📄 অঙ্গসমূহ ধোয়ার সময়ের দুআ
অজুর অঙ্গসমূহ ধোয়ার সময়ের কোন দুআ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আসেনি। তবে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, সালাফে সালেহিন থেকে কিছু দুআ এসেছে, যেগুলো পড়া মুস্তাহাব। উক্ত দুআসমূহে কমবেশি আছে।১০৮ তবে তাদের দুআসমূহের সারাংশ হল-
(১) বিসমিল্লাহ বলার পরে পড়বে-
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي جَعَلَ الْمَاءَ طَهُورًا.
উচ্চারণ: আলহামদু লিল্লাহিল্লাযি জাআলাল মাআ তাহুরা।
অর্থ: সমস্ত প্রশংসা ঐ আল্লাহর, যিনি পানিকে পবিত্র করেছেন।
(২) কুলি করার সময় পড়বে -
اللَّهُمَّ اسْقِنِي مِنْ حَوْضِ نَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ كَأْسًا لَا أَظْمَأُ بَعْدَ هَا أَبَدًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাসকিনি মিন হাউযি নাবিয়্যিকা মুহাম্মাদ, কাসান লা আযমাউ বা'দাহা আবাদান।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আপনার নবির হাউজ থেকে পেয়ালা পান করাবেন, যাতে এর পরে কখনো তৃষ্ণার্থ না হই।
(৩) নাকে পানি দেয়ার সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ لَا تَحْرِمْنِي رَائِحَةَ نَعِيمِكَ وَجَنَّاتِكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা তাহরিমনি রা-ইহাতা নাঈমিকা ওয়া জান্নাতিকা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে আপনার নেয়ামতরাজি ও জান্নাতের সুগন্ধি থেকে বঞ্চিত করবেন না।
(৪) মুখ ধোয়ার সময় পড়বে -
اللَّهُمَّ بَيِّضُ وَجْهِي يَوْمَ تَبْيَضُ وُجُوهُ وَتَسْوَدُّ وُجُوهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা বাইয়িদ ওয়াজহি ইয়াউমা তাবয়াদ্দু উজুহন, ওয়া তাসওয়াদ্দু উজুহুন।
অর্থ: হে আল্লাহ, সেদিন আমার মুখ উজ্জ্বল করুন, যেদিন কোন কোন মুখ উজ্জ্বল হবে, আর কোন কোন মুখ হবে কালো।
(৫) দুই হাত ধোয়ার সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ أَعْطِنِي كِتَابِي بِيَمِينِي، اللَّهُمَّ لَا تُعْطِنِي كِتَابِي بِشِمَالِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা আ'তি কিতাবি বিয়ামিনি লা তু'তি কিতাবি বিশিমালি।
অর্থ: হে আল্লাহ, কেয়ামতের দিন আমার আমলনামা ডান হাতে দান করুন। হে আল্লাহ, বাম হাতে আমলনামা দিয়েন না।
(৬) মাথা মাসাহের সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ حَرَّمْ شَعْرِي وَبَشَرِي عَلَى النَّارِ، وَأَظِلَّنِي تَحْتَ ظِلَّ عَرْشِكَ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّكَ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা হাররিম শা'রি ওয়া বাশারি আলান নারি, ওয়া আযিললিনি তাহতা যিল্লা আরশিকা ইয়াউমা লা যিল্লা ইল্লা যিলুকা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার চুল-চামড়া জাহান্নামের ওপর হারাম করে দিন। আর আমাকে আপনার আরশের নিচে ছায়া দিন, যেদিন আপনার ছায়া ছাড়া আর কোন ছায়া থাকবে না।
(৭) কান মাসাহ করার সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ الَّذِينَ يَسْتَمِعُوْنَ القَوْلَ فَيَتَّبِعُوْنَ أَحْسَنَهُ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজ আলনি মিনাল্লাযিনা ইয়াসতামিউনাল কাওলা ফাইয়াত্তাবিঊনা আহসানাহ।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে সেসব লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা মনোনিবেশ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর উত্তমটার অনুসরণ করে।
(৮) দুই পা ধোয়ার সময় পড়বে-
اللَّهُمَّ ثَبِّتْ قَدَمِي عَلَى الصَّرَاطِ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাব্বিত কাদামি আলাস সিরাত।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমাকে সিরাতে মুসতাকিমের ওপর অবিচল রাখুন।
(৬৬) ইমাম নাসাঈ ও ইবনুস সুন্নি তাদের কিতাবে আবু মুসা আশআরি রাদি.-এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন-
أَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِوَضُوْءٍ، فَتَوَضَّأَ، فَسَمِعْتُهُ يَدْعُوْ وَيَقُوْلُ: "اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَوَسِّعْ لِي فِي دَارِي، وَبَارِكْ لِي فِي رِزْقِ، فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ, سَمِعْتُكَ تَدْعُوْ بِكَذَا وَكَذَا، قَالَ: "وَهَلْ تَرَكْنَ مِنْ شَيْءٍ؟
অর্থ: আমি অজুর পানি নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এলাম। অতঃপর তিনি অজু করলেন, তখন আমি তাঁকে এই দুআ পড়তে শুনলাম-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَوَسِّعْ لِي فِي دَارِي، وَبَارِكْ لِي فِي رِزْقِي.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি যামবি, ওয়া ওয়াসসি' লি ফি দারি ওয়া বারিক লি ফি রিযকি।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার পাপ মার্জন করে দাও, আমার ঘরে প্রশস্ততা দাও এবং আমার রিযিকে বরকত দাও।
আমি বললাম, হে আল্লাহর নবি, আমি আপনাকে এমনটি বলতে শুনলাম? তিনি উত্তর দিলেন, আর কি কিছু রয়ে গেল? ১০৯
টিকাঃ
১০৮. আমাদের ফিকহে দুআগুলো একটু ভিন্নভাবে রয়েছে। দেখুন, নুরুল ইজা কিতাবে। উবায়দুল্লাহ
১০৯. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৮০, নাসাঈ, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৮, ইবনুস সুন্নি।
📄 গোসল করার সময়ের দুআ
গোসলকারী ব্যক্তির জন্য অজুকারীর ন্যায় বিসমিল্লাহ ইত্যাদি পাঠ করা মুস্তাহাব। এক্ষেত্রে ফরজ গোসলকারী ও ঋতুবতী এবং অন্যদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।
কারো কারো মতে, ফরজ গোসলকারী ও ঋতুবতী হলে বিসমিল্লাহ পড়বে না। তবে প্রসিদ্ধ মত হল, অন্যদের মতো এদেরও বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। তবে এর দ্বারা তারা কুরআন তিলাওয়াত উদ্দেশ্য নিতে পারবে না।
📄 তায়াম্মুমের সময় যে দুআ পড়বে
তায়াম্মুমের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা মুস্তাহাব। ফরজ গোসলকারী ও ঋতুবতী মহিলাদের জন্যও। যেমনটি গোসলের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে।
তবে কালিমায়ে শাহাদত ও অজুর অন্যান্য দুআ এবং চেহারা ও হাত মাসাহের সময়ে দুআর বিষয়ে কোন উলামায়ে কেরামের বক্তব্য পাইনি। তবে স্বাভাবিক বিষয় হল- এগুলো অজুর মতো তায়াম্মুমেও পড়া। কারণ, তায়াম্মুমও অজুর মতো পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম।
📄 মসজিদে গমনের সময় যে দুআ পড়বে
পূর্বে ঘর থেকে যে কোন স্থানের উদ্দেশ্যে বের হওয়া সময় যে দুআ পড়বে তা উল্লেখ করা হয়েছে। যদি মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হয় তাহলে উক্ত দুআর সাথে নীচের অংশটি যুক্ত করা মুস্তাহাব-
(৬৭) মুসলিম শরিফে হজরত ইবনে আব্বাস রাদি.-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খালা মায়মুনা রাদি.-এর ঘরে রাত্রিযাপন করলেন। তিনি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ নামাজের কথা উল্লেখ করতে গিয়ে বলেন, যখন মুআজ্জিন ফজরের আজান দিতেন, তখন তিনি নামাজের জন্য বের হতেন এবং এ দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُوْرًا، وَفِي لِسَانِي نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِي سَمْعِي نُوْرًا، وَاجْعَلْ فِي بَصَرِي نُوْرًا، وَاجْعَلْ مِنْ خَلْفِي نُوْرًا، وَمِنْ أَمَامِي نُوْرًا، وَاجْعَلْ مِنْ فَوْقِي نُوْرًا، وَمِنْ تَحْتِي نُوْرًا، اللَّهُمَّ أَعْطِنِي نُوْرًا.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাজআল ফি কালবি নুরান, ওয়া ফি লিসানি নুরান, ওয়াজআল ফি সামঈ নুরান, ওয়াজআল ফি বাসারি নুরান, ওয়াজআল ফি খালফি নুরান, ওয়া মিন আমামি নুরান, ওয়াজআল ফি ফাওকি নুরান, ওয়ামিন তাহতি নুরান, আল্লাহুম্মা আ'তিনি নুরান।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমার অন্তরে, যবানে, কানে এবং চোখে নুর দাও। আমার পেছনে, সামনে, উপরে এবং নিচে নুর দাও। হে আল্লাহ, আমাকে নুর দান করো। ১১০
(৬৮) ইবনুস সুন্নির কিতাবে হজরত বিলাল রাদি. এর সূত্রে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন নামাজের জন্য বের হতেন তখন এ দুআ পড়তেন-
بِاسْمِ اللهِ، ، آمَنْتُ بِاللهِ ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ ، اللَّهُمَّ بِحَقِّ السَّائِلِينَ عَلَيْكَ، وَبِحَقِّ مَخْرَجِيْ هَذَا، فَإِنِّي لَمْ أَخْرُجْهُ أَشَرًّا وَلَا بَطَرًا وَلَا رِيَاءً وَلَا سُمْعَةً، خَرَجْتُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِكَ، وَاتَّقَاءَ سَخَطِكَ؛ أَسْأَلُكَ أَنْ تُعِيذَنِي مِنَ النَّارِ وَأَنْ تُدْخِلَنِي الْجَنَّةَ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি আমানতু বিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহি, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি আল্লাহুম্মা বিহাক্কিস-সাইলিনা আলাইকা ওয়া বিহাক্কি মাখরাজি হাযা ফাইন্নি লাম আখরুজহু আশারান, ওয়া লা বাতরান ওয়া লা রিয়াআন, ওয়া লা সুম'আতান, খরাজতু ইবতিগাআ মারযাতিকা ওয়া ইত্তিকাইকা সাখাতিকা, আসআলুকা আন তুঈযানি মিনান-নারি ওয়া তুদখুলানিল জান্নাতা।
অর্থ: আল্লাহর নামে রওনা করলাম, ঈমান আনলাম আল্লাহর ওপর এবং তার ওপরই ভরসা করলাম। আল্লাহ ছাড়া নেক কাজ করা বা খারাপ কাজ থেকে বাঁচার কোন শক্তি নেই। হে আল্লাহ, আপনার কাছে সুওয়ালকারী ব্যক্তিদের এবং আমার এই বহির্গমনের ওসিলায় কামনা করছি। আমি উৎফুল্লতা, অহমিকা, লৌকিকতা ও সুখ্যাতির জন্য বের হইনি, বের হয়েছি কেবল আপনার সন্তুষ্টি অর্জন এবং অসন্তুষ্টি থেকে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে।
আমি আপনার কাছে মিনতি করছি যেন, আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করান। ১১১
হাদিসটি দুর্বল। এতে ওয়াজি বিন নাফে উকাইলি নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে, সে দুর্বল ও মুনকারুল হাদিস হওয়ার ব্যাপারে উলামায়ে কেরাম একমত।
টিকাঃ
১১০. সহিহ মুসলিম: ৭৬৩, সহিহ বুখারি: ৬৩১৬, সুনানে আবু দাউদ: ১৩৫৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৪১৯, সুনানে নাসাঈ ২/২১৮।
১১১. ইবনুস সুন্নি: ৮৪।