📄 জিকিরকারীর हालत
জিকিরকারীকে সর্বোত্তম হালতে থাকা চাই। কিবলামুখী হয়ে বসবে; স্থির-শান্ত বিনয়াবনত ও অবনত মস্তকে বসবে। এ হালত ছাড়া ভিন্ন হালতে বসলেও মাকরুহ হবে না; জায়েজ আছে তবে কোন কারণ ছাড়া ভিন্ন হালতে বসলে অনুত্তম হবে। ভিন্ন হালত মাকরুহ না হওয়ার দলিল হল, এই আয়াত-
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ الَّذِينَ يَذْكُرُوْنَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ.
অর্থ: নিশ্চয় নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টিতে এবং দিবস-রজনীর পরিবর্তনের মধ্যে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর জিকির করে এবং আকাশ ও যমীন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে। ২৪
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَّكِيُّ فِي حِجْرِي وَأَنَا حَائِضُ، فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ.
অর্থ: আমি ঋতুবতী থাকাবস্থায়ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কোলে হেলান দিয়ে বসে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। ২৫
হজরত আয়েশা রাদি. থেকে আরো বর্ণিত আছে-
إِنِّي لَأَقْرَأُ حِزْنِي وَأَنَا مُضْطَجِعَةُ عَلَى السَّرِيرِ .
অর্থ: আমি খাটের ওপর শুয়ে আমার অযিফা পাঠ করতাম।
টিকাঃ
২৪. সুরা আলে ইমরান: ১৮৯-১৯০।
২৫. সহিহ বুখারি: ২৯৭, সহিহ মুসলিম: ৩০১, সুনানে আবু দাউদ: ২৬০, সুনানে নাসাঈ ১/১৯১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৬৩৪।
📄 জিকিরের স্থান যেমন হবে
জিকিরের স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ভেজালমুক্ত থাকা চাই। কেননা এতে জিকির ও জিকিরকৃত সত্তা মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। একারণেই মসজিদ ও সম্মানীত স্থানে জিকিরের প্রশংসা করা হয়েছে। আবু মাইসারা রহ. বলেন, পবিত্র স্থান ব্যতীত জিকির করা যাবে না।
জিকির করার সময় মুখও পরিষ্কার হওয়া চাই। কোন দুর্গন্ধ থাকলে মিসওয়াক করে নিতে হবে। আর কোন ধরনের নাপাকি থাকলে পানি দিয়ে ধুয়ে নেয়া চাই। এরপরও যদি না ধুয়ে জিকির করে, তাহলে তা মাকরুহ হবে; কিন্তু এ অবস্থায় জিকির করা হারাম হবে না। মুখে নাপাকি নিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ। হারাম হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে; তবে বিশুদ্ধ মত হল হারাম হবে না।
📄 যেসব অবস্থায় জিকির মাকরুহ
শরিয়ত কর্তৃক মাকরুহ সময় ছাড়া অন্য সবসময় জিকির করা খুবই উত্তম কাজ। সামনের আলোচনা ছাড়া এখানে কিছু মুহূর্তের কথা বলা হল। যেমন জিকির করা মাকরুহ:
* পেশাব-পায়খানা করার সময়।
* সহবাস করার সময়।
* খতিব সাহেবের খুতবা শ্রবণকারীর জন্য খুতবা চলার সময়।
* নামাজে দাঁড়ানো অবস্থায়; বরং এসময় তিলাওয়াতে মশগুল থাকবে।
* তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায়।
তবে রাস্তায় চলমান অবস্থায় এবং গোসলখানায় থাকাকালে জিকির করা মাকরুহ হবে না।
📄 জিকিরের হাকিকত
জিকিরের মূল উদ্দেশ্য হল, মনের উপস্থিতি। তাই এ উদ্দেশ্য অর্জনে সচেষ্ট থাকা চাই। যা জিকির করছে সে বিষয়ে পূর্ণ মনোযোগী হওয়া। অর্থ অনুধাবনের চেষ্টা করা। যিকিরে চিন্তা করা উদ্দিষ্ট যেমন কেরাতে চিন্তা করা উদ্দিষ্ট। কারণ, উভয়টির উদ্দেশ্য এক। এজন্য প্রণীধানযোগ্য মাজহাব হল, لَا إِلهَ إِلَّا اللهُ (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এর মধ্যকার ১ (লা) কে টেনে পড়া, কারণ, এতে চিন্তা করার বেশি সময় পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে সালাফে সালেহিন ও পরবর্তী ইমামগণের বক্তব্য প্রসিদ্ধ আছে।