📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 মৃত্যুর মাত্র এক মুহূর্ত পূর্বে ইবনে জারির রহ. একটি দুআ লিখেছেন

📄 মৃত্যুর মাত্র এক মুহূর্ত পূর্বে ইবনে জারির রহ. একটি দুআ লিখেছেন


বিখ্যাত লেখক মুহাম্মদ কুরদ আলি রহ. 'কুনুজুল আজদাদ' নামক কিতাবে ইবনে জারির তাবারি রহ.-এর জীবনী আলোচনায় বলেছেন, তিনি তার জীবনের কোনো একটি মুহূর্ত অযথা নষ্ট করেছেন বলে বর্ণিত নেই। প্রতিটি মুহূর্তে তিনি হয়তো উপকৃত হয়েছেন বা উপকৃত করেছেন। মাআফি ইবনে জাকারিয়া রহ. নির্ভরযোগ্য এক ব্যক্তির সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি আবু জাফর তাবারির মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে তার কাছে ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা গেছেন। এই সময় তার সামনে জাফর ইবনে মুহাম্মদ রহ. হতে একটি দোয়া উল্লেখ করা হলো। সাথে সাথে তিনি দোয়াত ও কালি আনতে বললেন এবং দুআটি লিখে নিলেন। তাকে বলা হলো, এমতাবস্থায়ও লিখতে হয়? জবাবে তিনি বললেন, মানুষের উচিত আমৃত্যু ইলম অর্জন করা। আল্লাহ তায়ালা তাকে রহম করুন, ইলম, দীন, ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে তাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 লিখিত কিতাবাদি ও স্বীয় অক্ষয় কীর্তিসমূহের মাধ্যমে ইবনে জারির রহ. অমর হয়ে আছেন

📄 লিখিত কিতাবাদি ও স্বীয় অক্ষয় কীর্তিসমূহের মাধ্যমে ইবনে জারির রহ. অমর হয়ে আছেন


ইবনে জারির রহ.-এর লিখিত কিতাবাদির পূর্বোক্ত তালিকাটি তার রচনাবলির প্রতি সামান্য ইঙ্গিত মাত্র। সেখানে তার সবগুলো কিতাবের নাম ও বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তার কয়েকটি কিতাব অমরত্ব লাভে ধন্য হয়েছে। এগুলো তাকে স্মরণীয় করে রাখবে সন্তান ও বংশধরের চেয়েও অধিক, যদিও তাদের সংখ্যা দশ, বিশ বা ত্রিশ হয়। কারণ, তারা তো অল্পদিনের মধ্যেই বিলুপ্তির আধারে হারিয়ে যাবে। বিস্মৃতির ও অবহেলার ভাঁজে ভাঁজে প্রবিষ্ট হয়ে অদৃশ্য হয়ে যাবে। কিন্তু তার রচনাগুলো যুগ যুগ ধরে অক্ষয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুর পর প্রায় এগারোশ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, কিন্তু তার রচনাগুলো আজও অম্লান হয়ে আছে। যতদিন পর্যন্ত দিন-রাতের আবর্তন অব্যাহত থাকবে, ততদিন তার রচনাগুলো চির অক্ষয় হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ। ইমাম ইবনুল জাওজি রহ. সত্যিই বলেছেন, আলেমের কিতাবই তার অমর সন্তান।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইসলামি গ্রন্থভান্ডার সমৃদ্ধকরণে হাফেজ ইবনে আসাকের রহ.-এর বিশাল অবদান

📄 ইসলামি গ্রন্থভান্ডার সমৃদ্ধকরণে হাফেজ ইবনে আসাকের রহ.-এর বিশাল অবদান


হাফেজ ইবনে আসাকের রহ. আবুল কাসেম দামেশকি আলি ইবনে হাসান রহ., (জন্ম : ৪৯৯ হিজরি, মৃত্যু: ৫৭১ হিজরি) তিনি নিজ সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত হেফাজত করতেন। তিনি ইসলামি গ্রন্থাগারকে এমন সব পুস্তকাদি সরবরাহ করে গেছেন, যা আজকালকার একাডেমিগুলো ছাপতেও সক্ষম হবে না, লিখবে তো দূরের কথা। অথচ এগুলো তিনি একা লিখেছেন। নিজ হাতে নিজ কলমে লিখেছেন। সেগুলোকে পরিশীলিত করেছেন। মূল কিতাবগুলো একত্রিত করে তা থেকে নির্বাচন করেছেন। বিন্যস্ত করেছেন। অতঃপর জনসমক্ষে প্রকাশ করেছেন। এগুলো যেন বিস্ময়কর রচনাধিক্য ও লেখনীর সক্ষমতায় তার দৃঢ়চেতনা, জ্ঞানের বিশালতা ও মুখস্থশক্তির বিস্তৃতিতে তার যুগের বিস্ময় হওয়ার জীবন্ত অবাক প্রতীক। এখানে আমি তিনটি কিতাব থেকে তার জীবনীর একটি দিক সংক্ষেপে তুলে ধরব। তা হলো ইলমের জন্য তার সফরাধিক্য, রচনাবলির পর্যাপ্ততা ও সময়ের প্রতিটি মুহূর্ত হেফাজত করা-সংক্রান্ত দিকটি।

(১) বিখ্যাত ইতিহাসবিদ কাজি ইবনে খাল্লিকান রহ. 'ওফায়াতুল আয়ান' নামক কিতাবে তার জীবনী আলোচনায় বলেছেন, তিনি স্ব-যুগের শামের মুহাদ্দিস ছিলেন। শাফেয়ি ফুকাহাদের অন্যতম বিশেষ ফকিহ ছিলেন। হাদিস চর্চাই তার জীবনের বড়ো ব্যস্ততা ছিল। তাই মুহাদ্দিস হিসেবেই তিনি বিখ্যাত হয়েছিলেন। তিনি হাদিস অন্বেষণে প্রচুর মেহনত করেছেন। ফলে এমন সব হাদিস সংগ্রহ করেছেন যা অন্যরা করতে পারেনি। তিনি দেশ-বিদেশ সফর করেছেন। বহু মাশায়েখের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি হাফেজ আবু সাদ আব্দুল করিম ইবনে সামআনি রহ.-এর সফরসঙ্গী ছিলেন। মুসলিম বিশ্বে সামআনি রহ.-এর শায়খদের সংখ্যা-যাদের সাথে তিনি সাক্ষাৎ করেছেন-সাত হাজার ছিল।
তিনি অত্যন্ত দীনদার হাফেজ ছিলেন। সনদ ও মতন উভয়টাই আয়ত্ত করেছেন। তিনি বাগদাদে হাদিস শুনেছেন। এরপর দামেশকে ফিরে এসেছেন। তারপর খুরাসান সফরে গিয়েছেন। নিশাপুর, হারাত, আসবাহান ও পার্বত্যাঞ্চলে প্রবেশ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ পুস্তকাদি রচনা করেছেন। বহু তাখরিজ করেছেন। হাদিস সম্পর্কে সুন্দর আলোচনা করতে পারতেন। সংকলন তৈরিতে আল্লাহপ্রদত্ত যোগ্যতার অধিকারী ছিলেন। আশি খণ্ডে তারিখে দামেশক লিখেছেন। বিস্ময়কর তথ্যাবলি সেথায় সন্নিবেশিত করেছেন। এটা খতিব বাগদাদি রহ.-এর তারিখে বাগদাদের আদলে লেখা। কিন্তু কলেবরে ও অভিনব বিষয়াদিতে এর চেয়ে হাজার গুণ বড়ো।
আমাকে আমার শায়খ মিশরের হাফেজ আল্লামা জাকিউদ্দিন আবু মুহাম্মদ আব্দুল আজিম মুনজিরি রহ. উক্ত ইতিহাস গ্রন্থটি সম্পর্কে আলোচনা করে তিনি একটি খণ্ড বের করে অনেকক্ষণ যাবৎ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছেন, আমার মনে হয় তিনি বোঝমান হওয়ার সময় থেকেই ইতিহাস গ্রন্থটি লেখার সিন্ধান্ত নিয়েছেন। সে সময় থেকেই সংকলন শুরু করেছেন। অন্যথায় পাঠদান ও মানুষের ভিড়ের পাশাপাশি এ ধরনের কিতাব সারা জীবনেও লেখা সম্ভব নয়।
তিনি সত্যই বলেছেন, যারা তাকে চিনে তারা এ কথার সত্যতা অবশ্যই উপলব্ধি করতে পারবে। মানুষ এত সময় কোথায় পাবে যে এত বড়ো কিতাব লিখবে, অথচ উক্ত ইতিহাসটি তিনি নিজেই লিখেছেন। নিজেই কত পাণ্ডুলিপি তৈরি করে কারেকশন করে কিতাবটি প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়া তার আরও সুন্দর ও উপভোগ্য কিতাব রয়েছে।
আল্লামা ইবনে আসাকের রহ.-এর গ্রন্থাবলির সংখ্যা পঞ্চাশের ওপরে। তন্মধ্যে একটা হলো তারিখে দামেশক যা আশি খণ্ডে সমাপ্ত।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইবনে আসাকের রহ.-এর গগণচুম্বী মনোবল ও মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ

📄 ইবনে আসাকের রহ.-এর গগণচুম্বী মনোবল ও মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ


২. হাফেজ জাহাবি রহ. 'তাজকিরাতুল হুফফাজ' গ্রন্থে তার জীবনী আলোচনায় বলেছেন, তিনি হলেন মহান হাফেজ, শামের মুহাদ্দিস, ইমামদের গর্ব, আবুল কাসেম ইবনে আসাকের রহ., বহু গ্রন্থ ও বিশাল তারিখের লেখক। তিনি ৪৯৯ হিজরি সনের শুরুতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ও ভাই ইমাম জিয়াউদ্দিন হেবাতুল্লাহ রহ.-এর উদ্যোগে ৫০৫ হিজরি সনে তিনি হাদিস শ্রবণ করেন। বাগদাদ, মক্কা, কুফা, নিশাপুর, আসবাহান, মারু, হারাত ইত্যাদি শহরে তিনি হাদিস শ্রবণ করেছেন। তিনি 'আল-আরবাইনাল বুলদানিয়্যা' কিতাব লেখেন, তাতে চল্লিশটি শহরের চল্লিশজন শায়খ থেকে চল্লিশটি হাদিস লিখেছেন। তার শায়খের সংখ্যা তেরোশ। তার মাস্তুরাত শায়খার সংখ্যা আশির ঊর্ধ্বে।
প্রচুর ছাত্র তার কাছে হাদিস শুনেছে। যাদের মধ্যে তার সফরসঙ্গী আবু সাদ সামআনি রহ.-ও রয়েছেন। এরপর জাহাবি রহ. তার রচনার সংখ্যা পঞ্চাশটি উল্লেখ করেছেন। তিনি ইলম শিক্ষাদানের জন্য চারশ আশিটি বৈঠকে ইলম লিখিয়েছেন। প্রতিটি বৈঠক একটি কিতাবের সমতুল্য।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন