📘 আল আযকার > 📄 রুকুর দুআ

📄 রুকুর দুআ


সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবির বলতেন। যদি কেউ তা ছেড়ে দেয় তাহলে মাকরূহে তানযিহি। নামাজ নষ্ট হবে না এবং সেজদায়ে সাহু দিতে হবে না। নামাজের অন্যান্য তাকবিরের ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য। তবে তাকবিরে তাহরিমা ব্যতিক্রম। কেননা এটা নামাজের রুকন, এটা ছাড়া নামাজ হবে না। পূর্বে নামাজে তাকবিরের সংখ্যার আলোচনা গেছে।
ইমাম আহমদ রহ. এর অভিমত রয়েছে যে, নামাজের সকল তাকবির ওয়াজিব।
আল্লাহু আকবার মদ করে পড়বে কিনা? এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ির দুটি মত রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হল রুকুতে যাওয়া পর্যন্ত তাকবির টেনে বলবে। যেন নামাজের কোন অংশ জিকির থেকে মুক্ত না থাকে। তবে তাকবিরে তাহরিমা টেনে বলবে না। সেক্ষেত্রে না টেনে বলাই মুস্তাহাব। রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ পড়বে। তিনবার বলবে:
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম। অর্থ: আমার রবের মহত্ত্ব ঘোষণা করছি。
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ.
(১০৫) হজরত হুজায়ফা রাদি. এর হাদিস থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দীর্ঘ রুকুতে বলতেন, যা ছিল সুরা বাকারা, আলে ইমরান ও নিসা পড়ার সমপরিমাণ। তিনি এ দীর্ঘ রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম) বলতেন। অর্থাৎ তিনি سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ বার বার পড়তেন।১৮৫
সুনানের কিতাবসমূহে আছে-
أَنَّهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِذَا رَكَعَ أَحَدُكُمْ فَقَالَ فِي رُكُوعِهِ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ، ثَلَاثًا، فَقَدْ تَمَّ رُكُوعُهُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন তিনবার রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম) বলবে তখন তার রুকু পূর্ণ হয়ে যাবে। ১৮৬
(১০৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي رُكُوْعِهِ وَسُجُودِهِ : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي .
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي .
উচচারণ: সুবহাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা আল্লাহ, সপ্রশংস আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করো। ১৮৭
(১০৭) মুসলিম শরিফে হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وَبَصَرِي، وَمُخَيْ وَعَصَبِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা রাকাতু, ওয়াবিকা আমানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খাশাআ লাকা সাময়ি ওয়াবাসারি, ওয়া মুখখি, ওয়া আজমি ওয়া আসাবি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সামনে রুকু করলাম, আপনার প্রতিই ঈমান রাখি এবং আপনার প্রতি সমর্পিত হলাম। আমার চক্ষু-কর্ণ, অস্থি-মজ্জা, শিরা-স্নায়ু সবই আপনার সামনে বিনয়াবত হল। ১৮৮
সুনানের কিতাবসমূহে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ার কথাও বর্ণিত হয়েছে-
خَشَعَ سَمْعِي وَبَصَرِي، وَمُخَيْ وَعَظْمِي، وَمَا اسْتَقَلَّتْ بِهِ قَدَمَيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ.
উচ্চারণ: খাশাআ সাময়ি ওয়াবাসারি, ওয়া মুখখি, ওয়া আজমি। ওয়ামাস্তাকাল্লাত বিহি কাদামি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
অর্থ: আমার চক্ষু-কর্ণ, অস্থি-মজ্জা ও কদম বিশ্বপতি আল্লাহর সামনে বিনয়াবত হল।
(১০৮) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু-সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন:
سُبُّوحٌ قُدُّوسُ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ.
উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।
অর্থ: মহামহিম পবিত্র সত্ত্বা। ফেরেশতা ও জিবরিলের পালনকর্তা। ১৮৯
(১০৯) হজরত আউফ বিন মালেক রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قُمْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً، فَقَامَ فَقَرَأَ سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ، لَا يَمُرُّ بِآيَةِ رَحْمَةٍ إِلَّا وَقَفَ فَسَأَلَ، وَلَا يَمُرُّ بِآيَةِ عَذَابٍ إِلَّا وَقَفَ فَتَعَوَّذَ. قَالَ : ثُمَّ رَكَعَ بِقَدْرِ قِيَامِهِ، يَقُوْلُ فِي رُكُوعِهِ : " سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ " . ثُمَّ سَجَدَ بِقَدْرِ قِيَامِهِ، ثُمَّ قَالَ فِي سُجُودِهِ مِثْلَ ذَالِكَ.
অর্থ: আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামাজ আদায় করেছি। তিনি সুরা বাকারা পড়তে আরম্ভ করলেন, যখন রহমতের আয়াত তিলাওয়াত করতেন তখন থেমে যেতেন এবং আল্লাহর কাছে রহমত চাইতেন। আযাবের আয়াত তিলাওয়াত করে থেমে যেতেন। আযাব থেকে পানাহ চাইতেন। এরপর কিরাত সমপরিমাণ সময় রুকু করতেন। রুকুতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন:
سُبْحَانَ ذِي الْجِبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ.
উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারুত ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়া ওয়াল আযামাহ।
অর্থ: শক্তিমত্তা, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা করছি। তিনি সিজদাতেও উল্লিখিত দুআ পড়তেন। ১৯০
(১১০) ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظَّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ.
অর্থ: তোমরা রুকুতে আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা করো। ১৯১
এই শেষোক্ত হাদিসটিই এই অধ্যায়ের মূল। তা হল রুকুতে আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব বর্ণনা করা, সেটি যে শব্দেই হোক না কেন। সম্ভব হলে উত্তম হল, রুকুতে উক্ত সকল দুআ পড়া। তবে যেন অন্যের কষ্ট না হয়। উক্ত দুআসমূহ থেকে তাসবিহগুলো আগে পড়া। যদি কম পড়তে চায়, তাহলে তাসবিহ পড়া মুস্তাহাব। সর্বনিম্ন তিনবার তাসবিহ পড়া। এর চেয়ে কম করলেও মূল তাসবিহ পাঠকারী হিসেবে গণ্য হবে। যদি কোন একটি তাসবিহ পড়ে থাকে তাহলে এক নামাজে এক তাসবিহ পড়বে অন্য নামাজে আরেক তাসবিহ পড়বে। যেন সকল তাসবিহ পড়া হয়ে যায়। নামাজের সকল জিকিরের ক্ষেত্রে একই কথা।
রুকুতে তাসবিহ পড়া সুন্নাত। যদি তা ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে ছেড়ে দেয় তাহলেও নামাজ নষ্ট হবে না। গুনাহগারও হবে না। সেজদায়ে সাহুও করা লাগবে না। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর মতে তা ওয়াজিব। অতএব, নামাজি ব্যক্তির তাসবিহ বলা উচিত। কারণ, বিভিন্ন সহিহ হাদিসে তা পড়ার নির্দেশ এসেছে। যেমন-
فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظَّمُوا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ.
এই হাদিসটি পূর্বে গেছে। উলামায়ে কেরামের ইখতেলাফ থেকে বাঁচার জন্য তাসবিহ বলা চাই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।
রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ
রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ। যদি সুরা ফাতেহা ছাড়া অন্য কোন সুরা পড়ে তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না। সুরা ফাতেহা পড়লেও নামাজ নষ্ট হবে না। বিশুদ্ধ মত এটাই। তবে কেউ কেউ বলেছেন: নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
(১১১) হজরত আলি রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু ও সিজদারত অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন। ১৯২
(১১২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَلَا وَإِنِّي نُهِيْتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا.
অর্থ: আমাকে রুকু ও সিজদারত অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। ১৯৩

টিকাঃ
১৮৫. সহিহ মুসলিম: ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭১, সুনানে নাসাঈ ৩/২২৬।
১৮৬. সুনানে তিরমিজি: ২৬১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৮৯০।
১৮৭. সহিহ বুখারি: ৭৯৪, সহিহ মুসলিম: ৪৮৪, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৭, সুনানে নাসাঈ ২/২১৯।
১৮৮. সহিহ মুসলিম: ৭৭1।
১৮৯. সহিহ মুসলিম: ৪৮৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭২, সুনানে নাসাঈ ২/২২৪।
১৯০. সুনানে নাসাঈ ২/১৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৩।
১৯১. সহিহ মুসলিম: ৪৭৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৬।
১৯২. সহিহ মুসলিম: ৪৮০, সুনানে আবু দাউদ: ৪০৪৪।
১৯৩. সহিহ মুসলিম: ৪৮০।

সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে যাওয়ার সময় তাকবির বলতেন। যদি কেউ তা ছেড়ে দেয় তাহলে মাকরূহে তানযিহি। নামাজ নষ্ট হবে না এবং সেজদায়ে সাহু দিতে হবে না। নামাজের অন্যান্য তাকবিরের ক্ষেত্রেও একই হুকুম প্রযোজ্য। তবে তাকবিরে তাহরিমা ব্যতিক্রম। কেননা এটা নামাজের রুকন, এটা ছাড়া নামাজ হবে না। পূর্বে নামাজে তাকবিরের সংখ্যার আলোচনা গেছে।
ইমাম আহমদ রহ. এর অভিমত রয়েছে যে, নামাজের সকল তাকবির ওয়াজিব।
আল্লাহু আকবার মদ করে পড়বে কিনা? এ ব্যাপারে ইমাম শাফেয়ির দুটি মত রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হল রুকুতে যাওয়া পর্যন্ত তাকবির টেনে বলবে। যেন নামাজের কোন অংশ জিকির থেকে মুক্ত না থাকে। তবে তাকবিরে তাহরিমা টেনে বলবে না। সেক্ষেত্রে না টেনে বলাই মুস্তাহাব। রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ পড়বে। তিনবার বলবে:
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম। অর্থ: আমার রবের মহত্ত্ব ঘোষণা করছি。
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ.
(১০৫) হজরত হুজায়ফা রাদি. এর হাদিস থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দীর্ঘ রুকুতে বলতেন, যা ছিল সুরা বাকারা, আলে ইমরান ও নিসা পড়ার সমপরিমাণ। তিনি এ দীর্ঘ রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম) বলতেন। অর্থাৎ তিনি سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ বার বার পড়তেন।১৮৫
সুনানের কিতাবসমূহে আছে-
أَنَّهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : إِذَا رَكَعَ أَحَدُكُمْ فَقَالَ فِي رُكُوعِهِ : سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ، ثَلَاثًا، فَقَدْ تَمَّ رُكُوعُهُ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ যখন তিনবার রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম) বলবে তখন তার রুকু পূর্ণ হয়ে যাবে। ১৮৬
(১০৫) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ فِي رُكُوْعِهِ وَسُجُودِهِ : سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي .
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু ও সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي .
উচচারণ: সুবহাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।
অর্থ: হে আমার পালনকর্তা আল্লাহ, সপ্রশংস আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করি। হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করো। ১৮৭
(১০৭) মুসলিম শরিফে হজরত আলি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকুতে এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي وَبَصَرِي، وَمُخَيْ وَعَصَبِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা রাকাতু, ওয়াবিকা আমানতু, ওয়ালাকা আসলামতু, খাশাআ লাকা সাময়ি ওয়াবাসারি, ওয়া মুখখি, ওয়া আজমি ওয়া আসাবি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সামনে রুকু করলাম, আপনার প্রতিই ঈমান রাখি এবং আপনার প্রতি সমর্পিত হলাম। আমার চক্ষু-কর্ণ, অস্থি-মজ্জা, শিরা-স্নায়ু সবই আপনার সামনে বিনয়াবত হল। ১৮৮
সুনানের কিতাবসমূহে নিম্নোক্ত দুআটি পড়ার কথাও বর্ণিত হয়েছে-
خَشَعَ سَمْعِي وَبَصَرِي، وَمُخَيْ وَعَظْمِي، وَمَا اسْتَقَلَّتْ بِهِ قَدَمَيْ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ.
উচ্চারণ: খাশাআ সাময়ি ওয়াবাসারি, ওয়া মুখখি, ওয়া আজমি। ওয়ামাস্তাকাল্লাত বিহি কাদামি লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
অর্থ: আমার চক্ষু-কর্ণ, অস্থি-মজ্জা ও কদম বিশ্বপতি আল্লাহর সামনে বিনয়াবত হল।
(১০৮) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু-সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন:
سُبُّوحٌ قُدُّوسُ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ.
উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।
অর্থ: মহামহিম পবিত্র সত্ত্বা। ফেরেশতা ও জিবরিলের পালনকর্তা। ১৮৯
(১০৯) হজরত আউফ বিন মালেক রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قُمْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَيْلَةً، فَقَامَ فَقَرَأَ سُوْرَةَ الْبَقَرَةِ، لَا يَمُرُّ بِآيَةِ رَحْمَةٍ إِلَّا وَقَفَ فَسَأَلَ، وَلَا يَمُرُّ بِآيَةِ عَذَابٍ إِلَّا وَقَفَ فَتَعَوَّذَ. قَالَ : ثُمَّ رَكَعَ بِقَدْرِ قِيَامِهِ، يَقُوْلُ فِي رُكُوعِهِ : " سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ " . ثُمَّ سَجَدَ بِقَدْرِ قِيَامِهِ، ثُمَّ قَالَ فِي سُجُودِهِ مِثْلَ ذَالِكَ.
অর্থ: আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামাজ আদায় করেছি। তিনি সুরা বাকারা পড়তে আরম্ভ করলেন, যখন রহমতের আয়াত তিলাওয়াত করতেন তখন থেমে যেতেন এবং আল্লাহর কাছে রহমত চাইতেন। আযাবের আয়াত তিলাওয়াত করে থেমে যেতেন। আযাব থেকে পানাহ চাইতেন। এরপর কিরাত সমপরিমাণ সময় রুকু করতেন। রুকুতে নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন:
سُبْحَانَ ذِي الْجِبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ.
উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারুত ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়া ওয়াল আযামাহ।
অর্থ: শক্তিমত্তা, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা করছি। তিনি সিজদাতেও উল্লিখিত দুআ পড়তেন। ১৯০
(১১০) ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظَّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ.
অর্থ: তোমরা রুকুতে আল্লাহর বড়ত্ব বর্ণনা করো। ১৯১
এই শেষোক্ত হাদিসটিই এই অধ্যায়ের মূল। তা হল রুকুতে আল্লাহ তায়ালার বড়ত্ব বর্ণনা করা, সেটি যে শব্দেই হোক না কেন। সম্ভব হলে উত্তম হল, রুকুতে উক্ত সকল দুআ পড়া। তবে যেন অন্যের কষ্ট না হয়। উক্ত দুআসমূহ থেকে তাসবিহগুলো আগে পড়া। যদি কম পড়তে চায়, তাহলে তাসবিহ পড়া মুস্তাহাব। সর্বনিম্ন তিনবার তাসবিহ পড়া। এর চেয়ে কম করলেও মূল তাসবিহ পাঠকারী হিসেবে গণ্য হবে। যদি কোন একটি তাসবিহ পড়ে থাকে তাহলে এক নামাজে এক তাসবিহ পড়বে অন্য নামাজে আরেক তাসবিহ পড়বে। যেন সকল তাসবিহ পড়া হয়ে যায়। নামাজের সকল জিকিরের ক্ষেত্রে একই কথা।
রুকুতে তাসবিহ পড়া সুন্নাত। যদি তা ইচ্ছাকৃত বা ভুলক্রমে ছেড়ে দেয় তাহলেও নামাজ নষ্ট হবে না। গুনাহগারও হবে না। সেজদায়ে সাহুও করা লাগবে না। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. এর মতে তা ওয়াজিব। অতএব, নামাজি ব্যক্তির তাসবিহ বলা উচিত। কারণ, বিভিন্ন সহিহ হাদিসে তা পড়ার নির্দেশ এসেছে। যেমন-
فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظَّمُوا فِيْهِ الرَّبَّ عَزَّ وَجَلَّ.
এই হাদিসটি পূর্বে গেছে। উলামায়ে কেরামের ইখতেলাফ থেকে বাঁচার জন্য তাসবিহ বলা চাই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।
রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ
রুকু-সিজদায় কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ। যদি সুরা ফাতেহা ছাড়া অন্য কোন সুরা পড়ে তাহলে নামাজ নষ্ট হবে না। সুরা ফাতেহা পড়লেও নামাজ নষ্ট হবে না। বিশুদ্ধ মত এটাই। তবে কেউ কেউ বলেছেন: নামাজ নষ্ট হয়ে যাবে।
(১১১) হজরত আলি রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে রুকু ও সিজদারত অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন। ১৯২
(১১২) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَلَا وَإِنِّي نُهِيْتُ أَنْ أَقْرَأَ الْقُرْآنَ رَاكِعًا أَوْ سَاجِدًا.
অর্থ: আমাকে রুকু ও সিজদারত অবস্থায় কুরআন পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। ১৯৩

টিকাঃ
১৮৫. সহিহ মুসলিম: ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭১, সুনানে নাসাঈ ৩/২২৬।
১৮৬. সুনানে তিরমিজি: ২৬১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৮৯০।
১৮৭. সহিহ বুখারি: ৭৯৪, সহিহ মুসলিম: ৪৮৪, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৭, সুনানে নাসাঈ ২/২১৯।
১৮৮. সহিহ মুসলিম: ৭৭1।
১৮৯. সহিহ মুসলিম: ৪৮৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭২, সুনানে নাসাঈ ২/২২৪।
১৯০. সুনানে নাসাঈ ২/১৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৩।
১৯১. সহিহ মুসলিম: ৪৭৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৬।
১৯২. সহিহ মুসলিম: ৪৮০, সুনানে আবু দাউদ: ৪০৪৪।
১৯৩. সহিহ মুসলিম: ৪৮০।

📘 আল আযকার > 📄 রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়ার দুআ

📄 রুকু থেকে দাঁড়িয়ে পড়ার দুআ


রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ )সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ: যে আল্লাহর প্রশংসা করেছে, আল্লাহ তা কবুল করুন) বলবে।
আর যদি مَنْ حَمِدَ اللَّهَ سَمِعَ لَهُ বলে তাও হবে। ইমাম শাফেয়ি কিতাবু উম্মে এ ব্যাপারে বলেছেন।
রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত দুআ পড়বে-
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ، مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ - وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدُ. لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الجد.
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকন ফিহ। মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু। আহলাস সানায়ি ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা কালাল আবদু। ওয়া কুলুনা লাকা আবদুন। লা মানিআ লিমা আতাইতা, ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা য়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ: হে আমাদের রব, আপনার প্রশংসা, যা আপনার নেয়ামতের মতোই পর্যাপ্ত-প্রচুর। এই প্রশংসা প্রদর্শনেচ্ছামুক্ত এবং বড় বরকতময়। আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ওহে পূর্ণ প্রশংসা ও চূড়ান্ত সম্মানের মালিক! বান্দার মিনতি কবুলকারী এবং আমরা সবাই আপনারই বান্দা। কেউ আপনার দান রোধ করতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। ১৯৪
(১১৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু থেকে কোমর সোজা করে দাঁড়াতেন, তখন বলতেন-
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ।
অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন।
এরপর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বলতেন-
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ.
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদ।
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। ১৯৫
কোন কোন বর্ণনায় আছে- وَلَكَ الْحَمْدُ (ওয়া লাকাল হামদ) 'ওয়াও' অব্যয়ের সাথে। উভয়টিই উত্তম।
(১১৪) হজরত আলি এবং ইবনে আবি আওফা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ.
উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদ। মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু。
অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ১৯৬
(১১৫) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে মাথা ওঠানোর সময় বলতেন-
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ - وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدُ. لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الْجَدُّ.
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু। আহলাস সানায়ি ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা কালাল আবদু। ওয়া কুলুনা লাকা আবদুন। লা মানিআ লিমা আতাইতা, ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা য়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ: হে আমাদের রব, আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ওহে পূর্ণ প্রশংসা ও চূড়ান্ত সম্মানের মালিক! বান্দার মিনতি কবুলকারী এবং আমরা সবাই আপনারই বান্দা। কেউ আপনার দান রোধ করতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। ১৯৭
(১১৬) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে নিম্নোক্ত দুআর কথা বর্ণিত আছে-
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ.
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু।
অর্থ: হে আমাদের রব, আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ১৯৮
(১১৭) হজরত রিফাআ বিন রাফে যারকি রাদি. থেকে বর্ণিত-
كُنَّا يَوْمًا نُصَلِّي وَرَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ قَالَ : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ قَالَ رَجُلٌ وَرَاءَهُ : رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ". فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ : مَنِ الْمُتَكَلِّمُ ؟ قَالَ : أَنَا، قَالَ : " رَأَيْتُ بِضْعَةٌ وَثَلَاثِينَ مَلَكًا يَبْتَدِرُوْنَهَا أَيُّهُمْ يَكْتُبُهَا أَوَّلُ
অর্থ: রিফাআ রাদি. বলেন, আমরা একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামাজ আদায় করছিলাম। তিনি রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় বললেন: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ) তখন তাঁর পেছনে এক ব্যক্তি নিম্নোক্ত দুআ পড়লেন:
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকন ফিহ।
অর্থ: হে আমাদের রব, আপনার প্রশংসা, যা আপনার নেয়ামতের মতোই পর্যাপ্ত-প্রচুর। এই প্রশংসা প্রদর্শনেচ্ছামুক্ত এবং বড় বরকতময়।
নামাজ শেষে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে দুআটি বলেছে? ঐ ব্যক্তি বলল, আমি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ৩০ জনের বেশি ফেরেশতাকে এর সওয়াব লেখার জন্য প্রতিযোগিতা করতে দেখেছি। ১৯৯
রুকু থেকে উঠার সময় পূর্বোল্লেখিত সকল দুআ পড়া মুস্তাহাব, যেমনটি পূর্বের রুকুর দুআর ক্ষেত্রে গেছে। যদি কোন একটি দুআ পড়তে হয়, তাহলে নিচের দুআটি পড়বে-
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ.
উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু।
অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ।
আর যদি এরচেও বেশি সংক্ষেপ করতে চায় তাহলে سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদ) বলবে। এরচে আর কম কোন দুআ নেই।
উল্লিখিত দুআগুলো ইমাম, মুক্তাদি, একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য মুস্তাহাব। তবে ইমাম সকল দুআ পড়বে না। অবশ্য ইমাম যদি জানে যে, দীর্ঘায়িত হলে মুক্তাদিদের কষ্ট হবে না। তারা এটি পছন্দ করে তাহলে কোন সমস্যা নেই।
এই দুআগুলো সুন্নাত; ওয়াজিব নয়। এগুলো ছেড়ে দিলে মাকরুহ তানযীহী হবে। এর জন্য সেজদায়ে সাহু লাগবে না।
সোজা হয়ে দাঁড়িয়েও কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করা মাকরুহ যেমন রুকু, সিজদা অবস্থায় মাকরুহ। আল্লাহ পাক ভালো জানেন।

টিকাঃ
১৯৪. সহিহ মুসলিম: ৪১১, ৭৯৯। উ.
১৯৫. সহিহ বুখারি: ৭৮৪, সহিহ মুসলিম: ৩৯২।
১৯৬. সহিহ মুসলিম: ৪৭৬, সুনানে আবু দাউদ: ৮৪৬।
১৯৭. সহিহ মুসলিম: ৪৭৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮৪৭, সুনানে নাসাঈ ২/১৯৮-১৯৯।
১৯৮. সহিহ মুসলিম: ৪৭৮, সুনানে নাসাঈ ২/১৯৮।
১৯৯. সহিহ বুখারি: ৭৯৯, সুনানে আবু দাউদ: ৭৭০, মুয়াত্তা মালেক ১/২১২, সুনানে তিরমিজি: ৭৭০, সুনানে নাসাঈ ২/১৯৬।

রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ )সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ: যে আল্লাহর প্রশংসা করেছে, আল্লাহ তা কবুল করুন) বলবে।
আর যদি مَنْ حَمِدَ اللَّهَ سَمِعَ لَهُ বলে তাও হবে। ইমাম শাফেয়ি কিতাবু উম্মে এ ব্যাপারে বলেছেন।
রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত দুআ পড়বে-
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ، مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ - وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدُ. لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الجد.
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকন ফিহ। মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু। আহলাস সানায়ি ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা কালাল আবদু। ওয়া কুলুনা লাকা আবদুন। লা মানিআ লিমা আতাইতা, ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা য়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ: হে আমাদের রব, আপনার প্রশংসা, যা আপনার নেয়ামতের মতোই পর্যাপ্ত-প্রচুর। এই প্রশংসা প্রদর্শনেচ্ছামুক্ত এবং বড় বরকতময়। আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ওহে পূর্ণ প্রশংসা ও চূড়ান্ত সম্মানের মালিক! বান্দার মিনতি কবুলকারী এবং আমরা সবাই আপনারই বান্দা। কেউ আপনার দান রোধ করতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। ১৯৪
(১১৩) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু থেকে কোমর সোজা করে দাঁড়াতেন, তখন বলতেন-
سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ।
অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন।
এরপর দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় বলতেন-
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ.
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদ।
অর্থ: হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। ১৯৫
কোন কোন বর্ণনায় আছে- وَلَكَ الْحَمْدُ (ওয়া লাকাল হামদ) 'ওয়াও' অব্যয়ের সাথে। উভয়টিই উত্তম।
(১১৪) হজরত আলি এবং ইবনে আবি আওফা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ، اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ.
উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদ। মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু。
অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ১৯৬
(১১৫) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু থেকে মাথা ওঠানোর সময় বলতেন-
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقُّ مَا قَالَ الْعَبْدُ - وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدُ. لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدَّ مِنْكَ الْجَدُّ.
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু। আহলাস সানায়ি ওয়াল মাজদি, আহাক্কু মা কালাল আবদু। ওয়া কুলুনা লাকা আবদুন। লা মানিআ লিমা আতাইতা, ওয়া লা মুতিয়া লিমা মানাতা, ওয়া লা য়ানফাউ জাল জাদ্দি মিনকাল জাদ্দু।
অর্থ: হে আমাদের রব, আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ওহে পূর্ণ প্রশংসা ও চূড়ান্ত সম্মানের মালিক! বান্দার মিনতি কবুলকারী এবং আমরা সবাই আপনারই বান্দা। কেউ আপনার দান রোধ করতে পারে না এবং আপনি বন্ধ করলে কেউ তা দিতে পারে না। আমল ছাড়া সামর্থ্যবানের সামর্থ্য কোন কাজে আসবে না। ১৯৭
(১১৬) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে নিম্নোক্ত দুআর কথা বর্ণিত আছে-
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ.
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু।
অর্থ: হে আমাদের রব, আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ। ১৯৮
(১১৭) হজরত রিফাআ বিন রাফে যারকি রাদি. থেকে বর্ণিত-
كُنَّا يَوْمًا نُصَلِّي وَرَاءَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَمَّا رَفَعَ رَأْسَهُ مِنَ الرَّكْعَةِ قَالَ : سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ قَالَ رَجُلٌ وَرَاءَهُ : رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ". فَلَمَّا انْصَرَفَ قَالَ : مَنِ الْمُتَكَلِّمُ ؟ قَالَ : أَنَا، قَالَ : " رَأَيْتُ بِضْعَةٌ وَثَلَاثِينَ مَلَكًا يَبْتَدِرُوْنَهَا أَيُّهُمْ يَكْتُبُهَا أَوَّلُ
অর্থ: রিফাআ রাদি. বলেন, আমরা একবার নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে নামাজ আদায় করছিলাম। তিনি রুকু থেকে মাথা উঠানোর সময় বললেন: سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ) তখন তাঁর পেছনে এক ব্যক্তি নিম্নোক্ত দুআ পড়লেন:
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ.
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু হামদান কাসিরান তাইয়িবান মুবারাকন ফিহ।
অর্থ: হে আমাদের রব, আপনার প্রশংসা, যা আপনার নেয়ামতের মতোই পর্যাপ্ত-প্রচুর। এই প্রশংসা প্রদর্শনেচ্ছামুক্ত এবং বড় বরকতময়।
নামাজ শেষে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, কে দুআটি বলেছে? ঐ ব্যক্তি বলল, আমি। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি ৩০ জনের বেশি ফেরেশতাকে এর সওয়াব লেখার জন্য প্রতিযোগিতা করতে দেখেছি। ১৯৯
রুকু থেকে উঠার সময় পূর্বোল্লেখিত সকল দুআ পড়া মুস্তাহাব, যেমনটি পূর্বের রুকুর দুআর ক্ষেত্রে গেছে। যদি কোন একটি দুআ পড়তে হয়, তাহলে নিচের দুআটি পড়বে-
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ.
উচ্চারণ: সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদু মিলআস সামাওয়াতি ওয়া মিলআল আরদি ওয়া মিলআ মা বাইনাহুমা ওয়া মিলআ মা শিতা মিন শাইয়িন বাদু।
অর্থ: আল্লাহর প্রশংসাকারীদের প্রশংসা আল্লাহ কবুল করুন। হে আমাদের প্রতিপালক, আপনার জন্যই সকল প্রশংসা। আসমান-যমি-পূর্ণ প্রশংসা আপনার জন্য এবং আপনি আরো যা চান তা পূর্ণ।
আর যদি এরচেও বেশি সংক্ষেপ করতে চায় তাহলে سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ (সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ। রাব্বানা লাকাল হামদ) বলবে। এরচে আর কম কোন দুআ নেই।
উল্লিখিত দুআগুলো ইমাম, মুক্তাদি, একাকী নামাজ আদায়কারীর জন্য মুস্তাহাব। তবে ইমাম সকল দুআ পড়বে না। অবশ্য ইমাম যদি জানে যে, দীর্ঘায়িত হলে মুক্তাদিদের কষ্ট হবে না। তারা এটি পছন্দ করে তাহলে কোন সমস্যা নেই।
এই দুআগুলো সুন্নাত; ওয়াজিব নয়। এগুলো ছেড়ে দিলে মাকরুহ তানযীহী হবে। এর জন্য সেজদায়ে সাহু লাগবে না।
সোজা হয়ে দাঁড়িয়েও কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করা মাকরুহ যেমন রুকু, সিজদা অবস্থায় মাকরুহ। আল্লাহ পাক ভালো জানেন।

টিকাঃ
১৯৪. সহিহ মুসলিম: ৪১১, ৭৯৯। উ.
১৯৫. সহিহ বুখারি: ৭৮৪, সহিহ মুসলিম: ৩৯২।
১৯৬. সহিহ মুসলিম: ৪৭৬, সুনানে আবু দাউদ: ৮৪৬।
১৯৭. সহিহ মুসলিম: ৪৭৭, সুনানে আবু দাউদ: ৮৪৭, সুনানে নাসাঈ ২/১৯৮-১৯৯।
১৯৮. সহিহ মুসলিম: ৪৭৮, সুনানে নাসাঈ ২/১৯৮।
১৯৯. সহিহ বুখারি: ৭৯৯, সুনানে আবু দাউদ: ৭৭০, মুয়াত্তা মালেক ১/২১২, সুনানে তিরমিজি: ৭৭০, সুনানে নাসাঈ ২/১৯৬।

📘 আল আযকার > 📄 সিজদার দুআ

📄 সিজদার দুআ


রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুআ পড়ে সিজদার জন্য তাকবির বলবে। আর মাটিতে কপাল রাখা পর্যন্ত তাকবির লম্বা করবে। এই তাকবির হল সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না।
সিজদার অনেক দুআ রয়েছে যেমন-
সহিহ মুসলিমে হজরত হুজায়ফা রাদি. এর সূত্রে নবিজির নামাজ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে, তিনি একই রাকাতে সুরা বাকারা, নিসা ও আলে ইমরান তিলাওয়াত করেছেন। রহমতের আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে রহমত চেয়েছেন। আযাব সংক্রান্ত আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।
এরপর তিনি সিজদা করেছেন। সিজদায় سُبْحَانَ رَبِّيَّ الْأَعْلَى (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) পড়েছেন। তিনি সিজদা করেছেন কিয়াম সমপরিমাণ। ২০০
(১১৮) হজরত আয়েশা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু, সিজদায় নিম্নোক্ত দুআ খুব বেশি পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي.
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।
অর্থ: হে আমাদের রব আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করি। আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো। ২০১
(১১৯) হজরত আয়েশা রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু-সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوسُ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ.
উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।
অর্থ: মহামহিম পবিত্র সত্ত্বা। ফেরেশতা ও জিবরিলের পালনকর্তা। ২০২
(১২০) হজরত আলি রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন)
اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু, ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার জন্য সাজদা করলাম, আপনার ওপরই ঈমান আনলাম, আপনার সামনেই সমর্পিত হলাম। আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং দীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন। আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা। ২০৩
(১২১) রুকুর অধ্যায়ে হজরত আউফ বিন মালেক রাদি. থেকে সুনানের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ রুকু করলে নিম্নোক্ত দুআ বলতেন। সেজদাতেও এমনটি করতেন-
سُبْحَانَ ذِي الْجِبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ.
উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারুত ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়া ওয়াল আযামাহ।
অর্থ: শক্তিমত্তা, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা করছি। তিনি সিজদাতেও উল্লিখিত দুআ পড়তেন। ২০৪
(১২২) হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সিজদা করে তখন সে যেন তিনবার পড়ে। এটিই সর্বনিম্ন স্তর:
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আলা।
অর্থ: আমি আমার মহা মহীয়ান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। ২০৫
(১২৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি খুঁজতে লাগলাম, হঠাৎ আমি দেখলাম যে, তিনি রুকু বা সিজদারত অবস্থায় আছেন। তিনি তখণ নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করছিলেন-
سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা লাইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই।
সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- আয়েশা রাদি. বলেন, আমার হাত তার পায়ে লাগল, তিনি নামাজের স্থানে ছিলেন এবং উভয় পা দণ্ডায়মান ছিলেন। তিনি তখন নিম্নোক্ত দুআ পড়ছিলেন-
اللَّهُمَّ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ، لَا أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আউজু বি রিজাকা মিন সাখাতিকা, ওয়াবি মুআফাতিকা মিন উকুবাতিক। ওয়া আউজুবিকা মিনকা, লা উহসি সানাআন আলাইকা, আনতা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সন্তুষ্টি চাই। ক্রোধ থেকে পানাহ চাই। শান্তি থেকে মুক্তি চাই। আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। আপনি তেমনই মহিমান্বিত যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন। ২০৬
(১২৪) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظَّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ، وَأَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ، فَمِنْ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ.
অর্থ: তোমরা রুকুতে রবের মহিমা বর্ণনা কর, বড়ত্ব প্রকাশ কর। আর সিজদায় বেশি বেশি দুআ করো কেননা, সিজদারত অবস্থায় দুআ বেশি কবুল হয়। ২০৭
(১২৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.
অর্থ: সেজদার সময় বান্দা আল্লাহ তাআলার বেশি নিকটে থাকে। অতএব, তোমরা সিজদারত অবস্থায় বেশি বেশি দুআ করো। ২০৮
(১২৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ ، دِقَّهُ وَجِلَّهُ ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلَانِيَتَهُ وَسِرَّهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি যাম্বি কুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখেরাহু, ওয়া আলানিয়‍্যাহু ওয়াসিরাহু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার সকল গুনাহ মাফ করে দিন, ছোট-বড়, শুরু-শেষ, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব গুনাহ মাফ করে দিন। ২০৯
উল্লিখিত সকল দুআ সিজদায় পড়া মুস্তাহাব। এক সময়ে না পড়তে পারলে বিভিন্ন সময়ে পড়বে। যেমনটি পূর্বের আলোচনায় গেছে। অন্যান্য দুআ পড়তে না পারলে সিজদার তাসবিহ পড়বে ও কিছু দুআ পড়বে। সিজদায়ও রুকুর মত কুরআনের আয়াত পড়া মাকরুহ। অন্যান্য বিষয়ও পূর্বোল্লেখিত রুকুর মতই।
নামাজে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম নাকি রাকাত বেশি পড়া উত্তম- এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। শাফেয়ি রহ. ও তার অনুসারীদের মতে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম। কেননা হাদিসে আছে أَفْضَلُ الصَّلَاةِ طُوْلُ الْقُنُوْتِ তথা উত্তম নামাজ যাতে কিয়াম দীর্ঘ হয়। ২১০
এর দ্বারা বুঝা যায় কিয়াম উত্তম। তাছাড়া নামাজে কিয়াম দীর্ঘ হলে তাতে কুরআন বেশি পড়া হবে। আর সিজদা দীর্ঘ হলে তাসবিহ বেশি পড়া হবে। আর কুরআন শ্রেষ্ঠ। তাই দীর্ঘ কিয়ামও শ্রেষ্ঠ হবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বেশি রাকাত উত্তম। কেননা হাদিসে আছে-
أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.
অর্থ: সিজদার সময় বান্দا আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে। ২১১
ইমাম তিরমিজি রহ. সুনানে তিরমিজিতে উল্লেখ করেন, উলামায়ে কেরাম উক্ত বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ দীর্ঘ কিয়ামকে উত্তম বলেছেন আর কেউ কেউ বেশি রাকাতকে উত্তম বলেছেন।
ইমাম আহমদ রহ. বলেন, এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম আহমদ রহ. কোন ফয়সালা দেননি। ইসহাক রহ. বলেছেন, দিনের বেলা রুকু-সিজদা বেশি করা উত্তম আর রাত্রিবেলা দীর্ঘ কিয়াম উত্তম।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, ইসহাক রহ. এমনটি বলেছেন। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামাজের বিবরণ হাদিসে এসেছে। আর সেসব বিবরণে দীর্ঘ কিয়ামের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর দিনের নামাজে রাতের নামাজের মতো বিবরণ হাদিসে আসেনি।
নামাজের সিজদায় যা পড়বে, তিলাওয়াতের সিজদাতেও তাই পড়া মুস্তাহাব। সেগুলোর সঙ্গে এ দুআটি পড়াও উত্তম-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا، وَأَعْظَمُ لِي بِهَا أَجْرًا، وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا، وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলহা ইনদাকা যুখরা, ওয়া আদিম লি বিহা আজরা, ওয়া দা' আন্নি বিহা বিযরা, ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি কামা তাকাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাউদ আলাইহিস সালাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, একে আমার জন্য আপনার কাছে সঞ্চয় করে রাখো, এর পরিবর্তে আমাকে মহাপ্রতিদান দান করো। এর মাধ্যমে আমার পাপ মার্জনা করে দাও। এটি আমার পক্ষ থেকে কবুল করো যেমনটা কবুল করেছিলেন দাউদ আলাইহিস সালাম থেকে। ২১২
– নিচের আয়াতটি পড়াও মুস্তাহাব-
سُبْحْنَ رَبَّنَا إِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا .
অর্থ: আমাদের পালনকর্তা পবিত্র মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালনকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে।
(১২৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াতের সিজদায় নিচের দুআটি পড়তেন-
سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِه.
উচ্চারণ: সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। বিহাওলিহি ওয়া কুওয়্যাতিহ।
অর্থ: আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং নিজ কুদরত ও শক্তিতে দীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ। ২১০
হাকেম রহ. উক্ত দুআর সঙ্গে (فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ )ফা-তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন: আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা)ও বৃদ্ধি করেছেন। ২১৪
ইমাম তিরমিজি আরো বলেন, ইমাম হাকেম রহ. কর্তৃক বৃদ্ধিকরণ এটা সহিহাইনের শর্ত সাপেক্ষে হয়েছে।

টিকাঃ
২০০. সহিহ মুসলিম: ৭৭২।
২০১. সহিহ বুখারি: ৭৯৪, মুসলিম: ৪৮৪।
২০২. সহিহ মুসলিম: ৪৮৭।
২০৩. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে আবু দাউদ: ৭৬০।
২০৪. নাসাঈ ২/১৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৩।
২০৫. সুনানে আবু দাউদ: ৮৮৬, সুনানে তিরমিজি: ২৬।
২০৬. সহিহ মুসলিম: ৪৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, মুয়াত্তা মালেক ১/২১৪, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯১, সুনানে নাসাঈ ২/২২৫, ২২৩।
২০৭. সহিহ মুসলিম: ৪৭৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৬, সুনানে নাসাঈ ২/১৮৯।
২০৮. সহিহ মুসলিম: ৪৮২।
২০৯. সহিহ মুসলিম: ৪৮৩, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৮।
২১০. সহিহ মুসলিম: ০৪।
২১১. সহিহ মুসলিম: ৪৮২।
২১২. সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে তিরমিজি: ৫৮০, সুনানে নাসাঈ ২/২২২, মুসতাদরাকে হাকেম ১/২২০।
২১৩. সুনানে তিরমিজি: ৫৮০, সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে নাসাঈ ২/২২২।
২১৪. মুসতাদরাকে হাকেম ১/১২০।

রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে দুআ পড়ে সিজদার জন্য তাকবির বলবে। আর মাটিতে কপাল রাখা পর্যন্ত তাকবির লম্বা করবে। এই তাকবির হল সুন্নাত। ছেড়ে দিলে নামাজ নষ্ট হবে না। সিজদায়ে সাহুও দিতে হবে না।
সিজদার অনেক দুআ রয়েছে যেমন-
সহিহ মুসলিমে হজরত হুজায়ফা রাদি. এর সূত্রে নবিজির নামাজ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে, তিনি একই রাকাতে সুরা বাকারা, নিসা ও আলে ইমরান তিলাওয়াত করেছেন। রহমতের আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে রহমত চেয়েছেন। আযাব সংক্রান্ত আয়াত আসলে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন।
এরপর তিনি সিজদা করেছেন। সিজদায় سُبْحَانَ رَبِّيَّ الْأَعْلَى (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) পড়েছেন। তিনি সিজদা করেছেন কিয়াম সমপরিমাণ। ২০০
(১১৮) হজরত আয়েশা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু, সিজদায় নিম্নোক্ত দুআ খুব বেশি পড়তেন-
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي.
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়াবি হামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি।
অর্থ: হে আমাদের রব আল্লাহ, আমি আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করি। আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করো। ২০১
(১১৯) হজরত আয়েশা রাদি. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকু-সিজদায় নিম্নোক্ত দুআটি পড়তেন-
سُبُّوْحٌ قُدُّوسُ رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوْحِ.
উচ্চারণ: সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুল মালায়িকাতি ওয়াররুহ।
অর্থ: মহামহিম পবিত্র সত্ত্বা। ফেরেশতা ও জিবরিলের পালনকর্তা। ২০২
(১২০) হজরত আলি রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা করতেন নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন)
اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু, ওয়া বিকা আমানতু, ওয়া লাকা আসলামতু। সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার জন্য সাজদা করলাম, আপনার ওপরই ঈমান আনলাম, আপনার সামনেই সমর্পিত হলাম। আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং দীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন। আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা। ২০৩
(১২১) রুকুর অধ্যায়ে হজরত আউফ বিন মালেক রাদি. থেকে সুনানের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ রুকু করলে নিম্নোক্ত দুআ বলতেন। সেজদাতেও এমনটি করতেন-
سُبْحَانَ ذِي الْجِبَرُوْتِ وَالْمَلَكُوْتِ وَالْكِبْرِيَاءِ وَالْعَظَمَةِ.
উচ্চারণ: সুবহানা যিল জাবারুত ওয়াল মালাকুত ওয়াল কিবরিয়া ওয়াল আযামাহ।
অর্থ: শক্তিমত্তা, রাজত্ব, বড়ত্ব ও মহত্ত্বের অধিকারী আল্লাহর পবিত্রতার ঘোষণা করছি। তিনি সিজদাতেও উল্লিখিত দুআ পড়তেন। ২০৪
(১২২) হাদিসের কিতাবসমূহে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'তোমাদের মধ্যে কেউ যখন সিজদা করে তখন সে যেন তিনবার পড়ে। এটিই সর্বনিম্ন স্তর:
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বিয়াল আলা।
অর্থ: আমি আমার মহা মহীয়ান রবের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। ২০৫
(১২৩) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, এক রাতে আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি খুঁজতে লাগলাম, হঠাৎ আমি দেখলাম যে, তিনি রুকু বা সিজদারত অবস্থায় আছেন। তিনি তখণ নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করছিলেন-
سُبْحَانَكَ وَبِحَمْدِكَ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ.
উচ্চারণ: সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা লাইলাহা ইল্লা আনতা।
অর্থ: আপনার সপ্রশংস পবিত্রতা বর্ণনা করছি। আপনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই।
সহিহ মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে- আয়েশা রাদি. বলেন, আমার হাত তার পায়ে লাগল, তিনি নামাজের স্থানে ছিলেন এবং উভয় পা দণ্ডায়মান ছিলেন। তিনি তখন নিম্নোক্ত দুআ পড়ছিলেন-
اللَّهُمَّ أَعُوْذُ بِرِضَاكَ مِنْ سَخَطِكَ، وَبِمُعَافَاتِكَ مِنْ عُقُوبَتِكَ، وَأَعُوْذُ بِكَ مِنْكَ، لَا أُحْصِيْ ثَنَاءً عَلَيْكَ، أَنْتَ كَمَا أَثْنَيْتَ عَلَى نَفْسِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আউজু বি রিজাকা মিন সাখাতিকা, ওয়াবি মুআফাতিকা মিন উকুবাতিক। ওয়া আউজুবিকা মিনকা, লা উহসি সানাআন আলাইকা, আনতা কামা আসনাইতা আলা নাফসিক।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনার সন্তুষ্টি চাই। ক্রোধ থেকে পানাহ চাই। শান্তি থেকে মুক্তি চাই। আপনার কাছে আশ্রয় চাই। আমি আপনার প্রশংসা করে শেষ করতে পারবো না। আপনি তেমনই মহিমান্বিত যেমন আপনি নিজের প্রশংসা করেছেন। ২০৬
(১২৪) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
فَأَمَّا الرُّكُوعُ فَعَظَّمُوْا فِيْهِ الرَّبَّ، وَأَمَّا السُّجُودُ فَاجْتَهِدُوا فِي الدُّعَاءِ، فَمِنْ أَنْ يُسْتَجَابَ لَكُمْ.
অর্থ: তোমরা রুকুতে রবের মহিমা বর্ণনা কর, বড়ত্ব প্রকাশ কর। আর সিজদায় বেশি বেশি দুআ করো কেননা, সিজদারত অবস্থায় দুআ বেশি কবুল হয়। ২০৭
(১২৫) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
أَقْرَبُ مَا يَكُوْنُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.
অর্থ: সেজদার সময় বান্দা আল্লাহ তাআলার বেশি নিকটে থাকে। অতএব, তোমরা সিজদারত অবস্থায় বেশি বেশি দুআ করো। ২০৮
(১২৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদায় নিম্নোক্ত দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ ، دِقَّهُ وَجِلَّهُ ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلَانِيَتَهُ وَسِرَّهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগ ফিরলি যাম্বি কুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু ওয়া আওয়ালাহু ওয়া আখেরাহু, ওয়া আলানিয়‍্যাহু ওয়াসিরাহু।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার সকল গুনাহ মাফ করে দিন, ছোট-বড়, শুরু-শেষ, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব গুনাহ মাফ করে দিন। ২০৯
উল্লিখিত সকল দুআ সিজদায় পড়া মুস্তাহাব। এক সময়ে না পড়তে পারলে বিভিন্ন সময়ে পড়বে। যেমনটি পূর্বের আলোচনায় গেছে। অন্যান্য দুআ পড়তে না পারলে সিজদার তাসবিহ পড়বে ও কিছু দুআ পড়বে। সিজদায়ও রুকুর মত কুরআনের আয়াত পড়া মাকরুহ। অন্যান্য বিষয়ও পূর্বোল্লেখিত রুকুর মতই।
নামাজে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম নাকি রাকাত বেশি পড়া উত্তম- এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। শাফেয়ি রহ. ও তার অনুসারীদের মতে দীর্ঘ কিয়াম উত্তম। কেননা হাদিসে আছে أَفْضَلُ الصَّلَاةِ طُوْلُ الْقُنُوْتِ তথা উত্তম নামাজ যাতে কিয়াম দীর্ঘ হয়। ২১০
এর দ্বারা বুঝা যায় কিয়াম উত্তম। তাছাড়া নামাজে কিয়াম দীর্ঘ হলে তাতে কুরআন বেশি পড়া হবে। আর সিজদা দীর্ঘ হলে তাসবিহ বেশি পড়া হবে। আর কুরআন শ্রেষ্ঠ। তাই দীর্ঘ কিয়ামও শ্রেষ্ঠ হবে। তবে কেউ কেউ বলেছেন, বেশি রাকাত উত্তম। কেননা হাদিসে আছে-
أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ، فَأَكْثِرُوا الدُّعَاءَ.
অর্থ: সিজদার সময় বান্দا আল্লাহর সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে। ২১১
ইমাম তিরমিজি রহ. সুনানে তিরমিজিতে উল্লেখ করেন, উলামায়ে কেরাম উক্ত বিষয়ে মতবিরোধ করেছেন। কেউ কেউ দীর্ঘ কিয়ামকে উত্তম বলেছেন আর কেউ কেউ বেশি রাকাতকে উত্তম বলেছেন।
ইমাম আহমদ রহ. বলেন, এ ব্যাপারে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দুটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু ইমাম আহমদ রহ. কোন ফয়সালা দেননি। ইসহাক রহ. বলেছেন, দিনের বেলা রুকু-সিজদা বেশি করা উত্তম আর রাত্রিবেলা দীর্ঘ কিয়াম উত্তম।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, ইসহাক রহ. এমনটি বলেছেন। কারণ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামাজের বিবরণ হাদিসে এসেছে। আর সেসব বিবরণে দীর্ঘ কিয়ামের কথা বর্ণিত হয়েছে। আর দিনের নামাজে রাতের নামাজের মতো বিবরণ হাদিসে আসেনি।
নামাজের সিজদায় যা পড়বে, তিলাওয়াতের সিজদাতেও তাই পড়া মুস্তাহাব। সেগুলোর সঙ্গে এ দুআটি পড়াও উত্তম-
اللَّهُمَّ اجْعَلْهَا لِي عِنْدَكَ ذُخْرًا، وَأَعْظَمُ لِي بِهَا أَجْرًا، وَضَعْ عَنِّي بِهَا وِزْرًا، وَتَقَبَّلْهَا مِنِّي كَمَا تَقَبَّلْتَهَا مِنْ عَبْدِكَ دَاوُدَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলহা ইনদাকা যুখরা, ওয়া আদিম লি বিহা আজরা, ওয়া দা' আন্নি বিহা বিযরা, ওয়া তাকাব্বালহা মিন্নি কামা তাকাব্বালতাহা মিন আবদিকা দাউদ আলাইহিস সালাম।
অর্থ: হে আল্লাহ, একে আমার জন্য আপনার কাছে সঞ্চয় করে রাখো, এর পরিবর্তে আমাকে মহাপ্রতিদান দান করো। এর মাধ্যমে আমার পাপ মার্জনা করে দাও। এটি আমার পক্ষ থেকে কবুল করো যেমনটা কবুল করেছিলেন দাউদ আলাইহিস সালাম থেকে। ২১২
– নিচের আয়াতটি পড়াও মুস্তাহাব-
سُبْحْنَ رَبَّنَا إِنْ كَانَ وَعْدُ رَبِّنَا لَمَفْعُولًا .
অর্থ: আমাদের পালনকর্তা পবিত্র মহান। নিঃসন্দেহে আমাদের পালনকর্তার ওয়াদা অবশ্যই পূর্ণ হবে।
(১২৭) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিলাওয়াতের সিজদায় নিচের দুআটি পড়তেন-
سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ بِحَوْلِهِ وَقُوَّتِه.
উচ্চারণ: সাজাদা ওয়াজহি লিল্লাজি খালাকাহু ওয়া সাওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সামআহু ওয়া বাসারাহ। বিহাওলিহি ওয়া কুওয়্যাতিহ।
অর্থ: আমার চেহারা সেই সত্ত্বাকে সাজদা করল, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন, আকৃতি দান করেছেন এবং নিজ কুদরত ও শক্তিতে দীর্ণ করে চোখ-কান বের করেছেন।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি সহিহ। ২১০
হাকেম রহ. উক্ত দুআর সঙ্গে (فَتَبَارَكَ اللَّهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ )ফা-তাবারাকাল্লাহু আহসানুল খালিকিন: আল্লাহ পাক মহিমাময় সর্বোত্তম স্রষ্টা)ও বৃদ্ধি করেছেন। ২১৪
ইমাম তিরমিজি আরো বলেন, ইমাম হাকেম রহ. কর্তৃক বৃদ্ধিকরণ এটা সহিহাইনের শর্ত সাপেক্ষে হয়েছে।

টিকাঃ
২০০. সহিহ মুসলিম: ৭৭২।
২০১. সহিহ বুখারি: ৭৯৪, মুসলিম: ৪৮৪।
২০২. সহিহ মুসলিম: ৪৮৭।
২০৩. সহিহ মুসলিম: ৭৭১, সুনানে আবু দাউদ: ৭৬০।
২০৪. নাসাঈ ২/১৯১, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৩।
২০৫. সুনানে আবু দাউদ: ৮৮৬, সুনানে তিরমিজি: ২৬।
২০৬. সহিহ মুসলিম: ৪৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, মুয়াত্তা মালেক ১/২১৪, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৯, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯১, সুনানে নাসাঈ ২/২২৫, ২২৩।
২০৭. সহিহ মুসলিম: ৪৭৯, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৬, সুনানে নাসাঈ ২/১৮৯।
২০৮. সহিহ মুসলিম: ৪৮২।
২০৯. সহিহ মুসলিম: ৪৮৩, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭৮।
২১০. সহিহ মুসলিম: ০৪।
২১১. সহিহ মুসলিম: ৪৮২।
২১২. সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে তিরমিজি: ৫৮০, সুনানে নাসাঈ ২/২২২, মুসতাদরাকে হাকেম ১/২২০।
২১৩. সুনানে তিরমিজি: ৫৮০, সুনানে আবু দাউদ: ১৪১৪, সুনানে নাসাঈ ২/২২২।
২১৪. মুসতাদরাকে হাকেম ১/১২০।

📘 আল আযকার > 📄 দুই সিজদার মাঝখানের দুআ

📄 দুই সিজদার মাঝখানের দুআ


সিজদা থেকে মাথা উঠানো ও দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থার দুআ
সুন্নাত হল, যখন মাথা উঠাতে শুরু করবে তখন থেকে তাকবির বলবে এবং সোজা হয়ে বসা পর্যন্ত তাকবিরকে দীর্ঘ করবে। পূর্বে তাকবিরের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং তাকবির লম্বা করা প্রসঙ্গে মতানৈক্যও পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তাকবির শেষ করে সোজা হয়ে বসবে। এসময় যেসব দুআ পড়বে-
(১২৮) হজরত হুজায়ফা রাদি. থেকে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ কিয়াম করেছিলেন। সেই হাদিসের বিবরণে আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সেজদার মাঝখানে বলছিলেন। দুই সিজদার মাঝে তিনি সিজদার সমপরিমাণ বসেও ছিলেন। দুআটি এই:
رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي.
উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দিন, আমাকে মাফ করে দিন। ২১৫
(১২৯) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে রাতে তিনি তাঁর খালা মাইমুনা রাদি. এর ঘরে রাত্রি যাপন করেন। তিনি রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন তিনি নিচের দুআটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي.
উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, ওয়ার হামনি ওয়াজ বুরনি, ওয়ার জুকনি, ওয়াহ দিনি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করুন, দয়া করুন, আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমাকে রিজিক দান করুন এবং হেদায়াত দিন।
- সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় وَعَافِنِي )ওয়াআ ফিনি: আমাকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ রাখুন) অতিরিক্ত এসেছে। ২১৬
দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে
দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে। দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবির বলে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ আরাম করে বসবে। এরপর সেজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় যে তাকবির বলেছিলো সেটি সোজা হয়ে দাঁড়ানো পর্যন্ত লম্বা করবে। শব্দের লামের পরে লম্বা করবে। এটাই শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের প্রসিদ্ধ মত। তাদের আরেকটি অভিমত রয়েছে যে, তাকবির বলা ছাড়াই বসবে। এরপর উঠার সময় তাকবির বলে উঠে দাঁড়াবে।
তৃতীয় আরেকটি অভিমত রয়েছে, তাকবির বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। এরপর উঠে দাঁড়াবে তাকবির ছাড়া। তবে সকলের মতে, এক তাকবির বলবে। দুই তাকবিরের কথা কেউ বলেন না। শাফেয়িগণ প্রথম পদ্ধতিটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যেন নামাজের কোন সময় জিকির থেকে খালি না থাকে। ২১৭
সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসা সুন্নাত। বুখারি শরিফসহ অন্যান্য কিতাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন বলে বর্ণিত আছে। শাফেয়ি মাজহাবে তা মুস্তাহাব। এটা প্রতি রাকাতে দ্বিতীয় সিজদার পর করতে হয়। সিজদায়ে তিলাওয়াতে উক্ত বৈঠক নেই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। ২১৮
দ্বিতীয় রাকাতের জিকির
প্রথম রাকাতের সেসব দুআ পড়ার কথা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় রাকাতেও তাই পড়বে। ফরজ নামাজ হোক বা নফল হোক। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে।
১. প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা আছে, দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে তাকবিরে তাহরিমা নেই। দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে যে তাকবির বলা হয়ে থাকে, সেটি সেজদা থেকে উঠার তাকবির। আর সেটি সুন্নাত।
২. দ্বিতীয় রাকাতে শুরুর দুআ তথা সানা নেই। প্রথম রাতে সানা আছে।
৩. প্রথম রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে- এ বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই। দ্বিতীয় রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে কিনা তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হল আউজুবিল্লাহ পড়া।
৪. দ্বিতীয় রাকাতের কিরাত প্রথম রাকাত অপেক্ষা ছোট হবে। এটিই নির্ভরযোগ্য অভিমত। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

টিকাঃ
২১৫. সহিহ মুসলিম: ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭, সুনানে নাসাঈ ৩/২২৬।
২১৬. সুনানে বাইহাকি ২/১২২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৫০, সুনানে তিরমিজি: ২৮৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৯৮।
২১৭. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে, দ্বিতীয় তাকবিরের পরে সামান্য বসবে না; বরং সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। সুতরাং তাদের নিকট এসব এখতেলাফ নেই। বরং সেজদা থেকে উঠার সময়ের তাকবিরকে দীর্ঘ করেই সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। (হেদায়া ১/১১০)
২১৮. হানাফি মাজহাবে উক্ত বৈঠক সুন্নাত নয়। (হেদায়া ১/১১০)

সিজদা থেকে মাথা উঠানো ও দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থার দুআ
সুন্নাত হল, যখন মাথা উঠাতে শুরু করবে তখন থেকে তাকবির বলবে এবং সোজা হয়ে বসা পর্যন্ত তাকবিরকে দীর্ঘ করবে। পূর্বে তাকবিরের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। এবং তাকবির লম্বা করা প্রসঙ্গে মতানৈক্যও পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। তাকবির শেষ করে সোজা হয়ে বসবে। এসময় যেসব দুআ পড়বে-
(১২৮) হজরত হুজায়ফা রাদি. থেকে যে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীর্ঘ কিয়াম করেছিলেন। সেই হাদিসের বিবরণে আছে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুই সেজদার মাঝখানে বলছিলেন। দুই সিজদার মাঝে তিনি সিজদার সমপরিমাণ বসেও ছিলেন। দুআটি এই:
رَبِّ اغْفِرْ لِي رَبِّ اغْفِرْ لِي.
উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করে দিন, আমাকে মাফ করে দিন। ২১৫
(১২৯) হজরত ইবনে আব্বাস রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, যে রাতে তিনি তাঁর খালা মাইমুনা রাদি. এর ঘরে রাত্রি যাপন করেন। তিনি রাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামাজের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা থেকে মাথা উঠাতেন তখন তিনি নিচের দুআটি পড়তেন-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي، وَاجْبُرْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي.
উচ্চারণ: রাব্বিগ ফিরলি, ওয়ার হামনি ওয়াজ বুরনি, ওয়ার জুকনি, ওয়াহ দিনি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে মাফ করুন, দয়া করুন, আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন, আমাকে রিজিক দান করুন এবং হেদায়াত দিন।
- সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় وَعَافِنِي )ওয়াআ ফিনি: আমাকে যাবতীয় বিপদাপদ থেকে নিরাপদ রাখুন) অতিরিক্ত এসেছে। ২১৬
দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে
দ্বিতীয় সিজদাতেও প্রথম সিজদার ন্যায় দুআ করবে। দ্বিতীয় সিজদা থেকে তাকবির বলে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ আরাম করে বসবে। এরপর সেজদা থেকে মাথা উঠানোর সময় যে তাকবির বলেছিলো সেটি সোজা হয়ে দাঁড়ানো পর্যন্ত লম্বা করবে। শব্দের লামের পরে লম্বা করবে। এটাই শাফেয়ি উলামায়ে কেরামের প্রসিদ্ধ মত। তাদের আরেকটি অভিমত রয়েছে যে, তাকবির বলা ছাড়াই বসবে। এরপর উঠার সময় তাকবির বলে উঠে দাঁড়াবে।
তৃতীয় আরেকটি অভিমত রয়েছে, তাকবির বলে সেজদা থেকে উঠে বসবে। এরপর উঠে দাঁড়াবে তাকবির ছাড়া। তবে সকলের মতে, এক তাকবির বলবে। দুই তাকবিরের কথা কেউ বলেন না। শাফেয়িগণ প্রথম পদ্ধতিটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন, যেন নামাজের কোন সময় জিকির থেকে খালি না থাকে। ২১৭
সিজদা থেকে মাথা উঠিয়ে কিছুক্ষণ বসা সুন্নাত। বুখারি শরিফসহ অন্যান্য কিতাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করেছেন বলে বর্ণিত আছে। শাফেয়ি মাজহাবে তা মুস্তাহাব। এটা প্রতি রাকাতে দ্বিতীয় সিজদার পর করতে হয়। সিজদায়ে তিলাওয়াতে উক্ত বৈঠক নেই। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন। ২১৮
দ্বিতীয় রাকাতের জিকির
প্রথম রাকাতের সেসব দুআ পড়ার কথা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় রাকাতেও তাই পড়বে। ফরজ নামাজ হোক বা নফল হোক। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে।
১. প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা আছে, দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে তাকবিরে তাহরিমা নেই। দ্বিতীয় রাকাতের শুরুতে যে তাকবির বলা হয়ে থাকে, সেটি সেজদা থেকে উঠার তাকবির। আর সেটি সুন্নাত।
২. দ্বিতীয় রাকাতে শুরুর দুআ তথা সানা নেই। প্রথম রাতে সানা আছে।
৩. প্রথম রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে- এ বিষয়ে কোন মতপার্থক্য নেই। দ্বিতীয় রাকাতে আউজুবিল্লাহ আছে কিনা তা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। প্রসিদ্ধ মত হল আউজুবিল্লাহ পড়া।
৪. দ্বিতীয় রাকাতের কিরাত প্রথম রাকাত অপেক্ষা ছোট হবে। এটিই নির্ভরযোগ্য অভিমত। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

টিকাঃ
২১৫. সহিহ মুসলিম: ৭৭২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৭, সুনানে নাসাঈ ৩/২২৬।
২১৬. সুনানে বাইহাকি ২/১২২, সুনানে আবু দাউদ: ৮৫০, সুনানে তিরমিজি: ২৮৪, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৮৯৮।
২১৭. হানাফি উলামায়ে কেরামের মতে, দ্বিতীয় তাকবিরের পরে সামান্য বসবে না; বরং সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। সুতরাং তাদের নিকট এসব এখতেলাফ নেই। বরং সেজদা থেকে উঠার সময়ের তাকবিরকে দীর্ঘ করেই সোজা দাঁড়িয়ে যাবে। (হেদায়া ১/১১০)
২১৮. হানাফি মাজহাবে উক্ত বৈঠক সুন্নাত নয়। (হেদায়া ১/১১০)

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন