📄 ইবনে আসাকের রহ.-এর স্রোত হাদিসের কপিগুলো পৌঁছতে বিলম্ব হওয়া ও না পৌঁছা পর্যন্ত এর জন্য তার চরম অস্থিরতা
তার ছেলে হাফেজ আবু মুহাম্মদ কাসেম রহ. বলেন, আমার আব্বা অনেক কিতাব শুনেছিলেন, যেগুলোর কপি তিনি তৈরি করেননি তার সহপাঠী হাফেজ আবু আলি ইবনুল ওয়াজির রহ.-এর কপিগুলোর ওপর নির্ভর করে। ইবনুল ওয়াজির রহ. যেগুলোর কপি তৈরি করতেন আমার আব্বা সেগুলোর কপি নকল করতেন না। আর আমার আব্বা যেগুলোর কপি নকল করতেন ইবনুল ওয়াজির সেগুলোর কপি তৈরি করতেন না।
একদা কোনো এক রাতে তাকে শুনেছি। তিনি জামে মসজিদে চাঁদের আলোতে তার এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, আমি সফর করেছি, কিন্তু যদি না করতাম তা-ই ভালো হতো। অনেক কিতাব পড়েছি, কিন্তু যদি না পড়তাম তা-ই ভালো হতো! আমি ধারণা করেছিলাম, আমার সাথি ইবনুল ওয়াজির রহ. আমার শ্রোত কিতাবগুলো নিয়ে আসবে। যেমন: সহিহ বুখারি, মুসলিম, বায়হাকির কিতাবগুলো, উঁচু সনদের আজজাগুলো। কিন্তু ঘটনাচক্রে সে মারু এলাকায় স্থায়ী হয়ে গেছে, সেখানেই সে অবস্থান করবে। আমার কিতাবগুলো আর নিয়ে আসবে না।
আমি আশা করেছিলাম যে, আমার আরেক সাথি হয়ত আসবে। তার নাম ইউসুফ ইবনে ফারওয়া জাইয়ানী রহ.। এবং আমাদের আরেক সাথি আবুল হাসান মুরাদি রহ. আসার কথা ছিল। সে আমাকে বলে ছিল, আমি দামেশকে যাবো, কিন্তু কই! কেউ তো দামেশকে আসল না। তাই আমার তৃতীয়বার সফর করতে হবে। বড়ো বড়ো কিতাবগুলো ও গুরুত্বপূর্ণ আজজাগুলো আনতে হবে।
অল্প কিছু দিন পরেই তার এক বন্ধু আসল। তার দরজায় কড়া নাড়ল। সে বলল, আবুল হাসান মুরাদি এসেছে। আমার পিতা তার কাছে নেমে গেলেন। তাকে স্বাগত জানিয়ে তার বাড়িতে সসম্মানে অবস্থান করালেন। সে চার বস্তা ভরে তার শ্রোত কিতাবগুলো নিয়ে আসল। আমার পিতা দেখে অত্যন্ত খুশি হলেন। এবং আল্লাহর শুকর আদায় করলেন যে, তিনি অতি সহজে কোনো কষ্ট ছাড়াই তার শ্রোত কিতাবগুলো এনে দিলেন। তার আর সফর করতে হবে না। এরপর তিনি কিতাবগুলোর কপি তৈরি করতে শুরু করলেন। যখনই কোনো একটি জুজ এর কপি তৈরি করে শেষ করতেন মনে হতো যেন তিনি সারা দুনিয়া অর্জন করে ফেলেছেন।” (ইবনে আসাকেরের আলোচনা শেষ হলো।)
পাঠক! এই মহান ইমাম হাফেজ ইবনে আসাকের. দামেশকি রহ.-এর সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানে শেষ হলো। তাতে কত শত বিস্ময়কর অবাক করার মত দুর্লভ ঘটনাবলি আপনি দেখেছেন। যদি তিনি সময়ের সদ্ব্যাবহার না করতেন, যদি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে গনিমত মনে না করতেন তাহলে এত বিশাল বিশাল গ্রন্থ তার দ্বারা রচিত হওয়া সম্ভব হতো না। যা বর্তমানে কেনো একাডেমির পক্ষেও লেখা তো দূরের কথা ছাপাও সম্ভবপর হবে না। কাজেই ভাই! সময়ের হেফাজত করুন, সময়ই সকল বরকত ও কল্যাণের ভান্ডার।
📄 ইমাম মুসলিম রহ.-এর মুতালাআর নিমগ্নতা
ইমাম মুসলিম রহ. ছিলেন হাদিসের জগতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তার জীবনের প্রসিদ্ধ ঘটনা :
একবার তিনি হাদিসের মুতালাআয় খুব বেশি নিমগ্ন ছিলেন। তখন তার ক্ষুধাও লেগেছিল। পাশে খেজুরের একটি টুকরি রাখা ছিল। কিতাবের পাতা উল্টাচ্ছিলেন আর একটি করে খেজুর মুখে দিচ্ছিলেন। হাদিস মুতালাআয় তিনি এত বেশি মগ্ন ছিলেন যে, কী পরিমাণ খেজুর খেয়ে ফেললেন তা নিজেও বুঝতে পারলেন না। এমনকি অতিরিক্ত খাবারের ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এ অসুস্থতায় ইন্তেকাল করেন।
টিকাঃ
৮. হজরত ইবনে সিরিন রহ.-এর বর্ণনামতে তিনি ২০৬ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন। রজব মাসের ২৫ তারিখ ২৬১ হিজরি সনে তিনি ইন্তেকাল করেন।
📄 হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ.-এর ইলমি মজলিস
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ.-এর দরবারে দরসে হাদিসের বড়ো মজলিস হতো। একবার দোয়াতের সংখ্যা গণনা করে সেখানে চল্লিশ হাজার দোয়াত পাওয়া গেল। সে সময় স্পিকার বক্স ছিল না। তাই হাদিসের দরসে নামাজের মুকাব্বিরের ন্যায় মুকাব্বির নিযুক্ত ছিল। সে মজলিসে বারোশ মুকাব্বির নিযুক্ত ছিল। যে মজলিসের মুকাব্বিরের সংখ্যা বারোশ, সে মজলিসের পরিধি কত বড়ো হবে? তারা এত বড়ো মজলিসে হাদিসের দরস প্রদান করতেন।
📄 ইলমের প্রতি আকর্ষণ তো একেই বলে
ইমাম মুহাম্মদ রহ. এক জায়গায় দরস দিতেন। সেখান থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি বস্তি ছিল। সে বস্তির কিছু লোক তার কাছে এসে আবেদন করল, হজরত! আপনি আমাদের এখানে তাশরিফ আনুন। আমাদেরকে আপনার দরসে বসার সুযোগ করে দিন। তিনি বললেন, আমার হাতে সময় খুব কম। তারা বলল, হজরত! আমরা আপনার জন্য সওয়ারির ব্যবস্থা করব। এখানে পায়ে হেঁটে আসতে আপনার যে সময়টুকু ব্যয় হয়, সওয়ারিতে আরোহণ করে এসে সে সময়টুকু আমাদেরকে দিন।
তিনি তাদের এ প্রস্তাব কবুল করলেন। যখন তিনি সেখানে দরস প্রদান শুরু করলেন তখন তার দরসে হজরত ইমাম শাফি রহ.-ও উপস্থিত হলেন। তিনি আবেদন করলেন, হজরত! আমি আপনার নিকট অমুক কিতাবটি পড়তে চাই। তখন ইমাম মুহাম্মদ রহ. বললেন, ভাই! আমার হাতে তো সময় খুবই কম। আমাকে এখানেও পড়াতে হবে আবার ওই এলাকাতেও পড়াতে হবে। সুতরাং তোমাকে আলাদা সময় দেওয়ার মতো সময় তো আমার হাতে নেই। ইমাম শাফি রহ. বললেন, হজরত! আপনি এখান থেকে দরস শেষ করে যখন সওয়ারিতে আরোহণ করে ওই এলাকায় যাবেন, তখন আপনি সওয়ারিতে বসে বসে আমাকে দরস প্রদান করবেন। আর আমি দৌড়ে দৌড়ে আপনার দরস শুনব।
চিন্তা করুন! পৃথিবীতে ইলম ও জ্ঞানার্জনের প্রতি আকর্ষণের এরচে' উৎকৃষ্ট কোনো উদাহরণ আর কী হতে পারে? এটা হলো ইসলামের সৌন্দর্য।