📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ডাক্তার ইবনুন নফিস রহ. চিকিৎসাবিজ্ঞান, ফেকাহ ও সময় সংরক্ষণে ঈর্ষণীয় ব্যক্তি ছিলেন

📄 ডাক্তার ইবনুন নফিস রহ. চিকিৎসাবিজ্ঞান, ফেকাহ ও সময় সংরক্ষণে ঈর্ষণীয় ব্যক্তি ছিলেন


যে সমস্ত বড়ো বড়ো মনীষী ও অনন্য শ্রেষ্ঠ ডাক্তারগণ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত হেফাজত করেছেন, কল্পনা-ভাবনাগুলো লিখে রেখেছেন বিস্ময়কর মুহূর্তগুলোতে, তাদের অন্যতম হলেন স্ব-যুগের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনুল নাফিস দিমাশকি রহ.; অতঃপর মিশরি শাফেয়ি।

সুবকি রহ. রচিত 'তাবাকাতুশ শাফেয়িয়্যাতিল কুবরা' এবং আল্লামা খাওয়ানেসারি রচিত 'রওজাতুল জান্নাত' গ্রন্থে সালাহুদ্দিন সাফাদি রহ.-এর 'আল-ওয়াফি বিল ওফায়াত' গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে উল্লেখ আছে, যা থেকে আমি নিম্নোক্ত বিবরণটি কুড়িয়ে এনেছি:

তিনি হলেন ইমাম, মহাজ্ঞানী, ডাক্তার, আল্লামা আলাউদ্দিন ইবনুন নাফিস আলি ইবনে আবু হাজম কারশি, (মাওয়ারাউন্নাহার এলাকার কারশ নামক শহরের দিকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে) জন্ম: ৬১০ হি. সনে দামেশকে, মৃত্যু: ৬৮৭ হি. সনে কায়রোতে।

তিনি চিকিৎসাশাস্ত্রের অনন্য অপ্রতিদ্বন্দ্বী ইমাম ছিলেন। চিকিৎসা-সংক্রান্ত তার লেখা উচ্চাঙ্গের অনেক কিতাব রয়েছে। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে 'আশশামেল' নামে একটি কিতাব লিখেছেন। এ কিতাবটির সূচিপত্র দ্বারা প্রতীয়মান হয় এটা তিনশ খণ্ডে সমাপ্ত ছিল। তার কোনো একজন শিষ্য এটা উল্লেখ করেছেন। আশিটি খণ্ড তিনি প্রকাশ করেছেন। তা ছাড়া 'আল-মুহাজজাব' নামে সুরমা সম্পর্কে একটি কিতাব লিখেছেন। এবং ইবনে সিনা লিখিত 'আল-কানুন'-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেছেন, যা কয়েক খণ্ডে সমাপ্ত।

তিনি মানতিক সম্পর্কেও অভিজ্ঞ ছিলেন। এ বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত কিতাবও লিখেছেন। ইবনে সিনার 'আল-হিদায়া' নামক কিতাবটিরও ব্যাখ্যা করেছেন। তা ছাড়া ফিকহ, উসুলে ফিকহ, সাহিত্য, হাদিস ও ইলমুল বয়ান ইত্যাদি বিষয়েও কিতাব লিখেছেন। আবু ইসহাক সিরাজি রহ.-এর লেখা শাফেয়ি ফিকাহর কিতাব 'আত-তাম্বিহ' কিতাবটির শুরু থেকে সাহু সিজদার আলোচনা পর্যন্ত খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি কায়রোর মাসরুরিয়া মাদরাসায় ফিকাহ পাঠদানের দায়িত্বও পালন করেছেন।

মোটকথা, তিনি একাধিক বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। আর চিকিৎসাবিদ্যায় তো সারা পৃথিবীতে তার কোনো জুড়ি ছিল না। ইবনে সিনার পর তার মতো চিকিৎসাবিজ্ঞানী আর আসেনি। লোকেরা বলে, চিকিৎসার ক্ষেত্রে তিনি ইবনে সিনাকেও ডিঙিয়ে গিয়েছিলেন। তার কিতাবগুলো তিনি মুখস্থ লেখাতেন। ইমাম বুরহানুদ্দিন ইবরাহিম রশিদি বলেছেন, আলা ইবনুল নফিস রহ. যখন কিতাব লেখার ইচ্ছা করতেন, তখন তার সামনে কলমগুলো তৈরি করে রাখা হতো। তিনি দেওয়ালের দিকে ফিরে বসে মুখস্থ লিখতে শুরু করতেন। বন্যার স্রোতের মতো লিখে যেতেন। কলম ক্লান্ত ও ভোঁতা হয়ে গেলে সেটা ফেলে দিয়ে অন্য আরেকটি হাতে নিতেন। যেন কলম কাটতে গিয়ে তার সময় নষ্ট না হয়। কিতাব লেখার সময় তিনি কোনো কিতাব দেখতেন না, সরাসরি হৃদয় থেকে লিখতেন।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 ইবনুন নফিস রহ. ফজর পর্যন্ত সারা রাত ইবনে ওয়াসেল রহ.-এর সাথে ইলমি আলোচনা করেছেন

📄 ইবনুন নফিস রহ. ফজর পর্যন্ত সারা রাত ইবনে ওয়াসেল রহ.-এর সাথে ইলমি আলোচনা করেছেন


তার ছাত্র কায়রোর ডাক্তার সাদিদ দিময়াতি রহ. বলেন, একবার কোনো এক রাতে ইবনুন নফিস ও কাজি জামালুদ্দিন ইবনে ওয়াসেল একত্রিত হলেন। আমি তাদের কাছে ঘুমিয়ে ছিলাম। এশার নামাজের পর তারা আলোচনা শুরু করেন। এক বিদ্যা থেকে আরেক বিদ্যার দিকে স্থানান্তরিত হচ্ছিলেন। শায়খ আলাউদ্দিন ইবনুন নফিস শান্ত মনে দক্ষতার সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কাজি জামালুদ্দিন মাঝেমধ্যেই উত্তেজিত হয়ে যেতেন এবং তার গলার স্বর উঁচু হয়ে যেত। তার চক্ষুদ্বয় রক্তিম হয়ে যেত। তার গলার রগসমূহ স্ফীত হয়ে যেত। ভোরের আলো ফুঠে উঠা পর্যন্ত তারা এভাবেই আলোচনা চালিয়ে গেলেন।

আলোচনা শেষ হবার পর কাজি জামালুদ্দিন বললেন, হে শায়খ আলাউদ্দিন! আমাদের কাছে রয়েছে অনেক বিষয়, অনেক সূক্ষ্ম তত্ত্ব ও অনেক মূলনীতি। কিন্তু আপনি! আপনার কাছে রয়েছে বহু বিজ্ঞানের অসংখ্য ভান্ডার।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 শায়খ ইবনে তাইমিয়া রহ. অসুস্থতা ও সফরের সময়ও অধ্যয়ন ও ইলম চর্চা করতেন

📄 শায়খ ইবনে তাইমিয়া রহ. অসুস্থতা ও সফরের সময়ও অধ্যয়ন ও ইলম চর্চা করতেন


লেখক বলেন, তাঁর এই পুস্তকাঢ্যতার কারণ হলো, তিনি সফর ও হজর, সুস্থতা ও অসুস্থতা সর্বাবস্থায় অধ্যয়ন ও ইলম চর্চা অব্যাহত রাখতেন। তার শিষ্য ইমাম ইবনুল কাইয়িম রহ. স্বরচিত 'রওজাতুল মুহিব্বিন' নামক কিতাবে বলেন, আমাদের শায়খ ইবনে তাইমিয়া রহ. আমাকে বলেছেন, আমি একবার রোগাক্রান্ত হলাম। ডাক্তার আমাকে বলল, আপনার অধ্যয়ন ও ইলম চর্চা অসুস্থতা বৃদ্ধি করবে। আমি তাকে বললাম, আমি এটা সহ্য করতে পারব না। আপনার জ্ঞানের কাছে আমার জিজ্ঞাসা, মন যখন আনন্দোৎফুল্ল থাকে মানুষের প্রকৃতি তখন শক্তিশালী হয় এবং রোগবালাইকে তাড়িয়ে দেয়। বিষয়টি কি এমন নয়? ডাক্তার বলল, জি হ্যাঁ। তখন আমি তাকে বললাম, আমার মন ইলম চর্চায় আনন্দিত হয়, তাতে আমার প্রকৃতি শক্তিশালী হয়। ফলে আমি তাতে আরাম বোধ করি। কাজেই এটা অসুস্থতা বৃদ্ধি করবে কেন? ডাক্তার বলল, এটা আমাদের চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত নয়।

📘 আকাবিরদের জ্ঞান সাধনার গল্প > 📄 বয়োজ্যেষ্ঠ হাফেজে হাদিস ইবনুশ শিহনাহ হাজার রহ. একশ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুর একটু আগেও ছাত্ররা তাঁর কাছে পড়েছে

📄 বয়োজ্যেষ্ঠ হাফেজে হাদিস ইবনুশ শিহনাহ হাজার রহ. একশ বছর বয়সে তাঁর মৃত্যুর একটু আগেও ছাত্ররা তাঁর কাছে পড়েছে


হাফেজ ইবনে হাজার রহ. 'আদদুরারুল কামিনাহ' গ্রন্থে বলেছেন, হাফেজ শিহাবুদ্দিন আবুল আব্বাস আহমদ ইবনে আবু তালেব-যিনি ইবনুশ শিহনাহ হাজ্জার দামেশকি সালিহি হানাফি নামে বিখ্যাত; ৬২২ হি. সনে জন্মগ্রহণ করেন-তিনি একশরও বেশি বয়স প্রাপ্ত হন। ফলে নাতিকে দাদার সাথে মিলিয়ে দেন। (অর্থাৎ, দাদা ও নাতি উভয়ই তার কাছে পড়ার সুযোগ পায়) তিনি দামেশক ও প্রভৃতি শহরে সত্তরেরও অধিকবার সহিহ বুখারি পাঠদান করেন।

হাফেজে হাদিসগণ তাকে নির্বাচন করে। পৃথিবীর বিভিন্ন শহর থেকে এসে তারা তার কাছে ভিড় করে। তিনি একশ বছর বয়সেও রমজানের রোজা রেখেছেন। এবং শাওয়ালের ছয় রোজা রেখেছেন। তার মৃত্যুর একদিন আগে মুহিব্বুদ্দিন ইবনে মুহিব্ব রহ. তার কাছে সহিহ বুখারি শরিফ পড়তে শুরু করেন। তার মৃত্যুর দিন দ্বিতীয় বৈঠকে চাশতের সময় পর্যন্ত পড়েছেন। ওই দিনেই জোহরের একটু আগে তিনি ৭৩০ হি. সনে মৃত্যুবরণ করেন।

লিঙ্ক শেয়ার করুন
close

লিঙ্ক কপি করুন