📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইবনে আসাকের রহ.-এর ইলমের জন্য একাগ্রতা, তার শায়খ ও শায়খার আধিক্যতা, এবং তার আত্মতৃপ্তি

📄 ইবনে আসাকের রহ.-এর ইলমের জন্য একাগ্রতা, তার শায়খ ও শায়খার আধিক্যতা, এবং তার আত্মতৃপ্তি


৩. ইমাম তাজুদ্দিন সুবকি রহ. 'তাবাকাতুশ শাফেয়িয়্যাতিল কুবরা' নামক গ্রন্থে তার জীবনী আলোচনায় বলেছেন, তিনি ছিলেন মহান ইমাম, উম্মতের হাফেজ, আবুল কাসেম ইবনে আসাকের রহ.। তার পূর্বপুরুষদের মধ্যে কারও নাম আসাকের ছিল কি না আমার জানা নেই। কিন্তু তিনি এ নামেই বিখ্যাত হয়েছেন। তিনি সুন্নাহর সমর্থক ও খাদেম ছিলেন। স্ব-যুগের মুহাদ্দিসগণের ইমাম ছিলেন। বিদগ্ধ হাফেজে হাদিসদের সর্বশেষ মনীষী ছিলেন। বিদ্যান্বেষীদের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ইলমে পারদর্শী ছিলেন। ইলম ও আমল ছাড়া তার কোনো সঙ্গী ছিল না। এ দুটোই ছিল তার চূড়ান্ত লক্ষ্য। তিনি চরম হিফজশক্তির অধিকারী ছিলেন। নতুন পুরাতন সবকিছুই তার কাছে বরাবর ছিল। আয়ত্তশক্তিতে পূর্বসূরিদেরকে ছাড়িয়ে না গেলেও সমান সমান ছিলেন। তিনি বিদ্যাকুবের ছিলেন, আর সকল আলেম তার সামনে ভিখারির মতো ছিল।

তিনি অনেক মুহাদ্দিসের নিকট হাদিস শুনছেন। তার শায়খের সংখ্যা এক হাজার তেরোশ। মাস্তুরাত শায়খার সংখ্যা আশির ওপরে। সফর করেছেন ইরাক, মক্কা, মদিনা। অনারব শহরগুলোতেও তিনি সফর করেছেন। অতপর আসবাহান, নিশাপুর, মারু, তিবরিজ, মিহানা, বায়হাক, খুসরোজুরদ, বিসতাম, দামিগান, রায়, জানজান, হামাজান, আসাদাবাদ, জাই, হারাত, বাওয়ান, বাগ, বুশানজ, সারাখস, নুকান, সিমনান, আবহার, মারান্দ, খুওয়াই, জারবাজাকান, মুশকান, রোজরাওয়ার, হুলওয়ান, আরজিশে হাদিস শুনেছেন।

তিনি আম্বার, রাফেকাহ, রাহবাহ, মারদিন, মাকিসিন ইত্যাদি অনেক শহরে হাদিস শুনেছেন। বিশাল বিশাল শহর ও দেশ তিনি সফর করেছেন। অনেক দূরের শহরও তিনি বাদ দেননি। শুধু কোনো পরহেজগার ব্যক্তিকেই তিনি সফরসঙ্গী বানিয়েছেন। তিনি এমন দৃঢ়চেতা ছিলেন যে, কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে না পৌঁছে তিনি ক্ষান্ত হতেন না।

তার শায়খ খতিব আবুল ফজল তোসি রহ. বলেন, বর্তমানে হাফেজ উপাধিটি সে ছাড়া আর কেউ পাওয়ার যোগ্য বলে আমার জানা নেই। ইবনুন নাজ্জার রহ. বলেছেন, তিনি স্ব-যুগের ইমামুল মুহাদ্দিসিন ছিলেন। মুখস্থশক্তি, আয়ত্তশক্তি, উলুমুল হাদিসের পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান, নির্ভরযোগ্যতা, সম্ভ্রান্ততা, সুলিখন ইত্যাদি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি ও সর্বশেষ মনীষী।

ইবনুন নাজ্জার রহ. বলেন, আমাদের শায়খ আব্দুল ওয়াহাব ইবনে আমিনকে বলতে শুনেছি, একদিন আমি হাফেজ আবুল কাসেম ইবনে আসাকের রহ. ও আবু সাদ ইবনে সামআনি রহ.-এর সঙ্গে ছিলাম। আমরা হাদিস অন্বেষণ ও শায়খদের সাথে সাক্ষাতের জন্য সফর করছিলাম। রাস্তায় আমাদের জনৈক শায়খের সাথে দেখা হলো। ইবনুস সামআনি রহ. তাকে থামালেন তার কাছে পড়ার জন্য। এরপর তিনি তার ব্যাগে একটি জুজ খুঁজলেন, যা উক্ত শায়খ শুনেছেন। কিন্তু পেলেন না। যার দরুন তিনি অত্যন্ত বিরক্ত হলেন। ইবনে আসাকের তাকে বললেন, কোন জুজটি তিনি শুনেছেন? ইবনুস সামআনি বললেন, ইবনে আবি দাউদের 'কিতাবুল বাসি ওয়ান নুশুর'। তিনি আবু নসর জাইনাবি রহ.-এর কাছে সেটা শুনেছেন। ইবনে আসাকের রহ. বললেন, চিন্তা করো না। অতঃপর তিনি পুরো কিতাবটা বা কিংদংশ মুখস্থ পড়লেন। ইবনুন নাজ্জার রহ. বলেন, আমার শায়খের সন্দেহ।

ইমাম নববি তার ব্যাপারে বলেছেন, তার হস্তলিপি থেকেই আমি নকল করেছি। তিনি শামের হাফেজ বরং সারা দুনিয়ার হাফেজ ছিলেন। তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী ইমাম, নির্ভরযোগ্য ও প্রতিষ্ঠিত মনীষী ছিলেন।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইবনে আসাকের রহ.-এর স্রোত হাদিসের কপিগুলো পৌঁছতে বিলম্ব হওয়া ও না পৌঁছা পর্যন্ত এর জন্য তার চরম অস্থিরতা

📄 ইবনে আসাকের রহ.-এর স্রোত হাদিসের কপিগুলো পৌঁছতে বিলম্ব হওয়া ও না পৌঁছা পর্যন্ত এর জন্য তার চরম অস্থিরতা


তার ছেলে হাফেজ আবু মুহাম্মদ কাসেম রহ. বলেন, আমার আব্বা অনেক কিতাব শুনেছিলেন, যেগুলোর কপি তিনি তৈরি করেননি তার সহপাঠী হাফেজ আবু আলি ইবনুল ওয়াজির রহ.-এর কপিগুলোর ওপর নির্ভর করে। ইবনুল ওয়াজির রহ. যেগুলোর কপি তৈরি করতেন আমার আব্বা সেগুলোর কপি নকল করতেন না। আর আমার আব্বা যেগুলোর কপি নকল করতেন ইবনুল ওয়াজির সেগুলোর কপি তৈরি করতেন না।

একদা কোনো এক রাতে তাকে শুনেছি। তিনি জামে মসজিদে চাঁদের আলোতে তার এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, আমি সফর করেছি, কিন্তু যদি না করতাম তা-ই ভালো হতো। অনেক কিতাব পড়েছি, কিন্তু যদি না পড়তাম তা-ই ভালো হতো! আমি ধারণা করেছিলাম, আমার সাথি ইবনুল ওয়াজির রহ. আমার শ্রোত কিতাবগুলো নিয়ে আসবে। যেমন: সহিহ বুখারি, মুসলিম, বায়হাকির কিতাবগুলো, উঁচু সনদের আজজাগুলো। কিন্তু ঘটনাচক্রে সে মারু এলাকায় স্থায়ী হয়ে গেছে, সেখানেই সে অবস্থান করবে। আমার কিতাবগুলো আর নিয়ে আসবে না।
আমি আশা করেছিলাম যে, আমার আরেক সাথি হয়ত আসবে। তার নাম ইউসুফ ইবনে ফারওয়া জাইয়ানী রহ.। এবং আমাদের আরেক সাথি আবুল হাসান মুরাদি রহ. আসার কথা ছিল। সে আমাকে বলে ছিল, আমি দামেশকে যাবো, কিন্তু কই! কেউ তো দামেশকে আসল না। তাই আমার তৃতীয়বার সফর করতে হবে। বড়ো বড়ো কিতাবগুলো ও গুরুত্বপূর্ণ আজজাগুলো আনতে হবে।

অল্প কিছু দিন পরেই তার এক বন্ধু আসল। তার দরজায় কড়া নাড়ল। সে বলল, আবুল হাসান মুরাদি এসেছে। আমার পিতা তার কাছে নেমে গেলেন। তাকে স্বাগত জানিয়ে তার বাড়িতে সসম্মানে অবস্থান করালেন। সে চার বস্তা ভরে তার শ্রোত কিতাবগুলো নিয়ে আসল। আমার পিতা দেখে অত্যন্ত খুশি হলেন। এবং আল্লাহর শুকর আদায় করলেন যে, তিনি অতি সহজে কোনো কষ্ট ছাড়াই তার শ্রোত কিতাবগুলো এনে দিলেন। তার আর সফর করতে হবে না। এরপর তিনি কিতাবগুলোর কপি তৈরি করতে শুরু করলেন। যখনই কোনো একটি জুজ এর কপি তৈরি করে শেষ করতেন মনে হতো যেন তিনি সারা দুনিয়া অর্জন করে ফেলেছেন।” (ইবনে আসাকেরের আলোচনা শেষ হলো।)

পাঠক! এই মহান ইমাম হাফেজ ইবনে আসাকের. দামেশকি রহ.-এর সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানে শেষ হলো। তাতে কত শত বিস্ময়কর অবাক করার মত দুর্লভ ঘটনাবলি আপনি দেখেছেন। যদি তিনি সময়ের সদ্ব্যাবহার না করতেন, যদি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে গনিমত মনে না করতেন তাহলে এত বিশাল বিশাল গ্রন্থ তার দ্বারা রচিত হওয়া সম্ভব হতো না। যা বর্তমানে কেনো একাডেমির পক্ষেও লেখা তো দূরের কথা ছাপাও সম্ভবপর হবে না। কাজেই ভাই! সময়ের হেফাজত করুন, সময়ই সকল বরকত ও কল্যাণের ভান্ডার।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইমাম মুসলিম রহ.-এর মুতালাআর নিমগ্নতা

📄 ইমাম মুসলিম রহ.-এর মুতালাআর নিমগ্নতা


ইমাম মুসলিম রহ. ছিলেন হাদিসের জগতে এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তার জীবনের প্রসিদ্ধ ঘটনা :

একবার তিনি হাদিসের মুতালাআয় খুব বেশি নিমগ্ন ছিলেন। তখন তার ক্ষুধাও লেগেছিল। পাশে খেজুরের একটি টুকরি রাখা ছিল। কিতাবের পাতা উল্টাচ্ছিলেন আর একটি করে খেজুর মুখে দিচ্ছিলেন। হাদিস মুতালাআয় তিনি এত বেশি মগ্ন ছিলেন যে, কী পরিমাণ খেজুর খেয়ে ফেললেন তা নিজেও বুঝতে পারলেন না। এমনকি অতিরিক্ত খাবারের ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং এ অসুস্থতায় ইন্তেকাল করেন।

টিকাঃ
৮. হজরত ইবনে সিরিন রহ.-এর বর্ণনামতে তিনি ২০৬ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন। রজব মাসের ২৫ তারিখ ২৬১ হিজরি সনে তিনি ইন্তেকাল করেন।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ.-এর ইলমি মজলিস

📄 হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ.-এর ইলমি মজলিস


হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ.-এর দরবারে দরসে হাদিসের বড়ো মজলিস হতো। একবার দোয়াতের সংখ্যা গণনা করে সেখানে চল্লিশ হাজার দোয়াত পাওয়া গেল। সে সময় স্পিকার বক্স ছিল না। তাই হাদিসের দরসে নামাজের মুকাব্বিরের ন্যায় মুকাব্বির নিযুক্ত ছিল। সে মজলিসে বারোশ মুকাব্বির নিযুক্ত ছিল। যে মজলিসের মুকাব্বিরের সংখ্যা বারোশ, সে মজলিসের পরিধি কত বড়ো হবে? তারা এত বড়ো মজলিসে হাদিসের দরস প্রদান করতেন।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন