📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 হাদিসের হাফেজ এমনও ছিলেন

📄 হাদিসের হাফেজ এমনও ছিলেন


মুখস্থ-শক্তির নিয়ামত মুহাদ্দেসিনে কেরামের নসিব হয়েছিল। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু দাউদ রহ. একবার ইস্পাহান গেলেন। সেখানকার ওলামায়ে কেরাম জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিসের ছেলে হিসেবে তাকে অভ্যর্থনা জানালেন। তিনি আগমন করার পর সবাই অনুরোধ করলেন, আমাদেরকে কিছু হাদিস শোনান। হাদিস শোনার আগ্রহে সকলেই একত্রিত হলো। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে দাউদ রহ. সে মজলিসে ৩৫ হাজার হাদিস শুনিয়ে দিলেন।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ফকিরগণের তীক্ষ্ণ মেধা

📄 ফকিরগণের তীক্ষ্ণ মেধা


সুলাইমান ইবনে মেহরান১৩ ছিলেন বুখারির রিজালদের একজন। তিনি একবার হজরত আবু ইউসুফ রহ.-কে একটি মাসআলা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি মাসআলাটির সমাধান বলে দিলেন। তখন তিনি আবু ইউসুফ রহ.-কে বললেন, আপনি এটা কোত্থেকে শুনেছেন। তিনি বললেন, হজরত! আমি এ হাদিস আপনার থেকেই শুনেছি।

তখন সুলাইমান ইবনে মেহরান বললেন, তোমার জন্মের পূর্ব থেকেই এ হাদিস আমার মুখস্থ। কিন্তু তুমি বলার দ্বারা এর সারমর্ম আমি ভালোভাবে বুঝতে সক্ষম হয়েছি। আসলে আমরা তো হলাম ফার্মেসির ন্যায় আর তোমরা হলে ডাক্তারের ন্যায়। তিনি আরও বলেন, আমরা হাদিসগুলো সঞ্চিত করে রাখি। আর কোন হাদিস থেকে কী মাসআলা বের হবে এটা তো তোমরাই ভালো জানো।

টিকাঃ
১৩. তিনি ৬১ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। ইলমে হাদিসে তার বিশেষ যোগ্যতা থাকার কারণে তাকে শায়খুল ইসলাম বলা হতো। তিনি ১৪৮ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন।۲۰۱ :سیر التابعین

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর জ্ঞানের সূক্ষ্মতা

📄 ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর জ্ঞানের সূক্ষ্মতা


এক দম্পতির মাঝে মনোমালিন্যতা দেখা দিলো। স্বামী তার স্ত্রীর সাথে কথা বলতে চাইল। কিন্তু স্ত্রীর মুখ গোমরা দেখে কথা বলল না। তখন স্বামী রাগ করে বলল, আল্লাহর কসম! যতক্ষণ না তুমি আমার সাথে কথা বলবে, ততক্ষণ আমিও তোমার সাথে কথা বলব না। এরপর স্ত্রীও কসম করে বলল, যতক্ষণ না তুমিও আমার সাথে কথা বলবে, ততক্ষণ আমিও তোমার সাথে কথা বলব না।

এরপর দুজনেই রাগ করে ঘুমিয়ে পড়লেন। যখন সকাল হলো তখন দুজনের রাগ কিছুটা প্রশমিত হলো। এর সমাধানের ব্যাপারে দুজনেই চিন্তিত হলো। তাই স্বামী এর সমাধান জানার জন্য সে সময়ের ফকিহ হজরত সুফিয়ান সাওরি রহ.- এর দরবারে হাজির হলো। তাকে পুরো ঘটনা খুলে বলল। সুফিয়ান সাওরি রহ. বললেন, দুজনের মাঝে যে-ই আগে কথা বলবে, সে-ই কসম ভঙ্গকারী হবে। এখন সমস্যা হলো দুটি :
এক. একদিকে কসম ভঙ্গকারী হবে।
দুই. কসম ভঙ্গকারীর সাক্ষ্য সমাজে গ্রহণ করা হয় না।

কাজেই দুজনের কারোরই ইচ্ছা ছিল না কসম ভঙ্গ করার। এদিকে কসম ভঙ্গ না করলে এর সমাধানও হচ্ছে না। তাই দুজনেই অস্থির, চিন্তিত। হঠাৎ স্বামীর মনে গড়ল ইমামে আজম হজরত আবু হানিফা রহ.-এর কথা। তিনি আবু হানিফা রহ.-এর কাছে গিয়ে ঘটনা খুলে বললেন। আবু হানিফা রহ. বললেন, তুমি গিয়ে তোমার স্ত্রীর সাথে আগে কথা বলো এবং দুজনেই স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে থাকো। স্বামী বাড়িতে ফিরে এসে বলল, কী অবস্থা? তোমার মন-মেযায ঠিক তো? স্ত্রী তো সুযোগ পেয়ে গেল। বলল, তুমি তো কসম ভঙ্গকারী হয়ে গেলে। স্বামী বলল, না। আমি কসম ভঙ্গকারী হইনি। কারণ, এ মাসআলা আমাকে হজরত আবু হানিফা রহ. বলেছেন। আমি তার কাছে এ মাসআলা জানতে গিয়েছিলাম। সে সময়ে মানুষ মাসআলা জানতে অনেক বেশি আগ্রহী ছিল। স্ত্রী বলল, আচ্ছা! আমি নিজে গিয়ে এ মাসআলা জিজ্ঞাসা করব।

দুজনেই এ মাসআলা জানতে হজরত সুফিয়ান সাওরি রহ.-এর কাছে গেল। স্বামী আবু হানিফা রহ.-এর প্রদত্ত ফতওয়া হজরত সুফিয়ান সাওরি রহ.-কে বলল। মাসআলা শুনে হজরত সুফিয়ান সাওরি রহ. খুব রেগে গেলেন। বললেন, আরে! আবু হানিফা তো হারামকে হালাল বানিয়ে দিয়েছেন! চলো, আমিও তোমাদের সাথে যাব তার কাছে।

তিন জনই হাজির হলেন হজরত আবু হানিফা রহ-এর দরবারে। সুফিয়ান সাওরি রহ. বললেন, আবু হানিফা! আপনি তো হারামকে হালাল বানিয়ে দিয়েছেন? ইমাম আবু হানিফা রহ. বললেন, হজরত! আমি তো হালালকে হালালই বলেছি। সুফিয়ান সাওরি রহ. বললেন, আপনি কী বলতে চান? তখন ইমামে আজম রহ. বললেন, আপনি আগে আমার কথা তো শুনুন, আমি কী বলেছি। তখন তিনি বললেন, প্রথমে স্বামী বলেছিল, তুমি যতক্ষণ আমার সাথে কথা না বলবে, ততক্ষণ আমিও তোমার সাথে কথা বলব না। স্বামীর এ কথা বলার পরই তো স্ত্রী কসম করেছিল। তাহলে আপনি বলুন তো, স্ত্রী কার সাথে কথা বলেছিল? স্ত্রী তো স্বামীর সাথেই কথা বলে কসম করেছে। সুতরাং স্ত্রী তো স্বামীর সাথে কথা বলেই ফেলেছে। তাই স্বামীর কসমও পূর্ণ হয়ে গেছে। তবে স্ত্রীর কসম এখনো রয়ে গেছে। তাই আমি স্বামীকে বলেছি, তুমি স্ত্রীর সাথে আগে কথা বলো। এভাবে কথা বলার দ্বারা স্ত্রীর কসমও পূর্ণ হয়ে গেল। তারা এখন আগের মতো জীবনযাপন করতে পারবে।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 হজরত ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর সামনে খলিফা মানসুর

📄 হজরত ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর সামনে খলিফা মানসুর


ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর জ্ঞানের দূরদর্শিতা, সূক্ষ্মতা ও গভীরতা দেখে সুফিয়ান সাওরি রহ. বিস্মিত হয়ে যান।

একবার খলিফা মানসুর ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাবি, ইমাম সাওরি ও অন্য এক ফকিহকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিলেন। কারণ, তিনি তাদের কোনো একজনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োজিত করতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু এ প্রস্তাব তারা মানতে অস্বীকার করছিল। অবশেষে রাজাদেশ অনুযায়ী তাদেরকে গ্রেফতার করা হলো। পথিমধ্যে ফকিহ সাহেব টয়লেটের কথা বলে কেটে পড়লেন। এরপর ইমাম আবু হানিফা রহ. কিয়াফা করে বললেন, আমার মনে হয় খলিফার কাছে গিয়ে আমি যে-কোনোভাবে মুক্তি পেয়ে যাব। ইমাম শারিও মুক্তি পেয়ে যাবে। কিন্তু ফেঁসে যাবে ইমাম সাওরি রহ.।

বাস্তবে ঘটনা তাই ঘটল। তিনজনই খলিফার দরবারে হাজির হলেন। প্রথমে ইমাম শাবি রহ. শুরু করলেন। তিনি বললেন, খলিফা সাহেব! আপনি কেমন আছেন? আপনার পরিবার কেমন আছে? আপনার মহলের অবস্থা কী? আপনার ঘোড়া কেমন আছে? খলিফা অবাক হয়ে গেল। যাকে এনেছি প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করতে সে কিনা সকলের সামনে জিজ্ঞাসা করছে, আমার ঘোড়া কেমন আছে? খলিফা চিন্তা করলেন, না, এ ব্যক্তি প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্য নয়। তাই তিনি বললেন, না, আমি আপনাকে প্রধান বিচারপতি বানাব না।

এরপর খলিফা আবু হানিফা রহ.-এর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন, আবু হানিফা! আমি আপনাকে প্রধান বিচারপতির পদে নিয়োগ প্রদান করলাম। হজরত আবু হানিফা রহ. কিছুটা সামনে অগ্রসর হয়ে বললেন, আমি প্রধান বিচারপতি হওয়ার যোগ্য নই। খলিফা বললেন, না, না। আপনিই তার উপযুক্ত। এরপর আবু হানিফা রহ. বললেন, খলিফা সাহেব! এখন দুটি কথা। আমি যে কথাটি বলেছি সেটি হয়তো সত্য অথবা মিথ্যা। যদি মিথ্যা হয় তাহলে তো আমি মিথ্যাবাদী। আর মিথ্যাবাদী কখনো প্রধান বিচারপতি হওয়ার উপযুক্ত নয়। আর যদি আমি সত্যবাদী হই তাহলে তো আমি বলেই দিয়েছি আমি এর উপযুক্ত নই।
হজরত আবু হানিফা রহ.-এর কথা শুনে খলিফা নির্বাক বনে গেলেন। তিনি যদি এখন বলেন আপনি মিথ্যাবাদী, তাহলেও আবু হানিফা মুক্তি পেয়ে যান। আর যদি বলেন আপনি সত্যবাদী, তাহলেও তিনি মুক্তি পেয়ে যান। এভাবে তিনি পুরো মজলিসকে নিরুত্তর করে দিলেন।

টিকাঃ
১৪. তিনি ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিকের জমানায় ৯৫ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। ২২ বছর খেলাফতের দায়িত্ব পালনের পর তিনি হজে যাওয়ার প্রাক্কালে বিরে মাউনার নিকটে জিলহজ মাসের দুই তারিখে ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তিনি ছিলেন বাদশাহ হারুনুর রশিদের সাহেবজাদা। -তারিখে মিল্লাত: ৭৯

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন