📘 আল আযকার > 📄 সিজদার দুআ

📄 সিজদার দুআ


রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুআ পড়ে সিজদার জন্য তাকবির বলবে। আর মাটিতে কপাল রাখা পর্যন্ত তাকবির লম্বা করবে। এই তাকবির হল সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না।
সিজদার অনেক দুআ রয়েছে যেমন-
সহিহ মুসলিমে হজরত হুজায়ফা রাদি. এর সূত্রে নবিজির নামাজ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে, তিনি একই রাকাতে সুরা বাকারা, নিসা ও আলে ইমরান তিলাওয়াত করেছেন। রহমতের আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে রহমত চেয়েছেন। আযাব সংক্রান্ত আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।
এরপর তিনি সিজদা করেছেন। সিজদায় سُبْحَانَ رَبِّيَّ الْأَعْلَى (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) পড়েছেন। তিনি সিজদা করেছেন কিয়াম সমপরিমাণ। ২০০
(১১৮) হজরত আয়েশা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু, সিজদায় নিম্নোক্ত দুআ খুব বেশি পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي.
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।
অর্থ: হে আমাদের রব আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করি। আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো। ২০১
(১১৯) হজরত আয়েশা রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু-সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوسُ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ.
উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।
অর্থ: মহামহিম পবিত্র সত্ত্বা। ফেরেশতা ও জিবরিলের পালনকর্তা। ২০২
(১২০) হজরত আলি রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন)
اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু, ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার জন্য সাজদা করলাম, আপনার ওপরই ঈমান আনলাম, আপনার সামনেই সমর্পিত হলাম। আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং দীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন। আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা। ২০৩
(১২১) রুকুর অধ্যায়ে হজরত আউফ বিন মালেক রাদি. থেকে সুনানের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ রুকু করলে নিম্নোক্ত দুআ বলতেন। সেজদাতেও এমনটি করতেন-
سُبْحَانَ ذِي الْجِبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ.
উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারুত ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়া ওয়াল আযামাহ।
অর্থ: শক্তিমত্তা, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা করছি। তিনি সিজদাতেও উল্লিখিত দুআ পড়তেন। ২০৪
(১২২) হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সিজদা করে তখন সে যেন তিনবার পড়ে। এটিই সর্বনিম্ন স্তর:
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আলা।
অর্থ: আমি আমার মহা মহীয়ান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। ২০৫
(১২৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি খুঁজতে লাগলাম, হঠাৎ আমি দেখলাম যে, তিনি রুকু বা সিজদারত অবস্থায় আছেন। তিনি তখণ নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করছিলেন-
سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা লাইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই।
সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- আয়েশা রাদি. বলেন, আমার হাত তার পায়ে লাগল, তিনি নামাজের স্থানে ছিলেন এবং উভয় পা দণ্ডায়মান ছিলেন। তিনি তখন নিম্নোক্ত দুআ পড়ছিলেন-
اللَّهُمَّ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ، لَا أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আউজু বি রিজাকা মিন সাখাতিকা, ওয়াবি মুআফাতিকা মিন উকুবাতিক। ওয়া আউজুবিকা মিনকা, লা উহসি সানাআন আলাইকা, আনতা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সন্তুষ্টি চাই। ক্রোধ থেকে পানাহ চাই। শান্তি থেকে মুক্তি চাই। আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। আপনি তেমনই মহিমান্বিত যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন। ২০৬
(১২৪) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظَّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ، وَأَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ، فَمِنْ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ.
অর্থ: তোমরা রুকুতে রবের মহিমা বর্ণনা কর, বড়ত্ব প্রকাশ কর। আর সিজদায় বেশি বেশি দুআ করো কেননা, সিজদারত অবস্থায় দুআ বেশি কবুল হয়। ২০৭
(১২৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.
অর্থ: সেজদার সময় বান্দা আল্লাহ তাআলার বেশি নিকটে থাকে। অতএব, তোমরা সিজদারত অবস্থায় বেশি বেশি দুআ করো। ২০৮
(১২৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ ، دِقَّهُ وَجِلَّهُ ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلَانِيَتَهُ وَسِرَّهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি যাম্বি কুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখেরাহু, ওয়া আলানিয়‍্যাহু ওয়াসিরাহু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার সকল গুনাহ মাফ করে দিন, ছোট-বড়, শুরু-শেষ, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব গুনাহ মাফ করে দিন। ২০৯
উল্লিখিত সকল দুআ সিজদায় পড়া মুস্তাহাব। এক সময়ে না পড়তে পারলে বিভিন্ন সময়ে পড়বে। যেমনটি পূর্বের আলোচনায় গেছে। অন্যান্য দুআ পড়তে না পারলে সিজদার তাসবিহ পড়বে ও কিছু দুআ পড়বে। সিজদায়ও রুকুর মত কুরআনের আয়াত পড়া মাকরুহ। অন্যান্য বিষয়ও পূর্বোল্লেখিত রুকুর মতই।
নামাজে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম নাকি রাকাত বেশি পড়া উত্তম- এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। শাফেয়ি রহ. ও তার অনুসারীদের মতে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম। কেননা হাদিসে আছে أَفْضَلُ الصَّلَاةِ طُوْلُ الْقُنُوْتِ তথা উত্তম নামাজ যাতে কিয়াম দীর্ঘ হয়। ২১০
এর দ্বারা বুঝা যায় কিয়াম উত্তম। তাছাড়া নামাজে কিয়াম দীর্ঘ হলে তাতে কুরআন বেশি পড়া হবে। আর সিজদা দীর্ঘ হলে তাসবিহ বেশি পড়া হবে। আর কুরআন শ্রেষ্ঠ। তাই দীর্ঘ কিয়ামও শ্রেষ্ঠ হবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বেশি রাকাত উত্তম। কেননা হাদিসে আছে-
أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.
অর্থ: সিজদার সময় বান্দا আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে। ২১১
ইমাম তিরমিজি রহ. সুনানে তিরমিজিতে উল্লেখ করেন, উলামায়ে কেরাম উক্ত বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ দীর্ঘ কিয়ামকে উত্তম বলেছেন আর কেউ কেউ বেশি রাকাতকে উত্তম বলেছেন।
ইমাম আহমদ রহ. বলেন, এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম আহমদ রহ. কোন ফয়সালা দেননি। ইসহাক রহ. বলেছেন, দিনের বেলা রুকু-সিজদা বেশি করা উত্তম আর রাত্রিবেলা দীর্ঘ কিয়াম উত্তম।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, ইসহাক রহ. এমনটি বলেছেন। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামাজের বিবরণ হাদিসে এসেছে। আর সেসব বিবরণে দীর্ঘ কিয়ামের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর দিনের নামাজে রাতের নামাজের মতো বিবরণ হাদিসে আসেনি।
নামাজের সিজদায় যা পড়বে, তিলাওয়াতের সিজদাতেও তাই পড়া মুস্তাহাব। সেগুলোর সঙ্গে এ দুআটি পড়াও উত্তম-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا، وَأَعْظَمُ لِي بِهَا أَجْرًا، وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا، وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলহা ইনদাকা যুখরা, ওয়া আদিম লি বিহা আজরা, ওয়া দা' আন্নি বিহা বিযরা, ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি কামা তাকাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাউদ আলাইহিস সালাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, একে আমার জন্য আপনার কাছে সঞ্চয় করে রাখো, এর পরিবর্তে আমাকে মহাপ্রতিদান দান করো। এর মাধ্যমে আমার পাপ মার্জনা করে দাও। এটি আমার পক্ষ থেকে কবুল করো যেমনটা কবুল করেছিলেন দাউদ আলাইহিস সালাম থেকে। ২১২
– নিচের আয়াতটি পড়াও মুস্তাহাব-
سُبْحْنَ رَبَّنَا إِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا .
অর্থ: আমাদের পালনকর্তা পবিত্র মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালনকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে।
(১২৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াতের সিজদায় নিচের দুআটি পড়তেন-
سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِه.
উচ্চারণ: সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। বিহাওলিহি ওয়া কুওয়্যাতিহ।
অর্থ: আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং নিজ কুদরত ও শক্তিতে দীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ। ২১০
হাকেম রহ. উক্ত দুআর সঙ্গে (فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ )ফা-তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন: আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা)ও বৃদ্ধি করেছেন। ২১৪
ইমাম তিরমিজি আরো বলেন, ইমাম হাকেম রহ. কর্তৃক বৃদ্ধিকরণ এটা সহিহাইনের শর্ত সাপেক্ষে হয়েছে।

টিকাঃ
২০০. সহিহ মুসলিম: ৭৭২।
২০১. সহিহ বুখারি: ৭৯৪, মুসলিম: ৪৮৪।
২০২. সহিহ মুসলিম: ৪৮৭।
২০৩. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে আবু দাউদ: ৭৬০।
২০৪. নাসাঈ ২/১৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৩।
২০৫. সুনানে আবু দাউদ: ৮৮৬, সুনানে তিরমিজি: ২৬।
২০৬. সহিহ মুসলিম: ৪৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, মুয়াত্তা মালেক ১/২১৪, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯১, সুনানে নাসাঈ ২/২২৫, ২২৩।
২০৭. সহিহ মুসলিম: ৪৭৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৬, সুনানে নাসাঈ ২/১৮৯।
২০৮. সহিহ মুসলিম: ৪৮২।
২০৯. সহিহ মুসলিম: ৪৮৩, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৮।
২১০. সহিহ মুসলিম: ০৪।
২১১. সহিহ মুসলিম: ৪৮২।
২১২. সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে তিরমিজি: ৫৮০, সুনানে নাসাঈ ২/২২২, মুসতাদরাকে হাকেম ১/২২০।
২১৩. সুনানে তিরমিজি: ৫৮০, সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে নাসাঈ ২/২২২।
২১৪. মুসতাদরাকে হাকেম ১/১২০।

রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুআ পড়ে সিজদার জন্য তাকবির বলবে। আর মাটিতে কপাল রাখা পর্যন্ত তাকবির লম্বা করবে। এই তাকবির হল সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না।
সিজদার অনেক দুআ রয়েছে যেমন-
সহিহ মুসলিমে হজরত হুজায়ফা রাদি. এর সূত্রে নবিজির নামাজ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে, তিনি একই রাকাতে সুরা বাকারা, নিসা ও আলে ইমরান তিলাওয়াত করেছেন। রহমতের আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে রহমত চেয়েছেন। আযাব সংক্রান্ত আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।
এরপর তিনি সিজদা করেছেন। সিজদায় سُبْحَانَ رَبِّيَّ الْأَعْلَى (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) পড়েছেন। তিনি সিজদা করেছেন কিয়াম সমপরিমাণ। ২০০
(১১৮) হজরত আয়েশা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু, সিজদায় নিম্নোক্ত দুআ খুব বেশি পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي.
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।
অর্থ: হে আমাদের রব আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করি। আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো। ২০১
(১১৯) হজরত আয়েশা রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু-সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوسُ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ.
উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।
অর্থ: মহামহিম পবিত্র সত্ত্বা। ফেরেশতা ও জিবরিলের পালনকর্তা। ২০২
(১২০) হজরত আলি রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন)
اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু, ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার জন্য সাজদা করলাম, আপনার ওপরই ঈমান আনলাম, আপনার সামনেই সমর্পিত হলাম। আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং দীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন। আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা। ২০৩
(১২১) রুকুর অধ্যায়ে হজরত আউফ বিন মালেক রাদি. থেকে সুনানের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ রুকু করলে নিম্নোক্ত দুআ বলতেন। সেজদাতেও এমনটি করতেন-
سُبْحَانَ ذِي الْجِبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ.
উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারুত ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়া ওয়াল আযামাহ।
অর্থ: শক্তিমত্তা, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা করছি। তিনি সিজদাতেও উল্লিখিত দুআ পড়তেন। ২০৪
(১২২) হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সিজদা করে তখন সে যেন তিনবার পড়ে। এটিই সর্বনিম্ন স্তর:
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আলা।
অর্থ: আমি আমার মহা মহীয়ান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। ২০৫
(১২৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি খুঁজতে লাগলাম, হঠাৎ আমি দেখলাম যে, তিনি রুকু বা সিজদারত অবস্থায় আছেন। তিনি তখণ নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করছিলেন-
سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা লাইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই।
সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- আয়েশা রাদি. বলেন, আমার হাত তার পায়ে লাগল, তিনি নামাজের স্থানে ছিলেন এবং উভয় পা দণ্ডায়মান ছিলেন। তিনি তখন নিম্নোক্ত দুআ পড়ছিলেন-
اللَّهُمَّ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ، لَا أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আউজু বি রিজাকা মিন সাখাতিকা, ওয়াবি মুআফাতিকা মিন উকুবাতিক। ওয়া আউজুবিকা মিনকা, লা উহসি সানাআন আলাইকা, আনতা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সন্তুষ্টি চাই। ক্রোধ থেকে পানাহ চাই। শান্তি থেকে মুক্তি চাই। আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। আপনি তেমনই মহিমান্বিত যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন। ২০৬
(১২৪) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظَّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ، وَأَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ، فَمِنْ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ.
অর্থ: তোমরা রুকুতে রবের মহিমা বর্ণনা কর, বড়ত্ব প্রকাশ কর। আর সিজদায় বেশি বেশি দুআ করো কেননা, সিজদারত অবস্থায় দুআ বেশি কবুল হয়। ২০৭
(১২৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.
অর্থ: সেজদার সময় বান্দা আল্লাহ তাআলার বেশি নিকটে থাকে। অতএব, তোমরা সিজদারত অবস্থায় বেশি বেশি দুআ করো। ২০৮
(১২৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ ، دِقَّهُ وَجِلَّهُ ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلَانِيَتَهُ وَسِرَّهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি যাম্বি কুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখেরাহু, ওয়া আলানিয়‍্যাহু ওয়াসিরাহু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার সকল গুনাহ মাফ করে দিন, ছোট-বড়, শুরু-শেষ, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব গুনাহ মাফ করে দিন। ২০৯
উল্লিখিত সকল দুআ সিজদায় পড়া মুস্তাহাব। এক সময়ে না পড়তে পারলে বিভিন্ন সময়ে পড়বে। যেমনটি পূর্বের আলোচনায় গেছে। অন্যান্য দুআ পড়তে না পারলে সিজদার তাসবিহ পড়বে ও কিছু দুআ পড়বে। সিজদায়ও রুকুর মত কুরআনের আয়াত পড়া মাকরুহ। অন্যান্য বিষয়ও পূর্বোল্লেখিত রুকুর মতই।
নামাজে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম নাকি রাকাত বেশি পড়া উত্তম- এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। শাফেয়ি রহ. ও তার অনুসারীদের মতে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম। কেননা হাদিসে আছে أَفْضَلُ الصَّلَاةِ طُوْلُ الْقُنُوْتِ তথা উত্তম নামাজ যাতে কিয়াম দীর্ঘ হয়। ২১০
এর দ্বারা বুঝা যায় কিয়াম উত্তম। তাছাড়া নামাজে কিয়াম দীর্ঘ হলে তাতে কুরআন বেশি পড়া হবে। আর সিজদা দীর্ঘ হলে তাসবিহ বেশি পড়া হবে। আর কুরআন শ্রেষ্ঠ। তাই দীর্ঘ কিয়ামও শ্রেষ্ঠ হবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বেশি রাকাত উত্তম। কেননা হাদিসে আছে-
أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.
অর্থ: সিজদার সময় বান্দا আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে। ২১১
ইমাম তিরমিজি রহ. সুনানে তিরমিজিতে উল্লেখ করেন, উলামায়ে কেরাম উক্ত বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ দীর্ঘ কিয়ামকে উত্তম বলেছেন আর কেউ কেউ বেশি রাকাতকে উত্তম বলেছেন।
ইমাম আহমদ রহ. বলেন, এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম আহমদ রহ. কোন ফয়সালা দেননি। ইসহাক রহ. বলেছেন, দিনের বেলা রুকু-সিজদা বেশি করা উত্তম আর রাত্রিবেলা দীর্ঘ কিয়াম উত্তম।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, ইসহাক রহ. এমনটি বলেছেন। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামাজের বিবরণ হাদিসে এসেছে। আর সেসব বিবরণে দীর্ঘ কিয়ামের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর দিনের নামাজে রাতের নামাজের মতো বিবরণ হাদিসে আসেনি।
নামাজের সিজদায় যা পড়বে, তিলাওয়াতের সিজদাতেও তাই পড়া মুস্তাহাব। সেগুলোর সঙ্গে এ দুআটি পড়াও উত্তম-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا، وَأَعْظَمُ لِي بِهَا أَجْرًا، وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا، وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলহা ইনদাকা যুখরা, ওয়া আদিম লি বিহা আজরা, ওয়া দা' আন্নি বিহা বিযরা, ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি কামা তাকাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাউদ আলাইহিস সালাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, একে আমার জন্য আপনার কাছে সঞ্চয় করে রাখো, এর পরিবর্তে আমাকে মহাপ্রতিদান দান করো। এর মাধ্যমে আমার পাপ মার্জনা করে দাও। এটি আমার পক্ষ থেকে কবুল করো যেমনটা কবুল করেছিলেন দাউদ আলাইহিস সালাম থেকে। ২১২
– নিচের আয়াতটি পড়াও মুস্তাহাব-
سُبْحْنَ رَبَّنَا إِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا .
অর্থ: আমাদের পালনকর্তা পবিত্র মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালনকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে।
(১২৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াতের সিজদায় নিচের দুআটি পড়তেন-
سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِه.
উচ্চারণ: সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। বিহাওলিহি ওয়া কুওয়্যাতিহ।
অর্থ: আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং নিজ কুদরত ও শক্তিতে দীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ। ২১০
হাকেম রহ. উক্ত দুআর সঙ্গে (فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ )ফা-তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন: আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা)ও বৃদ্ধি করেছেন। ২১৪
ইমাম তিরমিজি আরো বলেন, ইমাম হাকেম রহ. কর্তৃক বৃদ্ধিকরণ এটা সহিহাইনের শর্ত সাপেক্ষে হয়েছে।

টিকাঃ
২০০. সহিহ মুসলিম: ৭৭২।
২০১. সহিহ বুখারি: ৭৯৪, মুসলিম: ৪৮৪।
২০২. সহিহ মুসলিম: ৪৮৭।
২০৩. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে আবু দাউদ: ৭৬০।
২০৪. নাসাঈ ২/১৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৩।
২০৫. সুনানে আবু দাউদ: ৮৮৬, সুনানে তিরমিজি: ২৬।
২০৬. সহিহ মুসলিম: ৪৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, মুয়াত্তা মালেক ১/২১৪, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯১, সুনানে নাসাঈ ২/২২৫, ২২৩।
২০৭. সহিহ মুসলিম: ৪৭৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৬, সুনানে নাসাঈ ২/১৮৯।
২০৮. সহিহ মুসলিম: ৪৮২।
২০৯. সহিহ মুসলিম: ৪৮৩, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৮।
২১০. সহিহ মুসলিম: ০৪।
২১১. সহিহ মুসলিম: ৪৮২।
২১২. সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে তিরমিজি: ৫৮০, সুনানে নাসাঈ ২/২২২, মুসতাদরাকে হাকেম ১/২২০।
২১৩. সুনানে তিরমিজি: ৫৮০, সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে নাসাঈ ২/২২২।
২১৪. মুসতাদরাকে হাকেম ১/১২০।

📘 আল আযকার > 📄 দুই সিজদার মাঝখানের দুআ

📄 দুই সিজদার মাঝখানের দুআ


সিজদা থেকে মাথা উঠানো ও দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থার দুআ
সুন্নাত হল, যখন মাথা উঠাতে শুরু করবে তখন থেকে তাকবির বলবে এবং সোজা হয়ে বসা পর্যন্ত তাকবিরকে দীর্ঘ করবে। পূর্বে তাকবিরের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং তাকবির লম্বা করা প্রসঙ্গে মতানৈক্যও পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তাকবির শেষ করে সোজা হয়ে বসবে। এসময় যেসব দুআ পড়বে-
(১২৮) হজরত হুজায়ফা রাদি. থেকে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ কিয়াম করেছিলেন। সেই হাদিসের বিবরণে আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সেজদার মাঝখানে বলছিলেন। দুই সিজদার মাঝে তিনি সিজদার সমপরিমাণ বসেও ছিলেন। দুআটি এই:
رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي.
উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দিন, আমাকে মাফ করে দিন। ২১৫
(১২৯) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে রাতে তিনি তাঁর খালা মাইমুনা রাদি. এর ঘরে রাত্রি যাপন করেন। তিনি রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন তিনি নিচের দুআটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي.
উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, ওয়ার হামনি ওয়াজ বুরনি, ওয়ার জুকনি, ওয়াহ দিনি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করুন, দয়া করুন, আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমাকে রিজিক দান করুন এবং হেদায়াত দিন।
- সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় وَعَافِنِي )ওয়াআ ফিনি: আমাকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ রাখুন) অতিরিক্ত এসেছে। ২১৬
দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে
দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে। দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবির বলে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ আরাম করে বসবে। এরপর সেজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় যে তাকবির বলেছিলো সেটি সোজা হয়ে দাঁড়ানো পর্যন্ত লম্বা করবে। শব্দের লামের পরে লম্বা করবে। এটাই শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের প্রসিদ্ধ মত। তাদের আরেকটি অভিমত রয়েছে যে, তাকবির বলা ছাড়াই বসবে। এরপর উঠার সময় তাকবির বলে উঠে দাঁড়াবে।
তৃতীয় আরেকটি অভিমত রয়েছে, তাকবির বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। এরপর উঠে দাঁড়াবে তাকবির ছাড়া। তবে সকলের মতে, এক তাকবির বলবে। দুই তাকবিরের কথা কেউ বলেন না। শাফেয়িগণ প্রথম পদ্ধতিটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যেন নামাজের কোন সময় জিকির থেকে খালি না থাকে। ২১৭
সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসা সুন্নাত। বুখারি শরিফসহ অন্যান্য কিতাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন বলে বর্ণিত আছে। শাফেয়ি মাজহাবে তা মুস্তাহাব। এটা প্রতি রাকাতে দ্বিতীয় সিজদার পর করতে হয়। সিজদায়ে তিলাওয়াতে উক্ত বৈঠক নেই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। ২১৮
দ্বিতীয় রাকাতের জিকির
প্রথম রাকাতের সেসব দুআ পড়ার কথা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় রাকাতেও তাই পড়বে। ফরজ নামাজ হোক বা নফল হোক। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে।
১. প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা আছে, দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে তাকবিরে তাহরিমা নেই। দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে যে তাকবির বলা হয়ে থাকে, সেটি সেজদা থেকে উঠার তাকবির। আর সেটি সুন্নাত।
২. দ্বিতীয় রাকাতে শুরুর দুআ তথা সানা নেই। প্রথম রাতে সানা আছে।
৩. প্রথম রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে- এ বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই। দ্বিতীয় রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে কিনা তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হল আউজুবিল্লাহ পড়া।
৪. দ্বিতীয় রাকাতের কিরাত প্রথম রাকাত অপেক্ষা ছোট হবে। এটিই নির্ভরযোগ্য অভিমত। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

টিকাঃ
২১৫. সহিহ মুসলিম: ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭, সুনানে নাসাঈ ৩/২২৬।
২১৬. সুনানে বাইহাকি ২/১২২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৫০, সুনানে তিরমিজি: ২৮৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৯৮।
২১৭. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে, দ্বিতীয় তাকবিরের পরে সামান্য বসবে না; বরং সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। সুতরাং তাদের নিকট এসব এখতেলাফ নেই। বরং সেজদা থেকে উঠার সময়ের তাকবিরকে দীর্ঘ করেই সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। (হেদায়া ১/১১০)
২১৮. হানাফি মাজহাবে উক্ত বৈঠক সুন্নাত নয়। (হেদায়া ১/১১০)

সিজদা থেকে মাথা উঠানো ও দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থার দুআ
সুন্নাত হল, যখন মাথা উঠাতে শুরু করবে তখন থেকে তাকবির বলবে এবং সোজা হয়ে বসা পর্যন্ত তাকবিরকে দীর্ঘ করবে। পূর্বে তাকবিরের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং তাকবির লম্বা করা প্রসঙ্গে মতানৈক্যও পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তাকবির শেষ করে সোজা হয়ে বসবে। এসময় যেসব দুআ পড়বে-
(১২৮) হজরত হুজায়ফা রাদি. থেকে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ কিয়াম করেছিলেন। সেই হাদিসের বিবরণে আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সেজদার মাঝখানে বলছিলেন। দুই সিজদার মাঝে তিনি সিজদার সমপরিমাণ বসেও ছিলেন। দুআটি এই:
رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي.
উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দিন, আমাকে মাফ করে দিন। ২১৫
(১২৯) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে রাতে তিনি তাঁর খালা মাইমুনা রাদি. এর ঘরে রাত্রি যাপন করেন। তিনি রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন তিনি নিচের দুআটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي.
উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, ওয়ার হামনি ওয়াজ বুরনি, ওয়ার জুকনি, ওয়াহ দিনি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করুন, দয়া করুন, আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমাকে রিজিক দান করুন এবং হেদায়াত দিন।
- সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় وَعَافِنِي )ওয়াআ ফিনি: আমাকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ রাখুন) অতিরিক্ত এসেছে। ২১৬
দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে
দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে। দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবির বলে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ আরাম করে বসবে। এরপর সেজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় যে তাকবির বলেছিলো সেটি সোজা হয়ে দাঁড়ানো পর্যন্ত লম্বা করবে। শব্দের লামের পরে লম্বা করবে। এটাই শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের প্রসিদ্ধ মত। তাদের আরেকটি অভিমত রয়েছে যে, তাকবির বলা ছাড়াই বসবে। এরপর উঠার সময় তাকবির বলে উঠে দাঁড়াবে।
তৃতীয় আরেকটি অভিমত রয়েছে, তাকবির বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। এরপর উঠে দাঁড়াবে তাকবির ছাড়া। তবে সকলের মতে, এক তাকবির বলবে। দুই তাকবিরের কথা কেউ বলেন না। শাফেয়িগণ প্রথম পদ্ধতিটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যেন নামাজের কোন সময় জিকির থেকে খালি না থাকে। ২১৭
সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসা সুন্নাত। বুখারি শরিফসহ অন্যান্য কিতাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন বলে বর্ণিত আছে। শাফেয়ি মাজহাবে তা মুস্তাহাব। এটা প্রতি রাকাতে দ্বিতীয় সিজদার পর করতে হয়। সিজদায়ে তিলাওয়াতে উক্ত বৈঠক নেই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। ২১৮
দ্বিতীয় রাকাতের জিকির
প্রথম রাকাতের সেসব দুআ পড়ার কথা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় রাকাতেও তাই পড়বে। ফরজ নামাজ হোক বা নফল হোক। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে।
১. প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা আছে, দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে তাকবিরে তাহরিমা নেই। দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে যে তাকবির বলা হয়ে থাকে, সেটি সেজদা থেকে উঠার তাকবির। আর সেটি সুন্নাত।
২. দ্বিতীয় রাকাতে শুরুর দুআ তথা সানা নেই। প্রথম রাতে সানা আছে।
৩. প্রথম রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে- এ বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই। দ্বিতীয় রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে কিনা তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হল আউজুবিল্লাহ পড়া।
৪. দ্বিতীয় রাকাতের কিরাত প্রথম রাকাত অপেক্ষা ছোট হবে। এটিই নির্ভরযোগ্য অভিমত। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

টিকাঃ
২১৫. সহিহ মুসলিম: ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭, সুনানে নাসাঈ ৩/২২৬।
২১৬. সুনানে বাইহাকি ২/১২২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৫০, সুনানে তিরমিজি: ২৮৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৯৮।
২১৭. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে, দ্বিতীয় তাকবিরের পরে সামান্য বসবে না; বরং সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। সুতরাং তাদের নিকট এসব এখতেলাফ নেই। বরং সেজদা থেকে উঠার সময়ের তাকবিরকে দীর্ঘ করেই সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। (হেদায়া ১/১১০)
২১৮. হানাফি মাজহাবে উক্ত বৈঠক সুন্নাত নয়। (হেদায়া ১/১১০)

📘 আল আযকার > 📄 ফজরের নামাজে কুনূত পড়া

📄 ফজরের নামাজে কুনূত পড়া


ফজরের নামাজে কুনুত পড়া সুন্নাত। এটি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ২১৯
(১৩০) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَزِلْ يَقْنُتَ فِي الصُّبْحِ حَتَّى فَارَقَ الدُّنْيَا.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজে মৃত্যু পর্যন্ত সবসময় কুনুত পড়েছেন। হাদিসটি হাকিম রহ. "কিতাবুল আরবায়িন” এ উল্লেখ করে বলেছেন, হাদিসটি সহিহ। ২২০
ফজরের নামাজে কুনুত পড়া শাফেয়ি মাজহাব অনুযায়ী সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না, তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। ইচ্ছাকৃত ছাড়ুক বা ভুলবশত ছাড়ুক।
ফজরের নামাজ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অন্য কোন নামাজে পড়বে কিনা? এ ব্যাপারে শাফেয়ি থেকে তিন ধরনের মত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ মত হল: ১. যদি বিশেষ কোন বিপদাপদ দেখা দেয় তাহলে কুনুত পড়বে অন্যথায় পড়বে না। ২. বিপদাপদ থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় কুনুত পড়বে। ৩. বাকি নামাজে কোন অবস্থাতেই কুনুত পড়বে না।
শাফেয়ি মাজহাব অনুযায়ী রমজান মাসের শেষ অর্ধেকে বিত্রের শেষ রাকাতে কুনুত পড়া মুস্তাহাব। আরেকটি মত হল, পুরো রমজান মাসে কুনুত পড়া। তৃতীয় মত হল, পুরো বছর কুনুত পড়বে। এটা ইমাম আবু হানীফা রহ. এরও মাজহাব। তবে শাফেয়ি রহ. এর প্রসিদ্ধ মত হল প্রথমটি।
ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে কুনুত পড়ার সময় হল, ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠার পর। আর ইমাম মালেক রহ. এর মতে রুকু করার পূর্বে। শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, শাফেয়ি মাজহাবের কোন ব্যক্তি যদি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়ে, তাহলে সেটি কুনুত বলে গণ্য হবে না। অন্য মতে কুনুত হিসেবে গণ্য হবে। তবে বিশুদ্ধ মত হল, রুকুর পরে পুনরায় পড়বে এবং সিজদায়ে সাহু করবে। কেউ কেউ বলেছেন সিজদায়ে সাহু করবে না।- নিচের যে কোন দুআয়ে কুনুত পড়া যাবে:
(১৩১) হাসান বিন আলি রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিম্নোক্ত কালিমা শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো যেন আমি বিতর নামাজে পড়ি। কালিমাগুলো হল-
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাহদিনি ফি হাদাইতা, ওয়া আফিনি ফি মান আফাইতা, ওয়া তাওয়াল্লনি ফি মান তাওয়াল্লাইতা। ওয়া বারিকলি ফি মা আতাইতা, ওয়াকিনি শাররা মা কাজাইতা, ফা ইন্নাকা তাকজি ওয়ালা যুকজা আলাইক। ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াজিল্লু মান ওয়া লাইতা, তাবারাকতা রাব্বানা ওয়া তাআলালাইত।
অর্থ: হে যাদের তুমি হেদায়াত দিয়েছো তাদের মাঝে আমাকেও হেদায়াত দাও, যাদের তুমি সুরক্ষা দিয়েছো তাদের মাঝে আমাকেও সুরক্ষা দাও। যাদের তুমি অভিভাকত্ব করছো তাদের মাঝে আমারও অভিভাকত্ব করো। আর আমাকে দানকৃত বস্তুতে বরকত দান করো। আপনার নির্ধারিত তাকদিরের অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো। তাকদিরের ফয়সালা আপনিই করেন, আপনার বিপক্ষে কোন ফয়সালা হয় না। যাকে আপনি আপন করেন সে লাঞ্ছিত হয় না। হে আমাদের রব, আপনি বরকতময় মহা মহিয়ান।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কুনুত এটিই সবচেয়ে সুন্দর। বায়হাকি রহ. এর এক বর্ণনায় আছে- মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়্যা (তিনি আলি রাদি. এর ছেলে) বলেন, এই দুআটি আমার পিতা ফজরের নামাজে পরতেন।
এই দুআ পড়ার পরে মুস্তাহাব হল নিচের দরুদটি পড়া-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَسَلَّمْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, ওয়া সাল্লিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন।
নাসাঈ শরিফে এই হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে। তাতে অতিরিক্ত বর্ণিত আছে-
وَصَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِيِّ.
উচ্চারণ: ওয়া সাল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যি।
অর্থ: আর আল্লাহর নবিজির ওপর রহমত বর্ষণ করুন। ২২১
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, উমর রাদি. থেকে যে কুনুত বর্ণিত সেটি পড়া উত্তম। তিনি ফজরের নামাজে রুকুর পর নিচের কুনুতটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنَكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ ، وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَخْلَعُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُوْ رَحْمَتَكَ، وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجَدُّ بِالْكَافِرِينَ مُلْحِقُ اللَّهُمَّ عَذَّبِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ وَيُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ، وَيُقَاتِلُوْنَ أَوْلِيَاءَكِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِينَ، وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَأَلِفْ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْ، وَاجْعَلْ فِي قُلُوْبِهِمُ الْإِيْمَانَ وَالْحِكْمَةَ ، وَثَبِّتْهُمْ عَلَى مِلَّةِ رَسُولِكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَأَوْزِعْهُمْ أَنْ يُوْفُوْا بِعَهْدِكَ الَّذِي عَاهَدْتَهُمْ عَلَيْهِ ، وانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوَّكَ وَعَدُوِّهِمْ إِلَهَ الْحَقِّ وَاجْعَلْنَا مِنْهُمْ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা, ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া লা নাকফুরুকা, ওয়া নু' মিনু বিকা ওয়া নাখলাউ মান ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না'বুদু, ওয়া লাকা নুসাল্লি ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাসআ ওয়া নাহফিদু, নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আজাবাক। ইন্না আজাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক। আল্লাহুম্মা আজ্জিবিল কাফারাতাল্লাজিনা ইয়াসুদ্দুনা আন সাবিলিক, ওয়া ইয়ুকাজ্জিবুনা রুসুলাক, ওয়া যুকাতিলুনা আউলিয়াআক। আল্লাহুম্মাগফির লিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত, ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত। ওয়া আসলিহ জাতা বাইনিহিম, ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম। ওয়াজআল ফি কুলুবিহিমুল ঈমানা ওয়াল হিকমাহ। ওয়া সাব্বিতহুম আলা মিল্লাতি রাসুলিকা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওয়া আউযিহুম আন যুফু বি-আহদিকাল্লাজি আহাদতাহুম আলাইহ। ওয়ানসুরহুম আলা আদুয়্যিকা ওয়া আদুয়ি‍্যহিম, ইলাহাল হাক্কি ওয়াজআলনা মিনহুম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে সাহায্য কামনা করি, আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, কোন অকৃতজ্ঞতা করি না, আপনার প্রতি ঈমান রাখি। আর যে আপনার নাফরমানি করে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। হে আল্লাহ, আমরা আপনারই ইবাদত করি।, আপনার জন্যই নামাজ আদায় করি, আপনাকেই সেজদা করি। আপনার প্রতি ধাবিত হই, আপনার দিকেই ছুটে যাই। আপনার রহমতের আশা রাখি এবং শাস্তিকে ভয় করি। নিশ্চয়ই আপনার কঠিন শাস্তি আপতিত হবে কাফেরদের ওপরে। হে আল্লাহ, সেসব কাফেরদেরকে শাস্তি দিন, যারা আপনার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, আপনার রাসুলদের মিথ্যা অভিহিত করে এবং আপনার প্রিয় বান্দাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। হে আল্লাহ, মুমিন নর-নারী, মুসলিম নর-নারীদের ক্ষমা করে দাও, তাদের মাঝে একতা পয়দা করে দাও, তাদের মনে সম্প্রীতি দান করো এবং তাদের মনে ঈমান ও প্রজ্ঞা দান করো। তাদেরকে আপনার রাসুলের মিল্লাতের ওপর অবিচল রাখুন, তাদেরকে আপনার অঙ্গীকার পূরণের তাওফিক দান করুন, যার ওপর আপনি তাদের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে আপনার ও তাদের দুশমনের বিরুদ্ধে মদদ করো। ওহে সত্য মাবুদ, আমাদেরকেও তাদের দলভুক্ত করো। ২২২
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, পূর্বে উল্লেখিত কুনুত ও উমর রাদি. বর্ণিত কুনুত উভয়টি একসঙ্গে পড়া উত্তম। যেকোন একটি কুনুত পড়তে চাইলে উমর রাদি. বর্ণিত কুনুত পড়বে। আর সংক্ষেপ করতে চাইলে প্রথমটি পড়বে। উভয় কুনুত পড়া মুস্তাহাব একাকী নামাজি ব্যক্তির জন্য ও ঐ ইমামের জন্য যার মুক্তাদিরা দীর্ঘ নামাজে বিরক্ত হয় না। প্রসিদ্ধ মাজহাব মতে কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দুআ নেই। তাই সুতরাং যে দুআই পড়বে সেটিই কুনুত হয়ে যাবে। যদি দুআ সম্বলিত কুরআনের কোন আয়াত পড়ে তাহলেও কুনুত হয়ে যাবে। তবে উত্তম হল হাদিসে বর্ণিত কুনুত পড়া। কেউ কেউ বলেছেন হাদিসে বর্ণিত দুআ ছাড়া অন্য কোন দুআ পড়লে কুনুত আদায় হবে না। অবশ্য প্রাধান্যপ্রাপ্ত কথা সেটিই যে, কুনুতের জন্য কোন দুআ নির্দিষ্ট নেই।
মুস্তাহাব হল, নামাজি ব্যক্তি ইমাম হলে, কুনুতের মধ্যে اللَّهُمَّ اهْدِنَا (আল্লাহুম্মাহদি না) বহুবচনের শব্দ দিয়ে বলবে। বাকি সবগুলো শব্দের ক্ষেত্রে অনুরূপভাবে বহুবচনের শব্দ দিয়ে বলবে। যদি اللَّهُمَّ اهْدِنِي একবচনের শব্দ ব্যবহার করে তাহলেও কুনুত হয়ে যাবে, তবে মাকরুহ হবে। কেননা ইমাম হলে খাস করে নিজের জন্য দুআ করা মাকরুহ।
(১৩২) হজরত সাওবান রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا يَؤُمُّ عَبْدُ فَيَخُصَّ نَفْسَهُ بِدَعْوَةٍ دُوْنَهُمْ، فَإِنْ فَعَلَ فَقَدْ خَانَهُمْ.
অর্থ: যে ইমাম মুসল্লীদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য বিশেষভাবে দুআ করে, সে খেয়ানতকারী। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, এটি হাসান হাদিস। ২২৩
কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো
কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো ও হাত চেহারায় মাসেহ সংক্রান্ত তিনটি অভিমত রয়েছে:
১. মুস্তাহাব হল, উভয় হাত উঠানো এবং তা চেহারায় মাসেহ না করবে। এটাই সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত।
২. হাত উঠাবে, মাসেহও করবে।
৩. কোনটিই করবে না।
তবে চেহারা ব্যতীত অন্য কোন অঙ্গে মাসেহ না করার ব্যাপারে সবাই একমত যেমন বুক মাসেহ করা। বরং এমন করা মাকরুহ।
কুনুত আস্তে পড়া ও জোরে পড়া সম্পর্কে শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি নামাজি ব্যক্তি একাকী হয় তাহলে আস্তে পড়বে। আর ইমাম হলে জোরে পড়বে। এটিই পছন্দনীয় ও অধিকাংশের অভিমত।
দ্বিতীয় অভিমত হল, নামাজের অন্যান্য দুআর ন্যায় কুনুতও আস্তে পড়বে। ইমাম যদি উচু আওয়াজে কুনুত না পড়ে তাহলে মুক্তাদিরা নীচু স্বরে কুনুত পড়বে। আর ইমাম উচু আওয়াজে কুনুত পড়ে এবং মুক্তাদিরা শোনে তাহলে আমিন আমিন বলবে। আর না শুনলে নীচু আওয়াজে মুক্তাদিরা কুনুত পড়বে। কেউ কেউ বলেন, এ অবস্থাতেও আমিন বলবে। আবার কেউ কেউ বলেন, কোনার সাথে সাথে সে নিজেও পড়বে। তবে প্রথম অভিমতটিই অধিক পছন্দনীয়।
যদি ফজর ছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত পড়ে, সে নামাজ যদি জেহরি হয় যেমন, মাগরিব ও এশা। তাহলে সেক্ষেত্রেও ফজরের মতই পড়বে। আর যদি সিররির হয় যেমন জোহর ও আছর তাহলে কেউ কেউ বলেন, আস্তে পড়বে। আবার কেউ কেউ বলেন ফজরের মতই পড়বে।
সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, বিরে মাউনার ঘটনায় সত্তর জন কারী সাহাবি রাদি. কে শহিদ করার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল নামাজে উচু আওয়াজে কুনুত পড়তেন।
সহিহ বুখারিতে (لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ) এই আয়াতের তাফসিরে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুতে নাযিলা উচু আওয়াজে পড়েছেন। ২২৪

টিকাঃ
২১৯. হানাফি মাজহাব মতে, বিতরের নামাজে পুরো বছর তৃতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে কুনুত পড়া ওয়াজিব। এছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত নেই। হাদিসে ফজরের নামাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুত পড়েছেন বলে যেসব বর্ণনা এসেছে, সেগুলো হলো 'কুনুতে নাজিলা'। আপদকালীন কুনুত। সবসময়ের জন্য নয়। তাই হানাফি উলামায়ে কেরাম মহা বিপদের সম্মুখীন হলে 'কুনুতে নাযিলা' পড়ার কথা বলেন। কিন্তু সবসময় সর্বাবস্থায় ফজরের নামাজে কুনুত পড়ার কথা বলেন না। যদি ইমাম ফজরের নামাজে কুনুত পড়েন, তাহলে মুক্তাদি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। (হেদায়া ১/১৪৫)
২২০. সুনানে বাইহাকি ২/২০১, মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৬২।
২২১. সুনানে নাসাঈ: ৩/২৪৮, সুনানে তিরমিজি: ৪৬৪, সুনানে আবু দাউদ: ১৪২৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১১৭৮।
২২২. সুনানে বাইহাকি: ২/২১০, তুহফাতুল আশরাফ ১৩/১৮৪, মারাসিলে আবু দাউদের সূত্রে।
২২৩. সুনানে আবু দাউদ: ৯০, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৯২৩, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৮০।
২২৪. সহিহ বুখারি: ৪৫৬০। হানাফি উলামায়ে কেরাম যেহেতু বিতর ছাড়া অন্য নামাজে কুনুতের অনুমতি প্রদান করে না। যার বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে গেছে। তাই এসকল মাসআলারও প্রয়োজন নেই। তাঁরা শুধু বিতরের নামাজে কুনুত পড়ার কথা বলেন। সে কুনুত সর্বাবস্থায় ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামাজি ব্যক্তি সকলেই আস্তে পড়বে। আর অন্য নামাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কুনুত পড়েছেন, সেটি ছিলো 'কুনুতে নাযিলা'। এই শেষোক্ত হাদিসটি হানাফিদের দলিল যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য নামাজে কুনুতে নাযিলা পড়তেন। (হেদায়া ১/১৪৫-৪৬)

ফজরের নামাজে কুনুত পড়া সুন্নাত। এটি সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। ২১৯
(১৩০) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَزِلْ يَقْنُتَ فِي الصُّبْحِ حَتَّى فَارَقَ الدُّنْيَا.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের নামাজে মৃত্যু পর্যন্ত সবসময় কুনুত পড়েছেন। হাদিসটি হাকিম রহ. "কিতাবুল আরবায়িন” এ উল্লেখ করে বলেছেন, হাদিসটি সহিহ। ২২০
ফজরের নামাজে কুনুত পড়া শাফেয়ি মাজহাব অনুযায়ী সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না, তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। ইচ্ছাকৃত ছাড়ুক বা ভুলবশত ছাড়ুক।
ফজরের নামাজ ছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অন্য কোন নামাজে পড়বে কিনা? এ ব্যাপারে শাফেয়ি থেকে তিন ধরনের মত রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রসিদ্ধ মত হল: ১. যদি বিশেষ কোন বিপদাপদ দেখা দেয় তাহলে কুনুত পড়বে অন্যথায় পড়বে না। ২. বিপদাপদ থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় কুনুত পড়বে। ৩. বাকি নামাজে কোন অবস্থাতেই কুনুত পড়বে না।
শাফেয়ি মাজহাব অনুযায়ী রমজান মাসের শেষ অর্ধেকে বিত্রের শেষ রাকাতে কুনুত পড়া মুস্তাহাব। আরেকটি মত হল, পুরো রমজান মাসে কুনুত পড়া। তৃতীয় মত হল, পুরো বছর কুনুত পড়বে। এটা ইমাম আবু হানীফা রহ. এরও মাজহাব। তবে শাফেয়ি রহ. এর প্রসিদ্ধ মত হল প্রথমটি।
ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে কুনুত পড়ার সময় হল, ফজরের নামাজের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে উঠার পর। আর ইমাম মালেক রহ. এর মতে রুকু করার পূর্বে। শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, শাফেয়ি মাজহাবের কোন ব্যক্তি যদি রুকুর পূর্বে কুনুত পড়ে, তাহলে সেটি কুনুত বলে গণ্য হবে না। অন্য মতে কুনুত হিসেবে গণ্য হবে। তবে বিশুদ্ধ মত হল, রুকুর পরে পুনরায় পড়বে এবং সিজদায়ে সাহু করবে। কেউ কেউ বলেছেন সিজদায়ে সাহু করবে না।- নিচের যে কোন দুআয়ে কুনুত পড়া যাবে:
(১৩১) হাসান বিন আলি রাদি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে নিম্নোক্ত কালিমা শিক্ষা দিয়েছেন, সেগুলো যেন আমি বিতর নামাজে পড়ি। কালিমাগুলো হল-
اللَّهُمَّ اهْدِنِي فِيمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِي فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِي فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِي فِيمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِي شَرَّ مَا قَضَيْتَ إِنَّكَ تَقْضِيْ وَلَا يُقْضَى عَلَيْكَ، وَإِنَّهُ لَا يَذِلُّ مَنْ وَالَيْتَ، وَلَا يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাহদিনি ফি হাদাইতা, ওয়া আফিনি ফি মান আফাইতা, ওয়া তাওয়াল্লনি ফি মান তাওয়াল্লাইতা। ওয়া বারিকলি ফি মা আতাইতা, ওয়াকিনি শাররা মা কাজাইতা, ফা ইন্নাকা তাকজি ওয়ালা যুকজা আলাইক। ওয়া ইন্নাহু লা ইয়াজিল্লু মান ওয়া লাইতা, তাবারাকতা রাব্বানা ওয়া তাআলালাইত।
অর্থ: হে যাদের তুমি হেদায়াত দিয়েছো তাদের মাঝে আমাকেও হেদায়াত দাও, যাদের তুমি সুরক্ষা দিয়েছো তাদের মাঝে আমাকেও সুরক্ষা দাও। যাদের তুমি অভিভাকত্ব করছো তাদের মাঝে আমারও অভিভাকত্ব করো। আর আমাকে দানকৃত বস্তুতে বরকত দান করো। আপনার নির্ধারিত তাকদিরের অনিষ্ট থেকে আমাকে রক্ষা করো। তাকদিরের ফয়সালা আপনিই করেন, আপনার বিপক্ষে কোন ফয়সালা হয় না। যাকে আপনি আপন করেন সে লাঞ্ছিত হয় না। হে আমাদের রব, আপনি বরকতময় মহা মহিয়ান।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কুনুত এটিই সবচেয়ে সুন্দর। বায়হাকি রহ. এর এক বর্ণনায় আছে- মুহাম্মাদ বিন হানাফিয়্যা (তিনি আলি রাদি. এর ছেলে) বলেন, এই দুআটি আমার পিতা ফজরের নামাজে পরতেন।
এই দুআ পড়ার পরে মুস্তাহাব হল নিচের দরুদটি পড়া-
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ وَسَلَّمْ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ, ওয়া সাল্লিম।
অর্থ: হে আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার পরিবারের ওপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন।
নাসাঈ শরিফে এই হাদিসটি হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে। তাতে অতিরিক্ত বর্ণিত আছে-
وَصَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِيِّ.
উচ্চারণ: ওয়া সাল্লাল্লাহু আলান নাবিয়্যি।
অর্থ: আর আল্লাহর নবিজির ওপর রহমত বর্ষণ করুন। ২২১
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, উমর রাদি. থেকে যে কুনুত বর্ণিত সেটি পড়া উত্তম। তিনি ফজরের নামাজে রুকুর পর নিচের কুনুতটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِيْنَكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَلَا نَكْفُرُكَ ، وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَخْلَعُ مَنْ يَفْجُرُكَ اللَّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّي وَنَسْجُدُ وَإِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ، نَرْجُوْ رَحْمَتَكَ، وَنَخْشَى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ الْجَدُّ بِالْكَافِرِينَ مُلْحِقُ اللَّهُمَّ عَذَّبِ الْكَفَرَةَ الَّذِينَ يَصُدُّوْنَ عَنْ سَبِيْلِكَ وَيُكَذِّبُوْنَ رُسُلَكَ، وَيُقَاتِلُوْنَ أَوْلِيَاءَكِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِينَ، وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمَاتِ، وَأَصْلِحْ ذَاتَ بَيْنِهِمْ، وَأَلِفْ بَيْنَ قُلُوْبِهِمْ، وَاجْعَلْ فِي قُلُوْبِهِمُ الْإِيْمَانَ وَالْحِكْمَةَ ، وَثَبِّتْهُمْ عَلَى مِلَّةِ رَسُولِكَ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَأَوْزِعْهُمْ أَنْ يُوْفُوْا بِعَهْدِكَ الَّذِي عَاهَدْتَهُمْ عَلَيْهِ ، وانْصُرْهُمْ عَلَى عَدُوَّكَ وَعَدُوِّهِمْ إِلَهَ الْحَقِّ وَاجْعَلْنَا مِنْهُمْ .
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতায়িনুকা, ওয়া নাসতাগফিরুকা ওয়া লা নাকফুরুকা, ওয়া নু' মিনু বিকা ওয়া নাখলাউ মান ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না'বুদু, ওয়া লাকা নুসাল্লি ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাসআ ওয়া নাহফিদু, নারজু রাহমাতাকা ওয়া নাখশা আজাবাক। ইন্না আজাবাকা বিল কুফফারি মুলহিক। আল্লাহুম্মা আজ্জিবিল কাফারাতাল্লাজিনা ইয়াসুদ্দুনা আন সাবিলিক, ওয়া ইয়ুকাজ্জিবুনা রুসুলাক, ওয়া যুকাতিলুনা আউলিয়াআক। আল্লাহুম্মাগফির লিল মুমিনিনা ওয়াল মুমিনাত, ওয়াল মুসলিমিনা ওয়াল মুসলিমাত। ওয়া আসলিহ জাতা বাইনিহিম, ওয়া আল্লিফ বাইনা কুলুবিহিম। ওয়াজআল ফি কুলুবিহিমুল ঈমানা ওয়াল হিকমাহ। ওয়া সাব্বিতহুম আলা মিল্লাতি রাসুলিকা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ওয়া আউযিহুম আন যুফু বি-আহদিকাল্লাজি আহাদতাহুম আলাইহ। ওয়ানসুরহুম আলা আদুয়্যিকা ওয়া আদুয়ি‍্যহিম, ইলাহাল হাক্কি ওয়াজআলনা মিনহুম।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমরা আপনার কাছে সাহায্য কামনা করি, আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি, কোন অকৃতজ্ঞতা করি না, আপনার প্রতি ঈমান রাখি। আর যে আপনার নাফরমানি করে তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করি। হে আল্লাহ, আমরা আপনারই ইবাদত করি।, আপনার জন্যই নামাজ আদায় করি, আপনাকেই সেজদা করি। আপনার প্রতি ধাবিত হই, আপনার দিকেই ছুটে যাই। আপনার রহমতের আশা রাখি এবং শাস্তিকে ভয় করি। নিশ্চয়ই আপনার কঠিন শাস্তি আপতিত হবে কাফেরদের ওপরে। হে আল্লাহ, সেসব কাফেরদেরকে শাস্তি দিন, যারা আপনার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, আপনার রাসুলদের মিথ্যা অভিহিত করে এবং আপনার প্রিয় বান্দাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে। হে আল্লাহ, মুমিন নর-নারী, মুসলিম নর-নারীদের ক্ষমা করে দাও, তাদের মাঝে একতা পয়দা করে দাও, তাদের মনে সম্প্রীতি দান করো এবং তাদের মনে ঈমান ও প্রজ্ঞা দান করো। তাদেরকে আপনার রাসুলের মিল্লাতের ওপর অবিচল রাখুন, তাদেরকে আপনার অঙ্গীকার পূরণের তাওফিক দান করুন, যার ওপর আপনি তাদের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে আপনার ও তাদের দুশমনের বিরুদ্ধে মদদ করো। ওহে সত্য মাবুদ, আমাদেরকেও তাদের দলভুক্ত করো। ২২২
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, পূর্বে উল্লেখিত কুনুত ও উমর রাদি. বর্ণিত কুনুত উভয়টি একসঙ্গে পড়া উত্তম। যেকোন একটি কুনুত পড়তে চাইলে উমর রাদি. বর্ণিত কুনুত পড়বে। আর সংক্ষেপ করতে চাইলে প্রথমটি পড়বে। উভয় কুনুত পড়া মুস্তাহাব একাকী নামাজি ব্যক্তির জন্য ও ঐ ইমামের জন্য যার মুক্তাদিরা দীর্ঘ নামাজে বিরক্ত হয় না। প্রসিদ্ধ মাজহাব মতে কুনুতের জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দুআ নেই। তাই সুতরাং যে দুআই পড়বে সেটিই কুনুত হয়ে যাবে। যদি দুআ সম্বলিত কুরআনের কোন আয়াত পড়ে তাহলেও কুনুত হয়ে যাবে। তবে উত্তম হল হাদিসে বর্ণিত কুনুত পড়া। কেউ কেউ বলেছেন হাদিসে বর্ণিত দুআ ছাড়া অন্য কোন দুআ পড়লে কুনুত আদায় হবে না। অবশ্য প্রাধান্যপ্রাপ্ত কথা সেটিই যে, কুনুতের জন্য কোন দুআ নির্দিষ্ট নেই।
মুস্তাহাব হল, নামাজি ব্যক্তি ইমাম হলে, কুনুতের মধ্যে اللَّهُمَّ اهْدِنَا (আল্লাহুম্মাহদি না) বহুবচনের শব্দ দিয়ে বলবে। বাকি সবগুলো শব্দের ক্ষেত্রে অনুরূপভাবে বহুবচনের শব্দ দিয়ে বলবে। যদি اللَّهُمَّ اهْدِنِي একবচনের শব্দ ব্যবহার করে তাহলেও কুনুত হয়ে যাবে, তবে মাকরুহ হবে। কেননা ইমাম হলে খাস করে নিজের জন্য দুআ করা মাকরুহ।
(১৩২) হজরত সাওবান রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا يَؤُمُّ عَبْدُ فَيَخُصَّ نَفْسَهُ بِدَعْوَةٍ دُوْنَهُمْ، فَإِنْ فَعَلَ فَقَدْ خَانَهُمْ.
অর্থ: যে ইমাম মুসল্লীদেরকে বাদ দিয়ে নিজের জন্য বিশেষভাবে দুআ করে, সে খেয়ানতকারী। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, এটি হাসান হাদিস। ২২৩
কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো
কুনুত পড়ার সময় হাত উঠানো ও হাত চেহারায় মাসেহ সংক্রান্ত তিনটি অভিমত রয়েছে:
১. মুস্তাহাব হল, উভয় হাত উঠানো এবং তা চেহারায় মাসেহ না করবে। এটাই সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত।
২. হাত উঠাবে, মাসেহও করবে।
৩. কোনটিই করবে না।
তবে চেহারা ব্যতীত অন্য কোন অঙ্গে মাসেহ না করার ব্যাপারে সবাই একমত যেমন বুক মাসেহ করা। বরং এমন করা মাকরুহ।
কুনুত আস্তে পড়া ও জোরে পড়া সম্পর্কে শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, যদি নামাজি ব্যক্তি একাকী হয় তাহলে আস্তে পড়বে। আর ইমাম হলে জোরে পড়বে। এটিই পছন্দনীয় ও অধিকাংশের অভিমত।
দ্বিতীয় অভিমত হল, নামাজের অন্যান্য দুআর ন্যায় কুনুতও আস্তে পড়বে। ইমাম যদি উচু আওয়াজে কুনুত না পড়ে তাহলে মুক্তাদিরা নীচু স্বরে কুনুত পড়বে। আর ইমাম উচু আওয়াজে কুনুত পড়ে এবং মুক্তাদিরা শোনে তাহলে আমিন আমিন বলবে। আর না শুনলে নীচু আওয়াজে মুক্তাদিরা কুনুত পড়বে। কেউ কেউ বলেন, এ অবস্থাতেও আমিন বলবে। আবার কেউ কেউ বলেন, কোনার সাথে সাথে সে নিজেও পড়বে। তবে প্রথম অভিমতটিই অধিক পছন্দনীয়।
যদি ফজর ছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত পড়ে, সে নামাজ যদি জেহরি হয় যেমন, মাগরিব ও এশা। তাহলে সেক্ষেত্রেও ফজরের মতই পড়বে। আর যদি সিররির হয় যেমন জোহর ও আছর তাহলে কেউ কেউ বলেন, আস্তে পড়বে। আবার কেউ কেউ বলেন ফজরের মতই পড়বে।
সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে, বিরে মাউনার ঘটনায় সত্তর জন কারী সাহাবি রাদি. কে শহিদ করার পর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল নামাজে উচু আওয়াজে কুনুত পড়তেন।
সহিহ বুখারিতে (لَيْسَ لَكَ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ) এই আয়াতের তাফসিরে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুতে নাযিলা উচু আওয়াজে পড়েছেন। ২২৪

টিকাঃ
২১৯. হানাফি মাজহাব মতে, বিতরের নামাজে পুরো বছর তৃতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে কুনুত পড়া ওয়াজিব। এছাড়া অন্য কোন নামাজে কুনুত নেই। হাদিসে ফজরের নামাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুনুত পড়েছেন বলে যেসব বর্ণনা এসেছে, সেগুলো হলো 'কুনুতে নাজিলা'। আপদকালীন কুনুত। সবসময়ের জন্য নয়। তাই হানাফি উলামায়ে কেরাম মহা বিপদের সম্মুখীন হলে 'কুনুতে নাযিলা' পড়ার কথা বলেন। কিন্তু সবসময় সর্বাবস্থায় ফজরের নামাজে কুনুত পড়ার কথা বলেন না। যদি ইমাম ফজরের নামাজে কুনুত পড়েন, তাহলে মুক্তাদি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। (হেদায়া ১/১৪৫)
২২০. সুনানে বাইহাকি ২/২০১, মুসনাদে আহমাদ: ৩/১৬২।
২২১. সুনানে নাসাঈ: ৩/২৪৮, সুনানে তিরমিজি: ৪৬৪, সুনানে আবু দাউদ: ১৪২৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১১৭৮।
২২২. সুনানে বাইহাকি: ২/২১০, তুহফাতুল আশরাফ ১৩/১৮৪, মারাসিলে আবু দাউদের সূত্রে।
২২৩. সুনানে আবু দাউদ: ৯০, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৯২৩, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৮০।
২২৪. সহিহ বুখারি: ৪৫৬০। হানাফি উলামায়ে কেরাম যেহেতু বিতর ছাড়া অন্য নামাজে কুনুতের অনুমতি প্রদান করে না। যার বিস্তারিত আলোচনা পূর্বে গেছে। তাই এসকল মাসআলারও প্রয়োজন নেই। তাঁরা শুধু বিতরের নামাজে কুনুত পড়ার কথা বলেন। সে কুনুত সর্বাবস্থায় ইমাম, মুক্তাদি ও একাকী নামাজি ব্যক্তি সকলেই আস্তে পড়বে। আর অন্য নামাজে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কুনুত পড়েছেন, সেটি ছিলো 'কুনুতে নাযিলা'। এই শেষোক্ত হাদিসটি হানাফিদের দলিল যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য নামাজে কুনুতে নাযিলা পড়তেন। (হেদায়া ১/১৪৫-৪৬)

📘 আল আযকার > 📄 নামাজে তাশাহুদ পড়া

📄 নামাজে তাশাহুদ পড়া


নামাজ দুই রাকাত বিশিষ্ট হলে যেমন ফজরের নামাজ বা অন্য কোন নফল নামাজ তাহলে তাশাহুদ একবার পড়বে। যদি নামাজ তিন রাকাত বা চার রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে তাতে দুইবার তাশাহুদ পড়তে হয়, প্রথমবার ও দ্বিতীয়বার।
মাসবুক ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনবার তাশাহুদ পড়বে। মাসবুক ব্যক্তির মাগরিবের নামাজে চারবার তাশাহুদ পড়তে হতে পারে। যেমন দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর পর যদি ইমামের সাথে নামাজে শরিক হয় তাহলে প্রথম ও দ্বিতীয় তাশাহুদে ইমামে সঙ্গে শরিক হবে। এঅবস্থায় মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে কেবল এক রাকাত পেয়েছে। ইমাম সালাম ফেরানোর পর মাসবুক তার ছুটে যাওয়া দুই রাকাত আদায় করবে। প্রথম রাকাতের পর তাশাহুদ পড়বে, কেননা এটা তার জন্য দ্বিতীয় রাকাত। এভাবে তার চারবার তাশাহুদ পড়তে হবে।
নফল নামাজ যদি চার রাকাতের বেশি পড়ে চাই একশত রাকাতই হোক না কেন দুইবার তাশাহুদ পড়বে। দুই রাকাত পড়ে এক তাশাহুদ। আর দুই রাকাত পড়ে আরেক তাশাহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, প্রতি দুই রাকাতে একবারের বেশি তাশাহুদ পড়া জায়েজ নেই। অনুরূপভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় তাশাহুদের মাঝে দুই রাকাতের বেশি পড়া জায়েজ নেই। তবে দুটির মাঝে এক রাকাত হলে বৈধ আছে।
যদি দুই দুই তাশাহুদের বেশি পড়ে বা দুই তাশাহুদের মাঝে দুয়ের অধিক রাকাত থাকে তাহলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন, প্রতি রাকাতে তাশাহুদ পড়া জায়েজ আছে। তবে সঠিক কথা হল, প্রতি দুই রাকাতের পর তাশাহুদ জায়েজ; এক রাকাতের পরে নয়।
শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ইমাম শাফেয়ি রহ. ও আহমদ রহ. এর মতে ওয়াজিব। আবু হানিফা ও মালেক রহ. এর মতে সুন্নাত।
প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া শাফেয়ি, আহমদ ও ইমাম আবু হানিফা সহ অধিকাংশ ইমামের মতে সুন্নাত। ইমাম আহমদ রহ. এর মতে ওয়াজিব। ছেড়ে দিলে শাফেয়ি রহ. এর মাজহাব অনুযায়ী নামাজ সহিহ হবে। তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। চাই ইচ্ছা করে ছাড়ুক বা ভুলক্রমে। ২২৫
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি তাশাহুদ বর্ণিত হয়েছে:
(১৩৩) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর সূত্রে নিম্নোক্ত তাশাহুদ বর্ণিত আছে-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়‍্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাত, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। 226
(১৩৪) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নবর্ণিত তাশাহুদ বর্ণিত আছে-
التَّحِيَّاتُ الْمُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلهِ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ ، الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ .
উচ্চারণ: আত্তাহিয়‍্যাতুল মুবারাকাত, আসসালাওয়াতু ত্তায়্যিবাত লিল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: সকল বরকতময় মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রাসুল। ২২৭
(১৩৫) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. এর সূত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নোক্ত তাশাহুদ বর্ণিত হয়েছে-
‏التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু ত্তায়্যিবাত ওয়াস সালাওয়াতু লিল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। ২২৮
(১৩৬) হজরত কাসেম এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা রাদি. নিচের তাশাহুদটি আমাকে শিখিয়েছেন এবং বলেছেন, এটি ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাশাহুদ-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ ، الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাত, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল।
এসব রেওয়ায়েতের একটি সুন্দর ফায়দা হল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাশাহুদের শব্দ আমাদের তাশাহুদের শব্দের মতই। ২২৯
(১৩৭) হজরত আবদুর রহমান বিন আবদুল কারি (কারাহ গোত্রের দিকে সম্বন্ধিত) রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শোনেছি, তিনি মিম্বারে বসে লোকদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমরা বলো-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ ، الزَّاكِيَاتُ لِلهِ ، الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إلهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, আজ্জাকিয়াতু লিল্লাহ, আত্তায়্যিবাতুস সালাওয়াতু লিল্লাহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিষ্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। ২০০
(১৩৮) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি নিম্নবর্ণিত তাশাহুদ পড়তেন-
التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ الرَّاكِيَاتُ لِلَّهِ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু ত্তায়্যিবাতুস সালাওয়াতু জাকিয়াতু লিল্লাহ। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক, আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ২৩১
উক্ত কিতাবগুলোতে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে আরেকটি রেওয়ায়েতে আছে-
التَّحِيَّاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ الرَّاكِيَاتُ لِلهِ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতুস সালাওয়াতু ত্তায়্যিবাতু জাকিয়াতু লিল্লাহ। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিন একক, তার কোন শীরক নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ২৩২
(১৩৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে যে, তিনি নিম্ন বর্ণিত তাশাহুদ পড়তেন-
بِاسْمِ اللهِ ، التَّحِيَّاتُ لِلهِ، اَلصَّلَوَاتُ لِلهِ ، اَلزَّاكِيَاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، شَهِدْتُ أَنْ لَا إلهَ إِلَّا اللهُ، شَهِدْتُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، .
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ, আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, আস সালাওয়াতু লিল্লাহ, আজ্জাকিয়াতু লিল্লাহ। আস্সালামু আলান্নাবিয়্যি ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। শাহিদতু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, শাহিদতু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করলাম। সমস্ত মৌখিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য, সমস্ত শারীরিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য এবং সমস্ত আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল। ২৩৩
এই হল তাশাহুদের বিভিন্ন ধরন। ইমাম বাইহাকি রহ. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি হাদিস প্রমাণিত: এক. আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর হাদিস। দুই. আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. এর হাদিস। তিন. আবু মুসা আশআরি রাদি. এর হাদিস।
অন্যরা বলেন, উক্ত তিন তাশাহুদই সহিহ। তবে আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত তাশাহুদ অধিক বিশুদ্ধ।
পূর্বোল্লেখিত যে কোন তাশাহুদ পড়া জায়েজ আছে। ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম এমনটিই বলেন। ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস থেকে বর্ণিত তাশাহুদ পড়া উত্তম। কারণ, এতে (اَلْمُبَارَكَاتُ) (আল-মুবারাকাত) শব্দটি অতিরিক্ত আছে। ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম বলেন, রাবীদের শব্দের ভিন্নতার কারণে এক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক ব্যাপক। যে কোন তাশাহুদ পড়া যাবে।
প্রথমে বর্ণিত তিন তাশাহুদের যে কোনা একটি তাশাহুদ পুরা পড়া। যদি তাশাহুদের আংশিক বাদ দেয় তাহলে জায়েজ হবে কি না- এ ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে।
(اَلْمُبَارَكَاتُ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ وَالزَّاكِيَاتُ) (আল-মুবারাকাত, ওয়াস সালাওয়াত, ওয়াত্তায়্যিবাত, ওয়াজ্জাকিয়াত) এই শব্দগুলো তাশাহুদের জন্য শর্ত নয়। যদি এই সবগুলো শব্দ বাদ দিয়ে শুধু (اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ) (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু) থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে তাহলেও তাশাহুদ জায়েজ হবে। এ ব্যাপারে শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের নিকট কোন এখতেলাফ নেই।
(السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ) আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু থেকে শেষ পর্যন্ত শব্দগুলো ওয়াজিব। কোন শব্দ বাদ দেয়া জায়েজ নেই।
(وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ) ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ) এর ব্যাপারে তিনটি অভিমত রয়েছে। সবচেয়ে বিশুদ্ধ অভিমত হল, এগুলোও বাদ দেয়া যাবে না। কারণ সকল হাদিসে এশব্দগুলো এসেছে। দুই. এদুটি শব্দকে বাদ দেয়া যাবে। তিন. (وَبَرَكَاتُهُ ) ওয়া বারাকাতুহ) বাদ দেয়া যাবে। তবে (وَرَحْمَةُ اللَّهِ ) ওয়া রাহমাতুল্লাহি) বাদ দেয়া যাবে না। আবুল আব্বাস বিন সুরাইজ রহ. বলেন, এতটুকু বলা জায়েজ আছে-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ ، سَلَامٌ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ، سَلَامٌ عَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللَّهِ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, সালামুন আলাইকা আইয়ুহা ন্নাবিয়্যু, সালামু আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য, হে নবি, আপনার ওপর শান্তি অতবীর্ণ হোক। শান্তি বর্ষিত হোক নেক বান্দাদের ওপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল।
سَلَامٌ সালামুন) শব্দটি অধিকাংশ হাদিসে এভাবে এসেছে- ( السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ) আসসালামু আলাইকা আইয়ুহা ন্নাবিয়্যু] এবং عَلَيْنَا السَّلَامُ উভয় জায়গায় আলিফ-লামের সাথেও এসেছে। তবে কিছু কিছু হাদিসে আলিফ- লাম ছাড়া (سّلام সালামুন] এসেছে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, উভয়টি জায়েজ আছে। তবে উত্তম হল, আলিফ-লামসহ বলা। কারণ, অধিকাংশ হাদিসে এভাবেই আসছে। এতে বেশি অক্ষর রয়েছে, আর এতেই সতর্কতা।
তাশাহুদের আগে বিসমিল্লাহ পড়ার বিষয়টি পূর্বে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম বুখারি ও নাসাঈ রহ. বলেন, বিসমিল্লাহ যুক্ত রেওয়ায়েতগুলো সঠিক নয়। তাই অধিকাংশ শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব নয়। তবে কেউ কেউ বলেন, বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। তবে পছন্দনীয় মত হল, বিসমিল্লাহ না বলা। কারণ, যেসব সাহাবায়ে কেরাম তাশাহুদ রেওয়ায়েত করেছেন, তাদের বেশির ভাগই বিসমিল্লাহ রেওয়ায়েত করেননি।
তাশাহুদের শব্দের মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে শব্দের আগ-পিছ হলে নামাজে কোন সমস্যা হবে না।
শাফেয়ি রহ. কিতাবুল উম্মে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, শব্দের মধ্যেও ধারাবাহিকতা জরুরি যেমন সুরা ফাতিহার শব্দের মাঝে ধারাবাহিকতা জরুরি। সালাম শব্দটি কোন রেওয়ায়েতে আগে এসেছে আবার কোন রেওয়ায়েতে পরে এসেছে-এর থেকে বোঝা যায় যে, শব্দের আগ-পিছ করা জায়েজ।
আর সুরা ফাতেহার শব্দ ও বিন্যাস ওহি প্রদত্ত। তাই এতে আগ-পিছ করা জায়েজ নেই।
যে আরবি ভাষায় তাশাহুদ পড়তে সক্ষম তার জন্য অনারবি ভাষায় তাশাহুদ পড়া জায়েজ নয়। আর যদি কেউ আরবি ভাষায় পড়তে না পারে, তাহলে সে নিজের ভাষায় তাশাহুদ পড়বে। আর আরবি ভাষায় শিখতে থাকবে। যেমনটি পূর্বে তাকবিরে তাহরিমার অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সকল উলামায়ে কেরামের মতে তাশাহুদ আস্তে পড়া সুন্নাত। এ ব্যাপারে নিচের হাদিসটি দলিল-
(১৪০) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুন্নাত হল তাশাহুদ আস্তে আস্তে পড়া। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ইমাম হাকেম রহ. বলেন, এটি সহিহ। ২৩৪
কোন সাহাবি যখন বলেন- 'এটা সুন্নাত', তাহলে সেটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য বলে ধরা হয়। এটাই জমহুর উলামায়ে কেরামের বিশুদ্ধ মত।
যদি কেউ উচু আওয়াজে পড়ে তাহলে মাকরুহ হবে। তবে এজন্য তার নামাজ নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না।

টিকাঃ
২২৫. ইমাম আবু হানিফা রহ. এর নিকটে উভয় বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব। অনিচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (হেদায়া: ১/১১২)
২২৬. সহিহ বুখারি: ৮৩১, সহিহ মুসলিম: ৪০২, সুনানে আবু দাউদ: ৯৬৮, সুনানে তিরমিজি: ২৮৯, সুনানে নাসাঈ ২/২৩৭।
২২৭. সহিহ মুসলিম: ৪০৩, সুনানে আবু দাউদ: ৯৭৪, সুনানে নাসাঈ ২/২৪২-২৪৩।
২২৮. সহিহ মুসলিম: ৪০৪, সুনানে আবু দাউদ: ৯৭২, সুনানে নাসাঈ ২/২৪২।
২২৯. সুনানে বাইহাকি ২/১৪৪।
২৩০. মুয়াত্তা মালেক ১/৯০, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২।
২৩১. মুয়াত্তা মালেক: ২০৭, সুনানে বায়হাকি ২/১৪৪।
২৩২. মুয়াত্তা মালেক ১/৯১, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২, আলফুতুহাতুর রাব্বানিয়াহ ২/৩২৮।
২৩৩. মুয়াত্তা মালেক ১/৯১, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২।
২৩৪. সুনানে তিরমিজি: ২৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৬, মুসতাদরাকে হাকেম ২/২৩০, ২৬৭, সুনানে বাইহাকি ২/১৪৬।

নামাজ দুই রাকাত বিশিষ্ট হলে যেমন ফজরের নামাজ বা অন্য কোন নফল নামাজ তাহলে তাশাহুদ একবার পড়বে। যদি নামাজ তিন রাকাত বা চার রাকাত বিশিষ্ট হয় তাহলে তাতে দুইবার তাশাহুদ পড়তে হয়, প্রথমবার ও দ্বিতীয়বার।
মাসবুক ব্যক্তির ক্ষেত্রে তিনবার তাশাহুদ পড়বে। মাসবুক ব্যক্তির মাগরিবের নামাজে চারবার তাশাহুদ পড়তে হতে পারে। যেমন দ্বিতীয় রাকাতে রুকুর পর যদি ইমামের সাথে নামাজে শরিক হয় তাহলে প্রথম ও দ্বিতীয় তাশাহুদে ইমামে সঙ্গে শরিক হবে। এঅবস্থায় মাসবুক ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে কেবল এক রাকাত পেয়েছে। ইমাম সালাম ফেরানোর পর মাসবুক তার ছুটে যাওয়া দুই রাকাত আদায় করবে। প্রথম রাকাতের পর তাশাহুদ পড়বে, কেননা এটা তার জন্য দ্বিতীয় রাকাত। এভাবে তার চারবার তাশাহুদ পড়তে হবে।
নফল নামাজ যদি চার রাকাতের বেশি পড়ে চাই একশত রাকাতই হোক না কেন দুইবার তাশাহুদ পড়বে। দুই রাকাত পড়ে এক তাশাহুদ। আর দুই রাকাত পড়ে আরেক তাশাহুদ পড়ে সালাম ফেরাবে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, প্রতি দুই রাকাতে একবারের বেশি তাশাহুদ পড়া জায়েজ নেই। অনুরূপভাবে প্রথম ও দ্বিতীয় তাশাহুদের মাঝে দুই রাকাতের বেশি পড়া জায়েজ নেই। তবে দুটির মাঝে এক রাকাত হলে বৈধ আছে।
যদি দুই দুই তাশাহুদের বেশি পড়ে বা দুই তাশাহুদের মাঝে দুয়ের অধিক রাকাত থাকে তাহলে নামাজ বাতিল হয়ে যাবে। কেউ কেউ বলেন, প্রতি রাকাতে তাশাহুদ পড়া জায়েজ আছে। তবে সঠিক কথা হল, প্রতি দুই রাকাতের পর তাশাহুদ জায়েজ; এক রাকাতের পরে নয়।
শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ইমাম শাফেয়ি রহ. ও আহমদ রহ. এর মতে ওয়াজিব। আবু হানিফা ও মালেক রহ. এর মতে সুন্নাত।
প্রথম বৈঠকে তাশাহুদ পড়া শাফেয়ি, আহমদ ও ইমাম আবু হানিফা সহ অধিকাংশ ইমামের মতে সুন্নাত। ইমাম আহমদ রহ. এর মতে ওয়াজিব। ছেড়ে দিলে শাফেয়ি রহ. এর মাজহাব অনুযায়ী নামাজ সহিহ হবে। তবে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। চাই ইচ্ছা করে ছাড়ুক বা ভুলক্রমে। ২২৫
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি তাশাহুদ বর্ণিত হয়েছে:
(১৩৩) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর সূত্রে নিম্নোক্ত তাশাহুদ বর্ণিত আছে-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়‍্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাত, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। 226
(১৩৪) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নবর্ণিত তাশাহুদ বর্ণিত আছে-
التَّحِيَّاتُ الْمُبَارَكَاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ لِلهِ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ ، الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ .
উচ্চারণ: আত্তাহিয়‍্যাতুল মুবারাকাত, আসসালাওয়াতু ত্তায়্যিবাত লিল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: সকল বরকতময় মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রাসুল। ২২৭
(১৩৫) হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. এর সূত্রে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে নিম্নোক্ত তাশাহুদ বর্ণিত হয়েছে-
‏التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু ত্তায়্যিবাত ওয়াস সালাওয়াতু লিল্লাহ, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। ২২৮
(১৩৬) হজরত কাসেম এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আয়েশা রাদি. নিচের তাশাহুদটি আমাকে শিখিয়েছেন এবং বলেছেন, এটি ছিল রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাশাহুদ-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ ، الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাত, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল।
এসব রেওয়ায়েতের একটি সুন্দর ফায়দা হল, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাশাহুদের শব্দ আমাদের তাশাহুদের শব্দের মতই। ২২৯
(১৩৭) হজরত আবদুর রহমান বিন আবদুল কারি (কারাহ গোত্রের দিকে সম্বন্ধিত) রহ. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, আমি উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতে শোনেছি, তিনি মিম্বারে বসে লোকদেরকে তাশাহুদ শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি বলছিলেন, তোমরা বলো-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ ، الزَّاكِيَاتُ لِلهِ ، الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، اَلسَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إلهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, আজ্জাকিয়াতু লিল্লাহ, আত্তায়্যিবাতুস সালাওয়াতু লিল্লাহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিষ্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ।
অর্থ: সকল মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। ২০০
(১৩৮) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে, তিনি নিম্নবর্ণিত তাশাহুদ পড়তেন-
التَّحِيَّاتُ الطَّيِّبَاتُ الصَّلَوَاتُ الرَّاكِيَاتُ لِلَّهِ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু ত্তায়্যিবাতুস সালাওয়াতু জাকিয়াতু লিল্লাহ। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক, আর্থিক ও শারীরিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ২৩১
উক্ত কিতাবগুলোতে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে আরেকটি রেওয়ায়েতে আছে-
التَّحِيَّاتُ الصَّلَوَاتُ الطَّيِّبَاتُ الرَّاكِيَاتُ لِلهِ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِينَ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতুস সালাওয়াতু ত্তায়্যিবাতু জাকিয়াতু লিল্লাহ। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ। আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তিন একক, তার কোন শীরক নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বান্দা ও রাসুল। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ২৩২
(১৩৯) হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে যে, তিনি নিম্ন বর্ণিত তাশাহুদ পড়তেন-
بِاسْمِ اللهِ ، التَّحِيَّاتُ لِلهِ، اَلصَّلَوَاتُ لِلهِ ، اَلزَّاكِيَاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللهِ، وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ، شَهِدْتُ أَنْ لَا إلهَ إِلَّا اللهُ، شَهِدْتُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، .
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ, আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, আস সালাওয়াতু লিল্লাহ, আজ্জাকিয়াতু লিল্লাহ। আস্সালামু আলান্নাবিয়্যি ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। শাহিদতু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, শাহিদতু আন্না মুহাম্মাদান রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করলাম। সমস্ত মৌখিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য, সমস্ত শারীরিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য এবং সমস্ত আর্থিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য। হে নবি, আপনার ওপর রহমত, শান্তি ও বরকত অতবীর্ণ হোক। আমাদের ও নেক বান্দাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল। ২৩৩
এই হল তাশাহুদের বিভিন্ন ধরন। ইমাম বাইহাকি রহ. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনটি হাদিস প্রমাণিত: এক. আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. এর হাদিস। দুই. আবদুল্লাহ বিন আব্বাস রাদি. এর হাদিস। তিন. আবু মুসা আশআরি রাদি. এর হাদিস।
অন্যরা বলেন, উক্ত তিন তাশাহুদই সহিহ। তবে আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত তাশাহুদ অধিক বিশুদ্ধ।
পূর্বোল্লেখিত যে কোন তাশাহুদ পড়া জায়েজ আছে। ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম এমনটিই বলেন। ইমাম শাফেয়ি রহ. এর মতে আবদুল্লাহ বিন আব্বাস থেকে বর্ণিত তাশাহুদ পড়া উত্তম। কারণ, এতে (اَلْمُبَارَكَاتُ) (আল-মুবারাকাত) শব্দটি অতিরিক্ত আছে। ইমাম শাফেয়ি রহ. ও অন্যান্য উলামায়ে কেরাম বলেন, রাবীদের শব্দের ভিন্নতার কারণে এক্ষেত্রে বিষয়টি অনেক ব্যাপক। যে কোন তাশাহুদ পড়া যাবে।
প্রথমে বর্ণিত তিন তাশাহুদের যে কোনা একটি তাশাহুদ পুরা পড়া। যদি তাশাহুদের আংশিক বাদ দেয় তাহলে জায়েজ হবে কি না- এ ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা রয়েছে।
(اَلْمُبَارَكَاتُ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ وَالزَّاكِيَاتُ) (আল-মুবারাকাত, ওয়াস সালাওয়াত, ওয়াত্তায়্যিবাত, ওয়াজ্জাকিয়াত) এই শব্দগুলো তাশাহুদের জন্য শর্ত নয়। যদি এই সবগুলো শব্দ বাদ দিয়ে শুধু (اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ) (আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি, আস্সালামু আলাইকা আইউহান্নাবিয়্যু) থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে তাহলেও তাশাহুদ জায়েজ হবে। এ ব্যাপারে শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের নিকট কোন এখতেলাফ নেই।
(السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ) আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু থেকে শেষ পর্যন্ত শব্দগুলো ওয়াজিব। কোন শব্দ বাদ দেয়া জায়েজ নেই।
(وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ) ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ) এর ব্যাপারে তিনটি অভিমত রয়েছে। সবচেয়ে বিশুদ্ধ অভিমত হল, এগুলোও বাদ দেয়া যাবে না। কারণ সকল হাদিসে এশব্দগুলো এসেছে। দুই. এদুটি শব্দকে বাদ দেয়া যাবে। তিন. (وَبَرَكَاتُهُ ) ওয়া বারাকাতুহ) বাদ দেয়া যাবে। তবে (وَرَحْمَةُ اللَّهِ ) ওয়া রাহমাতুল্লাহি) বাদ দেয়া যাবে না। আবুল আব্বাস বিন সুরাইজ রহ. বলেন, এতটুকু বলা জায়েজ আছে-
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ ، سَلَامٌ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ، سَلَامٌ عَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللَّهِ.
উচ্চারণ: আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহ, সালামুন আলাইকা আইয়ুহা ন্নাবিয়্যু, সালামু আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
অর্থ: সমস্ত মৌখিক ইবাদত আল্লাহ তাআলার জন্য, হে নবি, আপনার ওপর শান্তি অতবীর্ণ হোক। শান্তি বর্ষিত হোক নেক বান্দাদের ওপর। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসুল।
سَلَامٌ সালামুন) শব্দটি অধিকাংশ হাদিসে এভাবে এসেছে- ( السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ ) আসসালামু আলাইকা আইয়ুহা ন্নাবিয়্যু] এবং عَلَيْنَا السَّلَامُ উভয় জায়গায় আলিফ-লামের সাথেও এসেছে। তবে কিছু কিছু হাদিসে আলিফ- লাম ছাড়া (سّلام সালামুন] এসেছে।
শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, উভয়টি জায়েজ আছে। তবে উত্তম হল, আলিফ-লামসহ বলা। কারণ, অধিকাংশ হাদিসে এভাবেই আসছে। এতে বেশি অক্ষর রয়েছে, আর এতেই সতর্কতা।
তাশাহুদের আগে বিসমিল্লাহ পড়ার বিষয়টি পূর্বে এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম বুখারি ও নাসাঈ রহ. বলেন, বিসমিল্লাহ যুক্ত রেওয়ায়েতগুলো সঠিক নয়। তাই অধিকাংশ শাফেয়ি উলামায়ে কেরাম বলেন, বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব নয়। তবে কেউ কেউ বলেন, বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। তবে পছন্দনীয় মত হল, বিসমিল্লাহ না বলা। কারণ, যেসব সাহাবায়ে কেরাম তাশাহুদ রেওয়ায়েত করেছেন, তাদের বেশির ভাগই বিসমিল্লাহ রেওয়ায়েত করেননি।
তাশাহুদের শব্দের মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়। জমহুর উলামায়ে কেরামের মতে শব্দের আগ-পিছ হলে নামাজে কোন সমস্যা হবে না।
শাফেয়ি রহ. কিতাবুল উম্মে এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন, শব্দের মধ্যেও ধারাবাহিকতা জরুরি যেমন সুরা ফাতিহার শব্দের মাঝে ধারাবাহিকতা জরুরি। সালাম শব্দটি কোন রেওয়ায়েতে আগে এসেছে আবার কোন রেওয়ায়েতে পরে এসেছে-এর থেকে বোঝা যায় যে, শব্দের আগ-পিছ করা জায়েজ।
আর সুরা ফাতেহার শব্দ ও বিন্যাস ওহি প্রদত্ত। তাই এতে আগ-পিছ করা জায়েজ নেই।
যে আরবি ভাষায় তাশাহুদ পড়তে সক্ষম তার জন্য অনারবি ভাষায় তাশাহুদ পড়া জায়েজ নয়। আর যদি কেউ আরবি ভাষায় পড়তে না পারে, তাহলে সে নিজের ভাষায় তাশাহুদ পড়বে। আর আরবি ভাষায় শিখতে থাকবে। যেমনটি পূর্বে তাকবিরে তাহরিমার অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছে।
সকল উলামায়ে কেরামের মতে তাশাহুদ আস্তে পড়া সুন্নাত। এ ব্যাপারে নিচের হাদিসটি দলিল-
(১৪০) হজরত আবদুল্লাহ বিন মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুন্নাত হল তাশাহুদ আস্তে আস্তে পড়া। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ইমাম হাকেম রহ. বলেন, এটি সহিহ। ২৩৪
কোন সাহাবি যখন বলেন- 'এটা সুন্নাত', তাহলে সেটি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য বলে ধরা হয়। এটাই জমহুর উলামায়ে কেরামের বিশুদ্ধ মত।
যদি কেউ উচু আওয়াজে পড়ে তাহলে মাকরুহ হবে। তবে এজন্য তার নামাজ নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না।

টিকাঃ
২২৫. ইমাম আবু হানিফা রহ. এর নিকটে উভয় বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব। অনিচ্ছাকৃত ছেড়ে দিলে সিজদায়ে সাহু দিতে হবে। (হেদায়া: ১/১১২)
২২৬. সহিহ বুখারি: ৮৩১, সহিহ মুসলিম: ৪০২, সুনানে আবু দাউদ: ৯৬৮, সুনানে তিরমিজি: ২৮৯, সুনানে নাসাঈ ২/২৩৭।
২২৭. সহিহ মুসলিম: ৪০৩, সুনানে আবু দাউদ: ৯৭৪, সুনানে নাসাঈ ২/২৪২-২৪৩।
২২৮. সহিহ মুসলিম: ৪০৪, সুনানে আবু দাউদ: ৯৭২, সুনানে নাসাঈ ২/২৪২।
২২৯. সুনানে বাইহাকি ২/১৪৪।
২৩০. মুয়াত্তা মালেক ১/৯০, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২।
২৩১. মুয়াত্তা মালেক: ২০৭, সুনানে বায়হাকি ২/১৪৪।
২৩২. মুয়াত্তা মালেক ১/৯১, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২, আলফুতুহাতুর রাব্বানিয়াহ ২/৩২৮।
২৩৩. মুয়াত্তা মালেক ১/৯১, সুনানে বাইহাকি ২/১৪২।
২৩৪. সুনানে তিরমিজি: ২৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৯৮৬, মুসতাদরাকে হাকেম ২/২৩০, ২৬৭, সুনানে বাইহাকি ২/১৪৬।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন