📄 সুলতানুল উলামার পৌত্রী মৃত্যুর দিনও হাদিস পড়িয়েছেন
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. 'আদদুরারুল কামিনাহ' গ্রন্থে বয়োজ্যেষ্ঠা আলেমা মুহাদ্দিসা জয়নব বিনতে ইয়াহইয়া সুলামিয়্যাহ, (জন্ম: ৬৪৮ হি., মৃত্যু: ৭৩৫ হি.)-এর আলোচনায় নিম্নোক্ত বক্তব্য তুলে ধরেছেন:
সুলতানুল উলামা ইজজুদ্দিন ইবনে আব্দুস সালাম সুলামির ছেলে ইয়াহইয়া তনয়া জয়নব ৬৪৮ হি. সনে জন্মগ্রহণ করেন। সিলাফির পৌত্র আব্দুর রহমান ইবনে মক্কি এস্কান্দারানি (মৃত্যু: ৬৬১ হি.) তাকে ৬৫০ হি. সনে বর্ণনার ইজাজত প্রদান করেন। তিনি পাঁচ বছর বয়সে কারাফায় উসমান ইবনে খতিবের নিকট উপস্থিত হন। তার সাথে আরও উপস্থিত হন উমর ইবনে আউয়াহ, ইবরাহিম ইবনে খলিল প্রমুখ আলেমগণ। তিনি তাবরানির 'মুজামে সগির' কিতাবটি অবিচ্ছিন্ন সূত্রে এককভাবে বর্ণনা করেন।
জাহাবি রহ. বলেছেন, তিনি একজন কল্যাণকামিণী, আবেদা ও রেওয়ায়েতে আগ্রহী নারী ছিলেন। এমনকি তাঁর মৃত্যুর দিনেও তার কাছে কয়েকটি জুজ পঠিত হয়।
📄 শামসুদ্দিন আসবাহানি কম খেতেন, যেন বাথরুমে যাতায়াতের কারণে সময় নষ্ট না হয়
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. লিখিত 'আদদুরারুল কামিনাহ' গ্রন্থে ও শাওকানি লিখিত রহ. 'আল-বদরুত তালে' গ্রন্থে বিখ্যাত উসুলবিদ, ফকিহ, মুফাসসির ইমাম আল্লাম শামসুদ্দিন আবুস সানা আসবাহানি মাহমুদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ শাফেয়ি রহ.-এর জীবনী আলোচনায় নিম্নোক্ত বিবরণ রয়েছে : তিনি মাতৃভূমিতে ইলম অর্জন শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে তিনি দক্ষতা অর্জন করেন ও বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রসর হন। ৭২৫ হি. সনের সফর মাসে কুদস পরিদর্শন করার পর তিনি দামেশকে আগমন করেন। তার গুণাবলি দামেশকবাসীকে চরমভাবে মুগ্ধ করে। শায়খ তাকিউদ্দিন ইবনে তাইমিয়া রহ. তার কথা শুনে তাকে অত্যন্ত সম্মান করেন। তিনি একদা বলেন, চুপ করো, আমাদেরকে এই মহান জ্ঞানী মনীষীর বক্তব্য শুনতে দাও! তার মতো আলেম ইতিপূর্বে আমাদের এই এলাকায় আসেনি। এরপর তিনি কায়রোতে চলে যান। সেখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ইলমের প্রতি তার আগ্রহ ও সময় ব্যয়ে তার কৃপণতা সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, তার একজন ছাত্র বর্ণনা করতেন যে, তিনি খুব কম খেতেন, যেন পানি পানের প্রয়োজন না হয়। কারণ, তাহলে বাথরুমে বেশি যেতে হবে আর তাতে তার সময় নষ্ট হবে। লেখক বলেন, পাঠক! দেখুন, এই মহান ইমামের নিকট সময়ের মূল্য কত বেশি ছিল! আর সময়ের মূল্য বেশি হওয়ার কারণ হলো ইলমের মূল্যায়ন। কি আশ্চর্য! তিনি কত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন!
📄 ইবনে রজব হাম্বলি রহ.-এর ইলম চর্চায় চরম তন্ময়তা
'জাইলু ইউসুফ ইবনে আব্দুল হাদি হাম্বলি আলা তাবাকাতি ইবনে রজব' নামক গ্রন্থে হাফেজ ইবনে রজব (আব্দুর রহমান ইবনে আহমদ ইবনে রজব) বাগদাদি অতঃপর দামেশকি হাম্বলি রহ.-এর জীবনী আলোচনায় আছে, তিনি দুনিয়ার কোনো কিছুই জানতেন না। তিনি নেতৃত্বমুক্ত ছিলেন। ইলম চর্চা ছাড়া তার কোনো ব্যস্ততা ছিল না। আমাদের শায়খ শিহাবুদ্দিন ইবনে জাইদ আমাদেরকে বলেছেন, একদা তার স্ত্রী গোসলখানায় গোসল করে সেজেগুজে তার কাছে এলো। কিন্তু তিনি তার প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ করলেন না। স্ত্রী তখন বলল, তোমাদের কেউ কেবল এমন লোক চায় যে তাকে কুকুরের মতো ছেড়ে দেয়। এ কথা বলে স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়।
লেখক বলেন, আমার মনে হয় তখন তিনি কেবল ইলম, গবেষণা ও তথ্যানুসন্ধানের মজা উপভোগ করছিলেন। তাই অন্য কোনো উপভোগ্য জিনিসের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেননি। সাজগোজ ও পরিচ্ছন্নতার সুরভিও তাকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়নি। তিরস্কারবাণ, হুলফুটানো বাক্যের কোনো পরোয়া তিনি করেননি।
এ ধরনের বিষয়েই কবি বলেছেন—
আমি যখন কিতাব অধ্যয়ন করি তার গণ্ডদ্বয় ছেড়ে
সে তখন কিতাবের প্রতি যারপরনাই অভিমান বোধ করে।
আরেক কবি বলেছেন—
গায়িকার সাথে কোলাকুলি ও দৈহিক মিলন করা যেমন প্রিয়
ইলম চর্চার জন্য বিনিদ্র রজনি আমার তদপেক্ষা অধিক প্রিয়।
📄 ইমাম মুহাম্মদ আবেদ সিন্ধি রহ. সফরব্যবস্থায়ও লিখতেন এবং নুসখা তৈরি করতেন
ইমাম মুহাদ্দিস ফকিহ মুহাম্মদ আবেদ সিন্ধি আনসারি রহ., (জন্ম: ১১৯০ হিজরি, মৃত্যু: ১২৫৭ হিজরি) তিনি ইমাম শাফেয়ির মুসনাদটির বিন্যাস, সংক্ষেপায়ন ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি করেছেন সফরাবস্থায়। আরাম ও পানাহারের জন্য বিরতির সময়। তিনি 'তারতিবু মুসনাদিল ইমামিশ শাফেয়ি' কিতাবটির সমাপ্তিতে বলেছেন, সংকলনটি শুরু করেছিলাম ১২২৯ হিজরি সনের জিলকদ মাসে হজের সফরের জন্য পশুবাহিত গাড়িতে চড়ার পর। আর তা সমাপ্ত হলো ১২৩০ হিজরি সনের রবিউল আওয়াল মাসের বিশ তারিখ রোজ বুধবার আসরের পর। হারামাইন শরিফাইন থেকে ফিরে আসার সময় কুনফুজা জামে মসজিদে। আমি শুধু পানি পান করার জন্য সামান্য বিরতি ও আরামের জন্য সফর বিরতির সময়ই কেবল লিখতে সক্ষম হতাম। এটা কেবল আল্লাহর দেওয়া নিয়ামত। তিনি আমাকে এমন সময় রাসুল সা.-এর সুন্নাহর সেবা করার তাওফিক দিয়েছেন, যখন সাধারণত এ ধরনের কাজ করা আদৌ সম্ভব হয় না।
অনুরূপভাবে তিনি 'লিসানুল মিজান' কিতাবটির অর্ধেক নকল করেছেন ওমরার জন্য মদিনা থেকে মক্কা যাওয়ার পথে। এ সময় মাহমুদিয়া লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত তার নিজ হাতে লেখা প্রথম খণ্ডটির শেষে লেখা আছে—
১২৫১ হিজরি সনের শাবান মাসের আটাশ তারিখে প্রথম খণ্ডটি সমাপ্ত হলো। আমরা এখন রমজান মাসে ওমরা করার উদ্দেশ্যে যাবার পথে রাবেগ নামক স্থানের নিকটে শাদোন নামক স্থানে অবস্থান করছি। এরপর দ্বিতীয় খণ্ডটি শুরু হবে ইনশাআল্লাহ।
সে সময়কার যুগে সফরের অবস্থা, যানবাহন ও আরামের স্থানগুলোর অবস্থা সকলেরই জানা। যদি তিনি মনে না করতেন যে, কিতাব নকল করা ও রচনা অন্যতম একটি মহান ইবাদত, তাহলে সফরে আরামের সময়টা তিনি আদৌ এ কাজে ব্যয় করতেন না।