📄 আল্লাহ সর্বশক্তিমান
আল্লাহ সর্বশক্তিমান: সবকিছুর উপর ক্ষমতাশালী। এটাও আল্লাহ তায়ালার চিরন্তন গুণ। সৃষ্টিজগৎকে সৃষ্টি করার পরে তাঁর মাঝে এই গুণ এসেছে এবং তাঁর ক্ষমতা ও শক্তি প্রকাশ পেয়েছে-এমন নয়। বরং গোটা সৃষ্টির উপর ক্ষমতার গুণ তাঁর মাঝে সর্বদাই ছিল।২ পবিত্র কুরআনের একাধিক আয়াতে বিষয়টির তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَكَادُ الْبَرْقُ يَخْطَفُ أَبْصَارَهُمْ كَلَّمَا أَضَاءَ لَهُمْ مَّشَوْا فِيْهِ وَإِذَا أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُوا وَلَوْ شَاءَ اللهُ لَذَهَبَ بِسَمْعِهِمْ وَأَبْصَارِهِمْ إِنَّ اللَّهَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ .
অর্থ: 'বিজলির আলোতে যখন সামান্য আলোকিত হয়, তখন তারা কিছুটা পথ চলে। আবার যখন অন্ধকার হয়ে যায়, তখন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন, তা হলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি ছিনিয়ে নিতে পারেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ের উপর সর্বময় ক্ষমতাশীল।' [বাকারাহ: ২০] আল্লাহ বলেন,
টিকাঃ
১. বুখারি (৩১৯০, ৩১৯১); ইবনে হিব্বান (৬১৪০); মুসনাদে আহমদ (২০১৩৬); আরশ সম্পর্কিত বিশদ আলোচনা সামনে আসবে, ইনশাআল্লাহ।
২. সালেহ ফাওজান (৩৬)।
📄 আল্লাহ মুখাপেক্ষী
সবকিছু আল্লাহর মুখাপেক্ষী: নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের যাবতীয় বস্তু, মানুষ, জিন ও ফেরেশতা, জন্তু-জানোয়ার, বৃক্ষ-লতা-পাতা, নদী ও সমুদ্র, নির্জীব পাথর ও পদার্থ-সৃষ্টির সবকিছু আল্লাহর মুখাপেক্ষী। কোনোকিছু তাঁর মুখাপেক্ষিতার উর্ধ্বে নয়। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে লক্ষ করে বলেছেন,
يَأَيُّهَا النَّاسُ أَنتُمُ الْفُقَرَاءُ إِلَى اللَّهِ وَاللَّهُ هُوَ الْغَنِيُّ الْحَمِيدُ.
অর্থ: 'হে মানুষ, তোমরা আল্লাহর প্রতি মুখাপেক্ষী। আর আল্লাহ তিনি অভাবমুক্ত প্রশংসিত।' [ফাতির: ১৫] তিনি আরও বলেন,
وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمواتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَبَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ وَإِنْ تَكْفُرُوا فَإِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَواتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ وَكَانَ اللَّهُ غَنِيًّا حَمِيدًا.
অর্থ: 'আর যা-কিছু রয়েছে আসমানসমূহে ও জমিনে, সবই আল্লাহর। আমি নির্দেশ দিয়েছি তোমাদের পূর্ববর্তী গ্রন্থের অধিকারীদের এবং তোমাদের—তোমরা সবাই আল্লাহকে ভয় করো। যদি তোমরা তা না মানো, তবে জেনে রাখো, সে সবকিছুই আল্লাহ তায়ালার, যা-কিছু রয়েছে আসমানসমূহে ও জমিনে। আর আল্লাহ হচ্ছেন অমুখাপেক্ষী, সকল প্রশংসার অধিকারী।' [নিসা: ১৩১]
📄 সবকিছু আল্লাহর জন্য সহজ
সবকিছু আল্লাহর জন্য সহজ: কারণ তিনি সৃষ্টিকর্তা ও সবকিছুর মালিক, সকল ক্ষমতার অধিকারী। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,
إِنَّمَا أَمْرُةً إِذَا أَرَادَ شَيْئًا أَنْ يَقُولَ لَهُ كُنْ فَيَكُونُ.
অর্থ: 'তিনি যখন কোনোকিছু করতে ইচ্ছা করেন, তখন তাকে কেবল বলে দেন, 'হও', তখনই তা হয়ে যায়।' [ইয়াসিন: ৮২]
ফলে সৃষ্টি করা, প্রতিপালন করা, রিজিক দেওয়া, মৃত্যু দেওয়া, পুনরায় জীবিত করা, সবকিছু আল্লাহর জন্য সহজ। তিনি বলেন,
مَا خَلْقَكُمْ وَلَا بَعْثُكُمْ إِلَّا كَنَفْسٍ وَاحِدَةٍ إِنَّ اللَّهَ سَمِيعٌ بَصِيرٌ
অর্থ: 'তোমাদের সৃষ্টি ও পুনরুত্থান তো কেবল একটিমাত্র প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানের মতোই।' [লুকমান: ২৮]
📄 আল্লাহর কিছু প্রয়োজন নেই
আল্লাহর কিছু প্রয়োজন নেই: কারণ তিনি পরিপূর্ণ সত্তা। আর প্রয়োজন হয় তাদেরই, যাদের ভিতরে অপূর্ণতা রয়েছে। ফলে আল্লাহ সকল প্রয়োজনের উর্ধ্বে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعُلَمِينَ.
অর্থ: 'নিশ্চয়ই আল্লাহ গোটা জগৎবাসী থেকে অমুখাপেক্ষী।' [আলে ইমরান: ৯৭]
ফলে আল্লাহকে মানুষের মতো কল্পনা করে আল্লাহর জন্য দেহ ও শরীর সাব্যস্ত করা, তাঁর আরশে বসার কথা বলা ভয়ংকর ব্যাপার, যা কোনো কোনো সম্প্রদায় 'সিফাত' সাব্যস্তের নামে করে থাকে। অথচ সিফাত সাব্যস্ত করার সঙ্গে দেহবাদিতার কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিজের জন্য সিফাত সাব্যস্ত করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর জন্য সিফাত সাব্যস্ত করেছেন, কিন্তু কেউ দেহ সাব্যস্ত করেননি। ফলে সিফাত সাব্যস্ত করার নামে আল্লাহকে মানুষের মতো ভেবে তাঁর জন্য দেহ কিংবা মানুষের মতো যেকোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সাব্যস্ত করা গোমরাহি। কারণ, আল্লাহর কিছুর প্রয়োজন নেই। মানুষের কথা বলতে, চলতে, শুনতে, ধরতে, দেখতে ও ভাবতে যা দরকার হয়, আল্লাহর এমন কিছুরই প্রয়োজন নেই।১ সামনে এ নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা আসবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
فَلَا تَضْرِبُوا لِلَّهِ الْأَمْثَالَ إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
অর্থ: 'অতএব, তোমরা আল্লাহর কোনো সদৃশ সাব্যস্ত করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জানো না।' [নাহল: ৭৪]
টিকাঃ
১. তাফসিরে ইবনে কাসির (৩/৩৮৩)।