📄 কুরআন তিলাওয়াতকারীর কতিপয় মাসআলা ও আদব
এ বিষয়ে অনেক মাসআলা ও আদব রয়েছে। এখানে কিছু বিষয় আলোচনা করা হল। দলিল উল্লেখ করা হয়নি। এগুলোর দলিল প্রসিদ্ধ। এছাড়াও দলিল উল্লেখ করলে আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে, যা বিরক্তির কারণ।
আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভে তিলাওয়াত করা
প্রথম বিষয়, এখলাসের সঙ্গে তিলাওয়াত করা। তিলাওয়াতের একমাত্র উদ্দেশ্য হবে আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ। আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি লাভ ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকবে না। আদবের সঙ্গে কুরআন পড়বে। মনে মনে একথা ভাববে যে, সে আল্লাহর সঙ্গে কথা বলছে; আল্লাহর কিতাব পড়ছে। সরাসরি আল্লাহ তাআলার সামনে পড়লে যেমন ভাব-অবস্থা সৃষ্টি হতো, সেভাবে পড়বে। কারণ সে না দেখলেও আল্লাহ তো তাকে দেখছেন।
কুরআন তিলাওয়াতের আগে মিসওয়াক ইত্যাদি দ্বারা মুখ পরিষ্কার করা
কুরআন তিলাওয়াতের আগে মিসওয়াক ইত্যাদি দ্বারা মুখ পরিষ্কার করবে। আরাক (একপ্রকার কাঁটাওয়ালা গাছ) গাছের ডাল মিসওয়াকের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে অন্য গাছের ডালও ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়াও ঘাসের লতা ও টুথপেস্ট ও শুকনো কাপড় ইত্যাদি যা দ্বারাই মুখ পরিষ্কার হয়, তা দ্বারা মুখ পরিষ্কার করে নেবে।
শুকনো আঙ্গুল দ্বারা তা আদায় হবে কি-না এ ব্যাপারে শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের তিনটি উক্তি রয়েছে। এক. প্রসিদ্ধ হল যে, এর দ্বারা অর্জন হবে না। দুই. অর্জন হবে। তিন. অন্য কিছু না পেলে অর্জন হবে।
আড়াআড়িভাবে মিসওয়াক করবে। মুখের ডান দিক থেকে শুরু করবে। সুন্নাত আদায়ের নিয়ত করবে। কোন কোন উলামায়ে কেরাম বলেন, মিসওয়াক করার সময় এ দুআ পড়বে-
اللَّهُمَّ بَارِكْ لِي فِيْهِ يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বারিক লি فیহি ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: আমাকে এতে বরকত দান করো ওহে শ্রেষ্ঠ দয়াময়।
দাঁতের ভিতরের অংশ ও বাহিরের অংশ মিসওয়াক করবে। দাঁতের চার পাশ, মাড়ীর দাঁত এবং হলকের ওপরের দিকে হালকা ভাবে মিসওয়াক করবে। মধ্যম ধরনের ডাল দ্বারা মিসওয়াক করা। বেশি শুকনাও না, বেশি নরমও না। বেশি শুকনো হলে পানি তবে হ্যা যদি অতিরিক্ত শুকনো হয় তাহলে পানি দিয়ে হালকা নরম করে নিবে।
যদি রক্ত বা অন্য কিছুর মাধ্যমে নাপাক হয়ে যায় তাহলে মুখ না ধুয়ে কুরআন শরিফ পড়া মাকরুহ। হারাম কিনা? এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছে। সঠিক মত হল, হারাম হবে না। এর বিস্তারিত আলোচনা কিতাবের শুরুতে গেছে। এ অধ্যায়ের বাকি আলোচনাও কিতাবের শুরুতে গেছে।
চিন্তা-ফিকির ও একাগ্রতার সঙ্গে তিলাওয়াত করা
তিলাওয়াতকারী একাগ্রতা ও চিন্তা-ফিকিরের সাথে তিলাওয়াত করবে। এটিই তিলাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে বক্ষ প্রসারিত হয় এবং অন্তর আলোকিত হয়।
এ বিষয়ে অনেক দলিল রয়েছে। প্রসিদ্ধ হওয়ার কারণে সেগুলো উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। পূর্ববর্তী মনীষীদের কেউ কেউ এক আয়াত নিয়ে চিন্তা-ফিকির করে পড়তে পড়তে পুরো রাত বা রাতের বেশির ভাগ সময় অতিবাহিত করেছেন। আবার এক আয়াত নিয়ে চিন্তা করতে করতে বেঁহুশ হয়েছেন। আবার কেউ কেউ মৃত্যুবরণও করেছেন।
তিলাওয়াতের সময় কান্না করা বা কান্নার ভান করা মুস্তাহাব
কুরআন তিলাওয়াতের সময় কান্না করা বা কান্না না আসলে কান্নার ভান করা মুস্তাহাব। তিলাওয়াতের সময় কান্না করা আল্লাহওয়ালা-বুজুর্গদের গুণ, এবং আল্লাহ তাআলার নেককার বান্দাদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, তাঁরা কাঁদতে কাঁদতে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে। তাদের ভয়-ভীতি আরো বেড়ে যায়। আমি বিষয়ের অনেক আয়াত হাদিস 'আত্তিবইয়ান ফি আদাবি হামালাতিল কুরআন' কিতাবে উল্লেখ করেছি।
অনেক কারামাতের অধিকারী, তাসাওফের ক্ষুদ্র বিষয়ের আলিম সাইয়েদ ইবরাহিম খাওয়াস রহ, বলেন- অন্তরের ওষুধ পাঁচটি: কুরআন তিলাওয়াত, অন্তর পরিষ্কার, রাতের ইবাদত, শেষ রাতের দুআ ও নেককারদের মজলিসে বসা।
মুখস্থ তিলাওয়াতের চেয়ে দেখে পড়া উত্তম
কুরআনে কারিম মুখস্থ পড়ার চেয়ে দেখে পড়া উত্তম। এমনটাই বলেন আমাদের উলামায়ে কেরাম। আর এটাই সালফে সালেহিনদের থেকে প্রসিদ্ধ কথা। তবে এটি সব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, বরং তিলাওয়াতকারী যদি দেখে না পড়ে মুখস্থ পড়লে বেশি একাগ্রতার সাথে চিন্তা-ফিকির করে তিলাওয়াত করতে পারে তাহলে তার জন্য মুখস্থ পড়াই উত্তম। আর যদি কুরআন দেখে পড়লে বেশি একাগ্রতা পাওয়া যায় তাহলে দেখে পড়াই উত্তম। তবে যদি উভয়টি সমান সমান থাকে তাহলে দেখে পড়া উত্তম। এটিই মনীষীদের বক্তব্যের উদ্দেশ্য।
কুরআনে কারিম উচ্চস্বরে ও অনুচ্চস্বরে তিলাওয়াত করা
উচ্চস্বরে তিলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে হাদিস এসেছে এবং অনুচ্চস্বরে তিলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে ও হাদিস এসেছে। উলামায়ে কেরাম বলেন- উক্ত দুই বিরোধপূর্ণ বক্তব্যের মাঝে সমন্বয় হল, নিচু স্বরে পড়লে রিয়া তথা লোকদেখানো থেকে বাঁচা যায়। তাই যে ব্যক্তি রিয়ার আশঙ্কা করে তার জন্য নিম্নস্বরে পড়াই উত্তম। আর রিয়ার ভয় না থাকলে উচু আওয়াজে পড়া উত্তম। তবে যেন নামাজি, ঘুমন্ত বা অন্য কোন ব্যক্তির কষ্ট না হয়।
উচু আওয়াজে তিলাওয়াতের ফজিলতের দলিল হল, এতে কষ্ট বেশি হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে অন্য ব্যক্তিরও উপকার হয়। তিলাওয়াতকারী অন্তর জাগ্রত হয়। তার হিম্মত বাড়ে। চিন্তা-ফিকির করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। তার শ্রবণশক্তিও এদিকেই থাকে। ঘুম দূর হয়। উদ্দমতা বাড়ে। ঘুমন্ত ও গাফেল ব্যক্তিকে জাগিয়ে তুলে এবং তাদের মাঝে উদ্যম সৃষ্টি করে। সুতরাং এসব উদ্দেশ্য থাকলে উচু আওয়াজে তিলাওয়াত করাই উত্তম হবে।
সুন্দর আওয়াজে তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব
সুন্দর আওয়াজে তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। তবে সেটি যেন বিকৃত হয়ে তিলাওয়াতের সীমার বাইরে না যায়। যদি সীমা লঙ্ঘনের ফলে কোন হরফ বৃদ্ধি পায় বা কোন হরফ কমে যায় তাহলে হারাম হবে। আর তিলাওয়াতে সুর দেয়া, পূর্বের আলোকে যদি সীমালঙ্ঘন হয় তাহলে হারাম হবে। অন্যথায় হারাম হবে না আওয়াজ সুন্দরের বিষয়ে অনেক প্রসিদ্ধ সহিহ হাদিস রয়েছে। তিলাওয়াতকারীর আদবের অধ্যায়ে আমি কিছু আলোচনা করেছি।
সুরার মাঝখান থেকে তিলাওয়াত শুরুর ক্ষেত্রে করণীয়
সুরার মাঝখান থেকে তিলাওয়াত শুরু করলে পরস্পর সম্পর্কিত স্থানের শুরু থেকে তিলাওয়াত শুরু করা। অনুরূপভাবে ওয়াকফ তথা থামার ক্ষেত্রেও পারস্পরিক সম্পর্কিত স্থানের শেষে; যেখানে কথার শেষ হয়েছে সেখানে থামা।
তিলাওয়াত শুরু বা ওয়াকফের ক্ষেত্রে পারা, অংশ বা দশ আয়াতের কোনো শর্ত নেই। কারণ, এগুলোর বেশিরভাগই পারস্পরিক সম্পর্কিত কথার মাঝখান থেকে শুরু। অথচ অনেক মানুষই উক্ত আদবটির কথা লক্ষ্য না করে একাজটি করে থাকে। আমাদেরকে অধিকাংশ মানুষের আমল দেখে ধোঁকা খেলে চলবে না। আমাদেরকে হজরত ফুজাইল বিন ইয়াজ রাদি. এর কথা অনুযায়ী আমল করতে হবে। তিনি বলেছেন- তুমি হেদায়েতের পথের কম পথিক দেখে ভয় পেয়ো না। আর ভ্রান্তদের আধিক্যতা দেখে ধোঁকা খেয়ো না।
এ কারনেই উলামায়ে কেরাম বলেন, পূর্ণ সুরা পড়া উত্তম সে পরিমাণ বড় সুরার অংশ পড়ার চেয়ে। কারণ, অনেকেই আলোচনার শুরুর স্থান সম্পর্কে অনবগত; বরং বলা চলে বেশিরভাগ মানুষ কিছু কিছু স্থানে কোন কোন অবস্থায় এ ব্যাপারে অসতর্ক থাকে।
গর্হিত একটি বিদআত
গর্হিত বিদআত যা অনেক মূর্খ ইমাম করে থাকে। তারা সপ্তম রাতে তারাবির নামাজে শেষ রাকাতে পূর্ণ সুরা আনআম পড়ে থাকে। তারা মনে করে এটি মুস্তাহাব। তাদের ধারণা হল, এই সুরাটি এক সঙ্গে নাজিল হয়েছে। তাদের একাজে অনেকগুলো গর্হিত বিদআত হয়ে থাকে।
এক. তারা এটিকে মুস্তাহাব মনে করে, অথচ এটি একটি বিদআত।
দুই. সাধারণ মুসল্লিদের মাঝে এরূপ ধারণা সৃষ্টি করা আরেক গর্হিত কাজ।
তিন. প্রথম রাকাতের তুলনায় দ্বিতীয় রাকাত লম্বা হওয়া আরেক মন্দ কাজ।
চার. মুক্তাদিদের দীর্ঘ কিয়াম করতে বাধ্য করা।
পাঁচ. দ্রুত তিলাওয়াত করা।
ছয়. পূর্বের রাকাতগুলোকে ছোট করার জন্য খুব বেশি তাড়াহুড়া করা।
সুরা বাকারা, সুরা আলে ইমরান এভাবে সুরার নাম বলা বৈধ
সুরা বাকারা, সুরা আলে ইমরান, সুরা নিসা, সুরা আনকবুত- এভাবে সকল সুরার নাম বলা জায়েজ আছে, মাকরুহ হবে না। কেউ কেউ বলেন, এভাবে সুরার নাম বলা মাকরুহ। তারা বলেন, বরং বলতে হবে- السُّوْرَةُ الَّتِي تُذْكُرُ فِيْهَا الْبَقَرَةُ (আস সুরাতুল্লাতি তুজকারু ফিহাল বাকারা: যে সুরায় গাভীর আলোচনা রয়েছে) الَّتِي يُذْكُرُ فِيْهَا النِّسَاءُ (আল্লাতি ইয়ুজকারু فیহান্নিসা: যে সুরায় নারীদের আলোচনা রয়েছে)। এভাবে সকল সুরার নাম বলতে হবে।
তবে প্রথম অভিমতটিই সহিহ। সেটিই পূর্ববর্তী অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের অভিমত। এ বিষয়ে অগণিত হাদিস রয়েছে। অনুরূপভাবে সাহাবা ও তাবেয়িনদের বক্তব্য রয়েছে।
এমনিভাবে এটা বলাও মাকরুহ নয় যে, এটা আবু আমরের কিরাত বা ইবনে কাসিরের কিরাত অথবা তাদের ভিন্ন কারো কিরাত। আর এটাই হল পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সালাফের নিকট বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মাজহাব।
ইবরাহিম নাখায়ি রহ. থেকে বর্ণিত আছে- সাহাবায়ে কেরাম অমুকের সুন্নাত, অমুকের কিরাত বলা অপছন্দ করতেন। তবে সঠিক কথা হল, তা বলা অপছন্দনীয় নয়।
কুরআন মাজিদের কোনো অংশ ভুলে গেলে যেভাবে তা ব্যক্ত করতে হবে
আমি অমুক আয়াত বা অমুক সুরা ভুলে গেছি-এভাবে বলা মাকরুহ। বরং বলতে হবে- অমুক আয়াত বা সুরা আমার স্মৃতিবিস্মৃতি ঘটানো হয়েছে; আমাকে ভুলানো হয়েছে।
(২৮২) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَمِعَ رَجُلًا يَقْرَأُ فَقَالَ: رَحِمَهُ اللَّهُ؛ لَقَدْ أَذْكَرَنِي آيَةً، كُنْتُ أَسْقَطْتُهَا.
অর্থ: তোমাদের কেউ যেন এমন না বলে যে আমি অমুক আয়াত ভুলে গেছি, বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। -সহিহ বুখারি ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় আছে-
بِئْسَمَا لِأَحَدِهِمْ أَنْ يَقُولَ: نَسِيْتُ آيَةً كَيْتَ وَكَيْتَ بَلْ هُوَ نُسِيَ.
অর্থ: এমন বলা অনেক মন্দ যে, আমি অমুক অমুক আয়াত ভুলে গেছি, বরং তাকে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। ৪০৩
(২৮৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
لَا يَقُوْلُ أَحَدُكُمْ: نَسِيْتُ آيَةَ كَذَا وَكَذَا، بَلْ هُوَ نُسِيَ.
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির তিলাওয়াত শুনছিলেন। বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন। সে আমাকে একটি আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যা আমার স্মরণে ছিলো না। -অপর বর্ণনায় আছে- )كُنْتُ أُنْسِيتُهَا( : আমার স্মৃতি-বিস্মৃতি ঘটানো হয়েছে। ৪০৪
তিলাওয়াতের আদব বিষয়ে শেষকথা
কুরআন তিলাওয়াতকারীর অনেক আদব-কায়াদা রয়েছে। যেগুলো কয়েক ভলিয়ম ছাড়া জমা করা সম্ভব না। তবে আমরা এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ও আদব অতি সংক্ষেপে উল্লেখ করেছি। কিতাবের শুরুতেও তিলাওয়াতকারী ও জিকিরকারীর কিছু আদাব উল্লেখ করা হয়েছে। নামাজের জিকিরের মাঝে তিলাওয়াত সংক্রান্ত এক গোচ্ছ আদবের কথা বলা হয়েছে। এরচে বেশি জানতে হলে ‘আত্তিবইয়ান’ কিতাবে দেখবে, যার হাওলা আমি আগেও দিয়েছি।
সর্বদা কুরআন তিলাওয়াত করা
পূর্বে আলোচনা গেছে-কুরআন তিলাওয়াত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিকির। তাই সর্বদা তিলাওয়াত করা চাই। কোন রাত বা কোন দিন যেন কুরআন তিলাওয়াত থেকে খালি না যায়। অল্প আয়াত পড়লেও কুরআন তিলাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য হাসিল হবে।
(২৮৪) হজরত আনাস বিন মালেক রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
مَنْ قَرَأَ فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ خَمْسِيْنَ آيَةً لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِينَ، وَمَنْ قَرَأَ مِائَةُ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ الْقَانِتِينَ، وَمَنْ قَرأَ مِائَتَيْ آيَةٍ لَمْ يُحَاجِهِ الْقُرْآنُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ قَرَأَ خَمْسَمِائَةُ كُتِبَ لَهُ قِنْطَارُ مِنَ الْأَجْرِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত করবে, সে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। আর যে ব্যক্তি একশত আয়াত তিলাওয়াত করবে, সে অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি দুইশত আয়াত পড়বে, কেয়ামতের দিন কুরআন তার বিরুদ্ধে সাক্ষি দেবে না। আর যে ব্যক্তি পাঁচশত আয়াত পড়বে, তাকে এক কিনতার (এক কোটি) পরিমাণ সওয়াব দেয়া হবে। ৪০৫
অপর বর্ণনায় পঞ্চাশ আয়াতের স্থানে চল্লিশ আয়াতের কথা উল্লেখ রয়েছে। ৪০৬
আরেক বর্ণনায় ২০ আয়াতের কথা আছে। -আরেক বর্ণনায় হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি দশ আয়াত পড়বে, সে গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হবে না। ৪০৭
রাতে দিনে বিভিন্ন সুরা পড়ার বিষয়ে আমরা পূর্বে অনেক হাদিস উল্লেখ করেছি। যেমন- সুরা ইয়াসিন, সুরা মুলক, সুরা ওয়াকিয়া এবং সুরা দোখান ইত্যাদি।
(২৮৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
مَنْ قَرَأَ (يس) فِي يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ غُفِرَ لَهُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে সুরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করবে, একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। -তাঁর থেকে আরো একটি বর্ণনা রয়েছে-
مَنْ قَرَأَ سُوْرَةَ الدُّخَانِ) فِي لَيْلَةٍ أَصْبَحَ مَغْفُوْرًا لَهُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি জুমুআর রাতে সুরা দুখান পড়বে, সে ক্ষমাপ্রাপ্ত অবস্থায় সকাল করবে। -আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
مَنْ قَرَأَ سُوْرَةَ (الْوَاقِعَةِ) فِي كُلِّ لَيْلَةٍ لَمْ تُصِبْهُ فَاقَهُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া তিলাওয়াত করবে, সে কখনো দারিদ্রতার সম্মুখীন হবে না।৪০৮
-জাবের রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَنَامُ كُلَّ لَيْلَةٍ حَتَّى يَقْرَأُ (آلم تَنْزِيلُ) الْكِتَابِ، وَ (تَبَارَكَ الْمُلْكُ.
অর্থ: নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো রাত্রিবেলা ঘুমাতেন না, যতক্ষণ না তিনি আলিফ-লাম-মিম তানযিলুল কিতাব ও সুরা মুলক তিলাওয়াত করতেন। ৪০৯
(২৮৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَرَأَ فِي لَيْلَةِ إِذَا زُلْزِلَتِ الْأَرْضُ كَانَتْ لَهُ كَعِدْلِ نِصْفِ الْقُرْآنِ، وَمَنْ قَرَأَ (يَا أَيُّهَا الْكَافِرُوْنَ كَانَتْ لَهُ كَعِدْلِ رُبْعِ الْقُرْآنِ، وَمَنْ قَرَأَ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ) كَانَتْ لَهُ كَعِدْلِ ثُلُثِ الْقُرْآنِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা যিলযাল পড়ল, সে যেন অর্ধ কুরআন পড়ল। আর যে ব্যক্তি সুরা কাফিরুন পড়ল, সে যেন এক চতুর্থাংশ কুরআন পড়ল। আর যে ব্যক্তি সুরা ইখলাস পড়ল, সে যেন এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ল। ৪১০
(২৮৭) অপর বর্ণনায় রয়েছে-
مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ، وَأَوَّلُ (حم) عُصِمَ ذَلِكَ الْيَوْمَ مِنْ كُلِّ سُوْءٍ.
অর্থ: যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসী ও হা-মীম তিলাওয়াত করবে, সে ঐ দিন সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। ৪১১
এধরনের আরো অনেক হাদিস রয়েছে। এখানে শুধু উদ্দেশ্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলাই সঠিক বিষয় সম্পর্কে ভালো জানেন। তিনিই প্রশংসা ও কল্যাণের মালিক। তিনিই তাওফিক দান করেন এবং হেফাজত করেন।
টিকাঃ
৪০৩. সহিহ বুখারি: ৫৩২, সহিহ মুসলিম: ৭৯০, সুনানে তিরমিজি: ২৯৪৩, সুনানে নাসাঈ ২/১৫৪।
৪০৪. সহিহ বুখারি: ৫০৩৭, সহিহ মুসলিম: ৭৮৮, সুনানে আবু দাউদ: ১৩২৯।
৪০৫. ইবনুস সুন্নি: ৬৭৬।
৪০৬. ইবনুস সুন্নি: ৬৭২।
৪০৭. ইবনুস সুন্নি: ৭০২।
৪০৮. সুনানে বায়হাকি: ২৪৯৮।
৪০৯. সুনানে তিরমিজি: ২৮৯২।
৪১০. ইবনুস সুন্নি: ৬৮৬। হাদিসটি দুর্বল।
৪১১. ইবনুস সুন্নি: ৬৯২। হাদিসটি দুর্বল।