📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 হুজ্জাতুল ইসলাম হজরত মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম রহ. স্বপ্রশ্নতার অস্থিরতা ও হজরত গাঙ্গুহি রহ.-এর পরামর্শ

📄 হুজ্জাতুল ইসলাম হজরত মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম রহ. স্বপ্রশ্নতার অস্থিরতা ও হজরত গাঙ্গুহি রহ.-এর পরামর্শ


হজরত মাওলানা মুহাম্মদ কাসেম রহ.-এর ইলমি ও আমলি যোগ্যতা ও পূর্ণতা সম্পর্কে অবগত নন এমন কোনো সচেতন মুসলমান সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না। তার বিনয় ও নম্রতার অবস্থা এই ছিল যে, যখন তিনি জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রয়োজনীয়তার দিক অনুভব করলেন, তখন তা পূর্ণ করার জন্য দিল্লির একটি প্রকাশনীতে (মুজতাবায়ি প্রকাশনী) কিতাবপত্র শুদ্ধ করার দায়িত্ব নিয়ে কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত হলেন। সেখানে হজরত নানুতবি রহ.-এর সর্বমোট ওজিফা ছিল দশ টাকা। হঠাৎ একবার এ দশ টাকা গ্রহণ করার ব্যাপারেও তার মনের মাঝে যখন দ্বিধা-সংকোচ অনুভব করলেন। তখন তিনি আপন শাইখ হজরত হাজি এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কি রহ.-এর সাথে এই বলে পরামর্শ করলেন যে, এই ওজিফা গ্রহণটাও ছেড়ে দিতে চাই এবং যা-ই খেদমত করব তা আল্লাহর ওয়াস্তে বিনা বেতনেই করতে চাই।

হজরত হাজি সাহেব রহ. তৎকালীন যুগের ইমাম ছিলেন। তিনি তখন বললেন, আপনি মাসিক ওজিফা ছেড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আমার কাছে পরামর্শ চেয়েছেন। কোনো ব্যাপারে পরামর্শ চাওয়া সে ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকার প্রমাণ বহন করে, আর দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবস্থায় কামাই-রুজির উপকরণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকা একটি বাড়তি অস্থিরতার কারণ হয়। উপায়-উপকরণ পরিত্যাগ করা তো শুধু ওই সময় জায়েজ হয়, যখন মানুষ তার অবস্থা ও হালতের কাছে মাগলুব বা পরাজিত হয়ে যায়। হজরত রহ. বলেন, হজরত হাজি সাহেব রহ.-এর তাওয়াক্কুল বা ভরসা ছিল অত্যন্ত উঁচু স্তরের। ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের কঠিনতম অবস্থা তিনি অতিক্রম করেছেন, তা সত্ত্বেও তিনি মুরিদদের ব্যাপারে সর্বদাই এ সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন, যাতে তাদেরকে কোনোরূপ অস্থিরতায় নিপতিত হতে না হয়।

ঋণগ্রস্ততার অস্থিরতা ও হজরত গাঙ্গুহি রহ.-এর পরামর্শ
কানপুর মাদরাসার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার পর হজরত থানবি রহ. সম্পূর্ণ সামানহীনভাবে আল্লাহ পাকের ওপর ভরসা করে থানাভবনের খানকায় অবস্থান করতে থাকলেন। সে সময় ঘরের টুকিটাকি প্রয়োজন পূরণ করতে গিয়ে প্রায় দেড়শ টাকা করজ হলে গেল। তখন হজরত হাজি সাহেব রহ. আর দুনিয়াতে নেই। হজরত হাজি সাহেব রহ.-এর পর হজরত হাকিমুল উম্মত রহ. হজরত গাঙ্গুহি রহ.-কে নিজের শাইখের স্থলাভিষিক্ত মনে করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের জন্য তার শরণাপন্ন হতেন। সেমতে তখনকার অবস্থা ও করজ আদায়ের জন্য দুআর দরখাস্তসহ হজরত গাঙ্গুহি রহ.-এর বরাবর চিঠি লিখলেন।

জবাব এলো-দেওবন্দ মাদরাসায় খেদমতের একটি পদ খালি আছে, যদি আপনি সম্মত থাকেন তবে আমি তাদেরকে এ ব্যাপারে লিখে দিতে পারি। হজরত থানবি রহ. বলেন, এ চিঠি পেয়ে আমি একটু দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে গেলাম। কারণ, এখন যদি আমি দেওবন্দে খেদমতের দায়িত্ব গ্রহণ করি তবে হজরত হাজি সাহেব রহ.-এর কথা রক্ষা করা হয় না। আর যদি এ দায়িত্ব গ্রহণ না করি, তবে হজরত গাঙ্গুহি রহ.-এর সাথে বেয়াদবি হয়। কারণ, তিনি নিজে আগ্রহ করে বিষয়টি আমাকে বলার পরেও তা গ্রহণ না করাটা তো বেয়াদবিই হয়। কিন্তু আল্লাহ পাক দয়া করে অন্তরে একটা সুন্দর জবাব উদয় করে দিলেন। আমি হজরত গাঙ্গুহি রহ.-এর পত্রের জবাবে লিখলাম, 'হজরত! আমার পূর্বের পত্রের উদ্দেশ্য ছিল শুধু দুআর আবেদন করা, কোনো চাকুরি বা জীবন ধারণের উপকরণ অন্বেষণ আমার উদ্দেশ্য ছিল না। কারণ, হজরত হাজি সাহেব রহ. আমাকে এ উপদেশ দিয়েছিলেন যে, কানপুরের দায়িত্ব ছেড়ে দিলে আর কখনো কোথাও দায়িত্ব নিয়ো না।

বর্তমানে আমি আপনাকেই হজরত হাজি সাহেব রহ.-এর স্থলাভিষিক্ত বলে মনে করি। সুতরাং এখন এমতাবস্থায় হজরতের হুকুমমতে যদি আমি পুনরায় কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করি তবে সেটাকেও আমি হজরত হাজি সাহেব রহ.-এর হুকুম বলেই ধরে নেব। এবং পূর্বের হুকুমকে রহিত বলে ধরে নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করে নেব। এ কথার ওপর হজরত গাঙ্গুহি রহ. জবাব পাঠালেন, 'আপনি এখন আর কোনো চাকুরি বা দায়িত্ব নেবেন না। ইনশাআল্লাহ আপনার কোনো অস্থিরতাও আর থাকবে না।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 আল্লাহর ভয় ও নম্রতার মাহাত্ম্য ও পরামর্শের গুরুত্ব

📄 আল্লাহর ভয় ও নম্রতার মাহাত্ম্য ও পরামর্শের গুরুত্ব


হজরত থানবি রহ.-এর সম্মানিত পিতা বংশগতভাবে সচ্ছল ও যথেষ্ট প্রতিপত্তিসম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। তার উপার্জনের পথও কোনো অবৈধ পথ ছিল না। কিন্তু হজরত থানবি রহ.-এর নজরে কিছু সন্দেহ থাকায় তার পিতা ইন্তেকালের পর পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে নিজের অংশের বিষয়টি যখন সামনে এলো তখন তিনি তা গ্রহণের ব্যাপারে কিছুটা দ্বিধা-সংকটে পড়ে গেলেন। হজরত থানবি রহ.-এর নিজে নিজে কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভ্যাস ছিল না। তাই তিনি হজরত গাঙ্গুহি রহ.-এর বরাবর চিঠি লিখলেন এবং জানতে চাইলেন, মিরাসি সম্পদের ব্যাপারে আমার কিছু সন্দেহ হওয়ার কারণে মিরাসের অংশ গ্রহণ করতে আমার দ্বিধা-সংকোচ হচ্ছে। আবার গ্রহণ না করে আমার অংশ ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রেও দ্বিধা হচ্ছে। কারণ, পরবর্তীতে এ কারণে আমি কোনো অস্থিরতায় লিপ্ত হয়ে পড়ি কি না?

হজরত গাঙ্গুহি রহ.-এর পক্ষ থেকে চিঠির উত্তর এলো, 'সম্পদে নিজের অংশ যদি গ্রহণ করা হয় তবে ফতওয়ার দৃষ্টিতে তা জায়েজ, আর যদি তা গ্রহণ না করে ছেড়ে দেওয়া হয় তবে তা তাকওয়া। আর গ্রহণ না করার কারণে ইনশাআল্লাহ কোনোদিন কোনো অস্থিরতার সম্মুখীন হতে হবে না।'

পত্রের এ জবাব পেয়ে হজরত থানবি রহ. তাকওয়ার দিকটিই অবলম্বন করলেন এবং মিরাসে নিজের অংশ ভাইদের জন্য ছেড়ে দিলেন। যা ছিল ধনসম্পদের এক বিরাট অংশ।

অধম (লেখক) শ্রদ্ধেয় পিতার কাছে শুনেছি, তিনি বলেছেন, হজরত গাঙ্গুহি রহ. বলতেন যে, মাওলানা আশরাফ আলি রহ.-এর ন্যূনতম তাকওয়া হলো যে, তিনি তাঁর পিতার মিরাসের অংশ গ্রহণ করেননি।

এ বিষয়টি একদিকে তো তাকওয়া অপরদিকে শুধু নিজের মতের ওপর নির্ভর না করা এবং বুজুর্গানে দীনের পরামর্শের ওপর আমল করার বহুত বড়ো একটি প্রজ্ঞাপূর্ণ মূলনীতি। যে মূলনীতির অনুসরণ সর্বদা হজরত থানবি রহ. নিজে করেছেন এবং অন্যদেরকেও তা অনুসরণ করার জন্য তাকিদ করেছেন। হজরত থানবি রহ. বলতেন:
'মানুষের কস্মিনকালেও শুধু নিজের মতের ওপর আমল করা উচিত নয়, বরং যতক্ষণ পর্যন্ত স্বাভাবিক নিয়মে নিজের তুলনায় বড়ো ব্যক্তিবর্গ মওজুদ থাকেন ততক্ষণ তাদের পরামর্শ নিয়ে কাজ করা উচিত। কিন্তু যদি স্বাভাবিক নিয়মে নিজের বড়ো কেউ না থাকেন, তবে সে ক্ষেত্রে সমপর্যায়ভুক্তদের সাথে পরামর্শ করে সেমতে কাজ করতে হবে। যদি নিজের সমপর্যায়ভুক্ত কাউকেও না পাওয়া যায় তবে নিজের তুলনায় ছোটোদের সাথে পরামর্শ করে সেমতে কাজ করবে। হজরত থানবি রহ. আরও বলেন যে, 'স্বাভাবিক নিয়মে বড়ো' কথাটা এ জন্য বললাম, যেহেতু প্রকৃতপক্ষে কে বড়ো তা তো শুধু আল্লাহ পাকই জানেন।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 প্রচলিত আধুনিক শিক্ষা থেকে সৃষ্ট কিছু সন্দেহ ও ভুল ধারণার মূল ভিত্তি

📄 প্রচলিত আধুনিক শিক্ষা থেকে সৃষ্ট কিছু সন্দেহ ও ভুল ধারণার মূল ভিত্তি


হজরত থানবি রহ. বলেন, প্রচলিত আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিবর্গের যত রকম অমূলক ধারণা ইসলামি শিক্ষা সম্পর্কে সৃষ্টি হয়ে থাকে, সেগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার পর সেসবের মূলে যে বিষয়টি বুঝে আসে তা হলো, প্রচলিত আধুনিক শিক্ষার দ্বারা মহান আল্লাহ জাল্লা শানুহু ও তাঁর প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাহাত্ম্য ও মহব্বত অন্তর থেকে বিদূরীত হয়ে যায়। যখন এ দুটি বিষয় অন্তরে বিদ্যমান থাকে না তখন ইসলামের প্রতিটি বিধানের ওপর শত শত প্রশ্ন সৃষ্টি হতে থাকে। কারও মাহাত্ম্য ও মহব্বত যদি অন্তরে বিদ্যমান থাকে তবে তার কথা ও বিধি-নিষেধের প্রতি কোনো প্রশ্নই মনে সৃষ্টি হয় না। লক্ষণীয় বিষয় হলো, বর্তমান প্রশাসনের মাহাত্ম্য একরকম জবরদস্তিমূলকভাবেই মানুষের অন্তরে ছেয়ে আছে। এ কারণে তার নির্ধারিত আইন-কানুনের ব্যাপারে কোনো কারণ বা হেকমত জিজ্ঞাসা করার দিকে কারও লক্ষই যায় না। যেমন: ডাক বিভাগের ফি দেওয়ার ক্ষেত্রে আড়াই তোলা পর্যন্ত দুই পয়সা, আড়াই তোলার ওপরে পাঁচ তোলা পর্যন্ত এক আনা ডাক খরচ দিতে হয়। এই বিধানের ওপর সকলেই ঠিকভাবে আমল করে যাচ্ছে। আলেম-জাহেল, শিক্ষিত-অশিক্ষিত কেউই এর ওপর আমল করা বাদ দেয় না। কারও এ কথাটুকু জিজ্ঞাসা করার মতো সাহসও হয় না যে, এই বিধানের মধ্যে হিকমত বা রহস্য কী? কখনো যদি কেউ কারও কাছে এ ধরনের প্রশ্ন করেও, তবে যাকে প্রশ্ন করা হয় সে প্রশ্নকারীকে এতটুকু বলে দেওয়াই যথেষ্ট মনে করে যে, 'ভাই, এটা সরকারি আইন', কিন্তু ইসলামের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে এতটুকু জবাব যথেষ্ট মনে করা হয় না যে, 'এটা আল্লাহ পাক অথবা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হুকুম।'

এ সবকিছুর কারণ একটাই, আর তা হলো, আল্লাহ পাক ও রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহব্বত অন্তর থেকে দূর হয়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 একজন কলেজ ছাত্রের কাহিনি

📄 একজন কলেজ ছাত্রের কাহিনি


সম্ভবত শিমলা নামক অঞ্চলের কোনো কলেজে একবার হজরত থানবি রহ.-এর বয়ান হলো। যার শ্রোতা ছিল কলেজের ছাত্র ও শিক্ষকগণ। সে বয়ানে হজরত থানবি রহ. আধুনিক শিক্ষা দ্বারা সৃষ্ট বিভিন্ন সংশয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন; যা ইসলামের মৌলিক ও শাখা বিষয়সমূহ সম্পর্কে অধিকাংশ আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিতদের মনে সৃষ্টি হয়ে থাকে।

হজরত থানবি রহ. বলেন, ওইসব সংশয়-সন্দেহ ও প্রশ্নসমূহ সৃষ্টি হওয়ার জন্য শুধু শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যসূচিই দায়ী নয়; বরং এর একটি অন্যতম বড়ো কারণ হচ্ছে, ওসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বদদীনি পরিবেশ। যে পরিবেশের মধ্যে থেকেই আমাদের নবপ্রজন্ম লালিত-পালিত হয়। যার ফলে তাদের অন্তর থেকে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওই মাহাত্ম্য ও মহব্বত শেষ হয়ে যায়, যা একজন মানুষের ইমানদার হওয়ার জন্য আবশ্যক। আর সে মাহাত্ম্য ও মহব্বত বুজুর্গানে দীনের সংস্পর্শ ও সান্নিধ্যের মাধ্যমে লাভ হতে পারে।

এরপর হজরত থানবি রহ. বলেন, আলহামদুলিল্লাহ বর্তমানে প্রায় সকল জায়গায় কমবেশি বুজুর্গানে দীনের মজলিস হয়ে থাকে। কিছুদিন সে ধরনের মজলিসে কাটানোর অভ্যাস করুন। তাও সম্ভব না হলে অন্তত বন্ধের সময় হতে কিছু সময় সে কাজের জন্য ব্যয় করুন। যদি আধুনিক শিক্ষিতরা এ কাজটি করেন তবে আমি আশা করি তাদের অন্তর থেকে ইসলামের ওপর সৃষ্টি বিভিন্ন সন্দেহ ও প্রশ্ন সমূলে বিদূরিত হয়ে যাবে। এবং নিজের মনেই সে প্রশ্নের সঠিক জবাব এসে যাবে এবং সবকিছু এমনিতেই বুঝে এসে যাবে।

সম্ভবত সে মজলিসে উপস্থিতদের মাঝে একজন ছাত্র প্রশ্ন করল, আমরা শুনেছি আপনার নাকি ইংরেজি শিক্ষিতদের প্রতি চরম ঘৃণা রয়েছে? হজরত থানবি রহ. তখন জবাব দিলেন, কস্মিনকালেও না, ওই লোকদের প্রতি আমার কোনো ঘৃণা নেই; তবে তাদের কিছু আচরণ ও কাজ-কর্মের প্রতি আমার ঘৃণা রয়েছে, যেগুলো শরিয়ত-পরিপন্থি। লোকটি পুনরায় প্রশ্ন করল, সে কাজ-কর্মগুলো কী? হজরত থানবি রহ. জবাব দিলেন, বিভিন্ন লোকের বিভিন্ন কাজ রয়েছে। সকলের কাজ এক রকম নয়। লোকটি ছিল খুবই আজাদ প্রকৃতির। সে আবারও প্রশ্ন করল, যেমন: আমার মধ্যে কী কী কাজ রয়েছে, যা আপনার দৃষ্টিতে অপছন্দ বা ঘৃণার কারণ। বর্তমানকালের ছাত্রদের অবস্থামতে সে লোকটিরও দাড়ি একেবারে পরিষ্কারভাবে মুণ্ডানো ছিল। হজরত থানবি রহ. বললেন, কিছু কিছু বিষয় তো আপনার মাঝে আছে যা পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত রয়েছে; কিন্তু এত লোকের মজলিসে তা প্রকাশ করতে আমার শরম হচ্ছে। আর কিছু আছে যা দেখা যায় না, সুতরাং আপনার সামগ্রিক অবস্থা ও আচার-আচরণ সম্পর্কে না জেনে তার ওপর কোনো মন্তব্য করা তো সম্ভব নয়।

এরপর সে মজলিস শেষ হয়ে গেল। হজরত থানবি রহ. থানাভবন ফিরে এলেন। অতঃপর একবার যখন কলেজ বন্ধ হলো তখন একজন ছাত্রের একটা চিঠি এলো। এ কথা আমার (সংকলক) স্মরণ নেই যে, হজরত রহ.-কে যে ছাত্র প্রশ্ন করেছিল এ চিঠি কি সেই পাঠিয়েছিল, না অন্য (কেউ)। চিঠিতে লেখা ছিল, বর্তমানে আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠন বন্ধ, তাই আমি আপনার বলে দেওয়া পদ্ধতি অনুযায়ী কিছুদিন আপনার খেদমতে থাকতে চাই। কিন্তু আমার বাহ্যিক আকার-আকৃতি যেমন শরিয়ত মুতাবিক নেই, তেমনই আমার কাজ-কর্ম ও আমলের মাঝেও অনেক গড়বড় রয়েছে। এ অবস্থায় যদি আমাকে আসার জন্য অনুমতি দেওয়া হয় তবে অবশ্যই আমি উপস্থিত হয়ে যাব।

হজরত থানবি রহ. এ চিঠির জবাবে লিখলেন, যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থায়ই চলে আসুন। অন্য কোনো চিন্তা করবেন না। জবাব পেয়ে সে ছাত্র হজরত থানবি রহ.-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে গেল। এবং বলল, আমার অনেক সংশয় ও প্রশ্ন আছে, বিষয়গুলো সম্পর্কে আমি আপনার কাছ থেকে জেনে নিতে চাই। হজরত থানবি রহ. তার এ কথার জবাবে বললেন, হাঁ, বিষয়গুলো ঠিকই জেনে নেওয়া দরকার, তবে সে জন্য পদ্ধতি হবে এই যে, আপনার যতগুলো সংশয় ও প্রশ্ন রয়েছে সেগুলো সব একত্রে লিখে নিতে হবে। এরপর আপনি আমার মজলিসে বসে নিশ্চুপভাবে আমার কথা শুনতে থাকবেন। কোনো প্রশ্ন করবেন না। এরপর আপনার এখান থেকে বিদায় নেওয়ার যখন তিন দিন বাকি থাকবে তখন আপনি আপনার প্রশ্নের বিষয়টি আমাকে স্মরণ করিয়ে দেবেন, আমি আপনাকে প্রশ্ন করে উত্তর জেনে নেওয়ার জন্য স্বতন্ত্রভাবে সময় দেব। হজরত থানবি রহ. তাকে এ কথাও বলে দিলেন যে, এখন আপনি যে প্রশ্নগুলো লিখে আপনার কাছে রাখবেন, আমার এখানে অবস্থানকালীন এমনিতেই যদি কোনো প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়ে যান বা বিষয়টি যদি আপনার বুঝে এসে যায়, তবে সে প্রশ্নটি ওই তালিকা থেকে কেটে দেবেন।

হজরত থানবি রহ.-এর কথামতো ছাত্রটি সেভাবেই সবকিছু করল। এরপর বিদায়ের তিন দিন পূর্বে হজরত থানবি রহ. যখন তাকে প্রশ্ন করার সময় দিলেন তখন ওই ছাত্রটি হজরত থানবি রহ.-কে জানাল যে, আমার প্রশ্নসমূহের তালিকা অনেক দীর্ঘ ছিল, কিন্তু হজরতের দরবারে অবস্থানকালীন বিভিন্ন মজলিসে হজরতের বয়ান ও বক্তব্য শুনে শুনে তার মধ্যকার অনেক প্রশ্নের জবাব আমি এমনিতেই পেয়ে গেছি। যখন যে প্রশ্নের জবাব বুঝতে পেরেছি তখন সেটা কেটে দিয়েছি। এভাবে কাটতে কাটতে এখন মাত্র অল্প কয়েকটা প্রশ্ন বাকি আছে। সে হজরত থানবি রহ.-এর খেদমতে সে প্রশ্নগুলো পেশ করল এবং খুব সহজভাবেই হজরত থানবি রহ. তাকে তার উত্তর বুঝিয়ে দিলেন। এবং লোকটি তার প্রশ্নসমূহের সন্তোষজনক উত্তর পেয়ে পরিপূর্ণ আত্মতৃপ্তি নিয়ে সেখান থেকে বিদায় নিলো।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন