📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 সম্পদের দ্বারা আত্মশুদ্ধি

📄 সম্পদের দ্বারা আত্মশুদ্ধি


হজরত থানবি রহ. ইরশাদ করেন, আমার বিশেষ দোস্তগণের একজন তার মধ্যকার কিছু খারাপ অভ্যাস দমন করার জন্য বারবার চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলেন তখন তিনি বিরক্ত হয়ে প্রবৃত্তির প্রতি শাস্তি হিসেবে প্রতি মাসে একটা বড়ো অঙ্ক সাদকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। এ কথাটি যখন আমি জানতে পারলাম তখন আমি তাকে এমনটি করতে নিষেধ করলাম। বললাম, আপনার একটি পয়সাও খরচ করার অনুমতি নেই। কারণ, আমি জানতাম সে যদি এভাবে সাদকা করতে থাকে তবে সে বড়ো সমস্যায় পড়ে যাবে এবং স্ত্রী-পুত্রের যেসব হক তার দায়িত্বে রয়েছে তাদের সেসব দায়িত্ব আদায়ের ব্যাপারে শিথিলতা এসে যাবে।৭

টিকাঃ
৩. ২৬ শে রবি. সানি, ১৩৫৯ হি.।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 একটি উপদেশমূলক ঘটনা

📄 একটি উপদেশমূলক ঘটনা


হজরত থানবি রহ. বলেন যে, আমাদের এক মামু যিনি স্বাধীন চিন্তার অধিকারী একজন দরবেশ ছিলেন। তিনি ১৮৫৭ সালের আজাদি আন্দোলনের সময়ের একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। ঘটনাটি হলো নিম্নরূপ :

এক জায়গায় অনেকগুলো লাশ পড়ে ছিল। লোভী প্রকৃতির এক হিন্দু লোক (বানিয়া) দূরে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিল। ওই লাশগুলোর মধ্যে একজন লোক আহত হয়ে মরার মতো পড়ে ছিল। সে ওই হিন্দু লোকটিকে দেখে বলল, ওহে ভাই, একটু এখানে এসো! লোকটি এ কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। সে ভাবল মরা লাশ আমাকে ডাকছে। সে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে ভেগে পালাতে উদ্যত হলো। ইতিমধ্যে সে আহত লোকটি আবার বলে উঠল, ওহে ভাই, তুমি ভয় পেয়ো না, আমি মরা লাশ নই, আহত হয়েছি মাত্র। আমার তো আর বাঁচার কোনো আশা নেই। আমার কোমরে বাঁধা থলের মধ্যে অনেকগুলো টাকা আছে। আমার ইচ্ছা হলো, এ টাকা তো আমার কোনো কাজে আসবে না; কারণ, আমি তো কিছুক্ষণের মধ্যেই মরে যাব। সুতরাং টাকাগুলো তোমাকে দিয়ে দেবো। তুমি এগুলো কাজে লাগাতে পারবে।

টাকার কথা শুনে লোকটি গলে গেল এবং ভয়ে ভয়ে সে ওই আহত লোকটির কাছে গেল। সে যখন আহত লোকটির কাছে এসে গেল তখন আহত লোকটি দ্রুত তরবারি হাতে নিয়ে এক আঘাতে ওই লোকটির একটা ঠ্যাং কেটে ফেলল। সাথে সাথে লোকটি মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু মাটিতে পড়েও লোকটি ওই আহত লোকটির কোমর হাতাতে লাগল। তার ইচ্ছা হলো, টাকাগুলো তো আগে হাতে নিয়ে নিই। এবার আহত লোকটি বলল, আরে মশাই, তুমি তো দেখছি একটা বদ্ধ পাগল, যুদ্ধের ময়দানে কি কেউ কোমরে টাকা বেঁধে নিয়ে আসে!

আসল কথা হলো, আমার আশেপাশে যারা পড়ে আছে তারা সবাই মরা লাশ, আমিই শুধু একা জীবিত আছি, রাত হয়ে যাচ্ছে। আমি ভাবলাম, যদি আলাপ-আলোচনা করার জন্য একজন লোক আমার সাথে থাকত তবে রাতটা কাটানো অনেক সহজ হয়ে যেত। আমি যদি তোমাকে এমনিতেই বলতাম যে, ভাই আমার সাথে তুমি রাতে এখানে থাকো, তাহলে তুমি তো ধেয়ে কুল পেতে না। আমি একটু মানসিক প্রশান্তির জন্য তোমাকে আমার সাথি বানিয়ে নিলাম। হিন্দু লোকটি রেগে কটমটিয়ে বলল, বেটা বজ্জাত কোথাকার! নিজেও চলতে পারবে না, অন্যকেও চলতে দেবে না।

মামুজান এ ঘটনার বর্ণনা করে বললেন, বর্তমানে আল্লাহ পাকের রাস্তার ব্যাপারে মানুষের অবস্থা এরূপই হয়ে গেছে যে, সে নিজে তো আল্লাহর পথে চলবেই না, অন্য কেউ চলতে চাইলে তার পথেও বাধা সৃষ্টি করে দেবে।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 পূর্ববর্তী মাশাইখগণের প্রতি আদব

📄 পূর্ববর্তী মাশাইখগণের প্রতি আদব


হজরত থানবি রহ. বলেন যে, ইলমি তাহকিক এবং গবেষণার চাইতে বেশি প্রয়োজন হলো আদব। বরং বুজুর্গানে দীনের প্রতি আদব রক্ষা করে চলার দ্বারা মহান আল্লাহ তাআলা ইলমি ব্যাপারে তাহকিক ও গবেষণা করার যোগ্যতা দিয়ে দেন। পূর্বসূরি বুজুর্গানে দীনের প্রতি আদব ও শিষ্টাচার পরিহার করে যে গবেষণা করা হয়, সেখানে ভ্রষ্টতা ও পদস্থলনের সমূহ আশঙ্কা বিরাজমান থাকে।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 শাহ ইসহাক সাহেব রহ.-এর একটি আশ্চর্য ঘটনা

📄 শাহ ইসহাক সাহেব রহ.-এর একটি আশ্চর্য ঘটনা


হজরত আমির শাহ খান সাহেব রহ.-যিনি হজরত মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম নানুতবি রহ.-এর বিশেষ ও খাস মুরিদ ছিলেন-তিনি দিল্লির বুজুর্গানে দীনের ঘটনাবলি সনদসহ বর্ণনা করতেন। তিনি বলেছেন যে, হজরত শাহ ইসহাক সাহেব রহ. নিজ বংশে মেধাবী নয় বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন। কারণ, সে বংশ ছিল সব বড়ো বড়ো উলামায়ে কেরামের বংশ। একজনের থেকে আরেকজন বড়ো ছিলেন। যদিও সেই বুজুর্গের-যিনি ওই বংশের মেধাবী নয় বলে প্রসিদ্ধ ছিলেন-তার একটি ঘটনা শুনলে বড়োই আশ্চর্য হতে হয়। ঘটনাটি হলো :
একদিন একজন তালিবে ইলমকে অস্থির অবস্থায় দেখে শাহ সাহেব তার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। কিন্তু প্রথমে সে অহংকারীসুলভ ভঙ্গীতে চোখ ও ঠোঁট দিয়ে একটু ইশারা করে বোঝাল যে, কিছুই হয়নি। এরপর তাকে বারবার জিজ্ঞাসা করায় সে বলল, 'শামসে বাজেগাঁ' (দর্শন শাস্ত্রের দরসি কিতাব)-এর একটি জায়গা বুঝে আসছে না। এবং সে ব্যাপারে আমার উস্তাদের সাথে আমার মতবিরোধ হয়ে গেছে। তিন দিন যাবৎ আমি সেটা নিয়েই আটকে আছি।
হজরত শাহ সাহেব স্নেহ ও শফকতের দৃষ্টিতে বললেন, জায়গাটি আমাকে একটু দেখাও না। ওই তালিবে ইলম ভাবল, ইনি হলেন একজন মুহাদ্দিস। তিনি ইলমে হাদিসের ব্যাপারে হয়তো অভিজ্ঞ হবেন। দর্শনের কিতাবের সাথে তার সম্পর্কই-বা কী আছে। এই ভেবে সে অত্যন্ত অনীহা ও অনাগ্রহ সহকারে কিতাবখানা শুধু তার সামনে রেখে দিলো। হজরত শাহ সাহেব রহ. সে জায়গাটি মুতালাআ করে তার এমন পরিষ্কার মর্ম বয়ান করে দিলেন যার ফলে যে তালিবে ইলমের সংশয় দূরীভূত হয়ে গেল।
এবার এই তালিবে ইলম তো হজরত শাহ সাহেব রহ.-এর পায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। হজরত শাহ সাহেব তখন বললেন, মিয়া, আমরা সবই পড়েছি, তবে এগুলো (দর্শন ও মানতিক)-কে নিষ্প্রয়োজনীয় ও বেহুদা মনে করে ছেড়ে রেখেছি।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন