📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইলমের তৃষ্ণায় জেলখানায় অবস্থান

📄 ইলমের তৃষ্ণায় জেলখানায় অবস্থান


হজরত ইমাম তাইমিয়া রহ.-এর জীবনীতে পাওয়া যায়। একবার তৎকালীন সময়ের বাদশাহ তার নিকট কোনো বিষয়ের ফতওয়া চাইলেন। কিন্তু তিনি ফতওয়া দেননি। ফলে বাদশাহ তাকে জেলখানায় বন্দি করেন।

এরপর জেলখানায় কেটে গেল টানা তিনটি দিন। একদিন বাদশাহ সিংহাসনে বসে আছেন। এমন সময় রাজদরবারে কাঁদতে কাঁদতে প্রবেশ করল এক তালিবে ইলম। সে ছিল সুন্দর, সুদর্শন যুবক। তার চেহারায় ছিল মায়াবি ছাপ। তাকে দেখামাত্র রাজদরবারে উপস্থিত সকলেরই মায়ার উদ্রেক হলো। এমনকি রাজার মনেও তার প্রতি মায়া জন্মাল। রাজা তাকে অভয় দিয়ে বললেন, হে যুবক! তুমি কাঁদছ কেন? তুমি এভাবে কেঁদো না। এখানে তোমার কোনো ভয় নেই। তুমি কী চাও বলো, আমি তোমার মনোবাসনা পূর্ণ করব।

বাদশাহর অভয়বাণী শুনে যুবক বলল, বাদশাহ সালামত! আপনি আমাকে জেলখানায় বন্দি করুন। তার কথা শুনে বাদশাহ আশ্চর্য হয়ে গেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, জেলখানায় যাওয়ার জন্য তুমি এমন উৎসুক কেন? যুবক বলল, আজ তিন দিন হলো আপনি আমার উস্তাদকে জেলখানায় বন্দি করে রেখেছেন। যার ফলে আমি আমার উস্তাদের নিকট থেকে সবক পড়তে পারছি না। আপনি যদি আমাকে জেলখানায় বন্দি করেন, তাহলে আমি সেখানে আমার উস্তাদের নিকট থেকে সবক পড়তে পারব। কারাবরণ করার কষ্ট আমার কাছে কোনো কষ্টই মনে হবে না।

এ তালিবুল ইলম ছিল হজরত তাইমিয়া রহ.-এর ছাত্র। কিন্তু আফসোস! বর্তমানে এমন দৃশ্য দেখা যায় না। এমন চরিত্র আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। আমাদের সম্পর্ক বর্তমানে টিভি ও ছবির সঙ্গে। কুরআনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কুরআন খুলে দেখার সময়ও আমাদের নেই। কিছু পরিবার তো এমন রয়েছে, যাদের কুরআন শরিফ খুলে দেখার সময়ই হয় না।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইলমের পিপাসা এখনও হয়?

📄 ইলমের পিপাসা এখনও হয়?


হজরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ. যখন শেষ বয়সে উপনীত হলেন, তখন একদিন তার ছেলে হজরত শাহ আবদুল আজিজ রহ. ক্লাসে পাঠদান করা অবস্থায় পানি চাইলেন। এক ছাত্র দৌড়ে তার ঘরে গিয়ে বলল, শাহ সাহেব পানি চেয়েছেন। তখন শাহ ওয়ালিউল্লাহ রহ. বললেন, আফসোস! আমার বংশ থেকে ইলম উঠে গেছে। তখন তার স্ত্রী বললেন, আপনি এ কথা বলার ব্যাপারে এত ত্বরা করবেন না। আগে বাস্তব অবস্থা পরীক্ষা করে দেখি। এরপর তিনি পানির গ্লাসে কিছু সিরকা মিশিয়ে পাঠিয়ে দিলেন। সিরকা সাধারণত তিক্ত ও ভিন্ন স্বাদের হয়ে থাকে। যা পানির স্বাদের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। পানির গ্লাস শাহ আবদুল আজিজ রহ.-এর হাতে দেওয়ার পর তিনি তা পান করলেন। তারপর ক্লাস শেষ হওয়ার পর যখন ঘরে এলেন, তখন তার মা জিজ্ঞাসা করলেন, বেটা! তুমি যে পানি পান করেছ, তার স্বাদ কেমন ছিল? তিনি বললেন, মা! তা তো বলতে পারব না। তখন মা বাবার কাছে গিয়ে বললেন, দেখলেন তো! আবদুল আজিজ ইলমের প্রতি গাফলতির কারণে পানি পান করেনি; বরং সে তীব্র পানির পিপাসার কারণেই পানি পান করেছে। যা তার আসলেই প্রয়োজন ছিল। অন্যথায় হয়তো সে ক্লাস করাতে পারত না। সুতরাং আমাদের বংশ থেকে এখনো ইলমের আদব উঠে যায়নি। তখন শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি রহ. একটি তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললেন এবং দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! তুমি আমার বংশে সর্বদা ইলম ও ইলমের আদব জারি রেখো।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ফতওয়া পড়তে পড়তে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে গেলেন

📄 ফতওয়া পড়তে পড়তে আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে গেলেন


দারুল উলুম দেওবন্দের এক মুফতি সাহেবের জীবনালেখ্য পাওয়া যায় যে, তার মৃত্যুর পর তার বুকের ওপর একটি ফতওয়ার কাগজ পাওয়া গিয়েছিল। মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ফতওয়া পড়তে ছিলেন। ফতওয়া পড়া অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আর ফতওয়ার কাগজটি তার হাত থেকে বুকের ওপর পড়ে যায়।

আমাদের আকাবিরে দীন এভাবেই সময়কে গনিমত মনে করতেন। ইবাদতের মাধ্যমে সময়কে ব্যয় করতেন।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 এমনও জ্ঞানপিপাসু ছিল তখন

📄 এমনও জ্ঞানপিপাসু ছিল তখন


হজরত শাহ আবদুল কাদের রায়পুরি রহ.৯ বলেন, আমি ভর্তির জন্য দারুল উলুম দেওবন্দে গেলাম। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর নাজেমে তালিমাত সাহেবের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে, ভর্তি বন্ধ হয়ে গেছে। আমি হজরতকে খুব বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করলাম, হজরত। আমি কি জানতে পারি ভর্তি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ কী? নাজেম সাহেব আমাকে বললেন, আসলে আমাদের এখানে ছাত্রদের কোনো বোডিংয়ের ব্যবস্থা নেই। গ্রামবাসী যে কজন ছাত্রের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে পারে, সে কজন ছাত্রকেই ভর্তি করি। অন্যদের ফিরিয়ে দিই। তখন আমি বললাম, হজরত! আমার খাবারের দায়িত্ব যদি আমার নিজের ওপর থাকে, তাহলে কি আমি ভর্তি হতে পারব? তিনি বললেন, তাহলে ঠিক আছে। অবশেষে আমি ভর্তি হলাম। আর আমি সারা দিন ক্লাস করতাম, রাতে তকরার করতাম। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ত, তখন আমি পাশের বস্তিতে অবস্থিত বাজারে যেতাম। বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সেখানে আমের খোসা, তরমুজের খোসা পাওয়া যেত। আমি সেগুলো কুড়িয়ে এনে ভালো করে পরিষ্কার করে খেয়ে ফেলতাম। এরপর সারা দিন ক্লাস করতাম। এটাই ছিল আমার সারা দিনের খাবার। এভাবে আমি সারা বছর অতিবাহিত করলাম। কিন্তু কোনো দিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতাম না।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন