📄 জুমুআ ও অন্যান্য খুতবায় আল্লাহর প্রশংসা করা
জুমুআসহ সকল খুতবায় আল্লাহর প্রশংসা একটি রোকন। এছাড়া খুতবা শুদ্ধ হয় না। কমপক্ষে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলতে হবে। এতটুকু পরিমাণ বলা ওয়াজিব। উত্তম হল, আরো বেশি প্রশংসা করা। যার বিস্তারিত আলোচনা ফিকহের কিতাবাদিতে আছে। তবে এগুলো আরবি ভাষায় হতে হবে।
📄 দুআর শুরু ও শেষে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলা
'আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন' বলে দুআ শেষ করা মুস্তাহাব। অনুরূপভাবে তা বলে দুআ শুরু করাও মুস্তাহাব। আল্লাহ তাআলা বলেন- وَاخِرُ دَعْوبُهُمْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَلَمِينَ.
অর্থ: তাদের দুআ শেষ হবে 'আলহামদুলিল্লাহি রাব্বির আলামিন' এর মাধ্যমে। ৪১৯ -আর আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও তাঁর মহত্ত্ববাণীর মাধ্যমে দুআ আরম্ভ করা সম্বলিত দলিল সহিহ হাদিস থেকে "কিতাবুস সালাত আলা রাসুলিল্লাহ” শিরোনামে অচিরেই আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।
টিকাঃ
৪১৯. সুরা ইউনুস: ১০।
📄 নেয়ামত লাভ ও অপছন্দনীয় বিষয় থেকে বেঁচে গেলে আলহামদুলিল্লাহ বলা
নেয়ামত লাভ ও অপছন্দনীয় বিষয় থেকে বেঁচে গেলে 'আলহামদুলিল্লাহ' বলা মুস্তাহাব; তা নিজের হোক বা সাথীর অথবা অন্য মুসলমানের।
(২৮৯) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أُتِيَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِهِ بِقَدَحَيْنِ مِنْ خَمْرٍ وَلَبَنٍ، فَنَظَرَ إِلَيْهِمَا، فَأَخَذَ اللَّبَنَ فَقَالَ لَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَاكَ لِلْفِطْرَةِ، لَوْ أَخَذْتَ الْخَمْرَ غَوَتْ أُمَّتُكَ.
অর্থ: মেরাজের রাতে নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে দুটি পাত্র আনা হল, একটি ছিল মদের, অপরটি দুধের। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয় পাত্রের দিকে তাকিয়ে দুধের পাত্রটি গ্রহণ করলেন। তখন জিবরিল আ. বললেন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি আপনাকে ফিতরতের (প্রকৃত স্বভাবজাত বিষয়ের) পথ-প্রদর্শন করেছেন। যদি আপনি মদের পেয়ালা গ্রহণ করতেন তাহলে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত। ৪২০
টিকাঃ
৪২০. সহিহ বুখারি: ৩৩৯৪, সহিহ মুসলিম: ১৬৮।
📄 সন্তানের মৃত্যুতেও আলহামদুলিল্লাহ বলা
(২৯০) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا مَاتَ وَلَدُ الْعَبْدِ قَالَ اللهُ لِمَلَائِكَتِهِ : قَبَضْتُمْ وَلَدَ عَبْدِي؟ فَيَقُوْلُوْنَ: نَعَمْ. فَيَقُولُ: قَبَضْتُمْ ثَمَرَةَ فُؤَادِهِ؟ فَيَقُوْلُوْنَ: نَعَمْ. فَيَقُوْلُ: مَاذَا قَالَ عَبْدِي؟ فَيَقُوْلُوْنَ: حَمِدَكَ وَاسْتَرْجَعَ. فَيَقُوْلُ اللهُ: ابْنُوا لِعَبْدِي بَيْتًا فِي الْجَنَّةِ، وَسَمُّوْهُ بَيْتَ الْحَمْدِ.
অর্থ: যখন কারো সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা আমার বান্দার সন্তানকে নিয়ে এসছো? তারা জবাব দেন জি, হ্যাঁ। আবার আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা তার কলিজার টুকরাকে নিয়ে এসেছো? তারা বলে জি, হ্যাঁ। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা তখন কী বলেছে? তারা বলেন, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্নালিল্লাহ বলেছে। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটা ঘর নির্মাণ কর এবং তার নাম রেখো 'বাইতুল হামদ' (প্রশংসার ঘর)। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৪২১
আলহামদুলিল্লাহ এর ফজিলত সম্পর্কিত হাদিসসমূহ অনেক প্রসিদ্ধ। সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং এই জাতীয় কালিমার ফজিলত সম্পর্কে সহিহ হাদিসগুলো কিতাবের শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী খুরাসানি শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি কোন ব্যক্তি শপথ করে যে, সে আল্লাহ তাআলার চূড়ান্ত প্রশংসা করবে বা আল্লাহ তাআলার সবচে বেশি প্রশংসা করবে, তাহলে তার শপথ পূর্ণ করার পদ্ধতি হল, সে বলবে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ حَمْداً يُوَافِي نِعَمَهُ وَيُكَافِئُ مَزِيدَهُ.
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন হামদান ইওয়াফি নিয়ামাহু ওয়া ইউকাফিউ মাজি দাহু।
অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলার এমন প্রশংসা করছি, যা তার নেয়ামতের পরিপূরক ও অতিরিক্ত নেয়ামতের জন্য যথেষ্ট। -তারা আরো বলেন, যদি কেউ শপথ করে, সে আল্লাহ তাআলার সর্বোত্তম গুণকীর্তন করবে, তাহলে শপথ পুরা করার পদ্ধতি হল, সে বলবে-
لَا أُحْصِي ثَنَاءً عَلَيْكَ أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ.
উচ্চারণ: লা উহসি ছানাআন আলাইকা আনতা কামা আসনাইতা আলা নাফসিকা।
অর্থ: আমি আপনার গুণকীর্তন করে শেষ করতে পারবো না। আপনি নিজের যে গুণকীর্তন করেছেন, আপনি তেমনই। -আবার কেউ কেউ নিচের বাক্যটিও বৃদ্ধি করেন-
فَلَكَ الْحَمْدُ حَتَّى تَرْضَى.
উচ্চারণ: ফালাকাল হামদু হাত্তা তারজা।
অর্থ: আপনার এই পরিমাণ প্রশংসা যাতে আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যান।
আর ইমাম আবু সাঈদ মুতওয়াল্লি উক্ত মাসআলাকে এভাবে বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি বলবে যে সে আল্লাহ তাআলার চূড়ান্ত পর্যায়ের প্রশংসা করবে, সে ব্যক্তি পূর্বে বর্ণিত দুআটির আগে 'সুবহানাকা' পড়বে।
আবু নসর তাম্মার মুহাম্মাদ বিন নজর রহ. থেকে বর্ণনা করেন-
قَالَ آدَمُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا رَبِّ شَغَلْتَنِي بِكَسْبٍ يَدِي، فَعَلَّمْنِي شَيْئًا فِيهِ مَجَامِعُ الْحَمْدِ وَالتَّسْبِيحِ، فَأَوْحَى اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى إِلَيْهِ: يَا آدَمُ إِذَا أَصْبَحْتُ فَقُلْ ثَلَاثًا، وَإِذَا أَمْسَيْتُ فَقُلْ ثَلَاثًا: الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ حَمْداً يُوَافِي نِعْمَهُ وَيُكَافِئُ مَزِيدَهُ ، فَذَلِكَ مَجَامِعُ الْحَمْدِ وَالتَّسْبِيحُ.
অর্থ: আদম আ. বললেন- হে রব! আমি উপার্জনের কাজে ব্যস্ত থাকি। তাই আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যাতে আপনার প্রশংসা ও পবিত্রতার সর্ববিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে। তখন আল্লাহ তাআলা তাঁর নিকট ওহি অবতীর্ণ করলেন, 'হে আদম, তুমি সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার বলবে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ حَمْداً يُوَافِي نِعْمَهُ وَيُكَافِئُ مَزِيدَهُ
উচ্চারণ: আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন হামদান ইউওয়াফি নিয়ামাহু ওয়া ইউকাফি মাযিদাহ।
অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলার এমন প্রশংসা করছি, যা তার নেয়ামতের পরিপূরক ও অতিরিক্ত নেয়ামতের জন্য যথেষ্ট। -এতেই সকল প্রশংসা ও পবিত্রতার সমাবেশ রয়েছে। ৪২২
টিকাঃ
৪২১. সুনানে তিরমিজি: ১০২১, মুসনাদে আহমাদ ৪/৪২৫, মাওয়ারিদ: ৭২৬।
৪২২. তুহফাতুল আবরার: ৭৪, হাদিসটি দুর্বল।