📄 ইবনে সুহনোন রহ.-কে তার বাঁদি রাতের খাবার খাইয়ে দিয়েছে, কিন্তু তিনি রচনার ব্যস্ততায় মুগ্ধতার কারণে টের পাননি
কাজি ইয়াজ রহ. রচিত 'তারতিবুল মাদারেক' নামক কিতাবে মালেকি ফকিহ ও যুগের মুহাদ্দিস মুহাম্মদ ইবনে সুহনোন কায়রাওয়ানি রহ.-এর (জন্ম: ২০২ হি., মৃত্যু: ২৫৬ হি.) জীবনী আলোচনায় আছে:
ইবনে সুহনোনের কাছে উম্মে মুদাম নামী জনৈক বাঁদি ছিল। একদিন মুহাম্মদ ইবনে সুহনোন রহ. তার কাছে ছিলেন। সেদিন তিনি অনেক রাত পর্যন্ত কোনো কিতাব রচনায় নিমগ্ন ছিলেন। খানা এলো, বাঁদি খানা পরিবেশন করার অনুমতি চাইল। তিনি বললেন, এখন আমি ব্যস্ত আছি। অপেক্ষার প্রহর যখন দীর্ঘ হলো বাঁদি নিজ হাতে খাওয়ানো শুরু করল। মুহাম্মদ ইবনে সুহনোন বেখেয়ালে পুরো খানা সাবাড় করলেন। এবং নিজ কাজে তন্ময় থাকলেন। একসময় ফজরের আজান হয়ে গেল। তখন তিনি উম্মে মুদামকে লক্ষ করে বললেন, উম্মে মুদাম! রাতে তোমার খোঁজখবর নিতে পারিনি। যা আছে নিয়ে আসো। সে বলল, আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে স্বহস্তে খাইয়ে দিয়েছি। তিনি বললেন, তাই নাকি? আমি তো টেরই পাইনি।
📄 পূর্বসূরি আলেমদের রাত্রি জাগরণ ও ইলমের জন্য বিনিদ্র হওয়ার ঘটনা
কাজি ইয়াজ রহ. 'আল-ইলমা' গ্রন্থে বলেছেন, মুহাম্মদ ইবনে লাব্বাদ বলেছেন, ইমাম ও ফকিহ মুহাম্মদ ইবনে ইবরাহিম ইবনে আব্দোস কায়রোয়ানি-যিনি ইবনুল লাব্বাদ নামে প্রসিদ্ধ-ত্রিশ বছর যাবৎ এশার অযু দ্বারা ফজরের নামাজ পড়েছেন। পনেরো বছর অধ্যয়নের কারণে, আর পনেরো বছর ইবাদতের কারণে।
📄 কুফার বিখ্যাত নাহবিদ ইমাম সালাব রহ. নব্বই বছর বয়সেও হাঁটতে হাঁটতে কিতাব পড়তেন, ফলে একটি গর্তে পড়ে গিয়ে তার মৃত্যু হয়
(জন্ম: ২০০ হি., মৃত্যু: ২৯২ হি.)
আল্লামা মারজুবানি রহ. বলেন, তার মৃত্যুর কারণ ছিল এই, তিনি জুমুআর দিন আসরের পর জামে মসজিদ থেকে বের হলেন। সাথি-সঙ্গীদের একটি দল তার পিছে পিছে চলল, আর আমিও তাদের একজন। তার শ্রবণশক্তি এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, খুব কমই শুনতে পেতেন। তার হাতে কিতাব ছিল। পথ চলাচলকালীন অধ্যয়নে রত ছিলেন। সহসা একটি ঘোড়ার সাথে টক্কর খেয়ে একটি গর্তে গিয়ে পড়েন। সেখান থেকে উঠানো হলো। কিন্তু তার বোধশক্তি কাজ করছিল না। সুতরাং ওই অবস্থায়ই তাকে বাসায় আনা হয়। মাথাব্যথায় তিনি কাতরাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় দিন তিনি আল্লাহর নিকট চলে গেলেন।
📄 ইবনে জারির রহ. এর সময় বাঁচানো ও ত্রিশ হাজার পাতায় তাফসির লেখার ইচ্ছা পোষণ
ইমাম ইবনে জারির তাবারি-যিনি মুফাসসিরিন, মুহাদ্দিসিন ও ঐতিহাসিকদের শিরোমণি, স্ব-যুগের ইমাম ও মস্ত বড়ো মুজতাহিদ ছিলেন, সময়কে ফলপ্রসূকরণে এবং সদা দরস ও তাদরিস, লেখালিখি ও রচনায় নিমগ্ন থাকার দিক থেকে যুগের অলৌকিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন; নতুনত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও পাকাপোক্ততায় তার রচনাবলির আধিক্য অবাক করার মতো-নিম্নে তার আলোচনা উপস্থাপিত হলো, যা খতিব বাগদাদির 'তারিখে বাগদাদ' ও আল্লামা ইয়াকুত হামাভির 'মুজামুল উবাদা' থেকে গৃহীত।
কাজি আবু উমর ও আবুল কাসেম ওয়াররাক বর্ণনা করেন, ইমাম তাবারি রহ. একদিন নিজ ছাত্রদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কোরআনের তাফসির লেখার জন্য প্রস্তুত আছ? ছাত্ররা বলল, কত বড়ো হবে? তিনি বললেন, ত্রিশ হাজার পাতা। এ কথা শোনে ছাত্ররা অবাক হয়ে বলল, তাফসির শেষ করার আগেই তো আমাদের জীবন শেষ হয়ে যাবে! তাই তিনি সংক্ষেপ করে তিন হাজার পাতায় তাফসির পূর্ণ করলেন। যা ২৮৩ হি. থেকে ২৯০ হি. পর্যন্ত সাত বছরে শেষ হয়।