📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 হাকিমুল উম্মত থানবি রহ.-এর লিখিত পুস্তকাদির সংখ্যা হাজারেরেও অধিক

📄 হাকিমুল উম্মত থানবি রহ.-এর লিখিত পুস্তকাদির সংখ্যা হাজারেরেও অধিক


ভারতের শায়খ হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলি থানবি রহ.-যিনি আজ থেকে পঞ্চাশ বছর পূর্বে ১৩৬২ হিজরি সনে একাশি বছর বয়সে ইন্তেকাল করেছেন-তার পুস্তকাদির সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এটা আল্লাহর দান, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে দান করেন। এ সবকিছুই সম্ভব হয় সময়ের সদ্ব্যবহার দ্বারা। সময়ের মূল্য কেবল হাতেগোনা ক'জন আল্লাহর তাওফিকপ্রাপ্ত ব্যক্তিরাই বোঝাতে সক্ষম হয়ে থাকেন। ফলে তারা সামান্য বয়স পেয়েও বিস্ময়কর-সংখ্যক পুস্তকাদি রচনা করে যেতে পারেন।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 শায়খ জাহাবি ও শায়খ তক্বাহ রহ. মৃত্যুর অল্পক্ষণ পূর্বেও কিতাব অধ্যয়ন করেছেন

📄 শায়খ জাহাবি ও শায়খ তক্বাহ রহ. মৃত্যুর অল্পক্ষণ পূর্বেও কিতাব অধ্যয়ন করেছেন


পূর্বোক্ত ইমাম আবু ইউসুফ রহ.-এর ঘটনার মতো দুটি ঘটনা আমি জানতে পেরেছি। ঘটনা দুটি হলো আমার আব্বাজানের দুজন শায়খের। একজন হলেন আমজাদ জাহাবি রহ.। অপরজন হলেন মুহাম্মদ রাগেব তব্বাখ হলবি রহ.।

আমজাদ জাহাবি রহ. (জন্ম: ১৩০০ হিজরি, মৃত্যু: ১৩৮৭ হিজরি)-এর জীবনীতে আছে, তিনি অধিক অধ্যয়নকারী ছিলেন। এমনকি অসুস্থতার সময়ও অধ্যয়ন করতেন। মৃত্যুর এক ঘণ্টা আগেও তিনি অধ্যয়ন করছিলেন।

জনাব আল্লামা মুহাম্মদ রাওয়াস কিলাজি রহ. লিখিত 'হাদিসুর রুহ' নামক কিতাবে তার শায়খ যুগের বিস্ময় মুহাম্মদ রাগেব তব্বাখ রহ. (জন্ম : ১২৯৩ হিজরি, মৃত্যু : ১৩৯০ হিজরি) সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, আমি শায়খের কাছে তার মৃত্যুর দিন গিয়েছিলাম। তাকে তখন বিভিন্ন তোষক গদি ইত্যাদি দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছিল হেলান দেওয়ার জন্য। আমি দেখলাম, তার জিহ্বা ভারি হয়ে গেছে। চোখের পলকগুলো নিচে নেমে এসেছে। চোখ মেলতে তার কষ্ট হচ্ছিল। অনেক বেশি পাওয়ারের চশমা তার চোখে ছিল। তার হাতে ছিল কিতাব। এক-দুই লাইন পড়েই তিনি ক্লান্ত হয়ে যেতেন। কিছুক্ষণ মাথা হেলান দিয়ে বসে থাকতেন। এরপর আবার পড়তে শুরু করতেন। আমি তাকে বললাম, হুজুর! এখন যদি আপনি না পড়তেন এবং কিছুক্ষণ আরাম করতেন, তো ভালো হতো। কারণ, আপনার অনেক কষ্ট হচ্ছে। জবাবে তিনি কিছু কথা বললেন, যা তার মুখের জড়তার কারণে আমি ভালো করে বুঝতে পারিনি। কিন্তু এতটুকু আমার ধারণা হয়েছে যে, একটি মাসআলা আছে যা না জেনে তিনি মরতে চান না। তখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করল। আমি তাকে বললাম, আপনার যদি এতই আগ্রহ থাকে তাহলে আমাকে অনুমতি দিন; আমি আপনাকে পড়ে শুনাই। আমি কিতাবটি তার হাত থেকে নিলাম এবং পড়তে শুরু করলাম। কিছুক্ষণ পর তার দিকে তাকালাম। তিনি যখন মাথা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। আমি মনে করলাম, তিনি আমার পড়া শুনছেন। আমি পড়া অব্যাহত রাখলাম। এমন সময় তার ছেলে প্রবেশ করল এবং পিতাকে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখতে পেল। সে আমাকে রুমের বাইরে যেতে অনুরোধ করল। আমি বাইরে চলে গেলাম। অল্পক্ষণ পরেই আমি তার মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পেলাম। আল্লাহ তায়ালা এই মনোবল ও শীর্য মনীষীগুলোকে রহম করুন! আমাদেরকে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণের তাওফিক দান করুন! (সালমান)

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইবনে আসাকের রহ.-এর স্রোত হাদিসের কপিগুলো পৌঁছতে বিলম্ব হওয়া ও না পৌঁছা পর্যন্ত এর জন্য তার চরম অস্থিরতা

📄 ইবনে আসাকের রহ.-এর স্রোত হাদিসের কপিগুলো পৌঁছতে বিলম্ব হওয়া ও না পৌঁছা পর্যন্ত এর জন্য তার চরম অস্থিরতা


তার ছেলে হাফেজ আবু মুহাম্মদ কাসেম রহ. বলেন, আমার আব্বা অনেক কিতাব শুনেছিলেন যেগুলোর কপি তিনি তৈরি করেননি। তার সহপাঠী হাফেজ আবু আলি ইবনুল ওয়াজির রহ.-এর কপিগুলোর ওপর নির্ভর করে। ইবনুল ওয়াজির রহ. যেগুলোর কপি তৈরি করতেন আমার আব্বা সেগুলোর কপি নকল করতেন না। আর আমার আব্বা যেগুলোর কপি নকল করতেন ইবনুল ওয়াজির সেগুলোর কপি তৈরি করতেন না।

একদা কোনো এক রাতে তাকে শুনেছি। তিনি জামে মসজিদে চাঁদের আলোতে তার এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিলেন। তিনি বলেন, আমি সফর করেছি, কিন্তু যদি না করতাম তা-ই ভালো হতো। অনেক কিতাব পড়েছি, কিন্তু যদি না পড়তাম তা-ই ভালো হতো! আমি ধারণা করেছিলাম আমার সাথি ইবনুল ওয়াজির রহ. আমার শ্রোত কিতাবগুলো নিয়ে আসবে। যেমন: সহিহ বুখারি, মুসলিম, বায়হাকির কিতাবগুলো, উঁচু সনদের আজজাগুলো। কিন্তু ঘটনাচক্রে সে মারু এলাকায় স্থায়ী হয়ে গেছে, সেখানেই সে অবস্থান করবে। আমার কিতাবগুলো আর নিয়ে আসবে না।

আমি আশা করেছিলাম যে, আমার আরেক সাথি হয়তো আসবে। তার নাম ইউসুফ ইবনে ফারওয়া জাইয়ানি রহ.। এবং আমাদের আরেক সাথি আবুল হাসান মুরাদি রহ. আসার কথা ছিল। সে আমাকে বলেছিল, আমি দামেশকে যাব, কিন্তু কই! কেউ তো দামেশকে এলো না। তাই আমার তৃতীয়বার সফর করতে হবে। বড়ো বড়ো কিতাবগুলো ও গুরুত্বপূর্ণ আজজাগুলো আনতে হবে।

অল্প কিছুদিন পরেই তার এক বন্ধু এলো। তার দরজায় কড়া নাড়ল। সে বলল, আবুল হাসান মুরাদি এসেছে। আমার পিতা তার কাছে নেমে গেলেন। তাকে স্বাগত জানিয়ে তার বাড়িতে সসম্মানে অবস্থান করালেন। সে চার বস্তা ভরে তার শ্রোত কিতাবগুলো নিয়ে এলো। আমার পিতা দেখে অত্যন্ত খুশি হলেন। এবং আল্লাহর শুকর আদায় করলেন যে, তিনি অতি সহজে কোনো কষ্ট ছাড়াই তার শ্রোত কিতাবগুলো এনে দিলেন। তার আর সফর করতে হবে না। এরপর তিনি কিতাবগুলোর কপি তৈরি করতে শুরু করলেন। যখনই কোনো একটি জুজের কপি তৈরি করে শেষ করতেন, মনে হতো যেন তিনি সারা দুনিয়া অর্জন করে ফেলেছেন।' (ইবনে আসাকেরের আলোচনা শেষ হলো।)

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 সময় সংরক্ষণের গুরুত্ব ও সময় নষ্ট করার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে বিখ্যাত মিশরীয় সাহিত্যিক আহমদ আমিনের একটি প্রবন্ধ

📄 সময় সংরক্ষণের গুরুত্ব ও সময় নষ্ট করার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে বিখ্যাত মিশরীয় সাহিত্যিক আহমদ আমিনের একটি প্রবন্ধ


পাঠক! এই মহান ইমাম হাফেজ ইবনে আসাকের, দামেশকি রহ.-এর সংক্ষিপ্ত আলোচনা এখানে শেষ হলো। তাতে কত শত বিস্ময়কর অবাক করার মতো দুর্লভ ঘটনাবলি আপনি দেখেছেন। যদি তিনি সময়ের সদ্ব্যবহার না করতেন, যদি জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে গনিমত মনে না করতেন; তাহলে এত বিশাল বিশাল গ্রন্থ তার দ্বারা রচিত হওয়া সম্ভব হতো না। যা বর্তমানে কোনো একাডেমির পক্ষেও লেখা তো দূরের কথা, ছাপাও সম্ভবপর হবে না। কাজেই ভাই! সময়ের হেফাজত করুন, সময়ই সকল বরকত ও কল্যাণের ভান্ডার।

মিশরের বিখ্যাত লেখক সাহিত্যিক ড. আহমদ আমিন (মৃত্যু: ১৩৭৩ হি.)-এর লেখা একটি প্রবন্ধের খোঁজ পেয়েছি, যার শিরোনাম হলো 'নির্লিপ্ত সময়' বা 'কর্মহীন সময়'। প্রবন্ধটি তিনি স্বরচিত 'ফায়জুল খাতির' নামক কিতাবে সন্নিবেশিত করেছেন। প্রবন্ধটি এ পুস্তিকার বিষয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ বিধায় উপকারার্থে কিছুটা সংক্ষিপ্ত করে পুস্তিকার শেষপ্রান্তে সন্নিবেশিত করা ভালো মনে করছি। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :

তিনি বলেছেন, বাসা-বাড়িগুলোতে হাজার হাজার ছাত্র চার মাস বা পাঁচ মাস গ্রীষ্মের ছুটি কাটায়। অভিভাবকরা কি কোনো দিন জিজ্ঞেস করে বা চিন্তা করে যে, এই বিশাল লম্বা সময়টা কি তাদের শারীরিক, মানসিক, চারিত্রিক ও দেশের উপকারী কাজে কাটানো যায়? বাড়িতে বসা জাতির অর্ধেক অংশ নারীরা কীভাবে তাদের কর্মহীন সময়গুলো কাজে লাগাতে পারে?
সময়টা যেহেতু সম্পদ অর্জন, ইলম অর্জন ও স্বাস্থ্য রক্ষার কাঁচামাল, তাই চিন্তা করা উচিত এগুলো কী পরিমাণ নষ্ট করেছি? জীবনের কতটা অংশ বেকার নষ্ট হয়ে যায়? না তো দুনিয়ার কাজ হয়, না আখেরাতের কাজ হয়!
সময় নষ্ট করার পরিণামে সম্পদের অনেক উৎস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সময় নষ্ট করা ও সময় ব্যবহারের অজ্ঞতা না থাকলে সেই উৎসগুলো কাজে লাগানো যেত। কত অনাবাদ জমি আবাদ করা যেত, কত কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করা যেত, কত ধরনের প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করা যেত; কর্মহীন সময়ের সামান্য অংশ ব্যবহার করে!
আমাদের বিশ্বে সময় নষ্ট করার আরেকটি অশুভ পরিণতি হলো বইপত্রের অচলতা ও বইপাঠ না করা এবং অজ্ঞতায় সন্তুষ্ট থাকা। এমন কোনো লোক নেই যে অজ্ঞতার দরুন কষ্টবোধ করে। তবে এমন দেহ আছে প্রচুর যা আরামের জন্য পাগল। বইপত্রের জগতের মতো সম্পদের জগৎটাও অনুরূপ।
অল্পে তুষ্টি, সামান্য সম্পদে সন্তুষ্টি, রুটিনি কাজে ঘুম, যার জন্য কোনো কষ্ট করতে হয় না-সর্বত্র বিরাজমান। কোনো ধরনের চিন্তার উদ্রেক হয় না। তা ছাড়া রয়েছে দুর্বল চিন্তা ও বিদেশি উদ্যমীর সামনে রাস্তা খুলে দেওয়া, যে জানে সময়কে কীভাবে কাজে লাগাতে হয়।
সময়ের হেফাজত বলতে আমার উদ্দেশ্য এটা নয় যে, সব সময় শুধু কাজই করবে। জীবনটা হয়ে যাবে শুধু কর্ম ও মেহনতের মাজন। যার মধ্যে থাকবে না কোনো আরাম, কোনো আনন্দ। জীবনটা হয়ে যাবে মেঘাচ্ছন্ন অন্ধকারময়, যার মধ্যে থাকবে না কোনো হাসির আলো, কোনো খুশি। আমার উদ্দেশ্য হলো যেন কর্মহীন সময়টা কাজের সময় অপেক্ষা অধিক না হয়। যেন কর্মহীন সময়টাই জীবনের মূল মেরুদণ্ড এবং কাজের সময়টা গৌণ হয়ে না যায়।
বরং আমার উদ্দেশ্য এর চেয়েও বেশি কিছু; অর্থাৎ, কর্মহীন সময়টা যেন বিবেকের অনুগত হয়, যেমন কাজের সময়টা হয়। কারণ, আমরা কাজ করি কোনো একটা উদ্দেশ্যে। কাজেই কর্মহীন সময়টাও অনুরূপ কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় হওয়া উচিত। হয়তো স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য, যেমন বৈধ ব্যায়ামজাতীয় খেলাধুলা। বা মানসিক আনন্দের জন্য যেমন বিদ্যাগত অধ্যয়ন। বা আত্মার খোরাকের জন্য, যেমন: কোরআন পাঠ, হাদিস পাঠ, নফল ইবাদত ইত্যাদি।
কিন্তু শুধু সময় হত্যা করাটাই মূল উদ্দেশ্য হওয়া কোনো বৈধ উদ্দেশ্য নয়। কেননা সময়টাই জীবন। কাজেই সময়টা নষ্ট করা মানে জীবনটা নষ্ট করা। সুতরাং যারা তাদের দীর্ঘ সময়গুলো দাবা খেলা বা লুডু খেলা বা অবৈধ কাজে ব্যয় করে; তারা এমন কোনো উদ্দেশ্যে কাজ করে না যাকে বিবেক সমর্থন করে। অনুরূপভাবে তাদের উদ্দেশ্যও বিবেকসম্মত নয় যারা চা স্টলে, ক্লাবে ও রাস্তায় আড্ডা মেরে সময় ব্যয় করে। তাদের উদ্দেশ্য হয় কেবল সময় হত্যা করা। যেন সময় তাদের অন্যতম শত্রু।
এ সমস্যা সমাধানের চাবিকাঠি হলো এটা বিশ্বাস করা যে, মানুষ ইচ্ছামতো তার পছন্দের বিষয়টা পরিবর্তন করতে পারে। মানুষ ইচ্ছামতো তার রুচি পরিবর্তন করতে পারে। মানুষ এমন জিনিসের রুচি তৈরি করতে পারে, যা ইতিপূর্বে তার রুচিসম্মত ছিল না। এমন জিনিসকে অপছন্দ করতে পারে যা ইতিপূর্বে সে পছন্দ করত। সুতরাং অধিকাংশ মানুষ যদি তার ইচ্ছা দৃঢ় হয়, তাহলে তাদের অবসরের সময়টাকে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, বিবেকের জন্য উপকারী ও দীনের জন্য উপকারী-এই তিন ধরনের কাজের জন্য ভাগ করে নিতে পারে।
এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, সাধারণ মানুষ মনে করে যে, হালকা গল্প পড়া ও সস্তা বাজে ম্যাগাজিন পড়া তাদের বিবেকের খোরাকের জন্য যথেষ্ট। তারা এগুলোকে গলাধঃকরণ করে এবং জ্ঞানগত আনন্দের জন্য এগুলোকেই যথেষ্ট মনে করে। অথচ এগুলো হলো বিবেককে মাতাল করার উপকরণ বা যৌন কামনা উদ্দীপক। অথচ একটু সামান্য ধৈর্য ও ইচ্ছার দৃঢ়তা শিক্ষার্থীকে লাভজনক পাঠ ও সুস্থ অধ্যয়নের জন্য যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারে।
প্রত্যেক শিক্ষিত ব্যক্তি নিজের মধ্যে যে-কোনো প্রকার বিদ্যায় অর্থবহ জিনিসের আগ্রহ সৃষ্টি করতে পারে। যে বিষয়টা সে পড়বে, এর মধ্যে বিস্তৃতি সৃষ্টি করবে, গভীরতা অর্জন করবে। সেটা হতে পারে সাহিত্য, বা জীববিজ্ঞান বা ফুল বা ম্যাকানিক্যাল বিষয় বা কোনো যুগের ইতিহাস বা যে-কোনো মানবিক জ্ঞান। এরপর সে সেই বিষয়ে তার আগ্রহকে শানিত করবে। এরপর তার দিনের একটা অংশকে সেই বিষয়টা অধ্যয়নের জন্য ও চর্চা করার জন্য নির্ধারণ করে নেবে।
তাহলে দেখা যাবে, সে এক ভিন্ন ধরনের মানুষে পরিণত হয়েছে। সে এক ধরনের বিশেষ শক্তির অধিকারী হয়ে যাবে। সে এক সম্মানিত ব্যক্তিত্বের অধিকারী হবে। সে নিজের ও তার জাতির উপকার করতে পারবে। জাতি বিভিন্ন জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখায় দক্ষ সন্তান সমৃদ্ধ হবে। জীবনের যে দিকটায় সে বিশেষ পারদর্শী হবে তার ওপর জাতি নির্ভর করতে পারবে।
সর্বসাধারণের বৈঠকগুলোতে তাদের আলোচনার মান উন্নত হবে। উন্নত হবে তাদের চিন্তাধারা। তাদের জীবন হবে সজীবতাপূর্ণ। একজন আরেকজনের কাছ থেকে অর্জন করতে পারবে সংস্কৃতি, বিদ্যা, সাহিত্য, চরিত্র ও সময়ের মূল্যানুধাবন।
সংস্কৃতি হবে উন্নত, বিস্তৃত হবে জ্ঞানের পরিধি। জীবন হবে উন্নত। বৃদ্ধি পাবে শক্তি। জীবনোপকরণ হবে সহজতর ও সুশোভিত।
তখন মানুষ অনুধাবন করবে যে, তারা যেমন পেটকে খাদ্য জোগায় তেমনইভাবে মেধাকে খাদ্য জোগানোও তাদের দায়িত্ব। খাদ্য ছাড়া কোনো জীবন কল্পনা করা যায় না। সময়ের হেফাজত, সময়ের সঠিক ব্যবহার ছাড়া কোনো খাদ্য জোগানো সম্ভব নয়। তখন সমাজের পরিবেশ, চিন্তাধারা, শিল্পজ্ঞান, উৎপাদন, অবদান ও উপকারিতা উন্নত হবে।
সদা তোমার অভ্যাস বানিয়ে নাও নিজেকে এই প্রশ্ন করা-আমার অবসর সময়ে আমি কী কাজ করেছি? আমি কি স্বাস্থ্য বা সম্পদ বা বিদ্যা বা নিজের বা অন্যের কোনো উপকার অর্জন করতে পেরেছি? চিন্তা করে দেখো, তোমার অবসরের সময়টা কি তোমার বিবেকের শাসনের অনুগত হয়েছে? তোমার কি কোনো প্রশংসনীয় উদ্দেশ্য রয়েছে, যার জন্য তুমি তোমার মূল্যবান সময়টা ব্যয় করেছ? যদি অনুরূপ হয়ে থাকে তাহলে তুমি সফল হয়েছ। অন্যথায় সফল হওয়ার চেষ্টা করো।
প্রতিদিন সামান্য কিছু সময় নির্দিষ্ট কাজের জন্য নির্ধারণ করা হয়তো তোমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। তোমাকে করে দিতে পারে কল্পনাতীত সুশৃঙ্খল ও উন্নত।
জাতি সর্বক্ষেত্রে তার জীবনের দশ ভাগের এক ভাগ উচিতমতো জীবনযাপন করে বা তার চেয়েও কম। সম্পদ উপার্জনে বলেন বা মেধাগত শিক্ষায় বলেন বা স্বাস্থ্যের অবস্থায় বলেন; সব ক্ষেত্রেই জাতি জীবনের অল্পতম অংশ সঠিক জীবনযাপন করে। বাকি জীবনটা বেকার অলসতা বা অজ্ঞতাবস্থায় বা দাবা-লুডু খেলাধুলায় বা অর্থহীন কাজে কেটে যায়। অথচ সঠিক জীবনযাপন করার পথে কোনো বাধা নেই। বাধা শুধু একটাই আছে। তা হলো, সময় ব্যয় করার সঠিক পদ্ধতিটা আবিষ্কার করতে ও অবসর সময়টাকে শরিয়ত ও বিবেকের অনুগত বানাতে ব্যর্থতা।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন