📄 সালাম ফেরানো
নামাজ শেষ করার জন্য সালাম দেয়া
নামাজ থেকে বের হওয়ার জন্য সালাম দেয়া নামাজের রুকন ও ফরজ। সালাম ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হবে না। প্রসিদ্ধ তিন ইমাম তথা ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ রহ. ও অধিকাংশ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উলামায়ে কেরামের মতে সালাম ফরজ। এবিষয়ে সহিহ ও প্রসিদ্ধ হাদিসে বিষয়টি সুস্পষ্ট। ২৪৪
সালামের ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হল, ডান এবং বাম দিকে ফিরে বলবে-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَרَحْمَةُ اللهِ.
উচ্চারণ: আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
অর্থ: আপনাদের ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
এর সাথে وَبَرَكَاتُهُ )ওয়া বারাকাতুহ: আর তার বরকত) বলা মুস্তাহাব নয়। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের থেকে প্রসিদ্ধ সূত্রে এমনটি বর্ণিত নেই। যদিও সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় তা এসেছে। শাফেয়ি কোন কোন উলামায়ে কেরাম তা পড়ার কথা বলেছেন। যেমন, ইমামুল হারামাইন, জাহের সারাখসি, রুয়ানি। কিন্তু প্রকৃত কথা হল উক্ত রেওয়াতটি শায। প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত হল, তা না বলা।
ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামাজি ব্যক্তি, ছোট জামাত বা বড় জামাত, ফরজ বা নফল নামাজে তথা সর্বাবস্থায় উল্লিখিত পদ্ধতিতে দুই সালাম দেবে। সালাম ফেরানোর সময় ডান পাশ ও বাম পাশে ফিরবে।
ওয়াজিব হল, এক সালাম ফেরানো। আর দ্বিতীয় সালামটি সুন্নাত। দ্বিতীয় সালাম না দিলে নামাজের কোন ক্ষতি হবে না
সালামের যে শব্দ বলা ওয়াজিব: এভাবে বলবে- اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আস্সালামু আলাইকুম), এ পর্যন্ত বলা ওয়াজিব। যদি سَلَامٌ عَلَيْكُمْ (সালামুন আলাইকুম) বলে তাহলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী নামাজ হবে না। যদি عَلَيْكُمُ السَّلَامُ (আলাইকুমুস সালাম) বলে তাহলে নামাজ সঠিক হবে।
আর যদি اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ (আসসালামু আলাইকা: তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলে অথবা سَلَائِي عَلَيْكَ (সালামি আলাইকা: তোমার ওপর আমার শান্তি বর্ষণ) বা سَلَائِي عَلَيْكُمْ (সালামি আলাইকুম: তোমাদের ওপর আমার শান্তি বর্ষণ) বা سَلَامُ اللهِ عَلَيْكُمْ (সালামুল্লাহি আলাইকুম: তোমাদের ওপর আল্লাহর শান্তি বর্ষণ) বা سَلَامُ عَلَيْكُمْ (সালামু আলাইকুম) তানভিন ছাড়া বা اَلسَّلَامُ عَلَيْهِمْ (আসসালামু আলাইহিম: তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)- এগুলোর কোনটির মাধ্যমেই সালাম সহিহ হবে না। ইচ্ছাকৃত এমন করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে اَلسَّلَامُ عَلَيْهِمْ (আসসালামু আলাইহিম: তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) বললে নামাজ নষ্ট হবে না। কেননা এটা দুআ। আর যদি ভুলক্রমে বলে তাহলে নামাজ বাতিল হবে না এবং এর ফলে নামাজ থেকে বেরও হতে পারবে না। বরং নামাজ থেকে বের হওয়ার জন্য নতুন করে সঠিকভাবে সালাম দিতে হবে। যদি ইমাম কেবলমাত্র একদিকে সালাম দেয়, তাহলে মুক্তাদিরা উভয় দিকে সালাম দেবে।
কাজি আবু তাইয়েব তাবারি রহ. বলেন, ইমাম সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদিরা চাইলে ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরাবে বা দুআ ইত্যাদি পড়ে বৈঠককে আরো দীর্ঘ করবে। ২৪৫
নামাজি ব্যক্তির সঙ্গে কেউ কথা বললে নামাজি ব্যক্তির করণীয়
(১৪৭) হজরত সাহল বিন সাদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি নামাজের মধ্যে অকস্মাৎ কিছু ঘটে তাহলে বলবে-
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
অন্য বর্ণনায় আছে-
إِذَا نَابَكُمْ أَمْرُ فَلْيُسَبِّحُ الرِّجَالُ ، وَلْتَصْفِقِ النِّسَاءُ.
অর্থ: নামাজের মধ্যে অকস্মাৎ কিছু ঘটলে পুরুষরা 'সুবহানাল্লাহ' বলবে, আর মহিলারা ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর মারবে।
- অন্য বর্ণনায় আছে-
التَّسْبِيحُ لِلرِّجَالِ وَالتَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ.
অর্থ: তাসবিহ তথা সুবহানাল্লাহ বলা পুরুষদের জন্য, আর ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর মারা মহিলাদের জন্য। ২৪৬
টিকাঃ
২৪৪. হানাফিদের নিকট তা ফরজ নয়; বরং ওয়াজিব। তাই সালাম ছাড়া অন্য কোনভাবে নামাজ থেকে বের হলেও নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে ওয়াজিব তরক করার কারণে তাকে পুণরায় নামাজটি পড়া ওয়াজিব। (হেদায়া ১/১১৪)
২৪৫. হানাফিদের মতে মুক্তাদি ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরাবে। কারণ, ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। তবে যদি মুক্তাদির তাশাহুদ পড়া বাকি থাকে, তাহলে তাশাহুদ শেষ করে সালাম ফেরাবে। কারণ, তাশাহুদও ওয়াজিব।
২৪৬. সহিহ বুখারি: ৬৮৪, সহিহ মুসলিম: ৪২১, সুনানে আবু দাউদ: ৯৪০, মুয়াত্তা মালেক ১/১৬৩- ১৬৪, সুনানে নাসাঈ ২/৭৭-৭৮।
📄 নামাজের পর জিকির ও দুআ
উলামায়ে কেরামের মতে নামাজের পর জিকির মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে নানান বিষয়ে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হল-
(১৪৮) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত-
قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ؟ قَالَ: جَوْفَ اللَّيْلِ الْآخِرَ، وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাস করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ, কোন সময় দুআ বেশি কবুল হয়? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শেষ রাতের দুআ ও ফরজ নামাজ সমাপ্ত করার পরের দুআ।– তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ২৪৭
(১৪৯) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
كُنْتُ أَعْرِفُ انْقِضَاءَ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالتَّكْبِيرِ.
অর্থ: আমি তাকবিরের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজ শেষ হয়েছে বুঝতে পারতাম।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ رَفْعَ الصَّوْتِ لِلذِّكْرِ حِيْنَ يَنْصَرِفُ النَّاسُ مِنَ الْمَكْتُوْبَةِ كَانَ ذَلِكَ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَأَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ قَالَ : كُنْتُ أَعْلَمُ إِذَا انْصَرَفُوْا بِذَالِكَ وَأَسْمَعُهُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ফরজ নামাজের পর লোকেরা উচু আওয়াজে তাকবির ধ্বনি দিতো। অন্য বর্ণনায় আছে- ইবনে আব্বাস রাদি. বলেন, তাকবির ধ্বনির আওয়াজ শোনে আমি বোঝতে পারতাম যে, তাদের নামাজ শেষ হয়েছে। ২৪৮
(১৫০) হজরত সাওবান রাদি. -এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ শেষ করতেন, তখন তিনবার ইস্তিগফার করতেন। এরপর নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু, তাবারাকতা ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি দোষ-ত্রুটি থেকে চির মুক্ত, নিরাপত্তার মালিক। আপনার কাছ থেকেই আসে নিরাপত্তা। আপনি মহিমাময়, প্রতাপ ও অনুগ্রহের অধিকারী।
এই হাদিসের একজন বর্ণনাকারী ইমাম আওযাঈ রাহিমাহুল্লাহুকে জিজ্ঞাসা করলেন- কীভাবে তিনি ইস্তিগফার করতেন? তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اسْتَغْفِرُ اللهَ، أَسْتَغْفِرُ اللهِ.
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ।
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। ২৪৯
(১৫১) হজরত মুগিরা বিন শুবা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ শেষ করতেন তখন নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الْجَدُّ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহ, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল Hamdu ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়ন কাদির। আল্লাহুম্মা লা মানিআ লিমা আতাইতা ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা ইয়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। কেউ আপনার দান রোধ করতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। ২৫০
(১৫২) হজরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন। আর বলতেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি নামাজের পর এগুলো পড়তেন। দুআটি এই-
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যิน কাদির। লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুন নি’মাতু ওয়ালাহুল ফাদলু, ওয়ালাহুস সানাইল হাসান, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসিনা লাহুদ্দিন, ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন।
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহ, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়ন কাদির। লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আযিযিল হাকিম। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুন্নিমাতু ওয়া লাহুল ফাদলু, ওয়া লাহুস সানাউল হাসান। লা ইলাহা ইল্লাহু মুখলিসিনা লাহুদ্দিন, ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। প্রজ্ঞাময় পরাক্রমশালী আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই। একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই, আমরা তাকে ছেড়ে কারো উপাসনাও করি না। সব নেয়ামত তার, সকল অনুগ্রহ তার এবং সুপ্রশংসাও কেবল তার। একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই। আমরা খাঁটি অন্তরে তা স্বীকার করি, কাফেররা যতই একে খারাপ মনে করুক। ২৫১
(১৫৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ فُقَرَاءَ الْمُهَاجِرِينَ أَتَوْا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالدَّرَجَاتِ الْعُلَا وَالنَّعِيمِ الْمُقِيمِ، فَقَالَ: وَمَا ذَاكَ؟ قَالُوا : يُصَلُّوْنَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُوْمُوْنَ كَمَا نَصُوْمُ، وَيَتَصَدَّقُوْنَ وَلَا نَتَصَدَّقُ، وَيُعْتِقُوْنَ وَلَا نُعْتِقُ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفَلَا أُعَلِّمُكُمْ شَيْئًا تُدْرِكُوْنَ بِهِ مَنْ سَبَقَكُمْ، وَتَسْبِقُوْنَ بِهِ مَنْ بَعْدَكُمْ، وَلَا يَكُوْنُ أَحَدٌ أَفْضَلَ مِنْكُمْ إِلَّا مَنْ صَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُمْ؟ قَالُوا : بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ: تُسَبِّحُوْنَ، وَتُكَبِّرُوْنَ، وَتَحْمَدُوْنَ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ.
অর্থ: তিনি বলেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ রাসুলের কাছে এসে বললেন, ধনী সাহাবায়ে কেরাম উচু মর্যাদা, স্থায়ী নেয়ামত লাভ করছেন- আমরা যেমন নামাজ পড়ি, তারাও নামাজ পড়ে। আমরা যেমন রোজা রাখি, তারাও রোজা রাখে। তবে তাদের রয়েছে অতিরিক্ত ধন-সম্পদ যা দ্বারা তারা হজ্ব, উমরা করে, জিহাদে অংশ নেয় এবং দান করে (এগুলো দিয়ে তারা আমাদের থেকে এগিয়ে যাচ্ছে)। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন আমল বলে দেব যদ্দারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমান হতে পারবে এবং যারা তোমাদের পরে আছে তাদের থেকে এগিয়ে যেতে পারবে। তোমাদের থেকে উত্তম আর কেউ হতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, তারা হতে পারবে যারা এই আমল করবে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা প্রত্যেক ফরজ নামাজান্তে ৩৩ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলবে। ২৫২
(১৫৪) হজরত কাব বিন উজরা থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مُعْقِبَاتُ لَا يَخِيبُ قَائِلُهُنَّ - أَوْ فَاعِلُهُنَّ - دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ : ثَلَاثُ وَثَلَاثُوْنَ تَسْبِيحَةً، وَثَلَاثُ وَثَلَاثُوْنَ تَحْمِيدَةً، وَأَرْبَعُ وَثَلَاثُوْنَ تَكْبِيرَةً.
অর্থ: ফরজ নামাজের শেষে তাসবিহ পাঠকারী ব্যক্তি নিষ্ফল হয় না। আর তা হল, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া। ২৫৩
(১৫৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
مَنْ سَبَّحَ اللَّهَ فِي دُبُرِ كُلَّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَحَمِدَ اللَّهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَكَبَّرَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَقَالَ تَمَامَ الْمِائَةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ، غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলে এবং একশত বার পূর্ণ হওয়ার পর নিম্নোক্ত দুআ পড়ে, তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। দুআটি এই-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। ২৫৪
(১৫৬) হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি ফরজ নামাজের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمَرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল যুবনি, ওয়া আউজুবিকা আন উরাদ্দা ইলা আরজালিল উমুরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ্দুনয়া ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবর।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি কাপুরুষতা থেকে পানাহ চাই। একদম বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে পানাহ চাই। দুনিয়ার ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই। কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। ২৫৫
(১৫৭) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
خَصْلَتَانِ - أَوْ خَلَّتَانِ - لَا يُحَافِظُ عَلَيْهِمَا عَبْدُ مُسْلِمٌ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ، هُمَا يَسِيرُ، وَمَنْ يَعْمَلُ بِهِمَا قَلِيلٌ ؛ يُسَبِّحُ فِي دُبُرِ كُلَّ صَلَاةٍ عَشْرًا، وَيَحْمَدُ عَشْرًا، وَيُكَبِّرُ عَشْرًا، فَذَالِكَ خَمْسُوْنَ وَمِائَةٌ بِاللِّسَانِ، وَأَلْفُ وَخَمْسُمِائَةٍ فِي الْمِيزَانِ. وَيُكَبِّرُ أَرْبَعًا وَثَلَاثِينَ إِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهُ، وَيَحْمَدُ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَيُسَبِّحُ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، فَذَالِكَ مِائَةٌ بِاللِّسَانِ وَأَلْفُ فِي الْمِيزَانِ. فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْقِدُهَا بِيَدِهِ ، قَالُوا : يَا رَسُوْلَ اللهِ، كَيْفَ هُمَا يَسِيرُ وَمَنْ يَعْمَلُ بِهِمَا قَلِيلُ؟ قَالَ: يَأْتِي أَحَدَكُمْ - يَعْنِي الشَّيْطَانَ - فِي مَنَامِهِ فَيُنَوِّمُهُ قَبْلَ أَنْ يَقُوْلَهُ، وَيَأْتِيْهِ فِي صَلَاتِهِ فَيُذَكِّرُهُ حَاجَةً قَبْلَ أَنْ يَقُوْلَهَا.
অর্থ: কোন মুসলমান ব্যক্তি দুটি আমলের প্রতি যত্নবান হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমল দুটি অতি সহজ এবং এর ওপর আমলকারী খুবই কম। ১ম আমল হল, প্রতি ফরজ নামাজের পর ১০বার সুবহানাল্লাহ পড়া, ১০বার আলহামদুলিল্লাহ পড়া এবং ১০ আল্লাহু আকবার বলা। পাঁচ ওয়াক্ত মিলে ১৫০ বার হয়, যা যবানে ১৫০ বার হলেও মিযানে হয় এক হাজার পাঁচশত বার। ২য় আমল হল, ঘুমানোর সময় ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার। যবানে যদিও ১০০ শত হয়, কিন্তু দাড়িপাল্লায় তা এক হাজার পরিমাণ সওয়াব।
ইবনে উমর রাদি. বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাতে গণনা করে পড়তে দেখেছি। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, কীভাবে এটি সহজ কিন্তু আমলকারী কম? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঘুমানোর সময় শয়তান তোমাদের কাছে আসে, আর এই তাসবিহগুলো পড়ার পূর্বেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আবার নামাজের পর এসে তোমাদের বিভিন্ন হাজতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, ফলে এগুলো পড়া হয় না। ২৫৬
(১৫৮) হজরত উকবা বিন আমের রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَمَرَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَقْرَأَ بِالْمُعَوَّذَتَيْنِ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ.
অর্থ: তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়তে বলেছেন। ২৫৭
- সুনানে আবু দাউদের এক বর্ণনায় اَلْمُعَوَّذَاتُ )আল-মুআউয়িজাত) শব্দটি এসেছে, তাই উক্ত দুটিসহ সুরা এখলাসও পড়া চাই।
(১৫৯) হজরত মুআজ রাদি. থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ধরে বললেন, হে মুয়াজ! আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে মহব্বত করি। হে মুয়াজ! আমি তোমাকে ওসিয়ত করছি, প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তে ভুলবেন না-
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা যিকরিকা ওয়া শোকরিকা ওয়াহুসনি ইবাদাতিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি জিকির, শোকর ও সুন্দর ইবাদতের ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাই। ২৫৮
(১৬০) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষ করে ডান হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মুছতেন, এরপর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
أَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ اللَّهُمَّ أَذْهِبْ عَنِّي الْهَمَّ وَالْحَزَنِ.
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর রাহমানির রাহিম। আল্লাহুম্মা আজহিব আন্নিল হাম্মা ওয়াল হাযান।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি অতি দয়ালু পরম করুণাময়। হে আল্লাহ, আমার টেনশন ও চিন্তা দূর করে দাও। ২৫৯
(১৬১) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি ফরজ ও নফল নামাজে যখনই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হতাম, তাঁকে নিম্নোক্ত দুআ পড়তে শুনতাম-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَخَطَايَايَ كُلَّهَا، اَللَّهُمَّ انْعِشْنِي وَاجْبُرْنِي، وَاهْدِنِي لِصَالِحَ الْأَعْمَالِ وَالْأَخْلَاقِ، إِنَّهُ لَا يَهْدِي لِصَالِحِهَا وَلَا يَصْرِفُ سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি জুনুবি ওয়া খাতায়াইয়া কুল্লাহা, আল্লাহুম্মান আ'শনি ওয়ায বুরনি ওয়াহ দিনি লি সালিহিল আমালি ওয়াল আখলাক, ইন্নাহু লা ইয়াহদি লি সালিহিহা ওয়া ইয়াসরিফু সাইয়িহিহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার সকল পাপ মার্জনা করে দাও। আমাকে তাওফিক দাও, সাহায্য করো। আমাকে সচ্চরিত্র ও নেক আমলের প্রতি পথনির্দেশ করো। তুমি ব্যতীত অন্য কেউ নেক আমল করার ও বদ আমল থেকে বেঁচে থাকার হেদায়েত করতে পারে না। ২৬০
(১৬২) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ থেকে ফারেগ হতেন তখন এই দুআটি পড়তেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই দুআ সালামের আগে বলতেন নাকি পরে বলতেন আমার স্মরণ নেই। দুআটি এরকম-
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ، وَسَلَامُ عَلَى الْمُرْسَلِينَ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ.
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইজ্জাতি আম্মা ইয়াসিফুন, ওয়া সালামুন আলাল মুসরালিন, ওয়াল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
অর্থ: পবিত্র আপনার পরওয়ারদিগারের সত্তা, তারা যা বর্ণনা করে তিনি তা থেকে সম্মানিত ও পবিত্র। নবিদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর নিমিত্ত। ২৬১
(১৬২ সংযুক্ত) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষ করে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمُرِي آخِرَهُ، وَخَيْرَ عَمَلِي خَوَاتِمَهُ، وَاجْعَلْ خَيْرَ أَيَّامِي يَوْمَ أَلْقَاكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আল খায়রা উমরি আখেরাহ, ওয়া খাইরা আমালি খাওয়াতিমা, ওয়াজ আল খাইরা আইয়্যামি ইয়াওমা উলকাক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার শেষ জীবনকে ভালো করো, শেষ আমলকে ভালো করো, তোমার সঙ্গে সাক্ষাতের দিনটিকে আমার সেরা দিনে পরিণত করো। ২৬২
(১৬৩) হজরত আবু বাকরা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাজের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি ওয়া আযাবিল কাবরি।
অর্থ: হে আল্লাহ, কুফর, দারিদ্রতা ও কবরের আজাব থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই। ২৬৩
(১৬৩) হজরত ফাযালা বিন উবায়দুল্লাহ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ ؛ فَلْيَبْدَأُ بِتَحْمِيدِ اللهِ وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ يُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَدْعُوْ بِمَا شَاءَ.
অর্থ: নামাজ শেষে তোমরা প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করো, এরপর গুণকীর্তন করো, নবির ওপর দরুদ পড়ো। এরপর তোমাদের যা কিছু চাওয়ার তা তোমরা চাও। ২৬৪
ফজরের নামাজের পর আল্লাহর জিকির
দিনের বেলায় জিকিরের উত্তম সময় হল ফজরের নামাজের পর。
(১৬৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ صَلَّى الْفَجْرِ فِي جَمَاعَةٍ، ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرٍ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ، تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ.
অর্থ: যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামাজ পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে বসে জিকির করে। এরপর দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তার সওয়াব হবে পরিপূর্ণ এক হজ ও উমরার সমপরিমাণ। তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ২৬৫
(১৬৬) হজরত আবু জর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর কারো সাথে কথা বলার পূর্বে আপন জাগায় বসে নিম্নোক্ত দুআ দশবার পড়বে তার জন্য দশটি নেকি লেখা হবে, দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। সে ঐদিন সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকবে। শয়তান থেকে নিরাপদে থাকবে। ঐ দিন শিরিক ছাড়া অন্য কেনো গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হবে না। দুআটি নিম্নরূপ:
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِ وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহয়ি ওয়াইয়ূ মিতু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি জীবন-মরণ দান করেন। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।- ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ২৬৬
(১৬৭) হজরত মুসলিম বিন হারিস তামিমি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চুপিসারে বলেছেন- যখন তুমি মাগরিবের নামাজ থেকে ফারেগ হবে তখন এই দুআটি সাতবার পড়বে। যদি ঐ রাতে তোমার মৃত্যু হয় তাহলে এই দুআর বদৌলতে তোমার জন্য নিরাপত্তা থাকবে। ফজরের নামাজের পরও এই দুআ পড়বে। যদি ঐ দিন তোমার মৃত্যু হয় তাহলে এই দুআর বদৌলতে তোমার জন্য নিরাপত্তা থাকবে। দুআটি হল-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার。
اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ.
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন। ২৬৭
(১৬৮) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়া ওয়া আমালাম্মা মুতাকাব্বালা, ওয়ারিযকান তায়্যিবা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কামনা করছি- উপকারী ইলম, মাকবুল আমল ও পবিত্র রিযিক। ২৬৮
(১৬৯) হজরত সুহাইব রাদি. থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর তার ঠোঁট নাড়াতেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কী বলেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এ দুআ পড়ি-
আল্লাহুম্মা বিকা উহাওয়িলু, ওয়াবিকা উসাভিলু, ওয়াবিকা উক্বাতিলু।
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিকা উহাবিলু ওয়াবিকা উসাবিলু, ওয়াবিকা উকাতিলু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার নামেই শত্রুর মোকাবেলা করি, আপনার নামেই দুশমনের ওপর ঝাপিয়ে পড়ি এবং আপনার নামেই লড়াই করি। ২৬৯
এ বিষয়ে আরো অনেক হাদিস রয়েছে। সামনে ‘দিবসের প্রথমভাগে পড়ার দুআ’ নামক অধ্যায়ে বিস্তারিত আসছে। আবু মুহাম্মাদ রহ. তার "শরহুস সুন্নাহ" কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
قَالَ عَلْقَمَةُ بْنُ قَيْسٍ: بَلَغَنَا أَنَّ الْأَرْضَ تَعُجُ إِلى اللَّهِ تَعَالَى مِنْ نَوْمَةِ الْعَالِمِ بَعْدَ صَلَاةِ الصُّبْحِ.
অর্থ: আলকামা রহ. বলেন, আমারা একথা শুনেছি, ফজরের পর কোন আলেম ঘুমালে জমিন আল্লাহর কাছে আর্তনাদ করে। ২৭০
টিকাঃ
২৪৭. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯৪, আমালুল ইয়াউম: ১০৮, নাসাঈ।
২৪৮. সহিহ বুখারি: ৮৪১, সহিহ মুসলিম: ৫৮৩।
২৪৯. সহিহ মুসলিম: ৫৯১, সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৩, সুনানে তিরমিজি: ৩০০, সুনানে নাসাঈ ৩/৬৮।
২৫০. সহিহ বুখারি: ৮৪৪, সহিহ মুসলিম: ৫৯৩, সুনানে আবু দাউদ: ১৫০৫, সুনানে নাসাঈ ৩/৭০, আমালুল ইয়াউম: ১২৯, নাসাঈ।
২৫১. সহিহ মুসলিম: ৫৯৪, সুনানে আবু দাউদ: ১৫০৬, সুনানে নাসাঈ ৩/৭৫, আমালুল ইয়াউম: ১২৭, নাসাঈ।
২৫২. সহিহ বুখারি: ৮৪৩, সহিহ মুসলিম: ৫৯৫, সুনানে আবু দাউদ: ১৫০৪, মুয়াত্তা মালেক ১/২০৯।
২৫৩. সহিহ মুসলিম: ৫৯৬, সুনানে তিরমিজি: ৩৪০৯, সুনানে নাসাঈ ৩/৭৫, আমালুল ইয়াউম: ১৫৬।
২৫৪. সহিহ মুসলিম: ৫৯৫।
২৫৫. সহিহ বুখারি: ৬৩৭৪, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬২, সুনানে নাসাঈ ৮/২৬৬, আমালুল ইয়াউম: ১৩২, নাসাঈ।
২৫৬. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৬৫, সুনানে তিরমিজি: ২৯০৫, সুনানে নাসাঈ ৩/৭৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯২৬।
২৫৭. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩২, সুনানে তিরমিজি: ২৯০৫, সুনানে নাসাঈ ৩/৬৮।
২৫৮. সুনানে আবু দাউদ: ১৫২২, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৩, মুসতাদরাকে হাকেম ১/২৭৩, মুসনাদে আহমদ ৫/২৪৫, মাওয়ারিদুজ জামআন: ২৩৪৫, আমালুল ইয়াউম: ১০৯।
২৫৯. ইবনুস সুন্নি: ১১২।
২৬০. ইবনুস সুন্নি: ১১৬।
২৬১. ইবনুস সুন্নি: ১১৯।
২৬২. আমালুল ইয়াউম: ১২১, ইবনুস সুন্নি।
২৬৩. আমালুল ইয়াউম: ১০৯, ইবনুস সুন্নি।
২৬৪. আমালুল ইয়াউম: ১১১, ইবনুস সুন্নি, সুনানে নাসাঈ ৩/৭৩, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৯।
২৬৫. সুনানে তিরমিজি: ৫৮৬।
২৬৬. সুনানে তিরিমিযি: ৩৪৭০, আমালুল ইয়াউম: ১২৭, নাসাঈ, মাওয়ারিদুজ জামআন: ২৩৪১।
২৬৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৯, মাওয়ারিদুজ জামআন: ২৩৪৬।
২৬৮. মুসনাদে আহমাদ: ৬/২৯৪, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৯২৫, আমালুল ইয়াউম: ১১০, ইবনুস সুন্নি।
২৬৯. আমালুল ইয়াউম: ১০১, ইবনুস সুন্নি। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
২৭০. মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ৫/৩৩৬।
📄 সকাল-সন্ধ্যার দুআ
এই অধ্যাটি অনেক ব্যাপক। কিতাবে এরচে বিস্তৃত কোন অধ্যায় নেই। এ অধ্যায়ে সংক্ষিপ্তাকারে কিছু আমল উল্লেখ করব। যে ব্যক্তি সবগুলো আমল করতে পারে সে তো এক মহা নেয়ামত ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করলো। তার রয়েছে বড় সুসংবাদ। আর যে ব্যক্তি সবগুলো আমল করতে পারবে না সে অন্তত কোন একটি ছোট আমল হলেও করবে। এ অধ্যায়ের মূল হল পবিত্র কুরআনের আয়াত- ইরশাদ হয়েছে:
وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ قَبْلَ طُلُوعِ الشَّمْسِ وَقَبْلَ غُرُوبِهَا.
অর্থ: তুমি তোমার প্রভুর সপ্রশংস তাসবিহ পাঠ করো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে। ২৭১
وَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِبْكَارِ.
অর্থ: সকাল-সন্ধ্যায় তোমার প্রভুর প্রশংসায় তাসবিহ পাঠ করো। ২৭২
وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ.
অর্থ: তোমার প্রভুর জিকির করো সকাল-সন্ধ্যায় বিনয় ও ভীতির সাথে মনে মনে এবং অনুচ্চস্বরে মুখে। ২৭৩
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغُدُوةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُوْنَ وَجْهَهُ.
অর্থ: যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে সকাল ও সন্ধ্যায় তাকে ডাকে তাদেরকে তুমি নিজের মজলিস থেকে বের করে দিয়ো না। ২৭৪
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدُوةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُوْنَ وَجْهَهُ.
অর্থ: আপনি নিজেকে তাদের সংসর্গে আবদ্ধ রাখুন, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের পালনকর্তাকে তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে আহবান করে। ২৭৫
فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللهُ أَنْ تُرْفَعَ وَ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَ الْآصَالِ رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ.
অর্থ: আল্লাহর ঘরগুলোকে উচ্চ মর্যাদা দিতে এবং তাঁর নাম উচ্চারণ করতে আদেশ করেছেন, তাতে সকাল ও সন্ধ্যায় তাসবিহ পাঠ করে। এমন লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহর স্বরণ, নামাজ কায়েম ও জাকাত থেকে গাফেল করতে পারে না। ২৭৬
إِنَّا سَخَّرْنَا الْجِبَالَ مَعَهُ يُسَبِّحْنَ بِالْعَشِيِّ وَالْإِشْرَاقِ.
অর্থ: আমি পর্বতমালাকে নিয়োজিত করেছিলাম, যাতে তারা তার সঙ্গে সন্ধ্যাবেলা ও সূর্যোদয়কালে তাসবিহ পাঠ করে। ২৭৭
(১৭০) হজরত শাদ্দাদ বিন আউস রাদি. থেকে বর্ণিত। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এটি হল, সাইয়েদুল ইস্তিগফার (শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার)। যে ব্যক্তি এই ইস্তেগফার সন্ধ্যায় পড়বে, ঐ রাতে তার মৃত্যু হলে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর সকালবেলা পড়লেও ওই দিন মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। সাইয়েদুল ইস্তিগফার হল-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي ، فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা, খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া'দিকা মাসতাতা'তু। আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা'তু, আবুউ লাকা বিনি'মাতিকা আলাইয়া। ওয়া আবুউ বিজাম্বি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা।
অর্থ: ওহে আল্লাহ, আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার গোলাম। আপনাকে দেয়া ওয়াদা-অঙ্গীকার পূরণে আমি সাধ্যমতো সচেষ্ট। আমি নিজের কৃতকর্মেও অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট পানাহ চাই। আমার ওপর আপনার সমুদয় অনুগ্রহ নিয়ে আমি হাজির, আমার পাপগুলো নিয়েও আমি হাজির। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, আপনি ব্যতীত কেউ তো আর ক্ষমা করতে পারবে না। ২৭৮
(১৭১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَالَ حِيْنَ يُصْبِحُ وَحِيْنَ يُمْسِي : سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ. مِائَةَ مَرَّةٍ - لَمْ يَأْتِ أَحَدٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ، إِلَّا أَحَدٌ قَالَ مِثْلَ مَا قَالَ، أَوْ زَادَ عَلَيْهِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় এই দুআ ১০০ বার পড়বে, কেয়ামতের দিন তার চেয়ে উত্তম কেউ থাকবে না। তবে হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি তার চেয়ে উত্তম হবে, যে এই পরিমাণ পড়েছে বা এরচে বেশি পড়েছে। দুআটি হল-
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি。
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ.
অর্থ: আমি সংপ্রশংস আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি।- সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় আছে-
উচ্চারণ: সুবাহানাল্লাহিল আজিম ওয়াবি হামদিহি。
سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ.
অর্থ: আমি সংপ্রশংস মহান আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি। ২৭৯
(১৭২) হজরত আবদুর রহমান বিন খুবাইব রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে-
خَرَجْنَا فِي لَيْلَةِ مَطَرٍ وَظُلْمَةٍ شَدِيْدَةٍ نَطْلُبُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيُصَلِّي لَنَا، فَأَدْرَكْنَاهُ، فَقَالَ: أَصَلَّيْتُمْ؟ . فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، فَقَالَ: قُلْ، فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ: قُلْ. فَلَمْ أَقُلْ شَيْئًا، ثُمَّ قَالَ : قُلْ فَقُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا أَقُولُ ؟ قَالَ: قُلْ ( قُلْ هُوَ اللهُ أَحَدٌ ( وَالْمُعَوَّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِي وَحِينَ تُصْبِحُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، تَكْفِيكَ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ.
অর্থ: আমরা বৃষ্টির রজনীতে, প্রচণ্ড অন্ধকারে জামাতে নামাজের জন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খোঁজে বের হলাম। আমরা তাঁকে পেলে তিনি আমাকে বললেন, তুমি বলো। আমি কিছুই বললাম না। দ্বিতীয়বার বললেন, তুমি বল। আমি কিছু বললাম না। তৃতীয়বার বললেন, তুমি বল। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, কী বলব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সকাল-সন্ধ্যা তিনবার সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পড়। তাহলে আল্লাহ তোমাকে সবকিছু থেকে হেফাজত করবেন। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান ও সহিহ। ২৮০
(১৭৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ بِكَ أَصْبَحْنَا وَبِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا وَبِكَ نَمُوْتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُوْرُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিকা আসবাহনা, ওয়াবিকা আমসাইনা, ওয়াবিকা নাহয়া, ওয়াবিকা নামুতু ওয়া ইলাইকান নুশুর।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কৃপায় সকাল পেয়েছি, আপনারই কৃপায় সন্ধ্যা পাবো। আপনার দয়ায় বেঁচে আছি, আপনার ইশারায় মারা যাবো। আর আপনার কাছেই হবে পুনরুত্থান।
আর সন্ধ্যায় বলতেন-
اللَّهُمَّ بِكَ أَمْسَيْنَا، وَبِكَ نَحْيَا وَبِكَ نَمُوْتُ، وَإِلَيْكَ النُّشُوْرُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিকা আমসাইনা, ওয়াবিকা নাহইয়া, ওয়াবিকা নামুতু ওয়া ইলাইকান নুশুর।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কৃপায় সন্ধ্যা পেয়েছি, আপনারই কৃপায় সকাল পাবো। আপনার দয়ায় বেঁচে আছি, আপনার ইশারায় মারা যাবো। আর আপনার কাছেই হবে পুনরুত্থান। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ২৮১
(১৭৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফরে থাকাকালীন শেষরাতে এ দুআ পড়তেন-
سَمَّعَ سَامِعُ بِحَمْدِ اللهِ وَحُسْنِ بَلَائِهِ عَلَيْنَا ، رَبَّنَا صَاحِبْنَا، وَأَفْضِلْ عَلَيْنَا، عَائِدًا بِاللَّهِ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ: সাম্মাআ সামিউন বিহামদিল্লাহি ওয়া হুসনি বালায়িহি আলাইনা, রাব্বানা সাহিব না, ওয়া আফজিল আলাইনা, আয়িজান বিল্লাহি মিনান্নার।
অর্থ: আমরা যে আল্লাহর প্রশংসা করছি এবং আল্লাহ আমাদেরকে বিপদমুক্ত রেখেছেন- উপস্থিতিরা যেন অন্যদের পৌঁছে দেয়। হে আল্লাহ, আমাদেরকে হেফাজত করুন, আমাদের ওপর আপনার অনুগ্রহ নিয়মিত রাখুন। আমরা জাহান্নাম থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। ২৮২
(১৭৫) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সন্ধ্যায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দুআ পড়তেন-
أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ.
উচ্চারণ: আমসাইনা আমসাল মুলকু লিল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু।
অর্থ: আমরা সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছি। পুরো সৃষ্টিজগত আল্লাহর জন্যে সন্ধ্যায় উপনীত হয়েছে। সকল প্রশংসা আল্লাহরই জন্য। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই; তিনি একক, তাঁর কোন শরিক নেই।
বর্ণনাকারী বলেন, এর পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিচের দুআটিও পড়তেন-
لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، رَبِّ أَسْأَلُكَ خَيْرَ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَخَيْرَ مَا بَعْدَهَا، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِي هَذِهِ اللَّيْلَةِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا، رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكَسَلِ، وَسُوْءِ الْكِبَرِ، رَبِّ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابٍ فِي النَّارِ، وَعَذَابٍ فِي الْقَبْرِ.
উচ্চারণ: লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। রাব্বি আসআলুকা খাইরা মা فی হাজিহিল্লাইলাতি ওয়া খাইরা মা বা'দাহা। ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি মা فی হাজিহিল্লাইলাতি ওয়া শাররি মা বা'দাহা। রাব্বি আউজুবিকা মিনাল কাসালি ওয়া সুয়িল কিবারি। আউজুবিকা মিন আজাবิน ফিন্নারি ওয়া আজাবิน ফিল কাবরি।
অর্থ: সকল প্রশংসা তাঁরই, সকল রাজ্যের মালিক তিনি, তিনিই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এই রজনী ও এর পরবর্তী কল্যাণের কামনা করি।
এই রাতের অকল্যাণ ও পরবর্তী অকল্যাণ থেকে আশ্রয় চাই। অলসতা, অতিশয় বার্ধক্য, কবরের আজাব ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই।
আনুরূপভাবে সকালবেলায় তিনি পড়তেন-
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ.
উচ্চারণ: আসবাহনা ওয়াআসবাহাল মুলকু লিল্লাহ, ওয়াল হামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু।২৮৩
(১৭৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত-
جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ : يَا رَسُولَ اللَّهِ، مَا لَقِيتُ مِنْ عَقْرَبٍ لَدَغَتْنِي الْبَارِحَةَ . قَالَ : أَمَّا لَوْ قُلْتَ حِيْنَ أَمْسَيْتَ : أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ لَمْ تَضُرَّكَ.
অর্থ: এক ব্যক্তি রাসুলের কাছে এসে বললো, গতরাত বিচ্ছু আমাকে দংশন করেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি যদি সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দুআ পড়তে, তাহলে বিচ্ছু তোমার কোন ক্ষতি করতে পারত না। দুআটি হল-
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ لَمْ تَضُرَّكَ.
উচ্চারণ: আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা।
অর্থ: আল্লাহর পরিপূর্ণ উক্তির মাধ্যমে তার সমস্ত সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আশ্রয় কামনা করি।
-ইবনুস সুন্নি তার কিতাবে তিনবার বলার কথা বর্ণনা করেছেন। ২৮৪
(১৭৭) আবু দাউদ, তিরমিজিতে সহিহ সনদে আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, আবু বকর রাদি. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে সকাল-সন্ধ্যার দুআ শিখিয়ে দিন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি এ দুআটি সকাল-সন্ধ্যা ও শয়নকালে পড়বে।
اللَّهُمَّ فَاطِرَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ، عَالِمَ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ، رَبَّ كُلِّ شَيْءٍ وَمَلِيْكَهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي وَشَرِّ الشَّيْطَانِ وَشِرْكِهِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ফাতিরাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি, আলিমাল গাইবি ওয়াশ শাহাদাহ। রাব্বা কুল্লি শাইয়িন ওয়া মালিকাহ, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা। আউজুবিকা মিন শাররি নাফসি, ওয়া শাররিশ শাইতানি ওয়া শিরকিহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আসমান-যমিনের গে আদিস্রষ্টা, দৃশ্য-অদৃশ্যের হে মহা জ্ঞাতা। সকল বস্তুও মালিক ও প্রতিপালক! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই। আমি নিজের কুপ্রবৃত্তির অনিষ্ট থেকে, শয়তানের অনিষ্ট থেকে এবং শিরিক থেকে আপনার আশ্রয় চাই। -তিরমিজি রহ. বলেন, উক্ত হাদিস হাসান সহিহ। ২৮৫
(১৭৮) হজরত আবু মালেক আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। সাহাবায়ে কেরাম সকাল, সন্ধ্যা ও শয়নকালে কী দুআ পড়বে এই মর্মে জিজ্ঞাসা করলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোল্লেখিত দুআ পড়তে বলেছেন। তবে উক্ত দুআর সঙ্গে নিচের অংশটি বেশি বলেছেন-
وَأَنْ نَقْتَرِفَ سُوْءَ عَلَى أَنْفُسِنَا أَوْ تَجُرُّهُ إِلَى مُسْلِمٍ.
উচ্চারণ: ওয়া আন রাকতারিফা সুআন আলা আনফুসিনা আউ নাজুররাহু ইলা মুসলিম।
অর্থ: পাপের মাধ্যমে নিজের ওপর কিংবা কোন মুসলিমের ওপর অবিচার করা থেকে। ২৮৬
(১৭৯) হজরত উসমান বিন আফফান রাদি. থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় নিম্নোক্ত দুআ তিনবার পড়বে, সে সব ধরনের বিপদাপদ থেকে মুক্ত থাকবে-
باسْمِ اللهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাহি লা ইয়াদুররু মাআস মিহি শাইয়ুন ফিল আরদি ওয়া ফিস সামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।
অর্থ: দিনের ঐ আল্লাহর নামে, যার নাম সঙ্গে থাকলে আসমান-যমিনের কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞানী।- ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। আবু দাউদ শরিফে আরো আছে- তাকে হঠাৎ কোন মসিবত স্পর্শ করতে পারবে না। ২৮৭
(১৮০) হজরত সাওবান রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলায় নিম্নোক্ত দুআ পড়বে, আল্লাহ তাআলার দায়িত্ব হল, তাকে খুশি করা। দুআটি হল-
رَضِيْتُ بِاللهِ رَبًّا ، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا ، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا.
উচ্চারণ: রাজিতু বিল্লাহি রব্বা ওয়া বিল ইসলামি দীনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন রাসুলা।
অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলাকে রব হিসেবে, ইসলামকে দীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসুল হিসেবে মেনে সন্তুষ্ট। -ইমাম তিরমিজি রহ. বলেছেন- হাদিসটি এই সনদে হাসান সহিহ গারিব। নববি রহ. বলেন, তবে আবু দাউদ ও নাসাঈতে গ্রহণযোগ্য সনদে হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে। তাই মূল হাদিসটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। আলহামদুলিল্লাহ।
সুনানে আবু দাউদের অন্য বর্ণনায় وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا )ওয়াবি মুহাম্মাদিন রাসুলা: মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসুল হিসাবে) সুনানে তিরমিজির বর্ণনায় نَبِيًّا )নাবয়ি্যা) বর্ণিত আছে। অতএব, উভয়টি একত্রে (نَبِيًّا وَرَسُوْلًا নাবয়ি্যান ওয়া রাসুলা: নবি ও রাসুল হিসাবে) পড়া উত্তম। তবে যদি কোন একটি বলে তাহলেও হাদিস অনুযায়ী আমল হয়ে যাবে। ২৮৮
(১৮১) হজরত আনাস রাদি. থেকে নির্ভযোগ্য সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় এই দুআটি একবার পড়বে আল্লাহ তাআলা তার চার ভাগের একভাগ জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি দুইবার পড়বে আল্লাহ তাআলা তার অর্ধেক জাহান্নام থেকে মুক্ত করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি তিনবার পড়বে চার ভাগের তিন ভাগ মুক্ত করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি চারবার পড়বে আল্লাহ তাআলা তাকে পুরোপুরি জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে দেবেন। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَصْبَحْتُ أُشْهِدُكَ وَأُشْهِدُ حَمَلَةَ عَرْشِكَ، وَمَلَائِكَتَكَ وَجَمِيعَ خَلْقِكَ، أَنَّكَ أَنْتَ اللهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُكَ وَرَسُوْلُكَ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসবাহতু উশহিদুকা ওয়া উশহিদু হামালাতা আরশিকা ওয়া মালায়িকাতিকা ওয়া জামিআ খালকিকা। আন্নাকা আন্তাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতা ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুকা ওয়া রাসুলুক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার সকাল হল আপনাকে সাক্ষী রেখে, আপনার আরশ বহনকারীদের সাক্ষী রেখে, সমস্ত ফেরেশতা ও সমগ্র সৃষ্টিকে সাক্ষী রেখে, এই ব্যাপারে যে, আপনিই আল্লাহ। আপনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন আপনার বান্দা ও রাসুল। ২৮৯
(১৮২) হজরত আবদুল্লাহ বিন গান্নাম বায়ায রাদি. থেকে নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালে নিচের দুআটি পড়বে, সে ঐ দিনের শুকরিয়া আদায় করে ফেলল। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যাবেলায় এই দুআ পড়বে, সে ঐ রাতের শুকরিয়া আদায় করে ফেলল। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ مَا أَصْبَحَ بِيْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ، فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মা আসবাহা বি মিন নিমাতিন ফা মিনকা ওয়াহদাকা লা শারিকা লাকা, লাকাল হামদু ওয়া লাকাশ শুক্র।
অর্থ: হে আল্লাহ, এই সকালে আমার মাঝে যত নেয়ামত বিদ্যমান, কিংবা আপনার যে কোন সৃষ্টির মাঝে, তা একমাত্র আপনার দান। আপনার কোন শরিক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই, আপনার জন্যই সকল শোকর-কৃতজ্ঞতা।
- বিকালে এভাবে বলবে:
اللَّهُمَّ مَا أَمْسَى بِي مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنْكَ وَحْدَكَ لَا شَرِيكَ لَكَ، فَلَكَ الْحَمْدُ وَلَكَ الشُّكْرُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা মা আমসা বি মিন নিমাতิน ফা মিনকা ওয়াহদাকা লা শারিকা লাকা, লাকাল হামদু ওয়া লাকাশ শুক্র।
অর্থ: হে আল্লাহ, এই বিকালে আমার মাঝে যত নেয়ামত বিদ্যমান, কিংবা আপনার যে কোন সৃষ্টির মাঝে, তা একমাত্র আপনার দান। আপনার কোন শরিক নেই। সুতরাং সকল প্রশংসা আপনারই, আপনার জন্যই সকল শোকর-কৃতজ্ঞতা। ২৯০
(১৮৩) হজরত ইবনে উমর রাদি. সহিহ সনদে থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআগুলো সকাল-সন্ধ্যা গুরুত্ব সহকারে পড়তেন। কখনো ছাড়তেন না। দুআগুলো হল-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ في دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَتِيْ وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوْذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফিয়াতা ফিদ্দুনয়া ওয়াল আখিরাহ, আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াতা ফি দীনি ওয়া দুনইয়াইয়া ওয়া আহলি ওয়া মালি। আল্লাহুম্মাস তুর আওরাতি ওয়া আমিন রাওআতি। আল্লাহুম্মাহ ফাজনি মিন বাইনি ইয়াদায়্যা ওয়া মিন খালফি ওয়া আন ইয়ামিনি ওয়া আন শিমালি, ওয়া মিন ফাওকি, ওয়া আউজু বি আজমাতিকা আন উগতালা মিন তাহতি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও সুরক্ষা প্রার্থনা করি। হে আল্লাহ, ক্ষমা ও সুরক্ষা প্রার্থনা করি ঈমান-আমলের ক্ষেত্রে ভুল করা থেকে, ইহলোকের কাজে ভুলচুক করা থেকে, সন্তানাদি ও সম্পদের ব্যাপারে অন্যায় কাজ করা থেকে। হে আল্লাহ, আপনি আমার সকল বিচ্যুতি ঢেকে দাও, সকল শঙ্কা নিরাপত্তায় বদলে দাও। আমাকে আমার সামনের, পিছনের, ডানের-বাঁয়ের এবং উপরের দিকের সকল বিপদাপাদ থেকে হেফাজত করুন। আর আমাকে নিচের দিকের অতর্কিত বিপদ থেকে আশ্রয় দাও। -হাকেম আবু আবদুল্লাহ রহ. বলেন, হাদিসটি সনদের বিবেচনায় সহিহ। ২৯১
(১৮৪) হজরত আলি রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শয়নকালে এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِوَجْهِكَ الْكَرِيمِ، وَكَلِمَاتِكَ التَّامَّةِ، مِنْ شَرِّ مَا أَنْتَ آخِذُ بِنَاصِيَتِهِ، اللهُمَّ أَنْتَ تَكْشِفُ الْمَغْرَمَ وَالْمَأْثَمَ اللَّهُمَّ لَا يُهْزَمُ جُنْدُكَ، وَلَا يُخْلَفُ وَعْدُكَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ، سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বি ওয়াজহিকাল কারিম, ওয়াবি কালিমাতিকাত তাম্মাতি মিন শাররি মা আনতা আখিজুন বি নাসিতিহ। আল্লাহুম্মা আনতা তাকশিফুল মাগরামা ওয়াল মাসাম। আল্লাহুম্মা লা যুহজামু জুনদুকা ওয়া লা যুখলাফু ওয়া'দুকা, ওয়া লা য়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু, সুবহানাকা ওয়াবি হামদিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সম্মানিত সত্তা এবং পূর্ণাঙ্গ গুণাবলীর মাধ্যমে সেসব অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই, যার চাবিকাঠি আপনার হাতে। হে আল্লাহ, আপনিই অপরাধ ও ঋণ থেকে মুক্তি দেন। হে আল্লাহ, আপনার বাহিনী পরাস্ত হয় না এবং আপনার অঙ্গীকার ভঙ্গ হয় না। আর আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করি। ২৯২
(১৮৫) হজরত আবু আইয়াশ রাদি. থেকে নির্ভরযোগ্য সনদে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি সকালে নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করবে তার জন্য ইসমাইল আলাইহিস সালামের বংশের গোলাম আযাদের সমপরিমাণ সওয়াব দেয়া হবে, তার জন্য দশটি নেকি লেখা হবে, দশটি পাপ মুছে দেয়া হবে, দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদে থাকবে। আর যদি সন্ধ্যায় দুআটি পড়ে তাহলে সকাল পর্যন্ত অনুরূপ হবে। দুআটি হল-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرُ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়ิน কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। ২৯৩
(১৮৬) হজরত আবু মালেক আশআরি রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা সকালবেলা এ দুআটি পড়বে-
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذَا الْيَوْمِ ؛ فَتْحَهُ وَنَصْرَهُ وَنُوْرَهُ وَبَرَكَتَهُ وَهُدَاهُ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيْهِ وَشَرِّ مَا بَعْدَهُ.
উচ্চারণ: আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আল্লাহুম্মা আসআলুকা খাইরা হাজাল ইয়াউমি ফাতহাহু ওয়া নাসরাহু ওয়া নুরাহু ওয়া বারাকাতাহু ওয়া হুদাহু। ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি মা ফিহি ওয়া শাররি মা বা'দাহু।
অর্থ: আমরা সকালে উপনীত হয়েছি এবং সমগ্র পৃথিবী ঐ আল্লাহর অধীনে সকাল লাভ করেছে, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট এই দিনের জয়, শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য, এই দিনের নুর, বরকত ও হেদায়াত প্রার্থনা করি। আর এই দিন ও পরবর্তী দিনের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। -আর সন্ধ্যা বেলায়ও উক্ত দুআ পড়বে। ২৯৪
[এভাবে পড়বে:
أَمْسَيْنَا وَأَمْسَى الْمُلْكُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ هَذِهِ اللَّيْلَةِ ؛ فَتْحَهَا وَنَصْرَهَا وَنُوْرَهَا وَبَرَكَتَهَا وَهُدَاهَا، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا فِيهَا وَشَرِّ مَا بَعْدَهَا.
উচ্চারণ: আমসইনা ওয়া আমসাল মুলকু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আল্লাহুম্মা আসআলুকা খাইরা হাজিহিল্লাইলাতি ফাতহাহা ওয়া নাসরাহা ওয়া নুরাহা ওয়া বারাকাতাহা ওয়া হুদাহা। ওয়া আউজুবিকা মিন শাররি মা فیহা ওয়া শাররি মা বা'দাহা।
অর্থ: আমরা বিকালে উপনীত হয়েছি এবং সমগ্র পৃথিবী ঐ আল্লাহর অধীনে বিকাল লাভ করেছে, যিনি বিশ্বজগতের প্রতিপালক। হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট এই রাতের জয়, শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য, এই রাতের নুর, বরকত ও হেদায়াত প্রার্থনা করি। আর এই রাত ও পরবর্তী রাতের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি।]
(১৮৭) হজরত আবদুর রহমান বিন আবু বাকরাহ রহ. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি তার পিতা আবু বাকরাহ রাদি. এর কাছে জিজ্ঞাস করলেন, হে আব্বাজান! আপনাকে আমি প্রতিদিন সকালবেলা এ দুআ পড়তে শুনি। আপনি সকালে এ দুআটি তিনবার পড়েন; সন্ধ্যায় তিনবার পড়েন। তখন পিতা আবু বাকরাহ রাদি. বললেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এরূপ পড়তে শুনেছি। তাই আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণকে পছন্দ করি। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা আফিনি فی সাময়ি, আল্লাহুম্মা আফিনি فی বাসারি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার দেহে সুরক্ষা দাও, আমার কানে সুরক্ষা দাও এবং সুরক্ষা দাও আমার চোখে। হে আল্লাহ, কুফর ও দারিদ্র থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। হে আল্লাহ, কবরের আযাব থেকে আপনার আশ্রয় কামনা করি। আপনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। ২৯৫
(১৮৮) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সকালবেলা নিচের আয়াতটি পড়বে, সে ঐ দিনের ছুটে যাওয়া যাবতীয় কল্যাণ পেয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি বিকেলে পড়বে, সে ঐ রাতের ছুটে যাওয়া যাবতীয় কল্যাণ পেয়ে যাবে। আয়াতটি হল-
فَسُبْحَنَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ ﴿۱۷﴾ وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمَوتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَ حِيْنَ تُظْهِرُوْنَ ﴿۱۸﴾ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَقِّ وَيُحْيِ الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا * وَكَذَلِكَ تُخْرَجُوْنَ (۱۹).
অর্থ: অতএব, তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা স্বরণ করো সন্ধ্যায় ও সকালে। নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলে এবং অপরাহ্নে ও মধ্যাহ্নে তাঁরই প্রশংসা। তিনি মৃত থেকে জীবিতকে এবং জীবিত থেকে মৃতকে বহির্গত করেন এবং শুকয়ে যাওয়ার পর ভূমিকে পুনরুজ্জীবিত করেন। আর এভাবেই তোমরা পুনরুত্থিত হবে। ২৯৬-ইমাম আবু দাউদ রহ. উক্ত হাদিসকে যাঈফ বলেননি। ইমাম বুখারি রহ. "তারিখুল কাবির” নামক কিতাবে উক্ত হাদিসকে দুর্বল বলেছেন। ২৯৭
(১৮৯) নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক কন্যা থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, তুমি সকালে এই দুইট পড়বে। যে ব্যক্তি সকালে এ দুআটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত তাকে নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পড়বে সকার পর্যন্ত তাকে নিরাপত্তা প্রদান করা হবে। দুআটি হল-
سُبْحَانَ اللهِ، وَبِحَمْدِهِ، لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ، مَا شَاءَ اللَّهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ، أَعْلَمُ أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি, লা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, মা শা আল্লাহু কানা ওয়া লাম ইয়াশা' লাম ইয়াকুন। আ'লামু আন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির, ওয়া আন্নাল্লাহা কাদ আহাদা বিকুল্লি শাইয়ิน ইলমা।
অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি, আল্লাহ ছাড়া কারো কোন শক্তি নেই। তিনি যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না। আমার বিশ্বাস যে, আল্লাহ তাআলা সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং তিনি নিজ জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে বেষ্টন করে আছেন। ২৯৮
(১৯০) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে প্রবেশ করে একজন আনসারি ব্যক্তিকে বসে থাকতে দেখলেন। তাকে আবু উমামা বলে ডাকা হতো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে আবু উমামা, তুমি নামাজের সময় ছাড়া মসজিদে বসে আছো যে? তিনি বললেন ইয়া রাসুলাল্লাহ, ঋণ ও দায়দায়িত্বের টেনশনের কারণে বসে আছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাকে এমন দুআ শিখিয়ে দেবো? যে দুআ পড়লে আল্লাহ তোমার টেনশন দূর করে দেবেন ও ঋণ আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, অবশ্যই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সকাল-বিকাল এ দুআ পড়বে। আবু উমামা রাদি. বলেন, আমি উক্ত আমল করেছি। ফলে আল্লাহ তাআলা আমার দুশ্চিন্তা ও টেনশন দূর করে দিয়েছেন ও ঋণ পরিশোধ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দুআটি হল-
سُبْحَانَ اللهِ، وَبِحَمْدِهِ، لَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ، مَا شَاءَ اللَّهُ كَانَ وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ، أَعْلَمُ أَنَّ اللهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ، وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْمًا. اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْهَمَّ وَالْحَزَنِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাজান, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আযজি ওয়াল কাসাল, ওয়া আউজুবিকা মিনাল যুবনি ওয়াল বুখল, ওয়া আউজুবিকা মিন গালাবাতিদ্দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছে দুঃখ-দুশ্চিন্তা থেকে পানাহ চাই, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে মুক্তি চাই, ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে মুক্তি চাই এবং ঋণগ্রস্থতা ও মানুষের বলপ্রয়োগের শিকার হওয়া থেকে পানাহ চাই। ২৯৯
(১৯১) হজরত আবদুল্লাহ বিন আবজা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে এ দুআ পড়তেন-
أَصْبَحْنَا عَلَى فِطْرَةِ الْإِسْلَامِ، وَكَلِمَةِ الْإِخْلَاصِ، وَدِينِ نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَعَلَى مِلَّةِ أَبِيْنَا إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ.
উচ্চারণ: আসবাহনা আলা ফিতরাতিল ইসলামি ওয়া কালিমাতিল ইখলাসি, ওয়া দীনি নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদิน সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা, ওয়া আলা মিল্লাতি আবিনা ইবরাহিমা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা, হানিফান ওয়া মুসলিমান ওয়া আনা মিনাল মুশরিকিন।
অর্থ: আমাদের সকাল হল স্বভাবধর্ম ইসলামের ওপর, কালিমায়ে তাইয়েবার ওপর, আমামের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত ধর্মের ওপর এবং আমাদের পিতা ইবরাহিম আলাইহিস সালামের মিল্লাতের ওপর, যিনি ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম। আর আমি মুশরিক নই।৩০০
(১৯২) হজরত আবদুল্লাহ বিন আবু আউফা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল বেলা এ দুআ পড়তেন-
أَصْبَحْنَا وَأَصْبَحَ الْمُلْكُ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَالكِبْرِياءُ وَالْعَظَمَةُ لِلَّهِ، وَالْخَلْقُ وَالْأَمْرُ وَاللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَمَا سَكَنَ فِيْهِمَا لِلَّهِ تَعَالَى اللَّهُمَّ اجْعَلْ أَوَّلَ هَذَا النَّهَارِ صَلَاحاً، وَأَوْسَطَهُ نَجَاحاً، وَآخِرَهُ فَلَاحاً، يَا أَرْحَمَ الرَّاحِمِينَ.
উচ্চারণ: আসবাহনা ওয়া আসবাহাল মুলকু লিল্লাহি আজ্জা ওয়া জাল্লা, ওয়ালহামদুলিল্লাহ, ওয়াল কিবরিয়াউ ওয়াল আজমাতু লিল্লাহ, ওয়াল খালকু ওয়াল আমরু ওয়াল্লাইলু ওয়ান্নাহারু ওয়া মা সাকানা ফিহিমা লিল্লাহি তাআলা। আল্লাহুম্মাজ আল আওয়ালা হাজান্নাহারি সালাহা, ওয়া আউসাতাহু নাযাহা ওয়া আখিরাহু ফালাহা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ: আমরা সকালে উপনীত হয়েছি এবং সমগ্র পৃথিবী ঐ আল্লাহর অধীনে সকাল লাভ করেছে। সকল প্রশংসা তাঁরই। সমস্ত অহঙ্কার ও মহত্ত্ব আল্লাহরই। সৃষ্টিকুল, কর্তৃত্ব, রাত-দিন এবং যা এতে শান্তি লাভ করে সবই আল্লাহর সৃষ্টি। হে আল্লাহ, এই দিনের শুরুকে করো কল্যাণময়, মধ্যাংশকে করো সাফল্য এবং শেষাংশকে করো কামিয়াব। হে সর্বাধিক দয়াময় আল্লাহ। ৩০১
(১৯৩) হজরত মাকিল বিন ইয়াসার রাদি. থেকে দুর্বল সনদে বর্ণিত আছে যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَالَ حِيْنَ يُصْبِحُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ : أَعُوْذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ، وَقَرَأَ ثَلَاثَ آيَاتٍ مِنْ آخِرِ سُورَةِ الحَشْرِ، وَكَّلَ اللَّهُ بِهِ سَبْعِينَ أَلْفَ مَلَكٍ يُصَلُّوْنَ عَلَيْهِ حَتَّى يُمْسِي، وَإِنْ مَاتَ فِي ذَالِكَ الْيَوْمِ مَاتَ شَهِيدًا، وَمَنْ قَالَهَا حِيْنَ يُمْسِيْ كَانَ بِتِلْكَ الْمَنْزِلَةِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি সকালে তিনবার أَعُوْذُ بِاللَّهِ السَّمِيعِ الْعَلِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّحِيمِ (আউযুবিল্লাহিস সামিইল আলিমি মিনাশ শায়তানির রাজিম: আল্লাহর আশ্রয় কামনা করছি বিতাড়িত শয়তান থেকে!) পড়ার পর সুরা হাশরের শেষ তিন আয়াত পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার জন্য সন্ধা পর্যন্ত সত্তর হাজার ফেরেশতা নিযুক্ত করে দেন, যারা তার জন্য মাগফেরাতের দুআ করে। সে যদি ঐ দিন মারা যায় তাহলে সে শহিদি মর্যাদা লাভ করবে। অনুরূপভাবে সন্ধ্যায় পড়লেও উক্ত মর্যাদা লাভ করবে। ৩০২
(১৯৪) হজরত মুহাম্মাদ বিন ইবরাহিম রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি তার পিতা ইবরাহিম রাদি. থেকে বর্ণনা করেন-
وَجَّهَنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي سُرْيَةَ، فَأَمَرَنَا أَنْ نَّقْرَأَ إِذَا أَمْسَيْنَا وَأَصْبَحْنَا: (أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْنَاكُمْ عَبَثًا) فَقَرَأْنَا، فَغَنَمْنَا وَسَلَّمْنَا.
অর্থ: ইবরাহিম রাদি. বলেন, এক যুদ্ধের সফরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের দিকে ফিরে আমাদেরকে নিম্নোক্ত আয়াতটি সকাল-সন্ধ্যায় পড়ার নির্দেশ দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমরা উক্ত আয়াত পড়েছিলাম। ফলে গনিমতের মাল লাভ করেছি এবং নিরাপদে ফিরে এসেছি। আয়াতটি হল-
أَفَحَسِبْتُمْ أَنَّمَا خَلَقْتُكُمْ عَبَثًا وَ أَنَّكُمْ إِلَيْنَا لَا تُرْجَعُوْنَ.
অর্থ: তোমরা কি ধারণা করো যে, আমি তোমাদেরকে অনর্থক সৃষ্টি করেছি এবং তোমরা আমার কাছে ফিরে আসবে না?৩০৩
(১৯৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল-সন্ধ্যা এ দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ مِنْ فَجْأَةِ الْخَيْرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فَجْأَةِ الشَّرِّ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাজআতিল খাইরি ওয়া আউযুবিকা মিন ফাজআতিশ শাররি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আকস্মিক কল্যাণ এবং আকস্মিক অকল্যাণ হতে আপনার কাছে পানাহ চাই। ৩০৪
(১৯৬) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি আমার উপদেশ অবশ্যই পালন করবে। তুমি সকাল-বিকাল এ দুআ পড়বে-
يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ بِكَ أَسْتَغِيْتُ فَأَصْلِحْ لِي شَأْنِي كُلَّهُ وَلَا تَكِلْنِي إِلَى نَفْسِي طَرْفَةَ عَيْنِ.
উচ্চারণ: ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়ুম, বিকা আসতাগিসু ফা আসলিহ লি শানি কুল্লাহু ওয়া লা তাকিলনি ইলা নাফসি তারফাতা আইন।
অর্থ: হে চিরঞ্জীব, হে সকল কাজের নিয়ন্ত্রক, আপনারই আশ্রয় চাই। আপনি আমার সকল কাজ সংশোধন করে দিন। ক্ষণিকের জন্যও আমার রক্ষণাবেক্ষণ আমার ওপর ছেড়ে দিয়েন না। ৩০৫
(১৯৭) হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. থেকে দুর্বল সনদে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বিপদাপদের অভিযোগ করলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সকালবেলা এই দুআটি পড়তে বললেন। ঐ ব্যক্তি উক্ত আমল করল, ফলে তার সকল বিপদাপদ দূর হয়ে গেল। দুআটি হল-
بِسْمِ اللَّهِ عَلَى نَفْسِي وَأَهْلِي وَمَالِي.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ আলা নাফসি ওয়া আহলি ওয়া মালি।
অর্থ: আমার, পরিবার এবং সম্পদের ওপর আল্লাহর নাম নিলাম। ৩০৬
(১৯৮) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালবেলা এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়া ওয়া রিযকান ওয়াসিয়া ওয়া আমালান মুতাকাব্বালা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার কাছে উপকারী ইলম, হালাল রিজিক ও মাকবুল আমল চাই। ৩০৭
(১৯৯) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল তিনবার এই দুআটি পড়বে, আল্লাহ তাকে পরিপূর্ণ নেয়ামত দান করবেন। দুআটি হল-
اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَصْبَحْتُ مِنْكَ فِي نِعْمَةٍ وَعَافِيَةٍ وَسَتْرٍ، فَأَتِمَّ نِعْمَتَكَ عَلَيَّ وَعَافِيَتَكَ وَسَتْرَكَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসবাহতু মিনকা ফি নিমাতিন ওয়া আফিয়াতิน ওয়া ওয়া সাতরิน, ফা আতিম্মা নিমাতাকা আলাইয়্যা ওয়া আফিয়াতাকা ওয়া সাতরাকা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার দেয়া নেয়ামত ও সুস্থতা ও দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখাবস্থায় সকাল করেছি। অতএব, দুনিয়া-আখেরাতে আমার ওপর পরিপূর্ণ নেয়ামত দান করুন। দুনিয়া ও আখেরাতে আমাকে সুস্থতা দান করুন ও আমার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখুন। ৩০৮
(২০০) হজরত যুবাইর বিন আওয়াম রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَا مِنْ صَبَاحٍ يُصْبِحُ الْعِبَادُ إِلا مُنَادٍ يُنَادِي: سُبْحَانَ الْمَلِكِ الْقُدُّوْسِ.
অর্থ: প্রতিদিন সকাল বেলা একজন ঘোষক ঘোষণা করেন- আমরা মহান মালিকের পবিত্রতা ও গুণকীর্তন করি।- ইবনুস সুন্নির কিতাবে আছে-
إِلَّا صَرَخَ صَارِخُ: أَيُّهَا الْخَلَائِقُ سَبِّحُوا الْمَلِكَ القُدُّوسَ.
অর্থ: একজন ঘোষক ঘোষণা করেন- হে সৃষ্টিকুল! তোমরা মহান মালিকের পবিত্রতা ও গুণকীর্তন করো। ৩০৯
(২০১) হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যা এই দুআ পড়ল এবং ঐ দিনে/রাতে মারা গেল, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুআটি এই-
رَبِّيَ اللهُ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، لا إلهَ إِلَّا اللهُ العَلِيُّ الْعَظِيمُ ، مَا شَاءَ اللهُ كَانَ، وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ، أَعْلَمَ أَنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ، وَأَنَّ اللَّهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْماً.
উচ্চারণ: রাব্বি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি লা ইলাহা ইল্লা হু, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আলিয়্যুল আজিম, মা শা আল্লাহু কানা ওয়া মা লাম ইয়াশা লাম ইয়াকুন। আ'লামু আন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়ิน কাদির, ওয়া আন্নাল্লাহা কাদ আহাতা বিকুল্লি শাইয়ิน ইলমা।
অর্থ: আমার রব আল্লাহ, আমি আল্লাহর ওপর ভরসা করলাম, তিনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। তাঁরই ওপর আমি ভরসা করলাম, তিনি মহা আরশের অধিপতি। মহান মর্যাদাবান আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি যা চান হয় এবং যা না চান তা হয় না। আমার বিশ্বাস যে, আল্লাহ তাআলা সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং তিনি নিজ জ্ঞান দ্বারা সবকিছুকে বেষ্টন করে আছেন। ৩১০
(২০২) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ কি আবু যামযামের মতো হতে পারো না? সাহাবায়ে কেরাম বললেন, আবু যামযাম কে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে হল ঐ ব্যক্তি, যে প্রতিদিন সকালে এই দুআটি পড়ত, এরপর কেউ যদি তাকে গালি দিত, তাহলে সে তাকে গালি দিত না। কেউ তার প্রতি জুলুম করলে সে জুলুম করত না। কেউ প্রহার করলে সে প্রহার করত না। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ إِنِّي قَدْ وَهَبْتُ نَفْسِي وَعِرْضِيْ لَكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি কাদ ওয়াহাবতু নাফসি ওয়া ইরযি লাকা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আমার আত্মা ও মান-সম্মান আপনার কাছে সোপর্দ করলাম। ৩১১
(২০৩) হজরত আবুদ দারদা রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকাল-বিকাল সাতবার নিম্নোক্ত দুআ পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার ইহ-পরকালের যাবতীয় কাজের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবেন। দুআটি হল-
حَسْبِيَ اللَّهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ.
উচ্চারণ: হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লাহু, আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।
অর্থ: ঐ আল্লাহ আমার জন্য যতেষ্ট, যিনি ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই। তার ওপরই আমি ভরসা করলাম, তিনি মহান আরশের অধিপতি। ৩১২
(২০৪) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَرَأَ ( حم ) الْمُؤْمِنِ إِلَى { إِلَيْهِ الْمَصِيرُ }، وَآيَةَ الْكُرْسِيِّ حِينَ يُصْبِحُ، حُفِظَ بِهِمَا حَتَّى يُمْسِيَ، وَمَنْ قَرَأَهُمَا حِيْنَ يُمْسِي حُفِظَ بِهِمَا حَتَّى يُصْبِحَ.
অর্থ: যে ব্যক্তি সকালে ( حم থেকে إِلَيْهِ الْمَصِيرُ )তথা সুরা মুমিনের আয়াত নং ১-৩ পর্যন্ত) ও আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, সে সন্ধ্যা পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পড়বে সে সকাল পর্যন্ত নিরাপদে থাকবে। ৩১৩
এই হাদিসগুলোই আমাদের উল্লেখ করার ইচ্ছা ছিল। আমলের জন্য এগুলোই যথেষ্ট। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফিক কামনা করছি এগুলোর ওপর আমলের জন্য এবং অন্যান্য ভালো বিষয়ের ওপর আমলের জন্য।
(২০৫) হজরত তালাক বিন হাবিব রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত, এক ব্যক্তি হজরত আবু দারদা রাদি. এর কাছে এসে বললো, হে আবু দারদা, তোমার ঘর পুড়ে গেছে। তিনি উত্তরে বললেন, না, আমার ঘর পুড়েনি। আল্লাহ তাআলা এমনটি করবেন না। কেননা আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- যে ব্যক্তি দিনের শুরুতে এই দুআটি পড়বে, সন্ধ্যা পর্যন্ত আল্লাহ তাকে সকল মুসিবত থেকে হেফাজত করবেন। আর যে ব্যক্তি দিনের শেষ ভাগে পড়বে, আল্লাহ তাকে সকাল পর্যন্ত যাবতীয় বিপদ থেকে হেফাযত করবেন। দুআটি হল-
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ عَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ، مَا شَاءَ اللهُ كَانَ، وَمَا لَمْ يَشَأْ لَمْ يَكُنْ ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ، أَعْلَمُ أَنَّ اللهَ عَلَى كُلَّ شَيْءٍ قَدِيرٍ، وَأَنَّ اللهَ قَدْ أَحَاطَ بِكُلِّ شَيْءٍ عِلْماً، اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ نَفْسِي، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ دَابَّةٍ أَنْتَ آخِذُ بِنَاصِيَتِهَا، إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আলাইকা তাওয়াক্কালতু, ওয়া আনতা রাব্বুল আরশিল আজিম। মা শা আল্লাহু কানা ওয়া মা লাম ইয়াশা লাম ইয়াকুন। লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আজিম। আ'লামু আন্নাল্লাহা আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির, ওয়া আন্নাল্লাহা কাদ আহাদা বিকুল্লি শাইয়ิน ইলমা। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন শাররি নাফসি ওয়া মিন শাররি কুল্লি দাব্বাতิน আনতা আখিজুন বিনা সিয়াতিহা। ইন্না রাব্বি আলা সিরাতিন মুস্তাকিম।
অর্থ: ওহে আল্লাহ, আপনি আমার রব, আপনি ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই। আপনার ওপরই ভরসা করলাম, আপনিই মহান আরশের অধিপতি। আল্লাহ যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হয় না। মহান মর্যাদাবান আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই। আমার বিশ্বাস যে, আল্লাহ তাআলা সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান এবং তিনি নিজ জ্ঞান দ্বারা সবকিছুর বেষ্টনকারী। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় চাই নিজের কুপ্রবৃত্তির অনিষ্ট থেকে এবং সকল প্রাণীর অনিষ্ট থেকে, যাদের লাগাম আপনার হাতে। নিশ্চয় আমার রব সঠিক পথের প্রদর্শনকারী। ৩১৪
অন্য বর্ণনায় আছে- এক সাহাবিকে বলা হল, সেখানে আবু দারদা রাদি. এর নাম উল্লেখ নেই। সেই বর্ণনায় আরো আছে- বার্তাবাহক আগন্তুক ব্যক্তিটি তার কাছে বারবার আসছিলো, আর বলছিলো, আপনি ঘরে যান, আপনার ঘর পুড়ে গেছে। আর সেই সাহাবি বলছিলেন, আমার ঘর পুড়েনি। কেননা আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি- 'যে ব্যক্তি সকালে উল্লিখিত দুআ পড়বে, তার নিজের, পরিবারের ও সম্পদের কোন ক্ষতি হবে না।' আর আমি আজ সেই দুআ পড়েছি। এরপর সাহাবি বললেন, তোমরা আমার সাথে চল। তখন সাহাবি ও অন্য লোকেরা তাঁর বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। বাড়িতে গিয়ে দেখেন, তাঁর ঘরের আশপাশে সব কিছু পুড়ে গেছে; কিন্তু তাঁর ঘরের কিছুই হয়নি।
টিকাঃ
২৭১. সুরা তাহা: ১৩০।
২৭২. সুরা গাফির: ৫৫।
২৭৩. সুরা আ'রাফ: ২০৫।
২৭৪. সুরা আনআম: ৫২।
২৭৫. সুরা কাহাফ: ২৮।
২৭৬. সুরা নুর: ৩৬-৩৭।
২৭৭. সুরা সোয়াদ: ১৮।
২৭৮. সহিহ বুখারি: ৩৬০৬, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৯০, সুনানে নাসাঈ ৮/২৭৯, আমালুল ইয়াউম: ১৯, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৪/১২২।
২৭৯. সহিহ বুখারি: ৬৪০৫, সহিহ বুখারি মুসলিম: ২৬৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৬৬, আমালুল ইয়াউম: ৫৬৮, নাসাঈ।
২৮০. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮২, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭০, সুনানে কুবরা: ৭৮৬০, নাসাঈ।
২৮১. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৬৭, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৮, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৬৮, সুনানে নাসাঈ ৮/২৫০, আমালুল ইয়াউম: ৮, নাসাঈ।
২৮২. সহিহ মুসলিম: ২৭১৮, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮৬, আমালুল ইয়াউম: ৫৩৬, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৪৪৬, আমালুল ইয়াউম: ৫১৪, ইবনুস সুন্নি।
২৮৩. সহিহ মুসলিম: ২৭২৩, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭১, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৭, আমালুল ইয়াউম: ২৩, নাসাঈ।
২৮৪. সহিহ মুসলিম: ২৭০৯, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৫১৮, আমালুল ইয়াউম: ৫৮৫-৫৯২, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউম: ৪৯, ইবনুস সুন্নি।
২৮৫. সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৯, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৬৭, আমালুল ইয়াউম: ১১, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ২/২৯৭, আলআদাবুল মুফরাদ: ১২০২, ইমাম বুখারি।
২৮৬. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮৩।
২৮৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৮৮, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮৫, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৬৯, আমালুল ইয়াউম: ১৫, নাসাঈ।
২৮৮ তিরমিজি: ৩৩৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭২, নাসাঈ: ০৪ আমাল।
২৮৯. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৬৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯৫, মুসনাদে আহমাদ ২/৩৫৪, আমালুল ইয়াউম: ৯, নাসাঈ।
২৯০. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৩, আমালুল ইয়াউম: ৭, নাসাঈ: ০৭, মাওয়ারিদ: ২৩৬১। উ.
২৯১. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৪, সুনানে কুবরা: ১০৪০১, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৭১, মুসতাদরাকে হাকিম: ১/৫১৭।
২৯২. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৫২, আমালুল ইয়াউম: ৫৬৬, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউম: ৪০, ইবনুস সুন্নি।
২৯৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৬৮, আমালুল ইয়াউম: ২৭, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ৪/৬০।
২৯৪. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৪।
২৯৫. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯০, আমালুল ইয়াউম: ২২, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউম: ৬৯, ইবনুস সুন্নি।
২৯৬. সুরা রুম: ১৭-১৯।
২৯৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৬, আমালুল ইয়াউম: ৫৬, ইবনুস সুন্নি।
২৯৮. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৫, আমলুল ইয়াউম: ১২, নাসাঈ, আমলুল ইয়াউম: ৪৬, ইবনুস সুন্নি।
২৯৯. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৫৫।
৩০০. আমালুল ইয়াউম: ৩৪, ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াউম: ০১, নাসাঈ: মুসনাদে আহমাদ ৩/৪০৬।
৩০১. আমালুল ইয়াউম: ৩৮, ইবনুস সুন্নি। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৩০২. সুনানে তিরমিজি: ২৯২৩, আমালুল ইয়াউম: ৬৮১, ইবনুস সুন্নি, সুনানে দারিমি ২/৪৫৮।
৩০৩. আমালুল ইয়াউম: ৭৭, ইবনুস সুন্নি।
৩০৪. আমালুল ইয়াউম: ৩৯, ইবনুস সুন্নি। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৩০৫. আমালুল ইয়াউম: ৪৮, ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াউম: ৫৭০, নাসাঈ, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫৪০।
৩০৬. আমালুল ইয়াউম: ৫১, ইবনুস সুন্নি।
৩০৭. মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৪, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৯২৫, আমালুল ইয়াউম: ১১০, ইবনুস সুন্নি, আমালুল ইয়াউম: ১০২, নাসাঈ।
৩০৮. আমালুল ইয়াউম: ৫৫, ইবনুস সুন্নি। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
৩০৯. সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬৪, আমালুল ইয়াউম: ৬২, ইবনুস সুন্নি।
৩১০. আমালুল ইয়াউম: ৪২, ইবনুস সুন্নি।
৩১১. আমালুল ইয়াউম: ৬৫, ইবনুস সুন্নি।
৩১২. আমালুল ইয়াউম: ৭১, ইবনুস সুন্নি।
৩১৩. সুনানে তিরমিজি: ২৮৮২, আমালুল ইয়াউম: ৭১, ইবনুস সুন্নি।
৩১৪. আমালুল ইয়াউম: ৫৭, ইবনুস সুন্নি।
📄 জুমুআর দিন সকালের আমল
অন্যান্য দিন যে সকল আমল করবে, জুমুআর দিনও সেই আমলই করবে। তবে এ দিন অন্য দিনের তুলনায় বেশি জিকির-আজকার করবে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করবে。
(২০৬) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি জুমুআর দিন ফজরের নামাজের পূর্বে এ দুআ তিন বার পড়বে, তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও আল্লাহ তাআলা তা মাফ করে দিবেন। দুআটি হল-
أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ.
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল্লাযি লা-ইলাহা ইল্লাহুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহ। ৩১৫
অর্থ: আমি ঐ আল্লাহর কাছে মাগফিরাত কামনা করি, যিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই। তিনি চিরজীবি শাশ্বত। আমি তার কাছে তাওবা করি। ৩১৬
জুমুআর দিন ফজর থেকে নিয়ে সূর্য অস্তমিত হওয়া পর্যন্ত পুরো দিনেই দুআ করা চাই। জুমুআর দিন দুআ কবুলের একটি মুহূর্ত রয়েছে। যেন সে মুহূর্তে দুআটি হয়। উক্ত মুহূর্তটির ব্যাপারে অনেক অভিমত রয়েছে। যেমন- কেউ বলেন, ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার পর। কেউ বলেন, সূর্যোদয়ের পূর্বে। কেউ বলেন, সূর্যোদয়ের পরে। কেউ বলেন, সূর্য ঢলে যাওয়ার পর। কেউ বলেন, আছরের পর। আবার কেউ অন্য সময়ের কথাও বলেন।
তবে সঠিক বাস্তবসম্মত কথা হল, যা মুসলিম শরিফে হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সে মুহূর্তটি হল, ইমাম সাহেব মিম্বরে বসা থেকে নিয়ে নামাজের সালাম ফেরানো পর্যন্ত মুহূর্তটি। ৩১৭
টিকাঃ
৩১৫. ইবনুস সুন্নি: ৮৩। হাদিসটি খুবই দুর্বল। বর্ণনাকারী ইসহাক বিন খালিদের কারণে। তবে হাদিসটি জুমুআর দিনের কয়েদ ছাড়া সহিহ সনিদে বর্ণিত হয়েছে। দেখুন: সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৭, সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৭।
৩১৬. আমালুল ইয়াউম: ৮৩, ইবনুস সুন্নি।
৩১৭. সহিহ মুসলিম: ৮৫৩।