📄 মসজিদে অবস্থানকারীর করণীয়
মসজিদে ইতেকাফের নিয়তে অবস্থান করবে। যদিও তা অল্প সময় হোক না কেন। এমনকি মসজিদে কেবল গমন করেই চলে আসে, অবস্থান নাও করে তার জন্যও ইতিকাফের নিয়ত করা চাই। যাতে ইতেকাফের ফজিলত লাভ হয়ে যায়। তবে উত্তম হল কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর বের হওয়া।
মসজিদে অবস্থানকারী ভালো কাজের আদেশ করবে। মন্দ কাজ থেকে বাধা দেবে। অবশ্য এই কাজ মসজিদ ও মসজিদের বাইরে সব জায়গায় করা চাই। তবে মসজিদে বিশেষভাবে বলা হয়েছে মসজিদের সম্মান মর্যাদা এবং মসজিদ সবচেয়ে উত্তম জায়গা হিসেবে। কেউ কেউ বলেন, যদি মসজিদে প্রবেশের পর কোন কারণে যেমন হদসের বা অন্য কোন কাজে মগ্ন হওয়ার কারণে তাহিয়্যাতুল মসজিদ (মসজিদের প্রবেশের পর দুই রাকাত নামাজ) পড়তে না পারে তাহলে এ দুআটি চারবার পড়া মুস্তাহাব-
سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَإِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি, সকল প্রশংসা তারই। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আর আল্লাহ মহান।
📄 মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা ও ক্রয় বিক্রয় নিষেধ
(৭৬) মুসলিম শরিফে আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ سَمِعَ رَجُلًا يَنْشُدُ ضَالَّةً فِي الْمَسْجِدِ فَلْيَقُلْ لَا رَدَّهَا اللَّهُ عَلَيْكَ، فَإِنَّ الْمَسَاجِدَ لَمْ تُبْنَ لِهَذَا.
অর্থ: যে ব্যক্তি মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দিতে শুনে সে যেন বলে:
উচ্চারণ: লা রাদ্দাহাল্লাহু আলাইক।
لَا رَدَّهَا اللهُ عَلَيْكَ
অর্থ: আল্লাহ তোমার হারানো বস্তু তোমার কাছে যেন ফিরিয়ে না দেন। কেননা মসজিদগুলোকে এসব কাজের জন্য বানানো হয়নি। ১২৪
(৭৭) মুসলিম শরিফে হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَجُلًا نَشَدَ فِي الْمَسْجِدِ، فَقَالَ : مَنْ دَعَا إِلَى الْجَمَلِ الْأَحْمَرِ ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَا وَجَدْتَ إِنَّمَا بُنِيَتِ الْمَسَاجِدُ لِمَا بُنِيَتْ لَهُ.
অর্থ: এক ব্যক্তি মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দিল। বলল, আমার লাল উট হারানো গিয়েছে। কেউ পেয়ে থাকলে দয়া করে আমার কাছে পৌঁছে দেবেন। তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি উট পাবে না। নিশ্চয় মসজিদগুলোকে যে জন্য বানানো হয়ে এখানে তাই করতে হবে। ১২৫
(৭৮) তিরমিজি শরিফে আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَبِيعُ، أَوْ يَبْتَاعُ فِي الْمَسْجِدِ فَقُوْلُوا : لَا أَرْبَحَ اللَّهُ تِجَارَتَكَ. وَإِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَنْشُدُ فِيْهِ ضَالَّةً فَقُوْلُوا : لَا رَدَّ اللَّهُ عَلَيْكَ.
অর্থ: যদি মসজিদে কাউকে ক্রয়-বিক্রয় করতে দেখো, তাহলে তাকে বলে দিও- আল্লাহ যেন তোমার ব্যবসায় লাভ না দেন। অনুরূপভাবে কেউ যদি হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়, তাকে বলে দিও- আল্লাহ যেন তোমার হারানো বস্তু ফিরিয়ে না দেন। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান পর্যায়ের। ১২৬
টিকাঃ
১২৪. সহিহ মুসলিম: ৫৬৮, সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৩, সুনানে তিরমিজি: ১৩২১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭৬৭।
১২৫. সহিহ মুসলিম: ৫৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭৬৫।
১২৬. সুনানে তিরমিজি: ১৩২১, ইবনুস সুন্নি: ১৫৪।
📄 মসজিদে অনৈসলামিক কবিতা, গান ইত্যাদি বলা যাবে না
(৭৯) সাওবান রাদি.-এর সূত্রে ইবনুস সুন্নি তার কিতাবে বর্ণনা করেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ رَأَيْتُمُوهُ يَنْشُدُ شِعْرًا فِي الْمَسْجِدِ فَقُوْلُوْا لَهُ: فَضَّ اللَّهُ فَاكَ ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি তোমরা কাউকে মসজিদে অনৈসলামিক কবিতা আবৃত্তি করতে দেখো তাকে তিনবার বলে দিও:
ফَضَّ اللهُ فَاكَ.
উচ্চারণ: ফাযযাল্লাহু ফাকা।
অর্থ: আল্লাহ তোমার মুখ ভেঙ্গে দিন। ১২৭
টিকাঃ
১২৭. ইবনুস সুন্নি: ১৫৩।
📄 আজানের ফযিলত ও পদ্ধতি
আজানের ফজিলত
(৮০) আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَوْ يَعْلَمُ النَّاسُ مَا فِي النَّدَاءِ وَالصَّفِّ الْأَوَّلِ ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا إِلَّا أَنْ يَسْتَهِمُوا عَلَيْهِ لاسْتَهَمُوا.
অর্থ: আজান দেয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ আদায়ের ফজিলত সম্পর্কে মানুষ যদি জানতো, তাহলে অবশ্যই তারা এটি করার মতো সুযোগ পেতে লটারি দিত। ১২৮
(৮১) আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ أَدْبَرَ الشَّيْطَانُ وَلَهُ ضُرَاطُ، حَتَّى لَا يَسْمَعَ التَّأْذِينَ.
অর্থ: যখন আজান দেয়া হয় তখন শয়তান বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে, যে পর্যন্ত না আজান কোনা না যায়। ১২৯
(৮২) মুআবিয়া রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
الْمُؤَذِّنُوْنَ أَطْوَلُ النَّاسِ أَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
অর্থ: কেয়ামতের দিন সব মানুষের চেয়ে মুআজ্জিন সাহেবদের গর্দান সবচেয়ে লম্বা হবে। অর্থাৎ তাদের মর্যাদা হবে অনেক বেশি। ১৩০
(৮৩) আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
لَا يَسْمَعُ مَدَى صَوْتِ الْمُؤَذِّنِ جِنَّ وَلَا إِنَّسُ وَلَا شَيْءٌ، إِلَّا شَهِدَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
অর্থ: মুআজ্জিনের আওয়াজ যতদূর মানুষ, জিন ও জীব-জন্তু শুনতে পাবে, তারা সকলেই কেয়ামতের দিন তার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। ১৩১
এছাড়াও আযানের ফজিলত প্রসঙ্গে আরো অনেক হাদিস রয়েছে।
আজান ও ইমামতির মাঝে কোনটি বেশি ফযিলতের- এ ব্যাপারে চারটি উক্তি রয়েছে:
১. আজান দেয়া উত্তম।
২. ইমামতি করা উত্তম।
৩. উভয়টি সমান।
৪. যদি ইমামতির হক সম্পর্কে ভালো করে নিজে জানে এবং তার মধ্যে সমস্ত বৈশিষ্ট্য জমা হয়, তাহলে ইমামতি করা উত্তম। অন্যথায় আজান দেয়াই উত্তম।
আযানের পদ্ধতি
আযানের শব্দমালা সুপ্রসিদ্ধ। আমাদের মাজহাব অনুযায়ী অর্থাৎ শাফেয়ি রহ. এর মতে আযানের মধ্যে تَرْجِيعُ )তারজি') উত্তম। তারজি' বলা হয়- উচুঁ আওয়াজে চার বার আল্লাহু আকবার বলার পর নিজে ও পাশের ব্যক্তি শুনতে পায় এভাবে নিচু আওয়াজে أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ )আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাহ) দুইবার এবং ،أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ )আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ) দুইবার বলার পর আবার পিছনে ফিরে গিয়ে আস্তে বলা উক্ত চারটি বাক্যকে উচু আওয়াজে বলবে। ১৩২
আজানের মধ্যে (تَنْوِيبُ) (তাসভিব) ও সুন্নাত। তাসভিব হল- ফজরের আজানে (حَى عَلَى الْفَلَاحِ) (হাইয়্যা আলাল ফালাহ) এর পর দুইবার (الصَّلَوةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ) (আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম: ঘুম থেকে নামাজ ভালো) বলা।
তারজি' ও তাসভিবের ব্যাপারে অনেক প্রসিদ্ধ হাদিস রয়েছে।
তারজি' ও তাসভিব ছেড়ে দিলে আজান শুদ্ধ হবে। তবে কাজটি অনুত্তম হবে।
অবুঝ বালক, মেয়েলোক ও কাফেরের আজান শুদ্ধ হবে না। বুদ্ধিমান বালকের আজান শুদ্ধ হবে।
যদি কোন কাফের আজান দেয় এবং "আশহাদুআল্লাহ ইলাহা ইল্লাহ” ও "আশহাদুআন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” বলে তাহলে সঠিক মাজহাব অনুযায়ী এর মাধ্যমে সে মুসলমান হয়ে যাবে।
আমাদের কোনো কোনো উলামায়ে কেরামের মতে মুসলমান হবে না। অবশ্য তার আজান কারো মতেই সহিহ হবে না। কারণ, আজানের শুরুটা ইসলাম গ্রহণের আগে ছিলো।
এ প্রসঙ্গে ফিকহের কিতাবে আরো অনেক মাসআলা-মাসায়েল বর্ণিত আছে। সেগুলো আলোচনার স্থান এটি নয়।
ইকামতের পদ্ধতি
শাফেয়ি মাজহাবের প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী ইকামতের শব্দ হল ১১ টি। ১৩৩ যথা:
اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ )আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার)।
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ )আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ)।
أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، )আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ)।
حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ (হাইয়া আলাস সালাহ)।
حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ (হাইয়া আলাল ফালাহ)।
قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ (কাদকা মাতিস সালাহ)।
اللهُ أَكْبَرُ (আল্লাহু আকবার)।
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ)।
সহিহ মাজহাব অনুযায়ী আজান ও ইকামত সুন্নাত। ১৩৪ জুমুআর আজান হোক বা অন্য কোন নামাজের আজান হোক। কারো কারো মতে, সকল নামাজের আজান ফরজে কেফায়া। আবার কারো কারো মতে, আজান ও ইকামত জুমুআর জন্য ফরজে কিফায়া এবং অন্য নামাজে সুন্নাত।
যদি ফরজে কেফায়া বলি তাহলে কোন এলাকা বা মহল্লার লোকেরা আজান ও ইকামত ছেড়ে দিলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। আর যদি সুন্নাত বলি, তাহলে যুদ্ধ করতে হবে না। অবশ্য কারো মতে, সুন্নাত হওয়া সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। কারণ, এটি ইসলামের নিদর্শন।
আজান ও ইকামত যেভাবে ও যে স্থানে দেবে
আজান তারতীলের সাথে (ধীরে ধীরে) দেয়া মুস্তাহাব। যথা সম্ভব আওয়াজ উঁচু করতে হবে। আর ইকামত দ্রুত দেয়া মুস্তাহাব এবং এতে আজানের চেয়ে আওয়াজ নিচু করতে হবে। মুআযযিন সুললিত কণ্ঠের অধিকারী বিশ্বস্ত ও সময় সম্পর্কে অবগত ও পরহেযগার হওয়া চাই। পবিত্র অবস্থায় উঁচু স্থানে দাঁড়িয়ে কেবলামুখী হয়ে আজান-ইকামত দেবে।
যদি কেবলার দিকে পিঠ দিয়ে, বসে শুয়ে, অজুবিহীন অথবা গোসল ফরজ অবস্থায় আজান দেয়, তাহলে আজান হয়ে যাবে; কিন্তু মাকরুহ হবে। অজুবিহীন অবস্থার চেয়ে গোসল ফরজ অবস্থায় আজান দেয়া কঠিন মাকরুহ হবে। আর এসব অবস্থায় ইকামত দেয়া আরো কঠিন মাকরুহ।
যেসব নামাজের জন্য আজান দেবে
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আজানের বিধান দেয়া হয়েছে। তথা ফজর, জোহর, আছর, মাগরিব ও এশা। আদায়কারী, কাযা আদায়কারী; মুসাফির, মুকিম; একাকী নামাজি ব্যক্তি ও জামাতে নামাজ আদায়কারী সকলের জন্য একই বিধান। একজন আজান দিলেই বাকিদের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।
যদি কেউ কয়েক ওয়াক্ত কাযা নামাজ একত্রে আদায় করে, তাহলে প্রথম নামাজের জন্য আজান দেবে, আর বাকি প্রত্যেক নামাজের জন্য ইকামত দেবে। দুই নামাজে একত্রে পড়লে (যেমনটি হজ্জের মাঝে করা হয়ে থাকে) তাহলেও প্রথমটির জন্য আজান দেবে আর প্রত্যেকটির জন্য ইকামত দেবে।
পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ ব্যতীত অন্য কোন নামাজের জন্য সর্বসম্মতিক্রমে আজান দেয়ার বিধান নেই। তবে অন্য কিছু নামাজ শুরু করার আগে 'আস- সালাতু জামি'আতু' (জামাত শুরু হয়ে যাচ্ছে) বলা মুস্তাহাব। যেমন ঈদ, কুসুফ ও ইস্তেসকার নামাজ। আর কিছু নামাজের ক্ষেত্রে এতটুকু বলাও মুস্তাহাব নয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সুন্নতের ক্ষেত্রে ও নফল নামাজে। আবার কিছু নামাজে বিষয়টি মতবিরোধপূর্ণ; তা হল- তারাবির নামাজ ও জানাযার নামাজ। তবে সঠিক কথা হল, তারাবির নামাজে বলবে কিন্তু জানাযার নামাজে বলবে না।
আজান ও ইকামতের শর্তসমূহ
ওয়াক্ত হওয়ার আগে এবং নামাজে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছাড়া ইকামত সহিহ হবে না। ওয়াক্ত হওয়ার আগে আজান দেয়াও সহিহ হবে না। তবে ফজরের সময় ওয়াক্ত হওয়ার আগে আজান দেয়া জায়েজ আছে। কোন সময় থেকে ফজরের আজান দেয়া শুদ্ধ হবে এ ব্যাপারে এখতেলাফ আছে। সঠিক মত হল, অর্ধেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ফজরের আজান দেয়া যাবে। কারও মতে সাহরির সময় থেকে। কারও মতে পুরো রাত আজান দেয়া যাবে, এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য মত। কারও মতে রাতের এক তৃতীয়াংশ অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে ফজরের আজান দেয়া যাবে। প্রথম মতটিই অগ্রগণ্য। ১৩৫
নারী ও হিজড়ার আজান-ইকামতের বিধান
নারী ও হিজড়া ইকামত দিতে পারবে; কিন্তু তারা আজান দিতে পারবে না। কারণ, এদের আওয়াজ উঁচু করা নিষেধ।
টিকাঃ
১২৮. সহিহ বুখারি: ৬১৫; সহিহ মুসলিম: ৪৩৭, সুনানে নাসাঈ ২/২৩।
১২৯. সহিহ বুখারি: ৬০৮; সহিহ মুসলিম: ৩৮৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৬৯-৭০, সুনানে আবু দাউদ: ৫১৬, সুনানে নাসাঈ ২/২১-২২।
১৩০. সহিহ মুসলিম: ৩৮৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭২৫।
১৩১. সহিহ বুখারি: ৬০৯, সুনানে নাসাঈ ২/১২, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭২৩।
১৩২. হানাফিদের মতে এটি সুন্নাত নয়। (হেদায়া: ১/৮৭) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুআজ্জিন বিলাল রাদি, তারজি' করতেন না। এছাড়াও আজান সম্পর্কে প্রসিদ্ধ হাদিসসমূহে তারজি'র কথা নেই। বরং আযানের বাক্যগুলো দুইবার করে বলার কথা আছে। সুনানে তিরমিজিতে (১৯৪) আবদুল্লাহ বিন যায়েদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আজান ও ইকামত ছিলো জোড়া জোড়া শব্দে। অনুবাদক। বর্তমানে দুনিয়ার কোথাও কেউই তারজি করে না। আমাদের আজান এভাবে:
اللهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ.
১৩৩. হানাফিদের মতে আযানে যতগুলো শব্দ ইকামতেও ততগুলো শব্দ। তবে ইকামতে (حَى عَلَى الْفَلَاحِ) (হাইয়া আলাল ফালাহ) বলার পর অতিরিক্ত দুইবার (قَدْ قَامَتِ الصَّلَوةُ) (কাদকা মাতিস সালাহ) বলবে। এভাবেই আসমান থেকে আজান নিয়ে অবতরণকারী ফেরেশতা ইকামত দিয়েছিলেন। উক্ত হাদিসটি প্রসিদ্ধ। (হেদায়া: ১/৮৭) সুনানে তিরমিজিতে (১৯৪) আবদুল্লাহ বিন যায়েদ রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আজান ও ইকামত ছিল জোড়া জোড়া শব্দে।- অনুবাদক। আজান এভাবে দিবে:
ইকামত এভাবে দিবে:
اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الصَّلَاةِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، حَيَّ عَلَى الْفَلَاحِ، قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ ، قَدْ قَامَتِ الصَّلَاةُ ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ.
১৩৪. ফিকহে হানাফির দৃষ্টিতে সুন্নাতে মুয়াক্কাদা।
১৩৫. হানাফিদের মতে কোন নামাজের আজান ওয়াক্তের আগে দেয়া যাবে না, এমনকি ফজরের আজান ও ওয়াক্তের আগে দেয়া যাবে না; দিলে শুদ্ধ হবে না। ওয়াক্ত আসার পর আবার আজান দিতে হবে। রাসুল সা. বিলাল রাদি. কে বলেছেন, ফজর প্রশস্তভাবে প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত তুমি আজান দিবে না। (হেদায়া: ১/৯১-৯২)