📘 আল আযকার > 📄 ফজরের নামাজে কুনূত পড়া

📄 ফজরের নামাজে কুনূত পড়া


ফজরের নামাজে কুনুত পড়া সুন্নাত। এটি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ২১৯
(১৩০) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَزِلْ يَقْنُتَ فِي الصُّبْحِ حَتَّى فَارَقَ الدُّنْيَا.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজে মৃত্যু পর্যন্ত সবসময় কুনুত পড়েছেন। হাদিসটি হাকিম রহ. "কিতাবুল আরবায়িন” এ উল্লেখ করে বলেছেন, হাদিসটি সহিহ। ২২০
ফজরের নামাজে কুনুত পড়া শাফেয়ি মাজহাব অনুযায়ী সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না, তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। ইচ্ছাকৃত ছাড়ুক বা ভুলবশত ছাড়ুক।
ফজরের নামাজ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অন্য কোন নামাজে পড়বে কিনা? এ ব্যাপারে শাফেয়ি থেকে তিন ধরনের মত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ মত হল: ১. যদি বিশেষ কোন বিপদাপদ দেখা দেয় তাহলে কুনুত পড়বে অন্যথায় পড়বে না। ২. বিপদাপদ থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় কুনুত পড়বে। ৩. বাকি নামাজে কোন অবস্থাতেই কুনুত পড়বে না।
শাফেয়ি মাজহাব অনুযায়ী রমজান মাসের শেষ অর্ধেকে বিত্রের শেষ রাকাতে কুনুত পড়া মুস্তাহাব। আরেকটি মত হল, পুরো রমজান মাসে কুনুত পড়া। তৃতীয় মত হল, পুরো বছর কুনুত পড়বে। এটা ইমাম আবু হানীফা রহ. এরও মাজহাব। তবে শাফেয়ি রহ. এর প্রসিদ্ধ মত হল প্রথমটি।
ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে কুনুত পড়ার সময় হল, ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠার পর। আর ইমাম মালেক রহ. এর মতে রুকু করার পূর্বে। শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, শাফেয়ি মাজহাবের কোন ব্যক্তি যদি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়ে, তাহলে সেটি কুনুত বলে গণ্য হবে না। অন্য মতে কুনুত হিসেবে গণ্য হবে। তবে বিশুদ্ধ মত হল, রুকুর পরে পুনরায় পড়বে এবং সিজদায়ে সাহু করবে। কেউ কেউ বলেছেন সিজদায়ে সাহু করবে না।- নিচের যে কোন দুআয়ে কুনুত পড়া যাবে:
(১৩১) হাসান বিন আলি রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিম্নোক্ত কালিমা শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো যেন আমি বিতর নামাজে পড়ি। কালিমাগুলো হল-
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাহদিনি ফি হাদাইতা, ওয়া আফিনি ফি মান আফাইতা, ওয়া তাওয়াল্লনি ফি মান তাওয়াল্লাইতা। ওয়া বারিকলি ফি মা আতাইতা, ওয়াকিনি শাররা মা কাজাইতা, ফা ইন্নাকা তাকজি ওয়ালা যুকজা আলাইক। ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াজিল্লু মান ওয়া লাইতা, তাবারাকতা রাব্বানা ওয়া তাআলালাইত।
অর্থ: হে যাদের তুমি হেদায়াত দিয়েছো তাদের মাঝে আমাকেও হেদায়াত দাও, যাদের তুমি সুরক্ষা দিয়েছো তাদের মাঝে আমাকেও সুরক্ষা দাও। যাদের তুমি অভিভাকত্ব করছো তাদের মাঝে আমারও অভিভাকত্ব করো। আর আমাকে দানকৃত বস্তুতে বরকত দান করো। আপনার নির্ধারিত তাকদিরের অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো। তাকদিরের ফয়সালা আপনিই করেন, আপনার বিপক্ষে কোন ফয়সালা হয় না। যাকে আপনি আপন করেন সে লাঞ্ছিত হয় না। হে আমাদের রব, আপনি বরকতময় মহা মহিয়ান।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কুনুত এটিই সবচেয়ে সুন্দর। বায়হাকি রহ. এর এক বর্ণনায় আছে- মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়্যা (তিনি আলি রাদি. এর ছেলে) বলেন, এই দুআটি আমার পিতা ফজরের নামাজে পরতেন।
এই দুআ পড়ার পরে মুস্তাহাব হল নিচের দরুদটি পড়া-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَسَلَّمْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, ওয়া সাল্লিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন।
নাসাঈ শরিফে এই হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে। তাতে অতিরিক্ত বর্ণিত আছে-
وَصَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِيِّ.
উচ্চারণ: ওয়া সাল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যি।
অর্থ: আর আল্লাহর নবিজির ওপর রহমত বর্ষণ করুন। ২২১
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, উমর রাদি. থেকে যে কুনুত বর্ণিত সেটি পড়া উত্তম। তিনি ফজরের নামাজে রুকুর পর নিচের কুনুতটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنَكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ ، وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَخْلَعُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُوْ رَحْمَتَكَ، وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجَدُّ بِالْكَافِرِينَ مُلْحِقُ اللَّهُمَّ عَذَّبِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ وَيُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ، وَيُقَاتِلُوْنَ أَوْلِيَاءَكِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِينَ، وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَأَلِفْ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْ، وَاجْعَلْ فِي قُلُوْبِهِمُ الْإِيْمَانَ وَالْحِكْمَةَ ، وَثَبِّتْهُمْ عَلَى مِلَّةِ رَسُولِكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَأَوْزِعْهُمْ أَنْ يُوْفُوْا بِعَهْدِكَ الَّذِي عَاهَدْتَهُمْ عَلَيْهِ ، وانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوَّكَ وَعَدُوِّهِمْ إِلَهَ الْحَقِّ وَاجْعَلْنَا مِنْهُمْ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা, ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া লা নাকফুরুকা, ওয়া নু' মিনু বিকা ওয়া নাখলাউ মান ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না'বুদু, ওয়া লাকা নুসাল্লি ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাসআ ওয়া নাহফিদু, নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আজাবাক। ইন্না আজাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক। আল্লাহুম্মা আজ্জিবিল কাফারাতাল্লাজিনা ইয়াসুদ্দুনা আন সাবিলিক, ওয়া ইয়ুকাজ্জিবুনা রুসুলাক, ওয়া যুকাতিলুনা আউলিয়াআক। আল্লাহুম্মাগফির লিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত, ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত। ওয়া আসলিহ জাতা বাইনিহিম, ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম। ওয়াজআল ফি কুলুবিহিমুল ঈমানা ওয়াল হিকমাহ। ওয়া সাব্বিতহুম আলা মিল্লাতি রাসুলিকা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওয়া আউযিহুম আন যুফু বি-আহদিকাল্লাজি আহাদতাহুম আলাইহ। ওয়ানসুরহুম আলা আদুয়্যিকা ওয়া আদুয়ি‍্যহিম, ইলাহাল হাক্কি ওয়াজআলনা মিনহুম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে সাহায্য কামনা করি, আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, কোন অকৃতজ্ঞতা করি না, আপনার প্রতি ঈমান রাখি। আর যে আপনার নাফরমানি করে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। হে আল্লাহ, আমরা আপনারই ইবাদত করি।, আপনার জন্যই নামাজ আদায় করি, আপনাকেই সেজদা করি। আপনার প্রতি ধাবিত হই, আপনার দিকেই ছুটে যাই। আপনার রহমতের আশা রাখি এবং শাস্তিকে ভয় করি। নিশ্চয়ই আপনার কঠিন শাস্তি আপতিত হবে কাফেরদের ওপরে। হে আল্লাহ, সেসব কাফেরদেরকে শাস্তি দিন, যারা আপনার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, আপনার রাসুলদের মিথ্যা অভিহিত করে এবং আপনার প্রিয় বান্দাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। হে আল্লাহ, মুমিন নর-নারী, মুসলিম নর-নারীদের ক্ষমা করে দাও, তাদের মাঝে একতা পয়দা করে দাও, তাদের মনে সম্প্রীতি দান করো এবং তাদের মনে ঈমান ও প্রজ্ঞা দান করো। তাদেরকে আপনার রাসুলের মিল্লাতের ওপর অবিচল রাখুন, তাদেরকে আপনার অঙ্গীকার পূরণের তাওফিক দান করুন, যার ওপর আপনি তাদের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে আপনার ও তাদের দুশমনের বিরুদ্ধে মদদ করো। ওহে সত্য মাবুদ, আমাদেরকেও তাদের দলভুক্ত করো। ২২২
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, পূর্বে উল্লেখিত কুনুত ও উমর রাদি. বর্ণিত কুনুত উভয়টি একসঙ্গে পড়া উত্তম। যেকোন একটি কুনুত পড়তে চাইলে উমর রাদি. বর্ণিত কুনুত পড়বে। আর সংক্ষেপ করতে চাইলে প্রথমটি পড়বে। উভয় কুনুত পড়া মুস্তাহাব একাকী নামাজি ব্যক্তির জন্য ও ঐ ইমামের জন্য যার মুক্তাদিরা দীর্ঘ নামাজে বিরক্ত হয় না। প্রসিদ্ধ মাজহাব মতে কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দুআ নেই। তাই সুতরাং যে দুআই পড়বে সেটিই কুনুত হয়ে যাবে। যদি দুআ সম্বলিত কুরআনের কোন আয়াত পড়ে তাহলেও কুনুত হয়ে যাবে। তবে উত্তম হল হাদিসে বর্ণিত কুনুত পড়া। কেউ কেউ বলেছেন হাদিসে বর্ণিত দুআ ছাড়া অন্য কোন দুআ পড়লে কুনুত আদায় হবে না। অবশ্য প্রাধান্যপ্রাপ্ত কথা সেটিই যে, কুনুতের জন্য কোন দুআ নির্দিষ্ট নেই।
মুস্তাহাব হল, নামাজি ব্যক্তি ইমাম হলে, কুনুতের মধ্যে اللَّهُمَّ اهْدِنَا (আল্লাহুম্মাহদি না) বহুবচনের শব্দ দিয়ে বলবে। বাকি সবগুলো শব্দের ক্ষেত্রে অনুরূপভাবে বহুবচনের শব্দ দিয়ে বলবে। যদি اللَّهُمَّ اهْدِنِي একবচনের শব্দ ব্যবহার করে তাহলেও কুনুত হয়ে যাবে, তবে মাকরুহ হবে। কেননা ইমাম হলে খাস করে নিজের জন্য দুআ করা মাকরুহ।
(১৩২) হজরত সাওবান রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا يَؤُمُّ عَبْدُ فَيَخُصَّ نَفْسَهُ بِدَعْوَةٍ دُوْنَهُمْ، فَإِنْ فَعَلَ فَقَدْ خَانَهُمْ.
অর্থ: যে ইমাম মুসল্লীদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য বিশেষভাবে দুআ করে, সে খেয়ানতকারী। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, এটি হাসান হাদিস। ২২৩
কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো
কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো ও হাত চেহারায় মাসেহ সংক্রান্ত তিনটি অভিমত রয়েছে:
১. মুস্তাহাব হল, উভয় হাত উঠানো এবং তা চেহারায় মাসেহ না করবে। এটাই সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত।
২. হাত উঠাবে, মাসেহও করবে।
৩. কোনটিই করবে না।
তবে চেহারা ব্যতীত অন্য কোন অঙ্গে মাসেহ না করার ব্যাপারে সবাই একমত যেমন বুক মাসেহ করা। বরং এমন করা মাকরুহ।
কুনুত আস্তে পড়া ও জোরে পড়া সম্পর্কে শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি নামাজি ব্যক্তি একাকী হয় তাহলে আস্তে পড়বে। আর ইমাম হলে জোরে পড়বে। এটিই পছন্দনীয় ও অধিকাংশের অভিমত।
দ্বিতীয় অভিমত হল, নামাজের অন্যান্য দুআর ন্যায় কুনুতও আস্তে পড়বে। ইমাম যদি উচু আওয়াজে কুনুত না পড়ে তাহলে মুক্তাদিরা নীচু স্বরে কুনুত পড়বে। আর ইমাম উচু আওয়াজে কুনুত পড়ে এবং মুক্তাদিরা শোনে তাহলে আমিন আমিন বলবে। আর না শুনলে নীচু আওয়াজে মুক্তাদিরা কুনুত পড়বে। কেউ কেউ বলেন, এ অবস্থাতেও আমিন বলবে। আবার কেউ কেউ বলেন, কোনার সাথে সাথে সে নিজেও পড়বে। তবে প্রথম অভিমতটিই অধিক পছন্দনীয়।
যদি ফজর ছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত পড়ে, সে নামাজ যদি জেহরি হয় যেমন, মাগরিব ও এশা। তাহলে সেক্ষেত্রেও ফজরের মতই পড়বে। আর যদি সিররির হয় যেমন জোহর ও আছর তাহলে কেউ কেউ বলেন, আস্তে পড়বে। আবার কেউ কেউ বলেন ফজরের মতই পড়বে।
সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, বিরে মাউনার ঘটনায় সত্তর জন কারী সাহাবি রাদি. কে শহিদ করার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল নামাজে উচু আওয়াজে কুনুত পড়তেন।
সহিহ বুখারিতে (لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ) এই আয়াতের তাফসিরে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুতে নাযিলা উচু আওয়াজে পড়েছেন। ২২৪

টিকাঃ
২১৯. হানাফি মাজহাব মতে, বিতরের নামাজে পুরো বছর তৃতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে কুনুত পড়া ওয়াজিব। এছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত নেই। হাদিসে ফজরের নামাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুত পড়েছেন বলে যেসব বর্ণনা এসেছে, সেগুলো হলো 'কুনুতে নাজিলা'। আপদকালীন কুনুত। সবসময়ের জন্য নয়। তাই হানাফি উলামায়ে কেরাম মহা বিপদের সম্মুখীন হলে 'কুনুতে নাযিলা' পড়ার কথা বলেন। কিন্তু সবসময় সর্বাবস্থায় ফজরের নামাজে কুনুত পড়ার কথা বলেন না। যদি ইমাম ফজরের নামাজে কুনুত পড়েন, তাহলে মুক্তাদি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। (হেদায়া ১/১৪৫)
২২০. সুনানে বাইহাকি ২/২০১, মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৬২।
২২১. সুনানে নাসাঈ: ৩/২৪৮, সুনানে তিরমিজি: ৪৬৪, সুনানে আবু দাউদ: ১৪২৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১১৭৮।
২২২. সুনানে বাইহাকি: ২/২১০, তুহফাতুল আশরাফ ১৩/১৮৪, মারাসিলে আবু দাউদের সূত্রে।
২২৩. সুনানে আবু দাউদ: ৯০, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৯২৩, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৮০।
২২৪. সহিহ বুখারি: ৪৫৬০। হানাফি উলামায়ে কেরাম যেহেতু বিতর ছাড়া অন্য নামাজে কুনুতের অনুমতি প্রদান করে না। যার বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে গেছে। তাই এসকল মাসআলারও প্রয়োজন নেই। তাঁরা শুধু বিতরের নামাজে কুনুত পড়ার কথা বলেন। সে কুনুত সর্বাবস্থায় ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামাজি ব্যক্তি সকলেই আস্তে পড়বে। আর অন্য নামাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কুনুত পড়েছেন, সেটি ছিলো 'কুনুতে নাযিলা'। এই শেষোক্ত হাদিসটি হানাফিদের দলিল যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য নামাজে কুনুতে নাযিলা পড়তেন। (হেদায়া ১/১৪৫-৪৬)

ফজরের নামাজে কুনুত পড়া সুন্নাত। এটি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ২১৯
(১৩০) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَزِلْ يَقْنُتَ فِي الصُّبْحِ حَتَّى فَارَقَ الدُّنْيَا.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজে মৃত্যু পর্যন্ত সবসময় কুনুত পড়েছেন। হাদিসটি হাকিম রহ. "কিতাবুল আরবায়িন” এ উল্লেখ করে বলেছেন, হাদিসটি সহিহ। ২২০
ফজরের নামাজে কুনুত পড়া শাফেয়ি মাজহাব অনুযায়ী সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না, তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। ইচ্ছাকৃত ছাড়ুক বা ভুলবশত ছাড়ুক।
ফজরের নামাজ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অন্য কোন নামাজে পড়বে কিনা? এ ব্যাপারে শাফেয়ি থেকে তিন ধরনের মত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ মত হল: ১. যদি বিশেষ কোন বিপদাপদ দেখা দেয় তাহলে কুনুত পড়বে অন্যথায় পড়বে না। ২. বিপদাপদ থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় কুনুত পড়বে। ৩. বাকি নামাজে কোন অবস্থাতেই কুনুত পড়বে না।
শাফেয়ি মাজহাব অনুযায়ী রমজান মাসের শেষ অর্ধেকে বিত্রের শেষ রাকাতে কুনুত পড়া মুস্তাহাব। আরেকটি মত হল, পুরো রমজান মাসে কুনুত পড়া। তৃতীয় মত হল, পুরো বছর কুনুত পড়বে। এটা ইমাম আবু হানীফা রহ. এরও মাজহাব। তবে শাফেয়ি রহ. এর প্রসিদ্ধ মত হল প্রথমটি।
ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে কুনুত পড়ার সময় হল, ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠার পর। আর ইমাম মালেক রহ. এর মতে রুকু করার পূর্বে। শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, শাফেয়ি মাজহাবের কোন ব্যক্তি যদি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়ে, তাহলে সেটি কুনুত বলে গণ্য হবে না। অন্য মতে কুনুত হিসেবে গণ্য হবে। তবে বিশুদ্ধ মত হল, রুকুর পরে পুনরায় পড়বে এবং সিজদায়ে সাহু করবে। কেউ কেউ বলেছেন সিজদায়ে সাহু করবে না।- নিচের যে কোন দুআয়ে কুনুত পড়া যাবে:
(১৩১) হাসান বিন আলি রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিম্নোক্ত কালিমা শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো যেন আমি বিতর নামাজে পড়ি। কালিমাগুলো হল-
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাহদিনি ফি হাদাইতা, ওয়া আফিনি ফি মান আফাইতা, ওয়া তাওয়াল্লনি ফি মান তাওয়াল্লাইতা। ওয়া বারিকলি ফি মা আতাইতা, ওয়াকিনি শাররা মা কাজাইতা, ফা ইন্নাকা তাকজি ওয়ালা যুকজা আলাইক। ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াজিল্লু মান ওয়া লাইতা, তাবারাকতা রাব্বানা ওয়া তাআলালাইত।
অর্থ: হে যাদের তুমি হেদায়াত দিয়েছো তাদের মাঝে আমাকেও হেদায়াত দাও, যাদের তুমি সুরক্ষা দিয়েছো তাদের মাঝে আমাকেও সুরক্ষা দাও। যাদের তুমি অভিভাকত্ব করছো তাদের মাঝে আমারও অভিভাকত্ব করো। আর আমাকে দানকৃত বস্তুতে বরকত দান করো। আপনার নির্ধারিত তাকদিরের অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো। তাকদিরের ফয়সালা আপনিই করেন, আপনার বিপক্ষে কোন ফয়সালা হয় না। যাকে আপনি আপন করেন সে লাঞ্ছিত হয় না। হে আমাদের রব, আপনি বরকতময় মহা মহিয়ান।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কুনুত এটিই সবচেয়ে সুন্দর। বায়হাকি রহ. এর এক বর্ণনায় আছে- মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়্যা (তিনি আলি রাদি. এর ছেলে) বলেন, এই দুআটি আমার পিতা ফজরের নামাজে পরতেন।
এই দুআ পড়ার পরে মুস্তাহাব হল নিচের দরুদটি পড়া-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَسَلَّمْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, ওয়া সাল্লিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন।
নাসাঈ শরিফে এই হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে। তাতে অতিরিক্ত বর্ণিত আছে-
وَصَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِيِّ.
উচ্চারণ: ওয়া সাল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যি।
অর্থ: আর আল্লাহর নবিজির ওপর রহমত বর্ষণ করুন। ২২১
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, উমর রাদি. থেকে যে কুনুত বর্ণিত সেটি পড়া উত্তম। তিনি ফজরের নামাজে রুকুর পর নিচের কুনুতটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنَكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ ، وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَخْلَعُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُوْ رَحْمَتَكَ، وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجَدُّ بِالْكَافِرِينَ مُلْحِقُ اللَّهُمَّ عَذَّبِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ وَيُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ، وَيُقَاتِلُوْنَ أَوْلِيَاءَكِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِينَ، وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَأَلِفْ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْ، وَاجْعَلْ فِي قُلُوْبِهِمُ الْإِيْمَانَ وَالْحِكْمَةَ ، وَثَبِّتْهُمْ عَلَى مِلَّةِ رَسُولِكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَأَوْزِعْهُمْ أَنْ يُوْفُوْا بِعَهْدِكَ الَّذِي عَاهَدْتَهُمْ عَلَيْهِ ، وانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوَّكَ وَعَدُوِّهِمْ إِلَهَ الْحَقِّ وَاجْعَلْنَا مِنْهُمْ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা, ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া লা নাকফুরুকা, ওয়া নু' মিনু বিকা ওয়া নাখলাউ মান ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না'বুদু, ওয়া লাকা নুসাল্লি ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাসআ ওয়া নাহফিদু, নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আজাবাক। ইন্না আজাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক। আল্লাহুম্মা আজ্জিবিল কাফারাতাল্লাজিনা ইয়াসুদ্দুনা আন সাবিলিক, ওয়া ইয়ুকাজ্জিবুনা রুসুলাক, ওয়া যুকাতিলুনা আউলিয়াআক। আল্লাহুম্মাগফির লিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত, ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত। ওয়া আসলিহ জাতা বাইনিহিম, ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম। ওয়াজআল ফি কুলুবিহিমুল ঈমানা ওয়াল হিকমাহ। ওয়া সাব্বিতহুম আলা মিল্লাতি রাসুলিকা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওয়া আউযিহুম আন যুফু বি-আহদিকাল্লাজি আহাদতাহুম আলাইহ। ওয়ানসুরহুম আলা আদুয়্যিকা ওয়া আদুয়ি‍্যহিম, ইলাহাল হাক্কি ওয়াজআলনা মিনহুম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে সাহায্য কামনা করি, আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, কোন অকৃতজ্ঞতা করি না, আপনার প্রতি ঈমান রাখি। আর যে আপনার নাফরমানি করে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। হে আল্লাহ, আমরা আপনারই ইবাদত করি।, আপনার জন্যই নামাজ আদায় করি, আপনাকেই সেজদা করি। আপনার প্রতি ধাবিত হই, আপনার দিকেই ছুটে যাই। আপনার রহমতের আশা রাখি এবং শাস্তিকে ভয় করি। নিশ্চয়ই আপনার কঠিন শাস্তি আপতিত হবে কাফেরদের ওপরে। হে আল্লাহ, সেসব কাফেরদেরকে শাস্তি দিন, যারা আপনার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, আপনার রাসুলদের মিথ্যা অভিহিত করে এবং আপনার প্রিয় বান্দাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। হে আল্লাহ, মুমিন নর-নারী, মুসলিম নর-নারীদের ক্ষমা করে দাও, তাদের মাঝে একতা পয়দা করে দাও, তাদের মনে সম্প্রীতি দান করো এবং তাদের মনে ঈমান ও প্রজ্ঞা দান করো। তাদেরকে আপনার রাসুলের মিল্লাতের ওপর অবিচল রাখুন, তাদেরকে আপনার অঙ্গীকার পূরণের তাওফিক দান করুন, যার ওপর আপনি তাদের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে আপনার ও তাদের দুশমনের বিরুদ্ধে মদদ করো। ওহে সত্য মাবুদ, আমাদেরকেও তাদের দলভুক্ত করো। ২২২
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, পূর্বে উল্লেখিত কুনুত ও উমর রাদি. বর্ণিত কুনুত উভয়টি একসঙ্গে পড়া উত্তম। যেকোন একটি কুনুত পড়তে চাইলে উমর রাদি. বর্ণিত কুনুত পড়বে। আর সংক্ষেপ করতে চাইলে প্রথমটি পড়বে। উভয় কুনুত পড়া মুস্তাহাব একাকী নামাজি ব্যক্তির জন্য ও ঐ ইমামের জন্য যার মুক্তাদিরা দীর্ঘ নামাজে বিরক্ত হয় না। প্রসিদ্ধ মাজহাব মতে কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দুআ নেই। তাই সুতরাং যে দুআই পড়বে সেটিই কুনুত হয়ে যাবে। যদি দুআ সম্বলিত কুরআনের কোন আয়াত পড়ে তাহলেও কুনুত হয়ে যাবে। তবে উত্তম হল হাদিসে বর্ণিত কুনুত পড়া। কেউ কেউ বলেছেন হাদিসে বর্ণিত দুআ ছাড়া অন্য কোন দুআ পড়লে কুনুত আদায় হবে না। অবশ্য প্রাধান্যপ্রাপ্ত কথা সেটিই যে, কুনুতের জন্য কোন দুআ নির্দিষ্ট নেই।
মুস্তাহাব হল, নামাজি ব্যক্তি ইমাম হলে, কুনুতের মধ্যে اللَّهُمَّ اهْدِنَا (আল্লাহুম্মাহদি না) বহুবচনের শব্দ দিয়ে বলবে। বাকি সবগুলো শব্দের ক্ষেত্রে অনুরূপভাবে বহুবচনের শব্দ দিয়ে বলবে। যদি اللَّهُمَّ اهْدِنِي একবচনের শব্দ ব্যবহার করে তাহলেও কুনুত হয়ে যাবে, তবে মাকরুহ হবে। কেননা ইমাম হলে খাস করে নিজের জন্য দুআ করা মাকরুহ।
(১৩২) হজরত সাওবান রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا يَؤُمُّ عَبْدُ فَيَخُصَّ نَفْسَهُ بِدَعْوَةٍ دُوْنَهُمْ، فَإِنْ فَعَلَ فَقَدْ خَانَهُمْ.
অর্থ: যে ইমাম মুসল্লীদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য বিশেষভাবে দুআ করে, সে খেয়ানতকারী। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, এটি হাসান হাদিস। ২২৩
কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো
কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো ও হাত চেহারায় মাসেহ সংক্রান্ত তিনটি অভিমত রয়েছে:
১. মুস্তাহাব হল, উভয় হাত উঠানো এবং তা চেহারায় মাসেহ না করবে। এটাই সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত।
২. হাত উঠাবে, মাসেহও করবে।
৩. কোনটিই করবে না।
তবে চেহারা ব্যতীত অন্য কোন অঙ্গে মাসেহ না করার ব্যাপারে সবাই একমত যেমন বুক মাসেহ করা। বরং এমন করা মাকরুহ।
কুনুত আস্তে পড়া ও জোরে পড়া সম্পর্কে শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি নামাজি ব্যক্তি একাকী হয় তাহলে আস্তে পড়বে। আর ইমাম হলে জোরে পড়বে। এটিই পছন্দনীয় ও অধিকাংশের অভিমত।
দ্বিতীয় অভিমত হল, নামাজের অন্যান্য দুআর ন্যায় কুনুতও আস্তে পড়বে। ইমাম যদি উচু আওয়াজে কুনুত না পড়ে তাহলে মুক্তাদিরা নীচু স্বরে কুনুত পড়বে। আর ইমাম উচু আওয়াজে কুনুত পড়ে এবং মুক্তাদিরা শোনে তাহলে আমিন আমিন বলবে। আর না শুনলে নীচু আওয়াজে মুক্তাদিরা কুনুত পড়বে। কেউ কেউ বলেন, এ অবস্থাতেও আমিন বলবে। আবার কেউ কেউ বলেন, কোনার সাথে সাথে সে নিজেও পড়বে। তবে প্রথম অভিমতটিই অধিক পছন্দনীয়।
যদি ফজর ছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত পড়ে, সে নামাজ যদি জেহরি হয় যেমন, মাগরিব ও এশা। তাহলে সেক্ষেত্রেও ফজরের মতই পড়বে। আর যদি সিররির হয় যেমন জোহর ও আছর তাহলে কেউ কেউ বলেন, আস্তে পড়বে। আবার কেউ কেউ বলেন ফজরের মতই পড়বে।
সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, বিরে মাউনার ঘটনায় সত্তর জন কারী সাহাবি রাদি. কে শহিদ করার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল নামাজে উচু আওয়াজে কুনুত পড়তেন।
সহিহ বুখারিতে (لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ) এই আয়াতের তাফসিরে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুতে নাযিলা উচু আওয়াজে পড়েছেন। ২২৪

টিকাঃ
২১৯. হানাফি মাজহাব মতে, বিতরের নামাজে পুরো বছর তৃতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে কুনুত পড়া ওয়াজিব। এছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত নেই। হাদিসে ফজরের নামাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুত পড়েছেন বলে যেসব বর্ণনা এসেছে, সেগুলো হলো 'কুনুতে নাজিলা'। আপদকালীন কুনুত। সবসময়ের জন্য নয়। তাই হানাফি উলামায়ে কেরাম মহা বিপদের সম্মুখীন হলে 'কুনুতে নাযিলা' পড়ার কথা বলেন। কিন্তু সবসময় সর্বাবস্থায় ফজরের নামাজে কুনুত পড়ার কথা বলেন না। যদি ইমাম ফজরের নামাজে কুনুত পড়েন, তাহলে মুক্তাদি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। (হেদায়া ১/১৪৫)
২২০. সুনানে বাইহাকি ২/২০১, মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৬২।
২২১. সুনানে নাসাঈ: ৩/২৪৮, সুনানে তিরমিজি: ৪৬৪, সুনানে আবু দাউদ: ১৪২৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১১৭৮।
২২২. সুনানে বাইহাকি: ২/২১০, তুহফাতুল আশরাফ ১৩/১৮৪, মারাসিলে আবু দাউদের সূত্রে।
২২৩. সুনানে আবু দাউদ: ৯০, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৯২৩, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৮০।
২২৪. সহিহ বুখারি: ৪৫৬০। হানাফি উলামায়ে কেরাম যেহেতু বিতর ছাড়া অন্য নামাজে কুনুতের অনুমতি প্রদান করে না। যার বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে গেছে। তাই এসকল মাসআলারও প্রয়োজন নেই। তাঁরা শুধু বিতরের নামাজে কুনুত পড়ার কথা বলেন। সে কুনুত সর্বাবস্থায় ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামাজি ব্যক্তি সকলেই আস্তে পড়বে। আর অন্য নামাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কুনুত পড়েছেন, সেটি ছিলো 'কুনুতে নাযিলা'। এই শেষোক্ত হাদিসটি হানাফিদের দলিল যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য নামাজে কুনুতে নাযিলা পড়তেন। (হেদায়া ১/১৪৫-৪৬)

📘 আল আযকার > 📄 নামাজে তাশাহুদ পড়া

📄 নামাজে তাশাহুদ পড়া


নামাজ দুই রাকাত বিশিষ্ট হলে যেমন ফজরের নামাজ বা অন্য কোন নফল নামাজ তাহলে তাশাহুদ একবার পড়বে। যদি নামাজ তিন রাকাত বা চার রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে তাতে দুইবার তাশাহুদ পড়তে হয়, প্রথমবার ও দ্বিতীয়বার।
মাসবুক ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনবার তাশাহুদ পড়বে। মাসবুক ব্যক্তির মাগরিবের নামাজে চারবার তাশাহুদ পড়তে হতে পারে। যেমন দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর পর যদি ইমামের সাথে নামাজে শরিক হয় তাহলে প্রথম ও দ্বিতীয় তাশাহুদে ইমামে সঙ্গে শরিক হবে। এঅবস্থায় মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে কেবল এক রাকাত পেয়েছে। ইমাম সালাম ফেরানোর পর মাসবুক তার ছুটে যাওয়া দুই রাকাত আদায় করবে। প্রথম রাকাতের পর তাশাহুদ পড়বে, কেননা এটা তার জন্য দ্বিতীয় রাকাত। এভাবে তার চারবার তাশাহুদ পড়তে হবে।
নফল নামাজ যদি চার রাকাতের বেশি পড়ে চাই একশত রাকাতই হোক না কেন দুইবার তাশাহুদ পড়বে। দুই রাকাত পড়ে এক তাশাহুদ। আর দুই রাকাত পড়ে আরেক তাশাহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, প্রতি দুই রাকাতে একবারের বেশি তাশাহুদ পড়া জায়েজ নেই। অনুরূপভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় তাশাহুদের মাঝে দুই রাকাতের বেশি পড়া জায়েজ নেই। তবে দুটির মাঝে এক রাকাত হলে বৈধ আছে।
যদি দুই দুই তাশাহুদের বেশি পড়ে বা দুই তাশাহুদের মাঝে দুয়ের অধিক রাকাত থাকে তাহলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন, প্রতি রাকাতে তাশাহুদ পড়া জায়েজ আছে। তবে সঠিক কথা হল, প্রতি দুই রাকাতের পর তাশাহুদ জায়েজ; এক রাকাতের পরে নয়।
শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ইমাম শাফেয়ি রহ. ও আহমদ রহ. এর মতে ওয়াজিব। আবু হানিফা ও মালেক রহ. এর মতে সুন্নাত।
প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া শাফেয়ি, আহমদ ও ইমাম আবু হানিফা সহ অধিকাংশ ইমামের মতে সুন্নাত। ইমাম আহমদ রহ. এর মতে ওয়াজিব। ছেড়ে দিলে শাফেয়ি রহ. এর মাজহাব অনুযায়ী নামাজ সহিহ হবে। তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। চাই ইচ্ছা করে ছাড়ুক বা ভুলক্রমে। ২২৫
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি তাশাহুদ বর্ণিত হয়েছে:
(১৩৩) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর সূত্রে নিম্নোক্ত তাশাহুদ বর্ণিত আছে-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়‍্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাত, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। 226
(১৩৪) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নবর্ণিত তাশাহুদ বর্ণিত আছে-
التَّحِيَّاتُ الْمُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلهِ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ ، الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ .
উচ্চারণ: আত্তাহিয়‍্যাতুল মুবারাকাত, আসসালাওয়াতু ত্তায়্যিবাত লিল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: সকল বরকতময় মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রাসুল। ২২৭
(১৩৫) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. এর সূত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নোক্ত তাশাহুদ বর্ণিত হয়েছে-
‏التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু ত্তায়্যিবাত ওয়াস সালাওয়াতু লিল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। ২২৮
(১৩৬) হজরত কাসেম এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা রাদি. নিচের তাশাহুদটি আমাকে শিখিয়েছেন এবং বলেছেন, এটি ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাশাহুদ-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ ، الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাত, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল।
এসব রেওয়ায়েতের একটি সুন্দর ফায়দা হল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাশাহুদের শব্দ আমাদের তাশাহুদের শব্দের মতই। ২২৯
(১৩৭) হজরত আবদুর রহমান বিন আবদুল কারি (কারাহ গোত্রের দিকে সম্বন্ধিত) রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শোনেছি, তিনি মিম্বারে বসে লোকদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমরা বলো-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ ، الزَّاكِيَاتُ لِلهِ ، الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إلهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, আজ্জাকিয়াতু লিল্লাহ, আত্তায়্যিবাতুস সালাওয়াতু লিল্লাহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিষ্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। ২০০
(১৩৮) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি নিম্নবর্ণিত তাশাহুদ পড়তেন-
التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ الرَّاكِيَاتُ لِلَّهِ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু ত্তায়্যিবাতুস সালাওয়াতু জাকিয়াতু লিল্লাহ। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক, আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ২৩১
উক্ত কিতাবগুলোতে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে আরেকটি রেওয়ায়েতে আছে-
التَّحِيَّاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ الرَّاكِيَاتُ لِلهِ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতুস সালাওয়াতু ত্তায়্যিবাতু জাকিয়াতু লিল্লাহ। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিন একক, তার কোন শীরক নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ২৩২
(১৩৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে যে, তিনি নিম্ন বর্ণিত তাশাহুদ পড়তেন-
بِاسْمِ اللهِ ، التَّحِيَّاتُ لِلهِ، اَلصَّلَوَاتُ لِلهِ ، اَلزَّاكِيَاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، شَهِدْتُ أَنْ لَا إلهَ إِلَّا اللهُ، شَهِدْتُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، .
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ, আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, আস সালাওয়াতু লিল্লাহ, আজ্জাকিয়াতু লিল্লাহ। আস্সালামু আলান্নাবিয়্যি ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। শাহিদতু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, শাহিদতু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করলাম। সমস্ত মৌখিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য, সমস্ত শারীরিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য এবং সমস্ত আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল। ২৩৩
এই হল তাশাহুদের বিভিন্ন ধরন। ইমাম বাইহাকি রহ. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি হাদিস প্রমাণিত: এক. আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর হাদিস। দুই. আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. এর হাদিস। তিন. আবু মুসা আশআরি রাদি. এর হাদিস।
অন্যরা বলেন, উক্ত তিন তাশাহুদই সহিহ। তবে আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত তাশাহুদ অধিক বিশুদ্ধ।
পূর্বোল্লেখিত যে কোন তাশাহুদ পড়া জায়েজ আছে। ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম এমনটিই বলেন। ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস থেকে বর্ণিত তাশাহুদ পড়া উত্তম। কারণ, এতে (اَلْمُبَارَكَاتُ) (আল-মুবারাকাত) শব্দটি অতিরিক্ত আছে। ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম বলেন, রাবীদের শব্দের ভিন্নতার কারণে এক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক ব্যাপক। যে কোন তাশাহুদ পড়া যাবে।
প্রথমে বর্ণিত তিন তাশাহুদের যে কোনা একটি তাশাহুদ পুরা পড়া। যদি তাশাহুদের আংশিক বাদ দেয় তাহলে জায়েজ হবে কি না- এ ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে।
(اَلْمُبَارَكَاتُ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ وَالزَّاكِيَاتُ) (আল-মুবারাকাত, ওয়াস সালাওয়াত, ওয়াত্তায়্যিবাত, ওয়াজ্জাকিয়াত) এই শব্দগুলো তাশাহুদের জন্য শর্ত নয়। যদি এই সবগুলো শব্দ বাদ দিয়ে শুধু (اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ) (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু) থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে তাহলেও তাশাহুদ জায়েজ হবে। এ ব্যাপারে শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের নিকট কোন এখতেলাফ নেই।
(السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ) আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু থেকে শেষ পর্যন্ত শব্দগুলো ওয়াজিব। কোন শব্দ বাদ দেয়া জায়েজ নেই।
(وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ) ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ) এর ব্যাপারে তিনটি অভিমত রয়েছে। সবচেয়ে বিশুদ্ধ অভিমত হল, এগুলোও বাদ দেয়া যাবে না। কারণ সকল হাদিসে এশব্দগুলো এসেছে। দুই. এদুটি শব্দকে বাদ দেয়া যাবে। তিন. (وَبَرَكَاتُهُ ) ওয়া বারাকাতুহ) বাদ দেয়া যাবে। তবে (وَرَحْمَةُ اللَّهِ ) ওয়া রাহমাতুল্লাহি) বাদ দেয়া যাবে না। আবুল আব্বাস বিন সুরাইজ রহ. বলেন, এতটুকু বলা জায়েজ আছে-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ ، سَلَامٌ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ، سَلَامٌ عَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللَّهِ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, সালামুন আলাইকা আইয়ুহা ন্নাবিয়্যু, সালামু আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য, হে নবি, আপনার ওপর শান্তি অতবীর্ণ হোক। শান্তি বর্ষিত হোক নেক বান্দাদের ওপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল।
سَلَامٌ সালামুন) শব্দটি অধিকাংশ হাদিসে এভাবে এসেছে- ( السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ) আসসালামু আলাইকা আইয়ুহা ন্নাবিয়্যু] এবং عَلَيْنَا السَّلَامُ উভয় জায়গায় আলিফ-লামের সাথেও এসেছে। তবে কিছু কিছু হাদিসে আলিফ- লাম ছাড়া (سّلام সালামুন] এসেছে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, উভয়টি জায়েজ আছে। তবে উত্তম হল, আলিফ-লামসহ বলা। কারণ, অধিকাংশ হাদিসে এভাবেই আসছে। এতে বেশি অক্ষর রয়েছে, আর এতেই সতর্কতা।
তাশাহুদের আগে বিসমিল্লাহ পড়ার বিষয়টি পূর্বে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম বুখারি ও নাসাঈ রহ. বলেন, বিসমিল্লাহ যুক্ত রেওয়ায়েতগুলো সঠিক নয়। তাই অধিকাংশ শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব নয়। তবে কেউ কেউ বলেন, বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। তবে পছন্দনীয় মত হল, বিসমিল্লাহ না বলা। কারণ, যেসব সাহাবায়ে কেরাম তাশাহুদ রেওয়ায়েত করেছেন, তাদের বেশির ভাগই বিসমিল্লাহ রেওয়ায়েত করেননি।
তাশাহুদের শব্দের মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে শব্দের আগ-পিছ হলে নামাজে কোন সমস্যা হবে না।
শাফেয়ি রহ. কিতাবুল উম্মে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, শব্দের মধ্যেও ধারাবাহিকতা জরুরি যেমন সুরা ফাতিহার শব্দের মাঝে ধারাবাহিকতা জরুরি। সালাম শব্দটি কোন রেওয়ায়েতে আগে এসেছে আবার কোন রেওয়ায়েতে পরে এসেছে-এর থেকে বোঝা যায় যে, শব্দের আগ-পিছ করা জায়েজ।
আর সুরা ফাতেহার শব্দ ও বিন্যাস ওহি প্রদত্ত। তাই এতে আগ-পিছ করা জায়েজ নেই।
যে আরবি ভাষায় তাশাহুদ পড়তে সক্ষম তার জন্য অনারবি ভাষায় তাশাহুদ পড়া জায়েজ নয়। আর যদি কেউ আরবি ভাষায় পড়তে না পারে, তাহলে সে নিজের ভাষায় তাশাহুদ পড়বে। আর আরবি ভাষায় শিখতে থাকবে। যেমনটি পূর্বে তাকবিরে তাহরিমার অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সকল উলামায়ে কেরামের মতে তাশাহুদ আস্তে পড়া সুন্নাত। এ ব্যাপারে নিচের হাদিসটি দলিল-
(১৪০) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুন্নাত হল তাশাহুদ আস্তে আস্তে পড়া। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ইমাম হাকেম রহ. বলেন, এটি সহিহ। ২৩৪
কোন সাহাবি যখন বলেন- 'এটা সুন্নাত', তাহলে সেটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য বলে ধরা হয়। এটাই জমহুর উলামায়ে কেরামের বিশুদ্ধ মত।
যদি কেউ উচু আওয়াজে পড়ে তাহলে মাকরুহ হবে। তবে এজন্য তার নামাজ নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না।

টিকাঃ
২২৫. ইমাম আবু হানিফা রহ. এর নিকটে উভয় বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব। অনিচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (হেদায়া: ১/১১২)
২২৬. সহিহ বুখারি: ৮৩১, সহিহ মুসলিম: ৪০২, সুনানে আবু দাউদ: ৯৬৮, সুনানে তিরমিজি: ২৮৯, সুনানে নাসাঈ ২/২৩৭।
২২৭. সহিহ মুসলিম: ৪০৩, সুনানে আবু দাউদ: ৯৭৪, সুনানে নাসাঈ ২/২৪২-২৪৩।
২২৮. সহিহ মুসলিম: ৪০৪, সুনানে আবু দাউদ: ৯৭২, সুনানে নাসাঈ ২/২৪২।
২২৯. সুনানে বাইহাকি ২/১৪৪।
২৩০. মুয়াত্তা মালেক ১/৯০, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২।
২৩১. মুয়াত্তা মালেক: ২০৭, সুনানে বায়হাকি ২/১৪৪।
২৩২. মুয়াত্তা মালেক ১/৯১, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২, আলফুতুহাতুর রাব্বানিয়াহ ২/৩২৮।
২৩৩. মুয়াত্তা মালেক ১/৯১, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২।
২৩৪. সুনানে তিরমিজি: ২৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৬, মুসতাদরাকে হাকেম ২/২৩০, ২৬৭, সুনানে বাইহাকি ২/১৪৬।

নামাজ দুই রাকাত বিশিষ্ট হলে যেমন ফজরের নামাজ বা অন্য কোন নফল নামাজ তাহলে তাশাহুদ একবার পড়বে। যদি নামাজ তিন রাকাত বা চার রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে তাতে দুইবার তাশাহুদ পড়তে হয়, প্রথমবার ও দ্বিতীয়বার।
মাসবুক ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনবার তাশাহুদ পড়বে। মাসবুক ব্যক্তির মাগরিবের নামাজে চারবার তাশাহুদ পড়তে হতে পারে। যেমন দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর পর যদি ইমামের সাথে নামাজে শরিক হয় তাহলে প্রথম ও দ্বিতীয় তাশাহুদে ইমামে সঙ্গে শরিক হবে। এঅবস্থায় মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে কেবল এক রাকাত পেয়েছে। ইমাম সালাম ফেরানোর পর মাসবুক তার ছুটে যাওয়া দুই রাকাত আদায় করবে। প্রথম রাকাতের পর তাশাহুদ পড়বে, কেননা এটা তার জন্য দ্বিতীয় রাকাত। এভাবে তার চারবার তাশাহুদ পড়তে হবে।
নফল নামাজ যদি চার রাকাতের বেশি পড়ে চাই একশত রাকাতই হোক না কেন দুইবার তাশাহুদ পড়বে। দুই রাকাত পড়ে এক তাশাহুদ। আর দুই রাকাত পড়ে আরেক তাশাহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, প্রতি দুই রাকাতে একবারের বেশি তাশাহুদ পড়া জায়েজ নেই। অনুরূপভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় তাশাহুদের মাঝে দুই রাকাতের বেশি পড়া জায়েজ নেই। তবে দুটির মাঝে এক রাকাত হলে বৈধ আছে।
যদি দুই দুই তাশাহুদের বেশি পড়ে বা দুই তাশাহুদের মাঝে দুয়ের অধিক রাকাত থাকে তাহলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন, প্রতি রাকাতে তাশাহুদ পড়া জায়েজ আছে। তবে সঠিক কথা হল, প্রতি দুই রাকাতের পর তাশাহুদ জায়েজ; এক রাকাতের পরে নয়।
শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ইমাম শাফেয়ি রহ. ও আহমদ রহ. এর মতে ওয়াজিব। আবু হানিফা ও মালেক রহ. এর মতে সুন্নাত।
প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া শাফেয়ি, আহমদ ও ইমাম আবু হানিফা সহ অধিকাংশ ইমামের মতে সুন্নাত। ইমাম আহমদ রহ. এর মতে ওয়াজিব। ছেড়ে দিলে শাফেয়ি রহ. এর মাজহাব অনুযায়ী নামাজ সহিহ হবে। তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। চাই ইচ্ছা করে ছাড়ুক বা ভুলক্রমে। ২২৫
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি তাশাহুদ বর্ণিত হয়েছে:
(১৩৩) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর সূত্রে নিম্নোক্ত তাশাহুদ বর্ণিত আছে-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়‍্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাত, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। 226
(১৩৪) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নবর্ণিত তাশাহুদ বর্ণিত আছে-
التَّحِيَّاتُ الْمُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلهِ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ ، الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ .
উচ্চারণ: আত্তাহিয়‍্যাতুল মুবারাকাত, আসসালাওয়াতু ত্তায়্যিবাত লিল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: সকল বরকতময় মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রাসুল। ২২৭
(১৩৫) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. এর সূত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নোক্ত তাশাহুদ বর্ণিত হয়েছে-
‏التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু ত্তায়্যিবাত ওয়াস সালাওয়াতু লিল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। ২২৮
(১৩৬) হজরত কাসেম এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা রাদি. নিচের তাশাহুদটি আমাকে শিখিয়েছেন এবং বলেছেন, এটি ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাশাহুদ-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ ، الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাত, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল।
এসব রেওয়ায়েতের একটি সুন্দর ফায়দা হল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাশাহুদের শব্দ আমাদের তাশাহুদের শব্দের মতই। ২২৯
(১৩৭) হজরত আবদুর রহমান বিন আবদুল কারি (কারাহ গোত্রের দিকে সম্বন্ধিত) রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শোনেছি, তিনি মিম্বারে বসে লোকদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমরা বলো-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ ، الزَّاكِيَاتُ لِلهِ ، الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إلهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, আজ্জাকিয়াতু লিল্লাহ, আত্তায়্যিবাতুস সালাওয়াতু লিল্লাহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিষ্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। ২০০
(১৩৮) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি নিম্নবর্ণিত তাশাহুদ পড়তেন-
التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ الرَّاكِيَاتُ لِلَّهِ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু ত্তায়্যিবাতুস সালাওয়াতু জাকিয়াতু লিল্লাহ। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক, আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ২৩১
উক্ত কিতাবগুলোতে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে আরেকটি রেওয়ায়েতে আছে-
التَّحِيَّاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ الرَّاكِيَاتُ لِلهِ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতুস সালাওয়াতু ত্তায়্যিবাতু জাকিয়াতু লিল্লাহ। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিন একক, তার কোন শীরক নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ২৩২
(১৩৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে যে, তিনি নিম্ন বর্ণিত তাশাহুদ পড়তেন-
بِاسْمِ اللهِ ، التَّحِيَّاتُ لِلهِ، اَلصَّلَوَاتُ لِلهِ ، اَلزَّاكِيَاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، شَهِدْتُ أَنْ لَا إلهَ إِلَّا اللهُ، شَهِدْتُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، .
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ, আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, আস সালাওয়াতু লিল্লাহ, আজ্জাকিয়াতু লিল্লাহ। আস্সালামু আলান্নাবিয়্যি ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। শাহিদতু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, শাহিদতু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করলাম। সমস্ত মৌখিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য, সমস্ত শারীরিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য এবং সমস্ত আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল। ২৩৩
এই হল তাশাহুদের বিভিন্ন ধরন। ইমাম বাইহাকি রহ. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি হাদিস প্রমাণিত: এক. আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর হাদিস। দুই. আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. এর হাদিস। তিন. আবু মুসা আশআরি রাদি. এর হাদিস।
অন্যরা বলেন, উক্ত তিন তাশাহুদই সহিহ। তবে আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত তাশাহুদ অধিক বিশুদ্ধ।
পূর্বোল্লেখিত যে কোন তাশাহুদ পড়া জায়েজ আছে। ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম এমনটিই বলেন। ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস থেকে বর্ণিত তাশাহুদ পড়া উত্তম। কারণ, এতে (اَلْمُبَارَكَاتُ) (আল-মুবারাকাত) শব্দটি অতিরিক্ত আছে। ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম বলেন, রাবীদের শব্দের ভিন্নতার কারণে এক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক ব্যাপক। যে কোন তাশাহুদ পড়া যাবে।
প্রথমে বর্ণিত তিন তাশাহুদের যে কোনা একটি তাশাহুদ পুরা পড়া। যদি তাশাহুদের আংশিক বাদ দেয় তাহলে জায়েজ হবে কি না- এ ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে।
(اَلْمُبَارَكَاتُ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ وَالزَّاكِيَاتُ) (আল-মুবারাকাত, ওয়াস সালাওয়াত, ওয়াত্তায়্যিবাত, ওয়াজ্জাকিয়াত) এই শব্দগুলো তাশাহুদের জন্য শর্ত নয়। যদি এই সবগুলো শব্দ বাদ দিয়ে শুধু (اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ) (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু) থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে তাহলেও তাশাহুদ জায়েজ হবে। এ ব্যাপারে শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের নিকট কোন এখতেলাফ নেই।
(السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ) আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু থেকে শেষ পর্যন্ত শব্দগুলো ওয়াজিব। কোন শব্দ বাদ দেয়া জায়েজ নেই।
(وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ) ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ) এর ব্যাপারে তিনটি অভিমত রয়েছে। সবচেয়ে বিশুদ্ধ অভিমত হল, এগুলোও বাদ দেয়া যাবে না। কারণ সকল হাদিসে এশব্দগুলো এসেছে। দুই. এদুটি শব্দকে বাদ দেয়া যাবে। তিন. (وَبَرَكَاتُهُ ) ওয়া বারাকাতুহ) বাদ দেয়া যাবে। তবে (وَرَحْمَةُ اللَّهِ ) ওয়া রাহমাতুল্লাহি) বাদ দেয়া যাবে না। আবুল আব্বাস বিন সুরাইজ রহ. বলেন, এতটুকু বলা জায়েজ আছে-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ ، سَلَامٌ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ، سَلَامٌ عَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللَّهِ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, সালামুন আলাইকা আইয়ুহা ন্নাবিয়্যু, সালামু আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য, হে নবি, আপনার ওপর শান্তি অতবীর্ণ হোক। শান্তি বর্ষিত হোক নেক বান্দাদের ওপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল।
سَلَامٌ সালামুন) শব্দটি অধিকাংশ হাদিসে এভাবে এসেছে- ( السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ) আসসালামু আলাইকা আইয়ুহা ন্নাবিয়্যু] এবং عَلَيْنَا السَّلَامُ উভয় জায়গায় আলিফ-লামের সাথেও এসেছে। তবে কিছু কিছু হাদিসে আলিফ- লাম ছাড়া (سّلام সালামুন] এসেছে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, উভয়টি জায়েজ আছে। তবে উত্তম হল, আলিফ-লামসহ বলা। কারণ, অধিকাংশ হাদিসে এভাবেই আসছে। এতে বেশি অক্ষর রয়েছে, আর এতেই সতর্কতা।
তাশাহুদের আগে বিসমিল্লাহ পড়ার বিষয়টি পূর্বে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম বুখারি ও নাসাঈ রহ. বলেন, বিসমিল্লাহ যুক্ত রেওয়ায়েতগুলো সঠিক নয়। তাই অধিকাংশ শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব নয়। তবে কেউ কেউ বলেন, বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। তবে পছন্দনীয় মত হল, বিসমিল্লাহ না বলা। কারণ, যেসব সাহাবায়ে কেরাম তাশাহুদ রেওয়ায়েত করেছেন, তাদের বেশির ভাগই বিসমিল্লাহ রেওয়ায়েত করেননি।
তাশাহুদের শব্দের মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে শব্দের আগ-পিছ হলে নামাজে কোন সমস্যা হবে না।
শাফেয়ি রহ. কিতাবুল উম্মে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, শব্দের মধ্যেও ধারাবাহিকতা জরুরি যেমন সুরা ফাতিহার শব্দের মাঝে ধারাবাহিকতা জরুরি। সালাম শব্দটি কোন রেওয়ায়েতে আগে এসেছে আবার কোন রেওয়ায়েতে পরে এসেছে-এর থেকে বোঝা যায় যে, শব্দের আগ-পিছ করা জায়েজ।
আর সুরা ফাতেহার শব্দ ও বিন্যাস ওহি প্রদত্ত। তাই এতে আগ-পিছ করা জায়েজ নেই।
যে আরবি ভাষায় তাশাহুদ পড়তে সক্ষম তার জন্য অনারবি ভাষায় তাশাহুদ পড়া জায়েজ নয়। আর যদি কেউ আরবি ভাষায় পড়তে না পারে, তাহলে সে নিজের ভাষায় তাশাহুদ পড়বে। আর আরবি ভাষায় শিখতে থাকবে। যেমনটি পূর্বে তাকবিরে তাহরিমার অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সকল উলামায়ে কেরামের মতে তাশাহুদ আস্তে পড়া সুন্নাত। এ ব্যাপারে নিচের হাদিসটি দলিল-
(১৪০) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুন্নাত হল তাশাহুদ আস্তে আস্তে পড়া। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ইমাম হাকেম রহ. বলেন, এটি সহিহ। ২৩৪
কোন সাহাবি যখন বলেন- 'এটা সুন্নাত', তাহলে সেটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য বলে ধরা হয়। এটাই জমহুর উলামায়ে কেরামের বিশুদ্ধ মত।
যদি কেউ উচু আওয়াজে পড়ে তাহলে মাকরুহ হবে। তবে এজন্য তার নামাজ নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না।

টিকাঃ
২২৫. ইমাম আবু হানিফা রহ. এর নিকটে উভয় বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব। অনিচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (হেদায়া: ১/১১২)
২২৬. সহিহ বুখারি: ৮৩১, সহিহ মুসলিম: ৪০২, সুনানে আবু দাউদ: ৯৬৮, সুনানে তিরমিজি: ২৮৯, সুনানে নাসাঈ ২/২৩৭।
২২৭. সহিহ মুসলিম: ৪০৩, সুনানে আবু দাউদ: ৯৭৪, সুনানে নাসাঈ ২/২৪২-২৪৩।
২২৮. সহিহ মুসলিম: ৪০৪, সুনানে আবু দাউদ: ৯৭২, সুনানে নাসাঈ ২/২৪২।
২২৯. সুনানে বাইহাকি ২/১৪৪।
২৩০. মুয়াত্তা মালেক ১/৯০, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২।
২৩১. মুয়াত্তা মালেক: ২০৭, সুনানে বায়হাকি ২/১৪৪।
২৩২. মুয়াত্তা মালেক ১/৯১, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২, আলফুতুহাতুর রাব্বানিয়াহ ২/৩২৮।
২৩৩. মুয়াত্তা মালেক ১/৯১, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২।
২৩৪. সুনানে তিরমিজি: ২৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৬, মুসতাদরাকে হাকেম ২/২৩০, ২৬৭, সুনানে বাইহাকি ২/১৪৬।

📘 আল আযকার > 📄 তাশাহুদের পর দরুদ পড়া

📄 তাশাহুদের পর দরুদ পড়া


তাশাহুদের পর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়া
ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ শরিফ পড়া ওয়াজিব। ছেড়ে দিলে নামাজ হবে না। নবিজির পরিবারবর্গের ওপর দরুদ পড়া ওয়াজিব নয় বিশুদ্ধ মাজহাব অনুযায়ী। তবে এটা মুস্তাহাব। আর কেউ কেউ বলেছেন ওয়াজিব। নিম্নোক্ত দরুদ শরিফ পড়া উত্তম:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ النَّبِيِّ الْأُتِي، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّي، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসুলিকা ন্নাবিয়ি‍্যল উম্যিয়্যি ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ওয়া আজওয়াজিহি ওয়া জুররি‍্যয়‍্যাতিহ। কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদি ন্নাবিয়্যিল উম্যিয়্যিয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ওয়া আজওয়াজিহি ওয়া জুররি‍্যয়‍্যাতিহ, কামা বারাকতা আলা আলি ইবরাহিমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা ফিল আলামিন। ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি রহমত নাজিল করুন আপনার বান্দা মুহাম্মাদ ও উম্মি রাসুলের ওপর। আর তার পরিআর-পরিজন, স্ত্রীগণ ও বংশধরগণের প্রতি। যেমন রহমত নাজিল করেছেন ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। হে আল্লাহ, আপনি বরকত নাজিল করুন উম্মি রাসুল মুহাম্মাদের ওপর এবং তার পরিআর-পরিজন, স্ত্রীগণ ও বংশধরগণের প্রতি। যেমন বরকত নাজিল করেছেন বিশ্ববাসীর মধ্যে ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।
দরুদ প্রসঙ্গে সামনে বিস্তারিত আলোচনা আসবে "নবিজির ওপর দরুদ বর্ষণ” অধ্যায়ে।
উক্ত দরুদ শরিফে ওয়াজিব অংশ হল- اَللَّهُمَّ صَلَّ عَلَى النَّبِيِّ )আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা ন্নাবিয়্যি)। চাইলে এই বাক্যগুলোও বলা যাবে-
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ।
অর্থ: আল্লাহ পাক মুহাম্মাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدٍ.
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা রাসুলিহ।
অর্থ: আল্লাহ পাক তার রাসুলের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى رَسُوْلِهِ.
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা ন্নাবিয়্যি।
অর্থ: আল্লাহ পাক নবিজির ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِيِّ.
কোন কোন শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, এই বাক্যটিই বলতে হবে- اَللَّهُمَّ صَلَّ عَلَى مُحَمَّدٍ )আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন) অন্যথায় জায়েজ হবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, এটি বলা জায়েজ আছে- وَصَلَّى اللهُ عَلَى أَحْمَدَ )ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা আহমাদ: আল্লাহ পাক, আহমাদ নবির ওপর রহমত বর্ষণ করুন) আবার কেউ কেউ বলেন, এটি বলা জায়েজ আছে- صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি: আল্লাহ তার ওপর রহমত বর্ষণ করুন) ২৩৫
প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের পর দরুদ পড়া কারও মতে ওয়াজিব নয়। তবে মুস্তাহাব কিনা? এ ব্যাপারে দুই ধরনের মত রয়েছে। বিশুদ্ধ মত হল মুস্তাহাব। পরিবারবর্গের ওপর মুস্তাহাব নয়। কেউ কেউ বলেছেন সেটাও মুস্তাহাব। প্রথম বৈঠকে দুআ পড়া মুস্তাহাব নয়। বরং কেউ কেউ বলেছেন প্রথম বৈঠকে দুআ পড়া মাকরুহ। কেননা প্রথম বৈঠক বেশি দীর্ঘ করা যাবে না। কিন্তু দ্বিতীয় বৈঠক এর ব্যতিক্রম।
শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ পড়া
শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ করা সকলের মতেই জায়েয।
(১৪১) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদেরকে তাশাহুদ শিখানোর পর বলতেন- এরপর তোমরা যে দুআ ইচ্ছা করো। অন্য বর্ণনায় আছে- এরপর তোমরা যা পছন্দ করো তা চাও। অরেক রেওয়ায়েতে আছে- এরপর তোমাদের যা চাওয়ার চাও। ২৩৬
উল্লিখিত দুআগুলো মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। দুআ লম্বা হওয়া চাই। তবে ইমাম হলে ভিন্ন কথা। ইহকালীন ও পরকালীন বিষয়ে যা ইচ্ছা চাইবে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দুআও পড়তে পারবে বা নিজের পক্ষ থেকে দুআও পড়তে পারবে। তবে রাসুল, সাহাবা থেকে বর্ণিত দুআ পড়াই উত্তম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ স্থানে পড়ার দুআ বা যে কোন স্থানে পড়ার দুআই পড়া যাবে। তবে এক্ষেত্রেও উত্তম হল, নামাজের এই স্থান তথা শেষ বৈঠকে পড়ার যেসব দুআ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পড়া। নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ার জন্য হাদিসে অনেক দুআ বর্ণিত হয়েছে-
(১৪২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُدِ الْآخِرِ، فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ، مِنْ أَرْبَعٍ : مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের কেউ যখন শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে শেষ করে, সে যেন চারটি বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে পানাহ চায়। যথা: (১) জাহান্নাম থেকে (২) কবরের শাস্তি থেকে (৩) জীবিত ও মৃত্যুকালীন পরীক্ষা থেকে (৪) দাজ্জালের ফিতনা থেকে। ২৩৭
সহিহ মুসলিম শরিফের আরেক বর্ণনায় আছে যে, তোমরা শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর আল্লাহর কাছে চারটি বিষয়ে আশ্রয় চাও। এভাবে বলবে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চাই, কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই। ২৩৮
(১৪৩) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাসামি ওয়াল মাগরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং মুক্তি চাই অপরাধ ও ঘৃণা থেকে। ২৩৯
(১৪৪) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, নামাজের শেষে তাশাহুদের পর সালাম ফিরানোর আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ ، وَمَا أَسْرَفْتُ ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي ، أَنْتَ الْمُقَدَّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخَّرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু, ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলানতু ওয়া মা আসরাফতু ওয়া মা আনতা আলামু বিহি মিন্নি। আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়ানতাল মুআখ্খির। লা ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার অতীতের গুনাহ মাফ করে দিন। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দিন। আমার যত অপচয় হয়েছে সে সম্পর্কে আপনি আমার চেয়েও বেশি অবগত। আপনি অনাদি-অনন্ত, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। ২৪০
(১৪৫) হজরত আবু বকর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাকে একটি দুআ শিখিয়ে দিন যা আমি নামাজে পড়বো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ শিখিয়েছেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা, ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি গুনাহ করে নিজের অনেক অবিচার করে ফেলেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপন অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয় আপনিই মহা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
ইমাম বুখারিসহ অন্যান্য ইমামগণ এই হাদিস দ্বারা নামাজ শেষে উক্ত দুআ পড়ার কথা বলেছেন। তাদের এই হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা শুদ্ধ হয়েছে। কারণ, হাদিসে আসছে- 'এমন এমন দুআ শিখিয়ে দিন, যা আমি নামাজে পড়ব' যে কথায় সকল নামাজ অন্তর্ভুক্ত। ২৪১
(১৪৬) হজরত আবু সালেহ জাকওয়ান রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি কিছু সংখ্যক সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তিকে বললেন, তুমি নামাজে কী বল? ঐ ব্যক্তি বলল, আমি তাশাহুদ পড়ি। এরপর এই দুআটি পড়ি। তবে আমি আপনার ও মুআজের মতো গুঞ্জরণ করতে পারি না। নবিজি বললেন, এই দুয়ের মাঝেই আমরা গুঞ্জরণ করি। দুআটি এরকম-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা, ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। ২৪২
নিচের দুআটি সর্বত্র পড়া মুস্তাহাব-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتَّقَى، وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াহ। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াতুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা কামনা করছি। আপনার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও অমুক্ষাপেক্ষিতা চাচ্ছি। ২৪৩

টিকাঃ
২৩৫. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দরুদ শরিফ পড়া সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না। তাদের মতে নিচের দরুদ শরিফটি পড়া উত্তম-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। যেমন রহমত নাজিল করেছিলেন ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ, আপনি বরকত নাজিল করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের প্রতি। যেমন বরকত নাজিল করেছিলেন ইবরাহিম ও তার বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান。
২৩৬. সহিহ বুখারি: ৮৩১, সহিহ মুসলিম: ৪০২।
২৩৭. সহিহ মুসলিম: ৫৮৯।
২৩৮. সহিহ বুখারি: ১৩৭৭, সহিহ মুসলিম: ৫৮৮, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৩, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৮।
২৩৯. সহিহ বুখারি: ৮৩২, সুনানে মুসলিম: ৫৮৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৮০, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৬।
২৪০. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪১৭।
২৪১. সহিহ বুখারি: ৮৩৪, সহিহ মুসলিম: ২৭০৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৫২১, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৩।- হানাফি উলামায়ে কেরাম নামাজের শেষে উক্ত দুআটি পড়ার কথাই বলেন। এছাড়া অন্য দুআও পড়তে পারবে। (হেদায়া ১/১১৩)
২৪২. সুনানে আবু দাউদ: ৭৯২, সুনানে ইবনে মাজা: ৯১০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৮৪।
২৪৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৪, মুসনাদে আহমাদ: ৩৯৫০।

তাশাহুদের পর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ পড়া
ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ শরিফ পড়া ওয়াজিব। ছেড়ে দিলে নামাজ হবে না। নবিজির পরিবারবর্গের ওপর দরুদ পড়া ওয়াজিব নয় বিশুদ্ধ মাজহাব অনুযায়ী। তবে এটা মুস্তাহাব। আর কেউ কেউ বলেছেন ওয়াজিব। নিম্নোক্ত দরুদ শরিফ পড়া উত্তম:
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ النَّبِيِّ الْأُتِي، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ النَّبِيِّ الْأُمِّي، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَأَزْوَاجِهِ وَذُرِّيَّتِهِ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ فِي الْعَالَمِينَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিন আবদিকা ওয়া রাসুলিকা ন্নাবিয়ি‍্যল উম্যিয়্যি ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ওয়া আজওয়াজিহি ওয়া জুররি‍্যয়‍্যাতিহ। কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ওয়া বারিক আলা মুহাম্মাদি ন্নাবিয়্যিল উম্যিয়্যিয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন ওয়া আজওয়াজিহি ওয়া জুররি‍্যয়‍্যাতিহ, কামা বারাকতা আলা আলি ইবরাহিমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিমা ফিল আলামিন। ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি রহমত নাজিল করুন আপনার বান্দা মুহাম্মাদ ও উম্মি রাসুলের ওপর। আর তার পরিআর-পরিজন, স্ত্রীগণ ও বংশধরগণের প্রতি। যেমন রহমত নাজিল করেছেন ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। হে আল্লাহ, আপনি বরকত নাজিল করুন উম্মি রাসুল মুহাম্মাদের ওপর এবং তার পরিআর-পরিজন, স্ত্রীগণ ও বংশধরগণের প্রতি। যেমন বরকত নাজিল করেছেন বিশ্ববাসীর মধ্যে ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান।
দরুদ প্রসঙ্গে সামনে বিস্তারিত আলোচনা আসবে "নবিজির ওপর দরুদ বর্ষণ” অধ্যায়ে।
উক্ত দরুদ শরিফে ওয়াজিব অংশ হল- اَللَّهُمَّ صَلَّ عَلَى النَّبِيِّ )আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা ন্নাবিয়্যি)। চাইলে এই বাক্যগুলোও বলা যাবে-
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা মুহাম্মাদ।
অর্থ: আল্লাহ পাক মুহাম্মাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى مُحَمَّدٍ.
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা রাসুলিহ।
অর্থ: আল্লাহ পাক তার রাসুলের ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى رَسُوْلِهِ.
উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলা ন্নাবিয়্যি।
অর্থ: আল্লাহ পাক নবিজির ওপর রহমত বর্ষণ করুন।
صَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِيِّ.
কোন কোন শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, এই বাক্যটিই বলতে হবে- اَللَّهُمَّ صَلَّ عَلَى مُحَمَّدٍ )আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদের ওপর রহমত বর্ষণ করুন) অন্যথায় জায়েজ হবে না। আবার কেউ কেউ বলেন, এটি বলা জায়েজ আছে- وَصَلَّى اللهُ عَلَى أَحْمَدَ )ওয়া সাল্লাল্লাহু আলা আহমাদ: আল্লাহ পাক, আহমাদ নবির ওপর রহমত বর্ষণ করুন) আবার কেউ কেউ বলেন, এটি বলা জায়েজ আছে- صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি: আল্লাহ তার ওপর রহমত বর্ষণ করুন) ২৩৫
প্রথম বৈঠকে তাশাহুদের পর দরুদ পড়া কারও মতে ওয়াজিব নয়। তবে মুস্তাহাব কিনা? এ ব্যাপারে দুই ধরনের মত রয়েছে। বিশুদ্ধ মত হল মুস্তাহাব। পরিবারবর্গের ওপর মুস্তাহাব নয়। কেউ কেউ বলেছেন সেটাও মুস্তাহাব। প্রথম বৈঠকে দুআ পড়া মুস্তাহাব নয়। বরং কেউ কেউ বলেছেন প্রথম বৈঠকে দুআ পড়া মাকরুহ। কেননা প্রথম বৈঠক বেশি দীর্ঘ করা যাবে না। কিন্তু দ্বিতীয় বৈঠক এর ব্যতিক্রম।
শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ পড়া
শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ করা সকলের মতেই জায়েয।
(১৪১) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদেরকে তাশাহুদ শিখানোর পর বলতেন- এরপর তোমরা যে দুআ ইচ্ছা করো। অন্য বর্ণনায় আছে- এরপর তোমরা যা পছন্দ করো তা চাও। অরেক রেওয়ায়েতে আছে- এরপর তোমাদের যা চাওয়ার চাও। ২৩৬
উল্লিখিত দুআগুলো মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। দুআ লম্বা হওয়া চাই। তবে ইমাম হলে ভিন্ন কথা। ইহকালীন ও পরকালীন বিষয়ে যা ইচ্ছা চাইবে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দুআও পড়তে পারবে বা নিজের পক্ষ থেকে দুআও পড়তে পারবে। তবে রাসুল, সাহাবা থেকে বর্ণিত দুআ পড়াই উত্তম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ স্থানে পড়ার দুআ বা যে কোন স্থানে পড়ার দুআই পড়া যাবে। তবে এক্ষেত্রেও উত্তম হল, নামাজের এই স্থান তথা শেষ বৈঠকে পড়ার যেসব দুআ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পড়া। নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ার জন্য হাদিসে অনেক দুআ বর্ণিত হয়েছে-
(১৪২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُدِ الْآخِرِ، فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ، مِنْ أَرْبَعٍ : مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের কেউ যখন শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে শেষ করে, সে যেন চারটি বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে পানাহ চায়। যথা: (১) জাহান্নাম থেকে (২) কবরের শাস্তি থেকে (৩) জীবিত ও মৃত্যুকালীন পরীক্ষা থেকে (৪) দাজ্জালের ফিতনা থেকে। ২৩৭
সহিহ মুসলিম শরিফের আরেক বর্ণনায় আছে যে, তোমরা শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর আল্লাহর কাছে চারটি বিষয়ে আশ্রয় চাও। এভাবে বলবে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চাই, কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই। ২৩৮
(১৪৩) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাসামি ওয়াল মাগরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং মুক্তি চাই অপরাধ ও ঘৃণা থেকে। ২৩৯
(১৪৪) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, নামাজের শেষে তাশাহুদের পর সালাম ফিরানোর আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ ، وَمَا أَسْرَفْتُ ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي ، أَنْتَ الْمُقَدَّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخَّرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু, ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলানতু ওয়া মা আসরাফতু ওয়া মা আনতা আলামু বিহি মিন্নি। আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়ানতাল মুআখ্খির। লা ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার অতীতের গুনাহ মাফ করে দিন। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দিন। আমার যত অপচয় হয়েছে সে সম্পর্কে আপনি আমার চেয়েও বেশি অবগত। আপনি অনাদি-অনন্ত, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। ২৪০
(১৪৫) হজরত আবু বকর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাকে একটি দুআ শিখিয়ে দিন যা আমি নামাজে পড়বো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ শিখিয়েছেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা, ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি গুনাহ করে নিজের অনেক অবিচার করে ফেলেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপন অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয় আপনিই মহা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
ইমাম বুখারিসহ অন্যান্য ইমামগণ এই হাদিস দ্বারা নামাজ শেষে উক্ত দুআ পড়ার কথা বলেছেন। তাদের এই হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা শুদ্ধ হয়েছে। কারণ, হাদিসে আসছে- 'এমন এমন দুআ শিখিয়ে দিন, যা আমি নামাজে পড়ব' যে কথায় সকল নামাজ অন্তর্ভুক্ত। ২৪১
(১৪৬) হজরত আবু সালেহ জাকওয়ান রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি কিছু সংখ্যক সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তিকে বললেন, তুমি নামাজে কী বল? ঐ ব্যক্তি বলল, আমি তাশাহুদ পড়ি। এরপর এই দুআটি পড়ি। তবে আমি আপনার ও মুআজের মতো গুঞ্জরণ করতে পারি না। নবিজি বললেন, এই দুয়ের মাঝেই আমরা গুঞ্জরণ করি। দুআটি এরকম-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা, ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। ২৪২
নিচের দুআটি সর্বত্র পড়া মুস্তাহাব-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتَّقَى، وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াহ। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াতুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা কামনা করছি। আপনার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও অমুক্ষাপেক্ষিতা চাচ্ছি। ২৪৩

টিকাঃ
২৩৫. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দরুদ শরিফ পড়া সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না। তাদের মতে নিচের দরুদ শরিফটি পড়া উত্তম-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইবরাহিমা ওয়া আলা আলি ইবরাহিম, ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিন, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারাকতা আলা ইবরাহিমা, ওয়া আলা আলি ইবরাহিম। ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন। যেমন রহমত নাজিল করেছিলেন ইবরাহিম ও তার পরিবারের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান। হে আল্লাহ, আপনি বরকত নাজিল করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের প্রতি। যেমন বরকত নাজিল করেছিলেন ইবরাহিম ও তার বংশধরের প্রতি। নিশ্চয় আপনি প্রশংসনীয় ও মর্যাদাবান。
২৩৬. সহিহ বুখারি: ৮৩১, সহিহ মুসলিম: ৪০২।
২৩৭. সহিহ মুসলিম: ৫৮৯।
২৩৮. সহিহ বুখারি: ১৩৭৭, সহিহ মুসলিম: ৫৮৮, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৩, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৮।
২৩৯. সহিহ বুখারি: ৮৩২, সুনানে মুসলিম: ৫৮৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৮০, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৬।
২৪০. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪১৭।
২৪১. সহিহ বুখারি: ৮৩৪, সহিহ মুসলিম: ২৭০৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৫২১, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৩।- হানাফি উলামায়ে কেরাম নামাজের শেষে উক্ত দুআটি পড়ার কথাই বলেন। এছাড়া অন্য দুআও পড়তে পারবে। (হেদায়া ১/১১৩)
২৪২. সুনানে আবু দাউদ: ৭৯২, সুনানে ইবনে মাজা: ৯১০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৮৪।
২৪৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৪, মুসনাদে আহমাদ: ৩৯৫০।

📘 আল আযকার > 📄 শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ পড়া

📄 শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ পড়া


শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর দুআ করা সকলের মতেই জায়েয।
(১৪১) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদেরকে তাশাহুদ শিখানোর পর বলতেন- এরপর তোমরা যে দুআ ইচ্ছা করো। অন্য বর্ণনায় আছে- এরপর তোমরা যা পছন্দ করো তা চাও। অরেক রেওয়ায়েতে আছে- এরপর তোমাদের যা চাওয়ার চাও। ২৩৬
উল্লিখিত দুআগুলো মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। দুআ লম্বা হওয়া চাই। তবে ইমাম হলে ভিন্ন কথা। ইহকালীন ও পরকালীন বিষয়ে যা ইচ্ছা চাইবে। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত দুআও পড়তে পারবে বা নিজের পক্ষ থেকে দুআও পড়তে পারবে। তবে রাসুল, সাহাবা থেকে বর্ণিত দুআ পড়াই উত্তম। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ স্থানে পড়ার দুআ বা যে কোন স্থানে পড়ার দুআই পড়া যাবে। তবে এক্ষেত্রেও উত্তম হল, নামাজের এই স্থান তথা শেষ বৈঠকে পড়ার যেসব দুআ বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পড়া। নামাজের শেষ বৈঠকে পড়ার জন্য হাদিসে অনেক দুআ বর্ণিত হয়েছে-
(১৪২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِذَا فَرَغَ أَحَدُكُمْ مِنَ التَّشَهُدِ الْآخِرِ، فَلْيَتَعَوَّذْ بِاللهِ، مِنْ أَرْبَعٍ : مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন তোমাদের কেউ যখন শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ে শেষ করে, সে যেন চারটি বিষয়ের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে পানাহ চায়। যথা: (১) জাহান্নাম থেকে (২) কবরের শাস্তি থেকে (৩) জীবিত ও মৃত্যুকালীন পরীক্ষা থেকে (৪) দাজ্জালের ফিতনা থেকে। ২৩৭
সহিহ মুসলিম শরিফের আরেক বর্ণনায় আছে যে, তোমরা শেষ বৈঠকে তাশাহুদের পর আল্লাহর কাছে চারটি বিষয়ে আশ্রয় চাও। এভাবে বলবে:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবি জাহান্নামা, ওয়া মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আজাব থেকে মুক্তি চাই, কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই। ২৩৮
(১৪৩) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَفِتْنَةِ الْمَمَاتِ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْمَأْثَمِ وَالْمَغْرَمِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন আজাবিল কাবরি, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাসিহিদ্দাজ্জাল, ওয়া আউজুবিকা মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাত। আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল মাসামি ওয়াল মাগরাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে কবরের শাস্তি থেকে মুক্তি চাই, দাজ্জালের অনিষ্ট ফিতনা থেকে মুক্তি চাই, জীবিত ও মৃত্যুকালীন ফিতনা থেকে মুক্তি চাই এবং মুক্তি চাই অপরাধ ও ঘৃণা থেকে। ২৩৯
(১৪৪) হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত, নামাজের শেষে তাশাহুদের পর সালাম ফিরানোর আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ ، وَمَا أَسْرَرْتُ وَمَا أَعْلَنْتُ ، وَمَا أَسْرَفْتُ ، وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّي ، أَنْتَ الْمُقَدَّمُ وَأَنْتَ الْمُؤَخَّرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফিরলি মা কাদ্দামতু ওয়া মা আখখারতু, ওয়া মা আসরারতু ওয়া মা আলানতু ওয়া মা আসরাফতু ওয়া মা আনতা আলামু বিহি মিন্নি। আনতাল মুকাদ্দিমু ওয়ানতাল মুআখ্খির। লা ইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার অতীতের গুনাহ মাফ করে দিন। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দিন। আমার যত অপচয় হয়েছে সে সম্পর্কে আপনি আমার চেয়েও বেশি অবগত। আপনি অনাদি-অনন্ত, আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। ২৪০
(১৪৫) হজরত আবু বকর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনি আমাকে একটি দুআ শিখিয়ে দিন যা আমি নামাজে পড়বো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্নোক্ত দুআ শিখিয়েছেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْماً كَثِيراً، وَلَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ، وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা, ওয়ালা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফিরলি মাগফিরাতান মিন ইনদিকা, ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি গুনাহ করে নিজের অনেক অবিচার করে ফেলেছি, আর আপনি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না। সুতরাং আপন অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। নিশ্চয় আপনিই মহা ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।
ইমাম বুখারিসহ অন্যান্য ইমামগণ এই হাদিস দ্বারা নামাজ শেষে উক্ত দুআ পড়ার কথা বলেছেন। তাদের এই হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করা শুদ্ধ হয়েছে। কারণ, হাদিসে আসছে- 'এমন এমন দুআ শিখিয়ে দিন, যা আমি নামাজে পড়ব' যে কথায় সকল নামাজ অন্তর্ভুক্ত। ২৪১
(১৪৬) হজরত আবু সালেহ জাকওয়ান রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি কিছু সংখ্যক সাহাবি থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন ব্যক্তিকে বললেন, তুমি নামাজে কী বল? ঐ ব্যক্তি বলল, আমি তাশাহুদ পড়ি। এরপর এই দুআটি পড়ি। তবে আমি আপনার ও মুআজের মতো গুঞ্জরণ করতে পারি না। নবিজি বললেন, এই দুয়ের মাঝেই আমরা গুঞ্জরণ করি। দুআটি এরকম-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাতা, ওয়া আউজুবিকা মিনান্নার।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাই। ২৪২
নিচের দুআটি সর্বত্র পড়া মুস্তাহাব-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ ، اَللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْهُدَى وَالتَّقَى، وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল আফওয়া ওয়াল আফিয়াহ। আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা ওয়াতুকা ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা ও সুস্থতা কামনা করছি। আপনার কাছে হেদায়াত, তাকওয়া, পবিত্রতা ও অমুক্ষাপেক্ষিতা চাচ্ছি। ২৪৩

টিকাঃ
২৩৬. সহিহ বুখারি: ৮৩১, সহিহ মুসলিম: ৪০২।
২৩৭. সহিহ মুসলিম: ৫৮৯।
২৩৮. সহিহ বুখারি: ১৩৭৭, সহিহ মুসলিম: ৫৮৮, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৩, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৮।
২৩৯. সহিহ বুখারি: ৮৩২, সুনানে মুসলিম: ৫৮৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৮০, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৬।
২৪০. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪১৭।
২৪১. সহিহ বুখারি: ৮৩৪, সহিহ মুসলিম: ২৭০৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৫২১, সুনানে নাসাঈ ৩/৫৩।- হানাফি উলামায়ে কেরাম নামাজের শেষে উক্ত দুআটি পড়ার কথাই বলেন। এছাড়া অন্য দুআও পড়তে পারবে। (হেদায়া ১/১১৩)
২৪২. সুনানে আবু দাউদ: ৭৯২, সুনানে ইবনে মাজা: ৯১০, মুসনাদে আহমাদ ৩/৪৮৪।
২৪৩. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৭৪, মুসনাদে আহমাদ: ৩৯৫০।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন