📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 হজরত ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর সামনে খলিফা মানসুর

📄 হজরত ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর সামনে খলিফা মানসুর


ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর জ্ঞানের দূরদর্শিতা, সূক্ষ্মতা ও গভীরতা দেখে সুফিয়ান সাওরি রহ. বিস্মিত হয়ে যান।

একবার খলিফা মানসুর ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাবি, ইমাম সাওরি ও অন্য এক ফকিহকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিলেন। কারণ, তিনি তাদের কোনো একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োজিত করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু এ প্রস্তাব তারা মানতে অস্বীকার করছিল। অবশেষে রাজাদেশ অনুযায়ী তাদেরকে গ্রেফতার করা হলো। পথিমধ্যে ফকিহ সাহেব টয়লেটের কথা বলে কেটে পড়লেন। এরপর ইমাম আবু হানিফা রহ. কিয়াফা করে বললেন, আমার মনে হয় খলিফার কাছে গিয়ে আমি যে-কোনোভাবে মুক্তি পেয়ে যাব। ইমাম শারিও মুক্তি পেয়ে যাবে। কিন্তু ফেঁসে যাবে ইমাম সাওরি রহ.।

বাস্তবে ঘটনা তাই ঘটল। তিনজনই খলিফার দরবারে হাজির হলেন। প্রথমে ইমাম শাবি রহ. শুরু করলেন। তিনি বললেন, খলিফা সাহেব! আপনি কেমন আছেন? আপনার পরিবার কেমন আছে? আপনার মহলের অবস্থা কী? আপনার ঘোড়া কেমন আছে? খলিফা অবাক হয়ে গেল। যাকে এনেছি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে সে কিনা সকলের সামনে জিজ্ঞাসা করছে, আমার ঘোড়া কেমন আছে? খলিফা চিন্তা করলেন, না, এ ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্য নয়। তাই তিনি বললেন, না, আমি আপনাকে প্রধান বিচারপতি বানাব না।

এরপর খলিফা আবু হানিফা রহ.-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, আবু হানিফা! আমি আপনাকে প্রধান বিচারপতির পদে নিয়োগ প্রদান করলাম। হজরত আবু হানিফা রহ. কিছুটা সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন, আমি প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্য নই। খলিফা বললেন, না, না। আপনিই তার উপযুক্ত। এরপর আবু হানিফা রহ. বললেন, খলিফা সাহেব! এখন দুটি কথা। আমি যে কথাটি বলেছি সেটি হয়তো সত্য অথবা মিথ্যা। যদি মিথ্যা হয় তাহলে তো আমি মিথ্যাবাদী। আর মিথ্যাবাদী কখনো প্রধান বিচারপতি হওয়ার উপযুক্ত নয়। আর যদি আমি সত্যবাদী হই তাহলে তো আমি বলেই দিয়েছি আমি এর উপযুক্ত নই।
হজরত আবু হানিফা রহ.-এর কথা শুনে খলিফা নির্বাক বনে গেলেন। তিনি যদি এখন বলেন আপনি মিথ্যাবাদী, তাহলেও আবু হানিফা মুক্তি পেয়ে যান। আর যদি বলেন আপনি সত্যবাদী, তাহলেও তিনি মুক্তি পেয়ে যান। এভাবে তিনি পুরো মজলিসকে নিরুত্তর করে দিলেন।

টিকাঃ
১৪. তিনি ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিকের জমানায় ৯৫ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। ২২ বছর খেলাফতের দায়িত্ব পালনের পর তিনি হজে যাওয়ার প্রাক্কালে বিরে মাউনার নিকটে জিলহজ মাসের দুই তারিখে ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন বাদশাহ হারুনুর রশিদের সাহেবজাদা। -তারিখে মিল্লাত: ৭৯

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 এক হাদিস থেকে ৪০টি মাসআলা ইসতিম্বাত

📄 এক হাদিস থেকে ৪০টি মাসআলা ইসতিম্বাত


একবার ইমাম শাফি রহ. হজরত ইমাম মালেক রহ.-এর কাছে গেলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি সারা রাত জাগ্রত অবস্থায় কাটিয়ে দিলেন। সকালে ইমাম মালেক রহ. বললেন, আপনি রাতে ঘুমাননি কেন? তিনি বললেন, আমার মাথায় একটি বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছিল।

একবার হজরত আনাস রাদি.-এর ছোটো ভাইকে উদ্দেশ্যে করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন :
يَا أَبَا عُمَيْرِ مَا فَعَلَ النُّغَيْرِ
'হে আবু উমায়ের! তোমার পাখি কী করছে?'

বাচ্চাটির একটি পাখি ছিল। পাখিটি মরে গিয়েছিল। তারপর থেকে যখনই ছেলেটির সঙ্গে নবিজির দেখা হতো, তখনই তাকে খুশি করার জন্য নবিজি এ বাক্যটি বলতেন।

ইমাম শাফি রহ. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ বাক্য—
يَا أَبَا عُمَيْر مَا فَعَلَ النُّغَيْرِ
থেকে চিন্তা-গবেষণা করে ৪০টি মাসআলা উদ্ভাবন করেছি। যেমন: ছোটো বাচ্চাদের স্নেহের সাথে উপনামের ডাকা যাবে।
সুবহানাল্লাহ! সুবহানাল্লাহ! এ জন্যই তো ইমাম শাফি রহ. বলতেন, হে আল্লাহ! তোমার স্মরণ ছাড়া দিন অতিবাহিত হয় না। আর রাতে তোমার সাথে গোপনে কথা বলা ছাড়া রাত কাটে না।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 শায়খুল হিন্দ রহ.-এর মুখস্থশক্তি

📄 শায়খুল হিন্দ রহ.-এর মুখস্থশক্তি


আমাদের পূর্বসূরি ওলামায়ে কেরামদেরকে আল্লাহ তাআলা অনেক ইলম দান করেছিলেন। একবার শায়খুল হিন্দ মাহমুদুল হাসান রহ. তার ছাত্রকে বললেন, বৃষ্টির মৌসুম শেষ হয়ে গেছে। বর্ষাকালে কিতাবাদি নরম থাকার কারণে তাতে পোকা ধরার সম্ভাবনা থাকে। তাই এখন আমার সব কিতাবগুলো ভালো করে রোদে দিয়ে শুকিয়ে ফেলো। কোনো পৃষ্ঠা ছেঁড়া-ফাটা থাকলে তাও ঠিক করে নাও। ছাত্র কিতাব রোদে দিতে গিয়ে দেখল একটি কিতাবের পাঁচ/ছয় পৃষ্ঠা পোকায় কেটে ফেলেছে। ছাত্র বলল, হজরত! এ কিতাবটির পাঁচ/ছয় পৃষ্ঠা পোকায় কেটে দিয়েছে। শায়খুল হিন্দ রহ. বললেন, এখানে পাঁচ/ছয় পৃষ্ঠা সাদা কাগজ লাগিয়ে দাও। ছাত্র হজরতের কথা অনুযায়ী পাঁচ/ছয় পৃষ্ঠা সাদা কাগজ লাগিয়ে কিতাব রোদে দিলো। কিতাব শুকিয়ে গেলে বলল, হজরত! এখন কী করব? তিনি বললেন, যে ইবারতটুকু নেই সেটুকু লিখে রাখো। ছাত্র বলল, হজরত! আমি এ কিতাবটি গত বছর পড়েছি, এখন আমার ভালো করে মনে নেই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটি কোন কিতাব? ছাত্র বলল, মাইবুজি। এটি একটি অত্যন্ত কঠিন কিতাব। শায়খুল হিন্দ রহ. বললেন, কোন জায়গা থেকে ইবারত নেই? ছাত্র বলার পর তিনি কলম হাতে নিয়ে সেখান থেকে পাঁচ/ছয় পৃষ্ঠা ইবারত লিখে ফেললেন। এ হলো তাদের ইলমের বরকত। কিতাব পড়ার পর বছরের পর বছর অতিবাহিত হয়ে যায়, তারপরও তাদের হুবহু মনে থাকে।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 বিরল মুখস্থশক্তি

📄 বিরল মুখস্থশক্তি


হজরত মাওলানা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরি রহ. ছিলেন মুখস্থশক্তির দৃষ্টান্তহীন ব্যক্তিত্ব। একবার তিনি মিশর গিয়েছিলেন। সেখানের একটি লাইব্রেরিতে 'নুরুল ইজাহ' নামের একটি কিতাব দেখতে পেলেন। তিনি সেখানকার দায়িত্বশীলদের বললেন, এ কিতাবটি কি নেওয়া যাবে? কারণ, আমাদের সংগ্রহে এ কিতাবটি নেই। তারা বলল, না। এরপর তিনি সেখান থেকে কিতাবটি ভালোভাবে মুতালাআ করলেন এবং দেশে ফিরে হুবহু ওই কিতাবটি লিপিবদ্ধ করলেন। এরপর আসল ও নকল একত্র করা হলে দুটির মাঝে কোনো পরিবর্তন দৃষ্টিগোচর হলো না। যা বর্তমান দরসে নেজামির সিলেবাসভুক্ত।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন