📄 নির্দিষ্ট সময়ে জিকির ছুটে গেলে করণীয়
যার রাতদিনের কোন সময়ে অযিফা পাঠের আমল আছে অথবা নামাজের পর, কিংবা অন্যান্য সময় অযিফা পাঠের আমল আছে যদি কোন কারণে তা ছুটে যায়, তাহলে সুযোগ হওয়া মাত্রই তা পাঠ করে নেবে এ ব্যাপারে কোন অলসতা করবে না। কারণ, এব্যাপারে যত্নবান হলে সামনে আর ছুটবে না। আর যদি অলসতা করা হয় তাহলে সামনেও ছুটে যাবে।
সহিহ মুসলিমে হজরত উমর বিন খাত্তাব রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ نَامَ عَنْ حِزْبِهِ، أَوْ عَنْ شَيْءٍ مِنْهُ، فَقَرَأَهُ فِيمَا بَيْنَ صَلَاةِ الْفَجْرِ، وَصَلَاةِ الظُّهْرِ، كُتِبَ لَهُ كَأَنَّمَا قَرَأَهُ مِنَ اللَّيْلِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি তার রাতের অযিফা (তথা কুরআনের নির্দিষ্ট অংশ) অথবা অন্যান্য অযিফা পড়তে ভুলে যায়, এরপর সে এটা ফজর ও যুহরের মাঝামাঝি সময়ে পড়ে নেয়, তাহলে সে যেন তা রাতেই পড়েছে। ২৬
টিকাঃ
২৬. সহিহ মুসলিম: ৭৪৭, সুনানে আবু দাউদ: ১৩১৩, সুনানে তিরমিজি: ৫৮১, মুয়াত্তা মালেক ১/২০০, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৪৩।
📄 কোন কারণে জিকির বন্ধ করে পুনরায় শুরু করা যাবে
জিকিরের সময় যেসব অবস্থার সম্মুখীন হলে জিকির বন্ধ করে দেয়া চাই এবং অবস্থা চলে গেলে আবার জিকির শুরু করবে। অবস্থাগুলো নিম্নরূপ:
১. সালাম দিলে সালামের জবাব দিয়ে পরে আবার জিকির করবে।
২. জিকিরকারীর পাশে কেউ হাঁচি দিয়ে আলহামদুলিল্লাহ বললে, তার জবাব দিয়ে পরে আবার জিকির করবে।
৩. খতিব সাহেবের খুতবা শুনলে জিকির বন্ধ করবে, পরে আবার জিকির করবে।
৪. মুআজ্জিনের আজান শুনলে তার সাথে সাথে আজান ইকামতের জবাব দিবে।
৫. কোন নিষিদ্ধ কাজ হতে দেখলে, তা দূর করতে জিকির বন্ধ করবে। অনুরূপভাবে ভালো কাজের সুযোগ এলে। কাউকে উপদেশ দেয়ার সুযোগ এলে। কারো নসিহত কোনার ব্যবস্থা হলে তা করবে। এরপর যিকিরে মাশগুল হবে।
৬. তন্দ্রাভাব বা এজাতীয় কিছু হলে জিকির বন্ধ করে দিবে ইত্যাদি।
📄 অদ্ভুত নিজের কানে জিকিরের আওয়াজ শুনতে হবে
শরিয়ত অনুমোদিত যে কোনো জিকির-নামাজের ভেতরে, বাইরে; ওয়াজিব, মুস্তাহাব-সকল জিকির তখনই জিকির বলে গণ্য হবে যখন ব্যক্তি নিজের কানে শুনতে পাবে, যদি তার শ্রবণশক্তি সুস্থ থাকে এবং কোন কিছু অন্তরায় সৃষ্টি না করে। এরচে কম আওয়াজে হলে সেটি জিকির বলে গণ্য হবে না।
📄 দৈনন্দিনের আমলের কিতাব ও বক্ষ্যমাণ কিতাবের উৎসসমূহ
দিবা-রাত্রীর আমল সংক্রান্ত অনেক মূল্যবান কিতাব আমাদের পূর্বসূরীরা লিখে গেছেন। সেগুলোতে তারা মুত্তাসিল (অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত) হাদিস বর্ণনা করেছেন। এমনকি একটি হাদিস অনেক সনদে বর্ণনা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হল ইমাম নাসাঈ রহ. এর عَمَلُ الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাতি)।
তবে এর চেয়ে সুন্দর, মূল্যবান ও উপকারী কিতাব হল, ইবনুস সুন্নি রহ. এর عَمَلُ الْيَوْمِ وَاللَّيْلَةِ (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাতি)।
ইমাম নববি বলেন, আমি ইবনুস সুন্নি রহ. এর পুরো কিতাবটি পড়েছি শায়খ আবুল বাকা' খালেদ রহ. এর কাছে। তিনি পড়েছেন আল্লামা আবুল ইয়ুমন হাসান আল কিন্দি রহ. এর কাছে। তিনি পড়েছেন ইমাম আবুল হাসান সাদ আনসারি রহ. এর কাছে। তিনি পড়েছেন ইমাম আবু মুহাম্মদ আবদুর রহমান দাওনি রহ. এর কাছে। তিনি পড়েছেন কাজি আবু নাছর দিনাওরি রহ. এর কাছে। তিনি পড়েছেন স্বয়ং লেখক শায়খ আবু বকর আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন ইসহাক আস সুন্নি রহ. এর কাছে।
আমি এখানে এই সনদটি উল্লেখ করেছি। কারণ, আমি ইবনুস সুন্নির কিতাব থেকে অনেক কিছুই নকল করব। তাই আমি কিতাবের শুরুতেই সনদটি উল্লেখ করেছি। এ পদ্ধতিটি মুহাদ্দিসিনে কেরামের নিকট স্বীকৃত। এখানে বিশেষভাবে এ কিতাবের সনদ উল্লেখ করার কারণ হল, ইবনুস সুন্নির কিতাবটি উক্ত বিষয়ে সবচেয়ে সন্নিবেশিত। অন্যথায় এ কিতাবে যা কিছুই আমি উল্লেখ করব সবকিছুই সহিহ সনদের মধ্যমে ধারাবাহিকভাবে আমি শুনেছি, আলহামদুলিল্লাহ। তবে কিছু বিরল ও দুর্লভ বিষয় আছে যেগুলো আমি ধারাবাহিক সনদে শুনিনি।
এই কিতাবে আমি ইসলামের মৌলিক পাঁচ কিতাব- সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি এবং সুনানে নাসাঈ থেকে নকল করব।
এছাড়াও মুসনাদ ও সুনানের কিতাবাদি থেকে হাদিস বর্ণনা করব, যেমন- মুয়াত্তা মালিক, মুসনাদে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল ও মুসনাদে আবু আওয়ানা, সুনানে ইবনে মাজাহ, দারাকুতনি, বায়হাকি ইত্যাদি প্রসিদ্ধ কিতাবসমূহ। তা ছাড়া জুয (হাদিসের বিষয়ভিত্তিক গ্রন্থ) থেকেও হাদিস বর্ণনা করব যা পাঠক অচিরেই দেখতে পাবেন। আর এখানে যা কিছু উল্লেখ করব, তা লেখক পর্যন্ত মুত্তাসিল সনদেই বর্ণনা করব। ইনশাআল্লাহ।