📄 সঙ্গীর গায়ে নতুন কাপড় দেখলে যে দুআ পড়বে
(৩৭) হজরত উম্মে খালেদ বিনতে খালেদ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
أُتِيَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِثِيَابٍ فِيْهَا خَمِيصَةُ سَوْدَاءُ، قَالَ: مَنْ تَرَوْنَ نَكْسُوْهَا هَذِهِ الْخَمِيْصَةَ فَأُسْكِتَ القَوْمُ، قَالَ: ائْتُونِي بِأُمَّ خَالِدٍ فَأُتِيَ بِي النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَلْبَسَنِيهَا بِيَدِهِ، وَقَالَ: أَبْلِي وَأَخْلِقِي مَرَّتَيْنِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য কিছু কাপড় হাদিয়া এলো। এর মধ্যে কারুকাজ করা একটি কালো চাদর ছিলো। তিনি বললেন, আমরা এ পোশাকটি কাকে পরিধান করাবো তোমরা বলোতো দেখি? উপস্থিত সবাই চুপ রইলেন। তখন প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা উম্মে খালেদকে আমার কাছে নিয়ে এসো।
অতঃপর আমাকে নবিজির কাছে নিয়ে যাওয়া হল। তখন তিনি সেটা নিজ হাতে আমাকে পরিধান করিয়ে দিলেন। এবং বললেন, এটা পুরাতন করো এবং দীর্ঘদিন পরিধান করো? কথাটি দুবার বললেন। ৭০
(৩৮) হজরত ইবনে উমর রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: رَأَى عَلَى عُمَرَ قَمِيصًا أَبْيَضَ فَقَالَ: ثَوْبُكَ هَذَا غَسِيْلُ أَمْ جَدِيدٌ؟ قَالَ: لَا ، بَلْ غَسِيْلُ. قَالَ: الْبَسْ جَدِيدًا، وَعِشْ حَمِيدًا، وَمُتْ شَهِيدًا وَسَعِيدًا.
অর্থ: নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমর রাদি.-এর গায়ে একটি কাপড় দেখে বললেন, এটি কি ধোয়া না কি নতুন? উত্তরে তিনি বললেন, ধোয়া। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, 'নতুন কাপড় পরিধান করো, সুখময় জীবনযাপন করো। শহিদি ও সৌভাগ্যের মৃত্যুবরণ করো। ৭১
টিকাঃ
৭০. সহিহ বুখারি: ৫৮২৩।
৭১. সুনানে ইবনু মাজাহঃ ৩৫৫৮, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৬৯, ইবনুস সুন্নি, মুসনাদে আহমাদ ২/৮৯, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৩১১, নাসাঈ।
📄 জামা-জুতা পরিধান ও খোলার পদ্ধতি
কাপড়, জুতা, পাজামা ইত্যাদি পরিধান করার মুস্তাহাব পদ্ধতি হল, জামায় ডান হাত আর পাজামা ডান পা দিয়ে পরিধান করা। খোলার সময় প্রথমে বাম এরপরে ডানদিক খোলা। অনুরূপভাবে সুরমা, মিসওয়াক, নখ কাটা, বগলের চুল ছাঁটা, মাথা মুণ্ডানো, মসজিদে প্রবেশ করা, বাথরুম থেকে বের হওয়া, অজু, গোসল, পানাহার, মুসাফাহা, হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা, কুলুখ ব্যবহার করা ইত্যাদি কাজ ডান দিক দিয়ে শুরু করবে। আর শেষ করবে, বের হবে বা খুলবে বামদিক দিয়ে।
(৩৯) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُحِبُّ التَّيَمُّنَ مَا اسْتَطَاعَ فِي شَأْنِهِ كُلِّهِ، فِي طُهُوْرِهِ وَتَرَجُلِهِ وَتَنَعُلِهِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব কাজে ডান দিককে প্রাধান্য দেয়াকে পছন্দ করতেন। এমনকি পবিত্রতা অর্জন, সিঁথি কাটা, ও জুতা পরিধান করার সময়ও ডানদিককে প্রাধান্য দিতেন। ৭২
(৪০) হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كَانَتْ يَدُ رَسُوْلِ اللهِ ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْيُمْنَى لِطُهُوْرِهِ وَطَعَامِهِ، وَكَانَتْ يَدُهُ الْيُسْرَى لِخَلَائِهِ، وَمَا كَانَ مِنْ أَذًى.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পবিত্রতা ও আহারের ক্ষেত্রে ডান হাত ব্যবহার করতেন। আর শৌচকার্য ও প্রত্যেক কষ্টদায়ক কাজের ক্ষেত্রে বামহাত ব্যবহার করতেন। ৭৩
(৪১) সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে বায়হাকিতে হজরত হাফসা রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَجْعَلُ يَمِينَهُ لِطَعَامِهِ وَشَرَابِهِ وَثِيَابِهِ، وَيَجْعَلُ شِمَالَهُ لِمَا سِوَى ذَلِكَ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পানাহার ও পরিধান করার ক্ষেত্রে তাঁর ডানহাত ব্যবহার করতেন। আর অন্যান্য কাজে বামহাত ব্যবহার করতেন। ৭৪
(৪২) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
إِذَا لَبِسْتُمْ وَإِذَا تَوَضَّأْتُمْ فَابْدَءُوا بِأَيَامِنِكُمْ.
অর্থ: যখন তোমরা পোশাক পরিধান করো ও অজু করো তখন তোমরা ডান দিক থেকে শুরু করো। ৭৫
এ অধ্যায়ে এ ছাড়াও আরো অনেক হাদিস আছে। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।
টিকাঃ
৭২. সহিহ বুখারি: ৪২৬; সহিহ মুসলিম: ২৬৮।
৭৩. সুনানে আবু দাউদ: ৩২; সুনানে বায়হাকি ১/১১৩।
৭৪. সুনানে আবু দাউদ: ৪১৪১; সুনানে তিরমিজি: ১৭৬৬; সুনানে বায়হাকি ১/৮৬।
৭৫. সুনানে আবু দাউদ: ৩৩।
📄 গোসল, ঘুম ইত্যাদির জন্য কাপড় খোলার সময় যে দুআ পড়বে
আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ গ্রন্থে হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
سَتْرُ مَا بَيْنَ أَعْيُنِ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِي آدَمَ أَنْ يَقُوْلَ الرَّجُلُ الْمُسْلِمُ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَطْرَحَ ثِيَابَهُ: بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ.
অর্থ: বনি আদমের সতর ও জিনদের দৃষ্টি মাঝে অন্তরায় হল যখন মুসলমান ব্যক্তি কাপড় খোলার ইচ্ছা করবে তখন এ দুআটি পড়বে-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ.
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হু। ৭৬
অর্থ: ঐ সত্ত্বার নামে শুরু করছি, যিনি ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই।
টিকাঃ
৭৬. আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৭৪।
📄 ঘর থেকে বের হওয়ার দুআ
(৪৪) হজরত উম্মে সালামা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
مَا خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْتِي قَطُّ إِلَّا رَفَعَ طَرْفَهُ إِلَى السَّمَاءِ فَقَالَ: اللَّهُمَّ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ ، أَوْ أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই আমার ঘর থেকে বের হতেন, তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে এই দুআ পড়তেন-
اللَّهُمَّ أَعُوْذُ بِكَ أَنْ أَضِلَّ، أَوْ أُضَلَّ، أَوْ أَزِلَّ، أَوْ أُزَلَّ، أَوْ أَظْلِمَ، أَوْ أُظْلَمَ، أَوْ أَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيَّ.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা আন আদিল্লা আউ উদাল্লা আউ আযিল্লা আউ উযাল্লা আউ আযলিমা আউ উযলামা আউ আজহালা আউ ইয়ুজহালা আলাইয়্যা।
অর্থ: হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট পথভ্রষ্ট হওয়া বা পথভ্রষ্ট করা, গুনাহ করা বা গুনাহের দিকে ধাবিত করা, যুলুম করা বা যুলুমের শিকার হওয়া, অজ্ঞতা প্রকাশ করা বা অজ্ঞত প্রকাশের পাত্র হওয়া থেকে আশ্রয় চাইছি।- ইমাম তিরমিজি রহ. হাদিসটিকে 'হাসান সহিহ' বলেছেন। সুনানে তিরমিজির আরেক বর্ণনায় বহুবচনের শব্দ যোগে আছে। ৭৭
نَعُوْذُ بِكَ مِنْ أَنْ نَزِلَّ، أَوْ نَضِلَّ، أَوْ نَظْلِمَ، أَوْ نُظْلَمَ، أَوْ نَجْهَلَ، أَوْ يُجْهَلَ عَلَيْنَا.
(৪৫) হজরত আনাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا خَرَجَ الرَّجُلُ مِنْ بَيْتِهِ، فَقَالَ: بِاسْمِ اللهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ قَالَ: يُقَالُ حِينَئِذٍ : هُدِيْتَ وَكُفِيْتَ وَوُقِيْتَ، فَتَتَنَكَّى لَهُ الشَّيَاطِينُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি ঘর থেকে বের হওয়ার সময় এ দুআটি পড়ে-
بِاسْمِ اللهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللَّهِ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ .
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহি তাওয়াক্কালতু আলাল্লাহ, লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি, আল্লাহর ওপর ভরসা করছি। আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তখন তাকে বলা হয়, 'তোমাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, যথেষ্ট করা হয়েছে এবং হেফাজত করা হয়েছে।' এ ঘোষণা শোনে শয়তান তার থেকে দূরে সরে যায়।
ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। সুনানে আবু দাউদের বর্ণনায় আছে-
فَيَقُولُ: يَعْنِي الشَّيْطَانُ لِشَيْطَانٍ آخَرَ : كَيْفَ لَكَ بِرَجُلٍ قَدْ هُدِيَ وكُفِيَ وَوَقِي؟
অর্থ: এক শয়তান আরেক শয়তানকে বলে, যাকে হেদায়েত দেয়া হয়েছে, নিরাপত্তা দান করা হয়েছে ও হেফাজত করা হয়েছে, তার ওপর তুমি কিভাবে আধিপত্য বিস্তার করবে? ৭৮
(৪৬) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَرَجَ مِنْ بَيْتِهِ قَالَ: بِسْمِ اللَّهِ، ، التَّكْلَانُ على الله، ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ .
অর্থ: প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন ঘর হতে বের হতেন তখন এ দুআটি পড়তেন-
بِسْمِ اللهِ ، التَّكْلَانُ عَلَى اللهِ ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ .
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহ, আত্মকলানু আলাল্লাহ, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি, ভরসা আল্লাহর ওপর। আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই। ৭৯
টিকাঃ
৭৭. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯৪; সুনানে তিরমিজি: ৩৪২৭; সুনানে নাসাঈ: ২৬৮; সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩৮৮, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৮৫, নাসাঈ।
৭৮. সুনানে আবু দাউদ: ৫০৯৫; সুনানে তিরমিজি: ৩৪২৬; সুনানে নাসাঈ: ৯৮৩৭।
৭৯. সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৮৫; আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ১৭৬, ইবনুস সুন্নি।