📄 ফযিলতের আমল একবার হলেও করা উচিত
কোন আমলের ফাযায়েল সম্পর্কে জানলে উচিত হল, সেটি আমল করা; যদি জীবনে অন্তত একবারও হয়। যাতে সে এর আমলকারীদের দলভুক্ত হয়ে যায়। সেটি একেবারেই আমল না করা সমীচীন নয়, বরং যথাসম্ভব সেটি আমল করা। হাদিস শরিফে ইরশাদ হচ্ছে-
إِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ.
অর্থ: যখন আমি তোমাদের কোন বিষয়ের আদেশ দেই, তখন তোমরা তা সাধ্যানুযায়ী পালন করো।১১
টিকাঃ
১১. সহিহ বুখারি: ৭২৮৮, সহিহ মুসলিম: ১৩৩৭, সুনানে তিরমিজি: ২৬৮১, সুনানে নাসাঈ ৫/১১০, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ২।
📄 ফযিলত বিষয়ক দুর্বল হাদিসের ওপর আমল করা
উলামা, ফুকাহা ও মুহাদ্দিসিনে কেরামের মতে ফাযায়েল ও উৎসাহমূলক বিষয়ে দুর্বল হাদিসের ওপর আমল করা জায়েয আছে। এমনকি, আমল করাই উত্তম। যতক্ষণ না ঐ হাদিস মাওজু (জাল) পর্যায়ের না হবে। পক্ষান্তরে আহকামের ক্ষেত্রে যেমন- হালাল, হারাম, ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহ-শাদি, তালাক ইত্যাদি বিষয়ে কেবল সহিহ বা হাসান হাদিসের ওপরই আমল করতে হবে। তবে হ্যাঁ, যদি কোন সতর্কতামূলক বিষয় হয়, যেমন- বিবাহ-শাদী বা বেচাকেনা সংক্রান্ত কোন বিষয়ের অপছন্দনীয়তার ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিস আসে, তাহলে মুস্তাহাব হল তা থেকে বেঁচে থাকা চাই। তবে এটা ওয়াজিব নয়। বিষয়টি এ কিতাবে এজন্য বর্ণনা করেছি যে, এই কিতাবে সহিহ, হাসান ও যাঈফ (দুর্বল) হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। যাতে পাঠকবৃন্দ এ বিষয়ে শুরুতেই অবগত হতে পারেন।
📄 জিকিরের মজলিসে বসা মুস্তাহাব
জিকির করা যেমন মুস্তাহাব, তেমনিভাবে জিকিরের মজলিসে বসাও মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে দলিল-প্রমাণ সুস্পষ্ট। এগুলো যথাস্থানে আলোচনা করা হবে। এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ বিন উমর রাদি. থেকে বর্ণিত হাদিসই যথেষ্ট। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
إِذَا مَرَرْتُمْ بِرِيَاضِ الْجَنَّةِ فَارْتَعُوْا قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ وَمَا رِيَاضُ الْجَنَّةِ؟ قَالَ: حِلَقُ الذِّكْرِ قَالَ: إِنَّ لِلَّهِ سَيَّارَةً مِنَ الْمَلَائِكَةِ يَطْلُبُوْنَ حِلَقَ الذِّكْرِ فَإِذَا أَتَوْا عَلَيْهِمْ حَفُوْا بِهِمْ.
অর্থ: যখন তোমরা জান্নাতের বাগানের কাছ দিয়ে যাবে, তখন তোমরা বাগানের ফল খাবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, জান্নাতের বাগান কী? তিনি বললেন, জিকিরের মজলিস।
আল্লাহর পক্ষ থেকে এক দল ফেরেশতা জমিনে বিচরণ করে জিকিরের মজলিস খুঁজতে থাকে। ফেরেশতারা যখন জিকিরকারীদের কাছে আসেন তখন তাদেরকে বেষ্টন করে রাখেন।১২
মুআবিয়া রাদি. থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন-
إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَرَجَ عَلَى حَلْقَةٍ مِنْ أَصْحَابِهِ، فَقَالَ: مَا أَجْلَسَكُمْ ؟ قَالُوا : جَلَسْنَا نَذْكُرُ اللهَ وَنَحْمَدُهُ عَلَى مَا هَدَانَا لِلْإِسْلَامِ، وَمَنَّ بِهِ عَلَيْنَا. قَالَ : اللَّهِ، مَا أَجْلَسَكُمْ إِلَّا ذَاكَ ؟ قَالُوا : وَاللَّهِ، مَا أَجْلَسَنَا إِلَّا ذَاكَ. قَالَ : أَمَا إِنِّي لَمْ أَسْتَحْلِفْكُمْ تُهْمَةً لَكُمْ، وَلَكِنَّهُ أَتَانِي جِبْرِيلُ فَأَخْبَرَنِي أَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُبَاهِيْ بِكُمُ الْمَلَائِكَةَ.
অর্থ: একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবিদের একটি মজলিসে গমন করে বললেন, তোমরা এখানে কেন বসেছো? তাঁরা বললেন, আমরা বসেছি আল্লাহর জিকির এবং তাঁর প্রশংসা করতে। কারণ, তিনি আমাদের ইসলামের পথে এনেছেন; ইসলামের মাধ্যমে আমাদের প্রতি বড় অনুগ্রহ করেছেন। তিনি বললেন, আল্লাহর কসম, তোমরা কি শুধু এ উদ্দেশ্যেই বসেছো? তাঁরা উত্তর দিলেন, হ্যাঁ, আল্লাহর কসম, আমরা কেবল এ উদ্দেশ্যেই বসেছি।
তিনি বললেন, আমি তোমাদেরকে দোষী ভেবে শপথ দিয়ে জিজ্ঞাসা করিনি (বরং তোমাদেরকে এক মহা সুসংবাদ কোনানোর জন্য কসম করে বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করেছি।) মাত্র জিবরিল আমার কাছে এসে জানিয়েছেন যে, তোমাদের নিয়ে আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করছেন। ১৩
মুসলিম শরিফে আবু সাঈদ খুদরি এবং আবু হুরায়রা রাদি. থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত ছিলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
لَا يَقْعُدُ قَوْمٌ يَذْكُرُونَ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ إِلَّا حَقَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ، وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ، وَنَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِينَةُ، وَذَكَرَهُمُ اللَّهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ.
অর্থ: যারা বসে বসে আল্লাহর জিকির করে, ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে নেয়। আল্লাহর রহমত তাদের ঢেকে নেয়। তাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছের ফেরেশতাদের সঙ্গে জিকিরকারীদের বিষয়ে আলোচনা করেন। ১৪
টিকাঃ
১২. হিলইয়াতুল আউলিয়া: ৬/৩৫৪, আবু নুআইম আসফাহানি।
১৩. সহিহ মুসলিম: ২৭০১, সুনানে তিরমিজি: ৩৩৭৬, সুনানে নাসাঈ ৮/২৪৯।
১৪. সহিহ মুসলিম: ২৭০০, সুনানে তিরমিজি: ৩৫৮৭।
📄 জিকির হবে যবানে ও অন্তরে
জিকির মুখে হতে পারে। আবার অন্তরেও হতে পারে। তবে একই সাথে উভয়টির মাধ্যমে জিকিরই শ্রেষ্ঠ। যদি একটি দিয়ে করতে হয়, তবে অন্তর দিয়ে করাই উত্তম। অবশ্য লোকেরা কী মনে করবে, এজন্য অন্তরের সঙ্গে মুখের জিকিরকে ছেড়ে দেয়া ঠিক না; বরং উভয়টি দিয়েই জিকির করবে। উদ্দেশ্য থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টি।
আগেই আমরা ফুযাইল রহ. থেকে বর্ণনা করে এসেছি যে, মানুষের কারণে আমল ছেড়ে দেয়ার নাম রিয়া বা কপটতা।
মানুষের সমালোচনা ও কথাবার্তার পরোয়া করলে, তাদের অবান্তর ধ্যান-ধারণা থেকে বাঁচতে চাইলে অধিকাংশ ভালো ও কল্যাণের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। দ্বীনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও মহান বিষয়ে অবহেলা করে নিজের ক্ষতি ডেকে আনতে হবে। এটি আরেফিন ও আল্লাহওয়ালাদের পথ নয়। সহিহ বুখারি ও মুসলিমে হজরত আয়েশা রাদি. হতে বর্ণিত আছে-
{وَلَا تَجْهَرْ بِصَلَاتِكَ وَلَا تُخَافِتْ بِهَا أُنْزِلَتْ فِي الدُّعَاءِ.
অর্থ: তোমরা নামাজে আওয়াজ একেবারে উঁচু করো না। আবার বেশি নিচুও করো না-১৫ এই আয়াতটি দুআর ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। ১৬
টিকাঃ
১৫. সুরা বনি ইসরাইল: ১১০।
১৬. সহিহ বুখারি: ৪৭২৩, সহিহ মুসলিম: ৪৪৭।