📄 দরুদ ও সালাম উভয়টা পড়া মুস্তাহাব
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ পড়ার সময় দরুদ ও সালাম উভয়টি পড়া; শুধু একটি, ওপর ক্ষান্ত না করা। সুতরাং শুধু পড়বে না - (صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ) সাল্লাল্লাহু আলাইহি: আল্লাহ তাআলা তার ওপর দয়া করুন অথবা শুধু পড়বে না- (عَلَيْهِ السَّلَامُ) আলাইহিস সালাম: তার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)।
হাদিম পাঠকারীরা উচ্চস্বরে দরুদ ও সালাম পড়বে
হাদিস পাঠকারী ও দীনি ইলম অর্জনকারী ব্যক্তিরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম আসলে উচু আওয়াজে দরুদ পড়বে। তবে বেশি উচু আওয়াজে পড়বে না। এভাবে দরুদ পড়তে বলেন, খতিব বাগদাদি রহ. ও অন্যান্য মুহাদ্দিসিনে কেরাম। শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, তালবিয়ার মাঝে উচু আওয়াজে দরুদ পড়া মুস্তাহাব। ৪৩৪
টিকাঃ
৪৩৪. দেখুন: সুনানে আবু দাউদ: ১৮১৪, সুনানে তিরমিজি: ৮২৯, সুনানে নাসাঈ ৫/১৬২।
📄 আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ পড়ার মাধ্যমে দুআ শুরু করা
(৩০১) হজরত ফাদালা বিন উবাইদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে শুনলেন যে নামাজের মধ্যে দুআ করছে। কিন্তু সে আল্লাহ তাআলার বড়ত্ব ও মহত্ত্ব কিছুই বলেনি এবং নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদও পড়েনি। তখন তিনি বললেন-
عَجِلَ هَذَا ، ثُمَّ دَعَاهُ، فَقَالَ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ: إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ؛ فَلْيَبْدَأُ بِتَحْمِيدِ اللهِ، وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ لْيُصَلِّ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ لْيَدْعُ بَعْدُ بِمَا شَاءَ.
অর্থ: সে তার দুআয় তাড়াহুড়া করছে। অতঃপর নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অথবা অন্য কাউকে ডেকে বললেন- যখন তোমাদের কেউ দুআ পড়ে, সে যেন তার রবের বড়ত্ব ও মহত্ত্ব এবং তাঁর গুণকীর্তনের মাধ্যমে শুরু করে। অতঃপর নবির প্রতি দরুদ পাঠ করে। তারপর যা ইচ্ছা দুআ করবে। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসের মান হাসান। ৪৩৫
(৩০২) হজরত উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত-
إِنَّ الدُّعَاءَ مَوْقُوْفٌ بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ، لَا يَصْعَدُ مِنْهُ شَيْءٌ، حَتَّى تُصَلِّيَ عَلَى نَبِيِّكَ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
অর্থ: নিশ্চয় দুআ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানে ঝুলন্ত থাকে, কোন কিছুই আকাশের ওপরে যায় না যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি তোমার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ না পড়বে। ৪৩৬
ইমাম নববি রহ. বলেন, আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও গুণকীর্তন দ্বারা দুআ শুরু করা মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম ঐক্যমত পোষণ করেছেন। অনুরূপভাবে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়া, অনুরূপভাবে হামদ ও সালাত দ্বারা দুআ শেষ করা। এই অধ্যায়ে অনেক প্রসিদ্ধ সাহাবি ও তাবেয়িদের উক্তি বর্ণিত হয়েছে।
টিকাঃ
৪৩৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৭৭, সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৮।
৪৩৬. সুনানে তিরমিজি: ৪৮৬। হাদিসটি মওকুফ ও দুর্বল।
📄 নবিগণের সাথে তাদের পরিবারের প্রতি দরুদ পাঠ করা
আমাদের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়া হবে এ ব্যাপারে সকলেই একমত পোষণ করেছেন। এমনিভাবে সকল নবি ও পৃথকভাবে ফেরেশতাদের ওপরে দরুদ পড়া বৈধ ও মুস্তাহাব হওয়ার ব্যাপারেও একমত পোষণ করেন।
আর নবিগণ ব্যতীত অন্যান্যদের ওপর দরুদ পড়া যাবে কিনা- এ ব্যাপারে অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম বলেন, স্বতন্ত্রভাবে তাদের ওপর দরুদ পড়া যাবে না। যেমন আবু বকর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলা যাবে না। তবে এটি কোন পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা-এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, এটি হারাম। তবে বেশিরভাগ উলামায়ে কেরাম বলেন, এটি মাকরুহে তানযিহি। আবার অনেকেই বলেন, এটি অনুত্তম; মাকরুহ নয়।
বেশিরভাগ উলামায়ে কেরাম যে কথা বলেছেন, সেটিই সঠিক। এটি মাকরুহে তানজিহি। কারণ, এটি বিদআতিদের নিদর্শন। আর বিদআতিদের নিদর্শন অনুসরণ করা নিষেধ।
উলামায়ে কেরাম বলেন- এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য কথা হল, সালাত শব্দটি সালাফে সালেহিনের পরিভাষায় শুধু নবিগণের সাথে বিশেষিত। যেমন- عَرَّ وَجَلَّ (আজ্জা ওয়া জাল্লা: সম্মানিত ও মহান): আল্লাহ তাআলার সাথে বিশেষিত। এভাবে বলা যাবে না- মুহাম্মাদ আজ্জা ওয়া জাল্লা। যদিও তিনি সম্মানিত মহান। অনুরূপভাবে আবু বকর অথবা আলি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলা যাবে না। যদিও অর্থের বিচারে একথা সহিহ।
স্বতন্ত্রভাবে না বলে নবিগণের সঙ্গে অন্যদের ওপর দরুদ পাঠ জায়েজ হওয়ার ব্যাপারে সকলেই ঐকমত্য পোষণ করেছেন। সুতরাং বলা যাবে-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ ، وَأَصْحَابِهِ، وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، وَأَتْبَاعِهِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ ওয়া আসহাবিহি ওয়া আযওয়াজিহি ওয়া জুররিইয়াতিহি ওয়া আতবাইহ।
অর্থ: হে আল্লাহ আপনি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পরিবার, তাঁর সাহাবি, তাঁর স্ত্রী-সন্তানাদি ও অনুসারীদের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন। -এ ব্যাপারে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। এভাবেই নামাজে তাশাহুদে পড়তে আদেশ করা হয়েছে। মহান মনীষীগণ নামাজের বাইরেও এভাবে পড়েছেন।
সালামের ব্যাপারে শায়েখ আবু মুহাম্মাদ জুয়াইনি বলেন, এটা সালাত শব্দের অর্থেই ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এটা অনুপস্থিত ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে না। এবং নবিগণ ব্যতীত অন্যের ক্ষেত্রে স্বতন্ত্রভাবে বলা যাবে না। যেমন আলি আলাইহিস সালাম এটা বলা যাবে না। আর এ ব্যাপারে জীবিত ও মৃত সবাই সমান। অবশ্য উপস্থিত ব্যক্তিকে সম্বোধন করা যাবে। সুতরাং সালামুন আলাইকা (আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) অথবা সালামুন আলাইকুম (আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) অথবা আসসালামু আলাইকা (আপনার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) বা আলাইকুম আপনাদের ওপর) বলা যাবে; এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট আলোচনা সামনে আসবে, ইনশাআল্লাহ।
📄 রাদিয়াল্লাহু আনহু ও রাহিমাহুল্লাহ পড়ার বিধান
সাহাবি, তাবেয়ি ও তাদের পরবর্তী উলামা, আবেদ ও সকল নেক লোকদের ক্ষেত্রে রাদিয়াল্লাহু আনহু ও রাহিমাহুল্লাহু বলা মুস্তাহাব। কোন কোন উলামায়ে কেরام বলেন, রাদিয়াল্লাহু আনহু এটা সাহাবায়ে কেরামের সাথে বিশেষিত। অন্যদের ক্ষেত্রে শুধু রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলা যাবে- এ বক্তব্য সঠিক নয়। বরং পূর্বের কথাটিই সঠিক। সবার ব্যাপারেই উভয়টি বলা যাবে। এ ব্যাপারে অসংখ্য দলিল রয়েছে।
আর যদি উল্লিখিত ব্যক্তি সাহাবি ও সাহাবির ছেলে হন, তাহলে رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা: উভয়ের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হোন) বলবে। যেমন- যদি বর্ণনাকারী বলেন, ইবনে উমর, ইবনে ইব্বাস অথবা ইবনে যুবায়ের বলেছেন তাহলে রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলবে, যাতে পিতা-পুত্র উভয়ে শামিল হয়ে যান।
হজরত মরিয়ম ও হজরত লুকমানের ক্ষেত্রে কী বলবে?
হজরত মরিয়ম ও হজরত লুকমানের ক্ষেত্রেও কী নবিদের মতো দরুদ পড়া হবে নাকি সাহাবিদের মতো রাদিয়াল্লাহু আনহু পড়া হবে? এর উত্তর হল, অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে তাঁরা নবি নন। যারা তাদেরকে নবি বলেন, তাদের কথা অগ্রহণযোগ্য। তাদের কথার পরোয়া করা হবে না এ বিষয়টি আমি “তাহজিবুল আসামা ওয়াল্লুগাত” কিতাবে সবিস্তারে আলোচনা করেছি।
কোন কোন উলামায়ে কেরাম বলেছেন, তাদের ক্ষেত্রে "আলাইহিস সালাম” বা "আলাইহাস সালাম" বলা যাবে। তবে নবিদের প্রতি দরুদ পাঠের সাথে যুক্ত করে তাদের ওপর দরুদ পড়া যাবে। যেমন এভাবে বলা যাবে-
لُقْمَانُ صَلَّى اللَّهُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ وَعَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
উচ্চারণ: লুকমানু সাল্লাল্লাহু আলাল আম্বিয়ায়ি ওয়া আলাইহি ওয়াসাল্লাম। অর্থ: হজরত লুকমান (আল্লাহ পাক নবিদের প্রতি অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি।- অথবা
مَرْيَمُ صَلَّى اللَّهُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ وَعَلَيْهَا وَسَلَّمَ.
উচ্চারণ: মরিয়ম সাল্লাল্লাহু আলাল আম্বিয়ায়ি ওয়া আলাইহা ওয়াসাল্লাম। অর্থ: হজরত মরিয়ম (আল্লাহ পাক নবিদের প্রতি অনুগ্রহ ও শান্তি বর্ষণ করুন এবং তার প্রতি। -কেননা যাদের ক্ষেত্রে "রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু" বলা হয় তারা তাদের ওপরের স্তরের। এটা কুরআনের বর্ণনাভঙ্গী দ্বারাই বোধগম্য।
আমার কাছে মনে হয়, এমন শব্দ প্রয়োগ করলে কোন সমস্যা নেই। তবে প্রণিধানযোগ্য কথা হল, তাদের ক্ষেত্রে "রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু” বা "রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহা" বলা। কেননা এই শব্দ নবি ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আর তাদের নবি হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত নয়।
ইমামুল হারামাইন অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের ইজমা নকল করেন যে, মরিয়ম নবি নন। যদি লুকমানের ক্ষেত্রে আলাইহিস সালাম বা মরিয়মের ক্ষেত্রে আলাইহাস সালাম বলে তাতে কোন সমস্যা নেই।