📘 আল আযকার > 📄 বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা

📄 বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা


আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُSْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ.
অর্থ: নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়ী পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজাদার পুরুষ ও নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারীদের জন্য (আল্লাহ তাআলা বিশাল ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখে দিয়েছেন)। ১৮
মুসলিম শরিফে হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মক্কার জুমদান পর্বত দিয়ে হাঁটছিলেন। তখন তিনি বলেন,
سِيرُوا هَذَا جُمْدَانُ سَبَقَ الْمُفَرِّدُوْنَ قَالُوا: وَمَا الْمُفَرِّدُوْنَ؟ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ: الذَّاكِرُونَ اللهَ كَثِيرًا، وَالذَّاكِرَاتُ.
অর্থ: তোমরা এই জুমদান পর্বতে ভ্রমণ করো। মুফাররিদগণ অগ্রগামী হয়েছে। মুফাররিদ কারা? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, মুফাররিদ হল, বেশি বেশি আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ ও নারী। ১৯
আজকার জাতীয় কিতাবের লেখকের জন্য উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করা চাই। এ আয়াতের উদ্দেশ্য কী- এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
আবুল হাসান ওয়াহিদি রহ. হতে বর্ণিত ইবনে আব্বাস রাদি. বলেন, এদ্বারা উদ্দেশ্য হল, যারা নামাজের পরে জিকির করে, সকাল-বিকাল জিকির করে, বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে জিকির করে, ঘুম থেকে উঠার সময় জিকির করে, সকাল-বিকাল যখনই ঘর থেকে বের হয় তখনই জিকির করে। (এই সময়গুলোর যেসব দুআ আছে সেগুলো পড়ে।)
মুজাহিদ রহ. বলেন, ঐ সময় পর্যন্ত কোন লোক বেশি বেশি আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ ও নারী বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ না সে বসে, দাঁড়িয়ে ও শুয়ে তথা সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করবে।
আতা রহ. বলেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সমস্ত হকসহ আদায় করে, সে আল্লাহর বাণী: অধিক পরিমাণে জিকিরকারী নারী-পুরুষ- এর মধ্যে গণ্য হবে।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا أَيْقَظَ الرَّجُلُ أَهْلَهُ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّيَا، أَوْ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ جَمِيعًا، كُتِبَا فِي الذَّاكِرِينَ وَالذَّاكِرَاتِ.
অর্থ: স্বামী যদি তার স্ত্রীকে রাতে নামাজ পড়ার জন্য জাগ্রত করে এরপর উভয়ে অথবা স্বামী একা দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে তাদের উভয়ের নাম অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে লেখা হয়ে যায়।২০
শাইখ ইবনুস সালাহ রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে, কী পরিমাণ জিকির করলে বেশি বেশি জিকিরকারী হিসেবে গণ্য হবে? উত্তরে বলেছিলেন, হাদিসে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যার দুআ নিয়মিত পড়লে এবং বিভিন্ন সময় বর্ণিত দুআসমূহ পাঠ করলে সে বেশি বেশি জিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।

টিকাঃ
১৭. আল-ওয়াসিত ফি তাফসিরিল কুরআনিল মাজিদ: ১/২৩৪।
১৮. সুরা আহযাব: ৩৫।
১৯. সহিহ মুসলিম: ২৬৭৬, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৯০।
২০. সুনানে আবু দাউদ: ১৩০৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৩৫।

📘 আল আযকার > 📄 অজু না থাকা অবস্থায় জিকির করতে পারবে

📄 অজু না থাকা অবস্থায় জিকির করতে পারবে


উলামায়ে কেরام এব্যাপারে একমত যে, মুখে ও অন্তরে যে কেউ জিকির করতে পারবে। অজু-গোসল না থাকা অবস্থায় ও মহিলারা ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থায়ও জিকির করতে পারবে। এসময়ে সুবহানাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও দুরুদ পাঠ ইত্যাদি জিকির করতে পারবে। অবশ্য গোসল ফরজ, ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা নিষেধ। চাই তা অল্প হোক বা বেশি হোক। তবে তারা উচ্চারণ না করে মনে মনে পড়তে পারবে। অনুরূপভাবে কুরআনের কপিতে তাকিয়ে তাকিয়ে এবং মনে মনে আওড়ানো যাবে।
তবে গোসল ফরজ, ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থায় কুরআনের আয়াত দুআ হিসেবে পড়তে পারবে। যেমন বিপদের সম্মুখীন হলে 'ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন' পড়তে পারবে। এছাড়া কোন বাহনে আরোহণ করার সময় এ দুআ পড়তে পারবে-
سُبْحَنَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هُذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ.
[উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি সাখখারা লানা হাজা, ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিন। অর্থ: পবিত্র তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। অথচ আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না।] দুআর মধ্যে পড়তে পারবে:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
[উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার। অর্থ: হে পরওয়ারদিগার, আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।]
ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থায় তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য না করে বিসমিল্লাহ এবং আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারবে। এগুলো জিকিরের উদ্দেশ্যে বা কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই বলতে পারবে; তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে না করে যে কোন উদ্দেশ্যে বলতে পারবে, গুনাহ হবে না।
কুরআনের যেসব আয়াতের তিলাওয়াত রহিত হয়ে গেছে যেমন- الشَّيْخُ وَالشَّيْخَةُ إِذَا زَنَيَا فَارْجُمُوْهَا. [অর্থ: বিবাহিত পুরুষ এবং বিবাহিতা নারী যখন যিনা করবে, তাদেরকে পাথরঘাত করে হত্যা কর।] এগুলোও পড়তে পারবে।
যদি কাউকে বলে- خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ )কিতাবটি মজবুতের সাথে ধরো( অথবা বলে أُدْخُلُوْهَا بِسَلَامِ امِنِينَ )তাতে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে প্রবেশ করো।) বা এজাতীয় আয়াত বলে, তবে কুরআন তিলাওয়াতের ইচ্ছা না থাকে, তাহলে জায়েয আছে।
যদি পানি না থাকায় তায়াম্মুম করে, তাহলে তার জন্যও তিলাওয়াত করা বৈধ হবে। এমনকি, এরপর যদি পুনরায় সে নাপাক হয় তাহলে তার জন্য তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ হবে না। তায়াম্মুম চাই সফরে হোক বা মুকিম অবস্থায় পানি না পাওয়ার কারণে হোক, কোন পার্থক্য নেই। পুনরায় নাপাক হওয়ার পরও সে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে। কেউ কেউ বলেন, যদি মুকিম অবস্থায় হয় তাহলে উক্ত তায়াম্মুম দ্বারা নামাজের কিরাত পড়তে পারবে। কিন্তু নামাজের বাইরে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে না। তবে বিশুদ্ধ মত হল, নামাজের বাইরেও তিলাওয়াত করতে পারবে। কেননা তায়াম্মুম গোসলের স্থলাভিষিক্ত।
গোসল ফরজ হয়েছে এমন ব্যক্তি তায়াম্মুম করার পর পানি দেখতে পেলে পানি ব্যবহার করা আবশ্যক। গোসল না করা পর্যন্ত তিলাওয়াতসহ তায়াম্মুমের আগে তার ওপর যা যা হারাম ছিলো সবই হারাম হয়ে যাবে।
তায়াম্মুম করার পর যদি নামাজ ও তিলাওয়াত করে। এরপর যদি আবার অন্য কোন নাপাকের জন্য তায়াম্মুম করে, তাহলে তার ওপর তিলাওয়াত করা হারাম হবে না। এটাই বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মাজহাব। তবে হারাম হওয়ার কথাও কেউ কেউ বলেছেন। অবশ্য সেটা খুব দুর্বল।
আর যদি গোসল ফরজ হয়েছে এমন ব্যক্তি পানি বা মাটি না পায়, তাহলে ওয়াক্তের সম্মান রক্ষার্থে ঐ অবস্থায়ই নামাজ আদায় করবে। তবে নামাজের বাহিরে সে তিলাওয়াত করতে পারবে না। আর সুরা ফাতেহার চেয়ে বেশি যা পড়বে তাও হবে হারাম।
আর ফাতেহা পড়া যাবে কিনা? এ ব্যাপারে দুই ধরনের বক্তব্য বর্ণিত আছে। বিশুদ্ধ মত হল, এটা হারাম হবে না; বরং পাঠ করাই ওয়াজিব। কেননা এটা ছাড়া নামাজ আদায় হবে না। নামাজ পড়া যেহেতু প্রয়োজনের কারণে জায়েয তেমনিভাবে সুরা ফাতেহার তিলাওয়াতও জায়েয।
দ্বিতীয় মত হল, সুরা ফাতেহা তিলাওয়াত করাও হারাম হবে। তবে এক্ষেত্রে কুরআন ছাড়া অন্য কোন দুআ পড়বে। যেমন কোন ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করতেই পারে না, তার মতো।
এই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধায় এখানে এই কয়েকটি মাসয়ালা আলোচনা করা হল। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ফিকহের কিতাবাদিতে রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।

📘 আল আযকার > 📄 জিকিরকারীর हालत

📄 জিকিরকারীর हालत


জিকিরকারীকে সর্বোত্তম হালতে থাকা চাই। কিবলামুখী হয়ে বসবে; স্থির-শান্ত বিনয়াবনত ও অবনত মস্তকে বসবে। এ হালত ছাড়া ভিন্ন হালতে বসলেও মাকরুহ হবে না; জায়েজ আছে তবে কোন কারণ ছাড়া ভিন্ন হালতে বসলে অনুত্তম হবে। ভিন্ন হালত মাকরুহ না হওয়ার দলিল হল, এই আয়াত-
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ الَّذِينَ يَذْكُرُوْنَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ.
অর্থ: নিশ্চয় নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টিতে এবং দিবস-রজনীর পরিবর্তনের মধ্যে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর জিকির করে এবং আকাশ ও যমীন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে। ২৪
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَّكِيُّ فِي حِجْرِي وَأَنَا حَائِضُ، فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ.
অর্থ: আমি ঋতুবতী থাকাবস্থায়ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কোলে হেলান দিয়ে বসে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। ২৫
হজরত আয়েশা রাদি. থেকে আরো বর্ণিত আছে-
إِنِّي لَأَقْرَأُ حِزْنِي وَأَنَا مُضْطَجِعَةُ عَلَى السَّرِيرِ .
অর্থ: আমি খাটের ওপর শুয়ে আমার অযিফা পাঠ করতাম।

টিকাঃ
২৪. সুরা আলে ইমরান: ১৮৯-১৯০।
২৫. সহিহ বুখারি: ২৯৭, সহিহ মুসলিম: ৩০১, সুনানে আবু দাউদ: ২৬০, সুনানে নাসাঈ ১/১৯১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৬৩৪।

📘 আল আযকার > 📄 জিকিরের স্থান যেমন হবে

📄 জিকিরের স্থান যেমন হবে


জিকিরের স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও ভেজালমুক্ত থাকা চাই। কেননা এতে জিকির ও জিকিরকৃত সত্তা মহান আল্লাহ তাআলার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। একারণেই মসজিদ ও সম্মানীত স্থানে জিকিরের প্রশংসা করা হয়েছে। আবু মাইসারা রহ. বলেন, পবিত্র স্থান ব্যতীত জিকির করা যাবে না।
জিকির করার সময় মুখও পরিষ্কার হওয়া চাই। কোন দুর্গন্ধ থাকলে মিসওয়াক করে নিতে হবে। আর কোন ধরনের নাপাকি থাকলে পানি দিয়ে ধুয়ে নেয়া চাই। এরপরও যদি না ধুয়ে জিকির করে, তাহলে তা মাকরুহ হবে; কিন্তু এ অবস্থায় জিকির করা হারাম হবে না। মুখে নাপাকি নিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করা মাকরুহ। হারাম হওয়া না হওয়ার ব্যাপারে মতভেদ আছে; তবে বিশুদ্ধ মত হল হারাম হবে না।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন