📄 জিকিরের ফযিলত
অধ্যায়- ১
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَلَذِكْرُ اللَّهِ، أَكْبَرُ
অর্থ: নিশ্চয় আল্লাহর জিকিরই সবচেয়ে বড়। ২৭
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-
فَاذْكُرُونِي أَذْكُرْكُمْ
অর্থ: তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব। ২৮
আরো ইরশাদ হচ্ছে-
فَلَوْلَا أَنَّهُ كَانَ مِنَ الْمُسَبِّحِينَ لَلَبِثَ فِي بَطْنِهِ إِلَى يَوْمِ يُبْعَثُونَ
অর্থ: তিনি (ইউনুস আ.) যদি আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা না করতেন, তাহলে তাঁকে কিয়ামত পর্যন্ত মাছের পেটেই থাকতে হত। ২৯
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে-
يُسَبِّحُوْنَ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ لَا يَفْتُرُوْنَ
অর্থ: তারা রাতদিন আল্লাহর ইবাদত করে, কোন অলসতা করে না।৩০
(১) হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
كَلِمَتَانِ خَفِيفَتَانِ عَلَى النِّسَانِ، ثَقِيْلَتَانِ فِي الْمِيزَانِ، حَبِيْبَتَانِ إِلَى الرَّحْمَنِ: سُبْحَانَ اللهِ، وَبِحَمْدِهِ سُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيمِ.
অর্থ: দুটি কালিমা উচ্চারণে খুবই সহজ; কিন্তু মিযানের পাল্লায় অনেক ভারী। আর আল্লাহর কাছেও অত্যধিক প্রিয়। কালিমা দুটি হল- সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আযিম (আল্লাহ পাকের পবিত্রতা বর্ণনা করি তার প্রশংসার সাথে, পবিত্র তিনি মহিমান্বিত সত্ত্বা)। ৩১
উল্লেখ্য যে, এটিই বুখারি শরিফের সর্বশেষ হাদিস।
(২) হজরত আবু জর গিফারি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন-
أَلَا أُخْبِرُكَ بِأَحَبِّ الْكَلَامِ إِلَى اللهِ؟ إِنَّ أَحَبَّ الْكَلَامِ إِلَى اللَّهِ : سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ.
অর্থ: আমি কি তোমাকে আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় কালামের ব্যাপারে সংবাদ দেবো? নিশ্চয় আল্লাহর কাছে প্রিয় কালাম হল- সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি।৩২
অন্য বর্ণনায় আছে-
سُئِلَ أَيُّ الْكَلَامِ أَفْضَلُ؟ قَالَ: مَا اصْطَفَى اللهُ لِمَلَائِكَتِهِ أَوْ لِعِبَادِهِ: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ.
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করা হল, সর্বোত্তম কালাম কোনটি? উত্তরে তিনি বললেন, সর্বোত্তম কালাম হল, যা আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা ও মানুষের জন্য নির্বাচন করেছেন। তা হল- সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি।৩৩
(৩) সহিহ মুসলিমে হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
أَحَبُّ الْكَلَامِ إِلَى اللهِ أَرْبَعُ: سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ لَا يَضُرُّكَ بِأَيِّهِنَّ بَدَأْتَ.
অর্থ: আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় চারটি বাক্য হল- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার। চারটি বাক্যের যে কোনটির দ্বারা প্রথমে পড়া যেতে পারে। তাতে কোন সমস্যা নেই। ৩৪
(৪) মুসলিম শরিফে হজরত আবু মালেক আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন- রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
الطُّهُورُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَأُ الْمِيزَانَ، وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلَانِ أَوْ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ.
অর্থ: পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। আলহামদুলিল্লাহ মিযানের পাল্লাকে ভরে দেয়। আর সুবহানাল্লাহ ওয়াল হামদুলিল্লাহ আকাশ-যমীনের ফাঁকা অংশকে পূর্ণ করে দেয়।
(৫) মুসলিম শরিফে হজরত উম্মুল মুমিনিন জুয়াইরিয়া রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছ থেকে সকাল বেলা ফজরের নামাজের সময় বের হলেন। তখন তিনি নামাজের স্থানে বসা ছিলেন। এরপর তিনি চাশতের সময় আবার ফিরে এলেন, তখনও তিনি জায়নামাজে বসাছিলেন। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন-
مَا زِلْتِ عَلَى الْحَالِ الَّتِي فَارَقْتُكِ عَلَيْهَا؟ قَالَتْ: نَعَمْ، قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَقَدْ قُلْتُ بَعْدَكِ أَرْبَعَ كَلِمَاتٍ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، لَوْ وُزِنَتْ بِمَا قُلْتِ مُنْذُ الْيَوْمِ لَوَزَنَتْهُنَّ:
অর্থ: আমি তোমাকে যে অবস্থায় রেখে গিয়েছিলাম তুমি কি সেই অবস্থাতেই এখনও আছো? তিনি উত্তরে বললেন, জ্বী। এরপর نبي সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি তোমার কাছ থেকে যাওয়ার পর চারটি কালিমা তিনবার বলেছি, যদি তুমি এগুলোকে ওজন করো, তাহলে এসময় পর্যন্ত তুমি যা কিছু পড়েছো সবকিছু থেকে ঐগুলো বেশি ওজনদার হবে। কালিমার চারটি হল-
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ ، عَدَدَ خَلْقِهِ وَرِضَا نَفْسِهِ وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি আদাদা খালকিহি ওয়া রিদা নাফসিহি ওয়া যিনাতা আরশিহি ওয়া মিদাদা কালিমাতিহ।
অন্য বর্ণনায় চারটি কালিমা নিম্নরূপ:-
سُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبْحَانَ اللهِ رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ اللهِ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি আদাদা খালকিহি, সুবহানাল্লাহি রিদা নাফসিহি সুবহানাল্লাহি যিনাতা আরশিহি সুবহানাল্লাহি মিদাদা কালিমাতিহ।
অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি তার সৃষ্টির পরিমাণ। আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি তার সন্তুষ্টির সমপরিমাণ। আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি তার আরশের ওজন পরিমাণ। আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি তার প্রশংসা লেখার কালি সমপরিমাণ।
(৬) সুনানে তিরমিজিতে বর্ণিত আছে-
أَلَا أُعَلِّمُكِ كَلِمَاتٍ تَقُوْلِيْنَهَا : سُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ خَلْقِهِ، سُبْحَانَ اللهِ رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ اللهِ رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ اللهِ رِضَا نَفْسِهِ، سُبْحَانَ اللهِ زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ زِنَةَ عَرْشِهِ، سُبْحَانَ اللهِ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ، سُبْحَانَ اللَّهِ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ، سُبْحَانَ اللهِ مِدَادَ كَلِمَاتِهِ.
অর্থ: আমি কি তোমাকে এমন কালিমা শেখাবো না? যা তুমি বলবে। (কালিমাগুলো হল-) সুবহানাল্লাহি আদাদা খালকিহি (তিনবার), সুবহানাল্লাহি রিদা নাফসিহি (তিনবার), সুবহানাল্লাহি যিনাতা আরশিহি (তিনবার), সুবহানাল্লাহি মিদাদা কালিমাতিহি (তিনবার)।৩৭
(৭) মুসলিম শরিফে হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَأَنْ أَقُولَ سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلهِ، وَلَا إِلهَ إِلَّا اللهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا طَلَعَتْ عَلَيْهِ الشَّمْسُ.
অর্থ: সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং আল্লাহু আকবার বলা- পুরো দুনিয়া থেকে উত্তম।৩৮
(৮) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হজরত আবু আইয়ুব আনসারি রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- যে ব্যক্তি এই দুআটি দশবার পড়বে, সে যেন ইসমাঈল আ.-এর বংশের চারজন গোলাম আজাদকারীর সমপরিমাণ সওয়াব পাবে:
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির।
অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তার কোন অংশীদার নেই। সকল আধিপত্য তারই, তারই সকল প্রশংসা। তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।৩৯
(৯) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ، فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ، كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ، وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ، وَكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ، يَوْمَهُ ذَلِكَ، حَتَّى يُمْسِيَ وَلَمْ يَأْتِ أَحَدٌ أَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ إِلَّا أَحَدٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ، وَمَنْ قَالَ: سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ، فِي يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ حُطَّتْ خَطَايَاهُ وَلَوْ كَانَتْ مِثْلَ زَبَدِ الْبَحْرِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির' দুআটি দিনে একশো বার পড়বে, সে দশটি গোলাম আজাদ করার সমান সওয়াব পাবে। তার জন্য একশো নেকি লেখা হবে। তার একশো পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে। ঐদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত সে শয়তান থেকে নিরাপদে থাকবে। ঐ দিন তার চেয়ে উত্তম আর কেউ হবে না; তবে সে ব্যক্তি যে তার চেয়ে বেশি পড়েছে।
[দুআর আরবি পাঠ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ. উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির। অর্থ: এক আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, তার কোন শরিক নেই। সকল রাজত্ব তাঁরই এবং তাঁরই জন্য সকল প্রশংসা। আর তিনি সর্বশক্তিমান।]
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন- যে ব্যক্তি “সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি” দিনে একশো বার পড়বে, তার পাপ সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হলেও মাফ করে দেয়া হবে।
]দুআর আরবি পাঠ: سُبْحَانَ اللَّهِ وَبِحَمْدِهِ উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি। অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি তার প্রশংসার সাথে।]৪০
(১০) সুনানে তিরমিজি ও সুনানে ইবনে মাজাহ শরিফে হজরত জাবের বিন আবদুল্লাহ রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
أَفْضَلُ الذِّكْرِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَفْضَلُ الدُّعَاءِ الحَمْدُ لِلَّهِ.
অর্থ: সর্বোত্তম জিকির হল- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং সর্বোত্তম দুআ হল- আলহামদুলিল্লাহ। ইমাম তিরমিজি রহ. উক্ত হাদিসকে হাসান বলেছেন। ৪১
[দুআর আরবি পাঠ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ, উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। অর্থ: আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই।]
(১১) সহিহ বুখারিতে হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
مَثَلُ الَّذِي يَذْكُرُ رَبَّهُ وَالَّذِي لَا يَذْكُرُ رَبَّهُ، مَثَلُ الْحَيِّ وَالمَيِّتِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি জিকির করে আর যে করে না তাদের উপমা হল, জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো। ৪২
(১২) সহিহ মুসলিমে হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
جَاءَ أَعْرَابِيُّ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: عَلَّمْنِي كَلَامًا أَقُولُهُ، قَالَ: "قُلْ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا، سُبْحَانَ اللهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ قَالَ: فَهَؤُلَاءِ لِرَبِّي، فَمَا لِي؟ قَالَ: قُلْ: "اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي".
অর্থ: একবার এক গ্রাম্য সাহাবি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বললেন, আমাকে বিশেষ কিছু কালিমা শিক্ষা দিন, যেগুলো আমি পড়বো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, বলো-
لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، اللهُ أَكْبَرُ كَبِيرًا، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ كَثِيرًا، سُبْحَانَ اللَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ، لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَكِيمِ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, আল্লাহু আকবার কাবিরা, ওয়ালহামদুলিল্লাহি কাসিরা, সুবহানাল্লাহি রব্বিল আলামিন, লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আযিযিল হাকিম।
অর্থ: এক আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। তিনি এক, তার কোন শরিক নেই। আল্লাহ তাআলা মহান। সকল প্রশংসা তাঁরই জন্য। জগৎকর্তা আল্লাহ পাকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। প্রজ্ঞাময় পরাক্রমশালী আল্লাহ ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা ও শক্তি নেই।
গ্রাম্য সাহাবি বললেন, এগুলো তো আমার প্রতিপালকের জন্য, আমার জন্য কিছু বলুন। তখন নবিজি বললেন, তুমি বলবে-
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِي وَارْزُقْنِي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লি ওয়ার হামনি ওয়াহদিনি ওয়ারযুকনি।
অর্থ: হে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন, আমার ওপর রহমত বর্ষণ করুন, আমাকে হেদায়াত দান করুন এবং আমাকে রিযিক দান করুন। ৪৩
(১৩) সহিহ মুসলিমে হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
كُنَّا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ: أَيَعْجِزُ أَحَدُكُمْ أَنْ يَكْسِبَ، كُلَّ يَوْمٍ أَلْفَ حَسَنَةٍ؟ فَسَأَلَهُ سَائِلُ مِنْ جُلَسَائِهِ: كَيْفَ يَكْسِبُ أَحَدُنَا أَلْفَ حَسَنَةٍ؟ قَالَ: يُسَبِّحُ مِائَةَ تَسْبِيْحَةٍ، فَيُكْتَبُ لَهُ أَلْفُ حَسَنَةٍ، أَوْ يُحَطُّ عَنْهُ أَلْفُ خَطِيئَةٍ.
অর্থ: আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসাছিলাম। এমন সময় তিনি বললেন, তোমাদের কেউ কি দিনে এক হাজার নেকি অর্জন করতে সক্ষম নও? উপবিষ্টদের একজন বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আমাদের কেউ তা কীভাবে অর্জন করতে পারে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি দিনে একশো বার “সুবহানাল্লাহ” পড়বে তার জন্য জন্য এক হাজার নেকি লেখা হবে। অথবা তার এক হাজার পাপ মুছে দেয়া হবে। ৪৪
ইমাম হাফিযুল হাদিস আবু আবদুল্লাহ হুমাইদি বলেন, সহিহ মুসলিমের সব রেওয়ায়াতেই এই (أَوْيَحْطٌ) শব্দে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য হাদিসের কিতাবে। শব্দ ছাড়া বর্ণিত হয়েছে। বারকানি বলেন, শুবা, আবু আওয়ানা এবং ইয়াহইয়া ইবনে কত্তান আবু মুসা রাদি. থেকে বর্ণনা করেছেন। এমনকি, ইমাম মুসলিমও তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন। তারা বলেন وَيُحَطٌ অর্থাৎ আলিফ ছাড়া। ৪৫
(১৪) হজরত আবু জর রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
يُصْبِحُ عَلَى كُلِّ سُلَامِي مِنْ أَحَدِكُمْ صَدَقَةٌ، فَكُلُّ تَسْبِيحَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَحْمِيدَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَهْلِيلَةٍ صَدَقَةٌ، وَكُلُّ تَكْبِيرَةٍ صَدَقَةٌ، وَأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ صَدَقَةٌ، وَنَهْيُ عَنِ الْمُنْكَرِ صَدَقَةٌ، وَيُجْزِئُ مِنْ ذَلِكَ رَكْعَتَانِ يَرْكَعُهُمَا مِنَ الضُّحَى.
অর্থ: তোমাদের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর সাদকা রয়েছে। প্রতিটি তাসবিহ তথা সুবহানাল্লাহ একটি সাদকা। প্রত্যেকটি তাহমিদ তথা আলহামদুলিল্লাহ একটি সাদকা। প্রতিটি তাহলিল তথা লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ একটি সাদকা। প্রতিটি তাকবির তথা আল্লাহু আকবার বলা একটি সাদকা। সৎ কাজের আদেশ সাদকা, মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা সাদকা। আর চাশতের সময় দুই রাকাত নামাজ পড়লে সবগুলো আদায় হয়ে যায়। ৪৬
(১৫) সহিহ বুখারি ও মুসলিমে হজরত আবু মুসা আশআরি রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَا أَدُلُّكَ عَلَى كَلِمَةٍ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ أَوْ قَالَ: على كَنْزِ مِنْ كُنُوزِ الْجَنَّةِ ؟ فَقُلْتُ: بَلَى، فَقَالَ: لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ.
অর্থ: রাসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, আমি কি তোমাকে জান্নাতের ধন-ভাণ্ডারসমূহের একটি ভাণ্ডারের খোঁজ দেবো? আমি বললাম, অবশ্যই দিন, ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি বললেন, তা হল-
لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ .
উচ্চারণ: লা হাউলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।
অর্থ: আল্লাহ ছাড়া নেক কাজ করা বা খারাপ কাজ থেকে বাঁচার কোন শক্তি নেই।
(১৬) সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে তিরমিজিতে হজরত সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একজন স্ত্রীর কাছে গমন করলেন, যার হাতে তখন খেজুরের বীচি অথবা পাথর ছিলো যার সাহায্যে তিনি তাসবিহ পড়ছিলেন, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
أَلَا أُخْبِرُكِ بِمَا هُوَ أَيْسَرُ عَلَيْكِ مِنْ هَذَا أَوْ أَفْضَلُ ، فَقَالَ: سُبْحَانَ اللَّهِ، عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي السَّمَاءِ، وَسُبْحَانَ اللهِ ، عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الْأَرْضِ، وَسُبْحَانَ اللهِ، عَدَدَ مَا خَلَقَ بَيْنَ ذَلِكَ، وَسُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقٌ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ مِثْلُ ذَلِكَ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ مِثْلُ ذَلِكَ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مِثْلُ ذَلِكَ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللهِ، مِثْلُ ذَلِكَ.
অর্থ: আমি কি তোমাকে এর চেয়ে সহজ অথবা উত্তম বিষয় বাতলে দেবো? তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন-
سُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي السَّمَاءِ، وَسُبْحَانَ اللهِ عَدَدَ مَا خَلَقَ فِي الْأَرْضِ، وَسُبْحَانَ اللهِ ، عَدَدَ مَا خَلَقَ بَيْنَ ذَلِكَ، وَسُبْحَانَ اللَّهِ، عَدَدَ مَا هُوَ خَالِقُ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি আদাদা মা খালাকা ফিস্সামায়ি, ওয়া সুবহানাল্লাহি আদাদা মা খালাকা ফিল আরদ, ওয়া সুবহানাল্লাহি আদাদা মা খালাকা বাইনা জালিক, ওয়া সুবহানাল্লাহি আদাদা মা হুয়া খালিকুন।
অর্থ: সুবহানাল্লাহ আসমানের যাবতীয় সৃষ্টিবস্তুর সম-সংখ্যক। সুবহানাল্লাহ যমিনের যাবতীয় সৃষ্টির সম-সংখ্যক এবং সুবহানাল্লাহ এতদুভয়ের মধ্যে সৃষ্টি সমস্ত বস্তুর সম-সংখ্যক। সুবহানাল্লাহ ভবিষ্যতে যা কিছু সৃষ্টি হবে তার সমসংখ্যক।
তিনি আরো বলেন- আর 'আল্লাহু আকবার' ও 'আল-হামদুলিল্লাহ সুবহানাল্লাহ এর অনুরূপ। 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'ও এর অনুরূপ এবং 'লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ'ও এর অনুরূপ। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান। ৪৮
(১৭) সুনানে আবু দাউদ ও সুনানে তিরমিজিতে হজরত ইউসাইরাহ রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَرَهُنَّ أَنْ يُرَاعِيْنَ بِالتَّكْبِيرِ، وَالتَّقْدِيسِ، وَالتَّهْلِيْلِ، وَأَنْ يَعْقِدْنَ بِالْأَنَامِلِ ؛ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولَاتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠে গুরুত্ব দেয়া এবং এগুলোকে আঙ্গুলের সাহায্যে গুণে রাখার নির্দেশ করেছেন। কেননা আঙ্গুলগুলো কেয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে এবং কথা বলবে। ৪৯
(১৮) সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিজি ও নাসাঈ শরিফে হাসান সনদে হজরত আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْقِدُ التَّسْبِيحَ، قَالَ ابْنُ قُدَامَةَ: بِيَمِينِهِ
অর্থ: আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাসবিহ গুণে গুণে পাঠ করতে দেখেছি। ডবন কুদামা বলেন, অর্থাৎ তিনি ডান হাতে তাসবিহ গুণছিলেন।৫০
(১৯) সুনানে আবু দাউদে হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
مَنْ قَالَ: رَضِيْتُ بِاللهِ ، رَبَّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا، وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ.
অর্থ: যে ব্যক্তি এই দুআটি পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে-
رَضِيْتُ بِاللهِ ، رَبَّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا .
উচ্চারণ: রাজিতু বিল্লাহি রব্বা ওয়া বিল ইসলামি দীনা, ওয়াবি মুহাম্মাদিন রাসুলা।
অর্থ: আমি আল্লাহ তাআলাকে রব হিসেবে, ইসলামকে দীন হিসেবে এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রাসুল হিসেবে মেনে সন্তুষ্ট। ৫১
(২০) হজরত আবদুল্লাহ বিন বুসর রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَجُلاً قَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنَّ شَرَائِعَ الْإِسْلامِ قَدْ كَثُرَتْ عَلَيَّ، فَأَخْبِرْنِي بِشَيْءٍ أَتَشَبَّتُ بِهِ، قَالَ: لَا يَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا مِنْ ذِكْرِ اللَّهِ .
অর্থ: এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, শরিয়তের আহকাম, বিধি-বিধান আমার কাছে অনেক বেশি হয়ে পড়েছে, আমাকে (সংক্ষেপে) কিছু বলে দিন যেগুলোকে আমি মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে রাখতে (আমল করতে) পারি। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সর্বদাই আল্লাহর জিকিরের দ্বারা তোমার যবানকে তরতাজা রাখবে। ইমাম তিরমিজি রহ. এই হাদিসটিকে 'হাসান' বলেছেন। ৫২
[যবান তরতাজা রাখার দ্বারা উদ্দেশ্য হল, আল্লাহর যিকিরে কোন ধরনের উদাসীনতা থাকবে না। কারণ, অন্তর যখন উদাসীন হয়, তখন জিহ্বা শুকিয়ে যায়। তিবি রহ. বলেন, যবান তরতাজা রাখা দ্বারা 'সবসময় স্বাভাবিকভাবে জিকির করার দিকে ইশারা করা হয়েছে।]
(২১) হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত-
أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ أَيُّ الْعِبَادِ أَفْضَلُ دَرَجَةً عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ؟ قَالَ: الذَّاكِرُوْنَ اللهَ كَثِيْرًا وَالذَّاكِرَاتُ. قَالَ: قُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ وَمِنَ الْغَازِي فِي سَبِيلِ اللهِ؟ قَالَ: لَوْ ضَرَبَ بِسَيْفِهِ فِي الْكُفَّارِ وَالْمُشْرِكِينَ حَتَّى يَنْكَسِرَ وَيَخْتَضِبَ دَمًا لَكَانَ الذَّاكِرُونَ اللَّهَ كَثِيرًا أَفْضَلَ مِنْهُ دَرَجَةً.
অর্থ: একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে প্রশ্ন করা হল, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার নিকট মর্যাদার বিবেচনায় কোন ব্যক্তি শ্রেষ্ঠতর হবে? উত্তরে নবিজি বললেন, অধিক পরিমাণে জিকিরাকারী পুরুষ ও মহিলা। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধকারী গাজীর মর্যাদা কেমন হবে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদি গাজী আল্লাহর রাহে কাফের মুশরিককে নিজ তরবারী দিয়ে আঘাত করে তা ভেঙ্গে ফেলে এবং রক্তে রঞ্জিত করে তারপরও জিকিরকারীদের মর্যাদা তার চেয়েও বেশি।৫০
(২২) হজরত আবু দারদা রাদি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِخَيْرِ أَعْمَالِكُمْ، وَأَزْكَاهَا عِنْدَ مَلِيْكِكُمْ، وَأَرْفَعِهَا فِي دَرَجَاتِكُمْ وَخَيْرُ لَكُمْ مِنْ إِنْفَاقِ الذَّهَبِ وَالْوَرِقِ، وَخَيْرٌ لَكُمْ مِنْ أَنْ تَلْقَوْا عَدُوَّكُمْ فَتَضْرِبُوا أَعْنَاقَهُمْ وَيَضْرِبُوا أَعْنَاقَكُمْ؟ قَالُوا: بَلَى. قَالَ: ذِكْرُ اللهِ تَعَالَى قَالَ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ: مَا شَيْءٌ أَنْجَى مِنْ عَذَابِ اللهِ مِنْ ذِكْرِ اللهِ .
অর্থ: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি কি তোমাদের সর্বোত্তম আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যে আমল হবে তোমাদের মালিকের নিকট সবচেয়ে পরিশুদ্ধ, তোমাদের মর্যাদা বৃদ্ধিকারী, সোনা ও রূপা আল্লাহর পথে ব্যয় করার চেয়েও তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর? এমনকি, এর চেয়েও মঙ্গলজনক হবে যে, তোমরা শত্রুর সম্মুখীন হয়ে তাদের গর্দানে আঘাত করবে আর তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করবে? সাহাবিরা বললেন, অবশ্যই বলবেন। তিনি বললেন, তা হল আল্লাহর যিকর। হাকিম আবু আবদুল্লাহ নিশাপুরি রহ. বলেন, হাদিসটির সনদ সহিহ।৫৪
(২৩) ইবনে মাসউদ রাদি. থেকে বর্ণিত যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
لَقِيْتُ إِبْرَاهِيمَ لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، أَقْرِئُ أُمَّتَكَ مِنِّي السَّلَامَ وَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ الْجَنَّةَ طَيِّبَةُ التَّرْبَةِ عَذْبَةُ الْمَاءِ، وَأَنَّهَا قِيْعَانُ، وَأَنَّ غِرَاسَهَا سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ.
অর্থ: (মেরাজ রজনীতে) যখন আমি ইবরাহিম আ.-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তখন তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ, আপনার উম্মতকে আমার সালাম দেবেন। তাদের বলে দেবেন, জান্নাতের মাটি খুবই উন্নত, এর পানি ভীষণ মিষ্টি, জান্নাত হবে সমতল বিরান ভূমি। এর চারা হল-
سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার।
অর্থ: আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করছি, সকল প্রশংসা তারই। আল্লাহ তাআলা ব্যতীত অন্য কোন মাবুদ নেই। আর সর্ব মহান। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান।৫৫
(২৪) সুনানে তিরমিজিতে হজরত জাবের রাদি. প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যে, নবিজি বলেছেন-
مَنْ قَالَ: سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ، غُرِسَتْ لَهُ نَخْلَةٌ فِي الْجَنَّةِ.
অর্থ: যে ব্যক্তি এই দুআ পড়বে তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুর গাছ রোপণ করা হবে-
سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِحَمْدِهِ.
উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহিল আযিমি ওয়াবি হামদিহি।
অর্থ: মহান আল্লাহ পাকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি তার সমুদয় প্রশংসার সাথে। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, হাদিসটি হাসান সহিহ।
(২৬) তিরমিজি শরিফে হজরত আবু জর রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-
بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي يَا رَسُوْلَ اللهِ ، أَيُّ الْكَلاَمِ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ؟ قَالَ: مَا اصْطَفَى اللَّهُ لِمَلائِكَتِهِ: سُبْحَانَ رَبِّي وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ رَبِّي وَبِحَمْدِهِ.
অর্থ: ইয়া রাসুলাল্লাহ, আপনার ওপর আমার পিতা-মাতা উৎসর্গীত হোক। আল্লাহ তাআলার কাছে কোন বাক্যটি সবচেয়ে বেশি প্রিয়? তিনি উত্তর দিলেন, যা তিনি নিজ ফেরেশতাদের জন্য নির্বাচন করেছেন। অর্থাৎ
سُبْحَانَ رَبِّي وَبِحَمْدِهِ، سُبْحَانَ رَبِّي وَبِحَمْدِهِ.
উচ্চারণ: সুবহানা রাব্বি ওয়াবিহামদিহি, সুবহানা রাব্বি ওয়াবিহামদিহি। ৫৭
অর্থ: আমার রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি তার প্রশংসার সাথে, আমার রবের পবিত্রতা ঘোষণা করছি তার প্রশংসার সাথে।
এবার আমি কিতাবের মূল আলোচনা শুরু করছি। আমাদের বাস্তব জীবন ঘনিষ্ট বিষয়ের ধারাবাহিকতায় আলোচনা চলবে। "মানুষ ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া” এই অধ্যায় দিয়ে আলোচনা শুরু করছি। এরপর তার ঘুমানো পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করব। এরপর রাতের ঐ জাগরণ সম্পর্কে আলোচনা করব, যে জাগরণের পর আবার ঘুমানো হয়। আল্লাহ তাআলার কাছে তাওফিক কামনা করছি।
টিকাঃ
২৭. সুরা আনকাবুত: ৫৪।
২৮. সুরা বাকারা: ১৫২।
২৯. সুরা সাফফাত: ১৪৩-১৪৪।
৩০. সুরা আম্বিয়া: ২০।
৩১. সহিহ বুখারি: ৭৫৬৩; সহিহ মুসলিম: ২৬৯৪।
৩২. সহিহ মুসলিম: ২৭৩১/৮৫।
৩৩. সহিহ মুসলিম: ২৭৩১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৬৩, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৮২৪, নাসাঈ।
৩৪. সহিহ মুসলিম: ২১৩৭, সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৫৮, সুনানে তিরমিজি: ২৮৩৮, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৮৪৫-৮৪৭, নাসাঈ, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮১১।
৩৫. সহিহ মুসলিম: ২২৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৫১২, সুনানে নাসাঈ ৫/৫-৬, সুনানে ইবনে মাজাহ: ৫৭০।
৩৬. সহিহ মুসলিম: ২৭২৬, সুনানে আবু দাউদ: ১৫০৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৫০, সুনানে নাসাঈ ৪/৭৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮৯৮।
৩৭. সুনানে তিরমিজি: ৩৪৯৯।
৩৮. সহিহ মুসলিম: ২৬৯৫, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৯১, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৮৩৫, নাসাঈ।
৩৯. সহিহ বুখারি: ৬৪০৪, সহিহ মুসলিম: ২৬৯৩, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৮৪, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৪, নাসাঈ।
৪০. সহিহ বুখারি: ৬৪০৩, সহিহ মুসলিম: ২৬৯১, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৬৪, মুয়াত্তা মালেক ১/২০৯, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ২৬, নাসাঈ।
৪১. সুনানে তিরমিজি: ৩৩৮০, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৮০০।
৪২. সহিহ বুখারি: ৬৪০৭, সহিহ মুসলিম: ৭৭৯।
৪৩. সহিহ মুসলিম: ২৬৯৬।
৪৪. সহিহ মুসলিম: ২৬৯৮, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ১৫২, নাসাঈ, মুসনাদে আহমাদ ১/১৭৪, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৫৯।
৪৫. আল-জামউ বাইনাস সাহিহাইন ১/১৯৯।
৪৬. সহিহ মুসলিম: ৭২০, সুনানে আবু দাউদ: ১২৮৫।
৪৭. সহিহ বুখারি: ৬৩৮৪, সহিহ মুসলিম: ২৭০৪, সুনানে আবু দাউদ: ১৫২৭, সুনানে তিরমিজি: ৩৪৫৭, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৫৩৭-৫৩৮, নাসাঈ।
৪৮. সুনানে আবু দাউদ: ১৫০০; সুনানে তিরমিজি: ৩৫৬৮।
৪৯. সুনানে আবু দাউদ: ১৫০১, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৭৭।
৫০. সুনানে আবু দাউদ: ১৫০২; সুনানে তিরমিজি: ৩৪১১; সুনানে নাসাঈ: ৯২৬।
৫১. সুনানে আবু দাউদ: ১৫২৯, সুনানে নাসাঈ ১৫/১৯।
৫২. সুনানে তিরমিজি: ৩৩৭২, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৭৯৩।
৫৩. সুনানে তিরমিজি: ৩৩৭৩।
৫৪. জামে তিরমিজি: ৩৩৭৭; ইবনে মাজাহঃ ৩৯৯০, মুসতাদরাকে হাকিম: ১/৪৯৬।
৫৫. জামে তিরমিজি: ৩৪৬২।
৫৬. জামে তিরমিজি: ৩৪৬৪, আমালুল ইয়াউমি ওয়াল্লাইলাহ: ৭২৭, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৫০১।
৫৭. জামে তিরমিজি: ৩৫৯৩।
📄 বেশি বেশি আল্লাহর জিকির করা
আল্লাহ তাআলা বলেন-
إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُSْلِمَاتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ وَالْقَانِتِينَ وَالْقَانِتَاتِ وَالصَّادِقِينَ وَالصَّادِقَاتِ وَالصَّابِرِينَ وَالصَّابِرَاتِ وَالْخَاشِعِينَ وَالْخَاشِعَاتِ وَالْمُتَصَدِّقِينَ وَالْمُتَصَدِّقَاتِ وَالصَّائِمِينَ وَالصَّائِمَاتِ وَالْحَافِظِينَ فُرُوجَهُمْ وَالْحَافِظَاتِ وَالذَّاكِرِينَ اللَّهَ كَثِيرًا وَالذَّاكِرَاتِ.
অর্থ: নিশ্চয় মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়ী পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, রোজাদার পুরুষ ও নারী, যৌনাঙ্গ হেফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারীদের জন্য (আল্লাহ তাআলা বিশাল ক্ষমা ও মহাপ্রতিদান রেখে দিয়েছেন)। ১৮
মুসলিম শরিফে হজরত আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার মক্কার জুমদান পর্বত দিয়ে হাঁটছিলেন। তখন তিনি বলেন,
سِيرُوا هَذَا جُمْدَانُ سَبَقَ الْمُفَرِّدُوْنَ قَالُوا: وَمَا الْمُفَرِّدُوْنَ؟ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ: الذَّاكِرُونَ اللهَ كَثِيرًا، وَالذَّاكِرَاتُ.
অর্থ: তোমরা এই জুমদান পর্বতে ভ্রমণ করো। মুফাররিদগণ অগ্রগামী হয়েছে। মুফাররিদ কারা? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, মুফাররিদ হল, বেশি বেশি আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ ও নারী। ১৯
আজকার জাতীয় কিতাবের লেখকের জন্য উক্ত আয়াতের উদ্দেশ্যের প্রতি গুরুত্বারোপ করা চাই। এ আয়াতের উদ্দেশ্য কী- এ ব্যাপারে উলামায়ে কেরামের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে।
আবুল হাসান ওয়াহিদি রহ. হতে বর্ণিত ইবনে আব্বাস রাদি. বলেন, এদ্বারা উদ্দেশ্য হল, যারা নামাজের পরে জিকির করে, সকাল-বিকাল জিকির করে, বিছানায় ঘুমাতে গিয়ে জিকির করে, ঘুম থেকে উঠার সময় জিকির করে, সকাল-বিকাল যখনই ঘর থেকে বের হয় তখনই জিকির করে। (এই সময়গুলোর যেসব দুআ আছে সেগুলো পড়ে।)
মুজাহিদ রহ. বলেন, ঐ সময় পর্যন্ত কোন লোক বেশি বেশি আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ ও নারী বলে গণ্য হবে না, যতক্ষণ না সে বসে, দাঁড়িয়ে ও শুয়ে তথা সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করবে।
আতা রহ. বলেন, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সমস্ত হকসহ আদায় করে, সে আল্লাহর বাণী: অধিক পরিমাণে জিকিরকারী নারী-পুরুষ- এর মধ্যে গণ্য হবে।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদি. থেকে বর্ণিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
إِذَا أَيْقَظَ الرَّجُلُ أَهْلَهُ مِنَ اللَّيْلِ فَصَلَّيَا، أَوْ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ جَمِيعًا، كُتِبَا فِي الذَّاكِرِينَ وَالذَّاكِرَاتِ.
অর্থ: স্বামী যদি তার স্ত্রীকে রাতে নামাজ পড়ার জন্য জাগ্রত করে এরপর উভয়ে অথবা স্বামী একা দুই রাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে তাদের উভয়ের নাম অধিক পরিমাণে আল্লাহর জিকিরকারী পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে লেখা হয়ে যায়।২০
শাইখ ইবনুস সালাহ রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে, কী পরিমাণ জিকির করলে বেশি বেশি জিকিরকারী হিসেবে গণ্য হবে? উত্তরে বলেছিলেন, হাদিসে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যার দুআ নিয়মিত পড়লে এবং বিভিন্ন সময় বর্ণিত দুআসমূহ পাঠ করলে সে বেশি বেশি জিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
টিকাঃ
১৭. আল-ওয়াসিত ফি তাফসিরিল কুরআনিল মাজিদ: ১/২৩৪।
১৮. সুরা আহযাব: ৩৫।
১৯. সহিহ মুসলিম: ২৬৭৬, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৯০।
২০. সুনানে আবু দাউদ: ১৩০৯, সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৩৩৫।
📄 অজু না থাকা অবস্থায় জিকির করতে পারবে
উলামায়ে কেরام এব্যাপারে একমত যে, মুখে ও অন্তরে যে কেউ জিকির করতে পারবে। অজু-গোসল না থাকা অবস্থায় ও মহিলারা ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থায়ও জিকির করতে পারবে। এসময়ে সুবহানাল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও দুরুদ পাঠ ইত্যাদি জিকির করতে পারবে। অবশ্য গোসল ফরজ, ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত করা নিষেধ। চাই তা অল্প হোক বা বেশি হোক। তবে তারা উচ্চারণ না করে মনে মনে পড়তে পারবে। অনুরূপভাবে কুরআনের কপিতে তাকিয়ে তাকিয়ে এবং মনে মনে আওড়ানো যাবে।
তবে গোসল ফরজ, ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থায় কুরআনের আয়াত দুআ হিসেবে পড়তে পারবে। যেমন বিপদের সম্মুখীন হলে 'ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন' পড়তে পারবে। এছাড়া কোন বাহনে আরোহণ করার সময় এ দুআ পড়তে পারবে-
سُبْحَنَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هُذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ.
[উচ্চারণ: সুবহানাল্লাজি সাখখারা লানা হাজা, ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনিন। অর্থ: পবিত্র তিনি, যিনি এদেরকে আমাদের বশীভূত করে দিয়েছেন। অথচ আমরা এদেরকে বশীভূত করতে সক্ষম ছিলাম না।] দুআর মধ্যে পড়তে পারবে:
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ.
[উচ্চারণ: রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনয়া হাসানাতান, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাতান, ওয়া কিনা আজাবান্নার। অর্থ: হে পরওয়ারদিগার, আমাদেরকে দুনিয়াতেও কল্যাণ দান কর এবং আমাদেরকে দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।]
ঋতুস্রাব ও প্রসূতি অবস্থায় তিলাওয়াতের উদ্দেশ্য না করে বিসমিল্লাহ এবং আলহামদুলিল্লাহ বলতে পারবে। এগুলো জিকিরের উদ্দেশ্যে বা কোন উদ্দেশ্য ছাড়াই বলতে পারবে; তিলাওয়াতের উদ্দেশ্যে না করে যে কোন উদ্দেশ্যে বলতে পারবে, গুনাহ হবে না।
কুরআনের যেসব আয়াতের তিলাওয়াত রহিত হয়ে গেছে যেমন- الشَّيْخُ وَالشَّيْخَةُ إِذَا زَنَيَا فَارْجُمُوْهَا. [অর্থ: বিবাহিত পুরুষ এবং বিবাহিতা নারী যখন যিনা করবে, তাদেরকে পাথরঘাত করে হত্যা কর।] এগুলোও পড়তে পারবে।
যদি কাউকে বলে- خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ )কিতাবটি মজবুতের সাথে ধরো( অথবা বলে أُدْخُلُوْهَا بِسَلَامِ امِنِينَ )তাতে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে প্রবেশ করো।) বা এজাতীয় আয়াত বলে, তবে কুরআন তিলাওয়াতের ইচ্ছা না থাকে, তাহলে জায়েয আছে।
যদি পানি না থাকায় তায়াম্মুম করে, তাহলে তার জন্যও তিলাওয়াত করা বৈধ হবে। এমনকি, এরপর যদি পুনরায় সে নাপাক হয় তাহলে তার জন্য তিলাওয়াত করা নিষিদ্ধ হবে না। তায়াম্মুম চাই সফরে হোক বা মুকিম অবস্থায় পানি না পাওয়ার কারণে হোক, কোন পার্থক্য নেই। পুনরায় নাপাক হওয়ার পরও সে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে। কেউ কেউ বলেন, যদি মুকিম অবস্থায় হয় তাহলে উক্ত তায়াম্মুম দ্বারা নামাজের কিরাত পড়তে পারবে। কিন্তু নামাজের বাইরে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে না। তবে বিশুদ্ধ মত হল, নামাজের বাইরেও তিলাওয়াত করতে পারবে। কেননা তায়াম্মুম গোসলের স্থলাভিষিক্ত।
গোসল ফরজ হয়েছে এমন ব্যক্তি তায়াম্মুম করার পর পানি দেখতে পেলে পানি ব্যবহার করা আবশ্যক। গোসল না করা পর্যন্ত তিলাওয়াতসহ তায়াম্মুমের আগে তার ওপর যা যা হারাম ছিলো সবই হারাম হয়ে যাবে।
তায়াম্মুম করার পর যদি নামাজ ও তিলাওয়াত করে। এরপর যদি আবার অন্য কোন নাপাকের জন্য তায়াম্মুম করে, তাহলে তার ওপর তিলাওয়াত করা হারাম হবে না। এটাই বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য মাজহাব। তবে হারাম হওয়ার কথাও কেউ কেউ বলেছেন। অবশ্য সেটা খুব দুর্বল।
আর যদি গোসল ফরজ হয়েছে এমন ব্যক্তি পানি বা মাটি না পায়, তাহলে ওয়াক্তের সম্মান রক্ষার্থে ঐ অবস্থায়ই নামাজ আদায় করবে। তবে নামাজের বাহিরে সে তিলাওয়াত করতে পারবে না। আর সুরা ফাতেহার চেয়ে বেশি যা পড়বে তাও হবে হারাম।
আর ফাতেহা পড়া যাবে কিনা? এ ব্যাপারে দুই ধরনের বক্তব্য বর্ণিত আছে। বিশুদ্ধ মত হল, এটা হারাম হবে না; বরং পাঠ করাই ওয়াজিব। কেননা এটা ছাড়া নামাজ আদায় হবে না। নামাজ পড়া যেহেতু প্রয়োজনের কারণে জায়েয তেমনিভাবে সুরা ফাতেহার তিলাওয়াতও জায়েয।
দ্বিতীয় মত হল, সুরা ফাতেহা তিলাওয়াত করাও হারাম হবে। তবে এক্ষেত্রে কুরআন ছাড়া অন্য কোন দুআ পড়বে। যেমন কোন ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াত করতেই পারে না, তার মতো।
এই বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট বিধায় এখানে এই কয়েকটি মাসয়ালা আলোচনা করা হল। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ফিকহের কিতাবাদিতে রয়েছে। আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন।
📄 জিকিরকারীর हालत
জিকিরকারীকে সর্বোত্তম হালতে থাকা চাই। কিবলামুখী হয়ে বসবে; স্থির-শান্ত বিনয়াবনত ও অবনত মস্তকে বসবে। এ হালত ছাড়া ভিন্ন হালতে বসলেও মাকরুহ হবে না; জায়েজ আছে তবে কোন কারণ ছাড়া ভিন্ন হালতে বসলে অনুত্তম হবে। ভিন্ন হালত মাকরুহ না হওয়ার দলিল হল, এই আয়াত-
إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِأُولِي الْأَلْبَابِ الَّذِينَ يَذْكُرُوْنَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَى جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُوْنَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ.
অর্থ: নিশ্চয় নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সৃষ্টিতে এবং দিবস-রজনীর পরিবর্তনের মধ্যে বোধসম্পন্ন লোকদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর জিকির করে এবং আকাশ ও যমীন সৃষ্টির বিষয়ে চিন্তা-গবেষণা করে। ২৪
সহিহ বুখারি ও মুসলিমে হজরত আয়েশা রাদি. থেকে বর্ণিত-
كَانَ رَسُولُ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَّكِيُّ فِي حِجْرِي وَأَنَا حَائِضُ، فَيَقْرَأُ الْقُرْآنَ.
অর্থ: আমি ঋতুবতী থাকাবস্থায়ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কোলে হেলান দিয়ে বসে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। ২৫
হজরত আয়েশা রাদি. থেকে আরো বর্ণিত আছে-
إِنِّي لَأَقْرَأُ حِزْنِي وَأَنَا مُضْطَجِعَةُ عَلَى السَّرِيرِ .
অর্থ: আমি খাটের ওপর শুয়ে আমার অযিফা পাঠ করতাম।
টিকাঃ
২৪. সুরা আলে ইমরান: ১৮৯-১৯০।
২৫. সহিহ বুখারি: ২৯৭, সহিহ মুসলিম: ৩০১, সুনানে আবু দাউদ: ২৬০, সুনানে নাসাঈ ১/১৯১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৬৩৪।