📄 ইবনে জারির রহ. সর্বমোট ৩৫৮ হাজার পাতা লিখে গেছেন
ইমাম ইবনে জারির রহ. ২২৪ হি. সনে জন্মগ্রহণ করেন। এবং ৩১০ হি. সনে ইন্তেকাল করেন। এ হিসেবে তার মোট বয়স ৮৬ বছর হয়। যদি আমরা তার সাবালক হওয়ার সময়ের আগের বয়সটা বাদ দিই-যা সাধারণ অনুমান মতে ১৪ বছর হয়-তাহলে যেন তিনি ৭২ বছর যাবৎ দৈনিক ১৪ পাতা লিখেছেন। এখন যদি ৭২ বছরের দিনগুলো গণনা করে দৈনিক ১৪ পাতার হিসাব করা হয়, তাহলে তার লেখা পাতার মোট সংখ্যা হবে ৩৫৮ হাজার।
ইতিহাস ও তাফসির প্রত্যেকটার পাতা প্রায় তিন হাজার। ইতিহাসটি এগারো খণ্ডে ছেপে প্রকাশিত হয়েছে। আর তাফসিরটি বড়ো সাইজের ত্রিশ খণ্ডে ছেপেছে, যার প্রতিটি অংশ এক ভলিউমের সমান। এখন তার অন্যান্য রচনাগুলোর পাতাগুলো হিসাব করে দেখুন, সেগুলোর সংখ্যা ৩৫১ হাজার হয়। তাহলে অনুমান করতে পারবেন এই মহান ইমামের সর্বমোট রচনা কী পরিমাণ হবে? যেগুলোর অবস্থান বিদ্যার দিক থেকে একটি 'বহুমুখী একাডেমি' আর আধিক্যের দিক থেকে একটি বৃহৎ প্রকাশনালয়ের চেয়ে কম ছিল না। তিনি একা একজন ব্যক্তি ছিলেন। নিজেই লিখতেন বা লেখাতেন এবং মানুষের সামনে নিজ ইলম ও চিন্তার সারনির্যাস পেশ করতেন। চিন্তা করুন! এই বিশাল কৃতিত্ব কী করে সম্ভব হতো, যদি তিনি তার সময়ের হেফাজত না করতেন। এবং সদা নিজেকে রচনা ও গ্রন্থনার কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য সুপ্রচেষ্টা না করতেন।
📄 ইবনে জারির রহ.-এর সময় ও কর্মের বিন্যাস
ইবনে জারির রহ.-এর ছাত্র ও শিষ্য কাজি আবু বকর ইবনে কামেল রহ., ইবনে জারির রহ.-এর সময় ও কর্মের বিন্যাস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তিনি খাদ্য গ্রহণের পর 'খায়শ' নামক কাতানের কাপড়ে যা ঠান্ডা হওয়ার কারণে গরমের মৌসুমে ঘুমের সময় পরিধান করা হয়, গোলাপজল ও সন্দলের রঙ্গে রঞ্জিত হাফ হাতা জামা গায়ে দিয়ে ঘুমাতেন।
এরপর ঘুম থেকে উঠে ঘরে জোহরের নামাজ পড়তেন। এরপর আসর পর্যন্ত লিখতেন। এরপর বাইরে গিয়ে আসরের নামাজ পড়তেন। এরপর মাগরিব পর্যন্ত পড়াতেন ও তার সামনের পড়া হতো। এরপর ফিকাহ পাঠদানের জন্য বসতেন এশা পর্যন্ত। এরপর ঘরে প্রবেশ করতেন। তিনি আল্লাহর তাওফিক অনুসারে তার রাত-দিনকে নিজের, দীনের সৃষ্টির কল্যাণের জন্য ভাগ করে রেখেছিলেন।
📄 মৃত্যুর মাত্র এক মুহূর্ত পূর্বে ইবনে জারির রহ. একটি দুআ লিখেছেন
বিখ্যাত লেখক মুহাম্মদ কুরদ আলি রহ. 'কুনুজুল আজদাদ' নামক কিতাবে ইবনে জারির তাবারি রহ.-এর জীবনী আলোচনায় বলেছেন, তিনি তার জীবনের কোনো একটি মুহূর্ত অযথা নষ্ট করেছেন বলে বর্ণিত নেই। প্রতিটি মুহূর্তে তিনি হয়তো উপকৃত হয়েছেন বা উপকৃত করেছেন। মাআফি ইবনে জাকারিয়া রহ. নির্ভরযোগ্য এক ব্যক্তির সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি আবু জাফর তাবারির মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে তার কাছে ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা গেছেন। এই সময় তার সামনে জাফর ইবনে মুহাম্মদ রহ. হতে একটি দোয়া উল্লেখ করা হলো। সাথে সাথে তিনি দোয়াত ও কালি আনতে বললেন এবং দুআটি লিখে নিলেন। তাকে বলা হলো, এমতাবস্থায়ও লিখতে হয়? জবাবে তিনি বললেন, মানুষের উচিত আমৃত্যু ইলম অর্জন করা। আল্লাহ তায়ালা তাকে রহম করুন, ইলম, দীন, ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে তাকে উত্তম প্রতিদান প্রদান করুন।
📄 লিখিত কিতাবাদি ও স্বীয় অক্ষয় কীর্তিসমূহের মাধ্যমে ইবনে জারির রহ. অমর হয়ে আছেন
ইবনে জারির রহ.-এর লিখিত কিতাবাদির পূর্বোক্ত তালিকাটি তার রচনাবলির প্রতি সামান্য ইঙ্গিত মাত্র। সেখানে তার সবগুলো কিতাবের নাম ও বিষয় উল্লেখ করা হয়নি। তার কয়েকটি কিতাব অমরত্ব লাভে ধন্য হয়েছে। এগুলো তাকে স্মরণীয় করে রাখবে সন্তান ও বংশধরের চেয়েও অধিক, যদিও তাদের সংখ্যা দশ, বিশ বা ত্রিশ হয়। কারণ, তারা তো অল্পদিনের মধ্যেই বিলুপ্তির আধারে হারিয়ে যাবে। বিস্মৃতির ও অবহেলার ভাঁজে ভাঁজে প্রবিষ্ট হয়ে অদৃশ্য হয়ে যাবে। কিন্তু তার রচনাগুলো যুগ যুগ ধরে অক্ষয় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যুর পর প্রায় এগারোশ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, কিন্তু তার রচনাগুলো আজও অম্লান হয়ে আছে। যতদিন পর্যন্ত দিন-রাতের আবর্তন অব্যাহত থাকবে, ততদিন তার রচনাগুলো চির অক্ষয় হয়ে থাকবে ইনশাআল্লাহ। ইমাম ইবনুল জাওজি রহ. সত্যিই বলেছেন, আলেমের কিতাবই তার অমর সন্তান।