📘 আল আযকার > 📄 মসজিদে অনৈসলামিক কবিতা, গান ইত্যাদি বলা যাবে না

📄 মসজিদে অনৈসলামিক কবিতা, গান ইত্যাদি বলা যাবে না


(৭৯) সাওবান রাদি.-এর সূত্রে ইবনুস সুন্নি তার কিতাবে বর্ণনা করেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ رَأَيْتُمُوهُ يَنْشُدُ شِعْرًا فِي الْمَسْجِدِ فَقُوْلُوْا لَهُ: فَضَّ اللَّهُ فَاكَ ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি তোমরা কাউকে মসজিদে অনৈসলামিক কবিতা আবৃত্তি করতে দেখো তাকে তিনবার বলে দিও:
ফَضَّ اللهُ فَاكَ.
উচ্চারণ: ফাযযাল্লাহু ফাকা।
অর্থ: আল্লাহ তোমার মুখ ভেঙ্গে দিন। ১২৭

টিকাঃ
১২৭. ইবনুস সুন্নি: ১৫৩।

📘 আল আযকার > 📄 আজানের ফযিলত ও পদ্ধতি

📄 আজানের ফযিলত ও পদ্ধতি


আজানের ফজিলত
(৮০) আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النَّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاسْتَهَمُوا.
অর্থ: আজান দেয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে মানুষ যদি জানতো, তাহলে অবশ্যই তারা এটি করার মতো সুযোগ পেতে লটারি দিত। ১২৮
(৮১) আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهُ ضُرَاطُ، حَتَّى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِينَ.
অর্থ: যখন আজান দেয়া হয় তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে, যে পর্যন্ত না আজান কোনা না যায়। ১২৯
(৮২) মুআবিয়া রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
الْمُؤَذِّنُوْنَ أَطْوَلُ النَّاسِ أَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থ: কেয়ামতের দিন সব মানুষের চেয়ে মুআজ্জিন সাহেবদের গর্দান সবচেয়ে লম্বা হবে। অর্থাৎ তাদের মর্যাদা হবে অনেক বেশি। ১৩০
(৮৩) আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنَّ وَلَا إِنَّسُ وَلَا شَيْءٌ، إِلَّا شَهِدَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থ: মুআজ্জিনের আওয়াজ যতদূর মানুষ, জিন ও জীব-জন্তু শুনতে পাবে, তারা সকলেই কেয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। ১৩১
এছাড়াও আযানের ফজিলত প্রসঙ্গে আরো অনেক হাদিস রয়েছে।
আজান ও ইমামতির মাঝে কোনটি বেশি ফযিলতের- এ ব্যাপারে চারটি উক্তি রয়েছে:
১. আজান দেয়া উত্তম।
২. ইমামতি করা উত্তম।
৩. উভয়টি সমান।
৪. যদি ইমামতির হক সম্পর্কে ভালো করে নিজে জানে এবং তার মধ্যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য জমা হয়, তাহলে ইমামতি করা উত্তম। অন্যথায় আজান দেয়াই উত্তম।
আযানের পদ্ধতি
আযানের শব্দমালা সুপ্রসিদ্ধ। আমাদের মাজহাব অনুযায়ী অর্থাৎ শাফেয়ি রহ. এর মতে আযানের মধ্যে تَرْجِيعُ )তারজি') উত্তম। তারজি' বলা হয়- উচুঁ আওয়াজে চার বার আল্লাহু আকবার বলার পর নিজে ও পাশের ব্যক্তি শুনতে পায় এভাবে নিচু আওয়াজে أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ )আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাহ) দুইবার এবং ،أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ )আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ) দুইবার বলার পর আবার পিছনে ফিরে গিয়ে আস্তে বলা উক্ত চারটি বাক্যকে উচু আওয়াজে বলবে। ১৩২
আজানের মধ্যে (تَنْوِيبُ) (তাসভিব) ও সুন্নাত। তাসভিব হল- ফজরের আজানে (حَى عَلَى الْفَلَاحِ) (হাইয়‍্যা আলাল ফালাহ) এর পর দুইবার (الصَّلَوةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ) (আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম: ঘুম থেকে নামাজ ভালো) বলা।
তারজি' ও তাসভিবের ব্যাপারে অনেক প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে।
তারজি' ও তাসভিব ছেড়ে দিলে আজান শুদ্ধ হবে। তবে কাজটি অনুত্তম হবে।
অবুঝ বালক, মেয়েলোক ও কাফেরের আজান শুদ্ধ হবে না। বুদ্ধিমান বালকের আজান শুদ্ধ হবে।
যদি কোন কাফের আজান দেয় এবং "আশহাদুআল্লাহ ইলাহা ইল্লাহ” ও "আশহাদুআন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” বলে তাহলে সঠিক মাজহাব অনুযায়ী এর মাধ্যমে সে মুসলমান হয়ে যাবে।
আমাদের কোনো কোনো উলামায়ে কেরামের মতে মুসলমান হবে না। অবশ্য তার আজান কারো মতেই সহিহ হবে না। কারণ, আজানের শুরুটা ইসলাম গ্রহণের আগে ছিলো।
এ প্রসঙ্গে ফিকহের কিতাবে আরো অনেক মাসআলা-মাসায়েল বর্ণিত আছে। সেগুলো আলোচনার স্থান এটি নয়।
ইকামতের পদ্ধতি
শাফেয়ি মাজহাবের প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী ইকামতের শব্দ হল ১১ টি। ১৩৩ যথা:
اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ )আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার)।
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ )আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)।
أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، )আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ)।
حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ (হাইয়া আলাস সালাহ)।
حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ (হাইয়া আলাল ফালাহ)।
قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ (কাদকা মাতিস সালাহ)।
اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার)।
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)।
সহিহ মাজহাব অনুযায়ী আজান ও ইকামত সুন্নাত। ১৩৪ জুমুআর আজান হোক বা অন্য কোন নামাজের আজান হোক। কারো কারো মতে, সকল নামাজের আজান ফরজে কেফায়া। আবার কারো কারো মতে, আজান ও ইকামত জুমুআর জন্য ফরজে কিফায়া এবং অন্য নামাজে সুন্নাত।
যদি ফরজে কেফায়া বলি তাহলে কোন এলাকা বা মহল্লার লোকেরা আজান ও ইকামত ছেড়ে দিলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। আর যদি সুন্নাত বলি, তাহলে যুদ্ধ করতে হবে না। অবশ্য কারো মতে, সুন্নাত হওয়া সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। কারণ, এটি ইসলামের নিদর্শন।
আজান ও ইকামত যেভাবে ও যে স্থানে দেবে
আজান তারতীলের সাথে (ধীরে ধীরে) দেয়া মুস্তাহাব। যথা সম্ভব আওয়াজ উঁচু করতে হবে। আর ইকামত দ্রুত দেয়া মুস্তাহাব এবং এতে আজানের চেয়ে আওয়াজ নিচু করতে হবে। মুআযযিন সুললিত কণ্ঠের অধিকারী বিশ্বস্ত ও সময় সম্পর্কে অবগত ও পরহেযগার হওয়া চাই। পবিত্র অবস্থায় উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে আজান-ইকামত দেবে।
যদি কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে, বসে শুয়ে, অজুবিহীন অথবা গোসল ফরজ অবস্থায় আজান দেয়, তাহলে আজান হয়ে যাবে; কিন্তু মাকরুহ হবে। অজুবিহীন অবস্থার চেয়ে গোসল ফরজ অবস্থায় আজান দেয়া কঠিন মাকরুহ হবে। আর এসব অবস্থায় ইকামত দেয়া আরো কঠিন মাকরুহ।
যেসব নামাজের জন্য আজান দেবে
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজানের বিধান দেয়া হয়েছে। তথা ফজর, জোহর, আছর, মাগরিব ও এশা। আদায়কারী, কাযা আদায়কারী; মুসাফির, মুকিম; একাকী নামাজি ব্যক্তি ও জামাতে নামাজ আদায়কারী সকলের জন্য একই বিধান। একজন আজান দিলেই বাকিদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
যদি কেউ কয়েক ওয়াক্ত কাযা নামাজ একত্রে আদায় করে, তাহলে প্রথম নামাজের জন্য আজান দেবে, আর বাকি প্রত্যেক নামাজের জন্য ইকামত দেবে। দুই নামাজে একত্রে পড়লে (যেমনটি হজ্জের মাঝে করা হয়ে থাকে) তাহলেও প্রথমটির জন্য আজান দেবে আর প্রত্যেকটির জন্য ইকামত দেবে।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্য কোন নামাজের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে আজান দেয়ার বিধান নেই। তবে অন্য কিছু নামাজ শুরু করার আগে 'আস- সালাতু জামি'আতু' (জামাত শুরু হয়ে যাচ্ছে) বলা মুস্তাহাব। যেমন ঈদ, কুসুফ ও ইস্তেসকার নামাজ। আর কিছু নামাজের ক্ষেত্রে এতটুকু বলাও মুস্তাহাব নয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সুন্নতের ক্ষেত্রে ও নফল নামাজে। আবার কিছু নামাজে বিষয়টি মতবিরোধপূর্ণ; তা হল- তারাবির নামাজ ও জানাযার নামাজ। তবে সঠিক কথা হল, তারাবির নামাজে বলবে কিন্তু জানাযার নামাজে বলবে না।
আজান ও ইকামতের শর্তসমূহ
ওয়াক্ত হওয়ার আগে এবং নামাজে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছাড়া ইকামত সহিহ হবে না। ওয়াক্ত হওয়ার আগে আজান দেয়াও সহিহ হবে না। তবে ফজরের সময় ওয়াক্ত হওয়ার আগে আজান দেয়া জায়েজ আছে। কোন সময় থেকে ফজরের আজান দেয়া শুদ্ধ হবে এ ব্যাপারে এখতেলাফ আছে। সঠিক মত হল, অর্ধেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ফজরের আজান দেয়া যাবে। কারও মতে সাহরির সময় থেকে। কারও মতে পুরো রাত আজান দেয়া যাবে, এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য মত। কারও মতে রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ফজরের আজান দেয়া যাবে। প্রথম মতটিই অগ্রগণ্য। ১৩৫
নারী ও হিজড়ার আজান-ইকামতের বিধান
নারী ও হিজড়া ইকামত দিতে পারবে; কিন্তু তারা আজান দিতে পারবে না। কারণ, এদের আওয়াজ উঁচু করা নিষেধ।

টিকাঃ
১২৮. সহিহ বুখারি: ৬১৫; সহিহ মুসলিম: ৪৩৭, সুনানে নাসাঈ ২/২৩।
১২৯. সহিহ বুখারি: ৬০৮; সহিহ মুসলিম: ৩৮৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৬৯-৭০, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৬, সুনানে নাসাঈ ২/২১-২২।
১৩০. সহিহ মুসলিম: ৩৮৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭২৫।
১৩১. সহিহ বুখারি: ৬০৯, সুনানে নাসাঈ ২/১২, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭২৩।
১৩২. হানাফিদের মতে এটি সুন্নাত নয়। (হেদায়া: ১/৮৭) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুআজ্জিন বিলাল রাদি, তারজি' করতেন না। এছাড়াও আজান সম্পর্কে প্রসিদ্ধ হাদিসসমূহে তারজি'র কথা নেই। বরং আযানের বাক্যগুলো দুইবার করে বলার কথা আছে। সুনানে তিরমিজিতে (১৯৪) আবদুল্লাহ বিন যায়েদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আজান ও ইকামত ছিলো জোড়া জোড়া শব্দে। অনুবাদক। বর্তমানে দুনিয়ার কোথাও কেউই তারজি করে না। আমাদের আজান এভাবে:
اللهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ.
১৩৩. হানাফিদের মতে আযানে যতগুলো শব্দ ইকামতেও ততগুলো শব্দ। তবে ইকামতে (حَى عَلَى الْفَلَاحِ) (হাইয়া আলাল ফালাহ) বলার পর অতিরিক্ত দুইবার (قَدْ قَامَتِ الصَّلَوةُ) (কাদকা মাতিস সালাহ) বলবে। এভাবেই আসমান থেকে আজান নিয়ে অবতরণকারী ফেরেশতা ইকামত দিয়েছিলেন। উক্ত হাদিসটি প্রসিদ্ধ। (হেদায়া: ১/৮৭) সুনানে তিরমিজিতে (১৯৪) আবদুল্লাহ বিন যায়েদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আজান ও ইকামত ছিল জোড়া জোড়া শব্দে।- অনুবাদক। আজান এভাবে দিবে:
ইকামত এভাবে দিবে:
اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ ، قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ.
১৩৪. ফিকহে হানাফির দৃষ্টিতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
১৩৫. হানাফিদের মতে কোন নামাজের আজান ওয়াক্তের আগে দেয়া যাবে না, এমনকি ফজরের আজান ও ওয়াক্তের আগে দেয়া যাবে না; দিলে শুদ্ধ হবে না। ওয়াক্ত আসার পর আবার আজান দিতে হবে। রাসুল সা. বিলাল রাদি. কে বলেছেন, ফজর প্রশস্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত তুমি আজান দিবে না। (হেদায়া: ১/৯১-৯২)

📘 আল আযকার > 📄 আজান ও ইকামতের জবাব

📄 আজান ও ইকামতের জবাব


আজান-ইকামত শ্রবণকারী ব্যক্তির জন্য হুবহু সে বাক্যগুলো বলা মুস্তাহাব। তবে حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ (হাইয়া আলাস সালাহ: নামাজের দিকে এসো) ও حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ (হাইয়া আলাল ফালাহ: কল্যাণের দিকে এসো) বলার পর শ্রোতা বলবে- لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بَاللَّهِ (লা হাওলা ওয়া লা-কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ: আল্লাহর মদদ ছাড়া নেক কাজ করা বা খারাপ কাজ থেকে বাঁচার কোন শক্তি নেই) আর الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ (আস সালাতু খাইরুম মিনান নাওম) এর জবাবে বলবে- صَدَقْتَ وَ بَرَرْتَ (সাদাকতা ওয়া বারারতা: আপনি সত্য বলেছেন) কেউ কেউ বলেছেন- صَدَقَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ (সাদাকা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আস সালাতু খাইরুম মিনান নাওম: আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য বলেছেন যে, ঘুম থেকে নমাজ ভালো) বলবে।
আর ইকামতের সময় (قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ) কাদ কামাতিস সালাহ: নামাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে) বলার পর বলবে- (أَقَامَهَا اللهُ وَأَدَامَهَا) আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা: আল্লাহ একে কায়েম ও নিয়মিত করুন) বলবে।
আর (أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ) আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ: সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ হলেন আল্লাহর রাসুল) বলার পর বলবে- (وَأَنَا أَيْضًا أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ) ওয়া আনা আইদান আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ: আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ হলেন আল্লাহর রাসুল) এরপর বলবে-
رَضِيْتُ بِاللهِ، رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا.
উচ্চারণ: রাজিতু বিল্লাহি রাব্বাও ওয়াবি মুহাম্মাদিন রাসুলা, ওয়াবিল ইসলামি দিনা।
অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলাকে রব হিসেবে, ইসলামকে দীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসুল হিসেবে মেনে সন্তুষ্ট। ১৩৬
আজানের জওয়াব শেষ করে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরুদ শরিফ পড়বে এবং এই দুআটি পড়বে-
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدَانِ الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ্দাওয়াতিত-তাম্মাহ, ওয়াস-সালাতিল কুয়িমা, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাযিলাহ, ওয়াবা'আসহু মাকামাম-মাহমুদা নিল্লাযি ওয়াআত্তাহ। ১৩৭
অর্থ: হে পরিপূর্ণ দাওয়াত তথা আজান ও নামাজের মালিক আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওসিলা ও উচ্চমর্যাদা দান করুন এবং তাকে মাকামে মাহমুদে আসীন করুন, যার অঙ্গীকার আপনি তার সাথে করেছেন।
এরপর দুনিয়া ও আখেরাতের যে বিষয়ে দুআ করতে চায় করবে।
(৮৪) আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا سَمِعْتُمُ النَّدَاءَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ الْمُؤَذِّنُ.
অর্থ: যখন আজান শুনবে তখন মুআযযিন যা বলে, তোমরাও তাই বলে আজানের জবাব দিবে। ১৩৮
(৮৫) আমর বিন আস রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا سَمِعْتُمُ الْمُؤَذِّنَ فَقُوْلُوْا مِثْلَ مَا يَقُوْلُ، ثُمَّ صَلُّوا عَلَيَّ، فَإِنَّهُ مَنْ صَلَّى عَلَيَّ صَلَاةً صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ بِهَا عَشْرًا، ثُمَّ سَلُوْا اللهَ لِي الْوَسِيلَةَ ، فَإِنَّهَا مَنْزِلَةٌ فِي الْجَنَّةِ، لَا تَنْبَغِي إِلَّا لِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِ اللهِ ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُوْنَ أَنَا هُوَ، فَمَنْ سَأَلَ لِي الْوَسِيلَةَ حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ.
অর্থ: তোমরা যখন আজান শুনবে, তখন মুআযযিন যা বলে, তোমরা তাই বলে আজানের জবাব দেবে। এরপর আমার ওপর দরুদ পড়বে। কেননা যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পড়ে, আল্লাহ তার ওপর দশটি রহমত নাযিল করেন। এরপর তোমরা আমার জন্য ওসিলার দুআ করবে। কেননা জান্নাতে এমন একটি স্থান রয়েছে, যা আল্লাহর এক বিশেষ বান্দা লাভ করবে। আমি আশাবাদী যে, আমি হবো সেই বান্দা। অতএব যে আমার জন্য ওসিলার দুআ করবে তার জন্য আমার শাফাআত আবশ্যক হবে। ১৩৯
(৮৬) হজরত উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا قَالَ الْمُؤَذِّنُ : اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، فَقَالَ أَحَدُكُمُ : اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ. ثُمَّ قَالَ : أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، قَالَ : أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ. ثُمَّ قَالَ : أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ ، قَالَ : أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللَّهِ، . ثُمَّ قَالَ : حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، قَالَ : لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، . ثُمَّ قَالَ : حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، قَالَ : لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ ، . ثُمَّ قَالَ : اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ، قَالَ : اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ. ثُمَّ قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ ، قَالَ : لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مِنْ قَلْبِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ.
অর্থ: তোমাদের মধ্যে কেউ মুআযযিনের “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার” (আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান) বলার সাথে বলে- “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার"। যখন মুআযযিন "আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই) বলে, সেও "আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে। যখন সে "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” (সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ হলেন আল্লাহর রাসুল) বলে, সেও বলে- "আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ”। যখন বলে- "হাইয়া আলাস সালাহ” (নামাজের দিকে এসো)। সে তখন বলে- “লা হাওলা ওয়া লা-কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ” (আল্লাহর মদদ ছাড়া নেক কাজ করা বা খারাপ কাজ থেকে বাঁচার কোন শক্তি নেই) যখন সে "হাইয়া আলাল ফালাহ” (কল্যাণের দিকে এসো) বলে, সে “লা হাওলা ওয়া লা-কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ” বলে। যখন "আল্লাহু আকবার” বলে, সেও "আল্লাহু আকবার” বলে। যখন "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই) বলে, সেও "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে। আর এগুলো সে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মন থেকে বলে, তাহলে সে জান্নাতে যাবে। ১৪০
(৮৭) হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. বর্ণনা করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তি মুআজ্জিনের আজান কোনার পর এই দুআ পড়বে তার অতীতের (ছোট) গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে। দুআটি হল-
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، رَضِيْتُ بِاللهِ، رَبًّا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا.
উচ্চারণ: আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহ ওয়া রাসুলুহু, রাযিতু বিল্লাহি রব্বাও, ওয়াবি মুহাম্মাদিন রাসুলান, ওয়াবিল ইসলামি দীনা।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আর এও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর বিশেষ বান্দা ও শেষ রাসুল। আমি আল্লাহ তাআলাকে রব হিসেবে, ইসলামকে দীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসুল হিসেবে মেনে সন্তুষ্ট।
কোন কোন বর্ণনায় আছে- যে ব্যক্তি মুআযযিনের আযানের সময় বলবে- (وَأَنَا أَشْهَدُ) আনা আশহাদু: আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি)। ১৪১
(৮৮) ইমাম আবু দাউদ রহ. হজরত আয়েশা রাদি.-এর সূত্রে বর্ণনা করেন-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا سَمِعَ الْمُؤَذِّنَ يَتَشَهَدُ قَالَ : "وَأَنَا وَأَنَا."
অর্থ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুআযযিনকে যখন আজানের মধ্যে "আশহাদু” বলতে শুনতেন, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন- (وَأَنَا وَأَنَا) ওয়া আনা ওয়া আনা): আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি, আমিও সাক্ষ্য দিচ্ছি। ১৪২
(৮৯) হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- যে ব্যক্তি আজানের জবাব দেয়ার পর এই দুআ পড়বে, সে কেয়ামতের দিন আমার শাফাআত লাভ করবে:
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُوْدًا الَّذِي وَعَدْتَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ্দাওয়াতিত-তাম্মাহ, ওয়াস-সালাতিল কুয়িমা, আতি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাযিলাহ, ওয়াবা'আসহু মাকামাম-মাহমুদা নিল্লাযি ওয়াআত্তাহ।
অর্থ: হে পরিপূর্ণ দাওয়াত তথা আজান ও নামাজের মালিক আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ওসিলা ও উচ্চমর্যাদা দান করুন এবং তাকে মাকামে মাহমুদে আসীন করুন, যার অঙ্গীকার আপনি তার সাথে করেছেন। ১৪৩
(৯০) মুআবিয়া রাদি.-এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মুআযযিনকে “হাইয়্যা আলাল ফালাহ” বলতে শুনতেন, তখন তিনি বলতেন-
اللَّهُمَّ اجْعَلْنَا مِنَ الْمُفْلِحِيْنَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলনা মিনাল মুফলিহিন।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি আমাদের সফল ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করুন। ১৪৪
(৯১) আবু দাউদ শরিফে এক সাহাবি থেকে বর্ণিত আছে যে, বিলাল রাদি. যখন ইকামত দিতেন এবং قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ (কাদ কামাতিস সালাহ: নামাজ শুরু হয়ে যাচ্ছে) বলতেন, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন- أَقَامَهَا اللَّهُ وَأَدَامَهَا (আকামাহাল্লাহু ওয়া আদামাহা: আল্লাহ একে কায়েম ও নিয়মিত করুন)। অন্য শব্দগুলো উমর রাদি. থেকে বর্ণিত পূর্বের হাদিস অনুযায়ী বলতেন। ১৪৫
(৯২) ইবনুস সুন্নির কিতাবে আবু হুরায়রা রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে যে, তিনি যখন মুআযযিনকে ইকামত দিতে শুনতেন, তখন বলতেন,
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَآتِهِ سُؤْلَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রব্বা হাযিহিদ্দাওয়াতিত-তাম্মাহ, ওয়াস-সালাতিল কায়িমাহ, সাল্লি আলা মুহাম্মাদ, ওয়া আতিহি সুওয়ালাহু ইয়াওমাল কিয়ামাহ।
অর্থ: হে পরিপূর্ণ দাওয়াত তথা আজান ও নামাজের মালিক আল্লাহ, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর রহমত বর্ষণ করুন এবং কেয়ামতের দিন তার মিনতি কবুল করুন। ১৪৬
নামাজরত অবস্থায় আজান-ইকামত শুনলে উত্তর দিবে না
নামাজরত অবস্থায় আজান বা ইকামত কোনলে নামাজে তার জবাব দেবে না। নামাজ থেকে ফারেগ হওয়ার পর জবাব দেবে। যদি নামাজের ভেতরেই জবাব দেয়, তাহলে মাকরুহ হবে; নামাজ নষ্ট হবে না। অনুরূপভাবে টয়লেটে থাকাবস্থায় জবাব দেবে না; টয়লেট থেকে বের হওয়ার পর জবাব দেবে।
কেউ যদি কুরআন তিলাওয়াত করে, তাসবিহ পাঠ করে, অথবা হাদিস বা অন্য কোন জ্ঞান চর্চা করে, তাহলে এগুলো বন্ধ করে আজানের জবাব দেবে এরপর পূর্বের আমলে ফিরে যাবে। কারণ, আজানের জবাব কাযা হয়ে যাবে; কিন্তু ঐগুলো সাধারণত কাযা হবে না। মুআযযিনের সাথে সাথে আজানের জবাব না দিয়ে থাকলে আজান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জবাব দেবে; বিলম্ব করবে না।

টিকাঃ
১৩৬. বাক্যগুলোর উচ্চারণ-অনুবাদ: উবায়দুল্লাহ। হানাফিদের মতে, মুআযযিন أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ বলার পর শ্রোতাগণও এ বাক্যটিই বলবে।
১৩৭. প্রকাশ থাকে যে, ইমাম বাইহাকির সুনানে কুবরায় এর অতিরিক্ত এসেছে- (ইন্নাকা লা তুখলিফুল মিআদ: নিশ্চয় আপনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না)। অতএব, কেউ চাইলে এই বাক্যও বৃদ্ধি করে বলতে পারবে।
১৩৮. সহিহ বুখারি: ৬১১, সহিহ মুসলিম: ৩৮৩, মুয়াত্তা মালেক ১/৬৭, সুনানে আবু দাউদ: ৫২২, সুনানে তিরমিজি: ২০৮, সুনানে নাসাঈ ২/২৩, আমালুল ইয়াউম: ৩৪, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭২০, আমালুল ইয়াউম: ৯০, ইবনুস সুন্নি।
১৩৯. সহিহ মুসলিম: ৩৮৪, সুনানে আবু দাউদ: ৫২৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৬১৯, সুনানে নাসাঈ ২/২৫। উ.
১৪০. সহিহ মুসলিম: ৩৮৫, সুনানে আবু দাউদ: ৫২৭, আমালুল ইয়াউম: ৪০, নাসাঈ।
১৪১. সহিহ মুসলিম: ৩৮৬, সুনানে আবু দাউদ: ৫২৫, সুনানে তিরমিজি: ২১০, সুনানে নাসাঈ ২/২৬, আমালুল ইয়াউম: ৭৩, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭২১, আমালুল ইয়াউম: ৯৭, ইবনুস সুন্নি।
১৪২. সুনানে আবু দাউদ: ৫২৬।
১৪৩. সহিহ বুখারি: ৬১৪, সুনানে আবু দাউদ: ৫২৯, সুনানে তিরমিজি: ২১১, সুনানে নাসাঈ ২/২৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭২০, আমালুল ইয়াউম: ৯৫, ইবনুস সুন্নি। উ.
১৪৪. আমালুল ইয়াউম: ৯২, ইবনুস সুন্নি। হাদিসটি বানোয়াট। এতে রয়েছে আবদুল্লাহ বিন ওয়াকিদ নামাক একজন বর্ণনাকারী। তার ব্যাপারে আপত্তি আছে।
১৪৫. সুনানে আবু দাউদ: ৫২৮।
১৪৬. ইবনুস সুন্নি: ১০৫। উ.

📘 আল আযকার > 📄 আজানের পরে দুআ কবুল হয়

📄 আজানের পরে দুআ কবুল হয়


(৯৩) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا يُرَدُّ الدُّعَاءُ بَيْنَ الْأَذَانِ وَالْإِقَامَةِ.
অর্থ: আজান ইকামতের মধ্যকার দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না। (আল্লাহ তাআলা কবুল করেন।)
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ। ইমাম তিরমিজি রহ. অতিরিক্ত এও উল্লেখ করেন যে, সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমরা কী দুআ করব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা দুনিয়া আখেরাতের নিরাপত্তার জন্য দুআ করো। ১৪৭
(৯৪) হজরত আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আস রাদি. থেকে বর্ণিত এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, মুআযযিনগণ তো আমাদের চেয়ে বেশি সওয়াবের অধিকারী হয়ে যাচ্ছেন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
قُلْ كَمَا يَقُوْلُوْنَ، فَإِذَا انْتَهَيْتَ فَسَلْ تُعْطَهُ.
অর্থ: মুআযযিন যা বলে তোমরাও তাই বলো। যখন জবাব দেয়া শেষ হবে, তখন তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। প্রার্থিত বস্তু দেয়া হবে। ১৪৮
(৯৫) হজরত সাহল বিন সাদ রাদি. এর সূত্রে আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
ثِنْتَانِ لَا تُرَدَّانِ، أَوْ قَلَّمَا تُرَدَّانِ : الدُّعَاءُ عِنْدَ النَّدَاءِ، وَعِنْدَ الْبَأْسِ حِينَ يُلْحِمُ بَعْضُهُمْ بَعْضًا.
অর্থ: দুটি বস্তু ফিরিয়ে দেয়া হয় না। অথবা কম ফিরিয়ে দেয়া হয়। এক. আজানের সময়কার দুআ। দুই. ঐ বিপদের সময়ের দুআ, যখন মানুষ একে অপরের প্রতি মুখাপেক্ষী হয়ে যায়।

টিকাঃ
১৪৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫২১; তিরমিজি: ২১২, আমালুল ইয়াউম: ৬৮, নাসাঈ।
১৪৮ সুনানে আবু দাউদ: ৫২৪, আমালুল ইয়াউম: ১৪৪, নাসাঈ, মাওয়ারিদুয যামআন ইলা যাওয়ায়িদে ইবনে হিব্বান: ২৯৫, হাইসামি।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন