📘 আল আযকার > 📄 নির্দিষ্ট সময়ে কুরআন মাজিদ খতম করা

📄 নির্দিষ্ট সময়ে কুরআন মাজিদ খতম করা


দিনে-রাতে, ঘরে-বাইরে, দেশে-বিদেশে সবসময় কুরআন তিলাওয়াতের প্রতি যত্নবান হওয়া চাই। পূর্ববর্তী মহান মনীষীদের কুরআন খতমের একটি নির্দিষ্ট সময় থাকতো। তারা উক্ত সময়ে কুরআন খতম করতেন। তাদের কেউ কেউ দুই মাসে এক খতম পড়তেন। কেউ কেউ এক মাসে এক খতম পড়তেন। কেউ কেউ প্রতি দশ রাতে এক খতম পড়তেন। কেউ কেউ প্রতি আট রাতে এক খতম পড়তেন। কেউ কেউ প্রতি সাত রাতে এক খতম পড়তেন। এটিই বেশিরভাগ মনীষীদের অভ্যাস ছিলো।
আবার কেউ কেউ ছয় রাতে এক খতম পড়তেন। কেউ কেউ পাঁচ রাতে এক খতম পড়তেন। কেউ কেউ চার রাতে এক খতম পড়তেন।
অনেকেই আবার তিনরাতে এক খতম পড়তেন। অনেকেই একদিন একরাতে এক খতম পড়তেন। একদল মনীষী একদিন একরাতে দুই খতম পড়তেন। আবার কেউ কেউ একদিন একরাতে তিন খতম পড়তেন। আবার এমনও ছিলো যে, রাতে-দিনে মিলিয়ে আট খতম পড়তেন। দিনে চার খতম এবং রাতে চার খতম। সাইয়েদ জালিল ইবনুল কাতিব সুফি রহ. দিনে-রাতে আট খতম কুরআন পড়তেন। এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যা; দিনে-রাতে এরচে বেশি খতমের বর্ণনা আমরা পাইনি।
সাইয়েদ আহমাদ দাওরাকি রহ. তার সূত্রে আবেদ তাবেয়ি মানসুর বিন যাজান থেকে বর্ণনা করেন- তিনি জোহর ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে কুরআন শরিফ খতম করতেন। মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়েও এক খতম করতেন। রমজান মাসে মাগরিব ও ইশার মাঝে দুই খতম ও কিছু অংশ বেশি পড়তেন। সেসময় তারা রমজান মাসে ইশার নামাজ রাতের এক চতুর্থাংশ অতিবাহিত হওয়ার পর পড়তেন।
ইমাম আবু দাউদ রহ. বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেন- মুজাহিদ রহ. রমজান মাসে মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে এক খতম কুরআন মাজিদ তিলাওয়াত করতেন।
প্রতি এক রাকাত নামাজে অনেকেই কুরআন খতম করতেন। তাদের সংখ্যা অনেক, অগণিত। তাদের মাঝে রয়েছেন হজরত উসমান বিন আফফান রাদি., হজরত তামিম দারি রাদি. এবং হজরত সাঈদ বিন যুবায়ের রাদি.।
আসল কথা হল, ব্যক্তির ভিন্নতার কারণেই কুরআন খতমের সময়ের বিষয়ে এরূপ ভিন্নতা হয়েছে। প্রত্যেকে নিজের সম্পর্কে চিন্তা করে দেখবে- কতটুকু সময়ে কি পরিমাণ কুরআন শরিফ বোঝে-শোনে পড়তে পারবে। সে অনুযায়ীই একটি রুটিন করে নেবে।
আর যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীন প্রচার কাজে বা মুসলমানদের বিচার কাজে অথবা এজাতীয় জনকল্যাণমূলক কাজে নিয়োজিত সে এতটুকু পরিমাণ তিলাওয়াত করবে, যেন তার সেসব কাজে কোন ধরনের ব্যাঘাত না ঘটে আবার কুরআন শরিফের হকও আদায় হয়।
আর যারা এরূপ কাজে নিয়োজিত নয় তারা বেশি থেকে বেশি কুরআন তেলাওয়াত করবে। তবে তা যেন বিতৃষ্ণা সৃষ্টিকারী না হয় এবং অতিদ্রুত তিলাওয়াত না হয়।
পূর্ববর্তী উলামায়ে কেরামের একটি জামাত একদিন একরাতে কুরআনে কারিম খতম করাকে মাকরুহ মনে করেন। তাদের দলিল হল-
(২৭০) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. হতে সহিহ সূত্রে বর্ণিত আছে, নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
لَا يَفْقَهُ مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ فِي أَقَلَّ مِنْ ثَلَاثٍ.
অর্থ: যে ব্যক্তি তিনদিনের কম সময়ে কুরআনে কারিম খতম করে, সে কিছুই বুঝতে পারে না। ৩৯১

টিকাঃ
৩৯১. সুনানে আবু দাউদ: ১৩৯৪, সুনানে তিরমিজি: ২৯৫০, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৪৭।

📘 আল আযকার > 📄 তিলাওয়াতের শ্রেষ্ঠ সময়

📄 তিলাওয়াতের শ্রেষ্ঠ সময়


নামাজে তিলাওয়াত হচ্ছে শ্রেষ্ঠ তিলাওয়াত। ইমাম শাফেয়ি ও অন্যান্য ইমামদের মাজহাব হল, নামাজে দীর্ঘ রুকু-সেজদা করার চেয়ে দীর্ঘ কিরাতের মাধ্যমে কিয়াম দীর্ঘ করা উত্তম। নামাজের বাইরে রাতের তিলাওয়াত উত্তম। রাতের শুরুর ভাগের চেয়ে শেষ ভাগে তিলাওয়াত করা উত্তম। মাগরিব ও ইশার মাঝে কুরআন তিলাওয়াত করা ভালো।
দিনের তিলাওয়াতের মাঝে ফজরের পর পড়া সবচেয়ে উত্তম। কুরআন তিলাওয়াত যে কোন সময় করা যাবে; মাকরুহ হবে না। এমনকি নামাজের নিষিদ্ধ সময়গুলোতেও মাকরুহ হবে না।
আর ইবনে ইমাম আবু দাউদ রহ. হজরত মুআজ বিন রিফায়াহ রহ. এর সূত্রে তাঁর শায়খদের যে কথা বর্ণনা করেছেন। মুআজের শায়েখগণ আসরের পর তিলাওয়াত করা মাকরুহ মনে করতেন; তাঁরা বলতেন এটি ইহুদিদের পাঠের সময়- এ কথা অগ্রহণযোগ্য। এর কোন ভিত্তি নেই।
তিলাওয়াতের জন্য জুমুআর দিন, সোমবার, বৃহস্পতিবার ও আরাফার দিনকে নির্বাচন করা যায়। আর দশকের হিসাবে যিলহজ মাসের প্রথম দশক ও রমজান মাসের শেষ দশককে নির্বাচন করা যায়। আর মাসের হিসাবে রমজান মাসকে নির্বাচন করা যায়।

টিকাঃ
৩৯২. মুসনাদে দারিমি: ৩৫২৬।

📘 আল আযকার > 📄 কুরআন খতম করার আদব ও দুআ

📄 কুরআন খতম করার আদব ও দুআ


কুরআন খতম করার আদব ও তৎসংশ্লিষ্ট বিষয়
পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে, একাকী তিলাওয়াতকারীর জন্য নামাজে তিলাওয়াত করাই উত্তম। আর নামাজের বাইরে খতম করলে, যেমন যারা এক সঙ্গে জমায়েত হয়ে কুরআন খতম করে; তাদের জন্য উত্তম হলো, রাতের শুরুর ভাগে বা দিনের শুরুর ভাগে কুরআন খতম করা। কুরআন খতমের দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। তবে যদি সে দিনটি নিষিদ্ধ দিন হয় তাহলে রোজা রাখা যাবে না।
তালহা রহ., মুসাইব রহ. ও হাবিব রহ. থেকে বর্ণিত আছে- তারা কুরআন খতমের দিন রোজা রাখতেন। খতমে কুরআনের মজলিসে যারা কুরআন পড়তে পারে এবং যারা পারে না সকলেরই উপস্থিত থাকা চাই।
(২৭২) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে-
أَمْرُ الْحَيَّضَ بِالْخُرُوجِ يَوْمَ الْعِيدِ لَيَشْهَدَنِ الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْمُسْلِمِينَ.
অর্থ: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঋতুস্রাব অবস্থায় মহিলাদের ঈদগাহে যেতে আদেশ করতেন, যেন তারা কল্যাণকর কাজে শরিক হতে পারে এবং মুসলমানদের সঙ্গে দুআয় শরিক হতে পারে। ৩৯৩
(২৭৩) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. হতে বর্ণিত আছে, কুরআন তিলাওয়াতকারীকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য তিনি এক ব্যক্তিকে নিযুক্ত করতেন। যখন তিলাওয়াতকারী কুরআন খতম করতেন তখন ঐ ব্যক্তি আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে সংবাদ দিতেন। ফলে তিনি কুরআন খতমের মজলিসে এসে উপস্থিত হতেন। ৩৯৪
(২৭৪) হজরত আনাস রাদি. এর শাগরেদ বিশিষ্ট তাবেয়ি ইমাম কাতাদা রহ. বর্ণনা করেন যে, হজরত আনাস রাদি. যখন কুরআন খতম করতেন, তখন পরিবারবর্গকে একত্র করে দুআ করতেন। ৩৯৫
সহিহ সনদে বিশিষ্ট তাবেয়ি হাকাম বিন উতাইবা রহ. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মুজাহিদ ও আবদাহ বিন আবু লাইলা রহ. আমার কাছে এসে বললেন, আমরা আপনার কাছে এসেছি কুরআন খতম করার জন্য। কুরআন খতমের সময় দুআ কবুল হয়।
অপর বর্ণনায় আছে- হাকাম বিন উতবা রহ. বলতেন, কুরআন খতমের সময় দুআ কবুল হয়। মুজাহিদ রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে- সাহাবায়ে কেরাম কুরআন খতমের সময় একত্রিত হতেন। তাঁরা বলতেন, কুরআন খতমের সময় আল্লাহর রহমত নাজিল হয়।
কুরআন খতমের পর দুআ করা গুরুত্বপূর্ণ মুস্তাহাব আমল
কুরআন খতমের পরে দুআ করা গুরুত্বপূর্ণ একটি মুস্তাহাব আমল। পূর্বের অধ্যায়ে এ সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে।
(২৭৫) হজরত হুমাইদ আরাজ রহ. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন-
مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ ثُمَّ دَعَا أَمَّنَ عَلَى دَعَائِهِ أَرْبَعَةُ آلَافُ مَلَكِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি কুরআন খতমের পর দুআ করে, তার দুআতে চার হাজার ফেরেশতা আমিন আমিন বলতে থাকেন। ৩৯৬
দুআর কতিপয় আদব
দুআয় কাকুতি-মিনতি করা। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুআ করা। ব্যাপক অর্থবোধক শব্দে দুআ করা। দুআ করা পরকালের বিষয়ে; মুসলমানদের বিষয়ে; মুসলমানদের রাষ্ট্রপ্রধানের বিষয়ে; সকল আমির-উমারাদের বিষয়ে; তাদের আনুগত্যের বিষয়ে; তাদের অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার বিষয়ে; ভালো ও তাকওয়ার কাজে সহযোগিতার বিষয়ে; সত্য প্রতিষ্ঠা ও সত্যের ওপর সকলেই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে; ধর্মের শত্রু ও সকল বিরুদ্ধচারীদের ওপর বিজয় লাভের বিষয়ে।
আমি 'আদাবুল কুরা' নামক কিতাবে এবিষয়ে কিছু ইঙ্গিত দিয়েছি। সেখানে ছোট একটি দুআও উল্লেখ করেছি। কেউ চাইলে সেখান থেকে মুখস্ত করে নেবে।
খতম থেকে ফারেগ হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আরেক খতম শুরু করে দেয়া মুস্তাহাব। পূর্ববর্তী মহান মনীষীগণ এটিকে মুস্তাহাব বলেছেন। তারা দলিল পেশ করেন নিচের হাদিসটি দিয়ে-
(২৭৬) হজরত আনাস রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
خَيْرُ الأَعْمَالِ الْحَلَّ وَالرِّحْلَةُ، قِيْلَ: وَمَا هُمَا؟ قَالَ: افْتِتَاحُ الْقُرْآنَ وَخَتْمَهُ.
অর্থ: সর্বোত্তম আমল হল, হিল ও রিহলা। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! হিল ও রিহলা কি? তিনি বললেন, কুরআনে কারিম খতম করা ও শেষ করা। ৩৯৭

টিকাঃ
৩৯৩. সহিহ বুখারি: ৯৭৪, সহিহ মুসলিম: ৮৯০, সুনানে আবু দাউদ: ১১৩৬, সুনানে তিরমিজি: ৫৩৯, সুনানে নাসাঈ ৩/১৮০-১৮১।
৩৯৪. সুনানে দারিমি: ৩৫১৫। হাদিসটি আমলযোগ্য দুর্বল।
৩৯৫. আলফুতুহাত ৩/২৪৪। মওকুফ সহিহ হাদিস।
৩৯৬. সুনানে দারিমি ২/৪৭০। হাদিসটি আমলযোগ্য দুর্বল।
৩৯৭. সুনানে তিরমিজি: ২৯৩৯। হাদিসটি আমলযোগ্য দুর্বল।

📘 আল আযকার > 📄 রাতের অজিফা না পড়ে ঘুমিয়ে গেলে করণীয়

📄 রাতের অজিফা না পড়ে ঘুমিয়ে গেলে করণীয়


(২৭৭) হজরত উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ نَامَ عَنْ حِزْبِهِ مِنَ اللَّيْلِ، أَوْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ، فَقَرَأَهُ فِيْمَا بَيْنَ صَلَاةِ الْفَجْرِ وَصَلَاةِ الظُّهْرِ كُتِبَ لَهُ كَأَنَّمَا قَرَأَهُ مِنَ اللَّيْلِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি রাতের অজিফা বা কিছু অংশ না পড়ে ঘুমিয়ে যায়, অতঃপর তা ফজর ও জুহরের নামাজের মধ্যবর্তী সময়ে আদায় করে নেয়, তাহলে রাতে পড়েছে বলেই গণ্য হবে। ৩৯৮

টিকাঃ
৩৯৮. সহিহ মুসলিম: ৭৪৭।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন