📄 তাশাহুদের পর দরুদ পড়া
তাশাহুদের পর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়া
ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ শরিফ পড়া ওয়াজিব। ছেড়ে দিলে নামাজ হবে না। নবিজির পরিবারবর্গের ওপর দরুদ পড়া ওয়াজিব নয় বিশুদ্ধ মাজহাব অনুযায়ী। তবে এটা মুস্তাহাব। আর কেউ কেউ বলেছেন ওয়াজিব। নিম্নোক্ত দরুদ শরিফ পড়া উত্তম:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ النَّبِيِّ الْأُتِي، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّي، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসুলিকা ন্নাবিয়ি্যল উম্যিয়্যি ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ওয়া আজওয়াজিহি ওয়া জুররি্যয়্যাতিহ। কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদি ন্নাবিয়্যিল উম্যিয়্যিয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ওয়া আজওয়াজিহি ওয়া জুররি্যয়্যাতিহ, কামা বারাকতা আলা আলি ইবরাহিমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা ফিল আলামিন। ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি রহমত নাজিল করুন আপনার বান্দা মুহাম্মাদ ও উম্মি রাসুলের ওপর। আর তার পরিআর-পরিজন, স্ত্রীগণ ও বংশধরগণের প্রতি। যেমন রহমত নাজিল করেছেন ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। হে আল্লাহ, আপনি বরকত নাজিল করুন উম্মি রাসুল মুহাম্মাদের ওপর এবং তার পরিআর-পরিজন, স্ত্রীগণ ও বংশধরগণের প্রতি। যেমন বরকত নাজিল করেছেন বিশ্ববাসীর মধ্যে ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।
দরুদ প্রসঙ্গে সামনে বিস্তারিত আলোচনা আসবে "নবিজির ওপর দরুদ বর্ষণ” অধ্যায়ে।
উক্ত দরুদ শরিফে ওয়াজিব অংশ হল- اَللَّهُمَّ صَلَّ عَلَى النَّبِيِّ )আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা ন্নাবিয়্যি)। চাইলে এই বাক্যগুলোও বলা যাবে-
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ।
অর্থ: আল্লাহ পাক মুহাম্মাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدٍ.
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা রাসুলিহ।
অর্থ: আল্লাহ পাক তার রাসুলের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى رَسُوْلِهِ.
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা ন্নাবিয়্যি।
অর্থ: আল্লাহ পাক নবিজির ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِيِّ.
কোন কোন শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, এই বাক্যটিই বলতে হবে- اَللَّهُمَّ صَلَّ عَلَى مُحَمَّدٍ )আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন) অন্যথায় জায়েজ হবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, এটি বলা জায়েজ আছে- وَصَلَّى اللهُ عَلَى أَحْمَدَ )ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা আহমাদ: আল্লাহ পাক, আহমাদ নবির ওপর রহমত বর্ষণ করুন) আবার কেউ কেউ বলেন, এটি বলা জায়েজ আছে- صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি: আল্লাহ তার ওপর রহমত বর্ষণ করুন) ২৩৫
প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের পর দরুদ পড়া কারও মতে ওয়াজিব নয়। তবে মুস্তাহাব কিনা? এ ব্যাপারে দুই ধরনের মত রয়েছে। বিশুদ্ধ মত হল মুস্তাহাব। পরিবারবর্গের ওপর মুস্তাহাব নয়। কেউ কেউ বলেছেন সেটাও মুস্তাহাব। প্রথম বৈঠকে দুআ পড়া মুস্তাহাব নয়। বরং কেউ কেউ বলেছেন প্রথম বৈঠকে দুআ পড়া মাকরুহ। কেননা প্রথম বৈঠক বেশি দীর্ঘ করা যাবে না। কিন্তু দ্বিতীয় বৈঠক এর ব্যতিক্রম।
শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ পড়া
শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ করা সকলের মতেই জায়েয।
(১৪১) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদেরকে তাশাহুদ শিখানোর পর বলতেন- এরপর তোমরা যে দুআ ইচ্ছা করো। অন্য বর্ণনায় আছে- এরপর তোমরা যা পছন্দ করো তা চাও। অরেক রেওয়ায়েতে আছে- এরপর তোমাদের যা চাওয়ার চাও। ২৩৬
উল্লিখিত দুআগুলো মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। দুআ লম্বা হওয়া চাই। তবে ইমাম হলে ভিন্ন কথা। ইহকালীন ও পরকালীন বিষয়ে যা ইচ্ছা চাইবে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দুআও পড়তে পারবে বা নিজের পক্ষ থেকে দুআও পড়তে পারবে। তবে রাসুল, সাহাবা থেকে বর্ণিত দুআ পড়াই উত্তম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ স্থানে পড়ার দুআ বা যে কোন স্থানে পড়ার দুআই পড়া যাবে। তবে এক্ষেত্রেও উত্তম হল, নামাজের এই স্থান তথা শেষ বৈঠকে পড়ার যেসব দুআ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পড়া। নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ার জন্য হাদিসে অনেক দুআ বর্ণিত হয়েছে-
(১৪২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُدِ الْآخِرِ، فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ، مِنْ أَرْبَعٍ : مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের কেউ যখন শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে শেষ করে, সে যেন চারটি বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে পানাহ চায়। যথা: (১) জাহান্নাম থেকে (২) কবরের শাস্তি থেকে (৩) জীবিত ও মৃত্যুকালীন পরীক্ষা থেকে (৪) দাজ্জালের ফিতনা থেকে। ২৩৭
সহিহ মুসলিম শরিফের আরেক বর্ণনায় আছে যে, তোমরা শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর আল্লাহর কাছে চারটি বিষয়ে আশ্রয় চাও। এভাবে বলবে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চাই, কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই। ২৩৮
(১৪৩) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাসামি ওয়াল মাগরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং মুক্তি চাই অপরাধ ও ঘৃণা থেকে। ২৩৯
(১৪৪) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, নামাজের শেষে তাশাহুদের পর সালাম ফিরানোর আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ ، وَمَا أَسْرَفْتُ ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي ، أَنْتَ الْمُقَدَّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخَّرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু, ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলানতু ওয়া মা আসরাফতু ওয়া মা আনতা আলামু বিহি মিন্নি। আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়ানতাল মুআখ্খির। লা ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার অতীতের গুনাহ মাফ করে দিন। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দিন। আমার যত অপচয় হয়েছে সে সম্পর্কে আপনি আমার চেয়েও বেশি অবগত। আপনি অনাদি-অনন্ত, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। ২৪০
(১৪৫) হজরত আবু বকর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাকে একটি দুআ শিখিয়ে দিন যা আমি নামাজে পড়বো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ শিখিয়েছেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা, ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি গুনাহ করে নিজের অনেক অবিচার করে ফেলেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপন অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয় আপনিই মহা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
ইমাম বুখারিসহ অন্যান্য ইমামগণ এই হাদিস দ্বারা নামাজ শেষে উক্ত দুআ পড়ার কথা বলেছেন। তাদের এই হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা শুদ্ধ হয়েছে। কারণ, হাদিসে আসছে- 'এমন এমন দুআ শিখিয়ে দিন, যা আমি নামাজে পড়ব' যে কথায় সকল নামাজ অন্তর্ভুক্ত। ২৪১
(১৪৬) হজরত আবু সালেহ জাকওয়ান রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি কিছু সংখ্যক সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তিকে বললেন, তুমি নামাজে কী বল? ঐ ব্যক্তি বলল, আমি তাশাহুদ পড়ি। এরপর এই দুআটি পড়ি। তবে আমি আপনার ও মুআজের মতো গুঞ্জরণ করতে পারি না। নবিজি বললেন, এই দুয়ের মাঝেই আমরা গুঞ্জরণ করি। দুআটি এরকম-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা, ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। ২৪২
নিচের দুআটি সর্বত্র পড়া মুস্তাহাব-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتَّقَى، وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াহ। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াতুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা কামনা করছি। আপনার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও অমুক্ষাপেক্ষিতা চাচ্ছি। ২৪৩
টিকাঃ
২৩৫. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দরুদ শরিফ পড়া সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না। তাদের মতে নিচের দরুদ শরিফটি পড়া উত্তম-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। যেমন রহমত নাজিল করেছিলেন ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ, আপনি বরকত নাজিল করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের প্রতি। যেমন বরকত নাজিল করেছিলেন ইবরাহিম ও তার বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান。
২৩৬. সহিহ বুখারি: ৮৩১, সহিহ মুসলিম: ৪০২।
২৩৭. সহিহ মুসলিম: ৫৮৯।
২৩৮. সহিহ বুখারি: ১৩৭৭, সহিহ মুসলিম: ৫৮৮, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৩, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৮।
২৩৯. সহিহ বুখারি: ৮৩২, সুনানে মুসলিম: ৫৮৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৮০, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৬।
২৪০. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪১৭।
২৪১. সহিহ বুখারি: ৮৩৪, সহিহ মুসলিম: ২৭০৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৫২১, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৩।- হানাফি উলামায়ে কেরাম নামাজের শেষে উক্ত দুআটি পড়ার কথাই বলেন। এছাড়া অন্য দুআও পড়তে পারবে। (হেদায়া ১/১১৩)
২৪২. সুনানে আবু দাউদ: ৭৯২, সুনানে ইবনে মাজা: ৯১০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৮৪।
২৪৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৪, মুসনাদে আহমাদ: ৩৯৫০।
তাশাহুদের পর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়া
ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ শরিফ পড়া ওয়াজিব। ছেড়ে দিলে নামাজ হবে না। নবিজির পরিবারবর্গের ওপর দরুদ পড়া ওয়াজিব নয় বিশুদ্ধ মাজহাব অনুযায়ী। তবে এটা মুস্তাহাব। আর কেউ কেউ বলেছেন ওয়াজিব। নিম্নোক্ত দরুদ শরিফ পড়া উত্তম:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ النَّبِيِّ الْأُتِي، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّي، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসুলিকা ন্নাবিয়ি্যল উম্যিয়্যি ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ওয়া আজওয়াজিহি ওয়া জুররি্যয়্যাতিহ। কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদি ন্নাবিয়্যিল উম্যিয়্যিয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ওয়া আজওয়াজিহি ওয়া জুররি্যয়্যাতিহ, কামা বারাকতা আলা আলি ইবরাহিমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা ফিল আলামিন। ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি রহমত নাজিল করুন আপনার বান্দা মুহাম্মাদ ও উম্মি রাসুলের ওপর। আর তার পরিআর-পরিজন, স্ত্রীগণ ও বংশধরগণের প্রতি। যেমন রহমত নাজিল করেছেন ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। হে আল্লাহ, আপনি বরকত নাজিল করুন উম্মি রাসুল মুহাম্মাদের ওপর এবং তার পরিআর-পরিজন, স্ত্রীগণ ও বংশধরগণের প্রতি। যেমন বরকত নাজিল করেছেন বিশ্ববাসীর মধ্যে ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।
দরুদ প্রসঙ্গে সামনে বিস্তারিত আলোচনা আসবে "নবিজির ওপর দরুদ বর্ষণ” অধ্যায়ে।
উক্ত দরুদ শরিফে ওয়াজিব অংশ হল- اَللَّهُمَّ صَلَّ عَلَى النَّبِيِّ )আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা ন্নাবিয়্যি)। চাইলে এই বাক্যগুলোও বলা যাবে-
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ।
অর্থ: আল্লাহ পাক মুহাম্মাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدٍ.
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা রাসুলিহ।
অর্থ: আল্লাহ পাক তার রাসুলের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى رَسُوْلِهِ.
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা ন্নাবিয়্যি।
অর্থ: আল্লাহ পাক নবিজির ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِيِّ.
কোন কোন শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, এই বাক্যটিই বলতে হবে- اَللَّهُمَّ صَلَّ عَلَى مُحَمَّدٍ )আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন) অন্যথায় জায়েজ হবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, এটি বলা জায়েজ আছে- وَصَلَّى اللهُ عَلَى أَحْمَدَ )ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা আহমাদ: আল্লাহ পাক, আহমাদ নবির ওপর রহমত বর্ষণ করুন) আবার কেউ কেউ বলেন, এটি বলা জায়েজ আছে- صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি: আল্লাহ তার ওপর রহমত বর্ষণ করুন) ২৩৫
প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের পর দরুদ পড়া কারও মতে ওয়াজিব নয়। তবে মুস্তাহাব কিনা? এ ব্যাপারে দুই ধরনের মত রয়েছে। বিশুদ্ধ মত হল মুস্তাহাব। পরিবারবর্গের ওপর মুস্তাহাব নয়। কেউ কেউ বলেছেন সেটাও মুস্তাহাব। প্রথম বৈঠকে দুআ পড়া মুস্তাহাব নয়। বরং কেউ কেউ বলেছেন প্রথম বৈঠকে দুআ পড়া মাকরুহ। কেননা প্রথম বৈঠক বেশি দীর্ঘ করা যাবে না। কিন্তু দ্বিতীয় বৈঠক এর ব্যতিক্রম।
শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ পড়া
শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ করা সকলের মতেই জায়েয।
(১৪১) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদেরকে তাশাহুদ শিখানোর পর বলতেন- এরপর তোমরা যে দুআ ইচ্ছা করো। অন্য বর্ণনায় আছে- এরপর তোমরা যা পছন্দ করো তা চাও। অরেক রেওয়ায়েতে আছে- এরপর তোমাদের যা চাওয়ার চাও। ২৩৬
উল্লিখিত দুআগুলো মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। দুআ লম্বা হওয়া চাই। তবে ইমাম হলে ভিন্ন কথা। ইহকালীন ও পরকালীন বিষয়ে যা ইচ্ছা চাইবে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দুআও পড়তে পারবে বা নিজের পক্ষ থেকে দুআও পড়তে পারবে। তবে রাসুল, সাহাবা থেকে বর্ণিত দুআ পড়াই উত্তম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ স্থানে পড়ার দুআ বা যে কোন স্থানে পড়ার দুআই পড়া যাবে। তবে এক্ষেত্রেও উত্তম হল, নামাজের এই স্থান তথা শেষ বৈঠকে পড়ার যেসব দুআ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পড়া। নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ার জন্য হাদিসে অনেক দুআ বর্ণিত হয়েছে-
(১৪২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُدِ الْآخِرِ، فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ، مِنْ أَرْبَعٍ : مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের কেউ যখন শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে শেষ করে, সে যেন চারটি বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে পানাহ চায়। যথা: (১) জাহান্নাম থেকে (২) কবরের শাস্তি থেকে (৩) জীবিত ও মৃত্যুকালীন পরীক্ষা থেকে (৪) দাজ্জালের ফিতনা থেকে। ২৩৭
সহিহ মুসলিম শরিফের আরেক বর্ণনায় আছে যে, তোমরা শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর আল্লাহর কাছে চারটি বিষয়ে আশ্রয় চাও। এভাবে বলবে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চাই, কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই। ২৩৮
(১৪৩) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাসামি ওয়াল মাগরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং মুক্তি চাই অপরাধ ও ঘৃণা থেকে। ২৩৯
(১৪৪) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, নামাজের শেষে তাশাহুদের পর সালাম ফিরানোর আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ ، وَمَا أَسْرَفْتُ ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي ، أَنْتَ الْمُقَدَّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخَّرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু, ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলানতু ওয়া মা আসরাফতু ওয়া মা আনতা আলামু বিহি মিন্নি। আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়ানতাল মুআখ্খির। লা ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার অতীতের গুনাহ মাফ করে দিন। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দিন। আমার যত অপচয় হয়েছে সে সম্পর্কে আপনি আমার চেয়েও বেশি অবগত। আপনি অনাদি-অনন্ত, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। ২৪০
(১৪৫) হজরত আবু বকর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাকে একটি দুআ শিখিয়ে দিন যা আমি নামাজে পড়বো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ শিখিয়েছেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা, ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি গুনাহ করে নিজের অনেক অবিচার করে ফেলেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপন অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয় আপনিই মহা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
ইমাম বুখারিসহ অন্যান্য ইমামগণ এই হাদিস দ্বারা নামাজ শেষে উক্ত দুআ পড়ার কথা বলেছেন। তাদের এই হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা শুদ্ধ হয়েছে। কারণ, হাদিসে আসছে- 'এমন এমন দুআ শিখিয়ে দিন, যা আমি নামাজে পড়ব' যে কথায় সকল নামাজ অন্তর্ভুক্ত। ২৪১
(১৪৬) হজরত আবু সালেহ জাকওয়ান রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি কিছু সংখ্যক সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তিকে বললেন, তুমি নামাজে কী বল? ঐ ব্যক্তি বলল, আমি তাশাহুদ পড়ি। এরপর এই দুআটি পড়ি। তবে আমি আপনার ও মুআজের মতো গুঞ্জরণ করতে পারি না। নবিজি বললেন, এই দুয়ের মাঝেই আমরা গুঞ্জরণ করি। দুআটি এরকম-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা, ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। ২৪২
নিচের দুআটি সর্বত্র পড়া মুস্তাহাব-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتَّقَى، وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াহ। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াতুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা কামনা করছি। আপনার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও অমুক্ষাপেক্ষিতা চাচ্ছি। ২৪৩
টিকাঃ
২৩৫. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দরুদ শরিফ পড়া সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না। তাদের মতে নিচের দরুদ শরিফটি পড়া উত্তম-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। যেমন রহমত নাজিল করেছিলেন ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ, আপনি বরকত নাজিল করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের প্রতি। যেমন বরকত নাজিল করেছিলেন ইবরাহিম ও তার বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান。
২৩৬. সহিহ বুখারি: ৮৩১, সহিহ মুসলিম: ৪০২।
২৩৭. সহিহ মুসলিম: ৫৮৯।
২৩৮. সহিহ বুখারি: ১৩৭৭, সহিহ মুসলিম: ৫৮৮, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৩, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৮।
২৩৯. সহিহ বুখারি: ৮৩২, সুনানে মুসলিম: ৫৮৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৮০, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৬।
২৪০. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪১৭।
২৪১. সহিহ বুখারি: ৮৩৪, সহিহ মুসলিম: ২৭০৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৫২১, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৩।- হানাফি উলামায়ে কেরাম নামাজের শেষে উক্ত দুআটি পড়ার কথাই বলেন। এছাড়া অন্য দুআও পড়তে পারবে। (হেদায়া ১/১১৩)
২৪২. সুনানে আবু দাউদ: ৭৯২, সুনানে ইবনে মাজা: ৯১০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৮৪।
২৪৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৪, মুসনাদে আহমাদ: ৩৯৫০।
📄 শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ পড়া
শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ করা সকলের মতেই জায়েয।
(১৪১) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদেরকে তাশাহুদ শিখানোর পর বলতেন- এরপর তোমরা যে দুআ ইচ্ছা করো। অন্য বর্ণনায় আছে- এরপর তোমরা যা পছন্দ করো তা চাও। অরেক রেওয়ায়েতে আছে- এরপর তোমাদের যা চাওয়ার চাও। ২৩৬
উল্লিখিত দুআগুলো মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। দুআ লম্বা হওয়া চাই। তবে ইমাম হলে ভিন্ন কথা। ইহকালীন ও পরকালীন বিষয়ে যা ইচ্ছা চাইবে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দুআও পড়তে পারবে বা নিজের পক্ষ থেকে দুআও পড়তে পারবে। তবে রাসুল, সাহাবা থেকে বর্ণিত দুআ পড়াই উত্তম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ স্থানে পড়ার দুআ বা যে কোন স্থানে পড়ার দুআই পড়া যাবে। তবে এক্ষেত্রেও উত্তম হল, নামাজের এই স্থান তথা শেষ বৈঠকে পড়ার যেসব দুআ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পড়া। নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ার জন্য হাদিসে অনেক দুআ বর্ণিত হয়েছে-
(১৪২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُدِ الْآخِرِ، فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ، مِنْ أَرْبَعٍ : مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের কেউ যখন শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে শেষ করে, সে যেন চারটি বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে পানাহ চায়। যথা: (১) জাহান্নাম থেকে (২) কবরের শাস্তি থেকে (৩) জীবিত ও মৃত্যুকালীন পরীক্ষা থেকে (৪) দাজ্জালের ফিতনা থেকে। ২৩৭
সহিহ মুসলিম শরিফের আরেক বর্ণনায় আছে যে, তোমরা শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর আল্লাহর কাছে চারটি বিষয়ে আশ্রয় চাও। এভাবে বলবে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চাই, কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই। ২৩৮
(১৪৩) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাসামি ওয়াল মাগরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং মুক্তি চাই অপরাধ ও ঘৃণা থেকে। ২৩৯
(১৪৪) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, নামাজের শেষে তাশাহুদের পর সালাম ফিরানোর আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ ، وَمَا أَسْرَفْتُ ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي ، أَنْتَ الْمُقَدَّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخَّرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু, ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলানতু ওয়া মা আসরাফতু ওয়া মা আনতা আলামু বিহি মিন্নি। আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়ানতাল মুআখ্খির। লা ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার অতীতের গুনাহ মাফ করে দিন। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দিন। আমার যত অপচয় হয়েছে সে সম্পর্কে আপনি আমার চেয়েও বেশি অবগত। আপনি অনাদি-অনন্ত, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। ২৪০
(১৪৫) হজরত আবু বকর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাকে একটি দুআ শিখিয়ে দিন যা আমি নামাজে পড়বো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ শিখিয়েছেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা, ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি গুনাহ করে নিজের অনেক অবিচার করে ফেলেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপন অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয় আপনিই মহা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
ইমাম বুখারিসহ অন্যান্য ইমামগণ এই হাদিস দ্বারা নামাজ শেষে উক্ত দুআ পড়ার কথা বলেছেন। তাদের এই হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা শুদ্ধ হয়েছে। কারণ, হাদিসে আসছে- 'এমন এমন দুআ শিখিয়ে দিন, যা আমি নামাজে পড়ব' যে কথায় সকল নামাজ অন্তর্ভুক্ত। ২৪১
(১৪৬) হজরত আবু সালেহ জাকওয়ান রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি কিছু সংখ্যক সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তিকে বললেন, তুমি নামাজে কী বল? ঐ ব্যক্তি বলল, আমি তাশাহুদ পড়ি। এরপর এই দুআটি পড়ি। তবে আমি আপনার ও মুআজের মতো গুঞ্জরণ করতে পারি না। নবিজি বললেন, এই দুয়ের মাঝেই আমরা গুঞ্জরণ করি। দুআটি এরকম-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা, ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। ২৪২
নিচের দুআটি সর্বত্র পড়া মুস্তাহাব-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتَّقَى، وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াহ। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াতুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা কামনা করছি। আপনার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও অমুক্ষাপেক্ষিতা চাচ্ছি। ২৪৩
টিকাঃ
২৩৬. সহিহ বুখারি: ৮৩১, সহিহ মুসলিম: ৪০২।
২৩৭. সহিহ মুসলিম: ৫৮৯।
২৩৮. সহিহ বুখারি: ১৩৭৭, সহিহ মুসলিম: ৫৮৮, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৩, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৮।
২৩৯. সহিহ বুখারি: ৮৩২, সুনানে মুসলিম: ৫৮৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৮০, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৬।
২৪০. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪১৭।
২৪১. সহিহ বুখারি: ৮৩৪, সহিহ মুসলিম: ২৭০৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৫২১, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৩।- হানাফি উলামায়ে কেরাম নামাজের শেষে উক্ত দুআটি পড়ার কথাই বলেন। এছাড়া অন্য দুআও পড়তে পারবে। (হেদায়া ১/১১৩)
২৪২. সুনানে আবু দাউদ: ৭৯২, সুনানে ইবনে মাজা: ৯১০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৮৪।
২৪৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৪, মুসনাদে আহমাদ: ৩৯৫০।
📄 সালাম ফেরানো
নামাজ শেষ করার জন্য সালাম দেয়া
নামাজ থেকে বের হওয়ার জন্য সালাম দেয়া নামাজের রুকন ও ফরজ। সালাম ছাড়া নামাজ শুদ্ধ হবে না। প্রসিদ্ধ তিন ইমাম তথা ইমাম শাফেয়ি, মালেক ও আহমদ রহ. ও অধিকাংশ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উলামায়ে কেরামের মতে সালাম ফরজ। এবিষয়ে সহিহ ও প্রসিদ্ধ হাদিসে বিষয়টি সুস্পষ্ট। ২৪৪
সালামের ক্ষেত্রে উত্তম পদ্ধতি হল, ডান এবং বাম দিকে ফিরে বলবে-
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَרَحْمَةُ اللهِ.
উচ্চারণ: আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
অর্থ: আপনাদের ওপর শান্তি ও আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
এর সাথে وَبَرَكَاتُهُ )ওয়া বারাকাতুহ: আর তার বরকত) বলা মুস্তাহাব নয়। কেননা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের থেকে প্রসিদ্ধ সূত্রে এমনটি বর্ণিত নেই। যদিও সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় তা এসেছে। শাফেয়ি কোন কোন উলামায়ে কেরাম তা পড়ার কথা বলেছেন। যেমন, ইমামুল হারামাইন, জাহের সারাখসি, রুয়ানি। কিন্তু প্রকৃত কথা হল উক্ত রেওয়াতটি শায। প্রসিদ্ধ রেওয়ায়েত হল, তা না বলা।
ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামাজি ব্যক্তি, ছোট জামাত বা বড় জামাত, ফরজ বা নফল নামাজে তথা সর্বাবস্থায় উল্লিখিত পদ্ধতিতে দুই সালাম দেবে। সালাম ফেরানোর সময় ডান পাশ ও বাম পাশে ফিরবে।
ওয়াজিব হল, এক সালাম ফেরানো। আর দ্বিতীয় সালামটি সুন্নাত। দ্বিতীয় সালাম না দিলে নামাজের কোন ক্ষতি হবে না
সালামের যে শব্দ বলা ওয়াজিব: এভাবে বলবে- اَلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ (আস্সালামু আলাইকুম), এ পর্যন্ত বলা ওয়াজিব। যদি سَلَامٌ عَلَيْكُمْ (সালামুন আলাইকুম) বলে তাহলে বিশুদ্ধ মতানুযায়ী নামাজ হবে না। যদি عَلَيْكُمُ السَّلَامُ (আলাইকুমুস সালাম) বলে তাহলে নামাজ সঠিক হবে।
আর যদি اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ (আসসালামু আলাইকা: তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) বলে অথবা سَلَائِي عَلَيْكَ (সালামি আলাইকা: তোমার ওপর আমার শান্তি বর্ষণ) বা سَلَائِي عَلَيْكُمْ (সালামি আলাইকুম: তোমাদের ওপর আমার শান্তি বর্ষণ) বা سَلَامُ اللهِ عَلَيْكُمْ (সালামুল্লাহি আলাইকুম: তোমাদের ওপর আল্লাহর শান্তি বর্ষণ) বা سَلَامُ عَلَيْكُمْ (সালামু আলাইকুম) তানভিন ছাড়া বা اَلسَّلَامُ عَلَيْهِمْ (আসসালামু আলাইহিম: তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক)- এগুলোর কোনটির মাধ্যমেই সালাম সহিহ হবে না। ইচ্ছাকৃত এমন করলে নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে। তবে اَلسَّلَامُ عَلَيْهِمْ (আসসালামু আলাইহিম: তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) বললে নামাজ নষ্ট হবে না। কেননা এটা দুআ। আর যদি ভুলক্রমে বলে তাহলে নামাজ বাতিল হবে না এবং এর ফলে নামাজ থেকে বেরও হতে পারবে না। বরং নামাজ থেকে বের হওয়ার জন্য নতুন করে সঠিকভাবে সালাম দিতে হবে। যদি ইমাম কেবলমাত্র একদিকে সালাম দেয়, তাহলে মুক্তাদিরা উভয় দিকে সালাম দেবে।
কাজি আবু তাইয়েব তাবারি রহ. বলেন, ইমাম সালাম ফেরানোর পর মুক্তাদিরা চাইলে ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরাবে বা দুআ ইত্যাদি পড়ে বৈঠককে আরো দীর্ঘ করবে। ২৪৫
নামাজি ব্যক্তির সঙ্গে কেউ কথা বললে নামাজি ব্যক্তির করণীয়
(১৪৭) হজরত সাহল বিন সাদ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি নামাজের মধ্যে অকস্মাৎ কিছু ঘটে তাহলে বলবে-
سُبْحَانَ اللهِ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি।
অন্য বর্ণনায় আছে-
إِذَا نَابَكُمْ أَمْرُ فَلْيُسَبِّحُ الرِّجَالُ ، وَلْتَصْفِقِ النِّسَاءُ.
অর্থ: নামাজের মধ্যে অকস্মাৎ কিছু ঘটলে পুরুষরা 'সুবহানাল্লাহ' বলবে, আর মহিলারা ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর মারবে।
- অন্য বর্ণনায় আছে-
التَّسْبِيحُ لِلرِّجَالِ وَالتَّصْفِيقُ لِلنِّسَاءِ.
অর্থ: তাসবিহ তথা সুবহানাল্লাহ বলা পুরুষদের জন্য, আর ডান হাতের তালু বাম হাতের পিঠের ওপর মারা মহিলাদের জন্য। ২৪৬
টিকাঃ
২৪৪. হানাফিদের নিকট তা ফরজ নয়; বরং ওয়াজিব। তাই সালাম ছাড়া অন্য কোনভাবে নামাজ থেকে বের হলেও নামাজ শুদ্ধ হয়ে যাবে। তবে ওয়াজিব তরক করার কারণে তাকে পুণরায় নামাজটি পড়া ওয়াজিব। (হেদায়া ১/১১৪)
২৪৫. হানাফিদের মতে মুক্তাদি ইমামের সঙ্গে সালাম ফেরাবে। কারণ, ইমামের অনুসরণ করা ওয়াজিব। তবে যদি মুক্তাদির তাশাহুদ পড়া বাকি থাকে, তাহলে তাশাহুদ শেষ করে সালাম ফেরাবে। কারণ, তাশাহুদও ওয়াজিব।
২৪৬. সহিহ বুখারি: ৬৮৪, সহিহ মুসলিম: ৪২১, সুনানে আবু দাউদ: ৯৪০, মুয়াত্তা মালেক ১/১৬৩- ১৬৪, সুনানে নাসাঈ ২/৭৭-৭৮।
📄 নামাজের পর জিকির ও দুআ
উলামায়ে কেরামের মতে নামাজের পর জিকির মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে নানান বিষয়ে অনেক সহিহ হাদিস রয়েছে। নিম্নে এ সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ হাদিস উল্লেখ করা হল-
(১৪৮) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত-
قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ؟ قَالَ: جَوْفَ اللَّيْلِ الْآخِرَ، وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাস করা হল, ইয়া রাসুলাল্লাহ, কোন সময় দুআ বেশি কবুল হয়? উত্তরে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, শেষ রাতের দুআ ও ফরজ নামাজ সমাপ্ত করার পরের দুআ।– তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ২৪৭
(১৪৯) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
كُنْتُ أَعْرِفُ انْقِضَاءَ صَلَاةِ رَسُوْلِ اللهِ، صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالتَّكْبِيرِ.
অর্থ: আমি তাকবিরের মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজ শেষ হয়েছে বুঝতে পারতাম।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ رَفْعَ الصَّوْتِ لِلذِّكْرِ حِيْنَ يَنْصَرِفُ النَّاسُ مِنَ الْمَكْتُوْبَةِ كَانَ ذَلِكَ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. وَأَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ قَالَ : كُنْتُ أَعْلَمُ إِذَا انْصَرَفُوْا بِذَالِكَ وَأَسْمَعُهُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ফরজ নামাজের পর লোকেরা উচু আওয়াজে তাকবির ধ্বনি দিতো। অন্য বর্ণনায় আছে- ইবনে আব্বাস রাদি. বলেন, তাকবির ধ্বনির আওয়াজ শোনে আমি বোঝতে পারতাম যে, তাদের নামাজ শেষ হয়েছে। ২৪৮
(১৫০) হজরত সাওবান রাদি. -এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ শেষ করতেন, তখন তিনবার ইস্তিগফার করতেন। এরপর নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلَامُ وَمِنْكَ السَّلَامُ ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আনতাস সালামু ওয়া মিনকাস সালামু, তাবারাকতা ইয়া যালজালালি ওয়াল ইকরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি দোষ-ত্রুটি থেকে চির মুক্ত, নিরাপত্তার মালিক। আপনার কাছ থেকেই আসে নিরাপত্তা। আপনি মহিমাময়, প্রতাপ ও অনুগ্রহের অধিকারী।
এই হাদিসের একজন বর্ণনাকারী ইমাম আওযাঈ রাহিমাহুল্লাহুকে জিজ্ঞাসা করলেন- কীভাবে তিনি ইস্তিগফার করতেন? তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন-
اسْتَغْفِرُ اللهَ، أَسْتَغْفِرُ اللهِ.
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহ, আসতাগফিরুল্লাহ।
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি। ২৪৯
(১৫১) হজরত মুগিরা বিন শুবা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ শেষ করতেন তখন নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الْجَدُّ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহ, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল Hamdu ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়ন কাদির। আল্লাহুম্মা লা মানিআ লিমা আতাইতা ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা ইয়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। কেউ আপনার দান রোধ করতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। ২৫০
(১৫২) হজরত আবদুল্লাহ বিন যুবাইর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন। আর বলতেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি নামাজের পর এগুলো পড়তেন। দুআটি এই-
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যิน কাদির। লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুন নি’মাতু ওয়ালাহুল ফাদলু, ওয়ালাহুস সানাইল হাসান, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুখলিসিনা লাহুদ্দিন, ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন।
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহ, লাহুল মুলকু, ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়ন কাদির। লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আযিযিল হাকিম। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। ওয়ালা নাবুদু ইল্লা ইয়্যাহু, লাহুন্নিমাতু ওয়া লাহুল ফাদলু, ওয়া লাহুস সানাউল হাসান। লা ইলাহা ইল্লাহু মুখলিসিনা লাহুদ্দিন, ওয়া লাউ কারিহাল কাফিরুন।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। প্রজ্ঞাময় পরাক্রমশালী আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই। একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই, আমরা তাকে ছেড়ে কারো উপাসনাও করি না। সব নেয়ামত তার, সকল অনুগ্রহ তার এবং সুপ্রশংসাও কেবল তার। একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই। আমরা খাঁটি অন্তরে তা স্বীকার করি, কাফেররা যতই একে খারাপ মনে করুক। ২৫১
(১৫৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ فُقَرَاءَ الْمُهَاجِرِينَ أَتَوْا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالُوا: ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُورِ بِالدَّرَجَاتِ الْعُلَا وَالنَّعِيمِ الْمُقِيمِ، فَقَالَ: وَمَا ذَاكَ؟ قَالُوا : يُصَلُّوْنَ كَمَا نُصَلِّي، وَيَصُوْمُوْنَ كَمَا نَصُوْمُ، وَيَتَصَدَّقُوْنَ وَلَا نَتَصَدَّقُ، وَيُعْتِقُوْنَ وَلَا نُعْتِقُ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَفَلَا أُعَلِّمُكُمْ شَيْئًا تُدْرِكُوْنَ بِهِ مَنْ سَبَقَكُمْ، وَتَسْبِقُوْنَ بِهِ مَنْ بَعْدَكُمْ، وَلَا يَكُوْنُ أَحَدٌ أَفْضَلَ مِنْكُمْ إِلَّا مَنْ صَنَعَ مِثْلَ مَا صَنَعْتُمْ؟ قَالُوا : بَلَى يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ: تُسَبِّحُوْنَ، وَتُكَبِّرُوْنَ، وَتَحْمَدُوْنَ دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ.
অর্থ: তিনি বলেন, দরিদ্র মুহাজিরগণ রাসুলের কাছে এসে বললেন, ধনী সাহাবায়ে কেরাম উচু মর্যাদা, স্থায়ী নেয়ামত লাভ করছেন- আমরা যেমন নামাজ পড়ি, তারাও নামাজ পড়ে। আমরা যেমন রোজা রাখি, তারাও রোজা রাখে। তবে তাদের রয়েছে অতিরিক্ত ধন-সম্পদ যা দ্বারা তারা হজ্ব, উমরা করে, জিহাদে অংশ নেয় এবং দান করে (এগুলো দিয়ে তারা আমাদের থেকে এগিয়ে যাচ্ছে)। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি কি তোমাদেরকে এমন আমল বলে দেব যদ্দারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমান হতে পারবে এবং যারা তোমাদের পরে আছে তাদের থেকে এগিয়ে যেতে পারবে। তোমাদের থেকে উত্তম আর কেউ হতে পারবে না। তবে হ্যাঁ, তারা হতে পারবে যারা এই আমল করবে। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! অবশ্যই বলুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা প্রত্যেক ফরজ নামাজান্তে ৩৩ বার করে সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলবে। ২৫২
(১৫৪) হজরত কাব বিন উজরা থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مُعْقِبَاتُ لَا يَخِيبُ قَائِلُهُنَّ - أَوْ فَاعِلُهُنَّ - دُبُرَ كُلِّ صَلَاةٍ مَكْتُوبَةٍ : ثَلَاثُ وَثَلَاثُوْنَ تَسْبِيحَةً، وَثَلَاثُ وَثَلَاثُوْنَ تَحْمِيدَةً، وَأَرْبَعُ وَثَلَاثُوْنَ تَكْبِيرَةً.
অর্থ: ফরজ নামাজের শেষে তাসবিহ পাঠকারী ব্যক্তি নিষ্ফল হয় না। আর তা হল, ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ্ এবং ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া। ২৫৩
(১৫৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
مَنْ سَبَّحَ اللَّهَ فِي دُبُرِ كُلَّ صَلَاةٍ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَحَمِدَ اللَّهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَكَبَّرَ اللهَ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَقَالَ تَمَامَ الْمِائَةِ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٍ، غُفِرَتْ خَطَايَاهُ وَإِنْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার আল্লাহু আকবার বলে এবং একশত বার পূর্ণ হওয়ার পর নিম্নোক্ত দুআ পড়ে, তার সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয় যদিও তার গুনাহ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। দুআটি এই-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। ২৫৪
(১৫৬) হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি ফরজ নামাজের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ، وَأَعُوْذُ بِكَ أَنْ أُرَدَّ إِلَى أَرْذَلِ الْعُمَرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الدُّنْيَا وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল যুবনি, ওয়া আউজুবিকা আন উরাদ্দা ইলা আরজালিল উমুরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিদ্দুনয়া ওয়া আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবর।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি কাপুরুষতা থেকে পানাহ চাই। একদম বার্ধক্যে উপনীত হওয়া থেকে পানাহ চাই। দুনিয়ার ফিতনা থেকে আশ্রয় চাই। কবরের আজাব থেকে আশ্রয় চাই। ২৫৫
(১৫৭) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
خَصْلَتَانِ - أَوْ خَلَّتَانِ - لَا يُحَافِظُ عَلَيْهِمَا عَبْدُ مُسْلِمٌ إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ، هُمَا يَسِيرُ، وَمَنْ يَعْمَلُ بِهِمَا قَلِيلٌ ؛ يُسَبِّحُ فِي دُبُرِ كُلَّ صَلَاةٍ عَشْرًا، وَيَحْمَدُ عَشْرًا، وَيُكَبِّرُ عَشْرًا، فَذَالِكَ خَمْسُوْنَ وَمِائَةٌ بِاللِّسَانِ، وَأَلْفُ وَخَمْسُمِائَةٍ فِي الْمِيزَانِ. وَيُكَبِّرُ أَرْبَعًا وَثَلَاثِينَ إِذَا أَخَذَ مَضْجَعَهُ، وَيَحْمَدُ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، وَيُسَبِّحُ ثَلَاثًا وَثَلَاثِينَ، فَذَالِكَ مِائَةٌ بِاللِّسَانِ وَأَلْفُ فِي الْمِيزَانِ. فَلَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْقِدُهَا بِيَدِهِ ، قَالُوا : يَا رَسُوْلَ اللهِ، كَيْفَ هُمَا يَسِيرُ وَمَنْ يَعْمَلُ بِهِمَا قَلِيلُ؟ قَالَ: يَأْتِي أَحَدَكُمْ - يَعْنِي الشَّيْطَانَ - فِي مَنَامِهِ فَيُنَوِّمُهُ قَبْلَ أَنْ يَقُوْلَهُ، وَيَأْتِيْهِ فِي صَلَاتِهِ فَيُذَكِّرُهُ حَاجَةً قَبْلَ أَنْ يَقُوْلَهَا.
অর্থ: কোন মুসলমান ব্যক্তি দুটি আমলের প্রতি যত্নবান হলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমল দুটি অতি সহজ এবং এর ওপর আমলকারী খুবই কম। ১ম আমল হল, প্রতি ফরজ নামাজের পর ১০বার সুবহানাল্লাহ পড়া, ১০বার আলহামদুলিল্লাহ পড়া এবং ১০ আল্লাহু আকবার বলা। পাঁচ ওয়াক্ত মিলে ১৫০ বার হয়, যা যবানে ১৫০ বার হলেও মিযানে হয় এক হাজার পাঁচশত বার। ২য় আমল হল, ঘুমানোর সময় ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৩ বার আল্লাহু আকবার। যবানে যদিও ১০০ শত হয়, কিন্তু দাড়িপাল্লায় তা এক হাজার পরিমাণ সওয়াব।
ইবনে উমর রাদি. বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাতে গণনা করে পড়তে দেখেছি। সাহাবায়ে কেরাম বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, কীভাবে এটি সহজ কিন্তু আমলকারী কম? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ঘুমানোর সময় শয়তান তোমাদের কাছে আসে, আর এই তাসবিহগুলো পড়ার পূর্বেই ঘুম পাড়িয়ে দেয়। আবার নামাজের পর এসে তোমাদের বিভিন্ন হাজতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, ফলে এগুলো পড়া হয় না। ২৫৬
(১৫৮) হজরত উকবা বিন আমের রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَمَرَنِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ أَقْرَأَ بِالْمُعَوَّذَتَيْنِ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ.
অর্থ: তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর সুরা ফালাক ও সুরা নাস পড়তে বলেছেন। ২৫৭
- সুনানে আবু দাউদের এক বর্ণনায় اَلْمُعَوَّذَاتُ )আল-মুআউয়িজাত) শব্দটি এসেছে, তাই উক্ত দুটিসহ সুরা এখলাসও পড়া চাই।
(১৫৯) হজরত মুআজ রাদি. থেকে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাত ধরে বললেন, হে মুয়াজ! আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে মহব্বত করি। হে মুয়াজ! আমি তোমাকে ওসিয়ত করছি, প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তে ভুলবেন না-
اللَّهُمَّ أَعِنِّي عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আইন্নি আলা যিকরিকা ওয়া শোকরিকা ওয়াহুসনি ইবাদাতিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি জিকির, শোকর ও সুন্দর ইবাদতের ব্যাপারে আপনার সাহায্য চাই। ২৫৮
(১৬০) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষ করে ডান হাত দিয়ে মুখমণ্ডল মুছতেন, এরপর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
أَشْهَدُ أَن لَّا إِلَهَ إِلَّا اللهُ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ اللَّهُمَّ أَذْهِبْ عَنِّي الْهَمَّ وَالْحَزَنِ.
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুর রাহমানির রাহিম। আল্লাহুম্মা আজহিব আন্নিল হাম্মা ওয়াল হাযান।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি অতি দয়ালু পরম করুণাময়। হে আল্লাহ, আমার টেনশন ও চিন্তা দূর করে দাও। ২৫৯
(১৬১) হজরত আবু উমামা রাদি. থেকে বর্ণিত, আমি ফরজ ও নফল নামাজে যখনই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটবর্তী হতাম, তাঁকে নিম্নোক্ত দুআ পড়তে শুনতাম-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذُنُوبِي وَخَطَايَايَ كُلَّهَا، اَللَّهُمَّ انْعِشْنِي وَاجْبُرْنِي، وَاهْدِنِي لِصَالِحَ الْأَعْمَالِ وَالْأَخْلَاقِ، إِنَّهُ لَا يَهْدِي لِصَالِحِهَا وَلَا يَصْرِفُ سَيِّئَهَا إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি জুনুবি ওয়া খাতায়াইয়া কুল্লাহা, আল্লাহুম্মান আ'শনি ওয়ায বুরনি ওয়াহ দিনি লি সালিহিল আমালি ওয়াল আখলাক, ইন্নাহু লা ইয়াহদি লি সালিহিহা ওয়া ইয়াসরিফু সাইয়িহিহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার সকল পাপ মার্জনা করে দাও। আমাকে তাওফিক দাও, সাহায্য করো। আমাকে সচ্চরিত্র ও নেক আমলের প্রতি পথনির্দেশ করো। তুমি ব্যতীত অন্য কেউ নেক আমল করার ও বদ আমল থেকে বেঁচে থাকার হেদায়েত করতে পারে না। ২৬০
(১৬২) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. হতে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজ থেকে ফারেগ হতেন তখন এই দুআটি পড়তেন। বর্ণনাকারী বলেন, এই দুআ সালামের আগে বলতেন নাকি পরে বলতেন আমার স্মরণ নেই। দুআটি এরকম-
سُبْحَانَ رَبِّكَ رَبِّ الْعِزَّةِ عَمَّا يَصِفُوْنَ، وَسَلَامُ عَلَى الْمُرْسَلِينَ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ.
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিকা রাব্বিল ইজ্জাতি আম্মা ইয়াসিফুন, ওয়া সালামুন আলাল মুসরালিন, ওয়াল হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
অর্থ: পবিত্র আপনার পরওয়ারদিগারের সত্তা, তারা যা বর্ণনা করে তিনি তা থেকে সম্মানিত ও পবিত্র। নবিদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপালক আল্লাহর নিমিত্ত। ২৬১
(১৬২ সংযুক্ত) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজ শেষ করে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اجْعَلْ خَيْرَ عُمُرِي آخِرَهُ، وَخَيْرَ عَمَلِي خَوَاتِمَهُ، وَاجْعَلْ خَيْرَ أَيَّامِي يَوْمَ أَلْقَاكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আল খায়রা উমরি আখেরাহ, ওয়া খাইরা আমালি খাওয়াতিমা, ওয়াজ আল খাইরা আইয়্যামি ইয়াওমা উলকাক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার শেষ জীবনকে ভালো করো, শেষ আমলকে ভালো করো, তোমার সঙ্গে সাক্ষাতের দিনটিকে আমার সেরা দিনে পরিণত করো। ২৬২
(১৬৩) হজরত আবু বাকরা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক নামাজের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ وَالْفَقْرِ وَعَذَابِ الْقَبْرِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল কুফরি ওয়াল ফাকরি ওয়া আযাবিল কাবরি।
অর্থ: হে আল্লাহ, কুফর, দারিদ্রতা ও কবরের আজাব থেকে তোমার কাছে পানাহ চাই। ২৬৩
(১৬৩) হজরত ফাযালা বিন উবায়দুল্লাহ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ ؛ فَلْيَبْدَأُ بِتَحْمِيدِ اللهِ وَالثَّنَاءِ عَلَيْهِ، ثُمَّ يُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، ثُمَّ يَدْعُوْ بِمَا شَاءَ.
অর্থ: নামাজ শেষে তোমরা প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করো, এরপর গুণকীর্তন করো, নবির ওপর দরুদ পড়ো। এরপর তোমাদের যা কিছু চাওয়ার তা তোমরা চাও। ২৬৪
ফজরের নামাজের পর আল্লাহর জিকির
দিনের বেলায় জিকিরের উত্তম সময় হল ফজরের নামাজের পর。
(১৬৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ صَلَّى الْفَجْرِ فِي جَمَاعَةٍ، ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ، ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرٍ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ، تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ.
অর্থ: যে ব্যক্তি জামাতের সাথে ফজরের নামাজ পড়ে সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে বসে জিকির করে। এরপর দুই রাকাত নামাজ পড়ে, তার সওয়াব হবে পরিপূর্ণ এক হজ ও উমরার সমপরিমাণ। তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ২৬৫
(১৬৬) হজরত আবু জর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি ফজরের নামাজের পর কারো সাথে কথা বলার পূর্বে আপন জাগায় বসে নিম্নোক্ত দুআ দশবার পড়বে তার জন্য দশটি নেকি লেখা হবে, দশটি গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে এবং তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। সে ঐদিন সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকবে। শয়তান থেকে নিরাপদে থাকবে। ঐ দিন শিরিক ছাড়া অন্য কেনো গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হবে না। দুআটি নিম্নরূপ:
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِ وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٍ.
উচ্চারণ: লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ইয়ুহয়ি ওয়াইয়ূ মিতু ওয়াহুওয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি জীবন-মরণ দান করেন। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।- ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ২৬৬
(১৬৭) হজরত মুসলিম বিন হারিস তামিমি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চুপিসারে বলেছেন- যখন তুমি মাগরিবের নামাজ থেকে ফারেগ হবে তখন এই দুআটি সাতবার পড়বে। যদি ঐ রাতে তোমার মৃত্যু হয় তাহলে এই দুআর বদৌলতে তোমার জন্য নিরাপত্তা থাকবে। ফজরের নামাজের পরও এই দুআ পড়বে। যদি ঐ দিন তোমার মৃত্যু হয় তাহলে এই দুআর বদৌলতে তোমার জন্য নিরাপত্তা থাকবে। দুআটি হল-
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার。
اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ.
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন। ২৬৭
(১৬৮) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজের পর নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ عِلْمًا نَافِعًا، وَرِزْقًا طَيِّبًا، وَعَمَلًا مُتَقَبَّلًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়া ওয়া আমালাম্মা মুতাকাব্বালা, ওয়ারিযকান তায়্যিবা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কামনা করছি- উপকারী ইলম, মাকবুল আমল ও পবিত্র রিযিক। ২৬৮
(১৬৯) হজরত সুহাইব রাদি. থেকে বর্ণিত- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের পর তার ঠোঁট নাড়াতেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি কী বলেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি এ দুআ পড়ি-
আল্লাহুম্মা বিকা উহাওয়িলু, ওয়াবিকা উসাভিলু, ওয়াবিকা উক্বাতিলু।
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বিকা উহাবিলু ওয়াবিকা উসাবিলু, ওয়াবিকা উকাতিলু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার নামেই শত্রুর মোকাবেলা করি, আপনার নামেই দুশমনের ওপর ঝাপিয়ে পড়ি এবং আপনার নামেই লড়াই করি। ২৬৯
এ বিষয়ে আরো অনেক হাদিস রয়েছে। সামনে ‘দিবসের প্রথমভাগে পড়ার দুআ’ নামক অধ্যায়ে বিস্তারিত আসছে। আবু মুহাম্মাদ রহ. তার "শরহুস সুন্নাহ" কিতাবে উল্লেখ করেছেন-
قَالَ عَلْقَمَةُ بْنُ قَيْسٍ: بَلَغَنَا أَنَّ الْأَرْضَ تَعُجُ إِلى اللَّهِ تَعَالَى مِنْ نَوْمَةِ الْعَالِمِ بَعْدَ صَلَاةِ الصُّبْحِ.
অর্থ: আলকামা রহ. বলেন, আমারা একথা শুনেছি, ফজরের পর কোন আলেম ঘুমালে জমিন আল্লাহর কাছে আর্তনাদ করে। ২৭০
টিকাঃ
২৪৭. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯৪, আমালুল ইয়াউম: ১০৮, নাসাঈ।
২৪৮. সহিহ বুখারি: ৮৪১, সহিহ মুসলিম: ৫৮৩।
২৪৯. সহিহ মুসলিম: ৫৯১, সুনানে আবু দাউদ: ১৫১৩, সুনানে তিরমিজি: ৩০০, সুনানে নাসাঈ ৩/৬৮।
২৫০. সহিহ বুখারি: ৮৪৪, সহিহ মুসলিম: ৫৯৩, সুনানে আবু দাউদ: ১৫০৫, সুনানে নাসাঈ ৩/৭০, আমালুল ইয়াউম: ১২৯, নাসাঈ।
২৫১. সহিহ মুসলিম: ৫৯৪, সুনানে আবু দাউদ: ১৫০৬, সুনানে নাসাঈ ৩/৭৫, আমালুল ইয়াউম: ১২৭, নাসাঈ।
২৫২. সহিহ বুখারি: ৮৪৩, সহিহ মুসলিম: ৫৯৫, সুনানে আবু দাউদ: ১৫০৪, মুয়াত্তা মালেক ১/২০৯।
২৫৩. সহিহ মুসলিম: ৫৯৬, সুনানে তিরমিজি: ৩৪০৯, সুনানে নাসাঈ ৩/৭৫, আমালুল ইয়াউম: ১৫৬।
২৫৪. সহিহ মুসলিম: ৫৯৫।
২৫৫. সহিহ বুখারি: ৬৩৭৪, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬২, সুনানে নাসাঈ ৮/২৬৬, আমালুল ইয়াউম: ১৩২, নাসাঈ।
২৫৬. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৬৫, সুনানে তিরমিজি: ২৯০৫, সুনানে নাসাঈ ৩/৭৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৯২৬।
২৫৭. সুনানে আবু দাউদ: ১৫৩২, সুনানে তিরমিজি: ২৯০৫, সুনানে নাসাঈ ৩/৬৮।
২৫৮. সুনানে আবু দাউদ: ১৫২২, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৩, মুসতাদরাকে হাকেম ১/২৭৩, মুসনাদে আহমদ ৫/২৪৫, মাওয়ারিদুজ জামআন: ২৩৪৫, আমালুল ইয়াউম: ১০৯।
২৫৯. ইবনুস সুন্নি: ১১২।
২৬০. ইবনুস সুন্নি: ১১৬।
২৬১. ইবনুস সুন্নি: ১১৯।
২৬২. আমালুল ইয়াউম: ১২১, ইবনুস সুন্নি।
২৬৩. আমালুল ইয়াউম: ১০৯, ইবনুস সুন্নি।
২৬৪. আমালুল ইয়াউম: ১১১, ইবনুস সুন্নি, সুনানে নাসাঈ ৩/৭৩, মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৯।
২৬৫. সুনানে তিরমিজি: ৫৮৬।
২৬৬. সুনানে তিরিমিযি: ৩৪৭০, আমালুল ইয়াউম: ১২৭, নাসাঈ, মাওয়ারিদুজ জামআন: ২৩৪১।
২৬৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৯, মাওয়ারিদুজ জামআন: ২৩৪৬।
২৬৮. মুসনাদে আহমাদ: ৬/২৯৪, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৯২৫, আমালুল ইয়াউম: ১১০, ইবনুস সুন্নি।
২৬৯. আমালুল ইয়াউম: ১০১, ইবনুস সুন্নি। হাদিসটি খুবই দুর্বল।
২৭০. মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবাহ: ৫/৩৩৬।