস্থ হয়ে গেল। তখন তারা আমাকে একশ ছাগল দিল। আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সব ঘটনা বললাম। তিনি বললেন, তুমি কি শুধু সুরা ফাতিহাই পড়েছ? অপর বর্ণনায় আছে, তুমি কি সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কিছু পড়েছ? আমি বললাম, না। নবিজি বললেন, তুমি সেগুলো গ্রহণ কর। আমার জীবনের কসম, অনেকেই বাতিল বস্তু দ্বারা ঝাড়ফুঁক করে জীবিকা উপার্জন করে, আর তুমি তো সত্য বস্তু দিয়ে ঝাড়ফুঁক করে উপার্জন করেছ। ৪৮২
(৩৪০) অন্য বর্ণনায় আছে-
أَقْبَلْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَيْنَا عَلَى حَيَّ مِنَ الْعَرَبِ، فَقَالُوا: إِنَّا أُنْبِثْنَا أَنَّكُمْ قَدْ جِئْتُمْ مِنْ عِنْدِ هَذَا الرَّجُلِ بِخَيْرٍ، فَهَلْ عِنْدَكُمْ مِنْ دَوَاءٍ أَوْ رُقْيَةٍ ؟ فَإِنَّ عِنْدَنَا مَعْتُوْهَا فِي الْقُيُوْدِ. قَالَ: فَقُلْنَا: نَعَمْ. قَالَ: فَجَاءُوا بِمَعْتُوْهِ فِي الْقُيُوْدِ. قَالَ : فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ غُدْوَةٌ وَعَشِيَّةٌ، كُلَّمَا خَتَمْتُهَا أَجْمَعُ بُزَاقِي ثُمَّ أَتْفُلُ، فَكَأَنَّمَا نُشِطَ مِنْ عِقَالٍ . قَالَ: فَأَعْطَوْنِي جُعْلًا، فَقُلْتُ: لَا ، حَتَّى أَسْأَلَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: كُلْ، فَلَعَمْرِي مَنْ أَكَلَ بِرُقْيَةِ بَاطِلٍ لَقَدْ أَكَلْتَ بِرُقْيَةِ حَقٌّ.
অর্থ: খারিজা বিন সালত তিনি তার চাচা থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমরা নবিজির কাছ থেকে যাচ্ছিলাম। আমরা আরবের একটি এলাকায় আসলাম। তারা আমাদেরকে জিজ্ঞাস করলো, আপনাদের কাছে কি কোন ওষুধ আছে? আমাদের একজন পাগল অবস্থায় বন্দি আছে। তারা ঐ পাগল ব্যক্তিটিকে শিকলসহ নিয়ে এলো। আমি তিনদিন সকাল-সন্ধ্যা সুরা ফাতেহা পড়ে থুথু দিলাম। ফলে সে সুস্থ হয়ে ওঠলো। তারা আমাকে এজন্য বিনিময় হিসাবে কিছু দিল, আমি বললাম না, আমি এর বিনিময় নেবো না। অতঃপর তারা বলল, আপনি নবিজির কাছে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করুন। আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তুমি তা খেতে পার। অনেকেই বাতিল বস্তু দ্বারা ঝাড়ফুঁক করে জীবিকা উপার্জন করে, আর তুমি তো সত্য বস্তু দিয়ে ঝাড়ফুঁক করে উপার্জন করেছ। ৪৮৩
(৩৪১) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত-
أَنَّهُ قَرَأَ فِي أُذُنِ مُبْتَلَى فَأَفَاقَ، فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا قَرَأْتَ فِي أُذُنَيْهِ؟ قَالَ: قَرَأْتُ أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا حَتَّى فَرِغَ مِنْ آخَرِ السُّورَةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ أَنَّ رَجُلاً مُوْقِنَا قَرَأَ بِهَا عَلَى جَبَلٍ لَزَالَ.
অর্থ: তিনি একবার একজন বেঁহুশ রোগীর কানে কিছু পড়ে ফুঁক দিলেন, সে হুশ ফিরে পেল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি পড়ে তার কানে ফুঁ দিয়েছিলে? তিনি বললেন, এই আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিয়েছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি কোন ব্যক্তি একীনের সাথে পাহাড়ের ওপর এ আয়াতগুলো পড়ে, তাহলে পাহাড় টলে যাবে। আয়াতগুলো-
أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُوْنَ * فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ * وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ، إِلَهَا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ * وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ.
অর্থ: তোমরা কি ধারণা কর যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে না? অতএব, শীর্ষ মহিমাময় আল্লাহ তাআলা, তিনি সত্যিকার মালিক। তিনি ছাড়া কোন সত্যিকার মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক। যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার কোন সনদ নেই। তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না। বলুন: হে আমার পালনকর্তা, ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ট রহমকারী। ৪৮৪
(৩৪২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনকে এ দুআ পড়ে সুরক্ষা করতেন। আরো বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ইসমাঈল ও ইসহাক আলাইহিমাস সালামদ্বয়কে উক্ত দুআ পড়ে সুরক্ষা করতেন। দুআটি হল-
أَعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ.
উচ্চারণ: উয়িজুকুমা বি-কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাহ।
অর্থ: আমি তোমাদের দুজনের জন্য আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমাসমূহের মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান ও বিষাক্ত প্রাণী হতে এবং সকল প্রকার বদনজর হতে মুক্তি চাচ্ছি। ৪৮৫
ফোঁড়া, ফুসকুড়ি ইত্যাদি উঠলে যে দুআ পড়বে (৩৪৩) কোন একজন উম্মুল মুমিনের সূত্রে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গৃহে আসলেন, তখন আমার আঙ্গুলে ফুসকুড়ি উঠেছিল। নবিজি বললেন, তোমার কাছে কি জারিরা নামক ওষুধটি আছে? তিনি সে ওষুধ ফুসকুড়ির ওপর রেখে বললেন, তুমি এ দুআ পড়। ফলে আমার ফুসকুড়ি মিলিয়ে যায়। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ مُصَغَرَ الْكَبِيرِ وَمُكَبِّرَ الصَّغِيْرِ صَغَرُ مَا بِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মুসাগ্গিরাল কাবিরি ওয়া মুকাব্বিরাস সাগিরি, সাগ্গির মা বি।
অর্থ: হে আল্লাহ তুমি বড়কে ছোট কর এবং ছোটকে বড় কর। আমার এটিকে ছোট করে দাও। ৪৮৬
টিকাঃ
৪৭৬. সহিহ বুখারি: ৫৭৪৯, সহিহ মুসলিম: ২২০১।
৪৭৭. তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন।
৪৭৮. তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন।
৪৭৯. সুরা মুমিনুন: ১১৬।
৪৮০. সুরা জিন: ৩।
৪৮১. ইবনুস সুন্নি: ৬৩২। হাদিসটি দুর্বল।
৪৮২. সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৯৬। হাদিসটি সহিহ।
৪৮৩. সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৯৭, ইবনুস সুন্নি: ৬৩৫।
৪৮৪. ইবনুস সুন্নি: ৬৩১। হাদিসটি দুর্বল। সুরা মুমিনুন: ১৫-১৮।
৪৮৫. সহিহ বুখারি: ১৮১৪, সহিহ মুসলিম: ১২০১।
৪৮৬. আমাল: ৬৩৫, ইবনুস সুন্নি, আমাল: ১০৩১, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৭০, মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২০৭।
বেহুঁশ ও সাপে কাটা ব্যক্তির শরীরে যা পড়ে ফুঁ দেয়া হবে (৩৩৭) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত-
انْطَلَقَ نَفَرُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سَفْرَةٍ سَافَرُوْهَا، حَتَّى نَزَلُوا عَلَى حَيَّ مِنْ أَحْيَاءِ الْعَرَبِ فَاسْتَضَافُوهُمْ، فَأَبَوْا أَنْ يُضَيِّفُوْهُمْ، فَلُدِغَ سَيِّدُ ذَلِكَ الْحَيِّ، فَسَعَوْا لَهُ بِكُلِّ شَيْءٍ، لَا يَنْفَعُهُ شَيْءٌ، فَقَالَ بَعْضُهُمْ: لَوْ أَتَيْتُمْ هَؤُلَاءِ الرَّهْطَ الَّذِينَ نَزَلُوا ؛ لَعَلَّهُ أَنْ يَكُونَ عِنْدَ بَعْضِهِمْ شَيْءٌ فَأَتَوْهُمْ فَقَالُوا: يَا أَيُّهَا الرَّهْطُ، إِنَّ سَيِّدَنَا لُدِغَ وَسَعَيْنَا لَهُ بِكُلِّ شَيْءٍ لَا يَنْفَعُهُ، فَهَلْ عِنْدَ أَحَدٍ مِنْكُمْ مِنْ شَيْءٍ؟ فَقَالَ بَعْضُهُمْ: نَعَمْ، وَاللَّهِ، إِنِّي لَأَرْقِ، وَلَكِنْ وَاللهِ، لَقَدِ اسْتَضَفْنَاكُمْ فَلَمْ تُضَيِّفُونَا، فَمَا أَنَا بِرَاقٍ لَكُمْ حَتَّى تَجْعَلُوا لَنَا جُعْلًا. فَصَالَحُوهُمْ عَلَى قَطِيعٍ مِنَ الْغَنَمِ ، فَانْطَلَقَ يَنْفِلُ عَلَيْهِ وَيَقْرَأُ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، فَكَأَنَّمَا نُشِطَ مِنْ عِقَالٍ، فَانْطَلَقَ يَمْشِي وَمَا بِهِ قَلَبَةٌ. قَالَ: فَأَوْفَوْهُمْ جُعْلَهُمُ الَّذِي صَالَحُوهُمْ عَلَيْهِ، فَقَالَ بَعْضُهُمُ: اقْسِمُوْا. فَقَالَ الَّذِي رَقَى: لَا تَفْعَلُوْا حَتَّى نَأْتِيَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنَذْكُرَ لَهُ الَّذِي كَانَ، فَنَنْظُرَ مَا يَأْمُرُنَا . فَقَدِمُوا عَلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرُوْا لَهُ فَقَالَ: وَمَا يُدْرِيكَ أَنَّهَا رُقْيَةٌ؟ . ثُمَّ قَالَ: قَدْ أَصَبْتُمُ، اقْسِمُوْا وَاضْرِبُوا لِي مَعَكُمْ سَهْمًا. وَضَحِكَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ .
অর্থ: একদল সাহাবি কোন এক সফরে ছিলেন। তাঁরা আরবের কোন এক এলাকায় যাত্রা বিরতি দিলেন। তারা সে এলাকার লোকদের কাছে মেহমানদারীর আবেদন করলেন। কিন্তু এলাকার লোকেরা তাদের মেহমানদারী করার জন্য সম্মত হল না। এরপর ঐ এলাকার নেতাকে হঠাৎ বিচ্ছু দংশন করলো। সর্বপ্রকার চেষ্টা করেও কোন উপকার হল না। তাদের কেউ বলল, আমরা যদি ঐ লোকদের কাছে যেতাম, যারা আমাদের এলাকায় যাত্রাবিরতি দিয়েছে হয়ত তাদের কাছে এর কোন চিকিৎসা আছে। এরপর তারা এসে বলল, হে যাত্রীদল, আমাদের নেতাকে বিচ্ছু দংশন করেছে। আমরা সকল চেষ্টা করেও কোন উপকার পাইনি। তোমাদের কাছে এর কোন প্রতিকার আছে কি? তাদের একজন বললেন, হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। আমি তাকে চিকিৎসা করব। তবে আমরা তোমাদের কাছে আতিথিয়তা চেয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা তা করনি। তাই আমরা পারিশ্রমিক ছাড়া এর চিকিৎসা (ঝাড়ফুঁক) করব না। তখন তারা এক পাল বকরী দিয়ে এই বিষয়ে সমঝোতায় আসল।
অতঃপর সাহাবি গেলেন। সুরা ফাতিহা পড়ে তার ওপর থুথু ফেললেন। ফলে তার হুঁশ ফিরে এল। সে সুস্থ হয়ে হাঁটা-চলা করতে লাগল। তার কোন সমস্যা রইল না। তখন তারা তাদের সন্ধি-চুক্তি পূর্ণ করলো। সে সাহাবিকে এক পাল ছাগল দিল। অন্য একজন সাহাবি বললেন, আপনি এই ছাগলগুলো আমাদের মাঝে বণ্টন করুন। কিন্তু যিনি চিকিৎসা (ঝাড়ফুঁক) করলেন তিনি বললেন, না, তোমরা একাজ কর না। আগে আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যাই। তাঁর কাছে সম্পূর্ণ ঘটনা বলি। দেখি তিনি কি আদেশ দেন। তাঁরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন। তাঁর কাছে সম্পূর্ণ ঘটনা বললেন। ঘটনা শুনে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কিভাবে জানলে যে এর দ্বারা চিকিৎসা (ঝাড়ফুঁক) করা যায়। তোমরা যা পেয়েছো, তা সঠিকভাবে পেয়েছো। এগুলো বণ্টন কর। তোমাদের সাথে আমার জন্যও একটি অংশ রেখো, একথা বলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন। ৪৭৬
(৩৩৮) হজরত আবদুর রহমান বিন আবু লাইলা রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: إِنْ أَخِي وَجِعَ، فَقَالَ: وَمَا وَجَعُ أَخِيكَ؟ قَالَ: بِهِ لِمَمْ، قَالَ: فَابْعَثْ بِهِ إِلَيَّ، فَجَاءَ فَجَلَسَ بَيْنَ يَدَيْهِ، فَقَرَأَ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فَاتِحَةُ الْكِتَابِ، وَأَرْبَعُ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ، وَآيَتَيْنِ مِنْ وَسْطِهَا : (وَإِلَهُكُمْ إِلهُ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ ...) حَتَّى فَرَغَ مِنَ الْآيَةِ [البقرة: ١٦٣، ١٦٤] وآية الْكُرْسِي، وَثَلَاثُ آيَاتٍ مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْبَقَرَةِ، وَآيَةِ مِنْ أَوَّلِ سُوْرَةِ آلِ عِمْرَانَ، وَ شَهِدَ اللهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ ...) إلى آخِرِ الْآيَةِ [آلِ عِمْرانَ: ۱۸ ]، وآية من سورة [الأعراف: ٥٤] (إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ ... )، وَآيَةٍ مِنْ سُوْرَةِ [الْمُؤْمِنِينَ: ١١٦] (فَتَعَالَى اللهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهُ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ)، وآية من سورة [الجن: ٣] (وَأَنَّهُ تَعَالَى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةٌ وَلَا وَلَدًا) وَعَشَرَ آيَاتٍ مِنْ سُوْرَةِ الصَّافَّاتِ مِنْ أَوَّلِهَا، وَثَلَاثَاً مِنْ آخِرِ سُوْرَةِ الْحَشَرِ، وَ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدَ) وَالْمُعَوَّذَتَيْنِ.
অর্থ: এক ব্যক্তি রাসুলের কাছে এসে বললেন, আমার ভাই অসুস্থ। নবিজি বললেন, কী হয়েছে? লোকটি বলল, তার মাতলামী রয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে আমার কাছে ডেকে পাঠাও। সে মাতাল ব্যক্তি আসলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে বসলো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো তার ওপর পড়লেন- সুরা ফাতেহা, সুরা বাকারার প্রথম চার আয়াত এবং মাঝখান থেকে এ দুই আয়াত-
وَإِلَهُكُمْ إِلَهُ وَاحِدٌ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ وَالْفُلْكِ الَّتِي تَجْرِي فِي الْبَحْرِ بِمَا يَنْفَعُ النَّاسَ وَمَا أَنْزَلَ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مِنْ مَاءٍ فَأَحْيَا بِهِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِنْ كُلِّ دَابَّةٍ وَتَصْرِيفِ الرِّيَاحِ وَالسَّحَابِ الْمُسَخَّرِ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَآيَاتٍ لِقَوْمٍ يَعْقِلُوْنَ.
অর্থ: তোমাদের উপাস্য একক উপাস্য। তিনি ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই। তিনি পরম করুণাময় বড় দয়ালু। নিশ্চয়: আসমান এবং জমিন সৃষ্টিকরণে, রাত-দিনের: বিবর্তনে এবং নদিতে মানুষের জন্য কল্যাণকর বস্তু নিয়ে চলাচলরত নৌকাসমূহে। আকাশ থেকে আল্লাহ তাআলার পানি বর্ষণে। এর মাধ্যমে তিনি জমিকে অনুর্বর হওয়ার পর সজীব করে তুলেন। জমিনে সবরকম জীব-জন্তু ছড়িয়ে দেয়াতে। আবহাওয়ার পরিবর্তনে এবং আসমান ও জমিনের মধ্যখানে অনুগামী (নির্দেশাধীন) মেঘমালায় অবশ্যই বুদ্ধিমান সমপ্রদায়ের জন্য রয়েছে নিদর্শন! (অর্থাৎ তারা চিন্তা করলে জানতে সক্ষম হবে যে, যে সত্তা এসব কাজ সম্পাদন করেন, তিনিই হলেন সত্য মাবুদ)]৪৭৭
আয়াতুল কুরসি, সুরা বাকারার শেষ তিন আয়াত, সুরা আলে ইমরানের প্রথম আয়াত এবং এ আয়াতটি-
شَهِدَ اللهُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ.
[আল্লাহ তাআলা (সমস্ত আসমানি কিতাবে) এ কথার সাক্ষ্য দিয়েছেন (শক্তিশালী দলিল দ্বারা এই বিষয় বয়ান করেছেন) যে, তাকে ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। আর ফেরেশতাগণ এবং ন্যায়নিষ্ঠ জ্ঞানীগণ (ও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে,) তিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, তিনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। ]৪৭৮ সুরা আরাফের এ আয়াতটি-
إِنَّ رَبَّكُمُ اللهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُوْمَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ.
[নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ। তিনি আসমান-জমিনকে ছয় দিনে (ছয় বিরতিতে) সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর আরশে ইস্তিওয়া গ্রহণ করেছেন। তিনি পরিয়ে দেন রাতের ওপর দিনকে এমতাবস্থায় যে, দিন দৌড়ে রাতের পিছনে আসে। তিরি সৃষ্টি করেছেন সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্র, এগুলো তার আদেশের অনুগত। শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা এবং আদেশ দান করা। আল্লাহ তাআলা বরকতময়, তিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক।] সুরা মুমিনুনের আয়াত-
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ.
[অতএব, শীর্ষ মহিমাময় আল্লাহ তাআলা, তিনি সত্যিকার মালিক। তিনি ছাড়া কোন সত্যিকার মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক। ]৪৭৯ সুরা জিনের এ আয়াত-
وَأَنَّهُ تَعَالَى جَدُّ رَبِّنَا مَا اتَّخَذَ صَاحِبَةً وَلَا وَلَدًا.
[আরো বিশ্বাস করি যে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার ঊর্ধ্বে। তিনি কোন পত্নী গ্রহণ করেননি এবং তাঁর কোন সন্তানও নেই।]৪৮০
সুরা সাফফাতের প্রথম দশ আয়াত, সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত, সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পড়ে দম করলেন।৪৮১
(৩৩৯) হজরত খারেজা বিন সালত রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর চাচা থেকে বর্ণনা করেন, তাঁর চাচা বলেন-
أَتَيْتُ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْلَمْتُ، ثُمَّ رَجَعْتُ فَمَرَرْتُ عَلَى قَوْمٍ عِنْدَهُمْ رَجُلٌ مَجْنُونٌ مُوْثَقٌ بِالْحَدِيدِ، فَقَالَ أَهْلُهُ: إِنَّا حُدِّثْنَا أَنَّ صَاحِبَكَ هَذَا قَدْ جَاءَ بِخَيْرٍ، فَهَلْ عِنْدَكَ شَيْءٌ تُدَاوِيْهِ؟ فَرَقَيْتُهُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ، فَبَرَأَ، فَأَعْطَوْنِي مِائَةَ شَاةٍ، فَأَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ: هَلْ إِلَّا هَذَا؟ وَفِي رِوَايَةٍ : هَلْ قُلْتَ غَيْرَ هَذَا؟ قُلْتُ: لَا ، قَالَ : خُذْهَا؛ فَلَعْمْرِي لَمَنْ أَكَلَ بِرُقْيَةِ بَاطِلٍ لَقَدْ أَكَلْتَ بِرُقْيَةِ حَقٌّ.
অর্থ: আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে মুসলমান হলাম। এরপর বাড়ির দিকে ফিরছিলাম। চলার পথে এক গোত্রের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম। তাদের এক ব্যক্তি পাগল ছিল, যাকে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। ঐ পাগল লোকটির পরিবারের লোকেরা আমাকে বলল, আমরা শুনেছি, আপনার সঙ্গি (মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ভালো ও কল্যাণ নিয়ে আগমন করেছেন। আপনার কাছে কি এমন কিছু আছে যা দিয়ে আমাদের এ পাগল লোকটির চিকিৎসা করতে পারবেন? আপনার সঙ্গীরা জানিয়েছে যে, আপনি তাঁর জন্য মঙ্গলজনক কিছু করতে পারবেন। আপনার কাছে কি তাঁর চিকিৎসার মত কিছু আছে? তখন আমি সুরা ফাতিহা পড়ে তাঁকে ফুঁ দিলাম। ফলে সে সুস্থ হয়ে গেল। তখন তারা আমাকে একশ ছাগল দিল। আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে সব ঘটনা বললাম। তিনি বললেন, তুমি কি শুধু সুরা ফাতিহাই পড়েছ? অপর বর্ণনায় আছে, তুমি কি সুরা ফাতিহার সঙ্গে অন্য কিছু পড়েছ? আমি বললাম, না। নবিজি বললেন, তুমি সেগুলো গ্রহণ কর। আমার জীবনের কসম, অনেকেই বাতিল বস্তু দ্বারা ঝাড়ফুঁক করে জীবিকা উপার্জন করে, আর তুমি তো সত্য বস্তু দিয়ে ঝাড়ফুঁক করে উপার্জন করেছ। ৪৮২
(৩৪০) অন্য বর্ণনায় আছে-
أَقْبَلْنَا مِنْ عِنْدِ رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَأَتَيْنَا عَلَى حَيَّ مِنَ الْعَرَبِ، فَقَالُوا: إِنَّا أُنْبِثْنَا أَنَّكُمْ قَدْ جِئْتُمْ مِنْ عِنْدِ هَذَا الرَّجُلِ بِخَيْرٍ، فَهَلْ عِنْدَكُمْ مِنْ دَوَاءٍ أَوْ رُقْيَةٍ ؟ فَإِنَّ عِنْدَنَا مَعْتُوْهَا فِي الْقُيُوْدِ. قَالَ: فَقُلْنَا: نَعَمْ. قَالَ: فَجَاءُوا بِمَعْتُوْهِ فِي الْقُيُوْدِ. قَالَ : فَقَرَأْتُ عَلَيْهِ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ ثَلَاثَةَ أَيَّامٍ غُدْوَةٌ وَعَشِيَّةٌ، كُلَّمَا خَتَمْتُهَا أَجْمَعُ بُزَاقِي ثُمَّ أَتْفُلُ، فَكَأَنَّمَا نُشِطَ مِنْ عِقَالٍ . قَالَ: فَأَعْطَوْنِي جُعْلًا، فَقُلْتُ: لَا ، حَتَّى أَسْأَلَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: كُلْ، فَلَعَمْرِي مَنْ أَكَلَ بِرُقْيَةِ بَاطِلٍ لَقَدْ أَكَلْتَ بِرُقْيَةِ حَقٌّ.
অর্থ: খারিজা বিন সালত তিনি তার চাচা থেকে বর্ণনা করে বলেন, আমরা নবিজির কাছ থেকে যাচ্ছিলাম। আমরা আরবের একটি এলাকায় আসলাম। তারা আমাদেরকে জিজ্ঞাস করলো, আপনাদের কাছে কি কোন ওষুধ আছে? আমাদের একজন পাগল অবস্থায় বন্দি আছে। তারা ঐ পাগল ব্যক্তিটিকে শিকলসহ নিয়ে এলো। আমি তিনদিন সকাল-সন্ধ্যা সুরা ফাতেহা পড়ে থুথু দিলাম। ফলে সে সুস্থ হয়ে ওঠলো। তারা আমাকে এজন্য বিনিময় হিসাবে কিছু দিল, আমি বললাম না, আমি এর বিনিময় নেবো না। অতঃপর তারা বলল, আপনি নবিজির কাছে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করুন। আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, তুমি তা খেতে পার। অনেকেই বাতিল বস্তু দ্বারা ঝাড়ফুঁক করে জীবিকা উপার্জন করে, আর তুমি তো সত্য বস্তু দিয়ে ঝাড়ফুঁক করে উপার্জন করেছ। ৪৮৩
(৩৪১) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত-
أَنَّهُ قَرَأَ فِي أُذُنِ مُبْتَلَى فَأَفَاقَ، فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَا قَرَأْتَ فِي أُذُنَيْهِ؟ قَالَ: قَرَأْتُ أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا حَتَّى فَرِغَ مِنْ آخَرِ السُّورَةِ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْ أَنَّ رَجُلاً مُوْقِنَا قَرَأَ بِهَا عَلَى جَبَلٍ لَزَالَ.
অর্থ: তিনি একবার একজন বেঁহুশ রোগীর কানে কিছু পড়ে ফুঁক দিলেন, সে হুশ ফিরে পেল। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি কি পড়ে তার কানে ফুঁ দিয়েছিলে? তিনি বললেন, এই আয়াতগুলো পড়ে ফুঁ দিয়েছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি কোন ব্যক্তি একীনের সাথে পাহাড়ের ওপর এ আয়াতগুলো পড়ে, তাহলে পাহাড় টলে যাবে। আয়াতগুলো-
أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا وَأَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُوْنَ * فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ * وَمَنْ يَدْعُ مَعَ اللَّهِ، إِلَهَا آخَرَ لَا بُرْهَانَ لَهُ بِهِ فَإِنَّمَا حِسَابُهُ عِنْدَ رَبِّهِ إِنَّهُ لَا يُفْلِحُ الْكَافِرُوْنَ * وَقُلْ رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّاحِمِينَ.
অর্থ: তোমরা কি ধারণা কর যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে না? অতএব, শীর্ষ মহিমাময় আল্লাহ তাআলা, তিনি সত্যিকার মালিক। তিনি ছাড়া কোন সত্যিকার মাবুদ নেই। তিনি সম্মানিত আরশের মালিক। যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার কোন সনদ নেই। তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না। বলুন: হে আমার পালনকর্তা, ক্ষমা করুন ও রহম করুন। রহমকারীদের মধ্যে আপনি শ্রেষ্ট রহমকারী। ৪৮৪
(৩৪২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনকে এ দুআ পড়ে সুরক্ষা করতেন। আরো বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ইসমাঈল ও ইসহাক আলাইহিমাস সালামদ্বয়কে উক্ত দুআ পড়ে সুরক্ষা করতেন। দুআটি হল-
أَعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ.
উচ্চারণ: উয়িজুকুমা বি-কালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাম্মাহ।
অর্থ: আমি তোমাদের দুজনের জন্য আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমাসমূহের মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান ও বিষাক্ত প্রাণী হতে এবং সকল প্রকার বদনজর হতে মুক্তি চাচ্ছি। ৪৮৫
ফোঁড়া, ফুসকুড়ি ইত্যাদি উঠলে যে দুআ পড়বে (৩৪৩) কোন একজন উম্মুল মুমিনের সূত্রে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার গৃহে আসলেন, তখন আমার আঙ্গুলে ফুসকুড়ি উঠেছিল। নবিজি বললেন, তোমার কাছে কি জারিরা নামক ওষুধটি আছে? তিনি সে ওষুধ ফুসকুড়ির ওপর রেখে বললেন, তুমি এ দুআ পড়। ফলে আমার ফুসকুড়ি মিলিয়ে যায়। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ مُصَغَرَ الْكَبِيرِ وَمُكَبِّرَ الصَّغِيْرِ صَغَرُ مَا بِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মুসাগ্গিরাল কাবিরি ওয়া মুকাব্বিরাস সাগিরি, সাগ্গির মা বি।
অর্থ: হে আল্লাহ তুমি বড়কে ছোট কর এবং ছোটকে বড় কর। আমার এটিকে ছোট করে দাও। ৪৮৬
টিকাঃ
৪৭৬. সহিহ বুখারি: ৫৭৪৯, সহিহ মুসলিম: ২২০১।
৪৭৭. তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন।
৪৭৮. তাফসিরে হেদায়াতুল কুরআন।
৪৭৯. সুরা মুমিনুন: ১১৬।
৪৮০. সুরা জিন: ৩।
৪৮১. ইবনুস সুন্নি: ৬৩২। হাদিসটি দুর্বল।
৪৮২. সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৯৬। হাদিসটি সহিহ।
৪৮৩. সুনানে আবু দাউদ: ৩৮৯৭, ইবনুস সুন্নি: ৬৩৫।
৪৮৪. ইবনুস সুন্নি: ৬৩১। হাদিসটি দুর্বল। সুরা মুমিনুন: ১৫-১৮।
৪৮৫. সহিহ বুখারি: ১৮১৪, সহিহ মুসলিম: ১২০১।
৪৮৬. আমাল: ৬৩৫, ইবনুস সুন্নি, আমাল: ১০৩১, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৭০, মুসতাদরাকে হাকেম ৪/২০৭।