📄 মসজিদে যেসব দুআ পড়বে
মসজিদে বেশি বেশি জিকির করা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার পড়া এবং বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা মুস্তাহাব। হাদিস ও ইলমে ফিকহসহ শরিয়তের সকল ইলম বিষয়ক আলোচনা করাও মুস্তাহাব। আল্লাহ তাআলা বলেন-
فِي بُيُوتٍ أَذِنَ اللهُ أَنْ تُرْفَعَ وَيُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ يُسَبِّحُ لَهُ فِيهَا بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ رِجَالٌ لَا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَنْ ذِكْرِ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ.
অর্থ: মহান আল্লাহ তাআলা যেসব ঘরকে মর্যাদা দিতে এবং যাতে তাঁর নাম স্মরণ করতে আদেশ করেছেন। তাতে সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর তাসবিহ পাঠ করে সেসব লোক, যাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বেচাকেনা আল্লাহ তাআলার স্মরণ থেকে এবং নামাজ কায়েম ও জাকাত আদায় থেকে গাফেল করে না। ১১৯
আল্লাহ তাআলা অন্যত্র ইরশাদ করেন-
وَمَنْ يُعَظِّمْ حُرُمَاتِ اللَّهِ، فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ عِنْدَ رَبِّهِ.
অর্থ: আল্লাহ যে সব জিনিসকে মর্যাদা দিয়েছেন, যে ব্যক্তি তা রক্ষা করবে, সুতরাং এটা তার প্রতিপালকের কাছে তার জন্য কল্যাণকর হবে। ১২০
وَمَنْ يُعَظِّمْ شَعَائِرَ اللَّهِ، فَإِنَّهَا مِنْ تَقْوَى الْقُلُوبِ.
অর্থ: আল্লাহ যে সব জিনিসকে নিদর্শন বানিয়েছেন, যে ব্যক্তি তা সংরক্ষণ করবে, সুতরাং এটা তার জন্য অন্তরের তাকওয়ার পরিচায়ক। ১২১
(৭৪) হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِنَّمَا بُنِيَتِ الْمَسَاجِدُ لِمَا بُنِيَتْ لَهُ.
অর্থ: নিশ্চয় মসজিদগুলোকে যে জন্য বানানো হয়ে এখানে তাই করতে হবে। ১২২
(৭৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ গ্রাম্যলোককে বলেছিলেন যে মসজিদের মধ্যে পেশাব করেছিলো-
إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا الْبَوْلِ وَلَا الْقَدْرِ، إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ.
অর্থ: নিশ্চয় এই মসজিদগুলো পেশাব-পায়খানা ও ময়লা-আবর্জনার স্থান নয়। এগুলো আল্লাহর জিকির, নামাজ ও কুরআন তিলাওয়াতের জন্য নির্মিত। ১২৩
টিকাঃ
১১৯. সুরা নূর: ৩৬।
১২০ সুরা হজ্জ, আয়াত: ৩০।
১২১ সুরা হজ্জ, আয়াত: ৩২।
১২২. সহিহ মুসলিম: ৫৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭৬৫, আমালুল ইয়াউম: ১৭৪, ১৭৫, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউম: ১৫০, ইবনুস সুন্নি।
১২৩. সহিহ বুখারি: ২১৯, সহিহ মুসলিম: ২৮৫।
📄 মসজিদে অবস্থানকারীর করণীয়
মসজিদে ইতেকাফের নিয়তে অবস্থান করবে। যদিও তা অল্প সময় হোক না কেন। এমনকি মসজিদে কেবল গমন করেই চলে আসে, অবস্থান নাও করে তার জন্যও ইতিকাফের নিয়ত করা চাই। যাতে ইতেকাফের ফজিলত লাভ হয়ে যায়। তবে উত্তম হল কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর বের হওয়া।
মসজিদে অবস্থানকারী ভালো কাজের আদেশ করবে। মন্দ কাজ থেকে বাধা দেবে। অবশ্য এই কাজ মসজিদ ও মসজিদের বাইরে সব জায়গায় করা চাই। তবে মসজিদে বিশেষভাবে বলা হয়েছে মসজিদের সম্মান মর্যাদা এবং মসজিদ সবচেয়ে উত্তম জায়গা হিসেবে। কেউ কেউ বলেন, যদি মসজিদে প্রবেশের পর কোন কারণে যেমন হদসের বা অন্য কোন কাজে মগ্ন হওয়ার কারণে তাহিয়্যাতুল মসজিদ (মসজিদের প্রবেশের পর দুই রাকাত নামাজ) পড়তে না পারে তাহলে এ দুআটি চারবার পড়া মুস্তাহাব-
سُبْحَانَ اللهِ ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَإِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহ, ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করি, সকল প্রশংসা তারই। আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। আর আল্লাহ মহান।
📄 মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা ও ক্রয় বিক্রয় নিষেধ
(৭৬) মুসলিম শরিফে আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ سَمِعَ رَجُلًا يَنْشُدُ ضَالَّةً فِي الْمَسْجِدِ فَلْيَقُلْ لَا رَدَّهَا اللَّهُ عَلَيْكَ، فَإِنَّ الْمَسَاجِدَ لَمْ تُبْنَ لِهَذَا.
অর্থ: যে ব্যক্তি মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দিতে শুনে সে যেন বলে:
উচ্চারণ: লা রাদ্দাহাল্লাহু আলাইক।
لَا رَدَّهَا اللهُ عَلَيْكَ
অর্থ: আল্লাহ তোমার হারানো বস্তু তোমার কাছে যেন ফিরিয়ে না দেন। কেননা মসজিদগুলোকে এসব কাজের জন্য বানানো হয়নি। ১২৪
(৭৭) মুসলিম শরিফে হজরত বুরাইদা রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَجُلًا نَشَدَ فِي الْمَسْجِدِ، فَقَالَ : مَنْ دَعَا إِلَى الْجَمَلِ الْأَحْمَرِ ؟ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : لَا وَجَدْتَ إِنَّمَا بُنِيَتِ الْمَسَاجِدُ لِمَا بُنِيَتْ لَهُ.
অর্থ: এক ব্যক্তি মসজিদে হারানো বস্তুর ঘোষণা দিল। বলল, আমার লাল উট হারানো গিয়েছে। কেউ পেয়ে থাকলে দয়া করে আমার কাছে পৌঁছে দেবেন। তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি উট পাবে না। নিশ্চয় মসজিদগুলোকে যে জন্য বানানো হয়ে এখানে তাই করতে হবে। ১২৫
(৭৮) তিরমিজি শরিফে আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَبِيعُ، أَوْ يَبْتَاعُ فِي الْمَسْجِدِ فَقُوْلُوا : لَا أَرْبَحَ اللَّهُ تِجَارَتَكَ. وَإِذَا رَأَيْتُمْ مَنْ يَنْشُدُ فِيْهِ ضَالَّةً فَقُوْلُوا : لَا رَدَّ اللَّهُ عَلَيْكَ.
অর্থ: যদি মসজিদে কাউকে ক্রয়-বিক্রয় করতে দেখো, তাহলে তাকে বলে দিও- আল্লাহ যেন তোমার ব্যবসায় লাভ না দেন। অনুরূপভাবে কেউ যদি হারানো বস্তুর ঘোষণা দেয়, তাকে বলে দিও- আল্লাহ যেন তোমার হারানো বস্তু ফিরিয়ে না দেন। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান পর্যায়ের। ১২৬
টিকাঃ
১২৪. সহিহ মুসলিম: ৫৬৮, সুনানে আবু দাউদ: ৪৭৩, সুনানে তিরমিজি: ১৩২১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৭৬৭।
১২৫. সহিহ মুসলিম: ৫৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৭৬৫।
১২৬. সুনানে তিরমিজি: ১৩২১, ইবনুস সুন্নি: ১৫৪।
📄 মসজিদে অনৈসলামিক কবিতা, গান ইত্যাদি বলা যাবে না
(৭৯) সাওবান রাদি.-এর সূত্রে ইবনুস সুন্নি তার কিতাবে বর্ণনা করেন-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ رَأَيْتُمُوهُ يَنْشُدُ شِعْرًا فِي الْمَسْجِدِ فَقُوْلُوْا لَهُ: فَضَّ اللَّهُ فَاكَ ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যদি তোমরা কাউকে মসজিদে অনৈসলামিক কবিতা আবৃত্তি করতে দেখো তাকে তিনবার বলে দিও:
ফَضَّ اللهُ فَاكَ.
উচ্চারণ: ফাযযাল্লাহু ফাকা।
অর্থ: আল্লাহ তোমার মুখ ভেঙ্গে দিন। ১২৭
টিকাঃ
১২৭. ইবনুস সুন্নি: ১৫৩।